চা এ শেষ চুমুকটা আর দেওয়া হল না রহমতের।হাতে থাকা স্টার সিগারটের ফিল্টার অংশটুকু ছিড়ে ফেলে দিল।সিগারেটটি ধরিয়ে টান দিল।মুখ ভর্তি ধোয়া ছেড়ে দিল।ধোয়া সাপের ন্যায় একেঁ বেঁকে চলতে লাগল।রহমত ধোয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।আবার সিগারেটে দম দিয়ে, ধোয়া ছেড়ে দিল।আগের ন্যায় ধোয়া চলতে লাগল।রহমত বিড় বিড় করে বলল, আসলে কোনো বস্তুই সরলভাবে চলে না,নিজের ইচ্ছেই; একটু না একটু বাঁকা হয়ে চলে।
রহমত বিজ্ঞানের ছাত্র নয়;বিজ্ঞানের দু’একটা বিষয়ে সম্যক জ্ঞান থাকলেও ব্যপক নয়।রহমত জানেও না,কোন কোন বস্তু সরলভাবে চলে,আর কোন কোন বস্তু বাঁকা হয়ে চলে।কিন্তু কয়েক মাস হতে,তার মস্তিক এক জটিল অবস্থানে রয়েছে।মানুষের সরলতা নিয়ে।মানুষ কী আসলেই সরল?বাজার থেকে বেশ কিছু মনোবিজ্ঞান ও দর্শণের বই কিনেছে। কয়েক মাস ধরেই পড়ছে।কিন্তু কোনো স্থির সিধান্তে পৌঁছাতে পারছে না।দর্শণ শাস্ত্র পড়তে গিয়ে যখন দেখল,দশর্ণের জনক হেগেল,তখন হতে তার মাথা আরও খারাপ হয়ে গেল।নিজেকেই সে অনেকবার প্রশ্ন করেছে,সত্যিই কী দর্শণের জনক হেগেল!পশ্নের পর প্রশ্ন করেও মানতে পারল না, দর্শণের জনক হেগেল।তার যুক্তি হল,যদি দর্শণের জনক হেগেল হবে,তাহলে মুসা(আ)ঈসা (আ),আমাদের মহানবি (স)-উনাদের দর্শণ কী? দশর্ণ নয়!অনেকই অনেক ভাবে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে;কিন্তু সে এটাকে পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্র হিসাবেই দেখেছে।তার বক্তব্য,কোরান ত শুধু একটা গ্রন্থ নয়;কোরান একটা কাব্য,কোরান একটা বিজ্ঞান,কোরান একটা গবেষণা পত্র..আরও আরও অনেক কিছু।তার মতে, মুসলিম দর্শণ সবার উপরে,ভারতীয় দর্শণের নিচেও পশ্চিমাদের দর্শণ।
রহমতের বয়স এখন ৪৯ বছর।বিয়ে থা করেনি।একাই থাকে।বাড়িতে একটা তারই বয়সই কাজের মেয়ে এসে রাত অব্দি খাবার রান্না করে দিয়ে চলে যায়।সকালের চা টা ,সে নিজেই তৈরী করে।বেসরকারী কলেজের ইতিহাসের টিচার রহমত ; বোঝে উঠতে পারেনি, বিয়ে করাটা কতটুকু যুক্তি যুক্ত হবে ;তাই সে বিয়ে করেনি। এটাই তার সরল যুক্তি।
রহমত সকালে চা এ চুমুক দিতে দিতে খবরের কাগজটা হাতে নেয়।খবরের কাগজের একটা শিরনাম দেখে, তার গা শিউরে উঠে।“যুবক ধর্শিত!” এক দমে খবরটা পড়ে নিয়ে, সে সিগারেট ধরাই।যেদিন সে সিগারেটে দম দিয়েছিল,স্টার সিগারেট ছিল।এখন পযর্ন্ত স্টার সিগারেটেই অভ্যাস্ত।তখন স্টার সিগারেটে ফিল্টার ছিল না,তাই সে ফিল্টার ছিড়েঁ ফেলে।
রহমত সিগারেটে দম দিয়ে ভাবতে থাকে।এলামেলো সব ভাবনা।তিনজন যুবতি দ্বারা যুবক ধর্ষিত।তিনজনই শিল্পপতির মেয়ে।তারা একটা পাঁচতারা হোটেলে যায়।হোটেল থেকে কিছু খাবার নেয়।যুবকটিকে বলে,খাবার গুলো গাড়িতে তুলে দিতে।যুবকটি খাবারগুলো গাড়িতে তুলে দেয়।তিনজনের মধ্যে,কেউ একজন বলে,তুমি আমাদরে বাসা অব্দি যাবে?বাসাতে খাবারগুলো নামিয়ে দিয়ে আবার এ গাড়িতেই চলে আসবে।ডবল বকশিস দেব।যুবকটি সরল মনের।রাজি হয়ে গেল।
এখানে এসে থেমে গেল রহমত।যুবকটি সরল মনের,না লোভ,বকশিসের লোভ!কোনটি কাজ করেছিল,যুবকটির মধ্যে?রহমত ঠিক বোঝে উঠতে পারল না।সে আবার ভাবতে লাগল।তারপর সে যুবকটি রাতে আর ফিরে এল না।পরের দিন তাকে পাওয়া গেল নদীর ধারে,অচেতন অবস্থায়।
সমস্ত ঘটনায় উদ্ভট মনে হল রহমতের।বিশ্বাস করতে তার কষ্ট হচ্ছে।হঠাৎ করেই তার মনে,আর এক প্রশ্নের অবতরণা হল।যে যুবকটিকে ধর্ষণ করা হল,তাকে কী বলা হবে?নারী-ধর্ষিতা;কিন্তু পুরুষ!সে বিভিন্ন ধরণের শব্দ খাড়া করল।যেমন,ধর্ষিত।না!নারী ধর্ষণের শিকার হলেও,ধর্ষিত শব্দটিই ব্যবহার হয়।তাহলে?অনেক ভেবে চিন্তে সে একটা,শব্দ দাঁড় করাল।..... ধর্ষিৎ।শুধু “ত” কে খন্ড করে দিল।
রহমত ভাবুক।যে কোন বিষয় নিয়ে ভানতে শুরু করলে,চলে কয়েকদিন ধরে।মানুষের সরলতা নিয়ে ভাবছে কয়েক মাস ধরে, এর ওপর “যুবক ধর্ষিত”।সারাদিন,এ চিন্তায় বহন করল সে।যুবকের ধর্ষষটা, যুককের সরলতার উপর আঘাত কলে মনে হল তার।
রাত অনেক হয়েছে। এখন ঘুমাবার সময় তার।সারাদিন উদ্ভট সব চিন্তগুলো তার মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।বিছানায় শুয়ে, সে সেসব চিন্তাগুরোই বার বার আসছে।চিন্তা করতে করতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হচ্ছে,আবার ভেঙ্গে যাচ্ছে। এ রকম চলতে চলতে রহমতের এক সময় ঘুম চলে এল।
রহমত গভীর ঘুমে মগ্ন।কে যেন তাকে ডাকছে।রহমত,রহমত,এই দেখ,তোমার সামনে কে দাঁড়িয়ে...রহমতের ঘুম ভাঙ্গলা না।সে আবার ডাকল।রহমত চোখ খুলল।তাকিয়ে দেখল, তার সামনে সম্পূর্ণ সাদা পোশাক পরিহিত একজন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে রয়েছে।তাঁর দাড়ি সম্পূর্ণ সাদা,মাথায় টুপি রয়েছে।এমন উজ্জল মুখমন্ডল,এর আগে সে কখোনই দেখেনি।রহমত তাঁর দিকে তাকেই রইল,দৃষ্টি প্রসারিত করে।হঠাৎ সে দেখল তাঁর থেকে একটু দূরে আর একজন দাঁড়িয়ে রয়েছে।তাকে দেখে রহমত চমকে উঠল।লোকটি সম্পূর্ণ কালো পোশাক পরে রয়েছে।কুৎসিত মুখমন্ডল।এমন কুৎসিত মুখমন্ডল সে আগে কখোনই দেখেনি।লোকটিকে দেখে রহমত ভয় পেয়ে গেল।
রহমত উজ্জল মুখমন্ডল ব্যক্তিটিকে প্রশ্ন করল, কে তুমি?
লোকটি বলল, আমি সরল।
তুমি এখানে কেন?তাছাড়া, আমার কাছে তোমার কী কাজ?
আমি মানুষের বন্ধু।মানুষ যখন বিপদে পড়ে,মানুষ যখন উদ্ভট সব চিন্তা করে;আমি তখন
বুঝতে পারি,মানুষটি পাগল হয়ে যাবে।আমি তখন ছুটে যায় তার কাছে, তাকে সরল
ভালোবাসা দিতে।যেন তার মনটা সরল হয়ে যায়,যেন সে সরলভাবে চলতে পারে।
তোমার পিছনে দাঁড়িয়ে রয়েছে,ও লোকটি কে?
ও,ও জটিল।
ও এত কুৎসিত কেন?
জটিল ত সব সময় কুৎসিতই হয়।
ও, তোমার সঙ্গে কেন?
ও যে আমার ভাই।আমি যেখানে যাব, ও সেখানে যাবে।
ওর কাজ কী?
ও মানুষকে খারাপ কাজে উসাহিত করে।ভালো কাজ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
তুমি সরল,জটিলের মত একজন জঘন্ন ভাইকে নিয়ে ঘোর কেন।
আমি যেখানে থাকব,সেখানে ও থাকবে-এটাই নিয়ম।
এ নিয়ম ভঙ্গ করা যায় না।
হ্যাঁ যায়।
কী ভাবে?
তোমার সামনে এখন সরল এবং জুটিল-দু’জনই রয়েছে।তুমি যাকে গ্রহণ করবে,সে রয়ে
যাবে;অন্য জন চলে যাবে।
কিছুক্ষণের জন্য সব কিছুই,কেমন যেন নিরব হয়ে গেল।তারপর সরনলই নিরবতা ভেঙ্গে বলল,
বন্ধু বিদায়!যাবার আগে তোমাকে বলে যায়, তুমি যাকে স্মরণ করবে, সেই তোমার কাছে হাজির
হবে......বিদায় বিদায়......
রহমতের ঘুম ভেঙ্গে গেল।সে এদিক ও দিক তাকিয়ে দেখল।কাউকে দেখতে পেল না।সে নিজেকেই
নিজে প্রশ্ন করল, তবে কী সে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল?
রহমত বিছানা থেকে ওঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল।আকাশের দিকে তাকাল,দেখল পশ্চিম দিকে উজ্জল চাঁদ।রহমত সে চাঁদের দিকে, এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল..........। কিছুক্ষণ পর রহমত বুঝেতে পারল, তার সমস্ত ভাবনা যেন, সুতোই গিট বাঁধার মত বেধে যাচ্ছে।একটার সাথে আর একটার যেন, প্যাঁচ বেধে যাচ্ছে...............