বিটা,
সেদিন তোমাকে এত সাধ করে চিঠি নামক প্রাচীন প্রক্রিয়ায় মনের কথা লিখে জানালাম, অথচ তুমি তার উত্তরে আমার মস্তিষ্কে পিকোসেকেন্ডে একগাদা কথা বলে দিলে! আশ্চর্য..তুমি কি করে এত পানশে ও একঘেয়ে প্রক্রিয়ায় আমাকে উত্তর দিতে পারলে বলতো!
এরজন্য তুমি অবশ্যই শাস্তি পাবে..এখানে এলে তোমাকে কমপক্ষে কয়েক সেকেন্ড বাইরে দাড়িয়ে থাকতে হবে!
এই আমি বলে রাখছি, এই চিঠির উত্তরে তুমি কিন্তু চিঠি পাঠাবে।
জানো বিটা, এই মাসের শেষের দিকে আমাদের গ্যালাক্সিতে দুই ঘন্টার জন্য বৃষ্টির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে..আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে!
তুমি তো জানোই কত কষ্টে এই শতাব্দীর বৃষ্টির অনুমোদন পেতে হয়েছে আমাদের সবার! তুমি কিন্তু তার আগেরদিনই এখানে চলে আসবে, আমরা অবশ্যই একসাথে ভিজবো।
আসার সময় কিছু পিরোল ও ন্রিয়োতা ফুল এনো.. তোমাদের গ্যালাক্সিতে যে মরা হলদে ও কালচে বাদামী ফুল আছে ওইগুলো নয়, নীলচে গোলাপি পিরোল আর গাঢ় সোনালী ন্রিয়োতা চাই আমার। মনে থাকে যেন!
আরো কথা আছে, এলে বলবো!
দি এন্টিনিই ডাবল গ্যালাক্সীর চেয়েও তোমার বেশী জানার কথা আমি তোমাকে কতটুকু ভালোবাসি।
তোমার আর্থ
চিঠিটা পড়া শেষ করে ঘড়ির দিকে তাকালো বিটা..গত পাঁচ সেকেন্ড সময়ের পুরোটাই ব্যয় হয়েছে এটা পড়তে! ভাবাই যায়না.. তার মত একজন প্রথম শ্রেনীর গ্রাফিনিওবোট সেই কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন মানুষের মত চিঠি পড়ছে এতগুলো সময় নষ্ট করে! তার এই ভালোবাসার সত্যিকারের মানবীটা আসলেই অদ্ভুত, কত যে তার পাগলামী! বৃষ্টিতে ভেজাও তার মধ্যে অন্যতম..চিঠি লেখার মতই। হাসলো বিটা, সময় পেলেই আবার আর্থের জন্য চিঠি লিখতে হবে। আর্থ নামের সাথেও জড়িয়ে আছে তার খামখেয়ালিপনা। ওর নাম আসলে লিক্রিওনিটা, যা আর্থের নিজেরই খুব অপছন্দের! তাই তার সবচেয়ে প্রিয় নামটিকেই সে নিজের করে নিয়েছে। বলতে গেলে ওই গ্রহটার অস্তিত্ব এখনো আছে কিনা এটা নিয়েই সন্দিহান বিটা, অথচ আর্থ নিজে না দেখেই গ্রহটির নামসহ সবকিছুই ভালোবাসে।
বৃষ্টি নিয়েও তার আরেক পাগলামী.. আর্থ অথবা তার, কারো গ্যালাক্সিতেই বৃষ্টির বিন্দুমাত্র প্রয়োজন নেই। অথচ আর্থ ও তারমতো কিছু প্রাচীনত্বপ্রিয় মানুষের জোরালো দাবী, বছরে একটা দিন হলেও তাদের গ্যালাক্সিতে বৃষ্টির অনুমোদন দিতে হবে..শেষপর্যন্ত শতাব্দীতে একদিন বৃষ্টির অনুমোদন নিয়েই অবশ্য সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে আর্থকে! তাই এই মাসের শেষদিনে যে বৃষ্টি হবে তার গুরুত্ব বিটার কাছে না থাকলেও আর্থের কাছে অনেক।
মাসের শেষদিন কাল। বিটা ঘর থেকে বের হলো। আর্থের কাছে যেতে হবে তাকে। তার কাছে অনেক কিছুরই গুরুত্ব নেই, কারন সে রোবটের উন্নত সংস্করণ। কিন্তু আর্থ নামের মেয়েটির গুরুত্ব আর সবকিছুর চেয়ে বেশী.. কারন তাকে সে ভালোবাসে। ভাবতে ভাবতেই টি-ট্রাভেল লেখা ঘরে ঢুকে গ্যালাক্সি অন্ট্যারো বাটন স্পর্শ করলো বিটা। তিন সেকেন্ড পার হতেই ঘরের দরজা খুলে গেলো। নিজের হাতের খানিকটা উঠিয়ে মনিটরে আর্থের বাসার একটু দুরের অবস্থান লিখে গো বাটন চাপলো, এভাবে যাওয়াটা আর্থ একদম পছন্দ করেনা বলেই তার বাসার একটু দুরে পৌছাল সে। তারপর এগোলো আর্থের বাসার দিকে..। হাতে কয়েক তোড়া পিরোল ও ন্রিয়োতা সম্মোহিত করার মত সুগন্ধ ছড়াচ্ছে।
দরজা খুলতে প্রায় দশ সেকেন্ড সময় নিলো আর্থ। বিটা বুঝলো তার শাস্তি প্রক্রিয়া চলছে!
তারপর খোলা দরজায় আর্থের ভেজা হাসিমুখ..চুল ও পোষাক প্রায় ভেজা।
'বৃষ্টিতে ভিজতে কেমন লাগবে একটু দেখছিলাম! অনেকদিন ভেজা হয়নাতো তাই' আর্থের লজ্জামাখা কথা শুনে হাসলো বিটা। বললো, 'আমি অবশ্য দেখতে পাচ্ছি ভেজা তোমাকে অনেক ভালো লাগবে। অন্তত তোমাকে দেখে কাল বৃষ্টির দু'ঘন্টা পার করতে পারবো আমি!'
'না! তুমিও বৃষ্টিতে ভিজে শুধু বৃষ্টিই দেখবে' কপট রাগ দেখাতে গিয়ে হেসে ফেললো আর্থ। তারপর বিটার হাত থেকে ফুলগুলো নিয়ে হাসিমুখে তাকে ভেতরে টেনে নিলো সে।
আর্থের পরনে খুব সাধারন ঢিলেঢালা নরম পোষাক, যার আনাচে কানাচে আর সব পোষাকের মত ইলেকট্রিক আলোর মৃদু ঝলকানি নেই। খোলা চুলের এককোনায় কয়েকটা পিরোল ও ন্রিয়োতা ফুল শুধু.. তাতেই আর্থকে অসম্ভব মায়াবী লাগছে..।
'আমাকে কেমন দেখাচ্ছে বলতো?' জানতে চাইলো আর্থ।
'অপ্সরী যেন.. এককথায় বর্ষামানবী' মুগ্ধ দৃষ্টিতে আর্থকে দেখতে দেখতে বললো বিটা। বাইরে তখন কেবল কয়েক ফোটা করে বৃষ্টি পড়ছে। বর্ষাপ্রেমীদের সংকেত দিয়ে ভেজার আমন্ত্রন জানানো হচ্ছে দি এন্টিনিই থেকে। আর্থ একদৌড়ে বাইরে ছুটে গেলো.. দুহাত মেলে চোখ বন্ধ করে সমস্ত দেহ দিয়ে সে যেন বর্ষাকে অনুভব করতে চাইছে, এমনটাই মনে হলো বিটার। ধীরপায়ে আর্থের বাগানের বিশাল গাছটার নীচে দাড়ালো সে। দেখতে লাগলো অসম্ভব ভালোবাসা নিয়ে বৃষ্টির জলকনায় ভিজতে থাকা আর্থকে। কেন যেন নিজেকে অন্যকরম মনে হতে লাগলো বিটার, সে যেন গ্রাফটন নামের রোবট গ্যালাক্সির অধিবাসী গ্রাফিন দিয়ে তৈরী কোন উন্নত ধরনের রোবট নয়.. সে যেন এই মুহূর্তে পৃথিবীর এক সাধারন মানব, যে তার ভালোবাসার মানবীকে নিয়ে বর্ষার জলে ভিজতে এসেছে। আর এই যে চারপাশ, ঠিক যেন পৃথিবীর কোন নির্জনতম উঠোন..
আর্থের দিকে তাকালো সে। কিশোরীর মত হাসছে আর্থ তার দিকে তাকিয়ে। দেখতে দেখতে হঠাত্ বিটা বুঝতে পারলো তার কি করা উচিত্। সে জানে প্রতিটা মুহূর্তে তাদের গতিবিধি ও কার্যকলাপ দেখছে দি এন্টিনিও ডাবল গ্যালাক্সির ওরা.. যারা তাদের মত অজস্র রোবট ও মানুষের একমাত্র নিয়ন্ত্রনকারী। এখন সে যা করবে তার জন্য জবাবদিহি করতেই হবে তাকে, তারপর অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকতে হবে। কিন্তু এই মায়াময় বৃষ্টি তাকে সব ভুলিয়ে দিলো, সে এগিয়ে গেলো বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা আর্থের দিকে। হাটুগেড়ে বসলো তার সামনে। তারপর তাকে বললো,
'বর্ষামানবী, আমি কি তোমাকে নিয়ে আরো অজস্র শতাব্দী বৃষ্টিতে ভিজতে পারি? তুমি যদি তাই চাও তবে তোমার ভেজা আঙ্গুল এগিয়ে দাও!' হাসলো আর্থ, তারপর নিজের অনামিকা এগিয়ে দিলো। আর পরমুহূর্তে মুগ্ধ হয়ে দেখলো, তার আঙ্গুলে বিটার পরানো আংটি...যার ঠিক মাঝখানে পাথরের বদলে অসম্ভব সুন্দর একটুকরো নীলচে সবুজ পৃথিবী। আর্থের অনামিকায় ঘুরতে থাকা সেই ছোট্ট পৃথিবীটাও জলের স্পর্শে ভালোবাসা খুঁজে নিতে চাইছিলো!
১৪ জুলাই - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৪৯ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪