[ভুমিকা: গল্পটি পূর্বে সায়েন্সফিকশন সংখ্যায় প্রকাশিত ক্রাইম গল্পের দ্বিতীয় পর্ব, যারা আগের পর্বটি পড়েন নি তাদের পরে নেয়ার অনুরোধ রইল]
এক.
দেড়’শ তলায় এক সুসজ্জিত অফিস। প্রতিদিনই অফিসে আসছে ওরা, নিয়ম মেনেই। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওদের হাতে কোন কাজ নেই। আজও একসাথে বসে কফি খেয়ে আড্ডাবাজি কোরে, যে যার কামরায় বসেছে। এরিনের সাথে ভাব হবে এটা কল্পনাও করতে পারেনি রিরন আর সিমন। সম্পূর্ণ ব্যাতিক্রম স্বভাব ওদের মধ্যে। এরিন স্বভাবে লক্ষ্মি কিন্তু আচরনে চঞ্চল এবং বুদ্ধিমতি মেয়ে। গায়ের রং একটু চাঁপা হলেও চেহারার গড়ন ও শারীরিক কাঠামো চমৎকার, উচ্চতা বেশী নয় ৫ ফিট ১ ইঞ্চি হবে। আর ওরা হচ্ছে ক্রিমিনাল। ক্রিমিনাল হলেও দেখতে শুনতে রিরান বা সিমন কেউই কম যায় না। রিরান একটু অগোছাল হলেও, স্বভাবে সপ্রতিভ। সিমন গোছানো কিন্তু কিছুটা ক্ষেপাটে। ওরা তিনজনই অসাধারণ বুদ্ধিমান, শুধু এইখানেই তাদের মিল।
ক্রেয়ন ওদেরকে এক সাথে করে এই অফিসটা উপহার দিয়েছে। তাদের নিয়ে ক্রেয়ন কি পরিকল্পনা করেছে তা তারা এখনো বলতে পারছেনা। গত ১৫ দিন ধরে ওরা প্রতিদিন অফিসে আসছে। কোন কাজ নাই বলে প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে সিমন। কখনো গেম খেলে, কখনো খেলা দেখে সময় পার করে দিচ্ছে। আজ সিমনের অবৈধ খেলাটা খেলতে ইচ্ছে করছে। সলিসিট স্ক্রিনে মোড়ানো টেবিলটাতে ওর কমিউনিকেশন ডিভাইসটা রাখতেই, টেবিল সেটটাকে এক্সেপ্ট করে নিল। সেট টাতে স্টোর করা পার্সোনাল এপস-ড্রয়ার থেকে একটা রেসিং গেম খুলে টেবিলের স্ক্রিনে অঙ্গুলী নির্দেশনায় পাঠিয়ে দিল। দুই আঙ্গুলের নির্দেশনায় ছবিটাকে বড় করে নিয়ে, থ্রী-ডি অপশনটাকে চালুকরে দিতেই টেবিলের উপর একটা নির্জন বন এবং তার ভিতর দিয়ে এবরো থেবরো একটা মাটির রাস্তা ভেসে উঠল। সাতজন মটর সাইকেল আরহী রেসিং এর জন্য এক সারিতে দাড়ানো। সিমন দুই হাতে হলোগ্রাফিক স্টিয়ারিংটা চেপে ধরতেই তার মস্তিকে একধরনের মাদক সংকেত পৌছে গেল। ওর মনে হলো সত্যি সত্যি সে একটা এক্সেল মটর সাইকেলে চেপে বসেছে। সে অনুভব করতে পারছে তার শরীরে জড়ানো আছে অসংখ্য মারনাস্ত্র। রেসিং এর সময় বনের ভয়ংকর ভংয়কর জীবজন্তু তো আছেই, তাদের সাথে সাথে অন্য ছয়জন ভয়ংকর মটর সাইকেল আরোহি কেউ হত্যা করতে হবে রেসটাতে জিততে হলে। রাস্তাটাও ভয়ংকর, ঠিক মত মটর সাইকেল নিয়ন্ত্রন করতে না পারলে সাক্ষাৎ মৃত্যু। ভায়োলেন্ট গেমিং এর জন্য একে নিষিদ্ধ করা হলেও সিমনের অত্যন্ত প্রিয় খেলা এটি। নিরাপত্তা কর্মীরা টের পেলে চৌদ্দ শিকে আটকে থাকতে হবে, তিন তিনটা বছর। দুইজনকে বধ করে সামনে এগিয়ে চলছে সিমন। উত্তেজনায় শরীর কাঁপছে। খেলাটায় প্রতিবার ফর্ম চেঞ্জ হয়ে যায়। অনেকবার খেললেও আগে থেকে কিছুই বলা যায় না, এর পর কি বিপদ আসছে।
: এটা কি সিমন? তুমি এই বাজে গেমটা খেলছ? ছি!
এরিন কখন রুমে ঢুকেছে উত্তেজনায় টের পায়নি সিমন। ডিভাইসটা টেবিল থেকে সরিয়ে নিতেই সয়ংক্রিয় ভাবে গেমটা বন্ধ হয়ে গেল। স্বাভাবিক হতে সিমনের একটু সময় লাগল, এই খেলার ঘোর কাটতে একটু সময় লাগে।
: “সিমন তুমি আইনত একটা দন্ডনীয় অপরাধ করছ।” এরিন আবার শুরু করল। “তুমি ভেবনা আমি তোমার বিরুদ্ধে নালিশ করতে পারবো না। তবে এবার আমি কিছু করছি না।”
: যাও নালিশ কর যত খুশি। তবু এই কারাগার থেকে মুক্তি পাব। কাজ ছাড়া থাকতে থাকতে বোর হয়ে যাচ্ছি, তুমি বুঝতে পারছ? ঝাজের সাথে কথা গুলো বলল সিমন।
টেবিলের পাশে রাখা একটা চেয়ারে বসে এরিন বলল, “ আমার মনে হয় ক্রেয়ন আমাদের ধৈর্য্য পরিক্ষা করছে।”
: আমি মোটেই ধৈর্য্যশীল না। এটাকি আলাদা করে পরীক্ষা করার কোন দরকার আছে? আমাকে জিজ্ঞাস করলেই আমি বলে দিতাম। নয়তো এখনি বলে দেই...কামিউনিকেশন ডিভাইসটার দিকে হাত বাড়াল সিমন।
: রাখ, অস্থির হও কেন? ওকে থামাল এরিন। “শোন ক্রেয়ন কোন কাজ না দিক, আমরা নিজেরাই তো কাজ বের করে নিতে পারি, তাই না?
: চল, ঘোড়ার ঘাস কাটি।
: ফাজলামি করো না। চিন্তা কর।
: তারচে’ চল বাইরে থেকে লাঞ্চ করে আসি, রিরান কে ডাকি। কি বল?
: চল।
দুই.
রিরনের এপার্টমেন্টে বসে আছে সিমন। আগের মতই অগোছাল, যন্ত্রপাতি ছড়ানো ছিটানো চারিদিকে।
: এভাবে তো আর বসে থাকতে ভাল লাগছে না। বিরক্তি প্রকাশ করল সিমন।
: কেন ভালইতো আছি।
: তোর ভাল লাগছে? তুই কি এরিনের প্রেমে পড়েছিস নাকি? তোদের ভাবভঙ্গি ভাল ঠেকছে না আমার।
: আরে ধুর! ও আমাকে পছন্দ করবে নাকি? আমরা ছিলাম ক্রিমিনাল।
: তা হলে ক্রিমিনালদের সাথে কাজ করছে কেন?
উত্তরের জন্য অপেক্ষা করল না সিমন। বলল, যাক! তারচে’ চল নতুন একটা প্রজেক্ট বের করি। এখন আমরা যা করছি তাতে আমাদের সন্দেহ করবে না কেউ।
: তুই আবার ক্রাইম করতে চাইছিস?
: নীতিকথা কপচাবি নাতো, ভাল লাগেনা। তুই থাকবি কি না বল।
: তোর আইডিয়া টা কি?
: ফান্ড ট্রান্সফার।
: কি ভাবে?
: ইনফরমেশন ক্লোনিং। ধর তুই যখন ইউনিট (অর্থ) ট্রান্সফার করিস অথেনটিকেশনের জন্য তোর ডিভাইসে থাম্ব বার সহ ম্যাসেজ আসে। সেই থাম্ব বারে তোর ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুলটা রাখিস তার পর ডিভাইস ফিংগার প্রিন্ট স্ক্যান করে অথেনটিকেশন করে নেয়, তাই না?
: হ্যাঁ। খুবই সিকিউরড একটা পদ্ধতি।
: এখন বলতো, আমি যদি আমার একাউন্টে এক্সেস করতে চাই কি করি?
: অন-লাইন একাউন্টে লগ-ইন করিস।
: ঠিক তাই। কোন একটা সিগনালের মাধ্যমে আমি লগ-ইন করি, ঠিক কিনা?
: হ্যাঁ।
: এই লগইন সিগনাল চ্যানেলের মধ্যে একটা স্ক্যানার বসিয়ে সিগনাল ডাটা গুলোকে কপি করা যাবে কিনা বল?
: কঠিন, তবে অসম্ভব নয়।
: ডাটা কপি হলেই ডাটা গুলোর একটা ক্লোন করে ফেলব, তখন আমার নিজেরাই লগ-ইন করে ফান্ড ট্রান্সফার করে ফেলব। সম্ভব?
চোখ গোল করে সিমনের আইডিয়াটা গিলছিল রিরান। বেশ কিছুক্ষন চিন্তা করে বলল, কিন্তু যে একাউন্টে ইউনিট ট্রান্সফার করা হবে তা সহজেই মার্ক করা যাবে, তাইলেই তো আমরা ধরা পড়ে যাব।
: ঠিক ধরেছিস। সেই জন্য একটা ভুয়া একাউন্ট খুলতে হবে।
: একাউন্ট খোলা কি এত সোজা? একটা সিটিজেন নম্বর দিয়ে মাত্র একটাই একাউন্ট খোলা যায়,এছাড়া ফিংগার প্রিন্ট লাগবে।
: আমার আইডি দিয়ে খুলব তাতো বলিনি। অনেক আই.ডি আছে যেগুলো দিয়ে একাউন্ট খুলা হয় নি। ডাটাবেস থেকে সেই সব আইডি নম্বর চুরি করে নিতে হবে।
: কিন্তু ফিংগারপ্রিন্ট?
: নকল ফিংগার প্রিন্ট আপলোড করে দিব।
: ও মাই গড! তুই দেখি বিশাল প্লান করে ফেলেছিস।
: সম্ভব কি না বল?
: মনে হচ্ছে সম্ভব। কিন্তু এতে নিরপরাধ একজন লোক ফেসে যাবে।
: না যাবে না, ফিংগার প্রিন্ট চেক করলেই বুঝতে পারবে ঘটনা ভিন্ন।
তিন.
ডাটাবেস থেকে একাউন্ট নাম্বার নেই এমন সিটিজেন নম্বর বের করতে গিয়ে দেখল অত্যন্ত সীমিত লোকেরই ব্যাংক হিসাব নম্বর নেই। পাসকোড হ্যাকিং করে এদের প্রোফাইল যাচাই করতে গিয়ে দেখল এই লোক গুলো আসলে সমাজ বিছিন্ন থাকতে ভালবাসে। যাক এর মধ্যে দুই তিনটে আইডি এবং ইনফরমেশন কপি করে নিল। সিমন নম্বর গুলো থেকে তিনটি নম্বর বেছে নিল যাদের তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারনা পাওয়ার সুযোগ নেই। এদের কোন কমিউনিকেশন ডিভাইসও নেই। তাদের নামে আগে কমিউনিকেশন ডিভাইস নম্বর তৈরী করা হল এবং নকল ফিংগার প্রিন্ট দিয়ে ঝামেলা ছাড়াই তিনটে ব্যাংক হিসাব খুলে ফেলল ওরা। এই কাজটাই ছিল কঠিন কিন্তু খুবই সহজে কাজ গুলো করলো ওরা। অতিরিক্ত সতর্কতা হিসাবে তারা নিজেদের অবস্থানে ডিভাইসটাকে সব সময় ডিসকানেক্ট করে রাখলো যাতে তাদের লোকেশন যেন কেউ আইডেন্টিফাই না করতে পারে।
এখন রিরানের কাজ হল সিগনাল পয়েন্টে একটা কপিয়ার বসানো। বহুত পরিশ্রম করে একটা সিস্টেম ডেভলপ করে ফেলল ও যা খুব সহেজেই ডাটা কপি করতে পারছে। কিন্তু এনক্রিপট পাসওয়ার্ড কে বের করতে গিয়ে বেশ ঘাম ঝড়াতে হল ওকে। কিন্তু ব্যাস্ততার মাঝে ডুবে গিয়ে হঠাৎ তাদের মধ্যে একধরনের আনন্দ অনুভূতি চলে আসল।
সব কাজ সুন্দর মতই চলছে। এইবার তাদের টিকির সন্ধান পাওয়াও সম্ভব নয় ভেবে বেশ তৃপ্তি পাচ্ছে সিমন। বেশ কয়েকটি একাউন্ট থেকে ফান্ড ট্রান্সফার করে ওরা মহা আনন্দে নৃত্য শুরু করে দিল। সমস্যা হচ্ছে এই ইউনিট জমিয়ে রাখার কোন সুযোগ নেই। ধরা পরার সাথে সাথে একাউন্ট ফ্রিজ হয়ে যাবে, অন্য একাউন্টে নেয়ার সুযোগও নেই সিগনেচার রেখে যাবে ফলে ধরা পড়ে যেতে হবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব ইউনিট ভোগ করে ফেলতে হবে। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে দুইজন সমুদ্রতীরবর্তী একটা পর্যটন শহরে বেড়াতে চলে গেল। প্রাচিন একটা প্রবাদ ছিল, টাকা দেবে গৌরি সেন, সেই রকমই গৌরি সেনের ইউনিটে দুরন্ত মৌজ মাস্তিতে ভসে গেল দুইজন।
চার.
প্রায় অর্ধ উলঙ্গ হয়ে বিচে শুয়ে থেকে সকালের কোমল রোদ গায়ে মাখতে মাখতে আপেল জুসটা উপভোগ করছিল রিরান আর সিমন। বাধ সাধল এরিন। বাধ্য হয়েই কল এক্সেপট করতে হল। এরিনের হলোগ্রাফিক ছবি ভেসে উঠল। বুকে হাত ভাঁজ করে দাড়িয়ে একটু বাঁকা হয়ে দাড়িয়ে দুই জনের দিকে তাকিয়ে বলল, বাহ! বেশ ভালই তো আছ?
: কাজের কথা বল, বিরক্ত হল সিমন।
: ভাল খবর আছে। ক্রেয়ন আমাদের জন্য একটা এসাইনমেন্ট দিয়েছে।
: কি এসইনমেন্ট?
: একটা ফান্ড ট্রান্সফার জালিয়াত চক্রকে খুঁজে বের করতে হবে।
ধর-মর করে উঠে বসল রিরন ও সিমন। আঁড় চোখে ওদের দিকে তাকাল এরিন, কি ভাবছে বোঝার ইচ্ছা নেই অন্য দুইজনের।
১৬ জানুয়ারী - ২০১২
গল্প/কবিতা:
৩২ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪