প্রতিদিন নার্সারিতে যাওয়ার সময় কনি মন খারাপ করে। কিন্তু ওর বয়স অনুযায়ী ও খুবই শান্ত আর রাশভারী, তাই কিছু বলে না ও, শুধু ওর চোখ দুটো ছলছল করে। কনির মা সবই বুঝে, সবাই হয়তোবা ওকে নিয়ে হাসাহাসি করে, কিন্তু কিছুই করার নেই। সুপ্রিম কাউঞ্ছিলের নিয়ম অনুযায়ী কনিকে স্কুলে পাঠাতেই হয় নইলে কনির মা-বাবাকে “সন্তান প্রতিপালনের অযোগ্য” ঘোষণা করে কনিকে অন্য কোন পরিবারের কাছে দিয়ে দেয়া হবে। কে জানে, হয়তোবা এটাই হলেই ভালো হতো কনির জন্য! ছেলের দিকে তাকিয়ে কনির মারও মন খারাপ হয়ে যায়। তাই যতোটা সম্ভব কোমল স্বরে কনিকে ঘুম থেকে জাগায় কনির মা।
“কনি বাবা, উঠো, সোনা আমার!” কনির কপালে চুমু আঁকে মা।
কনি উঠে মোটেও কান্নাকাটি করে না, ওর মার দিকে চেয়ে সুন্দর করে হাসে। ওর বয়স মাত্র চার, এরই মধ্যে কনি জেনে গেছে ওর একটু হাসি ওর মা-বাবার কাছে অনেক মূল্যবান। কনিকে হাত-মুখ ধুঁতে কোনরকম সাহায্য করতে হয় না। যদিও গোসলখানার সবকিছুই আপনা থেকেই কাজ করে, তার উপর কনিদের গৃহস্থালি রোবট কনিকে অল্প সময়ের মধ্যেই নিখুঁত ভাবে নার্সারিতে যাবার জন্য প্রস্তুত করে দেয়। এতোটা নিখুঁত আর পরিপাটি করে প্রস্তুত করে দেয় যে, পলার মনেহয় কনি একটা বায়োবট! যারা কিনা, ভিতর থেকে রোবট আর বাইরে থেকে মানুষ, খুব ভালো করে লক্ষ্য না করলে এখন মানুষ আর বায়োবটদের আলাদা করা যায় না। তাই রোবটের আগোচরে আদর করার সময় মা কনির পরিপাটি করে আঁচড়ানো চুলটা একটু নষ্ট করে দেয়, অথবা কনির পড়নের নার্সারির ইউনিফর্মটার উপরের বোতামটা খুলে দেয়।
কনিরা তারপর সবাই মিলে সকালের নাস্তা করতে বসে, যতক্ষণ ওরা নাস্তা করে, রোবটটি ওদের টেবিলের গা ঘেঁসেই দাঁড়িয়ে থেকে। এমনিতে রোবটরা চলে ইলেক্ট্রিসিটিতে, খাবারের বিলাসিতা অথবা প্রয়োজন কোনটাই তাদের নেই। তারপরও দাঁড়িয়ে থাকে কেননা রোবটদের এইভাবেই বানানো হয়েছে আর এই ছোট বাসায় রোবটের নিজস্ব কোন জায়গা নেই। কনিরাই মনেহয় ওদের ডোমের মধ্যে একমাত্র পরিবার যারা কিনা প্রতিদিন দুইবেলা সত্যি কারের খাবার খায়। এখন আর কেউ খাবার খায় না, পানিই খায় না! দরকার পড়ে না, কেননা খাবার আর পানির জায়গা দখল করে নিয়েছে বিভিন্ন রকমের ট্যাবলেট আর চিউইংগাম। এমনও আছে একটা ট্যাবলেট খেলে আর সারামাস কিছুই খেতে হয় না। এই ট্যাবলেট গুলো খুবই সস্তা, নিরাপদ, আর সুপ্রিম কাউঞ্ছিল কর্তৃক অনুমোদিত। আর অন্যদিকে, আসল খাবারের অনেক দাম, এছাড়া সুপ্রিম কাউঞ্ছিল খরচ কমানোর জন্য আর বিভিন্ন অজুহাতে এই খাবার খেতে সবাইকে নিরুৎসাহিত করে। সবাই এখন বছরে দুইএকদিন সত্যিকারের খাবার খায়, তাও যেদিন বড় কোন আনন্দ উৎসব থাকে, সেইদিন!
কনির বাবাদের পূর্বপুরুষ এসেছিলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে, উনারা বেশিরভাগই কৃষক ছিলো। আর কনির মায়েদের পূর্বপুরুষ এসেছিল আরও পূর্বের দ্বীপদেশ থেকে, যাদের সবাই ছিলো জেলে। প্রায় হাজার বছর আগে, “এক বিশ্ব-এক দেশ” আন্দোলন খুব জনপ্রিয়তা পায়। দেশে দেশে, শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে পৃথিবীর হাজার কোটি অধিবাসী পূর্বাপর না ভেবেই ওই আন্দোলনে যোগ দেয়। যার ফলশ্রুতিতে সব দেশ মিলে এক হয়ে “সুপ্রিম কাউঞ্ছিল” প্রতিষ্ঠিত করে, পৃথিবীর বুক থেকে আপাতঃদৃষ্টিতে বিদায় নেয় সমস্ত “আন্তর্জাতিক সীমারেখা”। সারা বিশ্ব তখন থেকেই একটাই বৃহৎ রাষ্ট্র। যেখানেই ছিলো অনাবাদি জমি, কৃষকরা উন্নত ভাগ্যের আশায় পাড়ি জমায় ওইসব জায়গায়। যেখানেই ছিলো বৃহৎ অব্যবহৃত জলাধার, সেইখানেই হামলে পড়ে জেলেরা। যেখানে ছিল একটি কারখানা, সেইখানেই হামলে পড়লো হাজারো শ্রমিক। সেই অরাজকতা কাটাতে সময় লাগলো পুরো একশতক!! কিন্তু তারপরের ইতিহাসও খুব একটা সুখের ছিল না। পৃথিবী ক্রমে ক্রমে হয়ে পরে অসহায়, যেখানে ছিল তিনভাগ জল, সেখানে পৃথিবীতে পানির জন্য হাহাকার এখন। পরিবেশ হয়ে পড়ে এমন দূষিত যে, প্রায় পাঁচশত বছর আগেই পৃথিবীর মানুষকে আশ্রয় নিতে হয় বৃহৎ কাঁচের গোলোকের মধ্যে। প্রতিটা গোলককে বলা হয় ডোম। আর এক ডোম থেকে অন্য ডোমে অথবা ডোমের বাইরেও যেতে লাগে অনুমতি, যা কিনা অতীব দুর্লভ। পাসপোর্ট-ভিসা উঠে গেলেও বাড়তে থাকে অনুমোদন আর অনুমতিপত্রের নতুন নতুন নিয়ম। সর্বপ্রকার দূষণমুক্ত ডোমগুলোর মধ্যেই বেড়ে উঠেছে অন্যরকম সমাজ ব্যবস্হা, পেশা-অর্থনৈতিক অবস্থা ভেদে অধিবাসীদের দেয়া হয় নিদিষ্ট ডোমে বাসস্থান বরাদ্ধ। কনিদের ডোমের সবারই অর্থনৈতিক অবস্থা অনিদের মতোই নাজুক। বরং অনেকের অবস্থাই অনেক বেশি খারাপ। অনির বাবা একজন শিল্পী, পাথর খুদে অথবা কৃত্তিম কাঠের খণ্ড দিয়ে বিভিন্ন রকমের প্রতিবিম্ব তৈরি করাই তার অনুমোদিত পেশা। কিন্তু তিনি ভুলতে পারেন না তার পূর্বপুরুষদের পেশাকে, আর তাই কনিদের বাড়ির পিছনের এক চিলতে জমিতেই সবাইকে লুকিয়ে চাষ করেন বিভিন্নরকমের সব্জি-ফল। সুপ্রিম কাউঞ্ছিল তীক্ষ্ণ ভাবেই লক্ষ্য করে সবকিছু, তাদের কোটি চোখ, অনেক কষ্টে পৃথিবীকে তারা স্থবির করে রেখেছে, আর কেউ যেন পৃথিবীকে চঞ্চল করতে না পারে তার জন্য তাদের চেস্টার অন্ত নেই। কিন্তু এতো নিয়মের মধ্যে থেকেও কনির বাবা তার নেশা কৃষিকাজ কে সীমিত পরিসরে বাঁচিয়ে রেখেছে সাবধানে, যদিও একটু ফন্দি-ফিকির তাকে করতে হয়েছে। উৎপাদিত সব্জি-ফলের অত্যন্ত দাম বাইরে, কনিদের ডোমের কারও সামর্থ্য নেই এইসব খাদ্য কিনার। এইসব খাদ্যদ্রব্য তাই ভালদামে সুরঙ্গ মারফত পাঁচার হয়ে যায় ধনবানদের ডোমে। সবাইকে খুশি করে কনির বাবার তেমন কিছু থাকে না, কিন্তু সান্ত্বনা এটাই তার পরিবার দুইবেলা সামান্য হলেও সত্যিকারের খাবার খেতে পারছে। তবে, প্রতিবার যখনই নতুন কোন ফল ধরে, অথবা মাটি ভেদ করে মাথা উঁচু করে কোন সব্জি-লতা, কনির বাবার অনেক আনন্দ হয়, তার মনেহয় বিশাল একখণ্ড উর্বর জমি পেতো যদি, অবশ্যই সে ভরে দিত আরও অনেক ফসলে।
প্রতিদিন কনি যখন নার্সারিতে যায়, মা বারবার কনিকে বুঝিয়ে দেয়, যদি কেউ জিজ্ঞেসা করে কনি যেন না বলে তাদের খাবারের কথা! এমনকি কনির ঢেঁকুর তোলাও বারণ!! যদি কোনক্রমে কেউ যেনে যায় যে কনিরা পরপর দুইতিন দিন সত্যিকারের সব্জি-ফল খেয়েছে তাহলেই সুপ্রিম কাউঞ্ছিলের কাছে খবর চলে যাবে। তদন্তের জন্য ইন্সপেক্টর আসবে, কিভাবে কনির মা-বাবার এতো অর্থ হলো যা দিয়ে খাবার কিনে খাওয়া যায় নিত্যদিন!! আর যদি ধরা পরে কনির বাবা নিজেই ফলাচ্ছে এইসব ফল-সব্জি তাহলে সাথে সাথেই কনির বাবা পাবে মৃত্যুদণ্ড, কেননা, সুপ্রিম কাউঞ্ছিলের আদেশ অমান্য করার শাস্তি সর্বোচ্চ এটাই।
সবমিলিয়ে কনিদের দিন এইভাবেই কাটছে, দমবদ্ধ একটা ভাব চারদিকে, বছরের পর বছর ধরে!! কনিদের নার্সারিতে অল্পকিছু ছাত্র, পৃথিবীর জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ডোমপ্রতি জনসংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। সবাইকে সন্তান ধারণ করতে দেয়া হয় না। কর্তৃপক্ষ আগে নিশ্চিত হয়ে নেন যে, নির্দিষ্ট দম্পতির সন্তানের কোনরকম শারীরিক সমস্যা পরবর্তীতে হবে না, আর অবশ্যই ওই নির্দিষ্ট ডোমে জনসংখ্যা বিপদসীমার উপরে যাবে না, তাহলেই কেবলমাত্র সন্তানধারণের অনুমতি পাওয়া যায়।
কনির মা-বাবার ভাগ্য শুরু থেকেই খারাপ ছিলো! যখনি কনিকে তারা পৃথিবীতে আনতে চাইলো, পরীক্ষা করে দেখা গেলো, কনির বেশকিছু শারীরিক সমস্যা হবার সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু তাই না, তাদের ডোমের জনসংখ্যাও বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে আর তাই কনির মা সন্তান ধারণের অনুমতি পেলো না। কিন্তু তাই বলে সে চুপচাপ বসে থাকলো না, কনিকে সে সবার অগোচরে তার গর্ভে ধারণ করলো। সন্তান নিজ-গর্ভে ধারণ করা করা এখন রূপকথাই, সন্তান ভ্রুণে পরিবর্তিত হওয়া মাত্রই তা মায়ের গর্ভ থেকে স্থানান্তর করা হয় সিলিন্ডারে, সেখানেই আস্তে আস্তে পরিণত হয়ে সন্তানের আকার পায় ভ্রূণটি, এছাড়াও প্রয়োজন মতো অস্ত্রপাচার করা হয় এই সময়টাতে। কারও সন্তানের হয়তোবা নাকটা বোঁচা হচ্ছে, তা ঠিক করা হয়। এতে করে, মায়েরা যন্ত্রণাবিহীন, এক নিখুঁত সন্তানের গর্বিত মালিক হয়ে যেতে পারেন।
কিন্তু কনির মার সেই সন্তানধারণের জটিল সময়টাতেই ডাক্তারের কাছ থেকে কোন প্রকার সাহায্য পাওয়া গেলো না, কেননা, সুপ্রিম কাউঞ্ছিলের অনুমতির বাইরে যাবার সাহস খুব বেশি মানুষের নেই। কিন্তু কনির মা-বাবা দুইজনই অসীম সাহসী। শুধুমাত্র নিজেদের মনের জোরকে পুঁজি করেই তারা কনিকে এই পৃথিবীতে আনলো। সবমিলিয়ে কনির মা-বাবাসহ আর মাত্র চারজন জানলো পুরো বিষয়টি। ব্যাপারটি যতোটা সহজ ভাবা গিয়েছিলো ততটা সহজ হয়নি পরের দিকে, জন্মের পরপরই কনির ধরা পড়লো হার্টের অসুখ আর পায়ের খাটোটা, যা কিনা কনির সঙ্গী হয়ে থাকবে সারা জীবন। অবশ্য, উন্নত চিকিৎসা পেলে কনিকে সুস্থ করা কোন ব্যাপারই না কিন্তু এই ডোমে কনির চিকিৎসা করা অসম্ভব, কেননা, সবকিছুরই এইখানে রয়েছে রেকর্ড। কনির মা-বাবা তাই অনেকটা নিভৃতেই কাটিয়ে দিচ্ছে জীবনটা। সান্ত্বনা হচ্ছে, কনির জন্য এই রোগগুলো প্রাণনাশী না, আর স্বপ্ন দেখার সাহস কনির মা-বাবার আছে, উনারা স্বপ্ন দেখে, একদিন কনিকে তারা অন্য ডোমে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করাচ্ছে, যার ফলে তাদের সন্তান হয়ে উঠেছে সম্পূর্ণ সুস্থ।
কনির নার্সারি একেবারেই ভালো না। মায়ের কথা মতো চুপচাপ শুধু বসে থাকে ও। ওর এক পা খাটো, আরেক পায়ের থেকে, কেউ যেন সেটা না বুঝে তাই বাবা বানিয়ে দিয়েছে অন্যরকমের জুতো। তাই হালকা ভাবে খুঁড়ানো ছাড়া কনির আর কোন সমস্যা আপাতঃদৃষ্টিতে নেই। অবশ্য, কনি অন্য সবার সাথে, অন্য সবার মতো দৌঁড়াতে পারে না, পারে না অন্য সবার মতো গলা ফুলিয়ে চিৎকার করতে। কিন্তু তাতে কনির তেমন কোন অসুবিধা হয় না, একা একা বসে নিজের মনে থাকতেই কনির ভালো লাগে। কিন্তু কনির এই চুপচাপ থাকা নিয়ে অসুবিধা হচ্ছে অন্যান্য বাচ্চাদের। তারা কনিকে নিয়ে মেতে উঠে নানারকম ব্যাঙ্গ-বিদ্রূপে, অনেক সময় কনির টিচাররাও তাদের সাথে যোগ দেয়, সবারই ধারণা কনির মাথা পুরো ঠিক নেই। কনি ভালভাবেই জানে, যতক্ষণ নার্সারি চলে, ওর মা নার্সারির বাইরে বসে থাকে ওর জন্য, আর কনিরও কেমন খুব একা লাগে নার্সারির ভিতর, ছুটির সময় তাই মাকে দেখে কনি অনেক খুশি হয়ে যায়।
কনিদের একবার নার্সারি থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো মিউজিয়ামে। কি সুন্দর সেই মিউজিয়াম বলার মতো না! কনিদের এই ডোমে কোন মিউজিয়াম নেই, থাকলে কনি যেতো ঘুরতে নিয়মিত। ওই মিউজিয়ামেই কনি দেখেছিলো বিশাল সমুদ্র বুকে একচিলতে একটি দ্বীপের হলোগ্রাফিক ছবি। ছবিটিকে আরও প্রাণবন্ত করার জন্য সাথে যুক্ত ছিলো পাখিদের কলতান আর সমুদ্রের নোনাগন্ধ আলা ঠাণ্ডা বাতাস! যেন দ্বীপের মাঝখানেই দাঁড়িয়ে আছে কনি, আর কনির মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে কোন সামুদ্রিক পাখি...কনির সারা গায়ে সমুদ্রের বাতাস...মাথার উপর সুনিল আকাশ, তাতে সাদা সাদা মেঘ, সামনে সুবিশাল নীল জলরাশি, যা কিনা দূরে যেয়ে মিলে গেছে আকাশের নীলের সাথে। কনির আর কিছু ভাবতে পারেনি! পৃথিবী এতো সুন্দর ছিলো কখনো?! আর এখন পৃথিবীকে দেখলে কেউ কল্পনাই করবে না যে একসময়ের পৃথিবী কি সুন্দর ছিলো! কনি বাকি সময়টা সেদিন কাটিয়েছিল একটা ঘোরে। সারাদিন ঘুরে কখন, কিভাবে বাসায় ফিরলো কনি তা বলতে পারেনি। সেদিন থেকে তার চিন্তায় একটাই ছবি, একটাই অনুপ্রেরণা, সেটি সাগরের বুকে ছোট্ট একটি দ্বীপের। কনি প্রতিদিন ঘুমানোর সময় চিন্তা করে, সে তার মা-বাবাসহ চলে গেছে সেই দ্বীপে, যেখানে দিনমান বয় ঠাণ্ডা বাতাস আর মাথার উপর দিয়ে পাখি গান করতে করতে উড়ে যায়! ছেলের এইরকম হতচকিত ভাব দেখে মা-বাবার বুঝতে কষ্ট হয় না নিশ্চয়ই কনির কিছু একটা হয়েছে, প্রথমে তারা ভয় পেয়ে যায়, পাছে লোকে কিছু জেনে কি গেছে?! খানিকক্ষণ জোরাজুরির পর কনি মা-বাবাকে সবকিছু খুলে বলে। জানায় তার স্বপ্নের দ্বীপের কথা, এই সময় তার চোখ হয়ে যায় স্বপ্নালু, যেন মনের চোখে সে এখন ওই দ্বীপেই অবস্থান করছে। মা এইসব শুনে খুব খুশি হয়, মা কনিকে বুকে জড়িয়ে ধরে জানায়, মার পরিবারও কোন একসময় এই রকমই দ্বীপদেশের অধিবাসী ছিলো! বাবাও কনির চিন্তার পরিধি দেখে খুশি হয়! কনির সাথে সাথে তারাও হয়ে যায় সেই স্বপ্ন দ্বীপের বাসিন্দা। সবাই মিলে সেই স্বপ্ন দ্বীপের নাম দেয় “কনির দ্বীপ” অথবা “কনি’স আইল্যান্ড”। প্রত্যেক রাতে ঘুমানোর আগে সেই থেকেই সবাই মিলে কনির দ্বীপের কথা বলে, যে দ্বীপে বাবা ফলাবে তার পছন্দের সব ফল-ফুল আর সব্জি। যে দ্বীপে মা কনিকে নিয়ে কোনরকম দুঃশ্চিন্তা করবে না, সারাজীবন তারা থাকবে আনন্দে, বুক ভরে নিবে নিঃশ্বাস……সে দ্বীপ হবে কনিদের একেবারে আপন ঠিকানা, কল্পনার দেশ হলেও সেই দ্বীপ দেশের জন্য কনিরা বুকের ভিতর অনুভব করে অফুরন্ত ভালবাসা!!
বাস্তবের কষাঘাত যতোই নির্মম আর যন্ত্রণাদায়ক হোক না কেন………“কনি’স আইল্যান্ড” এর স্বপ্ন সবাইকে কিছু সময়ের জন্য হলেও নিয়ে যায় সকল যন্ত্রণা থেকে বহুদূরের শান্ত সমুদ্রতটে, সেই দ্বীপের স্বপ্ন তাদের প্রেরণা যোগায় আরেকটি কর্কশ দিনের মুখোমুখি হতে।