১৯৭১ সালের মে মাসের একটি অন্ধকার রাত । বিষন্নতা এসে ভর করেছে বাতাসে । নিস্তব্ধ পরিবেশ । নিবারন বাবু তার বাড়ির বারান্দায় বসে আছেন । যেন অন্ধকারে মিশে যেতে চাচ্ছেন । যুদ্ধ নিবারন বাবুর জীবনে বড় একটা পরিবর্তন ঘটিয়েছে । কিছুদিন আগেও তার স্ত্রী মহামায়া আর পুত্র নিখিল কে নিয়ে ছবির মত সাজানো সংসার ছিল । এখন সেই সংসার ছিন্নভিন্ন ।
মার্চ মাসের শেষের দিকে নিখিল যখন যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি চাইল নিবারন বাবু নিষেধ করতে পারেননি । ছোট বেলা থেকেই তিনি নিখিল কে বাংলাদেশকে ভালবাসতে শিখিয়েছেন । হিন্দু বলে দেশের প্রতি যেন নিখিলের ভালবাসার কোন ঘাটতি না হয় সেদিকে তিনি সচেতন দৃষ্টি রেখেছেন । দেশের ডাকে যখন ছেলে ঝাঁপিয়ে পরতে চাচ্ছে তিনি তখন কিভাবে ছেলে কে বাঁধা দিবেন । কিন্তু তার স্ত্রী কিছুতেই মানতে চাইলেন না। তার এক কথা । তারা সবাই কোলকাতায় নিখিলের নানার বাড়ি চলে যাবে । কিন্তু নিখিল শুনল না । এক পড়ন্ত বিকেলে বাবা-মাকে চোখের জলে ভাসিয়ে সে চলে গেল মুক্তিযুদ্ধে ।
নিখিল চলে যাওয়ার পর মহামায়া নিবারন বাবুর সাথে ভালভাবে কথা বলেননি অনেক দিন । গতদিন বিকেলে সে আগের মতো ঠাকুর কে পূজা দিল । পুরান দিনের মত তারা বারান্দায় বসে চা খেলেন । তখনই ঝড়ের বেগে নিখিল এসে ঢুকলো । যেমনটি ও আগে করতো । কিছুক্ষণ কান্নাকাটির পর মহামায়া ছেলে কে বুকে জড়িয়ে ধরলেন । তারপর নিখিল বাবাকে বললো , “ তোমরা কোলকাতায় চলে যাও। আমি ব্যাবস্থা করেছি” । নিবারন বাবুর আত্মা কেঁপে উঠলো । এই দেশ ছেড় তিনি কিভাবে যাবেন ?দেশের পরিস্থিতি খারাপ হলে অনেকেই তাকে ইন্ডিয়া চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলো । শুধুমাত্র হিন্দু হয়ার কারনে নিজের দেশ ত্যাগ করার জন্য তার মন কিছুতাই সায় দেয়নি । কিন্তু মহামায়ার দিকে তাকিয়ে তিনি রাজি হলেন ।
পরদিন খুব ভরে নিবারন বাবু আর মাহামায়া তাদের এই সাধের বাড়ি ছেড়ে চলে যাবেন । নিবারন বাবুকে অন্ধকারের মধ্যে একটা মাটির পাতিলে কিছু ভরে আনতে দেখে মহামায়া অবাক হলেন । কাছে গিয়ে দেখলেন নিবারন বাবু পাতিলে করে কিছু মাটি ভরে নিয়েছেন । মহামায়া কিছু বললেন না ।তিনি জানেন নিবারন বাবুর এই দেশ ছেড়ে যেতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে । তাই তিনি তার দেশের মাটি সাথে করে নিয়ে যাচ্ছেন । পরদেশেও তিনি তার দেশের মাটির স্পর্শ পেতে চাচ্ছেন ।
নিবারন বাবু আর মাহামায়া এখন একটা ট্রাকে বসে আছেন । মহামায়ার শরীরটা ভালো না । কাল সারাদিন তারা হেঁটেছেন । রাত থেকে এই ট্রাকে বসে আছেন । নিবারন বাবু হাত দিয়ে তার মাটির পাতিলটা জড়িয়ে ধরে আছেন ।
হঠাৎ করেই ট্রাকটা থেমে । মহামায়ার শরীর ভয়ে কেঁপে উঠলো । মূর্তিমান আতঙ্কের মতো পাকিস্তানি মিলিটারি সামনে দাঁড়িয়ে আছে । তারা ট্রাক থেকে সবাই কে নামতে বললো । মহামায়ার মাথায় সিঁদূর নেই । হিন্দুদের উপর পাকিস্তানিদের আক্রোশের কথা কারো অজানা নয় । তিনি নিচে নেমে দেখলেন নিবারন বাবুকে একজন টেনে ধরে নামাচ্ছে । নিবারন বাবু তার পাতিল টা শক্ত করে ধরে রেখেছেন । একজন আর্মি এসে তার নাম জানতে চাইলো । নিবারন বাবু বিড়বিড় করে বললেন , “ নিবারন চক্রবর্তী” । সাথে সাথে আর্মিটা চিৎকার করে উঠলো ,“শালা হিন্দু – মালাউন” । তারপর অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে তারা নিবারন বাবুকে মারতে থাকল । মহামায়াকে একটা জীপে তোলা হল। প্রচন্ড আতঙ্কে তিনি জ্ঞান হারালেন । নিবারন বাবু ঠকঠক করে কাঁপছেন। আর্মিদের একজন খুব কাছ থেকে খানিকটা হাসতে হাসতে তাকে গুলি করলো । নিবারন বাবু মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন । তার হাত থেকে মাটির পাতিল টা পড়ে ভেঙ্গে গেল । মৃত্যুর আগে নিবারন বাবু মুগ্ধ হয়ে দেখলেন কিভাবে তার রক্ত আর মাটিতে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে ।
নিবারন বাবুর লাশ আর্মিরা মাটিতে ফেলে রেখেই চলে যায় । যে দেশের মাটিকে তিনি পরম যত্নে নিয়ে যাচ্ছিলেন শেষ স্পর্শ পাবার জন্য, সেই মাটিই তাকে গ্রহন করলো পরম ভালোবাসায় । সেই মাটিতেই তিনি মিশে গেলেন চিরদিনের জন্য ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ আক্তারুজ্জামান
মিষ্টি তোমার গল্পটা অসাধারণ একটা ভাবনার উপর ভিত্তি করে লেখা কিন্তু তাড়া খেয়ে ছুটে চলা মানুষের হাতের কাজের যে অবস্থা হয় অনেকটা তাই হলো| মত স্থির করে ভাবনাটাকে গভীর করলে পাঠক অসাধারণ একটা গল্পই পেত| অনেক অনেক শুভ কামনা তোমার অনেক অনেক ভালো লেখা পাব এই আশায়|
সূর্য
এ রকম প্লটের স্বার্থক গল্প লেখাটা অনেক কষ্টের। কারন আর কিছুই না "আবেগ"। লিখতে গেলে ভিতর থেকে একটা তাড়না সব সময়ই মূল বিষয়টা লিখে ফেলার তাগিদ দিতে থাকে। তাই বৈচিত্র আনার সুযোগ থাকে না। তবুও গল্প খারাপ হয়েছে বলা যাবে না। এ দেশকে যারা ভালবাসেন তারা আবেগী হবেই হবে গল্প পড়ে।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি
অনেক দিন পর একটা সার্থক ছোট গল্প পড়লাম।এতো সুন্দর ও সাবলিল ভাবে কাহিনীর বিন্যাশ ঘটিয়ে অল্প কথায় গল্পের সমাপ্তি টানা আর যাই হোক যেমন তেমন অতি আবেগী গল্পকারের দ্বারা সম্ভব না।তাই সাধুবাদটা মিষ্টিকে দিতেই হয়।প্রিয়তে নেয়া ছাড়া উপায় দেখছিনা। ধন্যবাদ মিষ্টিকে বাস্তব ধর্মি সুন্দর গল্পটি উপহার দেয়ার জন্য।
রুহুল আমীন রাজু
গল্পটি ভালো করতে আপনি চেষ্টা করেছেন ....এ জন্যে ধন্যবাদ .আমার বিশ্বাস .আপনি একদিন আরো ভালো লিখবেন ...সেই প্রত্তেশা রইলো ..'নিথর চোখে জোছনা 'আমার লেখা গল্পটি পড়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি .
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।