নতুন দিনের আলো

নতুন (এপ্রিল ২০১২)

মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন
  • 0
  • ৬৬
খটাং-খড়-খ্ড়-খড়-খড়-খড় . . . . . . ধাস।
মাথার উপরে টিনের চালে শব্দটা শুরু হয়ে শেষ হল মাটিতে। বোম্বাই সাইজের একটা ইঁটের টুকরা হবে নিশ্চয়। ঘরের ভিতরে লোহার টুলের উপর বসে থাকা মানুষটা মুখ উঁচু করে খুব মনযোগের সাথে অপেক্ষা করতে লাগল আর একটা শব্দ হওয়ার জন্য, পেন্সিলের ডগাটা তখনো খাতার পাতাটাকে ছুয়ে আছে। '. . . ঠিক দুপ্পুর বেলা/ ভূতে মারে ঢিল . . .।' আবার হল। না, ভূত নয়, খুব সম্ভব পাশের ঘরের হবু বৈজ্ঞানীক ছোঁড়াটা নিজের আথবা নিউটনের কোন সূত্র প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। নিজের আপেল গাছের নিচে . . . ঘরের চালের টিনে নয় কেন? বৈজ্ঞানীক না হয়ে আহাম্মক হলেও জানা থাকার কথা, তাতে করে সূত্র প্রমাণ করতে পারার আগেই গায়ে মাথায় পুরষ্কার এসে পড়তে শুরু হবার সম্ভবনা থেকে যায়।

প্রশংসনীয় কাজ, কাজেই আনতিবিলম্বে প্রশংসা শুরু হয়ে গেল, 'হারামজাদা, দুপুর বেলায় মানুষের চালে ঢেলা ছুড়িস! আর কোন কাম কাজ নাই তোর?' লোকটা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল, তার মাথার উপরে, কাজেই প্রশংসাটা তার নিজের করা উচিৎ ছিল, কিন্তু সে এই জাতীয় ব্যাপারে বেশ দূর্বল। কোন জবাব পাওয়া গেলনা, তার বদলে একটু পরেই ঘরের পাশের টিউবওয়েলটা খুব জোরে ঘটাং ঘটাং করতে শুরু করল। প্রশংসা ধ্বনির তীব্রতা কমতে কমতে থেমে গেল। মানুষটা মাথা ঝাঁকিয়ে ঘাড় কাৎ করে তাকের উপরের টেবিল ঘড়িটার দিকে তাকাল, একটা বাজতে সতের। তারপর সে হাতের পেন্সিলটা ছেড়ে দিয়ে নিজের ঘরের চারিদিকে তাকাল।

আট ফুট বাই চৌদ্দ ফুটেরমত একটা ঘর, চারিদিকেই সাদা
চুনকাম করা পাকা দেয়াল, উপরে টিনের চাল। দৈর্ঘ বরাবর একপাশ ঘেঁষে ঘরের দরজা, আর তার বিপরীত দিকের দেওয়ালে তিন-বাই-চার একটা জানালা। আর প্রস্থের দুই দিকের দোয়ালে জানালার বদলে কয়েকটা ছ্যাঁদা। উদ্ভট কারবার। আর ঘরের ভিতরের মালামালের আবস্থা দেখলে যে কারো পিলে চমকে যাবে- ঘরে বলতে গেলে পা ফেলার জায়গা নেই। দরজার প্রায় সাথে দেওয়ালের গায়ে লাগিয়ে রাখা কাঠের বিশাল একটা টেবিল। সেটার বাম দিক থেকে হাতখানেক ভিতরে মাত্র হাতখানেক জায়গা ফাঁকা পড়ে আছে, যেখানে একটা রুল টানা সাদা খাতা খোলা পড়ে আছে, যার উপরে এখন পেনসিলটা ছোট একটা প্লাষ্টিকের স্কেলের পাশে গড়াচ্ছে। উপরের দিকে ক্ষুদে একটা বার ভোল্টের রিলে সুইচ, আর সেগুলোর নিচে ছোট ছোট কয়েকটা পেন্সিলে আঁকা ডায়াগ্রাম। একেবারে নিচের দিকে খুবই ছোট আর আসমাপ্ত ডায়াগ্রামটাতে এলইডি, ব্যাটারি আর ট্রান্সফরমারের প্রতীক দেখে মনে হতেই পারে সেটা কোন এক ধরণের চার্জ লাইট, বর্তমান সময়ে এই জাতীয় কিছুর পিছনে সময় নষ্ট করা একটা আহাম্মুকি।

দুটো সুইচ, একটা ল্যাম্প হোল্ডার আর একটা সকেট বুকে নিয়ে পড়ে আছে একটা কাঠের সুইচবোর্ড, যার ল্যাজটা এঁকে বেঁকে দেওয়াল বেয়ে উঠে দরজার পাশের ওয়ালের সকেটে গিয়ে ঢুকেছে। খাতাটার ডানপাশে এক থাবড়া জমাট কংক্রিটের ভিতর এক প্রান্ত গুঁজে থাকা একটা লোহার তারের স্পাইরালের ভিতরে নাক ভরে দিয়ে ঝুলে আছে একটা তাতাল। তাতালটা তেতে আছে কিনা তা চোখে দেখে বলা যাবেনা।

টেবিলের বাকি অংশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তরল ভর্তি কয়েকটা ছোট আর মাঝারি কাঁচের আর প্লাষ্টিকের বোতল। সেগুলোর ভিতরের তরলগুলো টিউবওয়েলের (নাকি চোখের) পানি থেকে শুরু করে জাহান্নামের আরক পর্যন্ত যে কোন কিছু হতে পারে। সেগুলোর সাথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে একগাদা নানান রঙ্গের ছোটছোট প্লাষ্টিকের বৈয়ম। সেগুলোর ভিতরে . . . যা খুশি থাকুক, আমাদের কী? আর আছে, তারের টুকরা, প্লাষ্টিকের টুকরা, লোহার টুকরা, পাথরের টুকরা, কাগজের আর সিরিস কাগজের টুকরা, রজন আর মোমের টুকরা। সেগুলোর ফাঁকে ফাঁকে লুকোচুরি খেলছে আইসি, ট্রানজিষ্টর, ডায়ড, রেজিষ্টেন্স, ক্যাপাসিটর, ভাঙ্গাচোরা কয়েকটা ইলেকট্রনিক সার্কিট, নানান আকারের স্ক্রু, নাট বলটু আর এই ধরনের হাজার সদস্য। এর ভিতরে সাঁপ আর ব্যাঙ চেষ্টা করলে হয়ত একে অপরকে এড়িয়ে সাচ্ছন্দে বসবাস করতে পারবে।

টেবিলের নিচে ভাঙ্গাচোরা রেডিও, টেপরেকর্ডার, পুরানো দিনের চার্জ-লাইট আর কম্পিউটারের পিএস ইউ জড়াজড়ি করে একটা পাহাড় গড়ে তুলেছ। সেখানে ঠিকভাবে পা রাখাই দায়। এখানে নিশ্চয় বাঘ সিংহ আছে।

পিছনে আর একটা টেবিল, যেটাকে এই মুহূর্তেই হাসপাতালে (জ্বালানী কাঠ হিসাবে রান্নাঘরে) পাঠানো একান্ত দরকার, সেটার উপরে কার-রেডিও আর এই ধরনের জিনিসের বেশ কয়েকটা সার্কিট, আর তাদের ফাঁকে ফোঁকরে উঁকি ঝুঁকি মারছে কয়েকটা কম্পিউটারের সাউন্ড আর ডিসপ্লে কার্ডের শরীরের নানান অংশ। সেটার নিচে একটা বিবর্ণ ডেক্সটপ (অথবা শুধুই কভার) এর উপরে গাদা করে রাখা হয়েছে কম্পিউটারের মাদার বোর্ড। সম্ভবত আইবিএম এর ০৮৬ থেকে নিয়ে পেন্টিয়াম-টু তক সবই আছে সেখানে। সেগুলোকে পাশ থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে ডেক্সটপের গোটা দুয়েক মেসিন আর বিষন্ন চেহারার আতি বৃদ্ধ খানকয়েক ইউপিএস।

ঘরের বাকি অংশ জুড়ে আছে- গাদাগাদা কীবোর্ড, সদ্যমৃত থেকে শুরু করে আদীম যুগে মারা গেছে এমন ধরনের মনিটর, সাদাকালো টিভি, আস্ত বা নাড়িভূঁড়ি বের হয়ে থাকা বেশ কয়েকটা ল্যাপটপ আর নানান হিজিবিজির জঙ্গল। বাকি অংশে আসন গেড়েছে সিমেন্টের প্লাষ্টিকের বস্তায় বন্দী হয়ে থাকা . . . থাক, এ সমস্ত জেনে হবে কাঁচকলা।

প্রধান টেবিলটার ফুট পাঁচেক উপরে দরজার আংশটুকু বাদ দিয়ে ঘরের এক প্রান্ত থেকে আপর প্রান্ত পর্যন্ত জুড়ে হাত খানেক চওড়া কংক্রিটের একটা তাক, তার উপরে বই বই আর বই। ইংরেজি আর বাংলা। কয়েকটা ম্যাগাজনও উঁকিঝুঁকি মারছে। তবে সেটার দূরতম প্রান্তে একগাদা নানান আকারের হার্ডডিস্ক গাদা করে রাখ হয়েছে। তাদের আকার ছোটখাট একটা ল্যাপটপ থেকে শুরু করে একটা তাশের প্যাকেটের সমান। কয়েকটা এফডিডিও উঁকিঝুঁকি মারছে দেখা যাচ্ছে।

লোকটা আবার একবার ঘড়ির দিকে তাকালো, দুটোর কাছাকাছি। তারপর ঘরের চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে উঠে ঘর থেকে বের হয়ে দরজায় তালা লাগিয়ে টিউবওয়েলের কাছে গেল। সেখানে বালতিতে কাপড় ধুতে থাকা মহিলা তাড়াতাড়ি বালতিটা সরিয়ে নিল, 'ন্যান স্যার,' সে বলল। তথাকথিত স্যার অযু করে নিল। টিনের ঘরের সারির সামনে দিয়ে গেটের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় তার চোখে পড়ল, ওপাশের মসজিদের ইমাম সাহেব মুখে একরাশ উৎকণ্ঠা নিয়ে গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে এদিকে তাকিয়ে রয়েছে। তার আবার কী ঠেকা পড়ল? তাকে দেখার সাথে সাথেই উৎকণ্ঠা বদলে গিয়ে হাসিতে পরিণত হল হুজুরের মুখের ভাবে।

'আসসালামু আলাইকুম,' গেট দিয়ে পা বের করতে করতে মানুষটা ইমাম সাহেবকে বলল। 'কী ব্যাপার, হুজুর? আবার কোন সমস্যা?'
'ওয়ালাই কুমাস সালাম। আপনাকে খুঁজছিলাম, কোথায় যান আপনি, খুব ব্যস্ত না কি?'
'ভাল, মহিলাদের ঘরের সামনে দিয়ে যাবেন না, তা একটা হাঁক দিলেই তো আর আপনাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হত না, যে কেউ একজন আমাকে ডেকে দিত . . .।'
'না, এইতো এলাম, মনে করলাম একজন না একজন কেউ বের হবেই, তা প্রথমে আপনিই বের হলেন। মানে, আমাদের মসজিদের মাইক্রোফোনটা একটু সমস্যা করছে। এই বাজে তো এই বাজেনা। আছরের নামাযের আগে যদি একটু দেখে দিতেন। কোথায় যান?' প্রশ্নটা তিনি আবার করলেন।

কিন্তু জবাবটা সে সাথেসাথেই দিতে পারলনা। ওদিক থেকে প্রায় ছুটতে ছুটতে আসছিল সেই বৈজ্ঞানীক ছোঁড়াটা, যার না নাম নেহাল। নামটা একটা গবেষণার বিষয় হতে পারে, কিন্তু নামকরণের এর চেয়ে আদর্শ উদাহরণ আর কিছু হতে পারে, তা এই মানুষটার জ্ঞানের বাইরে- পরিচিত (এমন কি অপরিচিত কিছু মানুষসহ) এমন কোন মানুষ নেই, যাকে সে নাজেহাল না করেছে। অজ্ঞাত কোন কারণে একমাত্র ছাড় পেয়েছে- টিনের চালের ঘটনাটা বাদ দিলে, এই মানুষটা। তাছাড়া হিসাব করে দেখলে, উপরে ছুঁড়ে মারলে ঢ্যালাটা যে কোন কারো ঘরের চালে পড়তে পারে। আর চালে যদি উপযুক্ত রকমের ছ্যাদা থাকে (গরীব মানুষের ঘরের চালে আর কপালে যা প্রায়ই থেকে থাকে) তাহলে সেটা চালে ডালে তরিতরকারিতে মাথা মুন্ডু যে কোন কিছুতে পড়তে পারে। সুপার কম্পিউটারের বাবারও সাধ্যি নেই সেটার সঠিক অবতরণ স্থান নির্ণয় করার, আর এ তো সবেমাত্র একজন হবু বিজ্ঞানী। নাকি হতভাগাটা জেনে শুনেই এটা করেছে, কে জানে।

'স্যার, সরেন সরেন,' তাদের কাছে এসে সে ব্যস্তভাবে বলল। তার হাতে মাঝারি আকারের একটা এলুমিনিয়ামের গামলা, সেটা ভর্তি হয়ে আছে ফ্যাকাশে হলদে প্রায় তরল কিছু একটা দিয়ে, যেটাকে খিঁচুড়ি হিসাবে ধরে নেওয়া যেতে পারে।
'কিরে,' তথাকথিত স্যার আগ্রহ দেখাল। 'ওটা কী রে? ঘ্যাট না পিন্ডি?' ইমাম সাহেব হেসে ফেলল।
'এ-এ-এ-এ- স্যার কিছু জানেনা। এটা জন্মদিন, রনির জন্মদিন।' সে থেমে ইমাম সাহেবের হাসিকে অবজ্ঞা করে লোকটার মুখের তাকাল। 'স্যার, খাবেন, খুব মজা হইছে?' সে খুব আগ্রহের সাথে জানতে চাইল।
'রনি হিন্দু না মুসলমান রে?'
'মুসলমান। আগে মিলাদ হইছে, জিলিপি খাওয়াইছে, তারপর আমরা 'হ্যাপি বার্থ ডে গাইছি, তারপর জন্মদিন দিছে।'
'ভাল, তাহলে এটা ফাতেহা, পিন্ডি না।' লোকটা সরে দাঁড়িয়ে এবার ইমাম সাহেবের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল। 'ভালই হয়েছে, জন্মদিনেই ফাতেহা বিলানো, মরার পরে আর এটার দরকার হবেনা।' ইমাম সাহেব আবার হেসে উঠল। মানুষটা তারপর নেহালের দিকে ফিরে বলল, 'নিয়ে যা, তোরা ভাল করে খা।'
'জি, স্যার,'ছেলেটা আর এক মুহূর্ত আপেক্ষা না করে গেটের ভিতরে ঢুকে গেল।
'হ্যা, হুজুর, আপনার মাইকের সমস্যা বলছিলেন?'
'জি হ্যা। কিন্তু আপনি যাচ্ছিলেন কোথায়? আপনার কাজটা আগে সেরে এসে না হয় . . .।'
'কাছের মসজিদে যাব, নামাজ পড়ে হোটেলে খেয়ে তারপর আসব।' তারপর একটু ইতস্তত করে বলল, 'আপনি একটু দাঁড়ান, আমি যন্ত্রপাতিগুলো নিয়ে আসি, আপনার কাজটা আগে সেরে নিই . . .।'
'না না না,' ব্যস্তভাবে তাকে বাধা দিয়ে হুজুর বলল। 'আগে নামাজ পড়ে খেয়ে আসেন . . .।' কিন্তু সে নিজেই এবার নিজেকে থামিয়ে দিল, কেননা লোকটা ততক্ষণে গেটের ভিতরে ঢুকে বেশ অনেকটা পথ পার হয়ে গেছে। হুজুর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এই লোকটাকে খাটিয়ে নেওয়া যায়, কিন্তু তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা পয়সার লোভ দেখিয়ে কখনই নয়।

যেটাতে যেতে হবে সেই মসজিদটা বেশ কিছুটা দূরে। এটার আশে পাশে কোন দোকান পাট নেই, বাড়ি ঘরের সংখ্যাও একেবারে নগণ্য। আমেরিকা প্রবাসী এক ভদ্রলোক নিজের পৈতিক সম্পত্তিতে সম্পূর্ণ নিজের খরচে এই দারুণ সুন্দর মসজিদটা করিয়েছেন। ইমাম সাহেবের বেতনের ভার তার উপরে, সেটার পরিমাণে একটু কম হলেও ঠিকমত পাওয়া যায়। একমাত্র ইমাম সাহেবকেই সব কিছু করতে হয়, আর কাউকে রাখা হয়নি। কিন্তু এতে ইমাম সাহেব ব্যাজার নন, তৃপ্ত।

'জানেন হুজুর,' লোকটা চলা শুরু করে বলল। 'আমার খুব খিদে লেগেছে . . .।' ইমাম সাহেব ব্যস্তভাবে কিছু বলতে গেল, কিন্তু সে তাকে হাত নেড়ে থামিয়ে দিল। '. . . আর তারপর আমার সামনে দিয়ে যখন ছেলেটা খাবার নিয়ে গেল, তখন সেটা আরো বেড়ে গেল। কিন্তু সেই মুহূর্তেই আমার মনে এটা ঝিলিক দিয়ে উঠল- ছেলেটা, আপনি বা হোটেলওয়ালা কেউই আমাকে ততক্ষণ কিছুই খাওয়াতে পারবেন না, বা পারলেও আমি খেতে পারবনা যতক্ষণ না উপরের সেই তিনি খাওয়ার অনুমতি দিচ্ছেন। তবে আমি যা বিশ্বাস করি, তিনি সাধারণত আমাদেরকে ইচ্ছামত চলার সুযোগ করে দেন। মাঝে মধ্যে একটু পরীক্ষা করে দেখেন।' সে আড়চোখে হুজুরের দিকে তাকাল। হুজুর মুখ নিচু করে হেটে চলেছ, সে কিছু বললনা। 'আমার মনে হল . . .,' লোকটা আবার বলতে শুরু করল। '. . . আল্লাহ যেন আমাকে একটা পরীক্ষার মধ্যে ফেলেছিলেন।' মানুষটা একটু ইতস্তত করল, যেন আর কিছু বলবে কি না এই ব্যাপারে মন স্থির করতে পারছেনা।

'পরীক্ষাটা,' সে আবার বলতে শুরু করল 'আমার ডান দিকে কিছুদুর হেটে গেলে হোটেল, আর সেখানে খাবারের ব্যবস্থা। বাম দিকে দ্বিগুণ দুরত্বে অন্য একটা মসজিদ যেখানে কাজ করতে হবে, সেখানে খেতে পারার কোন সুযোগ নেই। পেটে দারুণ ক্ষুধা। কিন্তু কাজটা মসজিদের, আল্লাহের ঘরের। বান্দা, তোর যা খুশি তুই তাই কর, আমি শুধু দেখে যাব, কিছু বলব না, আল্লাহ যেন বলছেন। আমি মনে মনে বললাম, খোদা, তুমি কিসে খুশি হও তা আমি জানিনা; পেট ভরালে নাকি তোমার ঘরের কাজ করলে। আমার সেটা জানার দরকার নেই, আমি তোমার ঘরের কাজটা আগে করব। রোজার দিন আমি সারাদিন না খেয়ে কাটাই, আজ তো তবু সকালে খেয়ে এসেছি, কয়েকবার পানি খেয়েছি।'

'আপনি কেন কোন মসজিদের ইমাম হলেন না?' হুজুর থেমে তার দিকে ঘুরে বাহু চেপে ধরল। তার চোখ ছলছল করছে।

'তোবা আস্তাগফেরুল্লাহ!' মানুষটা যেন আঁতকে উঠল। 'আমি নামাজটা পর্যন্ত ঠিকমত পড়িনা, কাজা করে ফেলি। কোরান কেতাব ঠিকমত পড়তে পারিনা। আমি নিজে বুঝি, আমার ইমান এত দুর্বল, নিজেকে মুসলমান ভাবতে ভয় হয়, আর আমি হব কোন মসজিদের ইমাম? ভালই বলেছেন, চলেন।'
ইমাম সাহেব তার বাহু ছেড়ে দিয়ে আবার হাটতে শুরু করল। 'ইমাম হলে আপনি আর এই রকম থাকতেন না,' সে বলল, তারপর চুপচাপ হাটতে থাকল।

'আবার এটা শয়তানের ধোঁকাও হতে পারে,' লোকটা বলল।
হুজুর আঁতকে উঠে ঝট করে তার দিকে ঘুরে বলল, 'এটা আবার কী বলেন?'
'না, মানে শয়তান হয়ত আমাকে দিয়ে আপনাকে ধ্মক দেওয়াতে চেয়েছিল, সময় নাই অসময় নাই খালি কাজ নিয়ে আসেন? তারপর আমার সামনে খাবার হাজির করে লোভ দেখাল; ক্ষুধা লেগেছে, আগে খেয়ে নে, না দিলে জোর করে কেড়ে খা, আগে নিজের আরাম তারপরে কাজ। ঠিক কি না বলেন তো, হুজুর?' লোকটা হো হো করে হেসে উঠল।
'ধুর মিয়া, আপনার খালি ফাজলামির কথা।' ইমাম সাহেব রাগতে গিয়ে হেসে ফেলল। 'চলেন তো।'
'চলেন।'

'আমাদের মসজিদ কমিটির সভাপতি,' মসজিদের কাছে আসতেই হুজুর চাপা স্বরে বলল। 'ইনি আগে এখানেই থাকতেন, এখন দুই মাইল দূরে থাকেন। মসজিদ যিনি বানিয়েছেন, ইনি তার চাচা। তবে মানুষ ভাল, অন্তত আমার সাথে ভাল ব্যবহার করেন। কিন্তু আজ এখানে কেন, বুঝলাম না।' তাকে কিছুটা চিন্তিত মনে হল।

মসজিদের ভিতরে মাত্র একজন মানুষ নামাজ পড়ছে, পাশে বড় আকারের একটা টিফিন ক্যারিয়ার। হাল্কা বিরিয়ানির গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তারা ভিতরে ঢুকল, গন্ধ এবার তাদের নাকে খোঁচা দিতে শুরু করেছে, দুজনের পেটেই ক্ষুধা। ইমাম সাহেব প্রথমে সেই মানুষটার সবচেয়ে কাছের ফ্যানটা চালু করে মসজিদের জানালাগুলো বন্ধ করতে শুরু করল। লোকটা মাইকের এমপ্লিফায়ারের আলমারিটার কাছে হাতের ব্যাগটা নামিয়ে রেখে নামাজ পড়তে শুরু করল।

'হুজুর, কেমন আছেন?' সভাপতি জানালা বন্ধ করতে থাকা হুজুরের কাছে এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করল।
'জি, ভাল, আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন? বাড়ির সবাই?' হুজুরের চোখে বাড়তি কিছু প্রশ্ন।
'আলহামদুলিল্লাহ। আপনাদের দোয়ায় আমরা সবাই ভাল আছি।' লোকটা একটু থেমে যেন কী বলবে সেটা মনে মনে গুছিয়ে নিল। 'আমার ছোট ছেলেটা গত পরশু দেশে এসেছে। সেই উপলক্ষে আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে আজ একটু খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম। ইচ্ছা করেই আপনাকে দাওয়াত দিইনি। বাড়িতে মেলা ঝামেলা, তাই ভাবলাম, এখানে আমরা নিরিবিলি একটু খাওয়া দাওয়া করব। এখানেই জামাতে নামাজ পড়ার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু রিক্সার টায়ার ফেটে . . .। যাকগে, আপনার তো খাওয়া হয়নি?'
'জি না,' সে আস্বস্তির সাথে নামাজ পড়তে থাকা লোকটার দিকে তাকাল। তার ঘরে বিবি খাবার নিয়ে বসে আছে আর তারপরও তাকে এখন এখানে খেতে হবে, অথচ যে মানুষটার খাওয়া প্রয়োজন, সে তাকিয়ে তাকিয়ে এটা দেখবে? এটাও কি আল্লাহের ইচ্ছা? নিজেদের সাথে তাকে খেতে বললে সে আবশ্যই রাজি হবেনা, কারণ, সে অপরের খাবারে কখনই ভাগ বসাবেনা। তা ছাড়া একে খাওয়ানোর কথা, যে মানুষটা খাবার নিয়ে এসেছে তাকে কীভাবে বলা যেতে পারে সেটা তার মাথাতে কিছুতেই ঢুকছেনা।

'ঐ মানুষটা কে?' একটা ছাড়া বাকি সব জানালা বন্ধ করা হয়েগেছিল, সেই খোলা জানালাটার পাশে বসতে বসতে সভাপতি বলল।
'মাইক্রোফোনটা সমস্যা করছে, সেটা ঠিক করার জন্য ইনাকে ডেকে নিয়ে এলাম।'
'আপনি ডাকতে যাবেন কেন? কমিটির কেউ আসেনি নামাজে?'
'জি, তারা প্রায় সবাই আসে। তারা আমাকে কাউকে ডেকে এনে এটা ঠিক করাতে বলল।'
'না। যে কোন সমস্যা হোক আপনি তাদের কাউকে বলবেন, তারা লোক এনে কাজ করাবে। তারা না করে আমাকে জানাবেন। আপনি মসজিদের ইমাম, আপনি কি কাজের লোকের খোঁজে পথে পথে ঘুরবেন?'
'জি না, আমার কোন অসুবিধা হয় না।' ইমাম সাহেবের মুখ লাল হয়ে উঠেছে।
'আপনার সমস্যা হয় না, মসজিদের সমস্যা হয়। মসজিদ খোলা পড়ে আছে, আর ইমাম সাহেব নেই। কারো দরকার পড়লে কী হবে? আমাকেও তো আজ বসে থাকতে হল, নাকি?' ইমাম সাহেব মাথা নিচু করল। 'না না, আপনাকে কোন দোষ দিচ্ছি না, শুধু বলতে চাচ্ছি যে, এটা আপনার কাজ না, তাদের কাজ। এখানে টাকা-কড়ির ব্যাপার আছে। এই মেকানিককে কত দিতে হবে?'
'ইনাকে কিছু দিতে হবে না, ইনি মসজিদের কাজে কিছু নেন না।'
'ও আচ্ছা? কিন্তু বিনা পয়সায় মসজিদের কাজ করান কোন হিসাবে? আচ্ছা এ সমস্ত এখন থাক, উনার নামাজ শেষ হয়েছে, চলেন আগে খাবার কাজটা শেষ করে নিই।' তারপর উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, 'ভিতরে না বসে বারান্দায় যাই চলেন।' হুজুর উঠে দাঁড়াল।

'হুজুর, আলমারিটা খুলে দেবেন একটু?' লোকটা নামাজ শেষ করে তার ব্যাগের ভিতরটা হাতড়াতে শুরু করেছে।
সভাপতি তার কাছে এগিয়ে গেল, 'আপনার নাম কী?'
'জি, আমার নাম মাকসুদ আলী।' তার কন্ঠে কোন জড়তা নেই।
'আপনার বোধ হয় খাওয়া হয়নি এখনো? আসেন আগে একটু খেয়ে নেওয়া যাক।'
'না থাক, আপনারা খান,' সে বলল। 'আপনাদের খাবারে ভাগ বসাতে গেলে আমার হয়ত খাওয়া একটু কম পড়ে যাবে।' সে হুজুরের দিকে তাকাল, তার মুখে একে রাজি হতে বলার জন্য করুণ মিনতি।

'বলেন কী?' যে কথাটা বলা স্বাভাবিক ছিল, সেটা হচ্ছে- আপনাদের কম পড়ে যাবে। সভাপতি সাহেব এক মুহূর্ত ভাবল, তারপর আচমকা হো হো করে হেসে উঠল। হজুর আর লোকটা মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগল। 'শোনেন মেকানিক সাহেব,' সে হাসি থামিয়ে বলতে শুরু করল। 'এখানে আজ আমার জামাতে নামাজ পড়ার ইচ্ছা ছিল। ভেবেছিলাম তারপরে দুপুরের খাওয়াটা এখানেই সারব। এখানে আমার দু তিন জন আপনার মানুষ আছ্‌, যারা নামাজ পড়তে এখানে আসে। তারা তিন জন আর হুজুর আর হুজুরের বেগম আর আমি, মোট ছয় জনের খাবার আন্দাজ করে নিয়ে এসেছি। তিন জনের বদলে আপনি একা, আর আপনি বলছেন আপনার কম পড়বে?' সে হাসি মুখে হুজুরের দিকে তাকাল। 'আপনার বেগম সাহেবা নিশ্চয় আপনাদের দুজনের জন্য রান্না করে বসে আছেন?' হুজুর মাথা নেড়ে সমর্থন জানালো। 'তা হলে আমরা এখন আগে ইনাকে পেট ভরে খাওয়াব, তারপরে কিছু থাকলে আমরা খাব, না থাকে আপনাদের দুজনের খাবার আমরা তিনজনে ভাগ করে খাব, ঠিক আছে? আপনাদের কম পড়বে নাতো?'
'একেবারে ঠিক আছে, কম পড়বে কেন?' হুজুরের বুক থেকে যেন একটা ভারী পাথর নেমে গেল।
'তাহলে থালা পানি আর গ্লাস নিয়ে আসেন।' হুজুর সাথে সাথেই বের হয়ে গেল।

পরদিন সাড়ে বারটার দিকে মানুষটা গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকল, আর সেই সাথে শব্দের একটা ঝাপ্টা তাকে একটা ধাক্কা দিয়ে ঠেলে ফেলার চেষ্টা করল। তৃতীয় ঘরের মেয়েটা, যার বয়স দুই বছরেরমত হবে, তাদের ঘরের আর দ্বিতীয় ঘরটার মাঝামাঝি পথের উপরে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে চিৎকার করে কেঁদে চলেছে। আর তার মা দ্বিতীয় ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে যেন তার সাথে পাল্লা দিয়ে চিৎকার করে যাচ্ছে। সেই ঘরের ভিতর থেকেও চালে ঢ্যালা ছোড়া নেহালের বোন ফতেমা সমানে জবাব দিয়ে চলেছে, কিন্তু তার কথায় তত বেশি ঝাঁজ নেই। বোঝাই যাচ্ছে, নেহাল ফতুকে মেরে পালিয়েছে আর তার ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে তার বোনটাকে। ছেলেটাকে অতিরিক্ত আদর দিয়ে দিয়ে একেবারে বেয়াড়া বানিয়ে ফেলেছে। ওদের মা নাম মাত্র একটু শাসন করে, যাতে কোন ফল লাভের সম্ভবনা থাকতে পারেনা। সে এখন বাড়িতে নেই।
সে এগিয়ে এসে দুই বাহু ধরে টেনে তুলল মেয়েটাকে। 'নেহাল মেরেছে?'
'অ অ অঅঅ।'
'খুব লেগেছে?'
'অ অ অঅঅ।'
সে আবার কান্না শুরুর উপক্রম করল, কিন্তু আলী তাকে সে সুযোগ দিলনা। 'ক্ষুধা লেগেছে?'
'হ্যা এ এ এ।'

এই পর্যায়ে তার মা এসে অংশ নিল। 'হারামজাদি, তুই মরতে যাস ক্যান শয়তানটার কাছে? ওর সাথে তোর কিসের এত পিরিত? ওর হাতে এত মার খাস, তারপরও যেতে লজ্জা করেনা তোর?' ঠাস করে একটা চড় পড়ল পিঠের উপরে, মেয়েটার আর্ত চিৎকার মানুষটাকে যেন চাবুক মারল, সে মেয়েটাকে ছেড়ে সরে দাড়াল। মেয়েটার একটা হাত ধরে টানতে টানতে ঘরে নিয়ে যাওয়া হল। আলী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এগিয়ে গিয়ে নিজের দরজার তালা খুলে ভিতরে ঢুকল।

নামাজ আর খাওয়া সেরে আলী দুটোর দিকে ফিরে এলো। গেটের ভিতের ঢোকার পরে সেখানকার অস্বাভাবিক নিস্তব্ধতা তাকে আতঙ্কিত করে তুলল, সেই ঝগড়ার জের ধরে কি কোন দুর্ঘটনা ঘটে গেছে? সে মুখ নিচু করে নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে চলল। রাজুদের ঘরের দরজা পার হওয়ার মুহূর্তেই 'ও স্যার, ও স্যার' চিৎকারে তার অন্তর আত্মা খাঁচা ছাড়া হওয়ার যোগাড়। সে লাফিয়ে ঘুরে দাড়াল। ঘরের ভিতরে এক কোনায় বসে তাদের মা পান খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, রাজু কয়েকটা বই আর খাতা সামনে নিয়ে ঘরের মাঝখানে বসে আছে, আর ফাতেমা দেওয়ালের পাশে পা লম্বা করে বসে কোলের উপরে শুইয়ে তাদের বছর খানেক ব্য়সের ছোট বোনটাকে ঘুম পাড়াচ্ছে। স্যারের প্রতিক্রিয়া দেখে তারা তিনজনই হতভম্ব হয়ে হা করে তাকিয়ে আছে।

'তোরা এমন চিল্লাস ক্যান?' শেষ পর্যন্ত মা নিরবতা ভেঙ্গে বলল। 'আসেন স্যার, একটু ভিতরে আসেন, একটু কথা আছে।'
স্যার দুরু দুরু বুকে ভিতরে ঢুকল। না জানি আবার কোন গ্যাঁড়াকলে পড়তে হয়! এদিক ওদিক তাকিয়ে দরজার কাছেই মেঝেতে বসে পড়ল। তার পায়ে যেন জোর নেই।
'করেন কী স্যার? ওই হামারজাদা, স্যারেরে একটা মাদুর দিতে পারিসনা?'
নেহাল সাথে সাথেই উঠে দাঁড়াল, কিন্তু স্যার হাত নাড়িয়ে বলল, দরকার নেই। নেহাল আবার বসে পড়ল।
'বলেন, কী বলবেন,' স্যার বলল।
'আপনি তো ছাত্র পড়ান, কত করে নেন?' নেহালের মা বলল।
'একশ টাকা করে।'
'সাথিদের ওখানে পড়ান, তারা কত করে দেয়?'

স্যারের মুখটা তেঁতো হয়ে উঠল। ভদ্রমহিলা আটঘাট বেঁধেই নেমেছেন। কিন্তু তাকে দিয়ে পড়াতে গেলে এসব কিছুই করা লাগেনা, তাদের সামর্থ না থাকলে আর স্যারের হাতে সময় থাকলে তাকে দিয়ে বিনা পয়সায়ও পড়িয়ে নেওয়া যায়। তার যেমন দুইশ টাকার ছাত্র ছাত্রী আছে, তেমনি বিনা পয়সার ছাত্র ছাত্রীও আছে। তার কথা হল, যার বেশি দেওয়ার ক্ষমতা আছে, সে যদি বেশি দেয় তবে এটা যাদের একেবারে নেই তাদের উপকারে খাটানো যায়। সে সরল মানুষ, কিন্তু বোকা নয়, আর সে চালাকি পছন্দ করেনা।

'পঞ্চাশ টাকা করে দেয়। কিন্তু তারা একসাথে সাতজন পড়ে, আমি পাই সাড়ে তিনশ টাকা।'
'আমার ছেলেটাকে পড়ান, পঞ্চাশ টাকা করে নিয়েন। আমরা গরীব মানুষ, ওর বাবা ভ্যান চালায়।'
'ঠিক আছে, পড়াব। কখন পড়বে?'
'ও এগারটার পরে আসে, কিন্তু তখন তো আপনার সময় হবে না। এখনই পড়ান ?'
'কি রে, পড়বি এখন?'
'হ্যা স্যার,' বই খাতাক্য়টা দুইহাতে ধরে ছাগলের বাচ্চারমত তিড়িং করে এক লাফ দিয়ে উঠে দাড়াল। তারপর তার কাছে এসে বসতে এক মুহূর্তও লাগল না। তার ক্ষিপ্রতা দেখে স্যার বিস্মিত হল।
'দেখি তোর কীকী বই আছে।' নেহাল বইখাতাগুলো স্যারের হাতে দিল।
বাংলা, ইংরেজি আর আংক বই আর তিনটে খাতা আর একটা পেন্সিল, সব তাদের স্কুল থেকে দেওয়া হয়েছে। পেন্সিলটা ছাড়া সবগুলোতে স্কুলের নামা ছাপানো আছে, ব্রাউন স্কুল ফর মাস পিউপল।

'তোদের স্কুলের নাম কী রে?'
'ব্রাউন ইছকুল ফর মাছ পিপিল।'
'কী মাছ রে? ইলিশ না কাৎলা?'
'মাছ না স্যার, মাছ . . . মাছ . . .।' চালাক ছেলেটা বিব্রত ভাবে স্যারকে শেখনর চেষ্টা করল।
'ভাল . . .।'
'স্যার,' এবার কথা বলে উঠল ওর বোন। 'ওদের স্কুলের নাম এত কঠিন যে, আমিই উচ্চারণ করতে পারিনা।' সে তার ভায়ের হয়ে সাফাই গাইল।
'সেটা ভাল,' স্যারের জবাব। 'যে দিন দেখবা ও ওর স্কুলের নাম সঠিক ভাবে বলতে পারছে, সেদিন বুঝবা, সে লেখা পড়ায় পাশ করেছে।'
'তার মানে স্যার?' তার বোনের প্রশ্ন।

স্যার উত্তর দেওয়ার জন্য মুখ খুলল কিন্তু কিছু বলার আগেই তাদের মা উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠল,'আমার ডিউটি আছে, আমি এখন যাই। তুই কিন্তু বাবা ভাল করে স্যারের কাছে পড়িস। স্যার, ওরে একটু ভাল করে পড়ায়েন।' তারপর ধীরে সুস্থে হেলে দুলে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। এই মায়ের এই ছেলে! বিস্ময়ে স্যারের মুখ দিয়ে কিছুক্ষণ কথা বের হলনা।

'তার মানে,' তারপরে সে বলল। 'শিবরাম নামে একজনের বন্ধু তোতলাদের জন্য একটা স্কুল খুলেছিল। তার নাম যা দিয়েছিল সেটা তোতলারা তো দুরের কথা, ভাল মানুষেই উচ্চারণ করতে পারে না। বন্ধু তাকে জিজ্ঞাসা করে, স্কুলের নাম কেমন হয়েছে, শিবরাম বলে, ভালই। একদিক দিয়ে স্কুলের নাম, আবার সেই সাথে পরীক্ষার প্রশ্ন। তার মানে? তারমানে হল, ছাত্রেরা যেদিন তোমার স্কুলের নাম পরিষ্কার ভাবে উচ্চারণ করতে পারবে, বুঝবে তারা পাশ করে গেছে। এদের স্কুলের নামও বোধ হয় সেই রকম কিছু চিন্তাকরে রাখা হয়েছে।
'স্যার, আপনি না খুব ভাল।' গল্পটা শুনে হাসা উচিৎ নাকি প্রতিবাদ করা উচিৎ এই ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্তে না আসতে পেরে যেটা মুখে এলো সেটাই বলে ফেলল নেহাল।
'আমি ভাল সেটা ঠিক আছে, কিন্তু তুই এমন বান্দর মার্কা কেন রে? নে এখন পড়তে শুরু কর।'
'স্যার, আমিও ভাল। কেন, আমি স্কুলে যাই না?' নেহাল মুখ গোমড়া করে বলল।
'সেটা ভাল, . . . তোর এই তিনটেই বই? আগে কোনটা দিয়ে শুরু করবি?'
'স্যার, আংক আর বাংলা আমার পড়া শেষ। শুধু ইংরাজিটা আপনার কাছে পড়ব। স্যার, আমারে কিন্তু আজ সকাল সকাল ছুটি দেওয়া লাগবে।'
'হতভাগা, এখনো পড়াই শুরু করতে পারলিনা, আর এখনি ছুটির চিন্তা? যা তোর এখনই ছুটি।'
'না, স্যার,' সে ভাবতে ভাবতে বলল। 'তাইলে মা আমারে মাইরা ফালাইব। আপনি পড়ান।'
'ইংরেজি . . ., ঠিক আছে, কী পড়া বের কর।'
'এই যে স্যার, এইগুলা। এম তে ম্যাংগো, ম্যাংগো মানে আম, এন তে নাট, নাট মানে বাদাম, ও তে আরেঞ্জ, আরেঞ্জ মানে কমলালেবু, পি তে পণ্ড, পণ্ড মানে পুকুর, কিউ তে কোয়ালিটি, কোয়ালিটি মানে আইসক্রিম . . .।'
'কী ী ী ী?' স্যার বইয়ের দিকে ঝুঁকে হুংকার ছাড়ল। 'এইটা কি আইসক্রিম নাকি?' সে ছবিটাতে আঙ্গুলের খোঁচা দিয়ে বলল। ছবিটাতে কালচে খয়েরি রঙ্গের ঢেউ তোলা গোলাকার কিছু একটা দেখা যাচ্ছে, যেটা কোন্ আইসক্রিমের উপরের অংশ থেকে শুরু করে এক তাল গোবর বা এই জাতীয় যে কোন কিছু হতে পারে।
'আপায় কইছে,' নেহাল ভয়ে ভয়ে বলল। স্যারের মনে হল, নেহালের বোন বোধ হয় বাড়িতে তাকে পড়ায়। সে হয়ত নিজেই লেখাপড়া বিশেষ জানেনা কাজেই তার ভুল পড়ানোটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নেহালের পরের কথায় তার আক্কেল গুড়ুম। 'স্কুলের আপা আমাদের খুব ভাল পড়ায়, হে পড়াইছে, কোয়ালিটি মানে আইসক্রিম।'
'তোদের আপা আইসক্রিম খুব পছব্দ করে নাকি রে? তোদের খাওয়ায়?'
'হ্ স্যার,' নেহালের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। 'আমাদের চকলেট খাওয়ায়।'
'ভাল, নিজে পছন্দ করে আইসক্রিম আর তোদের খাওয়ায় চকলেট,' স্যার বলল। 'কিন্তু গাধারাম, কিউ তে কুইল্ট, আর কুইল্ট মানে লেপ। শীতকালে যা গায়ে দিস, এখানে সেটাই লেখা আছে।'
নেহাল একেবারে নিভে গেল। স্যারের একটু দুঃখ হল। থাকতই না হয় এতটুকু ভুল, এতে ছেলেটার লেখাপড়ায় কতটুকুই বা ক্ষতি হত? ম্যাংগো, নাট, আরেঞ্জ এতগুলো খাদ্যদ্রব্যের পরে . . . 'পণ্ড'টাই যা কিছু পণ্ড করেছে, তারপরে কুইল্ট না হয় কোয়ালিটিই হল, যে নামের একটা আইসক্রিম যেখানে সেখানে পাওয়া যায়। কিন্তু স্কুলটা কেমন? বিনা পয়সায় বই খাতা আর শিক্ষা দিচ্ছে, তাই বলে ভুল পড়াবে কেন? আর এই ধরনের সাধারণ ভুল যারা করে তারা কী করে শিক্ষক হতে পারে?

'যাক গে, কিউতে তোর কোয়ালিটি আইসক্রিমই হল যা, যদিও তারপরও সমস্যা থেকে যায়। হতচ্ছাড়া ভারতীয়গুলো কোয়ালিটি কিউ দিয়ে না লিখে লেখে কে দিয়ে। এখন সব চিন্তা বাদ দে, এগুলো খাতায় লিখেছিস?'
ছেলেটা কিছুটা যেন শান্তনা পেল। 'স্যার, সব রাত্রে লিখে ফেলব, চিন্তা করবেন না।' যেন চিন্তায় স্যারের ঘুম হবে না। 'ও স্যার,' হঠাৎ করেই সে একটা স্প্রিঙের মত ছিটকে উঠে দাড়াল, আর বিজলীরমত চোখের পলকে ঘর থেকে বের হয়ে গেল, 'একটু দাঁড়ান, আমি আসছি,' শব্দগুলো যেন বাতাশে ভেসে থাকল। স্যার হতবুদ্ধিরমত ফাতেমার দিকে তাকাল।
মেয়েটা স্যারের দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁকাল,'আজকেরমত ওর পড়া শেষ। স্যার, আপনার আর দাঁড়িয়েও লাভ নাই, বসেও লাভ নাই।' স্যার নিঃশব্দে ঘর থেকে বের হয়ে গেল, তার ভাতঘুমের সময় এখনো পার হয়ে যায়নি।

পরের দিন দুপুরে ভাত খেয়ে ফিরে তাদের দরজার সীমানা পার হওয়া মাত্রই নেহাল তারস্বরে ডাকতে শুরু করল, 'ও স্যার, ও স্যার পড়াবেন না, যান কোথায়?' সেই চিৎকারেই বোধ হয় তার ছোট বোনটা কাঁদতে শুরু করল। বাধ্য হয়েই স্যান্ডেল খুলে ভিতরে ঢুকল সে। ঘরের অবস্থা সেই গতদিনের মতই, শুধু তাদের মা'টা আজ আর নেই।

'কীরে হতভাগা, কালকে আমাকে বসিয়ে রেখে কোন জাহান্নামে গেছিলি? '
'মাছ ধরতে, স্যার,' একগাল হেসে বলল। 'জানেন স্যার, এই এতগুলো মাছ ধরেছি . . .।'
'মাছ ধরতে না মারামারি করতে,' তার বোনটা বলে উঠল, আর সেই সাথে ছোট মেয়েটা আবার কেঁদে উঠল। 'জানেন স্যার, নিজের নাকমুখ ফাটায়ে একেবারে . . .।'
'চো ও ও ও প!' ধমকটা সে তার বড় বোন নাকি ছোট বোন আথবা দুজনকেই দিল সেটা ঠিক বোঝা গেলনা। কিন্তু দুজনেই চুপ করল। 'পড়ার সময় শব্দ করে?' তাদের পড়া আর পড়ানো শুরু হল। কিন্তু মিনিট পনের পরেই বাচ্চাটা আবার কেঁদে উঠল, বোধ হয় অসুখ বিসুখ কিছু একটা করেছে।

ঠিক আগের দিনেরমতই ক্ষিপ্রতার সাথে উঠে বাকি দুজনের কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাচ্চা মেয়েটার বুকে প্রচন্ড একটা চড় বসিয়ে দিল। 'হারামজাদি পড়ার সময় কান্দে?' ভাগ্যভাল মেয়েটার বুকটা কাঁথা দিয়ে ঢাকাছিল, না হলে একটা বিপদ ঘটে যেতে পারত। বাচ্চাটা চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করল।
'হারামজাদা, শয়তানের বাচ্চা,' তার বোন একটা ক্ষিপ্ত বাঘিনীরমত চিৎকার করে উঠল। 'তুই এরে মারলি? দাড়া . . .।' রাগে তার মুখ দিয়ে আর কোন শব্দ বের হতে পারলনা না।
'হ্যা, মারছি বেশ করছি। আমার পড়ার সময় শব্দ করে . . .।' মুহূর্তের মধ্যেই ছেলেটা ঘর থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল। স্যার বুঝল, আজকেরমত পড়ানো শেষ। সে উঠে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। ফাতেমার মুখ থেকে কোন শব্দ বের হল না।

আজ শুক্রবার, কাজেই আজ আর কোন পড়ানো নেই। দশটার দিকে স্যার তার আস্তাকুঁড় থেকে বের হল। ক্ষিদে লেগেছে, কিছু খেতে হবে। নেহালদের ঘরের কাছে এসে খোলা দরজা দিয়ে উঁকি মেরে দেখতে পেল, তাদের মা ঘরের মাঝামাঝি বসে কাঁথা সেলাই করছে, বাচ্চাটা শুয়ে আছে আর নেহাল একটা বলপেন নিয়ে কিছু একটা করছে। ফাতেমাকে ঘরে দেখলনা। পনের-ষোল বছর বয়সের মেয়েটা সারাদিন কোন না কোন কাজ নিয়ে আছে, না হলে বাচ্চাটাকে ঘুম পাড়াচ্ছে। তারা দুজনেই মুখ তুলে তাকাল।

নেহালের মুখ হাসিতে ভরে উঠল,'স্যার, আজ পড়াবেন না?'
'না।' স্যার গেটের দিকে এগিয়ে চলল।
পাশের ঘরের মেয়েটা পথের পাশে একটা ভাঙ্গা দা দিয়ে মাটি খোঁচাচ্ছে আর তার মা ঘর ঝাঁট দিচ্ছে।
গেটের বাইরে পা দিয়ে বাম দিকে তাকাতেই সে দেখল, ওদিকে বেশ অনেকটা দূরে ইমাম সাহেব এদিকে হেটে আসছে। একে দেখেই তার হাটার গতি যেন বেড়ে গেল, মনে হয়, সে স্যারের কাছেই আসছে। স্যার চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকল।

নেহালদের পাশের ঘরের মহিলা একটা বোতল নিয়ে বের হয়ে বাম দিকের দোকানটার দিকে গেল, একটু পরেই তার মেয়েটাও বের হল, সারা গায়ে ধূলা মাটি, কিন্তু হাতে কিছু নেই। সে তার মায়ের দিকে না গিয়ে গেটের বাইরে এসে পথের পাশে স্যারের কাছ থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকল। স্
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আরমান হায়দার গল্প বর্ননার ক্ষেত্রে বেশ কিছু পর্যবেক্ষন তুলে ধরা হয়েছে যা সত্যি অতুলনীয়। দৈর্ঘ্য প্রস্থ মিলিয়ে গল্পটি বড় হলেও পড়তে খারাপ লাগেনি। অভিনন্দন আপনাকে।
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন কিন্তু হাতের বাঁধন আলগা করলনা। 'ব্যাথা পেয়েছিস?' স্যার কোমল স্বরে জানতে চাইল। 'না আ আ আ আ স্যার,' তার কন্ঠে জড়তার বিন্দুমাত্র চিহ্ন নেই। সে মুখ উঁচু করে সরাসরি মানুষটার চোখের দিকে তাকাল, তার মুখে হাসি, যেন তারা দুজনে গোপন কিছু একটা করার পরিকল্পনা করছে। তার স্যার হেসে ফেলল, একটা বাচ্চাছেলে যেভাবে হাসে। গাড়িটা পুরোপুরি থেমে গেছে। মেয়েটা যেখানে দাঁড়িয়েছিল, এখন সেখানে গড়িটার সামনের আংশটা। ☼ এই কাহিনীর পুরোটাই কাল্পনিক, বাস্তব কিছুর সাথে মিলে গেলে সেটা কাকতালীয়।
আপনি ওয়ার্ডে লেখেন কিনা জানি না। যদি নাও লেখেন ওয়ার্ডে লেখাটা পেষ্ট করলে টুলস মেনু থেকে ওয়ার্ড কাউন্টে গেলে লেখার শব্দ সংখ্যা দেখিয়ে দেয়। এভাবে ওয়ার্ড থেকে সাহায্য নিয়ে আপনি লেখার সাইজ ঠিক রাখতে পারেন।
আহমেদ সাবের লেখা বেশ ঝরঝরে। কিছু বর্ণনা কমিয়ে লেখার কলেবর হয়তো একটু ছোট করা যেত। দরদী চরিত্র হিসেবে স্যার এবং দুরন্ত চরিত্র হিসেবে নেহাল চরিত্র দুটো বেশ জীবন্ত হয়ে ধরা দিয়েছে।
Lutful Bari Panna গল্পে কি সমস্যা হয়েছে জানি না। আপনি নিজে চেষ্টা করে বাকিটুকু যোগ করতে চেয়েছেন। তাও কমেন্ট লেভেলের সীমাবদ্ধতার জন্য পুরোটা আসেনি। শুধু বুঝলাম নেহাল মেয়েটাকে বাচিয়ে দিয়েছে। তবে সে নিজে মরে গেল না আহত সেটা পরিস্কার না। সবচেয়ে বড় কথা গল্পটার কোন লজিক্যাল ফিনিশিং আসেনি। যখন একবার চেষ্টা করেছেন বাকিটকুও চেষ্টা করে ঢুকিয়ে দিন না। পড়তে কিন্তু খুব ভাল লাগছিল।
গল্পটা গ.ক.র সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। আহমেদ সাবেরের উপদেশ মানা উচিত ছিল, কিন্তু আমি ভেবেছিলাম এটা সীমানার মধ্যেই থাকছে. . .। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
মাহবুব খান গল্পের জাল অনেক বিস্তৃত /ভালো লাগলো / ৫ দিলাম
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ চমৎকার কথার সাহিত্য। গল্পের গতিময়তা ও আবহ বেশ। মূল গল্প-কথার সাথে প্রকৃতি ও অনুষঙ্গগুলো এসেছে যথাযথভাবে। অভিনন্দন ও শুভকামনা ওয়াহিদ হুসেইন ভাই।
Sisir kumar gain বেশ সুন্দর লেখা।ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন ...................সে তার মায়ের দিকে না গিয়ে গেটের বাইরে এসে পথের পাশে স্যারের কাছ থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকল। স্যার পিছন ফিরে তাকাল, নেহাল ঘর থেকে বের হয়ে এদিকে আসছে। ডান দিক থেকে একটা সিএনজি বেশ জোরেই আসছিল, আর ঠিক তখনি যেন মেয়েটার শখ হল রাস্তাটা পার হওয়ার, সে দৌড় দিল। প্রচন্ড একটা ঘসঘস শব্দে বোঝা গেল, চালক গাড়িটা থমানর প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে, কিন্তু সেটা যেন নিয়তির টানে এগিয়ে চলেছে। মেয়েটা নিজের ডান দিকে তাকিয়ে তাকে গ্রাস করতে উদ্যত একটা যন্ত্রদানব দেখে হতভম্বেরমত স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। হতভম্ব স্যার কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার পিছনে কয়েকটা শব্দ উচ্চারিত হতে শুনল, যা ছিল অনেকটা 'সরেন, স্যার' জাতীয়। সেই সাথে সে একটা ধাক্কা অনুভব করে পাশে সরে যেতে বাধ্য হল। তার পাশ দিয়ে ছুটন্ত কিছু একটা মেয়েটাকে ধাক্কা দিয়ে পথের অপর পাশে পড়ে যেতে বাধ্য করল, কিন্তু ছুটন্ত 'কিছু'টা নিজেই গাড়িটার সাথে ধাক্কা খেয়ে স্যারের পায়ের কাছে গড়িয়ে পড়ল, স্যার সাথে সাথেই নিচু হয়ে দুই হাত দিয়ে নেহালকে তুলে বুকে জড়িয়ে ধরল। তার ছিলে যাওয়া কনুই থেকে ফোটা ফোটা রক্ত ঝরে স্যারের সাদা জামাটার পেটের কাছটা লালা করে তুলতে শুরু করেছে, স্যার সেটা একবার তাকিয়ে দেখল, কিন্তু হাতের বাঁধন আলগা করলনা। 'ব্যাথা পেয়েছিস?' স্যার কোমল স্বরে জানতে চাইল। 'না আ আ আ আ স্যার,' তার কন্ঠে জড়তার বিন্দুমাত্র চিহ্ন নেই। সে মুখ উঁচু করে সরাসরি মানুষটার চোখের দিকে তাকাল, তার মুখে হাসি, যেন তারা দুজনে গোপন কিছু একটা করার পরিকল্পনা করছে। তার স্যার হেসে ফেলল, একটা বাচ্চাছেলে যেভাবে হাসে। গাড়িটা পুরোপুরি থেমে গেছে। মেয়েটা যেখানে দাঁড়িয়েছিল, এখন সেখানে গড়িটার সামনের আংশটা। ☼ এই কাহিনীর পুরোটাই কাল্পনিক, বাস্তব কিছুর সাথে মিলে গেলে সেটা কাকতালীয়।
মিলন বনিক দাদা, অফিসে বসে আপনার দীর্ঘ গল্পটা শেষ করলাম..অনেকগুলো চরিত্র উঠে আসাতে ধারাবহিকতা বেগ পাচ্ছিল..সব মিলিয়ে একটা ভালো গল্পের সৃষ্টি...ভালো লাগলো....

০৪ জুলাই - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "নগ্নতা”
কবিতার বিষয় "নগ্নতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ মে,২০২৪