পার্থিব সুখের সন্ধানে

পার্থিব (আগষ্ট ২০১৮)

জলধারা মোহনা
  • ১০
  • ৩৫
সালেহা বেগম আকাশের দিকে তাকালেন। মেঘে মেঘে একদম কালো হয়ে আছে আকাশটা। জমাট বেঁধে আছে নিঃশব্দে, যেন টোকা দিলেই ঝরে পড়বে বৃষ্টি। আর একটু একটু দমকা হাওয়াও বইছে। বয়সের ভারে কুঁচকে যাওয়া মুখের চামড়া আরো কুচকে গেলো চিন্তায়.. এরকম গুম হয়ে থাকা আবহাওয়া দেখলে ভীষণ ভয় করে তার। কিভাবে বাইরে যাবেন বৃষ্টি নামলে? আর না যেয়ে যে ঘরে বসে থাকবেন আরাম করে, সেই সুখ কি আর তার কপালে আছে। ঘরে অসুস্থ স্বামী, তার চেয়েও বছর দশেকের বড় বারেক মিয়া। নিজের পায়েই আর বল পান না, ভাবলেন সালেহা। তারপরেও প্রতিদিন বেরিয়ে শাকসব্জি বেঁচে দুবেলা দুমুঠো খাবার জোটাতে হয় তাকেই। ছেলেমেয়ে নেই তাদের দেখার মত? এই প্রশ্ন অনেকেই করে তাকে। শুনলে হাসেন তিনি, দুঃখের হাসি। মেয়েটা সেই কবে মারা গেছে অসুখে পড়ে। আর ছিল একটাই ছেলে.. দুজনের একমাত্র সম্পদ, নয়নের মনি তাদের। তাই নাম রেখেছিলেন নয়ন। কিন্তু তারা এখন অন্ধ, দেখেও যে দেখেন না আর। নয়ন এই শহরেই থাকে, কাছেই আরেকটা বস্তিতে। ভালোবেসে বিয়ে করেছিল সালেহা বেগমেরই বোনের মেয়েকে। শরীফার বয়স কম হলেও নিজের ভালো বুঝে নিতে তার দেরী হয়নি। বিয়ের একমাস পড়েই মেয়েটা তার ছেলে নয়নকে বললো; হয় তুমি আমাকে নিয়ে থাকবা, নাহয় আমাকে ছেড়ে বাপ মাকে নিয়ে থাকবা। নয়ন তখন বেছে নিল তার ভালোবাসাকে, যে ভালোবাসা নতুন আর তীব্র, যে ভালোবাসা এতদিনকার পুরোনো সব স্মৃতি ভুলিয়ে দিতে পারে। বউকে নিয়ে নয়ন সেই যে আলাদা হয়ে গেল, কয়েক বছর হলো আর একটিবারও খোঁজখবর নেয়নি সে। এইসব আর ভাবতে চান না সালেহা বেগম। তিনি এখন ভাবেন, তাদের কোনদিন কোন ছেলেমেয়ে ছিলনা। তারা বুড়োবুড়ি সন্তানহীন, তাই বুড়ো বয়সে নিজেদের চিন্তাটাও তাদের নিজেদেরই করতে হবে। কয়েক ফোটা বৃষ্টি এসে পড়লো তার ঝুড়িতে, হাটার গতি বাড়িয়ে দিলেন তিনি। বস্তির পাশেই আবাসিক এলাকা, সেখানে রাস্তার পাশে বসে যা বেচাবিক্রি করা যায়। এরচেয়ে দূরে যাওয়ার শক্তি নেই তার শরীরে। আজকে মানুষটার শরীর আরো খারাপ মনে হলো আসার সময়। বারেক মিয়ে আগে এক বাড়ির দারোয়ানি করতেন। কিন্তু শরীরে কুলিয়ে পারেননি, চাকরীটা চলে গেছে। একসাথেই দুজন শাকসবজি বেঁচতেন। এখন বারেক মিয়া অসুস্থ হয়ে বিছানায় বলে সালেহা বেগম একাই উপার্জন করেন। অনেকেই ভিক্ষা করে তাদের বস্তির বুড়োবুড়িরা। কিন্তু তারা দুজন কেউ চান না চেয়েচিন্তে নিতে। যতক্ষন শরীরে শক্তি আছে, নিজেরাই করে খাবেন।সন্ধ্যার শেষের দিকে আর তেমন বিক্রি হয় না। সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে বাড়ির পথ ধরলেন তিনি। বস্তির সামনেই দোকান থেকে ডিম কিনলেন, অসুস্থ মানুষটার একটু শক্তি তো দরকার। আহা, যদি একটু দুধ কিনতে পারতেন ভালো হতো। কিন্তু না, টাকায় হবে না। বাড়ি গিয়ে দেখলেন বারেক মিয়া ভাত আর ডাল রেঁধেছেন। সালেহা বেগম তাকে বকাবকি করলেন যে কেন তিনি অসুস্থ শরীর নিয়ে এইসব করতে গেছেন। খেয়েদেয়ে রাতে শুয়ে শুয়ে বেশ কিছুক্ষণ তারা দুজন এলোমেলো গল্প করেন। আগের কথা, পরে কি হবে তার কথা, আরো কত কথা... ষাট বছরের সংসারযাত্রায় কত খুঁটিনাটি গল্প যে আছে। শুধু খুব সন্তর্পণে তারা দুজনেই নয়ন সম্পর্কিত সব স্মৃতি এড়িয়ে চলেন। গল্প করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লেন তারা। বাইরে তখন তুমুল বৃষ্টি।
রোজার দিনগুলো বেশ তাড়াতাড়িই চলে গেলো। এইসময়টায় তাদের বেশ সমস্যা হয়, কে আর তেমন শাকসবজি কেনে রোজায়। যদিও একদম না খেয়ে থাকা লাগে না,আশেপাশের প্রতিবেশীরা তাদের বেশ সাহায্য করে। বস্তির এই ঘরের বাড়িওয়ালীও অনেক ভালো, তিনি বেশিরভাগ সময় তার কাছে টাকা নেন না। সালেহা বেগম যখন যেটুকু পারেন দেন। রোজাটা তো কেটেই যাচ্ছে আল্লাহ্‌র রাহমাতে। তবে ঈদে একটু সেমাই খেতে খুব ভালোবাসেন তার স্বামী, ওটা কিভাবে কিনবেন ভাবছিলেন। মনে হয় এবার হবে না। আল্লাহ্‌ যদি এখন দেন কোন ভাবে।
রোজাও প্রায় শেষ। ঈদের দুয়েকদিন আগে পাশের ঘরের ফরিদা তাকে বললেন সন্ধায় তার ঘরে আসতে। তিনি গিয়ে দেখেন ফরিদা যার বাসায় কাজ করে সেই বাড়ির মা আর মেয়ে এসেছে। ফরিদা জানালো সে একদিন সালেহা বেগমের গল্প করেছিল ওদের কাছে। মেয়েটা তাকে হাসিমুখে সালাম দিয়ে বড় একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিল। অনেক ভারী, তিনি বয়ে আনতেই পারছিলেন না। ফরিদা তার ঘরে দিয়ে গেলো। বারেক মিয়া উঠে বসলেন দেখার জন্য। প্যাকেট খুলতেই দুজনের মুখে হাসি ফুটলো। চাল, ডাল, তেল, দুধ, চিনি আর সেমাই.. আর কি চাই। ঈদের দিন সকালে সালেহা বেগম সেমাই রাঁধতে বসলেন। বারেক মিয়াও একটু সুস্থ, খুশীমনে ঈদের নামায সেরে বউয়ের পাশে বসে সেমাইয়ের সুঘ্রাণ নিতে লাগলেন।
পার্থিব সুখ জিনিষটা আসলে আপেক্ষিক। তাদের জন্য এই সামান্য ঈদ উপহারই অনেক বেশী প্রশান্তির। সালেহা বেগম আর বারেক মিয়ার মত নিম্নবিত্ত মানুষগুলো আমাদের চারপাশেই আছেন। চোখ মেললেই দেখতে পাবেন এইসব অসহায় মুখ। খুঁজে বের করুন তাদের, শুনে দেখুন তাদের পার্থিব রূপকথা.....



আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আহা রুবন অল্পকথার গভীরতার বাস্তব গল্প। ভাল লাগল। আমার ব্যক্তিগত অভামত, শেষের দু-লাইন ছেটে দিলে ভাল হত।
মাইনুল ইসলাম আলিফ দারুণ গল্প।খুব ভাল লেগেছে।শুভ কামনা আর ভোট রইল।আসবেন আমার গল্পের পাতায়।
নাঈম রেজা Your writing was very nice, voted, good luck and thank you
খোরশেদুল আলম বেশ সুন্দর লিখেছেন।
বিশ্বরঞ্জন দত্তগুপ্ত পার্থিব জীবনধারা নিয়ে সুন্দর একটি গল্প । ভাল লাগল । ভোট সহ অনেক শুভকামনা রইল ।
মিলন বনিক জীবনের ছোট্ট সুন্দর গল্প। খুব ভালো লাগলো। আমার পাতায় আমন্ত্রণ।
ধন্যবাদ। আমন্ত্রণ গ্রহন করলাম।
মোঃ মোখলেছুর রহমান গল্পটি অবয়বে যদিও ছোট, তবুও অামার কাছে মনে হচ্ছে সালেহার দম্পতির পুরো সময়টাই চোখের সামনে ভাসছে। শুভকামনা আপনার জন্য।
আমি আসলে গল্প লিখতে পারিনা সেরকম করে, আর এটা একটা সত্য ঘটনা বলে তাও এইটুকুন লিখতে পেরেছি। অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
ফেরদৌস আলম সুখ জিনিসটাই আপেক্ষিক। মানুষ এই সামান্য সুখের জন্যই পার্থিব জীবনের পুরোটাই কেটে যায়। ভাল লাগলো গল্পটা।
হুম.. এই আপেক্ষিকতাই কারো জন্য অল্পতেই সন্তুষ্টি এনে দেয়, আর কাউকে অনেক পেয়েও অপূর্ণ রাখে। মন্তব্যের জন্য ধন্যবা।
ARJUN SARMA ভালোই লাগছিলো, কিন্তু দুম করে যেন শেষ হয়ে গেল, ভালো থাকুন
সত্য ঘটনা যে.. ওইটুকুই জানি আমি। আর তারপরের গল্প আমার অজানা। অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

একটি সত্য ঘটনাকে গল্পের আদলে যখন লেখা হয়, তা হয়ে ওঠে পার্থিব দিনলিপি। নিম্নবিত্ত একটি পরিবারের গল্প, যাদের জীবনে কোন বৈচিত্র নেই। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের পার্থিব সুখটুকু দেখলে যে কি অপার্থিব সুখ পাওয়া যায়, তাই নিয়ে গল্পটি লেখার চেষ্টা।

১৪ জুলাই - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী