ঃ হ্যালো! ঃ মমস! ঃ কি করে আমার আব্বু সোনাটা ? ঃ তুমি আসোনা কেনো ? ঃ বিকেলেই চলে আসবো। তুমি খেয়েছো ? ঃ বুমনি আসেনিতো। বর্ণিল তো একা খেতে পারে না। ঃ বুমনি আসেনি।! কেন ? ঃ জানি না। তুমি আমার জন্য আইসক্রীম আনবে না? ঃ আনবো বাবা। দীদাবু কই ? ঃ হা হা হা । জানি না। রাখি। তাতা তাতা।
মাকে বিদায় জানানোর সুযোগ না দিয়েই বর্ণিল ফোনটা রেখে দিল। ফোন রাখার পরও ওর হাসি বন্ধ হচ্ছে না। কারন দীদাবু যখন হা করে ঘুমাচ্ছিলো , তখন ও এক টুকরো কাগজ নিয়ে তাতে থু থু লাগিয়ে রোল করে উনার মুখে ঢুকিয়ে দিয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে বড় মামার মত সিগারেট খাচ্ছেন। দেখতে খুব মজা লাগছিলো। উনি এখনও ঘুমাচ্ছেন। বয়স প্রায় সত্তর ছুঁই ছুঁই। বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়ে থাকেন । বর্ণিলকে দেখাশোনা করার জন্য তাই ওর মা শাহেদাকে রেখেছে। শাহেদার মেয়েটার জ্বর। তাই ও আজকে আসতে পারেনি। বর্ণিল ওকে ডাকে বুমনি। বয়স যখন ৩১ দিন তখন থেকেই বুমনি ওর দেখাশোনা করছে। শাহেদা থাকলে এতোক্ষণে বর্ণিলকে দুপুরের খাবার খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতো।
আবার ফোনটা বাজলো। মার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। তাই রিসিভারটা নিয়ে পাশে রেখে দিলো। তারপর বারান্দায় চলে গেলো। ছোট্ট বলে সবসময় একটা ছোট টুল বারান্দায় রাখা থাকে । বর্ণিল গিয়ে ওই টুলের উপর দাঁড়ালো। একটু আগে বৃষ্টি হয়ে গেছে। ছাদ থেকে তখনো পানি পড়ছে। হাত বাড়িয়ে সেই পানি ধরার চেষ্টা করলো। সর সর করে পানি পড়ার আওয়াজ হচ্ছিলো। ওর খুব শি পেয়ে গেলো। নিচে মানুষ দেখা যাচ্ছে। টয়লেটে যেতে ইচ্ছে করছে না। প্যান্টটা নিচে নামিয়ে ছয় তলার বারান্দা থেকে সে শি করে দিলো। রাস্তায় লোকজন উপরে তাকিয়ে দেখছিলো। কিন্তু ছোট্ট বর্ণিলকে দেখা যাচ্ছিলো না। শি শেষ করে ড্রইং রুমে এসে টি ভি তে ।কিছুক্ষণ টম এন্ড জেরি দেখলো। টিভি দেখতে দেখতে এক সময় ঘুমিয়ে গেলো।
আধা ঘন্টার মত ঘুমালো। চোখ মেলে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো । রোদ উঠেছে। আকাশে কয়েকটা ঘুড়ি উড়ছে। কিছুক্ষণ শুয়ে শুয়ে ঘুড়ি দেখলো। দুপুরে কিছু খায়নি। উঠে গিয়ে ফ্রিজ খুললো। অনেক খাবার । ওর প্রিয় হল পুডিং। কিন্তু আজকে পুডিং নাই। ফ্রিজে বরফ শীতল কিছু ভাত ছিলো। একটু ডালও পেলো। বুমনি আসেনি তাই আজ রান্না হয়নি। পা ছড়িয়ে মাটিতে বসে খেতে আরম্ভ করলো। ডাল দিয়ে ভাত মেখে খেতে চেষ্টা করলো। ছোট্ট মুঠো গলে ভাত পড়ে যাচ্ছিলো। শার্টটা ময়লা করে ফেললো। খাওয়া শেষ করে প্লেটটা বেসিনে রাখলো। টেপে পানি নেই। ফিল্টারে একটু পানি ছিলো। তাই দিয়ে হাত ধুতে গিয়ে কাপড় ভিজিয়ে ফেললো। বেড রুমে গিয়ে একটা শার্ট পড়তে চেষ্টা করলো। বোতাম লাগাতে পারলো না ঠিক মত। তাই উঁছু নিছু হয়ে রইলো। প্যান্টটা কোন মতে টেনে হিঁচড়ে পরে ফেললো। খেলনার বাক্সটা থেকে ফিসিং গেমটা নিলো। ড্রইং রুমে আসার সময় দিদাবুর রুমে গিয়ে দেখলো দিদাবুর হা টা আর ও বড় হয়েছে । ওর আবার হাসি পেলো।
ড্রইং রুমে এসে ফিসিং গেমটা দিয়ে খেলতে গিয়ে হঠাৎ নজর পড়লো একুরিয়ামের দিকে। বপসের খুব প্রিয় একুরিয়াম। নানা রঙের মাছ । প্রতিদিন বপস বাসায় এসে আগে মাছ গুলোকে দেখেন। কয়েকদিন আগে কিছু নুতন মাছ এনেছেন। নাম জেব্রাফিস। লাল , নীল আর সবুজ রঙ্গের । প্রথম দিন দেখে মনে হয়েছিলো রঙধনু। লাল আর নীল মাছ চারটে মরে গেছে। এখন আছে সবুজ দু’টো।
বর্ণিল বারান্দায় গিয়ে টুলটা নিয়ে এলো। তবুও একুরিয়ামের ছাদের নাগাল পেলো না। পাশেই ছিলো সোফা। সোফার হাতলে উঠে সে নেটটা দিয়ে মাছ ধরতে চেষ্টা করলো। পারলো না। অনেকক্ষণ পর হাত দিয়ে খপ করে একটা মাছ ধরে ফেললো। কিন্তু ধরে রাখতে পারলোনা। মাছটা হাত থেকে পিছলে গেল। সোফার নিচে চলে গেলো। হাতল থেকে নেমে সোফার নিচে হাত ঢুকিয়ে মাছটা ধরে ফেললো। বেশ জোরে । মাছটা নেতিয়ে পরলো। ওর তখন বপসের কথা মনে পরলো। বপস বলেছিল মাছদের বাড়ি হলো পানি। পানি থেকে বের করলে ওরা মারা যায়। এখন তো কলে পানি নেই। দিনে শুধু একবার পানি আ্সে। ফিল্টারেও পানি নেই। বুমনি না আসায় পানি রাখা হয়নি। ও তো মাছটাকে মেরে ফেলতে চায় না। শুধু একটু খেলতে চায়। তখন ওর মনে পড়লো বাথরুমের ড্রামে রাখা জমানো পানির কথা। বুমনি কালকে ভর্তি করে গিয়েছিলো। কিন্তু ড্রামটাতো অনেক উঁচু। এক হাতে মাছ আর এক হাতে টুল নিয়ে সে বাথরুমে গেলো । ড্রামে পানি একটু নিচের দিকে। টুলের উপর দাঁড়িয়ে একটা মগ নিয়ে ড্রাম থেকে একটু পানি নিয়ে তাতে মাছটা রাখলো। মগের পানিটা একটু নেড়ে দিলো। মাছটা একটু নড়ে উঠলো। পা টা উঁচু করে সে আবার একটু বেশি করে পানি নিতে গেলো। তবুও পারলো না। এক সময় শরীরের অনেকটা উঠিয়ে দু’ পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের উপর ভর রেখে দিলো। ঠিক তখনই ভারসাম্য রাখতে না পেরে মগ, মাছ আর বর্ণিল উপুড় হয়ে পাঁচ ফুট উঁচু ড্রামে ডুবে গেলো। যার অর্ধেকের বেশি পানিতে পূর্ণ ছিলো। মাছকে তার জগতে ফিরিয়ে দিয়ে আসতে গিয়ে বর্ণিল নিজেই রঙহীন জগতের বাসিন্দা হয়ে গেলো।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সূর্য
আমরা অনেক ভাগ্যবান হিসেবেই বেড়ে উঠেছি অন্তত বর্ণিল এর চেয়ে। সবার সাথে মুক্ত বাতাসে দুষ্টুমী আর খেলে পড়ে বড় হয়েছি। আশ্চর্যের বিষয় আমার ভাইয়দের ছেলে মেয়েগুলো ওদের বাবা-মায়ের সান্নিধ্য ছাড়াই বড় হচ্ছে। গল্পের দৃশ্যগুলো সব যেন সামনেই দেখতে পেলাম।
আমি মাঝে মাঝে ভেবে কোন কুল কিনারা করতে পারি না...কাদের সময় টা বেশি ভাল? আমাদের আগের প্রজন্ম , আমাদের প্রজন্ম, নাকি পরের প্রজন্ম? কে যে কি পাচ্ছি আর কি হারাচ্ছি বা হারিয়েছি বুঝে উঠতে পারিনা।
আহমেদ সাবের
মা কাজে ( সম্ভবতঃ বাবাও) এবং বর্ণিল বৃদ্ধা দাদীর সাথে বাসায়। সুতরাং প্রথম থেকেই একটা বিপদের আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু টা পানির ড্রামে আসবে, ভাবতে পারি নি। "দীদাবু যখন হা করে ঘুমাচ্ছিলো" পড়ে ভেবেছিলাম, তিনি সম্ভবতঃ মারা গেছেন। তারপর বর্ণিল "হাত বাড়িয়ে সেই পানি ধরার চেষ্টা করলো।" পর্যন্ত গিয়ে ভাবলাম, সে টুলের উপর দাঁড়িয়ে রেলিং টপকে নীচে পড়ে যাবে। স্বচ্ছন্দ লেখা।
মোঃ আক্তারুজ্জামান
ভাই মিলি, তোমার কাছে সত্যি একটু বেশি-ই প্রত্যাশা রাখি| রনীলের বক্তব্যের সাথে আমিও সহমত প্রকাশ করছি| ৪ নাম্বার প্যারায় আধা ঘন্টার মত ঘুমালো থেকে শুরু করে ওর আবার হাসি পেলো পর্যন্ত ২৮ টা বাক্য আছে যার মধ্যে ১৮ টা বাক্যের শেষের অক্ষর লো| ব্যাপারটা আমার কাছে খুব বৈচিত্রহীন মনে হয়েছে| চার দেয়ালে বন্দী শিশুদের নিয়ে বিষয় ভাবনা সত্যি অসাধারণ লেগেছে| অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো ভাই|
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।