পশ্চিম দিক থেকে সড়কটা এসে খালের উপরের সেতুটা পার হয়ে কয়েক গজ এগিয়ে সমকোণে বাঁক নিয়ে বামে চলে গেছে। বাম দিকে, সড়কটার সমান্তরালে দিগন্ত জোড়া বিশাল ফসলের ক্ষেত, যার উপর দিয়ে খালটা এঁকে-বেঁকে দিগন্তের কাছাকাছি কোন একটা নদীতে মিশেছে।
খেজুর বা কলাগাছ দিয়ে ঘেরা দুচারটে ঘরবাড়ি আছে- সেগুলো পাকা পোক্ত নয়, তাদেরকে যে কোন সময়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে। তবে তার কোনটাতেও মানুষ তো দুরের কথা, কুকুর বেড়ালও দেখা যাচ্ছে না।
মাঠে ফসল নেই, সব কেটে নেওয়া হয়েছে। নতুন করে আর কিছু বোনা হয়নি। কিছু কিছু জায়গায় আগাছার সবুজ ছোপ লাগতে শুরু করেছে। সেখানে মানুষজন বা গরু ছাগল কিছুই দেখা যাচ্ছে না। নির্মেঘ নীল আকাশের অনেক উপরে বিন্দুর আকারে অনেকগুলো শকুন যন্ত্রেরমত পাক খেয়ে চলেছে।
সড়কের ডান দিকের চেহারা আবার ভিন্ন।
এদিকের অংশটা অনেক উঁচু। আম কাঁঠাল আর জানা অজানা নানান রকমের গাছ ভরা জঙ্গল হয়ে আছে। তবে কিছুটা পরপর সড়ক থেকে সরুসরু পথ বের হয়ে সেগুলোর ভিতর দিয়ে কোন না কোন একটা বাড়িতে গিয়ে উঠেছে। বেশিরভাগই টিনের দোচালা বা চারচালা। ইটের পাকা বাড়িও আছে কিছু কিছু। বিশাল উঠোন, পুকুর আর সবজির বাগান নিয়ে যেন এক একটা রাজ্য। যেগুলোর পিছনে আবার ফসলের খেত। সড়ক থেকে কিন্তু এর প্রায় কিছুই দেখা যায়না।
সড়কের কোনা থেকে মাটির একটা পথ সোজা চলে গেছে পুবে। বাম দিকের মাইল খানেকের একটা অঞ্চল ঘিরে সেটা আবার খাল পার হয়ে যেখানে প্রধান সড়কে ফিরে গেছে, তার মাইল দুয়েক বামে নদীর উপরের সেতুটা মাত্র দুদিন আগে মুক্তিযোদ্ধারা ভেঙ্গে দিয়ে গেছে ডিনামাইট দিয়ে।
সড়ক আর মেঠো পথটার এই কোনাটাতে বেশ কয়েকটা দোকান আর বিশাল একটা ফাঁকা চত্বর। এটাই গ্রামের বাজার। বাম দিকের আঠাশ মাইল দূরের শহরের সাথে ডান দিকের দুই মাইল দূরের মহিমগঞ্জের প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম। নদী পথেও যাওয়া যায়, তবে সেটা অনেক ঘুরে।
মহিমগঞ্জ প্রাইমারি স্কুলের ঘাটির পাক সেনাদের উপরে গতরাতে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করেছিল। রাজাকারের একটা দল সেখানে আছে। যদিও তারা সাধারণ মানুষের কাছে এক একজন বীরপুরুষ, কিন্তু আসল জায়গায় নেড়িকুত্তারমত ভীতু। তবে অস্ত্রপাতির দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা কতটা কী করতে পেরেছে কে জানে। দুমাইল দূরের খবর পেতেও সময় লাগছে।
কবরের মত নিস্তব্ধ আর জনমানবহীন বাজারে নিজের বন্ধ দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছিল সাবের। দোকানে মালপত্র নেই বললেই চলে। শহরে বা গঞ্জে গিয়ে মাল আনার সাহস তার অন্তত নেই। পথে হয়তো রাজাকারের সাথে দেখা, তারা গাড়ি সুদ্ধ মাল হয়তো কেড়ে নিয়ে গেল। গাড়িভাড়াটাও দিয়ে দিতে হবে। কিছু করার নেই, কিছু বলার নেই। জীবনটা যেন তাদের হাতে। সব কিছু যেন হতে হবে তাদের মর্জিমত। তাদের এই ক্ষমতার উৎস কী সেটা সাবেরের ধারণার বাইরে।
তাছাড়া গ্রামেই মানুষ নেই, খদ্দের আসবে কোথা থেকে? তার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, থাকলে কবে চলে যেত। শ্বশুরবাড়ি দরিয়াপুরের অবস্থা আরো খারাপ, সে বাধ্য হয়ে তার শালা আর শালিকে এখানে এনে রেখেছে। সেতুটা ভাঙ্গার আগে হরদম পাক সেনাদের গাড়ি আসতো যেত। মাঝে মাঝে তারা গাড়ি থামিয়ে ধমক টমক দিত। হিন্দি আছে কিনা জানতে চাইত। কোনার কোনমতে তৈরি বেড়াদিয়ে ঘেরা মসজিদটা তাদের বাড়াবাড়ির হাত থেকে অনেকবার বাঁচিয়েছে। আল্লাহ বাঁচিয়েছেন।
সেটা গা সওয়া হয়েগেছিল, কিন্তু মলম মুন্সি তাদের গ্রামটাকে একেবারে জ্বালিয়ে খেল। লেঠেল বাহিনী তৈরী করেছে, নাম দিয়েছে রাজাকার। তার ইচ্ছা মত সবাইকে চলতে হবে, কথা বলতে হবে, যা চাইবে তাই দিতে হবে। খাঁটি মুসলমান, কিন্তু একবেলাও নামাজ পড়ার সময় পায়না। পাক সেনার বিরুদ্ধে মাত্র একটা কথা বলার কারণে বৃদ্ধ ইমাম সাহেবকে গ্রাম ছাড়তে হল। পাগলা হীরা ছোড়াটা এখন পাঁচ বেলা আজান দিচ্ছে, নামাজ পড়াচ্ছে। কী পড়াচ্ছে একমাত্র সে জানে আর জানেন আল্লাহ।
হাবিব আলী, শরিফ ব্যাপারি, হারুন মাষ্টার, আলী রেজা ইজ্জতের ভয়ে বা যাওয়ার পরে গ্রাম ছেড়েছে। রামদাশ মোড়ল, হরিধন মিত্র, যতিন মণ্ডল, তারাপদ বাড়ুই তারা কোথায় আর কেমন ইজ্জত নিয়ে আছে কে জানে। তাদের ঘরবাড়ি এখন মলমের রাজ্য।
এই গ্রাম দুই মাস ধরে মুকুন্দ ডাক্তারের দেখা পায়না। অমায়িক মানুষটা সমানে চিকিৎসা করে গেছে- টাকা দেওয়া হোক বা না হোক।
কোন এক অজ্ঞাত কারণে তার প্রতি মলমের কিছুটা সৌজন্য বোধ আছে, কিন্তু এতে সাবেরের সুবিধা হলেও সে এতে বিব্রত বোধ করে। গ্রামের মানুষের সামনে তার মাথা নিচু হয়ে আসে। সৌজন্যের খাতিরে সে বাকিতে মাল নিচ্ছে, তার মুচকি হাসি দেখে পরিষ্কার বোঝা যায়- এ দেনা শোধ হবার নয়।
ফালু কামিনের সামান্য কিছু লেখাপড়া জানা তার পনের বছর বয়সের ছেলে মতিও তার দোকান থেকে অনেক টাকার চাল-ডাল-নুন-তেল ‘ধার’ করে নিয়ে গেছিল। বলেছিল, দেনাটা ‘অন্যভাবে’ শোধ করা হবে। সাবের জানে, এগুলোর একটা বিন্দুও মতি নিজের বা পরিবারের কাজে লাগায়নি।
সে যাই হোক, তার কাছে মলমের যে কাজটা সবচেয়ে খারাপ লেগেছে, সেটা হচ্ছে ফালুর বাড়িতে আগুন দেওয়া। বেচারা নিজের সামান্য জমিতে একটা ঘর তুলে থাকত। এর ওর জমিতে কামলা দিত, বৌটা বাড়িবাড়ি কাজ করত। মতিকে সাবের নিজের দোকানে কর্মচারী হিসাবে কাজ দিয়েছিল। কয়েক মাস আগে ছেলেটা হঠাত করে কোথায় চলে গেল।
‘…হারামজাদা, মুক্তির বাপ।’ মানুষটাকে পিছমোড়া করে বেঁধে এনে বাজারের মাঝখানে ফেলে মারতে মারতে বলেছিল মলম। ঘরটাতে তার আগেই আগুন দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু গাছ পালার ফাঁক দিয়ে আগুন বা ধোঁওয়া কিছুরই চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল না। গরীবের ঘর হয়তো সবার অলক্ষেই পুড়ে যায়।
‘সে তো শহরে আমার ভায়ের বাড়িতে থাকে।’ কাঁপতে কাঁপতে বলল ফালু।
‘ভায়ের বাড়ি? ঠিক আছে ক্যাম্পে চল, সেখানে গিয়ে ভায়ের বাড়ি দেখাস।’
তাকে মিলিটারি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হল, প্রতিবাদ করার কেউ নেই। তার পিছেপিছে গেল তার বৌ। বাচ্চা মেয়েটা জয়তুন বুড়ির কোলে চিৎকার করে কাঁদতে থাকল। তারা এখন সেখানেই থাকে। বেঁচে আছে। অবশ্য একে যদি বেঁচে থাকা বলে।
মেয়েটাকে মজিদ মুন্সি নিজের তিন ছেলে মেয়ের সাথে রেখে মানুষ করছে। অথচ তার নিজের ঠিকমত খাবার জোটে না।
কতবার সাবেরের মনে হয়েছে এভাবে জানোয়ারেরমত বেঁচে থাকার চেয়ে তার জন্য ভাল হবে এখান থেকে বের হয়ে গিয়ে কোন একটা মুক্তিযোদ্ধা দলের সাথে যোগ দেওয়া। সে খুব একটা লেখাপড়া জানা মানুষ নয়; স্বাধীনতা, আন্দোলন- এসব তার মাথায় খুব একটা ঢোকে না। সবাই যখন মিটিং মিছিল নিয়ে ব্যস্ত, সে তখন দোকান আর পরিবার নিয়ে থেকেছে। তবে এখন সে বুঝতে শুরু করেছে। তার নিজেরও নিশ্চয় কিছু একটা দায়িত্ব আছে, তার কিছু একটা করা উচিৎ। কী করতে হবে তা সে জানে না, শুধু কিছু একটা করতে হবে এটাই তার মনে হয়। কিন্তু বৌ মেয়ে আর শালা-শালিদের কার জিম্মায় রেখে যাবে? মলমের?
এখানে দাঁড়িয়ে থেকে আর লাভ নেই। মনে মনে ভাবল সে। মলম তার সাগরেদদের নিয়ে গঞ্জে গেছে। বলে গেছে, সবাইকে- শক্ত সমর্থ পুরুষ যারা আছে- মুক্তি খোঁজার কাজে তাকে সাহায্য করতে হবে। যে না যাবে...। মলম বোধ হয় শাস্তির ব্যাপারে নিশ্চিত ছিল না। সে দোকানটাকে পাশ কাটিয়ে মাটির পথটাতে নামল।
এই পথটার দুপাশে ছোটছোট খেত, তার পরে গাছপালার দঙ্গল। মাঝে মধ্যে দুএকটা পোড়ো বাড়ি আছে, যেগুলোকে এখন নানান রকমের গাছের জংগল ছাড়া আর কিছু বলা চলে না। দিনে দুপুরেও এগুলোর ভিতরে প্রায় অন্ধকার।
সে আজন্ম এই পথে চলতে অভ্যস্ত, কাজেই এই সমস্ত তার মনোযোগের কোন বিষয় নয়। কিন্তু শ’খানেক গজ যাওয়ার পরে তার অবচেতন মন কোন একভাবে তাকে বাম দিকে রবুবাবুদের পোড়ো বাড়িটার দিকে তাকাতে বাধ্য করল। হয়তো তার কানে অস্ফুট কোন শব্দ ঢুকেছিল…।
গ্রামের পুব দিকে তার বাড়ি থেকে দূরে যাদের বাড়ি, তারা সাধারনত এই অবধি এসে এই বাড়িটার ভিতর দিয়ে পথ সংক্ষেপ করে থাকে। মলমের বাড়ি সেগুলোর একটা। কিন্তু সম্প্রতিক সময়ে মলম ভুলেও এর ভিতর ঢোকেনা।
...তার মনে হল, পায়ে হেটে চলার ফলে তৈরি পথটার হাত দশেক ভিতরে একটা মোটা আম গাছের গুঁড়ির পাশে কিছু একটা- কেউ একজন পড়ে আছে। সে কোন কিছু ভাবতে পারার আগেই সেদিকে এগিয়ে গেল।
পনের ষোল বছর বয়সের একটা যুবক গাছটার গোড়ায় একটা জানোয়ারের মত কুঁকড়ে পড়ে আছে। অনেক কাল তেল চিরুনির সাথে সম্পর্কহীন ঝাঁকড়া চুল। ময়লা খাকি ফুল প্যান্ট আর সাদা ফুলহাতা জামার বেশিরভাগ অংশ চটচটে আঁঠাল কিছুতে কাল হয়ে আছে। কোমরে চওড়া করে একটা গামছা জাতীয় কিছু জড়িয়ে রাখা হয়েছে। মুখটা বুকের দিকে ঝুঁকিয়ে দিয়ে লাঠিরমত কিছু একটা বুকে জড়িয়ে ধরে পড়ে আছে। পাগল নাকি? সে আরো এগিয়ে গেল।
‘হায়, খোদা!’ সে এক ঝটকায় পিছিয়ে গেল। তার হৃদপিন্ড বুকের খাঁচাটাকে কয়েকবার আঘাত করল। ফালু কামিনের ছেলে মতি! বেঁচে আছে তো? আতঙ্কে সে দিশাহারা বোধ করতে লাগল। ছেলেটা এখানে এল কীভাবে?
সে আবার এগিয়ে গেল। ঝুঁকে মুখের সামনে হাত বাড়িয়ে দিল। শ্বাস পড়ছে। কিছুটা স্বস্তি পেল সে।
‘মতি!’ সে নরম গলায় ডাকল।
একটু নড়ে চোখ খুলল মতি। সেদুটো লাল। ‘পানি,’ শোনা যায় কি যায়না শব্দটা। ছেলেটা একটা কোল বালিশের মত যেটা জড়িয়ে ধরে আছে সেটা সে চেনে- একটা থ্রি-নট-থ্রি।
আবার দিশাহারা। চারিদিকে তাকাল সে। গাছ গাছ আর গাছ। দোকানে গেলে মসজিদের চাপকলে পানি পাওয়া যাবে। অথবা বাড়িতে। কিন্তু একে এখন এক মুহূর্তের জন্য চোখের আড়াল করতে ইচ্ছা করছে না। চারিদিকের খেত আর মাঠের ভিতরে পানি কোথায়? পুকুর ধারে কাছে নেই।
পুকুর? এই বাড়িতেই তো একটা পুকুর আছে! সে ঝোপঝাড় মাড়িয়ে উত্তর দিকে এগিয়ে গেল।
তিন খন্ডে ফেটে থাকা পাকা ঘাটে বসে এক আজলা কাজল কাল পানি তুলে মুখে দিল- খাওয়া যায়। ঘাটের পাশে পড়ে থাকা কাছিমের পিঠের মত একটা ভাঙ্গা মাটির কলসির তলা খুঁজে পেল সে।
...প্রায় সবটুকু পানিই খেল ছেলেটা। হাত ভিজিয়ে তার মুখ আর কপাল মুছে দিল সাবের।
‘কী হয়েছে? তুমি এখানে কীভাবে?’
চোখ তুলে তাকাল মতি। ‘কাল রাতে...।’ দম ফেলে ফেলে বলতে লাগল মতি। ‘...আমার পেটের পাশ ঘেসে চলেগেল গুলিটা...তখন বুঝিনি...।’
‘থাক, পরে শুনব।’ তার কষ্ট দেখে সাবের বাধা দিয়ে বলল।
‘পাক সেনা সব খতম...। সে যেন সাবেরের কথা শুনতে পায়নি এমন ভাবে বলে যেতে লাগল। ‘আমার বাবাকে মেরে ফেলেছে... মা পাগল...। ...আমি সেই রাতেই হেটে চলে আসি। ...মলমকে না মারা অবধি আমি শান্তি পাব না...।’
‘বল কী!’ আতকে উঠল সাবের। ‘শহর থেকে দলকে দল পাক সেনা আসবে, সমস্ত কিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেবে!’
‘আপনি কিছু জানেন না...।’ বেদনা ভরা মুখে হাসি ফুটে উঠল। ‘বাংলাদেশের অঞ্চলগুলো স্বাধীন হতে শুরু করেছে। মিত্রবাহিনী ঢুকে পড়েছে। পাক সেনারা আর তাদের ঘাটি ছেড়ে বের হবেনা। এদিকে আসতে গেলেই মরবে সব...।’ সে দম আটকে নিজের যন্ত্রণা সহ্য করে নিল। তারপরে উত্তেজিতভাবে রাইফেলটা চেপে ধরে উঠে বসার চেষ্টা করল। ‘মলম কোথায়? তাকে নিজের হাতে না মারা অবধি আমার শান্তি নেই...।’ সে হাঁপাতে লাগল।
সাবের তাড়াতাড়ি তাকে ধরে গাছটার গোড়ায় ঠেস দিয়ে বসিয়ে দিল।
‘সে সকালে গঞ্জে গেছে,’ সাবের বলল।
‘ওহ!’ চরম হতাশায় মুখ বিকৃত হয়েগেল মতির। ‘রাত্রে আমি এখানে এসে পড়ে যাই...।’
‘তুমি সারা রাত এখানে আছো!’ সাবের বিস্ময় আর বেদনার সাথে মাথা নাড়াল।
শীতকালে এখানে সাঁপখোপের ভয় না থাকলেও- আর যদিও বাঘ নেই, কিন্তু শিয়াল আর কুকুরের অভাব নেই। একটা নির্জীব আহত মানুষ কীভাবে এখানে সারা রাত এভাবে পড়ে থাকতে পারল?
‘কেন মতি?’ সে বলল। ‘কেন ঘর বাড়ি বাপ মাকে ছেড়ে যাওয়া? গুলির সামনে বুক পেতে দেওয়া? মরণকে জড়িয়ে ধরা? কিসের জন্য? কী চাও তোমরা?’ সাবেরের কন্ঠে বেদনাকিন্তু তার অন্তর এখন উত্তরটা জানে।
মুখ তুলে সোজা সাবেরের চোখের দিকে তাকাল মতি। দৃষ্টিতে কিছুটা হতাশা, কিছুটা বেদনা, কিছুটা অবিশ্বাস। ধীরেধীরে, কিন্তু জেদির স্বরে জবাব দিল সে- ‘স্বাধীনতা’।
-স্বাধীনতা জিনিসটা কী সেটা আমি বুঝে উঠতে পারিনি। একেকজন একেক সজ্ঞা দেন, যার কোনটার সাথে বাস্তবের খুব একটা মিল খুঁজে পাইনা। মতি হয়তো জানে, কিন্তু তার সাথে আমার কখনই দেখা হয়নি। -ওয়াহিদ।
সমাপ্ত।