মাটির বিশাল রাস্তার দু’ধারে সবুজ সবুজ গাছের সারি। রাস্তা দিয়ে হাঁটলে মনে হয় বৃক্ষগুলো বিনয়ের সাথে অভিনন্দন জানাচ্ছে তার সবুজাভ ভূবনে। বর্ষাকালে সবুজ প্রকৃতি ঘন সবুজ বৈচিত্রে ঢেকে যায়, কর্দমাক্ত রাস্তা দিয়ে চলা যায় না, উঠোনে অথৈ পানির জোয়ার, মানুষ যোগাযোগের জন্য নৌকা ও কলা গাছের ভেলা ব্যবহার করে। অন্যান্য ঋতুতেও এই গ্রমের চিত্র দেখে মনকে স্থির রাখা যায় না; অস্থির হয়ে শত দিগন্তে উড়াল দিতে চায়। গ্রামের রাস্তা দিয়ে মাঝে মাঝে দু’একটি সাইকেল ও ভ্যান চলে। যদি কোনোদিন মটরসাইকেল আসে তবে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা একনজর দেখার জন্য রাস্তার কিনারে ভিড় জমায়। পাশেই নিকটবর্তী শহর। গ্রাম থেকে মাত্র ছ’ কিলোমিটার দূরে; কিন্তু শহরের সাথে এর যোগাযোগ পুরোটাই বিচ্ছিন্ন।
গ্রামেরে নাম সফেদপুর। আয়তনে অনেক বড় কিন্তু ঘনবসতি খুব কম। ক্ষেত-খামারে কাজ করা, জমি চাষ করা ও মাছ ধরা এগুলো নিয়েই এ গ্রামের মানুষের বিচিত্র জীবন। শিক্ষা সচেতন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিছু কিছু ছেলে-মেয়ে স্কুলে যায় তবে প্রাইমারী শেষ করতে না করতেই বাবার সাথে জমির কাজে নেমে যায়, গরু-ছাগল-মেষ চড়ায় ইত্যাদি। তাদের ধারণা, এই তাদের বাস্তবতা এবং এইতো জীবন!
গ্রাম থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়_ বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা নগন্য_ ভবনগুলো মোটামুটি অনুন্নতই বলা যায়। জাফর সাহেব গ্রামের একমাত্র শিক্ষিত ব্যক্তি। প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতা করেন, এলাকায় তিনি জাফর মাষ্টার নামে অধিক পরিচিত। পড়াশোনা করেছেন শহরে কিন্তু গ্রামের মায়া ত্যাগ করতে না পারায় অর্থের আধিপত্য ছেড়ে গ্রামেই কষ্ট-ক্লেশে দিনাতিপাত করেন। আমাদের দেশে অনেকে স্বচ্ছল জীবন-যাপনের জন্য শহরে আসেন কিন্তু তারা তাদের পূর্বের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করতে পারেন না; মনটা লুকিয়ে থাকে সবুজ পাতার সজীব গন্ধের আড়ালে।
গ্রামের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা ভুলে সারাক্ষণ দস্যিপনায় মেতে থাকে, পাখির সুরে সুর মিলিয়ে কথা কয়, নৌকা নিয়ে শীতল বিলে শাপলাফুল তোলে, হয়তো কেউ মনের অজান্তেই ফুল গুঁজে দেয় মেয়ে খেলার সাথীর কাজল চুলে; কার গাছে ফল পেকেছে তার খোঁজ নেয়ার জন্য মন উদগ্রীব থাকে; কানামাছি, গোল্লাছুট, ছি-বুড়ি, ডাংগুলি, লাটিম, ঘুড়ি ইত্যাদি খেলায় মত্ত থাকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরো ১২ ঘণ্টা।
গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হাসান (জাফর সাহেবের একমাত্র ছেলে)।
গ্রামের অন্যদের চেয়ে সে একটু আলাদা। পড়াশোনায়ও বেশ ভালো_ বরাবরই ক্লাসে ভালো ফলাফলের কৃতিত্ব তার। বাবা শিক্ষিত: তাই ছেলের পড়াশোনার যত্ন নেয়ার ব্যাপারে সে কোনো ব্যর্থতার পরিচয় দেন না বললেই চলে। ছেলেকে নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন_ সে লেখাপড়া শিখবে_ অনেক বড় হবে; এই ভাবনাটা তার মনের মধ্যে কাজ করে অহর্নিশ। আমাদের সমাজে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে মা-বাবার অনের স্বপ্ন থাকে তবে সে স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যায়। কারণ, আমাদের দেশের অধিকাংশ লোক গ্রামে বাস করে_ কৃষিকাজ ও দিনমজুরী খেটে সংসার চালায় আর এদের মধ্যে শিক্ষার জ্ঞান পুরোটাই শূন্য বললে ভুল হবে না। তারা সন্তানদের পড়াশোনার খরচ মেটাতে ব্যর্থ হয় এবং গুরুত্বটা উপলব্ধি করতে পারে না। অন্যদিকে শিক্ষিত পরিবারের ছেলে-মেয়েরা শিক্ষিত হয় এমন দৃষ্টান্ত আমাদের সমাজে দূর্লভ নয়।
পাশের বাড়ির রিয়াজের সাথে হাসানের বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। অবসর পেলেই তার সাথে আড্ডা দেয়, গল্পগুজবে মেতে থাকে। ছোটকাল থেকেই খেলাধুলার প্রতি হাসানের আগ্রহ লেখাপড়ার থেকে ঢের বেশি। জন্ম থেকেই সে গ্রামের মানুষ তাই প্রকৃতির সুখগুলোকে সে তার জীবনের মধ্যে জড়িয়ে নিয়েছে। প্রকৃতিই যেন তার খেলার সাথী_ এ বাঁধন কখনও ছিন্ন হওয়ার নয়!
রিয়াজ ছেলে হিসেবে ভালো তবে তার সাথে গ্রামের অন্য ছেলেদের সম্পর্ক নিবিড়; যেটা হাসানের সাথে নেই। একদিন বিকালবেলা খেলার মাঠে রিয়াজ তার ১০/১২ জন বন্ধুর সাথে হাসানের পরিচয় করিয়ে দিল। এর পর থেকে তাদের খেলাধূলার কার্যক্রম একত্রে সংগঠিত হত, হয়তো তাদেরকে একই ঝাঁকের কৈ মনে করতো কেউ কেউ। খেলাধূলায় হাসানের ভালো পারফরম্যান্সের জন্য কিছুদিনের মধ্যে সে গ্রামে অধিক জনপ্রিয় হয়ে উঠল। এখন হাসানকে ছাড়া তার বন্ধুদের যেন এক মুহূর্তও কাটে না।
এসব কারণে হাসানের অধ্যয়নের মধ্যে এক ধরনের অনাবধনতা দেখা দিল। অপরদিকে হাসানের পড়াশোনায় অমনযোগী হওয়াটা স্কুলের হেডমাস্টার স্যার ভালোভাবে লক্ষ্য করলেন। একদিন তার ক্লাসে পড়া জিজ্ঞেস করা হলে_ সবাই পারলেও হাসান উত্তর দিতে পারে নি। ধীরে ধীরে সকল শিক্ষকেরা হাসানের বিদ্যাবিরাগী ভাবটা বুঝতে পারলেন এবং তার বাবাকে জানালেন।
শুক্রবার সকালবেলা। মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙলো হাসানের।
হাসান জিজ্ঞাসা করল: মা, বাবা কই?
মা বললেন, তোর বাবা সকালে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে গঞ্জে গিয়েছেন, ফিরতে দেরি হবে। এ কথা শুনে তার মনের মধ্যে পৃথিবীর সব সুখ হাতছানি দিতে লাগলো। কারণ, তিনি বাসায় থাকলে সারাক্ষণ তাকে চোখে চোখে রাখেন। মা হাসানকে মুখ ধুয়ে পড়ার টেবিলে বসতে বললেন। কিছুক্ষণ পর মা নাশতা নিয়ে এসে দেখলেন তার ছেলে পড়ার টেবিলে নেই।
মা কিছুক্ষণ ডাকলেন: হাসান, কোথায় গেলি?
হাসান ঘর থেকে বের হয়ে দিলো এক দৌড়, যেন সে মুক্ত বনের পাখি। এদিকে আজকে অন্য পাড়ার ছেলেদের সাথে তাদের হাডুডু (বর্তমানে কাবাডি) খেলার প্রতিযোগিতা আছে। এই গুরুত্বপূর্ণ খেলায় তাকে আজ থাকতেই হবে তাই লেখাপড়া তার কাজে আজ তুচ্ছ জিনিস হয়ে দাড়িয়েছে। হাসানকে পেয়ে তার দলের লোকেরা অনেক খুশি। আজ তারা ঠিক করলো খেলা শেষ হওয়ার পরে পাশের বাড়ির মাহমুদ মিয়ার গাছের আম পাড়তে যাবে। তার গাছে অনেক আম পেকেছে। এই অবস্থায় চুরি করে খাওয়াটা তাদের কাছে শখের কাজ মনে হল। তারা যখন গেলো তখন মাহমুদ মিয়া তার বাগানে কাজ করছিলেন। তার সাথে হাসানের বাবার একটা বন্ধূর্তপূর্ণ সম্পর্ক সেই পূর্বে থেকেই। তিনি দুষ্টু ছেলেদের দলে হাসানকে দেখে তার বাবার কাছে নালিশ করলেন। হাসানের বাবা দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন যে তার ছেলে পাড়ার অন্য ছেলেদের সাথে মিশে দিন দিন খারাপের পথে পা বাড়াচ্ছে। তিনি তার ছেলের অধ্যয়নে নজরদারির জন্য একজন গৃহশিক্ষক নিয়োগ দেন। আমাদের বর্তমান সমাজে ছেলে-মেয়েদের দুষ্টু মনোভাবের জন্য অভিভাবকদের প্রায়ই নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এ চিত্র আমাদের দেশে অসম্ভব কিছু নয়। গৃহশিক্ষক হাসানের যথেষ্ট যত্ন নিলেও লেখাপড়পার প্রতি তার মনোযোগের যথেষ্ট অভাব লক্ষ্য করেন। একদিন বিকালবেলা রিয়াজ এসে জানলা দিয়ে ডাক দিলে, সে গৃহশিক্ষককে ফাঁকি দিয়ে পড়ার টেবিল থেকে উঠে যায়।
এখন তার মন ছোটে শুধুই অন্য দিগন্তে_ যেখানে বাতাসের ঘর্ষণে বৃক্ষের পাতায় দুষ্টুমির নিমন্ত্রণ জানায় অচেনা কোনো বালক, যেখানে দোয়েল পাখির গানের সুরে মুখের কথাগুলো গান হয়ে যায়, যে নীল ভূবনে মনের ইচ্ছেগুলো খাঁচাছাড়া পাখি হয়ে উড়াল দেয় কিছু অজানা রহস্য উদঘাটনের নেশায়।
একদিন জাফর সাহেব তার ছেলের কথা ভেবে হঠাৎ করে অনেক বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। সে ঠিক করল, গ্রামের মায়াভরা জীবন ছেড়ে শহরে পাড়ি জমাবে; তার একমাত্র ছেলে হাসানের উজ্জল ভবিষ্যতের জন্য। বাবারা তাদের ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রাখবে এটাই স্বাভাবিক, তাই সে তার সুখগুলো বিসর্জন দিতে যাচ্ছে একমাত্র ছেলের জন্য। তার যাবার কথা শুনে পাড়ার লোকদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। এত ভালো একটা লোক তাকে স্কুল থেকেও যেন ছাড়তে চাইছে না। কিন্তু কি আর করা! তাকে তো যেতেই হবে। প্রথমে হাসানকে এ কথা জানানো হলে সে কিছুতেই শহরে যেতে রাজি হল না_ সে গ্রামের সাথে এক ধরনের মিতালি গড়ে নিয়েছে। সত্যিই কী দারূণ সেই সখ্যতা!
অবশেষে শহরে তার ছোট মামা আজাদের বাসায় এক সপ্তাহের জন্য বেড়াতে যাওয়ার মিথ্যে সিদ্ধান্তে হাসানকে বহু কষ্টে রাজি করালো। তিনি শহরে গিয়ে একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার চাকুরি নিলেন এবং হাসানকে একটা আইডিয়াল স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। হাসানের তো কিছুতেই মন বসছে না কিন্তু তার তো শহরের অভিজ্ঞতা এই নতুন তাই সে পিতার অবাধ্য হল না। এভাবে কয়েক মাস কেটে গেল কিন্তু হাসান শহুরে পরিবেশের সাথে তাকে মানিয়ে নিতে পারলো না। তার পড়াশোনার অবনতি দিন দিন বেড়েই চলছে। যে ছেলেটা গ্রামীণ জীবনকে এতটা ভালোবাসে, যার অভ্যাস নৌকা নিয়ে বিলে শাপলাফুল তোলা, কূজনে ঘুম থেকে ওঠা যার অভ্যেস তার জন্য আচমকা শহরে এসে জীবনটাকে বদলে ফেলা একেবারে অসম্ভব। এ কথা অবশ্য একটু বুদ্ধিমানেরা স্বীকার করবেন।
জাফর সাহেব দেখলেন গ্রামে তার ছেলে দুষ্টুমির ফাঁকে যতটা পড়াশোনা করত, এখন শহরে এসে সে সারাক্ষণ পড়ার টেবিলে থাকলেও তার অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। কিন্তু জাফর সাহেব দায়িত্বে কোনো অবহেলা করলেন না। হাসান সব সময় পড়লেও তার মন থাকে উদাসীন। মনে হয়: আকাশের দিকে তাকিয়ে সে অঝোরে মনের দুঃখগুলো প্রকাশ করছে অশ্রুবিহীন। একদিন শুক্রবার হাসান বাবার সাথে শহরের শিশু পার্কে ঘুরতে গেলে, তার চোখে কৃত্রিম পার্কটি গ্রামের অকৃত্রিম বৈচিত্রের ফরাশে পুরোপুরি ঢেকে গেল। বাবা ভাবলেন, এখানে তাকে নিয়ে আসাটা বোকামি ছাড়া আর কিছুই হয় নি।
শহরে কয়েক মাস কাটানোর পরে হঠাৎ করে ঈদের ছুটি চলে এল। এবার নাড়ির টানে কিছুদিনের জন্য গ্রামে যেতেই হবে, তা না হলে কোনোভাবে ভদ্রতা প্রকাশ করার উপায় থাকে না। হাসানের এই খবর শোনার সাথে সাথে মন চঞ্চল হয়ে উঠলো। সে ভাবলো আবার তার বন্ধুদের সাথে দেখা হবে, একসাথে খেলতে পারবো, কী আনন্দ!
জাফর সাহেব পরিবারের সাথে কিছুদিনের জন্য গ্রামে চলে এলেন। সুন্দরভাবে ঈদ কাটালেন। হাসান তার বন্ধুদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিল। ঈদের দ্বিতীয় দিন জাফর সাহেব তার বন্ধু মাহমুদের সাথে গ্রামটাকে ঘুরে দেখলেন। অনেক মাস পরে দেশে এসেছেন তাই মনের ইচ্ছাটাকে দমিয়ে রাখতে পারলেন না। সময়টা ছিল হেমন্তকাল। তার জমিতে অনেক ফসল হয়েছে। কৃষকেরা ফসল কাটায় ব্যস্ত। তার কাছে এটা ঈদের আনন্দের চেয়েও অন্যরকম মহা আনন্দ মনে হল।
জাফর সাহেব হঠাৎ করে তার সিদ্ধান্ত আবার পরিবর্তন করে ফেলবেন এ কথা কেউ ভাবতেই পারে নি। তিনি সারাদিন গ্রাম দেখে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে এলেন। স্ত্রীকে এক গ্লাস পানি দিতে বললেন। পানি খাওয়ার পরে সে চেয়ারে বসে উপলব্ধি করলো, সে বর্তমানে এই পৃথিবীর একজন সুখী মানুষ। তিনি হঠাৎ করে স্ত্রীকে বললেন যে আর আমাদের শহরে যাওয়া হবে না! একথা শুনে অবাক হবার কিছু নেই। তিনি তো এই গ্রামেরই মানুষ_ গ্রামের মানুষের সাথে তার সম্পর্ক সেই জন্ম থেকেই। কিন্তু শহরে তো তিনি ভালই ছিলেন।
তবে কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন?
তার ছেলের ভবিষ্যত্যের কি হল?
এই প্রশ্নটা অবশ্য সবাই করবে। আমাদের জানা উচিত, শুধুমাত্র শহুরে জীবনজাপন করে মানুষ তার ভবিষ্যত সুন্দরভাবে গড়তে পারে না এবং পড়ালেখায় উন্নতি করতে পারে না। গ্রামে বসে মানুষ তার ভবিষ্যত গড়ার আত্মপ্রত্যয়ী কারিগর হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত আমাদের দেশে দু’একটি নয়। লোকে শহরে বাস করে বলে তার ভবিষ্যতের উন্নতি হয়েছে এবং অনেক বড় শিক্ষিত হয়েছে, এমন ধারণা আমাদের অনেকের মনে; কিন্তু এর উল্টোটাও যে হয়ে থাকে এ নিয়ে আমাদের মাথাব্যাথা কম। অনেক লোককে দেখেছি সুন্দর জীবনের জন্য শহরে এসে জীবনটাকে আবর্জনার স্তুপ বানিয়েছে, নিজের মধ্যে এক ধরনের খারাপ মানসিকতার জন্ম দিয়েছে, ছিনতাইকারী ও মাস্তান হয়ে ফিরেছে জীবনের পথে ইত্যাদি ইত্যাদি।
তবে জাফর সাহেব তার পরিবর্তনশীল সিদ্ধান্তে কেন অটল থাকলেন, এ রহস্য আমাদের কাছে আজও অজানা হয়ে থাকলো। আমি জানি এক্ষেত্রে অনেকে অনেক কিছু ভাববেন। এই তো জীবনের বাস্তবতা!
কিছু দিন কেটে গেল। একদিন দুপুরে খাবার পরে জাফর সাহেব তার ছেলেকে ডাকলেন। এদিকে হাসান বাড়ি এসে আকাশের তারা হাতে পেল। তার দিনকাল মহা আনন্দেই কাটতে লাগলো। শহরের স্কুলের কথা সে একেবারে ভুলেই গেল।
বাবা বললেন: শহরে যেতে হবে, যাবে না?
এবার হাসান বিড়বিড় করে বললো: একদম ইচ্ছে করে না, না গেলে হয় না? আমি এখন থেকে গ্রামেই থাকবো। গ্রাম আমার খুব ভালো লাগে। বাবা শহরে আমার মন টিকবে না; আমি শহরে গেলেও আমার মন পড়ে থাকে গাঁয়ের মেঠোপথ বারান্দায়।
হাসান একটু দৃঢ় হয়ে বললো: আমি কথা দিচ্ছি, এখন থেকে তোমার কথা শুনবো, মাযের অবাধ্য হব না এবং ঠিকমতো লেখাপড়া করবো।
জাফর সাহেব তার ছেলেকে কাছে ডাকলেন। হাসান মনে করলো বাবার কথা অমান্য করার কারণে তিনি শাস্তি দিবেন। সে ভীরু ভীরু চোখ নিয়ে একবার মায়ের দিকে তাকায় আর একবার বাবার দিকে। এরপর আস্তে আস্তে কাছে আসলো। বাবা তার ছেলেকে বুকে চেপে ধরলেন। এবার তার চোখ থেকে ঝরণার মত অশ্রু নামতে লাগলো। এ অশ্রু দুঃখের নয় মহা আনন্দের। হাসানের কথা শুনে গর্বে যেন তার বুক ভরে গেল।
জাফর সাহেব ভাবলেন, তাহার ছেলে দেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবাসতে শিখেছে। এই গ্রামই এখন তার জীবনের সর্বোত্তম বন্ধু ও সাথী। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে! একদিন এই মাটি ও মানুষকে রক্ষার জন্য গাঁয়ের দামাল ছেলেরা জীবন দিয়েছে। পৃথিবীতে স্থাপন করেছে উদ্দীপ্ত সূর্যের মত উজ্জল দৃষ্টান্ত। হাসানও একদিন তাদের মত হবে। জীবন দিয়ে দেশকে ভালোবাসবে। এই কথা ভেবে ভেবে জাফর সাহেব তার গর্বের ছেলেকে বুকে নিয়ে হারিয়ে গেলেন এই দেশ, মাটি ও মানুষের মাঝে…
১৯ জুলাই - ২০১১
গল্প/কবিতা:
১১ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪