সেদিনও এমনি মুশল ধারে বৃষ্টি হচ্ছিল,আকাশে মেঘের ঘন ঘটা।আঁধার হয়ে ছিল চার দিক। মাশির বাড়িতে টেবিলে বই নিয়ে বসে ছিল
স্বাধীন। এমনি বৃষ্টি ভেজা দিনে কার পড়তে ভাল লাগে?সামনে বি এ ফাইনাল পরীক্ষা।তাই বই নিয়ে বসা আর কি! পরীক্ষা দিয়েই বা কি হবে,সাধারন বি এ পশ করলে আজকাল চাকরী হয় না, তা সে ভাল করেই জানে।
বই রইল পড়ে খোলা, চেয়ারে হেলান দিয়ে নড়ে চড়ে ভাল করে বসল সে। মন তার চলে গেল আপন দেশে, আপন গাঁয়ে, যেখানে তার বাবা মা থাকে, যেখানে সে জন্মেছিল এক দিন।বাংলা মায়ের নরম মাটির সোদা গন্ধে যেথায় কেটেছে তার শৈসব, কৈশোর।
একে একে তার মনের ক্যানভাসে ভেষে উঠে,ফেলে আসা দিন গুলোর ছবি । কত কস্টেই না তার ছোট বেলাটা কেটেছে।বিশেষ করে বর্ষার দিন গুলোতে, তাদের কস্টের সীমা থাকত না।তখনও এমনি করে মূসল ধারে বৃষ্টি নামত। মাঝে মাঝে এক নাগাড়ে পাঁচ-সাত দিন অঝরে ঝরতে থাকত বৃষ্টি।চুলায় ভিজে জ্বালানী দিয়ে মা ফু দিয়ে দিয়ে, আগুন জ্বালানোর চেস্টা করতেন।ধোয়ায় ভরে যেত মায়ের চোখ। জল আসত মায়ের চোখে।সে জল কি ধোয়ার জন্য ,নাকি কান্নার,তা সে ভাল করে বুঝতে পারত না।মাঝে মাঝে রান্না ঘরের চালা থেকে খড় কুটো টেনে বের করে উনানে ঢুকিয়ে দিতেন মা।“প্রয়োজন তো আর আইন মানে না।”
সন্ধ্যা হতেই বাইরে থেকে পা ধুয়ে আসত স্বাধীন। খালি পায়ে ঘরে ঢুকে ছালায় পা মুছত ভাল করে। তার পর কেরসিন বাতির আলোয় বসত বই নিয়ে। হারিকেন কেনার সামর্থ তাদের ছিল না। পড়ত দু এক পাতা কোন রকমে। ইংরেজি পড়ার সময় ভুল উচ্চারন করলে,শুয়ে শুয়েই সুধরে দিতেন বাবা।তারপর মাটিতে হোগলা পাতার পাটিতে বিছানো কাথায় শুয়ে পড়ত স্বাধীন।ছোট ভাই বোনেরা বাবাকে প্রায়ই গল্প শোনাতে বলতেন। শুয়ে শুয়ে বাবা তাদের গল্প শোনাতেন। গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ত তারা।
কোন কোন দিন গভীর রাতে, তাড়াতাড়ি করে মা ঘুম থেকে ডেকে তুলতেন সবাইকে।শতছিদ্র জুক্ত টিনের চালের ফুটো দিয়ে, টপ টপ করে বৃষ্টির জল পড়ত ঘরের ভিতর।ভিজে যেত বিছানা।কোথাও হাত দিয়ে বাবা বিছানার একাংশ গুটিয়ে ধরতেন, আর মা গামলা-বাটি,থালা-প্লেট, গ্লাশ হাতের কাছে যা পেতেন, তাই পাততেন বিছানার যেখানে যেখানে জল পড়ে সেখানে।ঘুম জড়ান চোখে বসে থাকত স্বাধীন , আর সেই কচি বয়সেই ভাবত তাদের আদৃস্টের পরিহাশের কথা।
মাঝে মাঝে এক নাগাড়ে কত দিন ভাত খেতে পেত না তারা। দু মুঠো ভাত খাবার জন্য তার প্রানটা আন-চান করত।মনে হত কত দিন ভাত খায়নি সে। প্রতি দিন দু’বেলা তিন খানা করে রুটি জুটত ,তাও মাঝে মাঝে জুটত না।তিনটি রুটিতে পেট তার ভরত না কোন মতেই।তাই সে প্রায়ই রুটি গুলো ছিড়ে, টুকরো টুকরো করে থালায় নিত।তার পর তাতে পানি ঢেলে কানিকটা লবণ নিয়ে ভাল করে মেখে নিত।এর পর ঝোলটা চুমু দিয়ে খেয়ে ফেলত সে। বাকিটায় আবারও পানি ঢেলে ,অল্প মেখে পুরোটা খেয়ে নিত।মা মাঝে মাঝে আটার ভিতরে পানি ঢেলে , একটু লবন দিয়ে চুলায় জ্বাল দিয়ে, নেউ রান্না করে দিতেন।তাতে অল্প আটা হলেও সবার হয়ে যেত মোটা মুটি।আবার স্বাদেরও একটু পরিবর্তন হত।কিন্তু দুধের স্বাদ কি আর ঘোলে মেটে।
বাবা একদিন হাট থেকে ফিরেছেন। স্বাধীনের মনে আছে, তখন ছিল বর্ষাকাল।বাবা বললেন- হ্যা রে স্বাধীন,আজ হাটে তোর ক্ষিতিশ কাকার সাথে দেখা হল ।ক্ষিতিশ কাকা হলেন, বাবার পিশতুতো ভাই।বনেদি ঘরেই জন্ম।এক সময় কোন কিছুরই অভাব ছিল না তাদের।
-ক্ষিতিশকে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, কেমন আছ ক্ষিতিশ?
মৃদু হেসে সে বলল-এই আছি,কেটে যাছে কোন রকম,রক্ত বের হচ্ছে না আর কি!
কি ভাবে চলছে তোমাদের।খাও-টাও কি?
গোয়ালে দুটো গরু ছিলো।একটা তো খাওয়া শেষ, খেতে খেতে আর একটার ও মাত্র এক ঠ্যাং বাকি!এর পরে যে কি ভাবে চলবে, তা সুধু ঈশ্বরই ভালো যানেন।
চরম দুঃক্ষের মাঝেও ক্ষিতিশ কাকার সেই করুণ রসিকতার অর্থ, ছোট্ট স্বাধীনও বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছিল । আর এও বুঝতে বাকি ছিল না যে, ক্ষাতিশ কাকাদের অবস্থা, তাদের চেয়েও বেশি একটা ভাল না। তার চেনা যানা গন্ডির মাঝে, দু একটা পরিবার বাদে সবারই এই একই অবস্থা যেন।সুধু দুর্ভিক্ষ আর হাহাকার!মনে মনে সে ভাবত, পুরো বাংলাদেশটাই যেন এমনি অভাবে ডুবে আছে।কোথাও কুল নেই, কিনারা নেই।এর থেকে পরিত্রাণের কোন উপায়ও নেই।
প্রতি বছর চাষের সময় ,ঋণ করে হালের গরু কিনত তার বাবা।বীজ ধানও জোগাড় হত বহু কস্টে।চাষ দেওয়া হতো জমিতে।বোনা হত ধান।আশায় বুক বাঁধত তারা।জমিতে ভাল ফসল হবে।গোলা ভরে যাবে, ধানে আর ধানে।তখন আর তাদের কোন অভাব থাকবে না।ধান বিক্রি করে মায়ের জন্য নতুন শাড়ী কেনা হবে,বোনেদের ফ্রক।তার নিজের জন্য একটা ইংলিশ প্যান্ট আর হাপ হাতার একটা জামা।ইংলিশ প্যান্ট পড়ার শখ তার বহু দিনের।তার কাকাতো ভাই নয়ন, কত সুন্দর ইংলিশ হাফ প্যান্ট পড়ে সব সময় ঘুরে বেড়ায়।আর তার বাবা তাকে কিনে দেয় সুধু নাতা ওয়ালা প্যান্ট। কোমরে গিট দিয়ে সেটা বাঁধতে হত। বিশেষ প্রয়োজনের সময় প্যান্টের নাতা খোলাও ছিল ঝামেলার।আর গিট লেগে গেলে তো কথাই নেই।তবুও সে মন খারাপ করত না । ইংলিশ প্যন্টের হয়তো দাম অনেক,তাই বাবা কিনে দিতে পারেন না।
সারা বছরে ধান যা হত তা অতি সামান্যই।তার পরে আবার মহাজনের দেনা।যেন কুজের উপর বিষ ফোড়া।দাওয়া-মলা শেষ হতেই আবার, “যে খালি,সেই খালি।”অবস্থা।
আবার কোন কোন বছর হয়ত আতি বৃষ্টিতে ডুবে যেত ফসলের মাঠ।সুধু ধূ-ধূ জল আর জল।নিভে যেত তাদের সব আশা। সামনে সধুই অনিশ্চিত ভবিশ্বত।তখন, মহাজনের কাছ থেকে বাবা, চড়া সুদে টাকা কর্জ করতেন।জমি বন্ধক রেখে টাকা আনতেন।এভাবে ঋণ-দেনা করে চলত তাদের সংশার।তার পরেও যখন কোন উপায় থাকত না,তখন কাসা পিতলের থালা গঞ্জের হাটে শাহুদের দোকানে বন্ধক রেখে চাল ডাল,আটা কিনে আনতেন বাবা।প্রথম প্রথম তার কস্ট হলেও, এই ভেবে মনকে শান্তনা দিত, বাবা ওগুলো সু দিন এলে আবার ছাড়িয়ে আনবেন।কিন্তু সেই সু দিন আর কোন দিনই আসত না। সুদে আসলে ধারের টাকা দ্বিগুন, তিন গুন ছাড়িয়ে যেত। বাবা আর সেগুলো ছাড়িয়ে আনতে পারতেন না কোন দিনও।পূর্ব পুরুষের স্মৃতি হারিয়ে যেত এভাবে একটা একটা করে।স্বাধীনের বুকের ভিতরে ,সুধু কস্ট গুলো বাসা বাঁধত নিরবে।
দিনে দিনে ঋণের বোঝা বেড়েই চলত তাদের।তার পর একদিন মহাজনের কাছ থেকে আরো কিছু টাকা নিয়ে,জমিটাই লিখে দিত মহাজনের নামে।এভাবে একটার পর একটা জমি চলে যেত মহাজনের হাতে। স্বাধীন সবই দেখত ,সবই বুঝত।কিন্তু কিছুই করার ছিল না ।কোন কিছুই ভাল লাগত না তার। প্রায়ই তার স্কুলের বেতন বাকি পড়ে থাকত, মাসের পর মাস।পরীক্ষার সময় হেড স্যারের কাছে লাইন দিয়ে অনুমতি নিতে হত পরীক্ষার জন্য। দুই দিনের পাশ মিলত। দুই দিন পরে আবার সেই লাইন।অনেক লম্বা লাইন হত।কোন কোন দিন সুরু হয়ে যেত পরীক্ষা।তার মনে হত বাংলাদেশের প্রতিটি স্কুলেই পরীক্ষয়ার সময় এমনি লাইন পড়ে যায়, হেড স্যারের রুমের সামনে।কোন কিছুই ভাল লাগত না তার।না স্কুল, না পড়াশুনা।
ভাবতে থাকে স্বাধীন,তাদের কেন এমন হল।কেন তারা দুবেলা দুমুঠো ভাত পায় না।স্কুলে পরীক্ষার সময় কেন তাকে হেড স্যারের রুমের সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়াতে হয়।
তাই বড় কস্টে, বড় দুঃক্ষে , এমনি এক বৃষ্টি ভেজা ভোরে, কাউকে কিছু না বলে ,বাড়ি থেকে চলে এসেছিল সে।দেশ ছেড়ে, বর্ডার পার হয়ে আশ্রয় নিয়েছিল সে, পার্শবর্তী দেশ ভারতে । আজ কত বছর হয়ে গেল।তবুও একটি দিনের জন্যও ভুলতে পারেনি , সে তার জন্ম ভূমীর কথা। তার মনে ছিল কত স্বপ্ন, বুকে ছিল কত আশা।একদিন সে বড় হবে।অর্থ উপার্জন করবে।বাবা মায়ের মুখে হাসি ফুটবে।ভাই বোনদের মুখে জুটবে দুবেলা দু মুঠো ভাত।
এই বিদেশে এসেও, কেন যেন তার বার বার মনে পড়ত, বাবার মুখে শোনা ৭১ এর কথা। পাকিস্তান আমলে বাবা কোলকাতা থেকে বি এ পাশ করে গ্রামে স্কুল খোলেন। গ্রাম্য কোন্দলে ভেঙে যায় সেই স্কুল।তার পর আর কোন চাকরির চেস্টা তিনি করেন নি কখনো।আর প্রয়োজনও ছিল না ।৭১ এর শুরুতে গঞ্জের হাটে মনোহারী মালের দোকান করলেন তিনি।কি না ছিল দোকানে।হারিকেন, জুতা, ছাতা, ট্রাঙ্ক-ছুটকেস,টর্স লাইট, আরো কত কি! আর, দোকানে কেনা বেঁচাও ছিল ভাল।তখনও তার জন্ম হয়নি।এ সবই তার বাবার কাছে শোনা।বাড়িতে বড় বড় দোতলা টিনের ঘর ছিল, গোলা ভরা ধান ছিল, গোয়াল ভরা গরু ছিল, পুকুর ভরা মাছ ছিল। অভাব ছিল না কোন কিছুরই।
মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকেই জন্ম হয় তার।স্বাধীন দেশের স্বাধীন মাটিতে জন্ম বলে, তার বাবা তার নাম রাখে ‘স্বাধীন’।তখনও যুদ্ধের আচ লাগেনি তাদের এলাকায়।দূরে সদরে, মেলেটারী ক্যম্প বসেছে। গ্রামের সবাই ভিত সন্ত্রস্ত হয়ে যে যার সুজোগ মত পালাচ্ছে। কিন্তু কোথায় পালাবে তারা। সারা দেশটাই তো এখন যুদ্ধ ক্ষেত্র। তার পর একদিন হঠাত, গঞ্জের হাটে রাজাকার-আল বদর বাহিণী, পাকিস্তানী মেলেটারীর সহায়তায় চালায় হত্যা,লুন্ঠন,অগ্নি সংজোগ।তাদের দোকান লুট হয়ে যায় আর আর সাথে সাথে ভেঙে যায় বাবার স্বপ্ন!
৭১ তাদের সব তস নস করে দেয়।যুদ্ধের লেলিহান শিখার হাত থেকে তাদের গ্রামও নিস্তার পায় নি।তখন তার বয়স সবে তিন মাস।রাজাকার লুটেরা বাহিনী হঠাত একদিন হানা দেয় তাদের গ্রামে।
সবাই প্রাণ ভয়ে পালিয়ে যায়, যে যেদিকে পারে।সোনা-দানা ,টাকা-পয়সা,কাসা-পিতল,ধান-চাল, সবই নিয়ে যায় তারা।বাড়ির পাশের পুকুরে কাসা পিতলের থালা বাসন লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।ডুবিয়ে ডুবিয়ে তাও প্রায় সব নিয়ে যায় তারা।
এর পরেও ক্ষোভ মেটেনি তাদের।একদিন হটাত লঞ্চ এসে ভিড়ে নদীর ঘাটে।স্বাধীনের বাবা সহ আরো অনেকে ভিড় করে নদীর পাড়ে।গ্রামের সহজ সরল মানুষ গুলো বুঝতে পারেনি কোন কিছুই।তারা ভেবেছিল হয়ত তাদের সাহায্যের জন্য ওরা এসেছে।তার পর পাকিস্তনী সেনারা নামে বন্দুক হাতে।সবাইকে লাইন ধরে দাড়াতে বলে ।স্বাধীনের বাবা বুঝতে পারেন, বিপদ আসন্ন।তার মনে পড়ে যায়, বাড়িতে রেখে আসা আপন জনেদের কথা, ছোট্ট ছেলে স্বাধীনের কথা।তিনি বুদ্ধি করে লাইনের পিছন দিকে দড়ান।ফায়ার বলার সাথে সাথে,তিনি দিক-বিদিক জ্ঞান শুন্য হয়ে ছুটতে থাকেন। পাক সেনাদের রাইফেলও গর্জে উঠে বারংবার।যে যেদিকে পারে ছুটতে থাকে প্রাণ ভয়ে।অনেকেই গুলির ঘায়ে প্রাণ হারায় সেদিন।যে কয়জন প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসতে পেরেছিল, স্বাধীনের বাবা তাদের একজন।
গুলির শব্দে প্রকম্পিত হয়ে উঠে চার দিক।গ্রামের সকল লোক প্রাণ ভয়ে পালিয়ে যায়,যে যেদিকে পারে।পলায়ন পর মানুষ গুলোর উপর নির্বিচারে গুলি চালায় পাক হানাদার বাহিণী।তারা পাখির মত গুলি করে হত্যা করে মানুষজন। কত লোক সেদিন কচুরি পানার ভিতরে নাক উঁচু করে লুকিয়েছিল । কেউ লুকিয়েছিল বাড়ির পাশের ধান ক্ষেতে- বুক পানি, গলা পানি উপেক্ষা করে। তার সহপাঠী চন্দরের মা তখন ছোট্ট চন্দরকে নিয়ে,বাড়ির পাশে পুকুরে কচুরির ধাপের উপর আশ্রয় নেয়। পাকিস্তানী সেনারা এদিক সেদিক গুলি করে লক্ষ্যহীন ভাবে। সহসা একটি গুলি এসে লাগে তার মায়ের কপালে।সাথে সাথে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।মৃত মায়ের স্তন মুখে নিয়ে চুষতে থাকে চন্দর।উঃ কি নিদারুণ দৃশ্য!হানাদার বাহিনী সেদিন তাদের পুরো গ্রাম, আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।স্বাধীন যেন কল্পনায় দেখতে পায় সব কিছু।
হঠাত বাইরে থেকে কার ডাকে যেন, সম্বিত ফিরে পায় সে।কে যেন তার নাম ধরে ডাকছে।শুনে তো মনে হচ্ছে মেয়েদের গলা।তাড়াতাড়ি চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ে স্বাধীন।দরজা খুলতেই শিল্পী ও তার ছোট ভাই তমালকে দেখতে পায় সে।হাতে বই খাতা, পরনে স্কুল ড্রেস।বৃষ্টিতে প্রায় ভিজে গেছে ওরা।
-এসো এসো,তাড়াতাড়ি ভিতরে এসো।
ওরা সংকোচ না করে ভিতরে ঢুকে যায় ।স্বাধীন গিয়ে বসে তার চেয়ারে।ওদের বসতে বলে খাটে। তমাল খাটে না বসে,খোলা জানালা দিয়ে বৃষ্টির জল ধরতে যেন ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। শিল্পী বইগুলো টেবিলে রেখে, বসে পড়ে খাটের এক পাশে।তার চির হাস্যজ্জ্বল মুখ যেন কোথায় হারিয়ে গেছে আজ।বর্ষার আকাশের মতই মলীন যেন তার চেহারা।
কি হল শিল্পী, একে বারে চুপ চাপ কেন? বাড়িতে কি ছাতা ছিল না,এই বৃষ্টির দিনে ছাতা ছাড়াই স্কুলে রওনা দিয়েছ?
-বাড়িতে কি ছাতা ছিল না!এত দরদ থাকলে কিনে দিলেই পারতেন একটা?
আরে তোমার বাবার টাকার অভাব!চাইলেই ত একটা কেন,দশটা কিনে দিতেন।এ তল্লাটে তোমার বাবার মত ধ্বনী লোক আর কয় জনই বা আছে?
ছাতা ইচ্ছে করেই আনিনি।
কেন?
তাহলে ত আর আপনার পাশে বসে ,এমনি করে কথা বলতে পারতাম না।
কি লাভ কথা বলে?
আপনি কি আমাকে কোন দিনই বুঝবেন না।আমর কি কোন মূল্যই নেই আপনার কাছে? কিসের আপনার এত অহংকার?
আমি তোমাকে, প্রথম দিন দেখেই বুঝেছি শিল্পী।কিন্তু কি হবে বুঝে!অভাব যাদের নিত্য সাথী, প্রেম ভালবাসা তাদের জন্য নয়।বাদ দাও ওসব কথা।তোমার পড়াশুনা কেমন চলছে?
তা শুনে আপনার কি হবে? আপনার সামনে বি এ পরীক্ষা,আপনি-ই পড়ুন ভাল করে।আপনি তো চান,আমি মাধ্যমিকে ফেল করি।আচ্ছা, কি দোষ করেছি আমি ?কান্না আর ধরে রাখতে পারে না সে।
দোষ তুমি করতে যাবে কেন?সবই আমার অদৃস্টের দোষ। তুমি কেঁদ না শিল্পী,লোকে দেখলে মন্দ বলবে।বাইরে বৃষ্টি থেমে গেছে।এবার তুমি যাও।
শিল্পী নিরবে বসে থাকে মাথা নীচু করে।বাইরে বৃষ্টি থামলেও ,থামতে চায় না তার চোখের জল।