প্রত্যুষে মৃত কাক

ভৌতিক (নভেম্বর ২০১৪)

খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি
  • ২২
  • ৯১
নরেণরে..ও নরেণ...ঘুমিয়ে পড়েছিস নাকি? ওঠ বাবা অমানিশা যে এমনি এমনি বয়ে যায়...এ রাতে অমনি করে শুয়ে থাকতে নেই সোনা। তেঁনারা সব শ্মশানে আসতে শুরু করেছেন..ও নরেণ, নরেণ..উঠে আয় বাবা। পাশের ঘরে উপেন জ্যাঠা নরেণকে উপর্যুপরি ডেকে‌ ডেকে হয়রাণ। কিন্তু জ্যাঠার কথায় তিল পরিমান কর্ণপাত করেনা নরেণ। সংক্ষুব্ধ উপেন জ্যাঠা বারবার তাগাদা দিয়ে আশাহত হন। ওদিকে দ্বিধাগ্রস্থ নরেণ ঘটের সঞ্চিত সাহস টুকু হারিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়। শ্মশান থেকে মরার মাথা তুলে আনার মতো বীভৎস কর্মটি সম্পাদন করতে কিছুতেই মনের স‌। ম্মতি পায়না। মৃত্যু ভয় তাকে বারবার শাসিয়ে যায়।
কাজেই উপেন জ্যাঠার বারবার কন্ঠ নিঃসৃত বাক্যধ্বনি শুনে সে আরও ভয়সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। প্রতিদিনের মতো আজও জ্যাঠার সন্ধ্যা আরতি শেষ। এবার তিনি গেরুয়া বসন পরিধান করে কাপালে ত্রিশূল চন্দন তিলক লেপন পুর্বক গাঁজা সেবন করবেণ। তারপর ধুপ ধুয়ার গন্ধবাহে শব্দময় মন্ত্র পাঠ দিয়ে শুরু করবেন তার প্রমিতি কালীসাধনা। একটা নিজঝুম ভুতুড়ে বাড়ীতে যাকে বলে বিদখুঁটে পুজারীর হতজ্ঞান পাগলামি। উপেন জ্যাঠার নিরুদ্বিগ্ন ভয়ানক তান্ত্রিক কর্মকান্ড প্রত্যক্ষ করলে নিশীথে কেনো দিবাভাগে যে কেউ ভয় পেতে বাধ্য।
নরেণ যেদিন এ বাড়ীতে প্রথম এলো সেদিন তো এক মহাকান্ড ঘটে যায়। সারা রাত ভয় বিহ্ববল নরেণ চোখের পাতা দুটো এক করতে পারেনি। একেতো আলগা জায়গা, উপরন্তু গা ছমছমে ভুতুড়ে পরিবেশ, সন্ধ্যা রাতে তাই খেয়ে দেয়ে বেচারা শুয়ে পড়েছিল। হঠাৎ পাশের ঘরে উপেন জ্যাঠার নিষুতি বিদীর্ণ করা মন্ত্রধ্বনি কানে আসায় আচমকা ঘুম ভেঙ্গে যায়। প্রাথমিক অবস্থায় ঘটনার আগা মাথা কিছু বুঝে উঠতে না পেড়ে ঘুলঘুলির ছিদ্র পথে উপেন জ্যাঠাকে মরার মাথার খুলির সামনে ইন্দ্রভূষণ খ্যাপা ভেক প্রতীয়মান হওয়ায় রীতিমত জ্ঞান হারাবার উপক্রম তার। ভয়তরাসে নরেণ আড়ষ্ট দেহে সারারাত বিনিদ্র বসে কায়মনোবাক্যে ছত্রিশ কোটি দেব দেবতার নাম জপতে থাকে। মা’দূগ্গার দিব্বি দিয়ে প্রতিজ্ঞা করে রাত পোহালে অন্যত্র চলে যাবে সেও ভালো তবু এই ভয়ঙ্কর ভুতুড়ে বাড়ীতে আর এক মুহূর্ত নয়।
কিন্তু কি আশ্চর্য পরদিন প্রত্যুষে দেখা গেলো প্রাতঃস্নান সেরে উপেন জ্যাঠা নিজেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে নতুন অতিথির সাথে পরিচিত হতে নরেণের ঘরে এসে হাজির হলেন। জ্যাঠাকে দেখে প্রথমতঃ নরেণ বুঝতেই পারলনা এই উপেন জ্যাঠার আপত্তিকর বাতিকের কারণে বিগত রাতে তার বিভীষিকাময় বিনিদ্র রজনী কেটেছে। যাই হোক জ্যাঠার সঙ্গে পরিচিত হয়ে অবশ্যি সকল ভয়ভীতি জলষ্পর্শ অনলের মতো নিভৃত হয়ে গেলো। মোটের উপর মানুষটা প্রকৃত যে অমাইক তাতে কোন প্রকার সন্দেহ রইলনা আর। নরেণের কাঁচা বয়স দেহ মনে অগাধ শক্তি সাহস। প্রাণ চাঞ্চল্যপূর্ণ সম্ভাবনাময় তরুণ যুবক। সে ভাবে কাপালিক সন্ন্যাসীকে ভয় পাবার কিইবা আছে। পাশে এমন একজন গুনি মানুষ থাকলে ভালই তো মন্দের কিছু নেই তাতে। উপেন জ্যাঠার তান্ত্রিক কর্মকান্ড নীতিগত ভাবে মেনে নিতে কোন রুপ সংশয় প্রকাশ করেনা নরেণ। সেই থেকে ক্রমশ্যঃ তার সাথে হৃদ্যতা গড়ে উঠতে থাকে। মুলতঃ উপেন জ্যাঠারও শক্তিশালী টগবগে স্বভাবের একজন তরুণের খুব প্রয়োজন ছিলো। তাই নরেণকে দেখা মাত্রই জ্যাঠার মনে ধরে। ওকে খড়গী বিদ্যা‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌ প্রদান করে কাপালিক শিষ্য বানিয়ে স্বীয় মনোবাঞ্ছা পুরণ করতে বড় আশান্বিত হয়ে পড়লেন।
পত্নী বিয়গের পর মানষিক বিপর্যয় জ্যাঠাকে পেয়ে বসে। তখন থেকে কিছুটা অনুচিত আত্মজ্ঞান পরিলক্ষিত হয় তার স্বভাব চরিত্রে। গাঁজাভাঙ সেবনে অভ্যস্থ হয়ে পড়লেন। সন্যাস বেশে দিনের বেশীর ভাগ সময় তিনি শ্মশানে কাটিয়ে দিতেন। কূলীন ব্রাহ্মণ হলেও শ্রীচৈতন্য দেবের বিশেষ ভক্ত ছিলেন তিনি। তাঁর ধর্মীয় শিষ্টাচারে বৈষ্ণব মতের বেশকিছু প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। স্ত্রী বিমলা দেবীকে তাই দাহ না করে সমাহিত করার সিদ্ধান্ত নেন। জাতি ধর্ম গোত্র বর্ণ আত্মীয় স্বজন উপেক্ষা করে সতন্ত্র স্বত্বায় বলতে গেলে একঘরে অবস্থায় উপেন জ্যাঠা দিনাতিপাত করেণ।
বাড়ীটা তার পৈতৃক সূত্রে পাওয়া। জমিদার আমলের প্রত্নতাত্তিক স্থাপত্য হিসেবে বেশ পুরাতন। জরাজীর্ণ দেয়ালে বিক্ষিপ্ত ভাবে বেওয়ারিস বৃক্ষ লতার আবরণ থাকায় বাড়ীটাকে বীভৎস লাগে। বট অশ্বত্থের শাখা প্রশাখায় বাদুর ঝোলা ছায়া আরও সুনসুটি করে রেখেছে। অনেক দিন ধরে এটি অতিথিশালা বা মেসবাড়ী হিসেবে ব্যাবহার হয়ে আসলেও ভুতুড়ে গন্ধের সাথে নির্জনতার নিবিড় যোগ সূত্র থাকায় নিতান্ত বেগতিক না হলে এবাড়ীতে ভাড়া নিয়ে মানুষ খুব একটা আসতে চায়না।
বিমলা দেবী যেদিন আকস্মিক দেহ ত্যাগ করলেন সেদিন থেকে ভরসার জায়গাটা জ্যাঠার শূন্য হয়ে যায়। নিঃসঙ্গত্ব কাটিয়ে উঠতে মা’কালীর আরাধনায় তান্ত্রিক সন্যাস রূপে বাকী জীবনটা কাটিয়ে দেবেন বলে মনোস্থির করেন। ইদানীং প্রায়ই নাকি নিশীথে প্রেতাত্মারা তার ঘরে আসেন। যমালয় হতে বিমলা দেবীও আসেন। যথাযোগ্য আসন পেতে সারারাত কথা হয় তাদের সাথে। প্রেতাত্মাদের উপস্থিতির বিষয়টা বিশেষ করে অতিথিশালার সদস্যদের মনে ভয়ের কারণ হয়ে দাড়ালো। তবুও উপেন জ্যাঠার ভৌতিক কর্মকান্ডের প্রসার দিন দিন সহ্যের সীমানা অতিক্রম করতে থাকে। বলতে গেলে একই বাড়ীতে প্রেতাত্মার সাথে জীবাত্মার সহাবস্থান করার এক ভৌতিক বিড়ম্বনা। কারণ বলা তো যায়না দৈবাৎ তেঁনারা কখন কার ঘার মটকায় কে জানে ।
ক্ষণিক ক্ষান্ত দিয়ে দম নিয়ে পুনরায় উপেন জ্যাঠা নরেণকে ডাকেন। প্রেতাত্মারা যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। যমালয় থেকে তেঁনারা আজ মহাশ্মশানে উপনীত হবেন। স্ত্রীর ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে সীয় ইচ্ছা পুরণ করাই জ্যাঠার একমাত্র লক্ষ্য। আজ রাতে দুজন শ্মশানে যাবেন বলে নরেণকে আগে থেকে বলে কয়ে সব ঠিক করে রেখেছেন। যদিও নরেণ কিছুটা ভয় কাতুরে তবু এব্যাপারে উপেন জ্যাঠা মোটেও বিচলিত নন। সিদ্ধান্ত মতো কর্মটি তিনি শিষ্য নরণকে দিয়েই করাতে চান। কারন ভয়কে জয় করতে হলে প্রকৃত অর্থে ভয়ঙ্কর কর্মটি তাকে করে দেখাতে হবে। স্বার্থপরের মতো উপেন জ্যাঠা সাহসের পরীক্ষায় নরেণকে লোভ দেখাতে ছাড়েনা। খড়গী বিদ্যা প্রদর্শণ করে মা’কালীর সান্নিধ্য পাওয়ার এটাই নাকি মোক্ষম সুযোগ তার জন্য অপেক্ষা করছে। ‌ কর্মটি ভালোয় ভালোয় সমাধা করতে পারলে নরেণ পার্থিব শক্তি অর্জণ করে পরমাত্মার সান্নিদ্ধ তথা মা’কালীর কৃপায় পরমায়ু লাভ করবে। চিরন্তন সুখ শান্তি তার হাতের মুঠোয় এসে ধরা দেবে। যা ইচ্ছে তাই করতে পারবে। এতো লোভ লালোসার কথা বলার পরও নরেণের কোন প্রতিবচন শোনা যায়না। তাই কুলে এসে তরী ডোবার উপক্রম দেখে উপেন জ্যাঠা আশাহত হয়ে পড়েন। কিন্তু যে করেই হোক আজ তাকে শ্মশান যজ্ঞ সম্পাদন করতেই হবে।
কারণ বিমলা দেবী স্বপ্ন যোগে জানিয়েছে যমপুরীতে তার আত্মা নাকি বড় কষ্টে রয়েছে। এর প্রকৃত প্রতিকার করতে হলে আজ অমাবস্যা রাতে শ্মশান থেকে ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌তার মাথার খুলিটা তুলে এনে তেঁতুল গাছটার তলায় পুঁতে তার উপর মা’কালীর মন্ডব স্থাপণ করা দরকার। যথা কর্তব্য পালন হলে তবেই বিমলা দেবীর আত্মা পারলৌকিক ভাবে শান্তি পাবে এবং সেই সাথে উপেন জ্যাঠার কালী সাধনাও আজ পূর্ণতা লাভ করবে। সুতরাং উপেন জ্যাঠা হাল ছাড়তে চায়না। মোলায়েম সুরে নরেণকে আবার লোভ দেখাতে থাকেন...ওরে নরেণ এত বড় সুযোগ পায়ে মাড়াতে নেই বাবা..উঠে আয়..এবারটি উঠে আয় বাবা..কালী সাধনা সম্পূর্ণ হলে তোকে আর কর্ম করে খেতে হবেনা..বসে বসে রাজার হালে খেতে পারবি। যা ইচ্ছে তাই করতে পারবি। অভাব বলে কিছু থাকবেনা..ও নরেণ উঠে আয় বাবা..উঠে আয়। শেষ বারের মত উপেন জ্যাঠা লোভের বাণ ছুড়ে মারেণ।
লালসা মাখা মধুর বচন শুনে শুনে একসময় নরেণের কোচি মাথা বিগড়ে যায়। মুহুর্তে ভয় ভীতির উর্দ্ধে উঠে লালসার কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানতে বাধ্য হয়। উপেন জ্যাঠার আহবানে সারা দিয়ে নরেণ সোজা মহাশ্মশানের পথে পা বাড়ায়। শ্মশানে পৌছে উপেন জ্যাঠা কোন রুপ বিলম্ব না করে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে কালীতলা ঘট পুঁতে যজ্ঞ শুরু করে দেন। অপরদিকে বৈষয়িক সম্পর্ক বিছিন্ন করে বিবস্ত্র অবস্থায় মরার মাথা আনার জন্য উপেন জ্যাঠা নরেণকে শ্মশান গমনে আদেশ দেন। বৈষয়িক সম্পর্ক বিছিন্ন অর্থে নরেণের এই যাওয়াই যাওয়া কর্ম সমাধা না করা পর্যন্ত পিছু ফেরার আর কোন উপায় রইলনা।
মহাশ্মশানের পথ ধরে এগিয়ে যায় নরেণ। প্রেতপুরী জুড়ে কেবল অমানিশার অন্ধকার আর সুনসান নীরবতা। দুরে কোথাও কুকুরের করুণ কান্নার ধ্বনি কানে ভেসে আসছে। জোনাকির আলো গুলো এক একটা প্রেতাত্মার ভয়ঙ্কর চোখের জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি হয়ে দপদপ করে জ্বলছে। হঠাৎ পেছন থেকে নাম ধরে কে যেনো তাকে পিছু ডাকে। শরীরের লোম গুলো মুহূর্তে কাটা দিয়ে উঠে। সংশয়ে বুকের ভেতরটায় হূদপিন্ডের শব্দ স্পস্ট শুনতে পায় নরেণ। কিন্তু ওকে এখন ভয় পেলে চলবেনা। মায়ার টানে পিছু ফেরার আর কোনো উপায় নাই তার। এ মুহূর্তে পিছু ফেরার পরিনাম বড়ই ভয়াবহ, ব্যাতিক্রম হলে প্রেতাত্মারা তাকে নিশ্চিত মেরে ফেলবে। চরম উত্তেজনা বশে খড়গ হাতে নরেণ এগিয়ে যায়। সবকিছুকে উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত বিমলা দেবীর সমাধি খুঁজে পেতে সক্ষম হয়।
কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে একাগ্রচিত্তে সমাধি খুরতে থাকে। এক সময় বিমলা দেবীর কঙ্কালটা খুঁজে পায়। স্পর্শ করতে যাবে এমন সময় হাড় সর্বস্ব কঙ্কালটা চোয়াল খটমট করে মায়াকান্না শুরু করে দেয়। শ্মশান থেকে তুলে না নিয়ে যেতে অনুনয় বিনয় করে। কঙ্কালের মায়াকান্না শুনে প্রথমতঃ হাত গুটিয়ে নেয় নরেণ। সাহসের ধার সামান্য পড়ে গেলেও তবু পরাভব মানতে চায় না সে। মা’কালীর নাম নিয়ে খড়গ উচিয়ে কঙ্কাল থেকে মাথাটা এক কোপে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। আর যায় কোথায়! সঙ্গে সঙ্গে প্রেতাত্মারা ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ করে চারদিক থেকে আক্রমন করে বসে। তামাম প্রেতাত্মারা যেনো একযোগে হাউমাউ করে তেড়ে আসে। কখনো বাঘ হয়ে কখনো বা রাক্ষস রুপে। নরেণ খড়গ হাতে ঘুড়ে দাড়ায় অমনি বহুরূপী ভয়ঙ্কর প্রেতাত্মারা সব হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।
শেষ পর্যন্ত ছিন্ন মরার মাথাটা হাতে করে নরেণ এক নিঃশ্বাসে সমাধি থেকে উঠে আসে। অনেক আশা নিয়ে বুক ভরে শ্বাস নেয়। হাতে ধরা মরার মাথাটা যেনো শুধু মরার মাথাই নয় সমগ্র বিশ্ব এখন তার হাতের মুঠোয় বলে মনে হয়। কিন্তু এ সবই যে মোহমায়া নরেণ সে কথাটা একবারও বুঝতে পারেনা। মরার খুলিটা এখন কেবল জ্যাঠার হাতে পওয়ার অপেক্ষা মাত্র। বাকী সব উপাচার সেরে ফেলার জন্য উপেন জ্যাঠা মা’কালীর কৃপায় অধির আগ্রহে কালীতলা যজ্ঞ সাজিয়ে বসে রয়েছেন গভীর আশায়।
বিলম্ব না করে নরেণ শ্মশান থেকে প্রাণপণ হাটতে শুরু করে। রজনী শেষ হয়ে আসছে দেখে আরও জোরে পা চালায়। অমানিশার লগ্ন চলে গেলে সকল কর্মযজ্ঞ তার বৃথা হয়ে যাবে। হাটতে হাটতে নরেণ ঘেমে নেয়ে উঠে তবু পথ যেনো ফুরায়না তার। অনেক্ষণ হাটার পর শেষ পর্যন্ত দেখে আবার সেই একই স্থানে সে ফিরে এসেছে। এমনি করে বারবার দিগভ্রান্ত হয়ে মহামায়ার মহাঘোরে ঘুরপাক খেতে থাকে তবু শ্মশান থেকে কিছুতেই বেরিয়ে আসতে পারেনা। খড়গটা সে হারিয়ে ফেলেছে। অনেক চেষ্টার করেও অন্ধকারে সেটিকে খুঁজে পায়না। উপেন জ্যাঠা বারবার সাবধান করেছিলেন খড়গাটা কখনো হাত ছাড়া না করতে। কিন্তু নরেণ মহামায়ার মহাঘোরে আবিষ্ট হয়ে চ্যুতিভ্রম বশতঃ সে ভুলটিই করে বসে। আত্মদোষে নরেণ শেষ পর্যন্ত আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। অনিবার্য পরিনতির আশঙ্কায় তার প্রত্যাশিত স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। সেই যাওয়াই যাওয়া শ্মশান থেকে নরেণ আর ফিরে আসতে পারেনি। পরদিন প্রত্যুষে অতিথিশালার সদস্যরা নরেণের বিছানায় একটা ‘মৃত কাক’ পড়ে থাকতে দেখে জ্যাঠাকে খবর দেয়। উপেন জ্যাঠা মৃত কাকটির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য ঘট সাজিয়ে কাকযজ্ঞ করতে বসেন।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আশা রাখি অনেক ভালো লেগেছে। শুভেচ্ছা ও ভোট রেখে গেলাম।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে রাখি.....
ওয়াহিদ মামুন লাভলু সমাধি খুরে বিমলা দেবীর কঙ্কালটা খুঁজে পাওয়ার পর হাড় সর্বস্ব কঙ্কালটা চোয়াল খটমট করে মায়াকান্না শুরু করে দিলে কোন মানুষের পক্ষে ঠিক থাকা খুব কঠিন ব্যাপার। কিন্তু নরেণ সাহসের সাথে কাজ করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে রক্ষা পায়নি। তার পরিণতিটা বেদনাদায়ক। খুব ভাল লাগল। শ্রদ্ধা জানবেন।
ওয়াহিদ ভাই অনেক ধন্যবাদ ...শুভকামনা আপনার জন্...।
সোপান সিদ্ধার্থ গল্পের ধার ও ধরণ বেশ ব্যতিক্রমী; কপালকুণ্ডলা’র কথা মনে করিয়ে দেয়। ভালো লাগলো। ভোট ও শুভ কামনা রেখে গেলাম।
অনেক ধন্যবাদ দাদা আপনাকে......
জায়েদ রশীদ গল্পের বিষয়বস্তু সনাতন রীতির সঙ্গে চমৎকার মানিয়ে গেছে। ... আর প্রকাশভঙ্গীও নজর কাড়ে! সুন্দর লিখেছেন।
বিচক্ষণ মন্তব্যের জন্য ....আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ জায়েদ ভাই....
স্বপন চক্রবর্ত্তী সুন্দর গল্প -- শুভেচ্ছা --
নাজনীন পলি চমৎকার বর্ণনায় একটা ভৌতিক গল্প পড়লাম । লেখককে শুভেচ্ছা ।
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ......
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ বেশ সুন্দর গল্প।।শুভ কামনা রইল ।
জসীম ভাই আপনােক ধন্যবাদ......
গোবিন্দ বীন বেশ ভাল চমৎকার।। "আমার চলতি সংখ্যায় কবিতা গুলো পড়ার আমন্ত্রণ করে গেলাম। আশা করি আমার পাতায় আসবেন
খন্দকার মশিউর রহমান সাবলীল ভঙ্গিতে টানটান উত্তেজনায় জীবন্ত এক ভৌতিক কাহিনী । অসাধারণ হয়েছে । সাধুবাদ রইল ।।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ .......

১০ অক্টোবর - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী