আজ ২৬ শে মার্চ,বন্ধুরা সবাই সাভার স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে গেছে।আমি বিছানায় শুয়ে নীল আকাশের বিশালতা দেখছি।আজকের আকাশটা মনে হয় একটু বেশি নীল।আচ্ছা মাহাত্ব্যের দিক থেকে কি ২৬ শে মার্চ এই বিশাল আকাশের চেয়ে বড? তাহলে আমি কেন বন্ধুদের সাথে যেতে পারলাম না? আসলে যেতে পারিনি বললে ভুল বলা হবে,আমাদের গ্রামের সেলিম মিয়াদের মত হতভাগ্য মুক্তিযোদ্ধারা আমাকে স্মৃতিসৌধে যেতে দেয় না। সেলিম মিয়া,১৯৭১ সালে যিনি ছিলেন টগবগে যুবক।কবি নজরুলের ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধে যৌবনের যে কয়টি বৈশিষ্টের কথা বলা হয়েছে তার সব কয়টি তার মধ্যে উপস্থিত ছিল।দাদুর মুখে শুনেছি মুক্তিযুদ্ধের আগে গ্রামের বিভিন্ন সমস্যায় সেলিম মিয়াকেই সবার আগে পাওয়া যেত।তিনি নাকি আমাদের গ্রাম সহ প্রাশ্ববর্তী কয়েকটি গ্রাম স্বাধীন করার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।যুদ্ধের সময় শত শত হানাদারদের নিজ হাতে খুন করেছেন।তখন প্রচলিত ছিল তার নাম শুনলে হানাদারদের প্যান্ট নষ্ট হয়ে যেত।যুদ্ধের পরও গ্রামের সব রাজাকারদের একসাথে দাড করিয়ে খতম করে রাজাকারশুন্য গ্রাম ঘোষনা করেন। গতবার বাডিতে গিয়ে গ্রামের বন্ধুদের সাথে রাস্তার ধারে গল্প করছিলাম, এ সময় পাশ দিয়ে সেলিম কাকা যাচ্চিলেন।আমি তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম- -কাকা স্বাধীনতা সম্পর্কে আমাদের কিছু বলুন? -এইসব ফালতু গল্প আর ভাল লাগে না বাবা।এই বাংলাদেশের জন্য আমি যুদ্ধ করি নাই,তুমিই বলো তুমি, আমি কি আসলে স্বাধীন?আগে বিদেশি হায়েনারা শোষন করত আর এখন দেশী হায়েনারা আমাদের ছিডে খাচ্ছে।ঘুষ ছাডা একটা পাতাও নডে না, ক্ষমতা থাকলে খুন-দূর্ণীতি করলে কোন বিচার হয় না।নেতার যা ইচ্ছা তাই করছেন ঠিক পাকিস্তানীদের মত।ঐ ৯ মাস স্বাধীনতা নিয়ে কত যে স্বপ্ন দেখতাম!যুদ্ধে মারা গেলেই ভাল হত সেই স্বপ্ন নিয়েই মরে যেতাম।স্বপ্ন ভঙ্গের জ্বালা সইতে হত না।তুমিই বল এর নাম কি স্বাধীনতা? তাহলে অধিনতা কি? উনার কথার কোন উত্তর দিতে পারিনি,শুধু বুঝেছি ‘অভিজ্ঞতার দার্শনিকতা পুস্তকের দার্শনিকতার চেয়ে অনেক শক্তিশালী’।মুক্তিযুদ্ধ সেলিম মিয়াকের তার কাংখিত স্বদেশ দিয়েছে, কিন্তু যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশের পরিণতি সেই তেজদীপ্ত সেলিম মিয়াকের পুডে ভস্ম করে দিয়েছে।আচ্ছা গোলাপ থেকে যদি সৃষ্টিকর্তা ঘ্রাণটুকু কেডে নেন তাহলে সে গোলাপের আর কি মূল্য থাকে?কাগজের ফুল আর গোলাপের মধ্যে কি কোন তফাৎ থাকে? বাংলার খরস্রোতা নদীর মত সেলিম মিয়াও ধীরে ধীরে তার সমগ্র তারুন্য হারিয়ে কাগজের বাঘ হয়ে আছে।
চরম অর্থনৈতিক ও মানসিক কষ্টের মাঝেও কতটা দেশপ্রেম থাকলে একটা লোক এভাবে দেশ নিয়ে ভাবতে পারে? এইসব সেলিম মিয়ারা আমাদের পতাকা এনে দিয়েছেন আমরা কি এদেরকে তাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ উপহার দিতে পারি না? আর কতকাল স্বাধীনতা আমদের অধরা থাকবে?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সূর্য
হতাশার পুরোটুকু দায় আমি শাসক (পক্ষান্তরে শোষক) দের দেবার পক্ষে নই। এ দায় আমাদের। আমরাই তাদের ক্ষমতার মসনদে পাঠাই শোষিত হবার জন্য, তার পর কষ্টকাব্য রচি। ছোট একটি গল্পে বেশ কয়েকটি সুন্দর পাঞ্চ লাইন আছে যা উল্লেখ করার মতো। গল্প ভাল হয়েছে।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।