এক
এর আগে এমনটি হয়নি কখনও। ক্লাসের সবাই ইতিকে গল্পের পোকা বলে ডাকে। কোন গল্প কি উপন্যাসে যখন একবার ডুব দেয়, সে গল্প- উপন্যাস শেষ না করা পর্যন্ত গা খিলখিল করে। অথচ এখন নিজের চিরাচরিত স্বভাবের কথা ভুলে গেছে সে। ভুলেই গেছে সে যে একটি গল্পের বই পড়ছে। গভীর মনোযোগ দিয়ে গল্পের লাইনগুলোর দিকে চোখ বুলায় সে বারবার।
“পানির তৃষ্ণায় বুকের ছাতি ফেটে যাচ্ছে মেঝেতে উপুড় হয়ে থাকা মেয়েটির। সে উঠতে চেষ্টা করে, কিন্তু পারেনা। তার তল পেটের নিচে কেউ যেন হাজার কোটি সুঁই গেথে দিয়েছে। অসহ্য যন্ত্রণাকে উপেক্ষা করে ধীরে ধীরে উঠতে চেষ্টা করে মেয়েটি। একহাতে মেঝেতে ভর দিয়ে অন্য হাতে বুকে ব্লাউজটি চেপে ধরে উঠে বসল সে। সীমাহীন যন্ত্রণা মেয়েটির বুকেও। হায়েনার কামলীলায় মেয়েটির স্তনের বোটায় ঘা হয়ে গেছে। পাষন্ড পশুর ধারালো নখের আঁচড় আর কর্তন দাঁতের হিংস্র কীর্তনে ক্ষত বিক্ষত মেয়েটির দেহ; রক্ত কাল হয়ে জমে আছে সেখানে। ঘাতকের বুলেটের আঘাত নয়, তাদের শুষ্ক বীর্য পুষে রেখেছে মেয়েটির হাঁটুর ভাঁজ, সরু নিতম্ব আর নিস্তেজ উরুসন্ধি। বুঝতে বাকি নেই কুমারীত্ব হারিয়েছে মেয়েটি। স্বতীচ্ছেদে যে কয়েকফোটা রক্ত গড়িয়ে পড়েছিল মেঝেতে সেগুলো শুকিয়ে গেছে; তবে মুছে যায়নি।
অনেক চেষ্টার পর অবশেষে দোমড়ানো মোচড়ানো শরীরটাকে একসময় দাড় করাল সেই মেয়েটি। হাঁটতে পারেনা, তবুও সঞ্চিত শেষ শক্তিটুকুর বিনিময়ে দেহটাকে টানতে থাকে পিতলের কলসীটির দিকে। মেয়েটি বাঙ্গালি। সম্ভ্রম হারিয়েছে ঠিকই তবে লজ্জাটুকু বিকিয়ে দেয়নি। তাই চুল দিয়ে ডেকে রেখেছে নিজের মুখ। তার চোখের নিচের কালি এখন চোখে পড়েনা কারো। মাত্র দুইদিনের ব্যবধানে সবই হারিয়েছে সে। শুধু নির্লজ্জের মত প্রাণটুকু রয়ে গেছে এখনও।
হঠাৎ করে আবার কান্নার রোল পড়ে ঘরটিতে। ভয়ে চিৎকার করতে থাকে মৃতপ্রায় নিবাসীগুলো। পিপাসায় কাতর যে মেয়েটি উঠে দাড়িয়েছিল একটু আগে; ধাক্কা দিয়ে তাকে মাটিতে ফেলে দেয়া হল আবার। তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে শক্তিশালী দেহ। এবার একটি নয়, কয়েকটি। দেহে বাজ পড়ার মত আঘাত পেয়ে গলাফাটিয়ে চিৎকার করে উঠে মেয়েটি। কষ্টে তার গলার ধমনীগুলো ফুলে উঠে বারবার, মুখের উপর জড়িয়ে থাকা চুলগুলো ঠেলে উন্মোচিত হয় মেয়েটির মুখ। আতংকিত মুখটিকে দেখলে মনে হয় কেউ যেন সদ্য ফোটা কোন কদমফুল থেকে তার হলুদ পাপড়িগুলো ছিনিয়ে নিয়েছে, নির্জন দুপুরে ঝুম বৃষ্টিতে যার সাদা পাপড়ি মেলার কথা ছিল। মেয়েটি কিশোরী ছিল। বয়সের অনুপাতে যার বয়স চৌদ্দ কি পনের।”
লাইনগুলো পড়তে গিয়ে কখন যে ইতির চোখের জ্বল গাল বেয়ে টেবিলে পড়েছে টের পায়নি। গল্পে মেয়েটির কষ্ট দেখে নিজের আবেগকে প্রশ্রয় দিয়েছে নিজের অজান্তেই, নিজের দুঃখ আর অপ্রাপ্তিগুলোকে অনেক ঠুমকো মনে হচ্ছে এখন। বই পড়তে ভাল লাগছেনা। আবার বালিশে মাথা রেখে ঘুমানোর অভিনয়ও করতে চায়না সে। জীবন সম্পর্কে তার সাজানো যত ভাবনা ছিল সেগুলো সব এলোমেলো হয়ে গেছে যেন। কেননা গল্পে যে মেয়েটির কাহিনীর বর্ণিত হল সে মেয়েটি যে তারই সমবয়সী ছিল। অত কষ্ট কীভাবে সয়েছিল সে!
দুই
ডাইনিং টেবিলে সকালের নাশতা দেয়া হয়েছে। জামাল সাহেব অতি যত্ন সহকারে তার রুটি থেকে অতিমাত্রায় ঝলসানো অংশগুলো খুটিয়ে খুটিয়ে বের করছেন। বারকয়েক ইতি তার মনযোগ আকর্ষণ করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। শেষে রেগেমেগে বলল,
বাবা তুমি কি তোমাদের দাম্পত্য দ্বৈরাজ্যের সাথে ঝলসানো রুটির যোগসূত্র খুঁজবে? নাকি আমার বাকি প্লানগুলো শুনবে ?
ও হ্যাঁ, তাড়াতাড়ি শেষ কর।
আমাদের সংগঠনের নাম দিবো ভাবছি বঙ্গমাতা বীরাঙ্গনা। আমাদের একটি ফান্ডও থাকবে। দেশের অবহেলিত ও দুঃস্থ বীরাঙ্গনাদের পাশে দাঁড়ানোই হবে আমাদের সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য।
তোদের ফাণ্ডের অর্থের জোগান দিবে কারা?
অর্থের জোগান আমরাই করব।
জামাল সাহেব প্রথমে ভ্রু কুচকালেন। তারপরে নিরব হয়ে গেলেন। এটা ওনার মনোযোগী হবার লক্ষণ। ইতি তাই উৎসাহ নিয়ে আবার বলা শুরু করল।
দেখ বাবা দেশবরেণ্য শিল্পপতি, গন্যমান্য ব্যবসায়ী আর প্রগতিশীল রাজনীতিবীদ এদের কারো কাছেই আমরা হাত পাততে যাবোনা। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বীরাঙ্গনাদের পুনর্বাসনে ওনাদের ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা তাই ভিন্নপন্থা অবলম্বন করব। আমাদের অর্থের যোগান দিবে এ দেশের সাধারণ জনগণ। আমরা দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাঁট-বাজার, শপিংমল, সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে একটা একটা করে বক্স পৌছে দিবো। যে যা পারবে সাহায্য করবে। এ ছাড়া বিভিন্ন মেলা এবং বিশেষ দিনগুলোতে আমাদের সংগঠনের সদস্যরা বক্স হাতে পৌছে যাবে। আমাদের সংগঠনটির প্রচারের জন্য ফেইসবুক তো আছেই। দরকার পড়লে আমাদের তহবিল ভারী করার জন্য বছরের বিভিন্ন সময়ে আমরা র্যা লী, কনসার্ট আর পথ নাটক করব।
ইতির মা এতক্ষণ রান্নাঘরে ছিলেন। ইতির কথা শুনে খুন্তি হাতেই হাজির হলেন তিনি।
কি যেন নাটকের কথা বলছিলি রে?
হ্যাঁ মা। তোমাকে জানানো হয়নি। বীরাঙ্গনাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য একটি সংগঠন করব আমরা। তার তহবিল এবং প্রচারের জন্য নাটক করব।
নাটকে কি রোল হবে তোর?
বীরাঙ্গনাদের নিয়ে নাটক করব মা। বীরাঙ্গনা রোলটাই আমার সবচেয়ে পছন্দের। করলে সেটিই করব।
কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে মুখে বিস্ফোরন ঘটল শাহনাজ বেগমের।
অত সংগঠন-ফান্ড করে বেড়াতে হবেনা। কত হাতি ঘোড়া হার মেনেছে উনি এসেছেন এখন রাবণের ভুমিকা নিতে। পুরাতন কাসুন্দি নতুন করে ঘেটে যুগের মাদার তেরেসা সাজতে হবেনা। সামনে পরীক্ষা। ফাঁকিজুঁকি বাদ দিয়ে পড়াশুনায় মন দাও। আর কি সব আজে-বাজে সস্তা রোলে অভিনয় করার সখ জেগেছে মনে।
তুমি এইসব কি বলছ মা! বীরাঙ্গনারা আমাদের মায়ের মত। তাদের এত তুচ্ছ তাচ্ছিল করে কথা বলছ কেন তুমি? আর বীরাঙ্গনা কি খারাপ চরিত্র মা?
চুপ থাক। তোকে ভালমন্দ বিচার করতে বলছে কে? পাবলিক সেন্টিমেন্ট কিছু বুঝিস তুই? কলেজ লাইফে আমি রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবীতে নন্দিনীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। তুই পারলে তেমন কোন রোল করে দেখা।
নন্দিনী চরিত্রটি তোমার করা ঠিক হয়নি মা। নবাব সিরাজদ্দৌলা নাটকে ঘষেটি বেগমের চরিত্রটি তোমার জন্য উপযুক্ত ছিল।
মেয়ের এমন কথা শুনে জামাল সাহেব হেসে দিলেন। শাহনাজ বেগমের রাগ তখন সাত পেরিয়ে সাড়ে সপ্তমীতে চড়তে শুরু করেছে।
পাঁচ মিনিটের মধ্যে নাশতা শেষ করে তুই আমার চোখের সামনে থেকে যা।
ইতি নাশতা আর মুখে নিলনা। তাকিয়ে রইল তার বাবার দিকে। বাবা যদি তার পরিকল্পনাগুলো নিয়ে কিছু হ্যাঁ সূচক কথা বলেন। কিন্তু একটি কথাও আর বলল না জামাল সাহেব।
কোন প্রকার সাহায্য করা তো দূরের কথা; এই নিয়ে কোন কথা শুনতেই রাজি হননি প্রিয় নজরুল স্যার। এড়িয়ে গেছে সবচেয়ে কাছের বন্ধু শিবলু আর আনিতা। উপহাস করেছে সবাই কিশোরী বয়সের সৌখিন পাগলামী বলে। অনুপ্রেরণা দিয়েছে কয়েকজন কিন্তু সাহায্যের হাত নিয়ে এগিয়ে আসেনি কেউ। অনেকের বাঁধা ঠেলে কোন কাজে সফল হওয়া একজনের পক্ষে সম্ভব নয়। ইতিও তাই হার মানল বাস্তবতার কাছে। মানসিকভাবে চরম বিধ্বস্ত হতে হতে ধৈর্যের শেষ সীমানায় গিয়ে তাকে থামতে হল অবশেষে। হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে যে জোনাকি যেতে চেয়েছিল স্বপ্নের দেশে আচমকা আঘাতে তার পথ হারিয়ে ফেলল সে।
তিন
গল্পের শেষ অংশটুকু নিয়ে আজ আবার বসেছে ইতি।
“ দেশ স্বাধীন হল ডিসেম্বর মাসে। নিজের জীবনটুকু এতদিন ধরে একটু একটু করে জিইয়ে রেখেছিল সে। এবার তার মুক্তির পালা। নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে মেয়েটি। সে আবার ফিরে যেতে চায় তার ছোট্ট গ্রাম মদনপুরে। ফিরে যেতে চায় সহজ সরল মানুষের ভিড়ে আবার। চৈত্রের দুপুরে খালি পায়ে ধূলো উড়া মেঠো পথ পাড়ি দিতে চায়। বর্ষার দিনে আম-কুড়ানো দিনগুলো তার চোখে ছবি হয়ে ভাসে, বকুল ফুলের মালা গাঁথা আর গোল্লাছুট খেলায় মেতে থাকা বিকেলগুলো তাকে অস্থির করে তুলে অবিরত। গ্রামে গেলেই মালা, শিউলি আর ছটকুদের সাথে মনু মিয়ার ঝিলে কোমর সমান কাপড় ভিজিয়ে আবার শাপলা শালুক তোলার পণ করে সে। হেলেঞ্চা শাক আর মেনিমাছের ঝোল দিয়ে দিয়ে মায়ের হাতে দুমুঠো ভাত খেতে ইচ্ছে করে মেয়েটির। বাবার সাথে মাঠে কাজ করতে যে কি আনন্দ ভাবতেই মেয়েটি চোখের জ্বলে গাল ভিজায়। তার অপেক্ষার প্রহর গুনা শেষ হয়না। কখন সে মুক্তি পাবে! কখন ফিরে যাবে সে তার পরিবারের মাঝে! ছোটভাইকে কাঁধে চড়িয়ে এক্কাদোক্কা খেলবে আবার।
মেয়েটির হিসাবে অনেক ভুল ছিল। স্বপ্নদেবতা মেয়েটির স্বপ্নগুলোকে আমলে নেয়নি। ধর্মান্ধ সমাজ মেয়েটিকে মেনে নিতে পারেনি। পাপী, অপয়া, নষ্টা উপমাগুলো চাপিয়ে দিল তার উপর। অথচ দেশ তাকে বীরাঙ্গনা উপাদি দিয়েছিল। হিসেব মিলছেনা কিছুতেই। সামাজিক স্বীকৃতি পেলনা মেয়েটি। মেয়েটির পরিবার শেষ পর্যন্ত গ্রহন করতে রাজি হয়নি মেয়েটিকে। নবীন মুক্ত বাতাসে বিষিয়ে উঠে সে। নিজের রক্তের বিনিময়ে তিল তিল করে যে দেশ গড়ায় অংশীদার হয়েছিল সেই দেশটিই নতুন করে তার পায়ে অদৃশ্য লোহার শিকল পড়িয়ে দিল। সে মুক্তি চায়। নিরবে তাই আত্নহননের পথটি বেছে নিল মেয়েটি।
সমাজের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করার মত শক্তি আর সাহস ছিলনা মেয়েটির। ছিলনা নিজের আবেগগুলোকে সস্তা দরে গঙ্গার জ্বলে বিসর্জন দিয়ে অন্য আট দশজন বীরাঙ্গনাদের মত স্বাভাবিক হতে। কারণ মেয়েটি কিশোরী ছিল। বয়সের অনুপাতে যার বয়স চৌদ্দ কি পনের।”
চার
মন ভাল নেই ইতির। গল্পের শেষ অংশটা না পড়লে হয়তোবা এমনটি হতনা। কেননা সে তো গল্পের মেয়ের মত সবকিছুকে মেনে নিতে শিখেনি। ইচ্ছে করলেই চোখ বন্ধ করে সব কিছুকে নির্দ্বিধায় মেনে নিতে পারেনা সে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাকে প্রতিবাদী করতে শিখিয়েছে। তবুও সব জেনে শুনে চুপ থাকতে হয় তাকে। স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সে পায়নি আজো। এইসব ভাবলে মন আর খারাপ না হয়ে পারেনা ইতির। ভাললাগা বলতে যে কিছু আছে ভুলে যায় সে।
আজ আবার ইকলুকে নিয়ে ছাদে এসেছে ইতি। যখন তার মন অনেক খারাপ থাকে তখন ইকলুই তার সবচেয়ে কাছের সঙ্গী হয়। তার সাথে একা একা কথা বলে। গল্প করে।
তোর কখনও মন খারাপ হয়না রে ইকলু?
ইকলু এখনও কথা বলতে শিখেনি। সারাক্ষণ ট্যা ট্যা করে আর ডানা ঝাপটায়। ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে পালক খসে পড়ে কয়েকটি। তবুও ঝাপটায়। যদি কারো মনে এতটুকু করুণার উদ্রেক হয়। যদি খাঁচার ছোট্ট দরজাটা খুলে দেয় কেউ।
তোর ট্যা ট্যা শুনতে ভাল লাগেনা। ছাগলের ডাকের মত মনে হয়। তোকে না পেলে একটা কাক পাললে এতদিনে কথা বলত।
ছাদের উপর পুরো আকাশ যেন থমকে আছে। কোন বাতাস বইছেনা। ঝড় হবে নিশ্চয়ই রাতের কোন এক সময়।
মেঘেদের রঙ কখনও নীল হতে দেখেছিস? আমি দেখেছি।
ট্যা ট্যা...... বিকট শব্দে চিৎকার করে ইকলু। আকাশে বিদ্যুৎ চমকায়। সেই সাথে তাল মিলিয়ে আরো জোরে ডানা ঝাপটাতে থাকে বোকা পাখিটি।
ও বুঝেছি। তুইও মুক্তি চাস তাহলে। আমাকে ছেড়ে যেতে পারবি?
অনেকক্ষণ চুপ হয়ে থাকে ইতি। নিঃশব্দে নিঃশ্বাস ছেড়ে আবার বলে সে,
জানিস ওরাও মুক্তি চেয়েছিল তোর মত করে। আমাদের মুক্ত করতে নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছিল অকাতরে। ওদের সতীত্ব হারানোর সুফল ভোগ করছি আমরা। অথচ ওরা!
সকাল থেকেই প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল ময়নার। পাগলের মত হাত পা ছুড়তে ছুড়তে একসময় নীল হয়ে যায় মেয়েটি। শুনলে কষ্ট পাবি। মেয়েটি ছিল অন্তঃসত্ত্বা।
তারা মেয়েটির সতীত্বের দাম নিয়েছিল তার পরিবার। সেই টাকায় তাদের বাড়িঘর মেরামত করা হল নতুন করে। অথচ সেই ঘরে তারাকে ঠাই দিলনা তার বাবা। তার ভাই শ্যামলদা বারণ করেছিল যেন কোন চিঠিও না পাঠায় বাড়িতে।
ইতি বুঝতে পারলো তার চোখের কোণে পানি জমেছে। ভাল লাগছেনা তার। আর কোন কথা বলল না সে। কেবল মনে মনে দোষারোপ করতে থাকে নিজেকে। কিছুই করতে পারলনা সে। চার লক্ষ বীরাঙ্গনার চোখের পানির ঋণ আর কত বহন করবে জাতি? তাদের ঋণ শোধ করার সময় কি হয়নি আজো?
পাঁচ
ভয়ানক একটি স্বপ্ন দেখেছিল ইতি। দেখল পৃথিবীর সব টিয়া পাখিরা মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, ট্যাংক আর আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সম্মলিতভাবে তারা আক্রমন করছে মানুষের উপর। ভেঙে দিচ্ছে মানুষের তৈরি সকল স্থাপনা। মানুষের অত্যাচার থেকে মুক্তি চায় ওরা। খাঁচায় বন্দী জীবন আর না। তাই মানুষ দেখা মাত্রই তাকে ব্রাশফায়ার করে দিচ্ছে হিংস্র টিয়ারা। বাদ যায়নি ইকলুও।
ইতি দেখল গভীর রাতে তার রুমে এসেছে ইকলু। তার হাতে ভারী একটি রাইফেল। ইতির দিকে সেটি তাক করা হয়েছে নিখুঁতভাবে। ভয়ে চিৎকার করতে থাকে সে। ইকলু তখন মুচকি হাসে ইতির দিকে তাকিয়ে। তারপর হঠাৎ ট্রিগারে চাপ। প্রচন্ড শব্দে ঘুম ভেঙে যায় ইতির।
এমন উদ্ভুট টাইপের ডালপালা ছড়ানো স্বপ্ন প্রায় দেখে ইতি। তাই ঘুম থেকে জেগে ব্যাপারটা ভেবে ঘোলাটে করার কোন মানে হয়না। জানালার দিকে তাকিয়ে মনে হল আজকের সকালটা একটু ভিন্ন । হাত দিয়ে চুলগুলো বাঁধতে বাঁধতে বারান্দায় চলে গেল সে। ভীষণ মিষ্টি একটা সকাল বাইরে। চকচকে রোদ উঠতে শুরু করেছে। দখিনা বাতাস বইছে অথচ কোন ধূলো উড়ছেনা। বুঝতে পারল ঝড় হয়েছে গত রাতে। ঘুমের ঘোরে সে টের পায়নি কিছুই।
অনেকক্ষণ পরে ইতি যেইনা চোখ বুলাল তাদের বারান্দায় তার চোখ চানাবড় হয়ে গেল। বারান্দার এক কোণে পড়ে আছে খাঁচাটি; ঝড়ে মুছড়ে গেছে। কত সহজে মুক্তি পেয়ে গেল ইকলু।
ইকলু চলে যাওয়ায় অনেক কষ্ট পেল ইতি। কিন্তু মন খারাপ করলনা। জগতের নিয়মই এটা। কেউ কখনও কারো জন্য পড়ে থাকেনা। ইতি হয়তোবা একসময় ভুলে যাবে ইকলুর কথা। ভুলে যাবে তার কিশোরী বয়সের অভিমান ভরা আবেগগুলোর কথা। পরিণত বয়সে তার কিশোরীয় কর্মকাণ্ডগুলো ভেবে মনে মনে হাসবে, সন্ধার কোন এক গল্প- আড্ডায় দারুন রসদ জোগাবে সেগুলো। ক্রিসেন্ট লেক ঘেষে কৃষ্ণচূড়া গাছগুলোকে সাক্ষী করে গভীর স্বপ্ন আঁকবে কারো চোখে, সময়ের স্রোত আর বাস্তবতার মোহে ভুলে যাবে সব।
তাতে কী?
অন্য এক ইতি তো তখন ঠিকই মাথা তুলে দাঁড়াবে আবার। কেননা প্রজন্ম রেখে যায় প্রজন্মের ছাপ। কাউকে না কাউকে তো কাণ্ডারি হতেই হবে। নতুবা মুক্তি আসবে কীভাবে?
৩১ জানুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৯ টি
সমন্বিত স্কোর
৬.৫৬
বিচারক স্কোরঃ ৩.৯৭ / ৭.০
পাঠক স্কোরঃ ২.৫৯ / ৩.০
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪