খুব গভীর ভালোবাসা অথবা ঈর্ষার গল্প”

ঈর্ষা (জানুয়ারী ২০১৩)

জাকিয়া জেসমিন যূথী
  • ২৬
  • ৫৭
সুখ দুঃখ নিয়েই মানুষের জীবন। চিরকাল মানুষের জীবন এক রকমভাবে কাটে না। যে মানুষটা বছরের পর বছর কষ্ট করে যেতে থাকে, তারও একদিন সুখের মুখ দেখার সৌভাগ্য হয়। আল্লাহপাক রব্বুল আলামীন কাউকেই শুধু এক ধরনের অবস্থায় ডুবিয়ে রাখেন না।
আজ থেকে প্রায় বছর ত্রিশেক আগে ডাক্তার বাড়ির তিন নম্বর ছেলে মহীন ভালোবেসে বিয়ে করেনঢাকার ধানমন্ডির ফারিহাকে। ছাত্র অবস্থায় বিয়ে করে দেশের বাড়ি বউ ফেলে রেখে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হতে নিজের মাস্টার ডিগ্রি কমপ্লিট করেন। ছাত্র হিসেবে তিনি মন্দ ছিলেন না। প্রাইভেট টিউটর হিসেবেও নাম কুড়িয়েছেন।অংকের প্রশ্ন দেখেই উত্তর বলে দিতে পারতেন। ছাত্রাবস্থায়ই নিজের ভালোবাসার ফসলের জন্ম দিলেন। আজকের ইডেন মহিলা কলেজে বিএ ফাইনাল পরীক্ষা দিতে বসে পেইন উঠে গেলো ওনার জীবনসঙ্গী ফারিহার। ধরাধরি করে আজিমপুর ম্যাটার্নিটিতে নেবার পরে ফারিহার কোল আলো করেএক কন্যা সন্তানের জন্ম হলো। গ্রামে থাকা স্কুলের গন্ডি না পেরুনো প্রায় অশিক্ষিত দাদী নাতনীর চেহারা দেখে যারপরনাই খুশী হয়ে বলে উঠলেন, “আমার বড় ব্যাটার ঘরের মাইয়া তাসনির সাথে নাম মিলায়া আমি তোমার বেটির নাম রাখলাম তানজি।”
গ্রামের বাড়িতে ডাক্তার বাড়ির চার বউয়ের মধ্যে তিন নম্বর জন ঢাকার শিক্ষিত মেয়ে হলেও তার মধ্যে সারা গ্রামের কেউ কখনো কোন অহংকার দেখতে পায়নি। অত্যন্ত সহজ সরল হাসি খুশী বউটা। এদিকে বড় জা ছিলেন শাহজাদপুরের মেয়ে। পটল চেরা চোখে রুপে গুণে অনন্যা। পারেন না এমন কাজ বোধহয় একটাও নেই। ওনার মনেঅবশ্য সেজন্যে কোন ঈর্ষা ছিলো না। সারা সংসারটিকে একেবারে আপন হাতে গড়ে চলেছেন। ছোট জা’দেরকে কাজ শেখাচ্ছেন। হাসিমুখে ভুল ধরিয়ে দিচ্ছেন। শশুড় শাশুড়িকে কিভাবে মন ভরিয়ে দেয়া যায় সেটাও। এমনটা সাধারণতঃ বাস্তবে দেখা যায় না। ওসব সিনেমার কারবার!
আজ শশুড় শাশুড়ি দু’জনার কেউই বেঁচে নেই। আর মিসেস মহীনও এখন আর গ্রামের বাড়িতে থাকেন না। একটা সময়ে স্বামীর এনজিও চাকরি সুবাদে দেশের আনাচে কানাচে ছুটে বেড়িয়েছেন। বাচ্চাকাচ্চার পড়াশুনার ক্ষতি হয়েছে তখন। তারপরে, মেয়ের পরে আরো দুই ছেলের জন্ম হবার পরে একটা সময় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, “নাহ আর নয় ছুটাছুটি। নিজেদেরও বয়স হয়ে যাচ্ছে, এখন একটা স্থায়ী জায়গায় থিতু হওয়া প্রয়োজন।” এইসব ভেবে সব ছেলেমেয়ে নিয়ে মিস্টার-মিসেস মহীন ঢাকায় নিজেদের বাড়ি করে স্থায়ী আসন গাড়ার পরিকল্পনায় ঢাকায় আসার মনস্থ করছিলেন।কেননা ঢাকায় ওনাদের বেশিরভাগ আত্মীয়স্বজন থাকে।
মিস্টার মহীনএকটা সময় ছাত্র অবস্থায় বিয়ে করে বউকে খাওয়া পরার সঠিক যোগান দিতে পারেন নি। সবসময় ভেবেছেন, “এর চেয়ে আরেকটু ভালো অবস্থা হোক, আমি আমার বউ বাচ্চার সব অপূর্ণতা পূরণ করে দেব।” কিন্তু, যেই ভাবা সেই কাজ-টা কখনো করা হয়ে উঠলো না। কারণ কি! কারণ আর কিছুই না। মিস্টার মহীন খুবই সৌখিন। বিশেষ করে খাওয়াদাওয়ায়। এনজিও চাকরির সুবাদে দেশের আনাচেকানাচে ওনার যেতেই হয়। তাঁর চাকরিটা এক জায়গায় বসে থাকার মত আরামের চাকরিও নয়। ক্ষেত খামার পরিদর্শন করাটা তাঁর নিয়মিত কাজ। খালি হাতে বাসা থেকে বেরোলেও প্রায় সময়েই দেখা যেতো, উনি দু’হাতে জায়গা না পেয়ে একগাদা বস্তাটস্তা নিয়ে বাসায় ঢুকেছেন। মিসেস মহীন ও বাচ্চারা প্রথম প্রথম অবাক ও বিরক্ত হতো। এখন এইসব গা সওয়া হয়ে গেছে। বস্তা থেকে বের হতো নানা রকম টাটকা ফলমূল, শাকসবজি, মিষ্টি টিষ্টি এইসব। এইসব করতে গিয়ে মিস্টার মহীন কখনোই টাকাপয়সা জমাতে পারলেন না। ওনার কোন ব্যাংক ব্যালেন্সও নাই।
মেয়েটা যখন মাত্র ইন্টার পড়ছে, কলেজ ফাইনাল দেবে দেবে, এই সময় অফিসের এমডির সাথে রেগেমেগে হুট করে তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাসার সব আসবাবপত্র নিয়ে ধুম করে ঢাকায় শশুড় বাড়ি উঠে পরলেন। শশুড় মশাইও তেমন টাকাপয়সার মালিক নন। সাধারণ মধ্যবিত্ত। নিজে একটা চারতলা বাড়ি বানিয়েছিলেন ঢাকার ধানমণ্ডি এলাকায়। সেই স্বাধীনতার পর পর ঘুষ খেতে হতে পারে ভেবে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাড়ি ভাড়ার টাকায় সাত সন্তানের ভরণ পোষণ ও বিয়ের ব্যবস্থা করে চলছিলেন। এর মধ্যে, বড় মেয়েটা যদি তার বেকার স্বামী ও তিন সন্তানসহ হঠাৎ ঘাড়ে চড়ে বসে, তাহলে কোন বাবা খুশী হতে পারে!
এদিকে মেয়ে জামাইয়ের মাঠেঘাটে কাজ করে অভ্যাস হয়ে গেছে। সে ঢাকা আসার পরে শহুরে কোন কাজে আর অভ্যস্ত হতে পারছে না। এই চাকরি, ঐ চাকরি কত্ত চাকরির যে ধরনা দেয়া চললো তার আর ইয়ত্তা নেই। বয়স হয়ে গেছে! চাকরির বাজারে এখন আর বুড়োদের কদর নেই। অবশেষে শশুড় মশায়ের যেই বাসাটায় উঠেছিলেন, প্রাইভেট টিউশনির কোচিং চালু করে দিলেন। দিন রাতের পরিশ্রমের মাধ্যমে মেয়েকে ডিগ্রি পাস করালেন। এবং ছেলেটাকে বুয়েটে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিঙে। ছেলে নিজেও বসে ছিলো না। নিজেও টিউশনি করে পরিবারকে টানতে লাগলো যাতে বাবার কাঁধের ভার একটু হলেও হালকা করা যায়। মেয়েটাও তেমনি। হাতের কাজের অর্ডার নিয়ে ঠিকই নিজের হাতখরচ চালিয়ে নিতে লাগলো। মিস্টার ও মিসেস মহীনের একটা সুবিধা, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বাড়তি কোন কিছু নিয়ে যেমন চাহিদা নেই, ছেলেমেয়েগুলোও হয়েছে তেমনি। চাকরি ছেড়ে দেবার পরে পাঁচ ছয় বছরের মধ্যে ঢাকা শহরে সব আত্মীয় স্বজনের কত বিয়ে, কত অনুষ্ঠানে যেতে ভালো পোশাক-আশাক, গয়নাগাটি দরকার হয়েছে। কিন্তু, নিজের বাবার সামর্থ্য নেই। গয়নাগাটি, বাড়তি কিছু না হলেও চলবে। এমন মানসিকতায়ই গড়ে উঠেছে তানজি ও দুটি ভাই। চাহিদা সীমিত বলেই বন্ধু বান্ধবের আড্ডা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ফেলে এসেছে। সবচেয়ে বেশি যে বিষয়ে আদিখ্যেতা করেছে তা হলো পড়াশুনা। শুধুই পড়াশুনা। পড়াশুনার জন্য কোন দাওয়াতে যাওয়া যাচ্ছে না। বাসায় কেউ আসলেও মেহমান বরাবরই একটা কমন কথা শুনেছে, “এই ওর পরীক্ষা। আস্তে কথা বলো।” ওদের এই অত্যাচারে অনেকেই ওদের বাসায় যাওয়া অপছন্দ করতো। বলতো, “আসিমদের বাসায় যাওয়া যায় না। গেলেই কেমন বিরক্তি দেখায়!”
এভাবেই কেটে গেছে ঢাকা শহরে গত এক যুগ আসিম, আরিম, তানজিকে নিয়ে মিস্টার ও মিসেস মহীনের সংসার। সংসার পরিক্রমায় বহু চড়াই উতরাই পেরিয়ে তাদের তিন ছেলেমেয়ের পড়াশুনার আসল গন্ডি পেরিয়ে শখের হাড়ি পূরনের যাত্রা শুরু হয়েছে।
মেয়ে তানজিটা খুব ভালো ছবি আঁকে। ভালো ছবি আঁকাআঁকির জন্য নিজের প্রচেষ্টায় একটা শিল্পী সংগঠনে নাম লিখিয়েছে। সেখান থেকে মাঝেমাঝে দেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক লোকালয় বা পুরাকীর্তি দেখার জন্য পেইন্টিং ওয়ার্কশপ করা হয়। আজকাল মিসেস মহীন মেয়ের একটা আব্দার পূরনের কথা ভাবছেন। কিন্তু, কিভাবে কিনে দেবেন, জানেন না। জিনিসটা হলে সবারই কাজে লাগতো। অন্তত বাসায় একটা থাকলেই তো আর বাইরে কারো কাছে যেতে হয় না। জিনিসটা হলো মোবাইল সেট। সাথে ক্যামেরা। মেয়ের আঁকাআঁকির জন্য নাকি একটা ক্যামেরা হলে ভালো হয়। কিন্তু, তিনিতো দাম শুনে প্রায় অক্কা পেয়েছেন। মেয়েকে বলেই ফেলেছেন “উরেব্বাপস!এগুলার এত্ত দাম! এত দামী জিনিস নিয়া পথেঘাটে কেমনে চলাফেরা করা? একটা টান দিলেইতো কয়েক হাজার টাকা একসাথে হাওয়া!”
তানজি মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলে না। সে নিজেও জানে এতটা দামী জিনিস কিনে দেওয়া এখন চাট্টি খানি কথা নয়। আর তাছাড়া, যদি সত্যি ছিনতাই হয়ে যায় বা নিজেই ভুলে কোথাও রেখে আসে তাহলে তো সাড়ে সব্বনাশ!
নিজে টিউশনি করে এখন ভালো ইনকাম করে। ব্যাংকে একটা কারেন্ট একাউন্টও খুলে ফেলেছে। প্রতি মাসেই স্বপ্ন দেখে টাকা জমিয়ে একটা ক্যামেরা কিনা যায় কি না! কিন্তু নাহ, ভালো ক্যামেরা যত দামের তা ওর জমা হয়ে উঠেনা।
এর মধ্যে আসিমের একটা ডেস্কটপ কম্পিউটার দরকার হয়ে পরেছে। আসিমের নিজের জমানো টাকার সাথে তানজিও কিছু যোগ করার পরে মোটামুটি কাজ চলার মত একটা কম্পিউটার বাসায় উঠে আসে। এখন প্রতিদিন না হলেও মাঝেমাঝে তানজি গান শুনতে পারে। ও যে গান শুনতে খুব ভালোবাসে। আসিম বুয়েটে ক্লাসে চলে গেলে ও বসে বসে কম্পিউটারে গান শুনতে শুনতে বাসার কাজ করে। কখনো কখনো বারান্দায় বসে এক মনে ছবি আঁকে। ছবি আঁকাআঁকি করতে করতে ওর ছবি প্রদর্শনীতে চান্স পায়। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় তরুণ শিল্পীদের চিত্রকলার প্রতিযোগিতায় ও যখন দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে তখন বোনের আনন্দে আসিমের দু’চোখ জলে ভরে যায়। তখনি মনে মনে বলে উঠে, “আপু, আমাদের এই দিন থাকবে না রে! একদিন আমি অনেক বড় কিছু হয়ে তোর সব আশা পূর্ণ করে দেব! তোর জন্য পারবো রে আপু! তোর জন্য পারবো!”
এরও পরে পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলে, আসিম বুয়েট থেকে স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় চলে যায় ফুল স্কলারশিপ নিয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে পিএইচডি করতে। আর, তানজি ছোট বাচ্চাদের একটা স্কুলে পড়ায়। কিন্ডার গার্টেন স্কুলের চাকরির বেতন দিয়ে ভালোভাবেই হাতখরচা চলে যায়। পিএইচডি করতে গিয়ে সপ্তাহে বিশ ঘন্টার পার্টটাইম লেকচার দেয়ার চুক্তি হয়ে যায় আসিমের। সেই টাকায় আসিম নিজে সেখানে পড়াশুনা করে। থাকা খাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। তাই অনেক টাকাই বেঁচে যায়। আসিম খুব কষ্টে বাবা-মায়ের সীমিত আয়ে বড় হয়েছে। তাই ওর বিদেশী মূদ্রার আয়ের প্রতিটা দানা সে মায়ের হাতে পৌঁছে দিতে চায়। কারণ ও জানে, “আমার মা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা! প্রয়োজনের বাইরে একটা পয়সাও আজেবাজে নষ্ট করবেন না। বরং গুছাবেন। জমাবেন।”
শিক্ষকতা পেশায় ভালো বেতনের জন্য বিএড পাশের সার্টিফিকেটটা জরুরী। সরকার থেকে নির্দেশ এসেছে এটা। সুতরাং, মায়ের জোরাজুরিতে শেষ পর্যন্ত তানজিকে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ভর্তি হতেই হলো। তানজি খুব ভালো ছাত্রী। তারপরেও ও যে কাজেই হাত দেয় তাতে সেরা হবার চেষ্টা থাকে। যদিও স্কলারশীপ যোগাড় করে বিদেশে পড়তে যেতে পারেনি ভাইয়ের মত। তবুও।
ঠিক এক বছর পরে তানজি পরীক্ষার ফল বেরোলে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। ফার্স্ট ক্লাস ফিফথ! ছয়শ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পঞ্চম হওয়াটাও কম আনন্দের নয়। তার উপর দেশের চৌদ্দটি ট্রেনিং সেন্টারের মধ্যের সবচেয়ে ভালো সেন্টার হতে। যে সে পাওয়া নয় এটা! খুশীর খবরটা আসিম বরাবর পৌঁছে গেলো খুব শিঘ্রই। রেজাল্ট হলো ডিসেম্বর দু’হাজার দশ এর পঁচিশ তারিখে। এর চারদিন পরে প্রায় পাঁচ বছর পরে আসিম দেশে বেড়াতে আসবে। আসার দু’দিন আগে তানজি ফোন করে জানিয়ে দিলো, “আসিম, প্লিজ পারলে আমার জন্য একটা ডিজিটাল ক্যামেরা আনিস। তুই ফেরার সময়ে আমি তোকে টাকাটা দিয়ে দেব।” বিএড এর ভালো ফল লাভের জন্য ও কলেজ থেকে বারো হাজার টাকা পুরস্কার পেয়েছে। ও এখন এটা দিয়ে বাংলাদেশ থেকেই কোন একটা কিনে নিতে পারে। কিন্তু বিদেশ থেকে আনালে জিনিসটা ভালো পাবে তাই ভাইকে বলা।
নির্দিষ্ট দিনে আসিম বাসায় ফিরে খেতেও বসে না। আগে ব্যাগ খুলে। সবাই গোল হয়ে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। আসিম কি এনেছে দেখার জন্য ভিড়! সবচেয়ে আগে একটা চারকোণা প্যাকেট বের করে বড় বোনের দিকে বাড়িয়ে ধরলো, “এই নে, আপু। এটা তোর জন্য!” তানজি তো প্যাকেটের সাইজ দেখেই বুঝে গেছে এটা ওর সাধের ক্যামেরা। ইস! কত্ত দিনের শখের জিনিসটা হাতে পাওয়া গেলো!! তানজি খুশিতে আটখানা! বার বার করে বলে উঠছে বাচ্চাদের মত, “থ্যাংকু, সো মাচ, আসিম। তুই জানিস না আমার এটা কত্ত দরকার ছিলো!” এতদিনে অন্যদের হাতে ডিজিট্যাল ক্যামেরা দেখে ও ঈর্ষায় মরেছে। এখন ওরটা দেখে অন্যরা ঈর্ষা করবে।
তানজি এমনিতেই খুব হইহুল্লোড়বাজ হাসিখুশি মেয়ে। তার উপর ক্যামেরা পেয়ে ও যে কি করবে, কিসের ছবি তুলবে না তুলবে তার কোন বাঁধ মানছে না। খুশিতে খুবই ডগোমগো। ভাইটা লং জার্নি করে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে কতদিন পরে বাংলাদেশে ফিরলো সেদিকে ওর খেয়াল নেই আর। ও মেতে গেছে ক্যামেরা নিয়ে।
এরও পরে দু’বছর প্রায় যাবো যাবো করছে। ক্যামেরার বয়স। এখন দু’হাজার বারো প্রায় শেষের পথে। ক্যামেরাটা এখন তানজির নিত্যসঙ্গী। ঘুম থেকে চোখ খুলে যদি সকালটা ভালো লাগে তাহলে সেটা ওর ফ্রেমবন্দী করে রাখা চাই। রান্নাবান্না ওর এক ধরনের নেশা। কোন কিছু রান্না করলেই সেটা পরিবেশন করার পরে সেটার ছবি তুলতে হবে। বাসায় যে দুটি ছোট বাচ্চাকে পড়ায় তাদের হাসি কান্নাও ওর চোখে এক অদ্ভূত আনন্দ দেয়। সেই আনন্দটাও যে তুলে রাখতে হবে! আর বাসা থেকে বের হবার সময়ে কি মার্কেটপ্লেস, কি ভার্সিটি কোথায় ওর সাথে নেই ওর প্রিয় ক্যামেরা! মাঝে মাঝে রাতের বেলা ক্লাস শেষ করে একা বাড়ি ফেরার সময় হ্যান্ডব্যাগটার ভেতরের চেম্বারের যে জায়গাটিতে ক্যামেরাটি রাখে ও সেখানে হাতের স্পর্শ দিয়ে দেখে সেটা ঠিক মত আছে কিনা। অথবা, যেন মনে মনে ক্যামেরাটিকে নিশ্চুপে বলে অভয়ের সুরে, “তুই ঠিক থাকিস, প্রিয় ক্যাম!”
কিন্তু, কোন বিপদের আভাস নিশ্চয়ই মনটা অনেক আগেই টের পেয়ে যায়। নইলে কখনো নির্জন পথে এলেই কেন মনের ভেতরে দুঃশ্চিন্তার খচখচানি আসে! সেদিন ঘটলো ঘটনাটা। বাসায় ফেরার তাড়া ছিলো। এমনিতেই খুব কুয়াশা। শীতকাল কখনোই তানজির ভালো লাগে না। জামাকাপড়ের বস্তা পরে কুচকিমুচকি হয়ে থাকতে হয়। সেদিন ছিলো বৃহস্পতিবার। ঢাকা ভার্সিটির আইইআরএর এমএড সান্ধ্যকালীন ক্লাসে নন ফরম্যালের আজহার স্যারের ক্লাসটা অন্যান্য রাতের মত সাড়ে নয়টায় শেষ না হয়ে পাঁচ সাত মিনিট আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিলো। ক্লাস শেষে নিচতলায় তিন চার মিনিট ছিলো তানজি ফ্রেন্ডদের সাথে। সামনে এক সপ্তাহ ছুটি আছে। ছুটির পরেই এসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। মিডটার্ম শুরু হবে। এই নিয়ে কিছুক্ষণ কথা হলো। এবার যার যার বাড়ি ফেরার পালা। তানজির সব বন্ধুরা শাহবাগ দিয়ে বাড়ি ফেরে। একসাথে ওরা ওদিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। আর তানজিকে মহসীন হলের ভেতর দিয়ে একা একা বের হতে হয়। মাঝে মাঝে গা ছমছম করে! অন্ধকার থাকে রাস্তাটা প্রায়ই। সেদিন অবশ্য তাড়া ছিলো। মা বাসায় তাড়াতাড়ি ফিরতে বলেছেন। হেঁটে হেঁটে ও নীলক্ষেতের মোড় পর্যন্ত এসে রিকশা নেয়। তাতে দশ টাকা কম ভাড়া পরে। ও রিকশা ঠিক করে উঠতে যাবে এই সময় বগলের কাছে হ্যাচকা টান! ও হুমড়ি খেয়ে বায়ে রিকশার সাথে খোঁচা খেলো। “উফ!” বলে মুহুর্তেই খেয়াল হলো “আরে, ব্যাগটা!” ব্যাগটা আছাড় খেয়ে মাটিতে পরেনি। ওটা নিয়ে পগার পার হয়ে গেছে ততক্ষণে একটা চিকন বাইক। ও শুধু ওর হৃদয় ছিঁড়ে টেনে নিয়ে যাওয়ার তীব্র চিনচিনে ব্যথাটা টের পেলো বুকের বাম পাশে!
কতক্ষণ ওভাবে ছিলো জানে না। রিকশাওয়ালার ডাকে সম্বিৎ ফিরে পেলো, “আপা, যাইবেন?” “উঁ! হুঁ” বলে চড়ে বসলো রিকশায়। রিকশাওয়ালাকে বলাই ছিলো কোথায় যেতে হবে। বাসায় ফেরা পর্যন্ত মনটা থম ধরে রইলো। মাথাটা ফাঁকা হয়ে গেছে। কিচ্ছু ভাবতে পারছে না। বাসার কাছে রিকশা আসতেই, “ভাইয়া, একটু দাঁড়ান” বলে রিকশাওয়ালাকে দাঁড় করিয়ে রেখে ভেতরে ঢুকে গেলো। দোতলায় বেল টেপার দরকার পরলো না। দরজা খোলাই ছিলো। নব ঘুরিয়ে ঘরে ঢুকেই দেখে মা আর নানী বসে আছেন। মার দিকে তাকিয়ে “পঁচিশ টাকা হবে তোমার কাছে? দাওতো!” “ক্যান তোমার ব্যাগ কই?” জিজ্ঞেস করেও মা বেড রুমে গেলেন আর ফিরে এলেন তিনটা দশ টাকার নোট হাতে নিয়ে। তানজি আবারো ফিরে গিয়ে রিকশা ভাড়া মিটিয়ে পাঁচ টাকা হাতে করে ফিরে এলো বাসায়। ঢুকে গেলো সোজা নিজের ঘরে। ড্রেস চেঞ্জ করলো চুপচাপ! “মাকে কিভাবে বলবো?” অনেকক্ষণ ধরে নিজের ঘর হতে বেরোতে না দেখে মা নিজেই এলেন তানজির কাছে। মেয়ের থমথমে মুখ দেখে আন্দাজ করলেন কঠিন কিছু হয়েছে। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কি হইছে? ব্যাগ হারায় গ্যাছে?” মেয়ের গলায় স্বর নেই! কান্নাভেজা কণ্ঠে হেঁচকি উঠে গেছে। “ও মা কি হইছে কান্তেছো ক্যান?” “আম্-মা, আমা-র ক্যা-মে-রা!!!!!!!!” বলে হাউমাউ করে কান্না শুরু হয়ে গেলো তানজির। “আমমা, আমার বুকটা ভাইঙ্গা যাইতেছে। আম্মা!” মেয়ের কান্নার সাথে সাথে এরকম একটা দূর্ঘটনার খবরে মায়েরও থম ধরে যায়।
অনেক সময় পরে মেয়ের কান্না প্রায় থেমে এলে মা বলে উঠলেন, “থাক! জিনিসপত্র হারালে আল্লাহ বোলছে কষ্ট পাইতে হয় না! আল্লাহ যেই বান্দাকে বেশি পছন্দ করেন তার ঈমানের পরীক্ষা নেন! কান্তে হইবো না। মালের উপর দিয়া গ্যাছে!”
বাবা ছুটে এলো মা মেয়ের হাউকাউ শুনে মেয়ের ঘরে। “কি হইছে?” সব শুনে প্রথমেই বলে উঠলেন, “কি কি ছিলো ব্যাগে? আর কি গ্যাছে?”
আম্মা বলে উঠলেন, “উফ! তোমার এখন এই কথা জানতে মনে চাইলো! ও স্বাভাবিক হোক, সব জানা যাবে। যাওতো তুমি যাও। টিভি দ্যাখো গিয়া।”
তানজির ক্যামেরা হারিয়ে সারা ঘরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এটা শুধু ওর প্রিয় জিনিসই নয়। ওটা ওর বহু আকাঙ্ক্ষিত। ভালোবাসার! নামী দামী গোল্ডের গয়না পেলেও ও বোধহয় এতটা খুশী হবে না। যতটা ও খুশী ছিলো ও ওর ক্যামেরাটা নিয়ে। ওর সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগছে এটা ভেবে যে এটা ওর ছোট ভাই ওর স্টুডেন্টশিপের টাকা জমিয়ে কিনে গিফট করেছিলো। আর ও এটা হারিয়ে ফেললো!
দুইদিন দুই রাত একটুও দু’চোখের পাতা এক করতে পারে না ও। চোখ বুজলেই ব্যাগের কথা মনে হয়! ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ব্যাগটাকে দেখে। কেঁদেকেটে একেবারে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে। আর চোখের চারপাশে ব্যথা! দু’হাতের তালুতে মুখ চেপে রাখলে চোখের ব্যথাটা একটু কম মনে হয়!
আটাশে ডিসেম্বর ওর চাচতো বোন সেতুর বিয়ে! বিয়ের বউ ব্যাংকার। অফিসের ছুটি নেই। আর দেশের অবস্থাও ভালো যাচ্ছে না। তাই পঁচিশে ডিসেম্বর বড়দিনের ছুটির সন্ধ্যায় গায়ে হলুদের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তানজি সাজগোজ খুব ভালোবাসে। প্রতিটা মেয়েরই কমন বৈশিষ্ট্য। তানজির বিশেষ করে ভালো লাগে শাড়ির সাথে সবকিছু মিলিয়ে সাজ ও হাত ভরা চুড়ি। শাড়ি পরার জন্য ওর কোন বিশেষ উপলক্ষ্যের দরকার হয়না। মন চাইলেই শাড়ি পরে। আগে থেকেই ঠিক করা ছিলো সেতুর গায়ে হলুদে সবাই জামদানী শাড়ি পরবে। ওর পরার কথা লাল জামদানি। রোজার ঈদের সময় সবুজের মধ্যে সোনালী প্রিন্টের কাতানের কাপড় দিয়ে ব্লাউজ বানিয়েছে ও। শাড়িটা পরে বাইরে কোথাও যাওয়া হয়নি। শুধু ঐ ঈদের দু’দিন পরে বাসায় পরে ছবি তুলেছিলো। নিজের ক্যামেরায়। ওর নেটবুকে ক্যামেরার সবগুলো ছবিই ইম্পোর্ট করে রাখা আছে। থাকলেই বা কি! আগামীতে কতদিন ক্যাম ছাড়া থাকতে হবে কে জানে! খুব শীঘ্রই কি আর একটা ক্যাম হাতে আসবে!
দু’দিন পরে যখন ও ক্যামেরার শোক কিছুটা সামলিয়ে উঠেছে তখন সিঙ্গাপুর হতে আরিম ফোন করলো মায়ের মোবাইলে। মোবাইলটা তখন তানজির হাতে। কারণ, ও শুধু ক্যামেরাই নয় ওর মোবাইল সেটটাও ঐ ব্যাগের সাথে হারিয়েছে। এরকম একটা দূর্ঘটনা আর কখনোই ঘটে নাই। এক সাথে এত্ত কিছু গেছে। বারো মেগা পিক্সেল এল টুয়েন্টি টুঁ নাইকন ডিজিট্যাল ক্যামেরা! পার্সে ন্যাশনাল আইডি কার্ড আর বারোশ টাকা। দুটি প্রায় নষ্ট মোবাইল সেট। এর একটায় ও গ্রামীন নাম্বারটা ব্যবহার করতো। আর আরেকটা সেটে কোন সিম ছিলো না। ওটা দিয়ে শুধু ক্লাস লেকচার রেকর্ড করতো।
আরিমের কল এসেছে যখন তখন রাত প্রায় বারোটা। বাবা মা ঘুমিয়ে পরেছেন। আরিম তানজির বয়সের ডিফারেন্স আট বছরের বেশি। তা হলেও ওদের তিন ভাই বোনের মধ্যে মনের মিলের দিক থেকে কোন বয়সের পার্থক্য নেই। ওরা যখন কথা বলে বুঝাই যায় না কে ছোট কে বড়। আরিম ফোন করলে তানজি রিসিভ করে “কিও, কেমন আছো?” এর জবাবে বলে উঠলো, “ভালো না রে! আমার খুব দামী জিনিসগুলোর একটা হারিয়ে ফেলেছি!” আরিম জিজ্ঞেস করলো আবার, “দামি জিনিস মানে?” “ক্যান, তোর আপুর দামী ও প্রিয় জিনিসের সংখ্যা তো হাতে গোণা। তুই আন্দাজ কর!” তাও বুঝে না আরিমটা। তারপর ও ভাইকে হিন্টস দিলো, “যে কটা জিনিস আসিম আমাকে গিফট করেছে তার মধ্যে দামী জিনিসটাই। এবার বুঝলি?” আরিমের মাথায় তবু ঢুকেনা। কথাবার্তায় ওদের বাবা-মা জেগে যান। পরে মায়ের সাথে কথা বলার সময় মা বলে দিলো আগাগোড়া পুরো ঘটনাটাই। সব শুনে আরিম বলে উঠলো, “এই জন্যে আবার কান্নাকাটি করা লাগে? আমি আমারটা পাঠায় দিতেছি!” তানজি মশারীর পাশে বসে কথা আন্দাজ করলো। হৈ হৈ করে বলে উঠলো, “কোন দরকার নেই। এই চোরা দেশে কোনকিছু পার্সেল করে পাঠানোর দরকার নেই। দেখা যাবে, সেটাও হারিয়ে গেছে!” এইরকম কতক্ষণ কথা চললো বাবা মা ও দুটি ভাই বোনের মধ্যে। পুরো দু’দিন পরের তৃতীয় রাতে কষ্টে কাটতে থাকা একটা ছোট্ট পরিবারে আনন্দের ঢেউ খেলে গেলো একটু হলেও। তানজির মনের মধ্যে নতুন ক্যামেরার জন্য আনন্দ নয়। এই আনন্দের সূচনা একটা স্বর্গীয় সম্পর্কের কারণে। আপন বাবা মা ভাই বোনের তুলনাহীন পবিত্র সম্পর্ক। যেখানে কোন ঈর্ষার স্থান নেই। আছে শুধু পরস্পরের প্রতি আত্মিক টান।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি এতদিনে অন্যদের হাতে ডিজিট্যাল ক্যামেরা দেখে ও ঈর্ষায় মরেছে। এখন ওরটা দেখে অন্যরা ঈর্ষা করবে। ......পাওয়া না পাওয়ার মধ্যে ঈর্ষার বিষয়টা অদ্ভুত ভাবে ফুটে উঠেছে এই একটি মাত্র বাক্যের কারনে.....সেই দিক থেকে গল্পটি স্বার্থক মনে হয়েছে....জুই আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ...........
ভালো লাগেনি ২৮ জানুয়ারী, ২০১৩
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ, আমার গল্পটি বুঝার জন্য।
ভালো লাগেনি ২৯ জানুয়ারী, ২০১৩
তাপসকিরণ রায় ক্যামেরার ঘটনাটা গল্পে প্রাধান্য পেয়েছে।এর জন্যে গল্পটিকে এত দীর্ঘ না করলেও বোধ হয় চলতো। তবে ভাব ভাবনা ধারাবাহিকতায় গল্পটি ভালো লেগেছে।
ভালো লাগেনি ২৭ জানুয়ারী, ২০১৩
জীবনের গল্পের লতা পাতা একটু বেশি লম্বাই হয়, তাপসকিরণ রায়। তাই আমার গল্পেও সেটাই উঠে এসেছে। আর, ডিজিট্যাল ক্যামেরা এখন অনেকের হাতেই দেখা গেলো দাম কিন্তু একেবারে হাতের নাগাল নয়, মধ্যবিত্তের জন্য একটা ঈর্ষার বস্তুই।
ভালো লাগেনি ২৮ জানুয়ারী, ২০১৩
ঠিক,এতো সব জানাছিল না,আমি ভুল,আপনি ঠিক।
ভালো লাগেনি ২৮ জানুয়ারী, ২০১৩
সূর্য পুরো বাস্তবতায় গল্প, আবেগে পরিপূর্ণ.......
Lutful Bari Panna আরে কিছুদিন আগেই না তোমার ক্যামেরা হারালো। তোমার ভাইও দুইজন- একজন কম্পিউটার সাইন্সের ছাত্র, অ্যামেরিকা থাকে। তাহলে কি নামগুলো ছাড়া সবই সত্যি? যাই হোক আমার কিন্তু খুবই ভাল লেগেছে।
ভালো লাগেনি ২৬ জানুয়ারী, ২০১৩
ওহ পান্না ভাই, জীবনের গল্পে তো বাস্তবতা কিছুটা থাকবেই। ভালো লেগেছে জেনে খুশী হোলাম।
ভালো লাগেনি ২৮ জানুয়ারী, ২০১৩
সালেহ মাহমুদ বাস্তব জীবনের সুন্দর গল্প, ভালো লাগলো।
ভালো লাগেনি ২৩ জানুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ, সালেহ ভাই
ভালো লাগেনি ২৪ জানুয়ারী, ২০১৩
ওয়াছিম গল্প টি ভালো লাগলো আপুনি..........
ভালো লাগেনি ১৯ জানুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ, ভাইয়ামুনি।
ভালো লাগেনি ২৪ জানুয়ারী, ২০১৩
প্রিয়ম অনেক অনেক সুন্দর একটা পারিবারিক গল্প পরলাম ভালোলাগলো |
মোহাঃ সাইদুল হক অনেক সুন্দর গল্প। ভালো লাগলো। শুভ কামনা রইলো।
পন্ডিত মাহী ছোট গল্পের প্রথম দিকটায় একটা আলাদা আকর্ষন থাকে, কিছু লাইন চুম্বকের মত হয় যা গল্পের ভেতরে কি আছে সেটি জানার প্রেরণা দেয়। আপু তোমার এই গল্পের সেটি দেখলাম না। গল্পের ভেতরেও আরো আঠা দেওয়া দরকার। না হয় পাঠক লেগে থাকবে না। আপন কষ্টের কথা উঠে এসেছে, সেটির প্রতি সহমর্মিতা সব সময়।
ভালো লাগেনি ১৭ জানুয়ারী, ২০১৩
পণ্ডিত, আমি যখন গল্পটা লিখেছি তখন এতকিছু আসলে ভাবিনি যে, কোন পাঠক কি মনে করে নেবে। আমার কোন কোন পাঠক এটা পড়ে, চোখে ভিজিয়ে ফেলেছে। এনি ওয়ে, তুমিও আমার একজন দক্ষ সমালোচক ভালো সাহিত্য-বন্ধু। তোমার উপদেশটাও মনে গেঁথে নিলাম। থ্যাংকিউ।
মামুন ম. আজিজ তোমার ছোট গল্পের বুনটে একটা সমস্যা আছে, ক্যারেকটার গুলো বিশ্লেষন করতে করতেই গল্পের অর্ধেকাংশ পেরিয়ে গেছে, ছোট গল্পে ক্যারেকটাররেরর এই বিশ্লেষন এত বড় করলে পাঠক একটু অধৈর্য্য হয়ে উঠতে পারে। পরতে পরতে , ফাঁকে ফঁাকে ক্যারেকটার বিশ্লেষন করলে মনোটোনাস কমে। ..উপদেশ থাক.....গল্পে তোমার নিচের ক্যামেরা আর মোবাইল হারানোর দুৎখ স্পষ্ট প্রকাশিত। ....ঈর্ষা বিষয়টা কম এসেছে। চিন্তার সূতো পাখা মেলেছে কিছূটা ......শেষে দেশেকে চোরা বলাটা ঠিক হলোন। দেশ চোরা নয়, চোরা এখানের মানুষজন অনেকে
ভালো লাগেনি ১৬ জানুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ, গুরু বন্ধু, আপনার সুচিন্তিত বিশ্লেষনী মন্তব্যের জন্য। আসলে দেশকে আমি খুবই ভালবাসি। দেশকে চোরা বলতে চাইনি। বলিওনি। দেশ তো চুরি করেনা, চুরি করে দেশের মানুষই... কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ওইরকমটাই চালু হয়ে যায়। এনি ওয়ে, সাহিত্যিক হিসেবে যদি এটা আমার বাক্যবিন্যাসজনিত ভুল হয়ে থাকে, তাহলে সেটা ধরিয়ে দিয়ে ভালো করেছেন, শ্রদ্ধেয় সাহিত্য-বন্ধু। আগামীতে আরো সচেতন হবার আশা রাখি। আর, একটা গল্প যেই থিমের, সেটা সারাক্ষণ গল্পের ভেতরে বাজানো আমার ভালো লাগেনা। তাই ছোট্ট একটা জায়গায়, ঈর্ষা বোধটাকে প্রকাশ করেছি। আর ঈর্ষার বিপরীতে ভালোবাসা, বা ভালোবাসার বিপরীতে ঈর্ষা এটাই তো নিয়ম । সবশেষে অসংখ্য ধন্যবাদ। সাহিত সমালোচনা ও তর্ক ভালোই লাগে।

১৭ অক্টোবর - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪