এবার ঈদে আমার নুতন শাড়ী চাই’ই চাই।তোমার আর কোন কথাই শুনব না আমি।বিয়ের পর তুমি আমার কোন্ শখটা পূরণ করেছো, বলো?
চুপ করে থাকে ফরিদ।কোন কথা বাড়ায় না সে।
কি হলো, তুমি যে চুপ করে গেলে?কিছুই বলছো না যে।
সে পরে দেখা যাবে,আগে আসুক তো ঈদ।
“সুধু কথায় চিড়ে ভিজবে না” বলে দিচ্ছি।ঈদে নতুন শাড়ী না পেলে, এবার আমি গ্রামের বাড়ি যাবো না ।তুমি একাই যেও তোমার ছেলে মেয়ে নিয়ে।
ছোট কারখানায় চাকরী করে ফরিদ।মাসে যা বেতন পায়,তাতে চলা’ই কস্ট।তার পর জিনিস পত্রের দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে আর বুঝি, শহরে সবাইকে নিয়ে থাকা সম্ভব হবে না।বেতনের অর্ধেকটা’ই চলে যায় বাড়ি ভাড়ায়।কি আর করা,এভাবেই টেনে হিচড়ে চলছে সংসার।
সামনে ঈদ।ছোট ছেলে মেয়েদের জন্যও ঈদের পোশাক চাই। বেশী টাকার প্রয়োজন।ওভার টাইম একটু বেশীই করতে হয় তাকে।তাই রাত বারোটা-একটা পর্যন্ত কাজ করতে হয় কারখানায়।শরীরের দিকে তাকালে তো আর চলবে না।
গ্রামের বাড়িতে মা থকেন।তার জন্যও কিছু পাঠাতে হয়, মাসে মাসে।মা হার্টের সমষ্যায় ভূগছেন, বহু দিন ধরে।ঔষধেও কম খরজ হয় না।টাকার প্রয়োজন হলেও মা কখনও বলেন না মুখ ফুটে। শরীর খারাপ হলেও মা, না জানিয়ে পারলে জানান না ফরিদকে।জানালে হয়তো ফরিদ দুশ্চিন্তা করবে।সে আবশ্য নিয়মিত খোঁজ খবর নেয় মায়ের।
বেতন-বোনাশ পেয়েই ফরিদ মার্কেটে যায় কেনা কাটা করতে।কিন্তু সব কিছুর দাম খুব বেশি মনে হয় তার কাছে।অনেক দোকান ঘুরে,ছেলে মেয়েদের যন্য কেনা কাটা শেষ করে কোন রকমে।এবার বাকি তার স্ত্রীর শাড়ী।মায়ের যন্যও শাড়ী কেনা দরকার।অনেক শাড়ী দেখে স্ত্রী ও মায়ের যন্য, দুটো শাড়ী কিনে ফেলে সে।বাকি সুধু নিজের জন্য কিছু কেনা। অন্তত ঈদের নামাজ পড়ার জন্য একটা পাঞ্জাবী ।কিন্তু টাকা যা ছিলো সবই শেষ।তার পরও একটু শস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে ফরিদ।সবার যন্য কেনা তো হয়েছে।আমার নিজের না হলেও চলবে।সবাইকে খুশি করতে পারলেই তো নিজের সুখ।এর মতো সুখ আর কোথায় আছে। এমন সময় তার মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো।তার চাচাতো ভাই শাহিনের নম্বর। রিসিপ্ট করতেই ওপাশ থেকে শাহিনের কন্ঠস্বর শোনা গেলো।
হ্যলো।আস্ ছালামু ওয়ালায়কুম , ফরিদ ভাই।আমি শাহিন বলছি।
ওয়ালায়কুম আস্ ছালাম ।কি খবর,কেমন আছিস তোরা?মার শরীর ভালো তো?
হ্য, না মানে,চাচির শরীর খুব খারাপ!তুমি তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এসো।ভাবী,টুম্পা ও রানাকেও সাথে করে নিয়ে এসো।
ক্যানো, কি হয়েছে ?আমাকে খুলে বল।কোন খারাপ খবর!
না তেমন কিছু না,কোন অসুবিধা নেই।
আচ্ছা ঠিক আছে।আমরা আজ’ই লঞ্চে উঠছি।
সদর ঘাট থেকে বিকেলের লঞ্চে উঠলো তারা।ঘরমুখো মানুষের উপছে পড়া ভিড়।এক ফোটা ফাঁকা জায়গা নেই লঞ্চের কোথাও।বরিশালের উদ্দেশ্যে ছাড়লো লঞ্চ।পরদিন সকালে তারা নেমে পড়লো ঘাটে।তার পর বাসে চড়লো তারা। পৌঁছে গেল গ্রামে।বাস স্টান্ডে নামতেই হরি কাকার সাথে দেখা।তাদের দেখে হরি কাকা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
কেমন আছেন হরি কাকা?আমাদের বাড়ির খবর ভালো তো?
হ্যাঁ।যাও, বাড়িতে যাও।
হরি কাকার কন্ঠটা যেন কেমন মনে হলো ওর।ওরা গ্রামের রাস্তা ধরে বাড়ির দিকে হাটতে লাগলো।পথে অনেকের সাথেই দেখা হলো।জামাল স্যার, ফাতেমার মা,আমিনা খালা।কেউ তাদের সাথে কোন কথা বললো না।এমন কি পাড়ার মুদি দোকানদার বজলু চাচাও চুপ করে রইলো।যেন তারা কেউ চেনেই না তাদের।ফরিদেরও আর কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করতে ভালো লাগলো না।কিন্তু কেন যেন, তার বুকের ভিতর থেকে হু হু করে কান্না বেরিয়ে আসতে চাইছে,চোখ ছল ছল করে উঠছে-তা সে নিজেও বুঝতে পারছে না।
দূর থেকেই বাড়িতে অনেক ভিড় দেখতে পেল ফরিদ।কি হয়েছে মা’র ?মা কি তবে নেই!তাদের দেখে সবাই দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়ে, পথ করে দিলো। মা মা বলে ডাকতে ডাকতে ঘরে ঢুকলো ফরিদ।পিছনে স্ত্রী রেহানা।খাটের উপরে শুয়ে আছেন মা।সাদা কাপড় দিয়ে তার সারা শরীর ঢাকা।সুধু মুখ দেখা যাছে।চোখ দুটো বুজে আছে,যেন ঘুমিয়ে আছেন তিনি।রেহানা, মা আর নেই,মা আর নেই বলে ফরিদ জড়িয়ে ধরে মাকে।রেহানা ও উচ্চ স্বরে বিলাপ করে কাঁদতে থাকে।টুম্পা এবং রানা ও বাবা মায়ের কাঁন্না দেখে, কাঁদতে থাকে।সবাই শান্তনা দেয় তাদের।কিন্তু তাদের কাঁন্না আর থামে না।
মসজিদের ইমাম সাহেব আসেন।ফরিদের পিঠে হাত রেখে তিনি বলেন-বাবা ফরিদ, মা বাবা কেউর চির দিন বেঁচে থাকে না।সময় হলে সবাইকে এক দিন এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যেতে হয়।আমরা সবাই আল্লার কাছ থেকে এসেছি,আবার এক দিন আল্লার কাছেই ফিরে যাবো ।যাওয়া আসার এইতো নিয়ম বাবা।
আমি যে মায়ের জন্য ঈদের শাড়ী নিয়ে এসেছি হুজুর।মা আমার ঈদের শাড়ী পরবে না।কাঁন্নায় ভেঙে পড়ে ফরিদ।
ওঠো ফরিদ,সব দেহ বেশিক্ষন ফেলে রাখলে তোমার মায়ের আত্মা কস্ট পাবে।
দু এক জনে ধরা ধরি করে ফরিদকে সরিয়ে নিয়ে যায়। তার পর মাকে গোছলের জন্য বাইরে নিয়ে আসা হলো।মায়ের বিছানার পাসে এক সেট নতুন পাঞ্জাবি-পাজামা পাওয়া গেলো।তাই দেখে ফরিদ উচ্চ স্বরে বিলাপ করে কাঁদতে লাগলো।
গোসলের পর কাফনের কাপড় পরিয়ে দেয়া হলো মাকে।ঈদের শাড়ী আর পরা হলো না মায়ের।তাই ফরিদ মায়ের জন্য কেনা নতুন শাড়ীটা, মায়ের সাথেই দিয়ে দিলো।মায়ের কেনা নতুন পাঞ্জাবি পাজামা পরে, মায়ের জানাজার নামাজ পড়লো সে।নামাজ শেষে খাটীয়ার সামনের এক পাস ধরে,অন্যদের সাথে কাধে তুলে নিলো মায়ের লাশ।তার পর ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো তারা, গোরোস্থানের দিকে।
১৭ জানুয়ারী - ২০১২
গল্প/কবিতা:
১৬ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪