আমাদের গ্রামটা ছিল হিন্দু প্রধান গ্রাম। সুতরাং অবাধ সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে আমার বড় হয়ে ওঠা। বার মাসে তের পার্বণ লেগেই থাকতো পাড়ায়। তাই গান বাজনার প্রতি ঝোকের পাল্লাটা ছিল ভারি। বন্ধুদের সাথে দল বেধে পুজা মোন্ডপে ঘুরে বেরানো, ধুপ ধুয়োর গন্ধসিক্ত প্রতিমা দর্শণ, কিম্বা ঢাক ঢোল কাশর বাশীর বাজনা শুনতে ভীষণ ভাল লাগতো। হোই হুল্লোড়ের মাঝে উল্লাসে কেটে যেতো ছুটির দিন গুলো। বিষাদের লগ্ন শুরু হতো প্রতিমা বিসর্জনের মিশ্র আনন্দে। বিকেলে নদীর ওপাড়ে খ্যাপার আখড়া তলায় বসতো বিজয়া দশমির মেলা।
একবার সেই মেলায় গিয়ে বন্ধুরা যখন নাগোর দোলা, চড়কি খেলা, ভ্যাটের খৈ, ভূট্টার খৈ, তিলের খাজা নিয়ে ব্যাস্ত, আমি তখন আটকে ছিলাম এক বাঁশি ওয়ালার দোকানে। তন্ময় হয়ে তার বাঁশি শুনছিলাম। কি সুন্দর করেইনা বাঁশি ওয়ালা বাঁশিতে সুর তুলছিলেন। নাড়াচাড়া করতে করতে অবচেতন মনে কেন যে সেদিন একটা আড়বাঁশি কিনেছিলাম কিছুতেই তা মনে করতে পারিনা। যাক বাঁশি যদি বা কিনলাম তবে তা বাজাবো কি করে তার নাড়ি নক্ষত্র কিছুই জানিনা। লজ্জা ভয় সঙ্কোচ উপেক্ষা করে বন্ধুদের চোখ এড়িয়ে মেলা থেকে বেরিয়ে সন্তর্পণে এগিয়ে গেলাম লোক চক্ষুর আড়ালে নির্জন নদীর পারে। এদিক ওদিক ভাল করে দেখে নিয়ে বিসমিল্লাহ বলে প্রথম বাঁশিতে ফু দিলাম। কেমন যেন ফাটা ফাটা শব্দের সাথে এক গাদা থুথু বেরিয়ে এলো। অনেক আশা নিয়ে আবার ফু দিলাম। না ঐ একই অবস্থা। প্রাণান্ত চেস্টার পরেও অবস্থার কোন উন্নতি না দেখে বাঁশি নিয়ে ভীষণ ঝামেলায় পরে গেলাম। নলের বাঁশি হলে কোন কথা ছিলনা। সরাসরি ফু দিলে ওটা পঁ পঁ করে বাজে। কিন্তু আড়বাঁশি বলে কথা। বুঝতে পারলাম কালার বাঁশি বাজানো যতটা ভেবেছিলাম অতোটা সোজা নয়।
খেই না হারিয়ে স্থির করলাম বলাইদার কাছে গেলে কেমন হয়? বলাইদা খুব সুন্দর বাঁশি বাজায়। গভীর রাতে বাঁশি বাজানো তার নেশা। বাঁশি শুনে চোখ বুজে যে কেউ বলে দিতে পারে ওটা বলাই মহন্তের বাঁশি। এতটাই অহং বোধ নিয়ে বলাইদা পাড়ায় সবার অন্তরে বসবাস করে আসছেন। খ্যাপা বাবার আশ্রমে কীর্তণ বা নামযজ্ঞ অষ্ট প্রহরে বলাইদা বাঁশি বাজায়। শ্রীমতি রাধীকার বিরহ রাগের ঠাঁট উপস্থিত ভক্তদের বেমালুম কাঁদিয়ে ছাড়ে। সুতরাং বলাইদা ছাড়া এ সমস্যার সমাধান হবার নয়। বাঁশি শিখতে হলে তার কাছেই দিক্ষা নিতে হবে আমায়।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে দেখে বাঁশিটা কোমরে গুজে মেলা থেকে বেরিয়ে সোজা বলাইদার বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। শুরু হলো আমার বাঁশি নিয়ে পথ চলা। নদীর পারে এসে দেখি খেয়ার নৌকোটা তখন ওপারে। সাঝের আঁধারে পারের অপেক্ষায় আমি একা দাড়িয়ে রইলাম এপারে। সুযোগ পেয়ে ভাবলাম দেখবো নাকি আর একবার চেষ্টা করে....? বাঁশিতে হাত রেখেছি অমনি কার যেন পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলাম। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি সয়ং বলাইদা এসে দারিয়েছে। বোধকরি মেলা থেকে ফিরেছেন তিনি। অযাচিত ভাবে বলাইদাকে সামনে পেয়ে অন্তরে ফুসে ওঠা কৌতুহলের বেলুনটা চুপসে ঠুসো হয়ে গেল নিমেশে। ভেতরে ভেতরে লজ্জায় মরে যাচ্ছিলামি.... কথাটা তাকে বলি কি করে....? আমায় দেখে বলাইদা বরাবরের মতো স্বভাব সুলভ রশিকতা করতে ছাড়লেন না। মিষ্টি হেসে মৃদু স্বরে জানতে চাইলেন ০ কিরে পাঁজি মেলা থেকে ফিরছিস বুঝি ............? পাড়ার সবাই আমায় গাজী বলে ডাকলেও বলাইদা রশিকতা করে পাজি বলে ডাকেন। আজো তার ব্যাতিক্রম হলো না। নাম নিয়ে এহেন বিকৃতির মিষ্টি মধুর প্রতিবাদ জানালেও কেন যানি আজ মুখ দিয়ে কোন কথাই বেরুলনা আমার। মাথা নেড়ে শুধু হ্যা সূচক উত্তর দিলাম। নদীর পারে দুবলোর উপর গা ঘেঁষে বসতে বসতে বলাইদা পরম স্নেহে পিঠে আদোর মাখিয়ে দিলেন। ০ হ্যা রে পাঁজি তা মেলা থেকে কি সব হাতি ঘোড়া কিনলি একবার দেখা দিকিনি............................ কাল বিলম্ব না করে লুকানো বাঁশিটা বের করে তার হাতে তুলে দিলাম। বাঁশিটা হাতে নিয়ে প্রথমে এমন একটা ভাব দেখালেন যেন বাঁশি কিনে মস্ত অপরাধ করে ফেলেছি তার কাছে। অন্যমনস্ক হয়ে বিরবির করে অস্ফুট স্বরে কি যেন বললেন বোঝা গেলনা। পরক্ষণে এক টুকরো মুচকী হাসি ছুড়ে দিলেন আমার কোচি মনের জানালায়। কিছুটা ভরষা পেলাম। বাঁশিটা তিনি মনোযোগ সহকারে দেখলেন। ০ বাহ খুব সুন্দর বাঁশি কিনেছিস তো। হ্যারে পাজি তোর ভালই পছন্দ আছে দেখছি! বাঁশিটা জলে ধুয়ে আনগে যা....... প্রাণান্ত চেষ্টার ফলে ইতোমধ্যে ওটা আমি থুথুতে ভিজিয়ে ফেলেছিলাম। দৌড়ে গিয়ে নদীর জলে ধুয়ে এনে পুনরায় তার হাতে দিলাম। খেয়ার নৌকোটা তখনোও ওপারে। আমার হাতটা ধরে এবার কাছে টেনে বসালেন। ০ আয় বোস.... হ্যারে পাজি কিছু মনে করবি না তো...? বাঁশিটা একটু বাজিয়ে দেখি কি বলিস.......? ০ হ্যা হ্যা কেনো নয় .....আরে বাজাও না....................... বাঁশিটা তার হাতে থাকা সত্ত্বেও আমার মতো পুঁচকের কাছে বাজাবার অনুমতি চাওয়ার কি দরকার তার...? বুঝলাম শিল্পী হতে গেলে আগে ভাল মনের মানুষ হতে হবে আমায়.... গুরুর কাছে এটাই প্রথম শিক্ষা আমার। সম্মতি পেয়ে বলাইদা এক গাল হেসে বাঁশিটা ঠোঁটে ধরলেন।
সান্ধ্য আবেশে বাঁশিতে সুর তুললেন। বাঁশির সুরে নদীর একুল ওকুল মিলে মিশে যেন একাকার হয়ে গেল। ওপারে খেয়া ঘাটের সুরেশ মাঝি ততক্ষণে বুঝে ফেলেছে বলাই মহন্ত পারের অপেক্ষায় বসে আছে এপারে। বাঁশি শুনে সে ওপার থেকে জোশের সাথে চেচিয়ে উঠলো............. ০ আরে বলাই মহন্ত যে! ....আহা ......আ হা হা .....দাদা গো তুমি বাজাতে থাকো নৌকো নিয়ে এই আমি এলাম বলে..... গুরুর একান্ত সান্নিদ্ধে মুগ্ধ হয়ে আমি বাঁশি শুনছি। এক পশলা বৃষ্টির রেশ শেষ হওয়ার মতো করে হঠাৎ বাজানো থামিয়ে বাঁশিটা আমার হাতে দিয়ে বললেন........... ০ নে বাজা............................... বুকের ভেতর ছ্যাত করে উঠলো আমার ….কার মধ্যে কি পান্তা ভাতে ঘি.....বলে কি লোকটা!! আমি ছাই বাজাতে জানি নাকি? বিলম্ব দেখে বলাইদা আবার তাগিদ দিলেন............... ০ কি হলো বাজা.... ভোম্বল দাশের মতো বসে থাকলে চলবে কেনো? যদি থাকে লজ্জা সঙ্কোচ ভয় .....তবে কি হবে তোর সাধন ভজন..........ওরে ভোলা মন....কি রুপে করবি তুই রাবন লঙ্কা জয়...? হবে হবে নে ভয় নেই বাজা.......... ০ বলছো.............. ০ হ্যা রে বোকা বলছিই তো........ভয় করিসনে বাজা........................ কোথা থেকে যে সেদিন আমায় বুকের ভেতর এক ঐশ্বরিক শক্তি এসে ভর করলো বলতে পারবোনা। গুরুকে প্রণাম করে বিসমিল্লাহ বলে বাঁশিতে ফু দিলাম। আগের মতো থুথু না বেরিয়ে এবার সত্যি সত্যি স্বাভাবিক ভাবে সশব্দে বাঁশিটা বেজে উঠলো। ধমনীতে আমার বিদ্যুত বয়ে গেলো যেন। মানস পটে উত্তেজনার তিব্রতা অনুভব করলাম। আবার ফু দিলাম....বাঁশি বাজলো .....আবার দিলাম.......বাঁশি বাজলো.........আবার দিলাম.......এর পর আর থেমে থাকতে হয়নি আমায়। আজোব্দি বাঁশি আমার বিলক্ষণ বেজে চলেছে। বাঁশি বাজাতে পেরে মহানন্দে তখন যেন বাতাসে ভাসছিলাম আমি। এমন সময় খেয়ার নৌকোটা ঘাটে বাধতে বাধতে সুরেশ মাঝি রশিকতার সুরে বলাইদাকে নৌকোয় উঠে আসতে বললো........... ০ কোই গো কানাই মহন্ত এবার নায়ে এসে বসো দিকিনি। মেলা রাত এলো যে.....বলি বাড়ি ফিরতে হবেনি.........? ০ হ্যা গো সুরেশদা আজ একটু দেরিই হলো বটে। চ পাজি এবার বাড়ি যাই কি বলিস....? বলাইদা আমাকে তাড়া দিলেন। আমি কোন উত্তর না করে তার মুখপানে মনোকষ্টে তাকিয়ে ছিলাম। আহা গুরুর সঙ্গে আরো খানিকটা সময় যদি কাটাতে পারতাম!! কিন্তু তা আর হলোনা সময়ের কারণে............ গুরু হলেন শিস্যের ভগবান তারা শিস্যের অন্তরের জ্বালা উপলদ্ধি করতে পারেন। বলাইদা তেমনি আমার অতৃপ্ত মনের গতিক বুঝতে পেরে কিছুটা শান্তনার বাক্ক্যি শুনাতে শুরু করলেন........................ ০ তোর হবে রে পাজি.....আমি দিব্ব দৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছি তোর হবে.... দশমীর দিনে বিজয়ার শুভ যোগ রয়েছে তোর সাথে......কাল একবারটি আসিস কেমন......নে এবেলা ওঠ.....রাত হয়ে এলো বড়...এবার বাড়ি যাবি চ..................... মৃদু পিঠ চাপড়ে বলাইদা আমার হাতটি ধরে নৌকোয় উঠে বসলেন। তরতর করে তরীটা এগিয়ে চলেছে ওপারে। মাঝ নদীতে সুরেশ মাঝি লগি ছেড়ে যখন হালের বৈঠায় ক্যাড়াই মারতে শুরু করেছে তখন “ক্যাড়োর ক্যাচ, ক্যাড়োর ক্যাচ” করে এক ধরনের শব্দ বেরুতে শুরু করলো। কানের কাছে মুখ এনে বলাইদা এবার ফিসফিস করে আমায় বললেন......... ০ হ্যারে পাজি কিছু শুনতে পাচ্ছিস ............? চমকে উঠে তার দিকে তাকালাম। বিষয়টা বুঝে উঠবার আগে আবার তিনি ক্যড়াইয়ের শব্দটার প্রতি গভীর মনোযোগ দিলেন। আমিও তার মতো করে কানটা সজাগ করলাম নদীর জলে। বলাইদা ফিসফিস করে আবার বললেন............. ০ কি রে পাচ্ছিস না শুনতে........................? ০ হ্যা পাচ্ছিই তো.....মাঝি ক্যাড়াই মারছে তাই শব্দ বেরোচ্ছে............ মাথা নেড়ে বলাইদা নিশ্চিত হলেন বিষয়টা তিনি আমায় বুঝাতে পেরেছেন....... আবার তিনি বাক্ক্যি পাঠ শুরু করলেন..... ০ ঠিক বলেছিস শব্দ বেরোচ্ছে .........তবেই বোঝ....... তোর বাঁশি থেকেও তো শব্দই বেরোয় নাকি বলিস...........? ০ হ্যা শব্দই তো বেরোয়.............. ০ শোন প্রথম প্রথম কেবল শব্দই বেরোবে বুইচিস? তারপর সুর বেরোবে.....তারপর রাগ... অনুরাগ... থমক.... ঠাট....কত্ত কিযে বেরোবে গুনে শেষ করতে পারবিনে। থাক ওনিয়ে তোকে মোটেও ভাবতে হবেনি এখন শুধু বাজিয়ে যা.............আর একটা কথা বলি তোকে ....শুধু শব্দ শুনবি কেমন?......এই যেমন ধর পশু পাখির শব্দ জলের শব্দ মেঘের শব্দ বাতাসের শব্দ বৃষ্টির শব্দ হাসির কান্নার শব্দ.... এমন যত প্রকারের শব্দ রয়েছে শুনে শুনে কান পাকিয়ে ফেলবি কেমন.....?
কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়া কেবল প্রকৃতির উপাদান ব্যবহার করে যে শিক্ষা আমায় সেদিন তিনি দিয়েছিলেন তার তুলনা আমি খুঁজে পাইনি আজো। প্রকৃতি থেকে যে শব্দের ভান্ডার আমি গুরুর আদেশে অর্জন করেছি তা কখনো শেষ হবার নয়। প্রথম গুরু হিসেবে বলাইদার সেদিনের সেই আদেশ উপদেশ আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি বলেই আজ আমি একজন বংশী বাদক হতে পেরেছি। আমার অহং বলে যদি কিছু থেকে থাকে তবে তা বলাইদার থেকে ধার করা অলঙ্কার বই অন্য কিছুনা। আমি কি করে তবে সব আমার বলি......? কি করে তা নিয়ে অহংকার করি......?
পরবর্তিতে যদিও দেশের খ্যাতিমান ওস্তাদদের কাছে আমি তালিম নিয়েছি তাতে সমৃদ্ধ হয়েছি বটে কিন্তু গুরু বলাই চন্দ্র মোহন্তের শিক্ষা আমার জীবনে সবচে বেশী প্রভাব বিস্তার করে আছে। কারণ তিনি যে আমার অভিষেক গুরু। তার অহং আমাতে আকার পেয়েছে মাত্র। আমি যে তার হাতে খোদাই কৃত নিপুন ভাস্কর্য্য। তার আমিত্ব আমাতে প্রকাশ পেয়েছে অলঙ্কার রুপে। আজ তিনি বেঁচে নেই তবে আমার অস্তিত্বে তিনি নিউক্লিয়াস হয়ে বেঁচে রয়েছেন প্রতিটি কোষে কোষে..............
ইতোমধ্যে নৌকোটা কখন যে পারে ভিরেছে ঠাহর করতে পারিনি। হাতটা ধরে বলাইদা নৌকো থেকে নেমে সোজা বাড়ির পথে রওনা হলেন.............. ০ যাই রে পাজি কাল সন্ধ্যায় আসছিস তা হলে...............? আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম.... ইচ্ছে হচ্ছিলো না বলাইদাকে ছেড়ে যেতে। হাটতে হাটতে কি যেন ভেবে আবার আমায় ডাকলেন তিনি। ডাক শুনে ঘুরে দাড়ালাম............... ০ কিছু বলছিলে বলাইদা..........? ০ হ্যা রে একবারটি শুনে যাবি...................? দৌড়ে গিয়ে হাপাতে হাপাতে বললাম............... ০ কি বলছিলে বল..................? ০ বলছি শোন....যেখানে সেখানে যখণ তখন বাঁশি বাজাসনে কেমন। সব সময় নির্জন স্থানে গিয়ে বাঁশি বাজাবি তাতে কোন বাধা আসবেনা। কালার বাঁশিতে বিষ রয়েছে বুইচিস....যদিও তোর তেমন বয়স হয়নি তবুও বলছি....কথাটা মনে রাখিস.... কোন কিছু না বুঝে মাথা ঝুকালাম বটে কিন্তু মনের খটকা আমার মনেই রয়ে গেলো। আমি এবার তার পিছু পিছু হাটতে শুরু করলাম........................ ০ চলো কিছুটা পথ তোমায় এগিয়ে দি চলো.................. ০ তা কেনো রে তুই বাড়ি যাবিনে..?..........আমায় কেনো এগিয়ে দিতে হবে বল দিকিনি...........? ০ এমনি ইচ্ছে হলো তাই........আমার বাড়ি যাওয়া নিয়ে তোমায় ভাবতে হবেনি চাইপাড়া হয়ে দিব্বি আমি যেতে পারবোক্ষণ। তোমার কথা গুলো শুনতে ভাল লাগছে তাই পিছু নিলাম....বলো বাঁশির বিষের সাথে বয়সের কি যেন সব বলছিলে...................?
আমার আগ্রহ দেখে বলাইদা কিছুক্ষণ নিরব হয়ে মুখের দিকে চেয়ে রইলেন। রাতের আধারে যতটুকু বুঝলাম প্রথম বাঁশিটা হাতে নিয়ে যে বৈরী ভাব তিনি দেখিয়েছিলেন অবয়বে যেন সেই স্বরুপ ভেসে উঠেছে তার। আমায় জড়িয়ে ধরে আবেগ জড়ানো কন্ঠে বললেন..................... ০ মনোযোগ দিয়ে শোন পাজি। তোকে আজ একটা কথা না বললেই নয়। আমিও একদিন অনেক বড় একজন বংশীবাদক হতে চেয়েছিলাম....কিন্তু নিজের ভুলের কারণে তা আর হয়ে উঠেনি। আমার বিফলতাকে আমি তোর মাঝে সফল রুপে দেখতে চাই.....আমার মতো ভুল করবিনা। মন বলছে তুই তা পারবি। কথা দে আমার মনোবাঞ্ছা তুই পুরণ করবি..........? ০ কেন নয় ....তোমার আদেশ উপদেশ আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো.......শুধু বলো আমায় কি কোরতে হবে......? ০ তবে শোন বলি .......বাঁশির ধুণ আর নারীর মন একই সূত্রে গাথা। তাই.....বাঁশির সাবধানা করতে গেলে এ পথে অনেক বাধা বিপত্তি আসবে.....কখনো পা পিছলে পড়ে যাসনে। মন শক্ত করে একাগ্র চিত্তে কায়মনে সাধনা করে যাবি....দেখবি সব বিপত্তি দুর হয়ে গ্যাছে.......আমার সবটুকু তোকে উজার করে দিতে চাই....শুধু আমি যা পারিনি তোকে তা করে দেখাতে হবে......কিরে পারবিনে...........? সেই থেকে গুরুর আদেশ শীরোধার্য্য করে দীর্ঘ পাঁচ পাঁচটি বছর আমি বলাইদার কাছে একটানা বাঁশি শিখেছি। তার আদেশ উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন সহ সকল বাধা বিপত্তিকে অবলিলায় আমি জয় করতে পেরেছি। মাত্র ১৯ বছর বয়সে প্রথম রেডিওতে আমি বাঁশি বাজাতে শুরু করি। আজ আমি দেশের অন্যতম একজন প্রতিষ্ঠিত বংশী বাদক। দেশ বিদেশের খ্যাতিমান শিল্পীদের সাথে সঙ্গোত করি। রেডিও টেলিভিশন মঞ্চ তিন মাধ্যমে আজ আমার অবাধ বিচরণ। প্রকৃতই আমি শিল্পী হতে পেরেছি কিনা জানিনা.......তবে বলাইদার সেই পাজি আজ আমি গাজী হতে পেরেছি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ আক্তারুজ্জামান
শোন প্রথম প্রথম কেবল শব্দই বেরোবে বুইচিস? তারপর সুর বেরোবে.....তারপর রাগ... অনুরাগ... থমক.... ঠাট....কত্ত কিযে বেরোবে গুনে শেষ করতে পারবিনে- অসাধারণ। গল্পে উপন্যাসের পূর্ণ আমেজ, তৃপ্তি।
মিলন বনিক
কারণ তিনি যে আমার অভিষেক গুরু। তার অহং আমাতে আকার পেয়েছে মাত্র। আমি যে তার হাতে খোদাই কৃত নিপুন ভাস্কর্য্য। তার আমিত্ব আমাতে প্রকাশ পেয়েছে অলঙ্কার রুপে। আজ তিনি বেঁচে নেই তবে আমার অস্তিত্বে তিনি নিউক্লিয়াস হয়ে বেঁচে রয়েছেন প্রতিটি কোষে কোষে..............ওহ! দাদা..এক অসাধারণ মুগ্ধতা আর পরিপূর্ণতায় মনটা ভরে গেল...চমত্কার গাথুনি আর ভাব সত্যিই মনকে নারা দিতে পেরেছে....অসাধারণ...
মোজাম্মেল কবির
বলাইদার মতো একজন গুরু আমার ভাগ্যে যদি মিলতো... আমার বাঁশিতে ঘুণ ধরেছে ফেটে শুঁকিয়ে গেছে। শিখা হলোনা। খুব ইচ্ছে করছে আপনার বাঁশি শুনতে। গল্পটা দাগ কেটে গেলো মনে।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।