আজ কেকার নতুন জীবন সঙ্গী নির্বাচন। এমন ঘটা করে তাকে দেখতে এর আগে কেউ আসেনি এবং আয়োজনও হয়নি। বাড়ীর সবাই ব্যতিব্যস্ত সব কিছু গুছানোয়। নিকট সম্পর্কের আত্মীয় স্বজন প্রায় সবাই বাড়ী ভরপুর। পাত্র অন্য শহরের এবং একজন প্রবাসী। কেকাদের বাড়ীটা শহর আর গ্রামের সন্ধি অঞ্চলে। তাই ওদের বাড়ীর চারিদিকের মাঠ আর বাড়ি গুলো বেশ কাছাকাছি আত্মীয়তায় বন্দি, সম্পর্কের না হলেও বন্ধনের। কেকাকে নানা সাজে উপস্থাপন করার জল্পনা কল্পনা চলছে ভাবীদের অঙ্গনে। তবে বাড়ীর পরিবেশ বেশ আন্তরিক, তাই চাচীরাও মাঝে মাঝে ভাসুর কন্যার সাজ তদারকিতে ফোড়ন কাটছে। একমাত্র ছোট ভাই রুকু সেও এসেছে; সুদূর ম্যাপল পাতার দেশ থেকে কর্ম-পড়া’র অবসরে। আজ দেখার আসরেই হয়তো কেকার জন্য অন্য একটি দিন তৈরী হবে। কিন্তু কেকা দোতালায় তার ঘরের ব্যালকনিতে নিথর চিন্তায় দাড়িয়ে ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টিয়ে অতীত ও বর্তমানের সেতু রচনা করছে। তখন বর্ষাকাল অনেক যত্নের কেকার নাইট কুইন গাছে কলি এসেছে। ফুল আসবে। ছোট্ট পাড়া জুড়ে প্রায় সব বাড়ীতেই সেই গল্প। কিন্তু বিধিবাম পাশের বাড়ীর চাপা ঘটনার কানাঘুষার তোড়ে অনেক সময় বাহিরে কাটিয়ে ব্যালকনির টবের দিকে তাকানোর অবকাশ টুকুও পায়নি কেকা এবং ওর বাড়ির মানুষেরাও। ক্যামেলিয়া’র সেই পাহাড়ী মেয়ের মতো 'বাবু ডেকেছিস ক্যানে' সুরে নাইট কুইন ফুটল, তবে নাইট কুইন'ই বুঝল না কেন ফুটল। ব্যালকনি একাই উপভোগ করল- রাতের রাণীর শোভা। হয়তো জানালা গলিয়ে নতুন গন্ধ এসেছিল ঘরে, তবে তা আর ধাতস্থ হয়নি 'নাইট কুইন' ভেবে কেকার মনে। তাই সে রাতে তাজা সুবাসিত ফুল দেখার মজাটা পেল না, কেকা। পাশের বাড়ীর রসালো গল্পের চাপা উত্তেজনার রেশ কানে নিয়ে বিকাল গড়িয়ে রাত হল। ক্লান্ত শরীরে খাদ্য মুখ গলিয়ে গলা, গলা গলিয়ে বুক আর বুক গলিয়ে পেটে এসে চোখ জুড়িয়ে ঘুমের দেশে নিয়ে গিয়েছিল কেকা'কে। আর তাই ঘুম ভাঙ্গা চোখে হঠাৎই দৃষ্টি যায় জানালার পাশে। আচমকাই সজোড়ে মা বলে চিৎকার! একটি সুন্দর বেদীতে তার বৃক্ষ প্রতিমা 'নাইট কুইন' গত রাতে সেজেছিল অপরূপ সাজে। তার প্রতিচ্ছবির চিত্রিতরূপ ভেসে গেল অদৃশ্য ক্যানভাসের কল্পনায় –তার চোখে- বিদ্যুৎ গতিতে। সেই বিদ্যুৎ গতির ক্ষিপ্রতায় কেকার আদুরে শরীর আড়মোড় ভাঙ্গতে সময় দিল না- বিছানার সখতায় বা মা আসার প্রতিক্ষায়। বরং দরজা খুলে দেখলো তার আদরের গাছে প্রকৃতির উচ্ছ্বাসে ফুটে গেছে ফুল। নির্বাক দর্শকের অদেখা চাহনিতে চেয়ে থাকল অপলক দু’জোড়া চোখ- নুয়ে পড়া রাতের রানীর দিকে। কানে বাজল মায়ের না দেখা আক্ষেপের আহা শব্দ এবং ঘাড় ছুয়ে গেল প্রশ্বাসের সেই বাতাস। এই যৌথ অনুভূতিও আপেক্ষিক হয়ে গেল। চোখের অবস্থান সড়ে গিয়ে। তাদের আক্ষেপ আর উত্তেজনা নুয়ে পড়া গাছের দিকে স্থির রইল না। গ্রিল গলিয়ে দু’জোড়া চোখ তখন প্রতিবেশীর রহস্য উঠানে। যে মানবিক রহস্য ঘের গত রাতে ভাবনা ক্লান্ত করেছিল-তা এই প্রতিবেশীর। রাসেল তার বন্ধুর প্রেমিকা শশীকে সাথে নিয়ে বাড়ি ছেড়েছে। রাসেলের বাবা সেও নাকি কোন এক পতিতা হাওয়া'র ঘরে নিয়েছে আশ্রয়। রাসেলের আম্মাও নাকি মাঝে মাঝে বেশ চিৎকার করে জানাত- ‘আজ চলেই যাবে যে দিকে দু’চোখ যায়’। তাই শুণ্য বাড়ি রেখে সেও চলে গেছে! কাকতালিয় মিলন দিনে- জীবন অন্বেষণে। না; রাসেলের আম্মার মন বিচ্ছেদের হতাশায় ডুবে যায়নি; তাই কোন গাছের মগ ডালে রাতে ফোটা নাইট কুইনের মতোও নুয়ে পড়েনি; তার দেহ। সে বিবাগী হয়েছে এক অচেনা গ্রামে চেনা মানুষের প্রিয় গন্ধের নেশায় বাঁচার আশায়।
প্রতিবেশীর সেই শুণ্যবাড়ীটি এখন দৃষ্টিতে মা-মেয়ের। তবে উৎসুক মানুষেরা যারা পা চালিয়ে যেতে পারে, সেই শুণ্যতা রাখেনি এক বিন্দুও। তবে এই সাময়িক শুণ্যতা বাপে-পুতে মিলে স্বদর্পে পূর্ণ করেছে সপ্তা না গড়াতেই। তারা দুজনে দুজনকে নিয়ে এসেছে এই শুণ্যতায়। দুজন ভিন্ন মানুষ একই উঠানে নতুন আগমনের অতিথী হয়ে এসেছে। হায় নিয়তি! সোহাগের পূর্ণতা পায় নাকি মুখ থেকে কানে গেলে। তাই বুঝি গাঁ গেরামে বলে ‘সইলো আয় মনের কথা কইল’। এরা তো সম্পর্কের বেড়া জালের দুরত্বে বন্দি। এদের সোহাগের কথা কে শুনবে? তবে একটি মিল আছে সেই আসার গল্পে। আর যারা নিয়ে এল তারাও তো অন্য এক মাত্রার নায়ক। কেউবা হারিয়ে আর কেউবা তারিয়ে। এরা সবাই সবার চাওয়ায় থেকে গেল! শুধু ঐ রাতের রাণীর মতই রাসেলের আম্মা স্মৃতির অনুস্মারক হয়ে গেল কিশোরী কেকার মনে। অভিমানে চলে যাওয়া কি শুধুই বিচ্ছেদ কাতরতা? সন্তানের সাথে মায়ের ভালোবাসার টান! ছিন্ন করা সম্পর্ক; মৃত্যুর মত অতীত দীর্ঘশ্বাস। এমন সব ভাবনায় বছর না গড়াতেই প্রতিবেশী রাসেল প্রায় একই সাথে বোন ও কন্যা সন্তান পেয়েছিল। শুণ্য বাড়িটি ভরে উঠছে এক, দুই, তিন, চার......শুধু একজন নেই। যদিও কেকার কল্পনায় দাগ কাটা চিত্র-সেই একজনই। নুয়ে পড়া নাইট কুইন আর রাসেলের আম্মার অচেনায় চলে যাওয়াই। কত অঘুম রাত কেকার মনে হারানো ও হারিয়ে যাওয়ার সেই চিত্র ছুঁয়েছিল।
সেই সব ভাবনার জাল বুনতে বুনতেই এক ঝাক সম্পর্কের ভাইবোন ঘরে এসে অতীত চিন্তার রাজ্যে আচমকা ছেদ দেয়। আপু এসে গেছ। কেকার সম্বিত ফিরে পেতেই ভবিষ্যতের একরাশ হাওয়া বয়ে গেল সারা শরীর জুড়ে অনুভবে। আগমন বার্তায় সরব হয়েছে বাড়ীর চারপাশ। ন’ভাবী এসে কানে কানে বলে গেল বেশ হান্ডসাম এবং উচ্চ স্বরে একটা ঘরময় হাসিও দিল সেই সাথে। কানে একটা বাতাস টের পেল মাত্র। আর তখনই কেকার চিন্তা রাজ্য অতীত-বর্তমান থেকে অতীত-ভবিষ্যতে ঘর বদল করল। নুয়ে পড়া নাইট কুইন, রাসেল আম্মা, রাসেলের সন্তানের কান্না এবং ..... সব কিছু ছাপিয়ে কাঁশফুল আঁকা মেরুন শাড়ি পড়া কেকার চোখে নতুন আশায় টব সাজানোর সাধ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আহমেদ সাবের
কেকার জীবনের একটা বিশেষ দিনে হঠাৎ করে পাওয়া একটু অতীত ভাবনা - নাইট কুইন আর রাসেলের মায়ের হারিয়ে যাওয়া, কিছু সুখ আর একটু দুঃখ। বেশ কাব্যিক উপস্থাপনা।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।