কিছু মাসুদ ভাইয়ের গল্প

গর্ব (অক্টোবর ২০১১)

মোঃ মাহমুদুর রহমান সুজয়
  • ১৬
  • 0
আজ খুব বৃষ্টি হলো । আমার জীবনে এত বৃষ্টি দেখিনি । রেডিওর ব্যাটারিও শেষ , দোকানে যেতে হবে দুটা ব্যাটারি কিনতে । দেখি বৃষ্টি কিছুটা কমলে দোকানে যেতে হবে ।
এসব কথা ভাবছিলেন মাসুদ রানা । একজন সুঠাম দেহের অধিকারি , মাথা ভর্তি চুল বয়স ২৬ এর কাছাকাছি । রেডিওর কোন অনুষ্ঠান শোনা বাদ দেননা । তাই সপ্তাহে দুটা করে ব্যাটারি বদলাতে হয় । আজও তার ব্যাটারি শেষ । কিন্তু কিছুক্ষন পরে খবর শুরু হবে । খবর না শুনলে রাতে তার ঘুম হয় না । তাই বৃষ্টিতে সামান্য ভিজেই দোকানে গেলেন ব্যাটারি আনতে ।
ব্যাটরি নিয়ে বাসায় এসে দেখে জানালা খোলা , বৃষ্টির পানি এসে মেঝে ভিজে গেছে । তারাতারি জানালা লাগিয়ে বসে পরলেন খবর শুনতে । খবরে বলা হচ্ছে ঢাকা শহর খুব উত্তাপ্ত , ছাত্ররা খুব আন্দোলন করছে পশ্চিম পাকিস্থানের বিরোদ্বে । মাসুদ ভেবে পায়না এত আন্দোলনের কি হলো । খালি একবার হাই তোলে বললো , হাইরে দেশ এই দেশে রাজনীতি করার কি হলো । সবাই আন্দোলন আন্দোলন করে , আন্দলোন করে কি হবে ?
এইসব বলতে বলতে ঘুমে ধরে গেল । রেডিওতে এখন একটি গানের অনুষ্ঠান হচ্ছে , সম্ভবত মান্নাদের গান হচ্ছে । রেডিও বন্ধ করে মাসুদ ঘুমাতে যায় ।
সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখে বাইরে বৃষ্টি নেই । তাই তারাতারি রেডি হয়ে বাজারে দোকান খোলতে যায় । যাওয়ার সময় বলে যায় , মা দুপুরে আজ খেতে আসবো না । এই বলে হাতে রেডিওটি নিয়ে , বাজারের দিকে রওনা হলো । রাস্তায় তার বন্ধু আরিফের সাথে দেখা । কি খবর আরিফ ঢাকা থেকে কবে আসলি ? আরে মাসুদ তোর কাছেই যাচ্ছিলাম ,বললো আরিফ । কেন কি মনে করে ? না তেমন কিছু না সকাল দশটার খবর শুনতে হবে আর আমার রেডিওটা ঢাকায় রেখে এসেছি । ও আচ্ছ এখন তো দশটা বাজতে আরও ২০ মিনিট আছে চল দোকানে গিয়ে খবর শুনি বললো মাসুদ । আচ্ছা আরিফ খবরে শুনি ঢাকায় এত গন্ডগোল এর কারন কি ? কিসের এত আন্দোলন করছিস তোরা ?
মাসুদ, তারা আমাদের রক্ত চুশে নিচ্ছে , তারা আমাদের উপর রাজত্ব করতে চাচ্ছে । আমরা ভোটে জিতলাম তার পরও আমাদের তারা ক্ষমতা দিচ্ছেনা ।
তাহলে কি করবি আরিফ , বললো মাসুদ । প্রয়োজনে যুদ্ব করবো তাদরে সাথে ।
না আরিফ এটা একটা কথা বললি ? মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই আর তাদের বিরুদ্বে যুদ্ব করবি ? বলে মাসুদ ।
মাসুদ একটা কথা শুন , ভাই যখন ঘাড়ে উঠে তখনও সেটা মানা যায় কিন্তু যখন সে ঘাড়ে উঠে মাথার চুল টানে তখন নামিয়ে দিতে হয় । আর আমরা সেটাই করবো । কথা বলতে বলতে বাজারে এসে পরলো ।
এখানে মাসুদের ছোট একটি মনিহারি দোকান আছে । দোকান খোলে ঝাড়ু দিয়ে , রেডিও চালু করতেই দশটার খবর শুরু হলো । খবরে সেই একই কথা ঢাকার আন্দোলন চলছে । ছাত্ররা মিছিল করছে প্রতিদিন । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা জমা হচ্ছে মিছিল করার জন্য । খবর শুনতে শুনতে মাসুদ বললো , আচ্ছা আরিফ তোরাকি পারবি এই দেশটাকে মুক্ত করতে । আরিফ বলে অবশ্যই পারবো ৫২ এর ভাষা আন্দোলনেও আমরা আমাদের অধিকার নিয়েছি । এবারও আমরা পাবরো । মাসুদ একটু উদাস হয়ে বলে , হুম তাই কর আমরা তো আর পারবো না , তোরা শিক্ষিত মানুষ তোরা যেটা ভালো সেটাই করবি ।
আচ্ছা ঢাকা যাচ্ছিস কবে ?
কাল দেখি যাওয়া যায় কিনা । আচ্ছা মাসুদ তুই থাক আমি যাই , আমাকে একটু গঞ্জে যেতে হবে । আচ্ছা যা রাতে আসিস এই বিষয়ে আলাপ করবো । বললো মাসুদ ।
মাসুদ সারাদিন ভাবে এই দেশে কি এসব হচ্ছে সবাই অধিকার নিয়ে ব্যাস্ত , কিন্তু তারা কি নিজেদের অধিকার ফিরিয়ে আনতে পারবে ?
এদিকে মাসুদের মা মাসুদকে বিয়ে করাবে এ নিয়ে উদ্বেগ । প্রতিদিনই পাত্রীর সন্ধান করে ঘুরছেন । আগামীকাল রসুলপুর যাবে পাত্রী দেখতে এনিয়ে পাশের বাড়ির মানুষের সাথে নানা আলোচনায় সারাদিন ব্যাস্ত হামিদা বানু । প্রাত্রী এই রকম , সেইরকম, ঘটক বলেছে । এসব আলোচনা করতে করতে পান চিবাচ্চে , এই মুহূর্তে হামিদা বানুর মত সুখি মানুষ এই পৃথিবীতে কেউ নেই, যে কেউ তাকে দেখলে তাই ভাববে । তার স্বামী মারা গিয়েছে গত দুই বছর আগে , রক্ত বমি করতে করতে একরাতে তিনি মারা যান । এরপর মাসুদই তার বাবার দোকান দেখা শোনা শুরু করে ।
এখন রাত সাতটা বাজে আরিফের আসার কথা এখনও আসলোনা , ব্যাপার কি ? এই কথা ভাবতেই আরিফ এসে গেল তার সাথে আরও দুজন , তাদেরকে মাসুদ কখনও দেখেনি ।আরিফ মাসুদকে বললো , মাসুদ এরা আমার ঢাকার বন্ধু , ভার্সিটিতে বিশেষ গন্ডগোলের জন্য তারা এখানে চলে এসেছে , পুলিশ যাকে পাচ্ছে তাকই ধরে নিয়ে যাচ্ছে ।
কেন ধরছে কেন ? মাসুদ খুব বিচলিত হয়ে বললো ।
আরে মাসুদ এরা সবাই আন্দোলনের সাথে জড়িত । তাই পুলিশ এদের খুজছে । এই বলে আরিফ তার দুই বন্ধুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় । একজনের নাম রাজু , আরেক জনের নাম কামাল । রাজুর বয়স ২২-২৪ বছরের মধ্যে হবে , খুব হেংলা , মনে হয়ে সামান্য বাতাসে উড়ে যাবে । আর কামাল একজন সাস্থবান মানুষ , অনেক লম্বা । বয়স হবে হয়ত ২৫ এর কাছাকাছি । আপনারা বসুন , বললো মাসুদ । তারা সবাই বসে , এরি মধ্যে মাসুদের মা এসে পরে ,
কাল মাসুদের জন্য পাত্রী দেখতে যামু আরিফ । আরিফ বলে কোন এলাকায় যাকেন খালা ?
রসুলপুর , আলি শেখের মাইয়া , হুনছ বাবা মাইয়াটা দেখতে বলে এহবারে পরির লাহান ।
আপনি কিভাবে জানলেন মেয়ে পরির মত দেখতে ? আরিফ হেসে হেসে প্রশ্ন করে ।
আরে বাবা আমি জানিনা ঘটক কেইলো । আচ্ছা এরা কারা আরিফ ?
এরা আমার বন্ধু ঢাকা থেকে বেড়াতে এসেছে । ও আইচ্ছা ঠিক আছে আমি এহন নমজ পরমু । আচ্ছা খালা যান নামাজ পড়েন । আর খালা আপনি নামাজে একটু আমারে মায়ের জন্য দোয়া করবেন ? কেন আরিফ তুমার মায়ের কি অইচে ? না কিছু না মা আজ খুব অশান্ত , মায়ের সন্তানেরা আজ মায়ের সম্মান বাচাতে খুব ব্যাস্ত ।
তুমাগো কথা কিছু বুঝিনা । শিক্ষিত মানুষের এই এক সমস্যা তাগরে কথা বুঝা যায় না ।এই কথা বলতে বলতে মাসুদের মা চলে যায় ।
মাসুদ তুই বিয়ে করতাছস আর কিছু জানাইলিনা ? আরিফ অভিমানের সুরে বলে ।
আরে মা তো আমাকে পারলে প্রতিদিনই একটি করে বিয়ে করায় , এই বলে হা.হা.হা….. করে হেসে দেয় মাসুদ । সাথে সাথে সবাই হসে , রাজু, কামাল ও হাসে , তারা এই মুহূতে ভুলে গেছে যে তারা এক বিশেষ সমস্যা আছে । সবাই আলাপ করতে করতে রাত দশটা বেজে গেল । তখন আরিফ বললো , মাসুদ আমরা যাই অনেক রাত হয়ে গেছে । আজ থাকই তোরা সবাই সারারাত গল্প করি । আরিফ রাজু , কামালকে বললো থাকবি ? তারা বললো থাকা যায় , সারারাত গল্প করিনা অনেকদিন হয় । তারা সারারাত গল্প করে কাটিয়ে দিল ।
পরদিন মাসুদ দোকান খোললো দুপুর ১ টার পর । আরিফ তার দুই বন্ধু নিয়ে গ্রামে ঘুরাঘুরি করছে । তারা ৩ টার সময় বাজারে আসবে বলেছে ।মাসুদ এখন ২ টার খবর শুনছে । ঢাকার অবস্থা আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে । জরুরি অবস্থার মধ্যে আছে ঢাকা শহর । বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্ফিও জারি করা হয়েছে । সবাই খুব ভয়ে আছে । কখন কি হয় বলা যায় না । খবর শুনে মাসুদের মনটা খারাপ হয়ে গেল ।
এদিকে মাসুদের মা রসুলপুর গিয়েছে পাত্রী দেখতে , হামিদা বানু পাত্রীর কথা যেরকম শুনেছিলেন , তারচেয়ে পাত্রীটাকে তার কাছে বেশী সুন্দ লাগছে । খুব সুন্দর একটি চেহারা , চোখ দুটোবড় বড় , লম্বা চুল । কি যে সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে । হামিদা বানু মনে মনে বললেন এই মেয়ে দিয়েই মাসুদ কে বিয়ে করাবে ।
বিকাল ৩ টা বাজে এখনও আরিফ আসছে না । মাসুদ এখন আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে , আকাশে কেমন যেন একটি রিক্ত রিক্ত ভাব । আকাশে কোন মেঘ নেই, শুধু নীল । বাতাসে কেমন যেন উদাস উদাস একটা ভাবও আছে । মাসুদের মনটা হঠাৎ করে ছ্যাত করে উঠে । সে বুঝতে পারেনা তার এরকম কেন লাগছে । এসময় আরিফ আসে সাথে রাজু আছে কিন্তু কামাল নেই । কি খবর আরিফ এত দেরি কেন আর কামাল ভাই কই ?
দেরি হলো কারন আছে , মাসুদ কাল শেখ মুজিব ভাষন দিবে । আর সে জন্য কামালকে ঢাকা পাঠালাম । সে সেই মাঠে উপস্থিত থাকবে । এবার মনে হয় মাসুদ আমরা জিতে যাব ।
কিসের ভাষন হবে কি জিতবি ভাই , তোর কথা তো কিছুই বুঝতে পারছি না ।
মাসুদ আজ রাতে আমরাও ঢাকা যাব তুই যাবি আমোদের সাথে ?
দেখি কি করি , একটি হতাশার সুর নিয়ে বলে মাসুদ । রাতে মাসুদ তাদের সাথে ঢাকা যায় , ঢাকা গিয়ে রেসর্কোস ময়দানের কাছাকাছি তারা রাতটা কাটায় । এরি মধ্যে তাদরে সাথে ২০-২৫ জন ছাত্র যোগদেয় । মাসুদের কাছে কেমন যেন বিষয়টি এডভান্চর , এডভান্চর মনে হয় । খুব মজা পাচ্ছে মাসুদ ।
সকাল হলো , হাজার হাজার মানুষ কোথা থেকে যেন আসতে শুরু করলো । মাঠটি কানায় কানায় ভরে গেল । এরি মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ভাষন শুরু করলেন ।
মাসুদ অবাক হয়ে ভাষন শুনতে থাকলো । সে ভাবলো একটি মানুষ কি ভাবে এমন সুন্দর কথা বলে। মাসুদের মনে শুধু একটি কথা বাজতে থাকলো এবারের সংগ্রাম আমদের মুক্তির সংগ্রাম , এবারের সংগ্রমা আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম । কোন ভাবেই সে এই কথাটি তার মস্তিস্ক থেকে বের করতে পারছিলো না । আস্তে আস্তে যেন আওয়াজটি তার কানে জোরে জোরে বাজতে থাকলো । সে একটি নেশার মধ্যে পরে গেল । মাসুদ ভাবতে থাকলো এই দেশ না থাকলে আমারে থেকে লাভ কি । আমি আছি এই সাবার সাথে ।
ভাষন শেষ হলো , আরিফ মাসুদকে জিজ্বেস করে । মাসুদ তুই কি এখন চলে যাবি ? আমাদের একটু কাজ আছে । মাসুদ ভাঙ্গা কন্ঠে বলে , আচ্ছা আরিফ যাদের লেখাপড়া নেই তারা কি তোদের সাথে দেশের জন্য কিছু করতে পারবে ? এই কথা বলতেই আরিফ মাসুদকে জড়িয়ে ধরে ফেললো । মাসুদ আবেগ ধরে রাখতে পারলো না , সে কেঁদে ফেললো ।
আজ রাতে মিটিং আছে সবার সাথে সেখানে দেখা হবে । এই বলে আরিফ রাজু এবং মাসুদকে নিয়ে চলে গেল ।
রাত ১২ টা কিংবা তার উপরে বাজে সাবাই একটি ঘরে বসে আছে । এদিকে শহরের অবস্থা খুব খারাপ । সারা শহরে পুলিশ গিজগিজ করছে । এর মধ্যে সবাই যে কি ভাবে আসলো ভেবে পায়না মাসুদ ।
কথা শুরু হলো । আরিফ কথা বলছে , আজ আমরা যুদ্ব করার সনদ পেয়ে গেছি । যুদ্ব শুরু হয়ে গিয়েছে । আমরা তো বেশী কিছু চাইনি শুধু চেয়েছিলাম আমাদের অধিকার , কিন্তু তারা আমাদের সেটাও দিবে না । তারা আমাদের রক্তে মজা পেয়ে গিয়েছে । কিন্তু আমরা তা মানি না , আমরা জীবন দিতে প্রস্তুত কিন্তু দেশের ইজ্জত দিব না । আমরা সবসময় র্নিযাতিত হয়েছি । কিন্তু আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে এখন আমরা হয়ত মরবো না হয় মারবো ।
কথা বলে যাচ্ছিলো আরিফ , মাসুদ খুব মনযোগ দিয়ে কথা গুলো শুনছিলো । মাসুদ সব ভুলে গিয়ে মনে মনে সিদ্বান্ত নিল আমিও এই দেশের জন্য কিছু একটা করবো ।
সব শেষে সিদ্বান্ত হলো সবাই যুদ্বে যোগ দিচ্ছে । সবাই কাল নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে আন্দোলন গরে তোলবে । এই বলে সবাই বিদায় নিল । এদিকে যুদ্ব শুরু হয়ে গিয়েছে । আরিফ , রাজু ,মাসুদ এজ আবার কামালও এসে পরেছে । এরা সবাই এক হয়ে গ্রামে চলে আসলো । গ্রামে রাতে একটি মিটিং ডাকলো আরিফ , সেখানে গ্রামের প্রায় যুবক উপস্থিত থাকলো । আরিফ দেশের এই পরিস্থিতির কথা তুলে ধরলো । যুদ্ব শুরু হয়ে গিয়েছে সেই কথাও বললো । প্রায় যুবকই যুদ্বে যাবে বললো । আরিফ বললো আমরা আমাদের গ্রামেই প্রশিক্ষন নিব । আমি কাল ঢাকা গিয়ে সেক্টর কমান্ডারের সাথে কথা বললো । পরদিন আরিফ ঢাকা গিয়ে কমান্ডারের সাথে কথা বললে কমান্ডার তাকে একজন প্রশিক্ষক দিয়ে দেন এবং পরবর্তিতে অশ্ত্র নিয়ে যেতে বলে দেন ।প্রশিক্ষকের নাম সামউল ইসলাম । আর্মিতে কাজ করতেন কিন্তু যুদ্ব চলছে বলে তিনি মুক্তিযুদ্বাদের প্রশিক্ষন দিচ্ছেন ।একজন বলশালী মানুষ হাতে মনে হয় বাঘের শক্তি , এই বিসয়টি আরিফ বুঝলো যখন আরিফের কাছ থেকে ব্যাগ নিল তখন , এমন ভাবে টান দিল যেন হাতসহ ছিড়ে যাবে ।
আরিফ গ্রামে প্রশিক্ষক নিয়ে এসে পরেছেন এই খবর সেইসব যুবকের কাছে পৌছে গেল ।আজ রাতে আবারো একটি মিটিং ডাকা হলো , আকাশে চাদ নেই চারিদিকে অনেক অন্ধকার । একটি বোগা (বড় বাতি) জ্বালিয়ে মির্টিং শুরু হলো ।আরিফ প্রশিক্ষকের সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিলেন ।আর কাল থেকে প্রশিক্ষন শুরু হবে বলে জানিয়ে দিলেন ।
এদিকে মাসুদের মা , মাসুদকে বিয়ে করাবে বলে পাগল হয়ে গিয়েছে । মাসুদ যতই বলেযে দেশের পরিস্থিতি ভালো না এখন বিয়ে করা সম্ভব না , তার মা ততই বলে ,দেশের সাথে তর বিয়ার সর্ম্পক কি । এরকম মাইয়া আর ১৪ গ্রামে খুজলে আর পাইবনা । মাসুদ কথা কানে না নিয়ে ভাবছে । আজ বিকালে ট্রেনিং , কিন্তু বাজারে দোকানও খোলতে হভে , কি করা যায় । ভেবে ভেবে বলে ,একটি দেশ বড় না আমার দোকান বড় ?
বিকালে ট্রেনিং শুরু হলো , সবাই খুব ইৎসাহের সাথে ট্রেনিং করলো । সামনের সপ্তাহে গুলি করা শিখানো হবে , শুনে সবাই আরও একসাইটেট হলো । খুব সুন্দর ভাবে ট্রেনিং র্কাযক্রম শেষ হওয়ার পর , এখন একেক জনকে একেক সেক্টরে পাঠানো হবে বলা হলো । মাসুদ আর রাজু এক সেক্টরে পরলো আর আরিফ আর কামাল আরেক সেক্টরে । কারো সাথে আর কারো দেখা হবে না এই ভেবে অনেক কষ্ট হলো সবার । আরিফ মাসুদকে বলে , মাসুদ জীবনে আর দেখা নাও হতে পারে । সবসময় মনে রাখবি এই দেশের এখন সব দ্বায়িত্ব তোর কাছে , তোর হাতে এই দেশের ভবিষ্যত লুকিয়ে আছে । নিজের দিকে খেয়াল রাখিস । এই বলে আরিফ বাসে করে চলে গেল । আরেক দিকে মাসুদ বাড়ি থেকে মায়ের কাছে বিদায় নিচ্ছিলো কিন্তু মাসুদের মা তাকে বিদায় দিবেনা । সে বলে । বাবা আমি তোকে বিয়ে করাইতে চাইলাম আর তুই যাবি যুদ্বে ? আমি তরে যাইবার দিমু না । তুই বাবা যাইসনা । আমি একলা একলা এই বাড়িতে থাকবার পারমুনা ।
মাসুদ তখন তার মাকে বলে , মা শুন তুমি যেমন অসুস্থ হলে আমি তোমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাই , তোমার কিছু হলে যেমন আমি পাগল হয়ে যাই , ঠিক তেমন এই দেশ্ও একটি মা আর এই মায়ের জন্যই আমি যুদ্বে যাব । মা শুধু দোয়া করো আমি যেন এই মাকে বাচাতে পারি । মাসুদ তার মার উত্তরের আশায় না দাড়িয়ে চোখে পানি নিয়ে বেরিয়ে পরলো ।
দেশ স্বাধীন হলো , মাসুদ যুদ্ব থেকে বাড়ি ফিরলো , বাড়ি গিয়ে দেখলো তার সেই বাড়ি আর নেই পুড়ে দিয়েছে হানাদারেনা । যুদ্বে মারা গিয়েছে আরিফ, রাজু , কামালও এক পা হারিয়ে এখন পঙ্গু । এরপর একসময় মাসুদের বাড়ির জায়গা রাজাকারেরা নিয়ে নিল । বাজারের দোকানও পুড়িয়ে দিয়েছে সেই অনেক আগে ।
আজ অনেক দিন পর যখন ৪০ বছর পার হয়ে গিয়েছে তখন মাসুদ ঢাকার রাস্তায় ভিক্ষা করে । মাসুদকে একরাব একজন মুক্তিযুদ্বা ভাতার ব্যবস্থা করে দিতে চেয়েছিলেন , কিন্তু মাসুদ তা নেয়নি । সে বলে আমার বন্ধু এবং আমি যুদ্ব এই ভাতার জন্য করিনি । আমরা যুদ্ব করেছিলাম মায়ের জন্য । মায়ের সম্মান বাচিয়ে টাকা নেই না । লোকটি এসব কথা শুনে বললো , ফকিরের বাচ্চার আবার কত বড় বড় কথা ।
কিন্তু আজ্ও সে নিজের কাছে গর্বিত ।নিজেকে অনেক বড় মনে করে মাসুদ । ভাবে আমি যদি যুদ্ব না করতাম তাহলে তোমরা এই গাড়ি বাড়ি করতে পারতে না । এটাই ভেবে সে প্রতিদিন ঘুমায় । কিন্তু আজ তার কাছে আর সেই রেডিওটি নেই । তাই ব্যাটারিরও চিন্তা নেই । সে আর খবর শুনে না , শুনেনা ঢাকার অবস্থা উত্তপ্ত ।
মাসুদ আজও সেই রেসর্কোস ময়দানের পাশে শুয়ে থাকে , ভাবে আবার একদিন বঙ্গবন্ধু হয়ত বলবে এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ আক্তারুজ্জামান সূর্য ভাইয়ের মন্তব্য দেখে এলাম, লেখকের জন্ম তারিখটাও দেখলাম| দোয়া রইলো- শক্তিমান লেখক হও!
সূর্য গল্পটার আরো কিছু পাঠক পাওয়া উচিত ছিল।
সূর্য জাতি হিসাবে আমাদের চেয়ে আবেগী আর কেউ আছে কী না আমার সন্দেহ আছে। আবেগে ভাষার জন্য জান দিয়ে দিতে পারি আবার সেই ভাষায় দোকনের সাইনবোর্ডটা পর্যন্ত লিখিনা। দেশটা শোষণের হাত থেকে রক্ষায় স্বাধিন করা হলো, কিন্তু আবার আমাদেরই কেউ আমাদের শোষণে লিপ্ত হলো। আমরা অনেকেই বলে ফেলি "মরার দেশে আর থাকব না"। তবুও সব ছাপিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি আমরা জান দিতে পারি অকাতরে ভাষার জন্য, দেশের জন্য। গল্প ভাল হয়েছে।
আশা লেখককে ধন্যবাদ তার বিষয়বস্তুর নির্বাচনের জন্য। হালকা কিছু সমস্যা বিদ্যমান। লিখতে থাকলে ভালো করবেন বলে মনে করি। তাই লিখতে থাকুন। শুভকামনা আপনার প্রতি।
আসলাম হোসেন বরাবরই মুক্তিযুদ্ধের কথা, গল্প শুনে এক প্রকার ভালো লাগে।
মিজানুর রহমান রানা সে নিজের কাছে গর্বিত ।নিজেকে অনেক বড় মনে করে মাসুদ । ভাবে আমি যদি যুদ্ব না করতাম তাহলে তোমরা এই গাড়ি বাড়ি করতে পারতে না ।----------বেশ সুন্দর গল্প। গল্পকারকে স্পেশাল ধন্যবাদ। শুভ কামনা নিরন্তর।
আবু ওয়াফা মোঃ মুফতি ভাল লাগায় মনটা ভরে গেল |
নিলাঞ্জনা নীল অনেক হৃদয়স্পর্শী গল্প............ শুভকামনা......
ম্যারিনা নাসরিন সীমা পাঠক টানার ক্ষমতা রয়েছে তোমার লেখায় । ভাল লাগলো ।এখানে এটা প্রথম লেখা অন্যদের লেখা পড় পরিচিত হউ অনেকের মন্তব্য তোমাকে লেখায় উৎসাহিত করবে । শুভকামনা ।
আহমেদ সাবের আমাদের গৌরবোজ্জ্বল দিন গুলোকে যেন ছবির মত ফ্রেমে বন্দি করে দিলেন। একটা চমৎকার গল্প উপহার দেবার জন্য ধন্যবাদ। লেখায় একটু জড়তা আছে। আশা করি লিখতে লিখতে সেটা কাটিয়ে উঠবেন।

০৮ সেপ্টেম্বর - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“মে ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ মে, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী