মেয়েটি সংসার চেয়েছিল

দেশপ্রেম (ডিসেম্বর ২০১১)

বীরেন মুখার্জী
  • ১৮
  • 0
  • ৮০
আমি তাকে কেবলি ভাঙি; ভাঙতে ভাঙতে আবার গড়ে তুলি। সচেতন ও অবচেতন মনে তৈরি হওয়া স্বপ্নগুলো উড়িয়ে দিতে বৃত্ত আঁকি। আমি মনে করি এ তার পুনর্জন্ম। প্রত্যেক মানুষ কোনো না কোনো ভাবে জীবদ্দশায়ই বার বার জন্ম নেয়। এটিই প্রকৃতির নিয়ম। যে কারণে আমার সকল প্রচেষ্টা কখনো তার প্রয়োজনে, আবার কখনো আমার মনের তৃষ্ণা মেটাতে। আমি তার ওপর শতভাগ বিশ্বাস স্থাপনের চেষ্টা করি। নানা কথার ভেতর দিয়ে আসল সত্য অনুসন্ধানে মেতে উঠি। তার কোমল হৃদয় আমার ৰোভ ও অনুরাগ জারিত কথা শুনে বিহ্বল হয়ে পড়ে কিনা কিংবা তার মনে কোনো বড় ধরণের ৰতের সৃষ্টি হয় কিনা তা আমি বুঝতে পারি না। মেয়েটি যখন আমার কাছে ইনিয়ে বিনিয়ে নানা কথা বলে তখন আমি বুঝে যাই তার পৃথিবীর সবটুকু জুড়েই আমার অস্তিত্ব খেলা করে। এভাবেই চলে আসছিল আমাদের গোপন প্রণয়। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সে একদিন আমার কাছে আশ্রয় চায়। কিংবা আমিই তাকে প্রণোদিত করি। অবশেষে আমি তাকে আশ্রয় না দিয়ে পারি না। বিবর্তিত বাস্তবতায় আমি ভুলে যাই যে আমি মধ্যবয়সী। আমি তাকে কথা দিয়ে সংসারের প্রতি মোহগ্রস্ত করে তুলি। যে মোহে আমার নির্জন ফ্ল্যাটে সে ছুটে আসে একদিন। আমি তার মধ্যে কোনো পিছুটানের উপস্থিতি লক্ষ্য করি না। অথবা সে কোনো পিছুটান রাখতে আগ্রহী নয়। রমণী চরিত নিয়ে আমি বরাবরই অনুসন্ধিৎসু...

মেয়েটির আগমনের দিন সকাল থেকে অঝোর ধারায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়। আমার নির্জন ফ্ল্যাটের জানালা দিয়ে যতদূর চোখ যায় শুধু ধোঁয়াশার মত বৃষ্টি। জানালায় দাঁড়িয়ে আমি বৃষ্টি পতনের শব্দ শুনি। নিজের অজান্তে জানালা পথে হাত গলিয়ে বৃষ্টি ছুঁয়ে দেখি। আমার ফ্ল্যাটের পাশে সারি সারি দাঁড়ানো সবুজ দেবদারু পাতাগুলো প্রতীক্ষিত বৃষ্টির আদরে কেমন যেন নুয়ে পড়েছে। তবুও তারা খুব সতেজ, প্রাণবন্ত। আমার চোখের পাতা ভিজে আসে। নির্জনতায় বুদ হয়ে থাকতে থাকতে আমি কেমন যেন অসহায় বোধ করি। আমার সমস্ত শিরা-উপশিরা হিম হয়ে আসে। আমি প্রতীক্ষিত তবু...

অবশেষে বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। জ্বলে ওঠে শহরের সড়ক বাতিগুলো। আমি প্রতীক্ষা করি। ভেতরের বাতি জ্বালানোর কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে জানালার পাশেই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকি। আমার দৃষ্টিসীমা কুয়াশার মতো বৃষ্টি এবং সড়ক বাতির স্বল্প আলোয় ফ্ল্যাটের পাশের বাগান পথেই সীমাবদ্ধ থাকে। ঘুরে ফিরে মনের ভেতর উঁকি দেয় রবীন্দ্রনাথ। আমি জানালা থেকে সরে রবীন্দ্রনাথের ছবির সামনে এসে দাঁড়াই। সত্যজিৎ রায়ের আঁকা এ ছবিটি আমার জন্মদিনে মেয়েটিই আমাকে উপহার দিয়েছিল। আমি ডিভিডিতে রবীন্দ্র সংগীত চালিয়ে দিই মৃদু শব্দে। ঘরময় ঘুরতে থাকা 'আনন্দধারা বহিছে ভুবনে'র সুর-সুখে উন্মাতাল হয়ে উঠি। ঘরে বিদ্যুৎ না থাকায় মোম টেনে জ্বালিয়ে দিই। বাতিটি রাখি রবীন্দ্রনাথের পায়ের নিচে। আলো-আধারিতে ভরে ওঠে ঘর। আমি দরজাটা ভেতর থেকে ভেজিয়ে দিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ি মেঝেতে। সারাদিনের অপেক্ষা জনিত ক্লান্তির সঙ্গে নৈরাশ্য এসে জোট বাঁধে। ক্রমশ রাত বাড়ে, বাড়ে কৌতুহল। গভীর নৈঃশব্দ্য জুড়ে বসে আমার সত্তায়। আমি টের পাই ঘুমের রাজ্যের হাতছানি। তলিয়ে যেতে থাকি গভীরে। অবশেষে দরজায় মৃদু টোকার শব্দে জেগে উঠি। কতক্ষণ ঘুমের আবেশে ছিলাম টের পাই না। নিভু নিভু মোমবাতিটার দিয়ে তাকিয়ে চোখ কচলে নিয়ে স্থির হয়ে বসি। মেয়েটি দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করে। তার পরনের কাপড় ভিজে গায়ের সঙ্গে লেপ্টে আছে। সে ধীরে ধীরে আমার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। গলে যাওয়া মোমের হালকা আলোয় তার অপরূপ মুখশ্রী উজ্জ্বল হয়ে ওঠে আমার চোখে। আমি নিজের মধ্যে মৃদু কাঁপন অনুভব করি। সে আমার কাছে এসে কাঁধে হাত রেখে মুখটা নিচু করে দাঁড়ায়। আমি হতবিহবল হয়ে পড়ি। তার পরনের কাপড় ভেজা অথচ আমার ঘরে বাড়তি কোনো কাপড়ের ব্যবস্থা নেই। সে বলে ভেজা কাপড়েই সে যথেষ্ট উত্তপ্ত। আমি জানতে চাই সে ক্ষুধার্ত কি-না। সে আমার কাছে সংসারের দায়িত্ব চায়। আমি বুঝতে পারি না আমার কি করা উচিৎ। আমি নতুন মোম জ্বালানোর চেষ্টা করি আর সে আমাকে উজ্জ্বল আলোর বিপরীতে স্বল্প আলোয় টেনে নিতে চায়। আমি তার মুখটা উঁচু করে তুলে ধরে টের পাই আমার বুকের মধ্যেও জন্ম-জন্মান্তরের তৃষ্ণা। তার ঠোঁটও কম্পমান। আলো-ছায়ার ব্যবধান কমিয়ে আমি তার হাত ধরি... ততক্ষণে নিভে যায় মোম। মেয়েটির চোখে জল... ঘরময় রবীন্দ্র সংগীতের আবহ। তৃষিত আমি, মেয়েটির বুকেও তৃষ্ণার ঝড়...

অবশেষে আমি তাকে আজ রাতেই ফিরে যেতে বলি। আশ্রয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েও আশ্রয়হীন করতে চাই। আমি তাকে যে ভাষায় ফিরে যাবার কথা বলেছি সেটাকে ঠিক তাড়িয়ে দেয়া বলে কিনা এ মুহূর্তে ভাবতে চাই না। বাস্তবতায় আমাকে কঠিনভাবে ভাবতে শিখিয়েছে তাই হয়তো অত সহজে কথাগুলো আমি বলতে পেরেছি। এই সাড়ে তিন বছরের মধ্যে এ ধরনের কথা তাকে আমি বহুবারই বলেছি। কিন্তু আজ রাতে যা বলেছি সেটা কীভাবে বলতে পারলাম তা নিয়ে আমিও খুব বিচলিত। নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার একবারও মনে হয়নি আমার এ ধরনের আচরণের পর মেয়েটি যদি আত্মহত্যার পথে পা বাড়ায় তাহলে সে পাপের ভার সারাজীবন আমাকেই বহন করতে হবে। আজ রাতের এ ঘটনা হয়তো চিরকাল লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে যাবে। কিংবা রটনা হয়ে যাবে তার মৃত্যুর পরদিনই। আসলে আমি কি তার মৃত্যু কামনা করেছি কোনদিন!
এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় আমার। খোলা জানালা গলে সকালের তেজি রোদ আমার চোখে এসে পড়েছে। আমি বিছানা থেকে উঠে জানালা দিয়ে বাইরের শান্ত প্রকৃতির দিকে তাকাই। আকাশটা বেশ পরিষ্কার। আমার মনে হলো বৃষ্টির আদর পেয়ে তৃষিত দেবদারু গাছের পাতারা ক্রমশ সজীব হয়ে উঠছে...
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এ কে এম মাজহারুল আবেদিন লেখনি দিয়ে যে মানুষকে এলোমেলো করে দেওয়া যায়, তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ.....
sakil lekhar gotimoyota besh valo legeche . shuvokamona roil
আহমেদ সাবের একটা চমৎকার আধুনিক ছোট গল্প। মূল ইঙ্গিতটা “হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় আমার......। বাক্যে। আপনার কাছ থেকে আরও অনেক গল্পের আশা রেখে।
শাওন খান গল্পটি পড়তে ভালো লাগলো,
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি গল্পে প্রাসঙ্গিকতা না থাকলেও । ভিন্ন স্বাদের প্রেমের গল্পটি পড়ে আমার অনেক ভালো লাগলো। বীরেনদা কে জানাই আমার প্রান ঢালা সুভেচ্ছা। প্রিয়তে নিলাম আপনাকে ......সেই সাথে প্রাপ্যটাও দিয়ে গেলাম্ ।ধন্যবাদ..............................
সৌরভ শুভ (কৌশিক ) মেয়েটি সংসার চেয়েছিল,লেখাটি ভালো লেগেছিল /
ম্যারিনা নাসরিন সীমা চমৎকার সাবলীল লেখা । সমাপ্তি টা সুন্দরভাবে করা যেত । আগামিতে আরও লেখা চাই বিষয়ভিত্তিক । সবার লেখা পড়েন আমাদের ভাল লাগবে ।
M.A.HALIM ভালো লাগলো। বন্ধুর জন্য শুভ কামনা রইলো।
মামুন ম. আজিজ লেখনি খুবই ভালো মানের কিন্তু বিষয়ভিত্তিক মোটেও না। এটা কষ্ট দিল। শুভ কামনা ফর নেক্স্টটাইম

০৫ নভেম্বর - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী