বললাম না? একটা নতুন রঙ্গিন শাড়ী পরো হীরের গয়না দিয়ে?
প্রথম নাতনীর বিয়ে বলে কথা ! অথচ পরেছ তুমি একখানা ছাই
রণের পুরনো কাপড়। তোমাকে মানায় না একটুকুও তাতে। যাও না,
দেখো গে নিজের চেহারাখানা দেয়ালের আয়নায়। এদিকে সময়
গড়িয়ে যায়, শুনলে না আমার কথা, বদলালে না কাপড়খানা।
তার ওপর, দিলে এক দীর্ঘ বক্তৃতা। বললে, নিজের বিয়েতে
পরেছিলাম টুকটুকে লাল শাড়ী সোনার গয়না দিয়ে, মাথায়
বেঁধেছিলাম জরির ওড়না যা তুমি এনেছিলে ইয়েমেন থেকে।
কপালে লাগিয়েছিলাম লাল টিপ, দুই ঠোঁটে লিপস্টিক। আলতা
পরেছিলাম হাতে পায়ে ছোট বড় সবগুলো নখে। বাসর রাতে, কীভাবে না
খাওয়া মাংসাশী বাঘের মতো হামলে পড়েছিলে আমার ওপর ! মনে পড়ে?
বেশ কয়েক বছর পর, ছোট বোনের বিয়েতে পরেছিলাম গোলাপি
শাড়ী। তখন আমি তিন সন্তানের মা। সে বার গয়না পরিনি একেবারেই।
খোঁপায় গেঁথেছিলাম একটি রক্ত জবা, আর গলায় পরেছিলাম বেলি
ফুলের মালা। তুমি বলেছিলে, মানিয়েছে খুব! মনে পড়ে?
মেয়ের বিয়েতে পরলাম হলুদ শাড়ী, যা জামাই বাবু এনেছিল
জয়পুর থেকে। সাথে পরেছিলাম হীরের গয়না সেট, যা তুমি জোর করে
কিনে দিয়েছিলে ইটালিতে। সেদিন আমার ছবি তুলে তুমি বাঁধাই করে
টাঙ্গিয়েছিলে দেয়ালে। এখনও সে ছবি মাঝে মাঝে দেখো লুকিয়ে লুকিয়ে।
তারপর গড়িয়ে গেল দীর্ঘ পঁচিশ বছর। আজ এলো এক বিশেষ দিন।
আমার প্রথম নাতনীর বিয়ে। ততদিনে আমি প্রৌঢ়া। গয়নাগুলো
সব ভাগ যোগ করে দিয়ে দিয়েছি ছেলে-বৌ আর দুই মেয়েকে।
নাতনীরাও পেয়েছে ছিটে ফুটো। নতুন শাড়ী আজকাল আর কিনি না।
ঈদে পর্বে যা তুমি দাও তাই। পুরনোগুলোই ঘুরে ফিরে পরি। এ বয়সে
কী হবে আর সেজে গুজে। দাঁত পড়েছে, চুল পেকেছে, হাঁটুতে বাত,
চোখে ছানি, আরো কতো উপসর্গ ! এখন কেবলই ভাবি, সেদিনের কথা,
যেদিন লুবানের জলে গোসল করিয়ে, নিজ হাতে আতর মেখে আমাকে
পরিয়ে দেবে আমার একমাত্র পাড়বিহীন শাদা শাড়ীখানা, যা ভাঁজ করে
অতি যত্নে তুলে রেখেছি আলমেরার উপরের তাকে। তারপর পাল্কীতে
করে নিয়ে যাবে নিম গাছের তলে, সাজিয়ে দেবে আমার নতুন সংসার
ছোট্ট মাটির ঘরে; যেথা থাকবো আমি একাকী তোমার দুচোখের আড়ালে।
থাকবে না কোনও কাজ, অলস ঘুমবো কেবলই মাটির বিছানায়।
ঘুমের জন্য থাকবে না কোনও অনুযোগ অভিযোগ।
পথিকের বেশে, মাঝে মাঝে এসে, দেখে যেয়ো ওগো, তোমার পরশ মাগি
ডাক দিলে তুমি, প্রিয়তমা বলে, শুনি বা না শুনি, সহসা উঠবো জাগি।
আজকের দিনে এমন হৃদয় ছোঁয়া কথাগুলো না পাড়লে হতো না?
এখন বলো, নাতনীর বিয়েতে যাই, না চোখের জল সামলাই!
১৯ জানুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
১০ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪