সুপ্তোত্থিত ব্যথা

নতুন (এপ্রিল ২০১২)

Dr. Zayed Bin Zakir (Shawon)
  • ১৪
‘নতুন শাড়িডা দাও না মা। একটু পরুম। আর চামু না। দাও না মা’। সেই সকাল থেকে মায়ের কানের কাছে গিয়ে বার বার বলে যাচ্ছে আকলিমা। মা শাহেলা বেগম সকাল থেকেই খুব বিরক্ত। ছোটো ছেলে তারেকের শরীর ভালো না কাল রাত থেকে। সারারাত কান্নাকাটি করেছে। যৌথ সংসারের বড়ো বৌ হিসাবে সংসারের কত কাজ। কিন্তু মেয়েটা অবুঝ। সকাল থেকে বলছে, নতুন শাড়ি পরবে। এত বেলা হয়ে গেল। রান্না শেষ হয় নাই। একটু পরেই শ্বশুর বাজার নিয়ে আসবেন। সবাইকে খাবার দিতে হবে। কত কাজ! মাঝে মাঝে শাহেলা বেগম ভাবে নিজের মায়ের কথা। উনাকেও একদিন এইভাবে সংসার সামাল দিতে হয়েছে।


-তুই যা তো আকলিমা। সকাল থেকে অনেক যন্ত্রণা করছস। এখন যা। তারেকের কাছে গিয়া বস। দেখ তোর ছোট ভাই কি করতাছে দেইখা আয়।
-আমি দেইখা আইসি মা। তারেক ঘুমাইতাসে। তুমি দাও না মা লাল শাড়িডা। আব্বায় দিছিলো।
-ওখন না মা। এইবার শাহেলা বেগম অনুনয় করে বলে, রান্নাডা শেষ কইরা লই। তোর আপায় আইসা তোরে আলতা লাগায়ে দিব। শাড়ি দিব। এখন যা মা। আমারে কাম করতে দে। কত কাম আমার।
-আপায় কখন আইবো? আকলিমার প্রশ্ন।
-এইত অখনই দেখতে দেখতে চইলা আসবো।


মন খুব খারাপ আকলিমার। পায়ের আলতার রঙ উঠে গেছে। সাজগোজ করতে খুব পছন্দ করে পাঁচ বছর বয়সী বাবা মায়ের আদরের এই ছোট্ট মেয়েটা। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে আকলিমা চতুর্থ। বাসার সবচাইতে চঞ্চল আকলিমা। সবাইকে মাতিয়ে রাখে। রেডিওতে ‘সুন্দরী কমলা নাচে...’ গান হলে আর কথাই নাই। সবার সামনেই নাচা শুরু করবে। দাদা আলী হোসেন সাহেবের সবচাইতে আদরের নাতনী সে। পুতুলের মত দেখতে আর গান শুনে নাচে দেখে দাদা আকলিমা কে আদর করে ‘নাচুনে পুতুল’ ডাকে। দাদার সাথে আকলিমার অনেক খাতির। দাদা খাটে শুইলে দাদার পাশে বসে বসে আকলিমা তার সব অভিযোগ করতে থাকে। বেশীরভাগ অভিযোগ থাকে মায়ের নামে। দাদা, মায়ে শাড়ি পরায় নাই, মায়ে বকা দিসে, মায়ে রাগ করসে... আরো কত কি! দাদা শুনে হেসে বলেন, আইচ্ছা যা তোর মায়েরে আমি মাইরা দিমুনে। ‘তুমি খালি কউ, কিচ্ছু কও না’, বলে আকলিমা গাল ফুলায়। অবশেষে দাদা অনেক তোষামোদ করে নাতনিকে বুঝান। আকলিমা এক সময় ঠান্ডা হয়ে নিজের মত করে গান গেয়ে দাদাকে শুনায়। দাদা আকলিমার গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েন। এরপর আকলিমা তার ছোট্ট অ্যালুমিনিয়ামের কলসিটা কাঁখে নিয়ে খেলে বেড়াতো সারা বাড়ি। যে যেদিকেই তাকায়, সেদিকেই চঞ্চল আকলিকার ছোটাছুটি দেখে পেতো।


-ও মা মা! আকলিমা আবার ডাকে শাহেলা বেগম কে।
-তুই আবার জ্বালাইতাসোস আমারে?
-মা শাড়িডা দাও না। একবার পরুম।
-আকলিমা, মা দেখতো আচার কাকে খাইতাসে নাকি? শাহেলা কোনমতে মেয়ের মনোযোগ ঘুরিয়ে দিতে চাইলেন। উঠানে আমের টুকরা শুকাতে দেয়া হয়েছে আচার বানানোর জন্য। আকলিমার বাবা রফিকুল ইসলাম সাহেব আমার আচার খেতে পছন্দ করেন। উনার জন্য সবসময় আমের আচার তৈরি রাখতে হয়। উঠানে কাক দেখলেই আকলিমা হৈ চৈ করে কাক তাড়ানোর জন্য দৌড় দেয়। মায়ের কথা শুনেই আকলিমা উঠানে যায়। এবার সে শাড়ির কথা ভুলে গেল। আমের একটা টুকরা মুখে দিয়ে চুষতে চুষতে কি যেন ভাবতে লাগলো। এদিকে ঘরের থেকে তারেক তারস্বরে কেঁদে যাচ্ছে। শাহেলা তড়িঘড়ি করে ঘরে গেলেন ছেলেকে সামলাতে।


আকলিমা বড় আপার জন্য অপেক্ষা করে। আপা আসলে আপাকে বলে পায়ে আলতা লাগায়ে, লাল শাড়ি পড়বে। লাল শাড়ি আকলিমার অনেক পছন্দ। কোন জামা কিনবে জিজ্ঞাসা করলেই বলে, লাল শাড়ি। হাতে করে কলসিটা কাঁখে নিয়ে খেলতে খেলতে ঘরের বাইরে চলে যায়। নিজের মত করে গান গাইতে থাকে আকলিমা। শাড়ির কথা এখন আর মনে নেই। এখন সে ঘাসফুল তুলতেই ব্যস্ত। ঘাসফুল দিয়ে আকলিমা রান্নাবান্না খেলে। ঘাসফুল তুলতে তুলতে আকলিমা বাড়ির পেছনে চলে আসে। বাড়ির পেছনেই একটা ডোবা ছিল। দুপুর বেলা এইদিকে মানুষ তেমন একটা থাকে না। আকলিমা ডোবার পাশে বসে ঘাস নিয়ে খেলে। কোথা থেকে যেন একটা ফড়িং উড়ে আসে। ঘরে মিয়া ভাই আসলেই আকলিমাকে ফড়িং ধরে দেয়। আকলিমা ফড়িং ধরে আবার উড়ায়ে দেয়। মিয়া ভাই আবু সাঈদ ছাড়া আকলিমা কে আর কেউ ফড়িং ধরে দেয় না। ডোবার পাশে লাল রঙ এর একটা ফড়িং উড়তে দেখে আকলিমা ধরতে গেল। ছোট্ট মেয়েটা বুঝতেই পারে নাই সামনেই গভীর ডোবা। পা পিছলে পানিতে পড়ে গেল। কেউ দেখতেও পেল না।

কয়েক ঘণ্টা কারো আর মনে রইলো না আকলিমার কথা। আলী হোসেন সাহেব ঘরে ঢুকেই নাতনীর খোঁজ নিয়ে পেলেন না। শাহেলার বুক ধ্বক করে উঠলো। তাই তো, আকলিমার সাড়া শব্দ অনেক্ষন পাওয়া যায় না। অনেক সময় দেবর সাইফুলের কাছে গিয়ে ঘুমায়। নাহ সাইফুলের ঘরেও পাওয়া গেল না আকলিমাকে। সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করেও সাড়া মিললো না আকলিমার। সবাই যখন খোঁজাখুঁজি করছে, তখন এক লোক দুই হাতের উপরে পাঁজাকোলা করে আকলিমাকে নিয়ে গেট দিয়ে ঢুকলো। সারা শরীর ভিজে চুপচুপ হয়ে আছে। আকলিমার জামা দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। হাত একটা বাইরে ঝুলে আছে। সারা শরীর ফুলে গেছে। শাহেলার নজর একবার মেয়ের দিকে পড়তেই সাথে সাথে ‘আকলিমার কি হইছে ...’ বলেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন।


***
সারা বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে যায়। সবার আদরের পুতুল সুন্দরীকে সাদা কাফনে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। শাহেলা একটু জাগেন তো পরক্ষণেই আবার বেহুঁশ হয়ে পড়ে যান। শুধু মেয়েকে শেষ বিদায়ের সময় শাহেলা চিৎকার দিয়ে কেঁদে বলেন, ‘ওরে সাদা কাপড়ে নিয়েন না। আমার মাইয়াডারে নতুন শাড়ি পরায়ে নেন...’


(বিঃদ্রঃ বাস্তব ঘটনার ছায়াবলম্বনে রচিত)
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী আপনি তো বেশ পুরনো লেখক, এ লেখা থেকে বুঝা যাচ্ছে....
বশির আহমেদ এত সুন্দর সাবলীল লেখার একটি সুন্দর গল্প অথচ পাঠক নাই । বাস্তব হউক আর কল্পনা গল্প হৃদয় কেড়েছে এটাই বড় কথা । লেখকের কাজ পাঠকের মনে দাগ কাটা যা আপনি সার্থক ভাবে করেছেন বলে আমার বিশ্বাস ।
সূর্য কিছু কিছু কথা খুব সহজ হলেও অন্তরের গভীরে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে, যেমন "আমি তোমাকে ভালবাসি" প্রিয়র কাছ থেকে এমন কথা উপমায় ভারাক্রান্ত না হয়ে সহজেই সুন্দর এবং গভীর ভাললাগা কাজ করে। এই গল্পের বর্ণনা সহজ সাবলীল হওয়ায় যতটা মানিয়েছে যতটা বাস্তব মনে হয়েছে তাতে একটা কথাই বলা যায় পারফেক্ট হয়েছে।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি Khub Valo Laglo Golpota Pore Bastob Ghotona tai Kosto O Kom Paini ....Shawon Vai..5...Good Bye......
প্রজ্ঞা মৌসুমী গল্পের নামটাতো বেশ সুন্দর। লাল শাড়ি, আলতা, লাল ফড়িং।এই রঙকে ফুটিয়ে তোলার ব্যাপারটা চমৎকার লাগল। ভাবছি সহজ-সরল বর্ণনাভঙী না থাকলে গল্পটাকে মানাতো না হয়ত। সব মিলিয়ে আমার ভালো লেগেছে। আমাদের পাশের বাড়ির এক বাচ্চা ছেলে পানিতে ডুবে মারা গিয়েছিল। সেটাই ছিল আমার মৃত্যু দেখার ১ম অভিজ্ঞতা... গল্পের আকলিমার সাথে আরও একাত্ন হয়ে পড়েছিলাম। বাস্তবেও কি মেয়েটাকে লাল শাড়ি পড়ানো হয়েছিল?
আরমান হায়দার ভাল লাগল। শুভকামনা।
মামুন ম. আজিজ জগতের এই বাস্তবতা বড় আজব। বড় আজব।
amar ami গল্প হিসেবে মোটামুটি ধরনের লেগেছে কিন্তু বাস্তব ঘটনা শুনেই মনের মাঝে কেমন করে উঠলো.....না জানি তাদের কতই কষ্ট লেগেছে, লাগছে এখনো.....
রনীল N/A UNION ALL SELECT NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL# সাদামাটা গল্প কিন্তু কাহিনীটি বেশ করুন. আমার ও একবার একই দশা হয়েছিল...প্রিয় শাওন ভাইকে অনুরোধ করব জি কে তে ফিরে আসতে... উই মিস ইউ এ লট ...
Sujon মনটা খারাব হয়ে গেল..........

০১ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৭৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী