(সায়েম হোসেন হাজারী রোমেল, এই অকৃত্রিম বন্ধুটিকে আজীবন পাশে প্রয়োজন...)
এক.
স্টুডেন্ট সামীর ও শাওন সেলফোনে ওদের ব্যস্ততার কথা জানালে হাতে বেশ ফ্রি সময় মিলে। পড়ন্ত বিকেলে তাই ক্যাম্পাস থেকে সোজা বাসায় ফিরি।
রিডিং টেবিলে ইনভাইটেশন কার্ড দেখে অদম্য কৌতুহলে ওটা হাতে তুলি, শর্মির বিয়ের কার্ড। মাথা ভোঁ ভোঁ ঘুরতে থাকে। শর্মির সাথে দীর্ঘ চার বছরের পথ চলার এমন পরিসমাপ্তি কোনোভাবে মানতে পারছি না। ভেতর বাড়ির শূণ্যতাটা কাউকে বুঝতে না দিলেও বুকটা অবিরত পুড়ে চলছে। নিজেকে শেষ করে ফেলতে ইচ্ছে করে। একটার পর একটা সিগ্রেট খাই,
ক্যাম্পাসে শর্মির বিয়ের কথা জানাজানি হয়, এই খবর শোনার পর শুভ আমাকে ফোন দেয়। ভার্সিটির প্রথম ক্লাসেই ছেলেটির সাথে পরিচয়। সেই থেকে আমার যাবতীয় সুখ-দুঃখে সবসময় ও পাশে থাকে, সহসা হয়ে ওঠে সবচে' ঘনিষ্ঠ ও প্রিয় বন্ধু্। শুভ ফোনে আমাকে কোনো সান্ত্বনা দিতে পারে না। শুধু বলে, ধ্রব, রাতে তোদের বাসায় আসছি।
পুরো রাত শুভর সাথে শর্মির ব্যাপারে অনেক আলাপ হয়, অব্যক্ত কথাগুলো শেয়ার করতে পেরে নিজেকে বেশ হালকা লাগে। কিন্তু আমার উদ্ভ্রান্ত আচরণে ও খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়।
দুই.
সেলফোনে আননোন নম্বর থেকে ফোন আসে, আমি মেহতাজ। এটা আমার নম্বর, সেভ করে রাখবেন। পরে আমি আবার ফোন দেবো। মেয়েটি চঞ্চল কন্ঠে একদমে বাক্যত্রয় শেষ করে। আমি মেয়েটি সম্পর্কে ভেবে চলছি, আমার নম্বর পেলো কোত্থেকে ?
পরের রাতে মেহতাজের নম্বর থেকে ম্যাসেজ আসে: ভালোবাসা মানে ঠান্ডা কফির পেয়ালা সামনে/ অবিরাম কথা বলা/ ভালোবাসা মানে শেষ হ'য়ে যাওয়া কথার পরেও/ মুখোমুখি ব'সে থাকা। সবচে' পছন্দের কবিতাটি ম্যাসেজ আকারে পেয়ে ভীষণ অবাক হই। শর্মির জন্য হৃদয়ে হাহাকার, অন্যদিকে অচেনা মেহতাজের রহস্যময় আচরণ; এ দ্বৈত ধারা আমার সময়কে দারুন অস্থির করে তোলে। এই ঘটনার বিস্তারিতও শুভকে বলি। সব শুনে ও আমাকে মেহতাজের ব্যাপারে যথেষ্ঠ উৎসাহ দেয়। গত ক'দিনের যন্ত্রণা খাঁচা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে সচেষ্ট হই।
মেহতাজ আবার ফোন দেয়, আমি কনফিডেন্ট এবং ডিটারমাইন্ডও-, আজই আপনাকে ইয়েস অর নো স্পষ্ট জানিয়ে দিতে হবে। মেয়েটির এমন কাটা কাটা কথায ভড়কে যাই, কি জানতে চাইবে মেহতাজ ? সেদিন আপনার প্রিয় কবিতাটি ম্যাসেজে পাঠিয়েছি, আজ আমারটা শুনুন। ওর কবিতাটি শুনতে অধীর প্রতীক্ষায় কান পেতে থাকি।
তোমাকে শুধু তোমাকে চাই, পাবো? / পাই বা না পাই এক জীবনে তোমার কাছেই যাবো। / ইচ্ছে হলে দেখতে দিয়ো, দেখো/ হাত বাড়িয়ে হাত চেয়েছি রাখতে দিয়ো, রেখো। মেহতাজকে নিয়ে অত-শত ভাবনা ছাড়ি। কবির কবিতা দিয়ে ওর কাঙ্খিত উত্তরটি জানাই, আজ তোমার কাছেই খুঁজি জীবনের শেষ অর্থ / পরম ব্যঞ্জনা / জানি স্বপ্ন আর কবিতার তুমিই অনন্ত উৎস, / এই বাঁচার প্রেরণা।
সেই থেকে শুরু হয় মেহতাজের সাথে জীবনের নতুন অধ্যায়। অগি্নদগ্ধ মনটা কখনো ওকে সামাণ্যতম অবিশ্বাস করেনি, যে কবিতা ভালোবাসে সে অন্তত প্রতারক হতে পারে না।
মেহতাজ আমার বন্ধু, দুঃসময়ের স্বপ্ন সারথী। ও আমার স্বপ্ন আর কঠিন বাস্তবতার মাঝে দৃঢ় সাঁকো। সেলে এফ এন্ড এফ করার সুযোগে আমাদের ঘন্টার পর ঘন্টা ননস্টপ আলাপ চলে। মেহতাজ রাজশাহী ভার্সিটির আইনের ছাত্রী।
মানুষের জীবনে দুর্ঘটনা থাকতেই পারে, তাই বলে ড্রিঙ্কংস করে এমন আত্মঘাতী হতে হবে? জীবন প্রতিমার এই জিজ্ঞাসায় আমি নিরুত্তর থাকতে হয়। ও আবার বলতে থাকে, বদঅভ্যাসটি ছাড়তে হবে। আমি নিঃশর্ত রাজী হয়ে যাই। মেহতাজের স্বহাস্য কন্ঠ, এ রকম মুখে মুখে রাজী হলে চলবে না আমাকে ছুঁয়ে কথা দিতে হবে।
তোমাকে কোথায় পাবো ?
ক'দিনের মধ্যে ঢাকায় যেতে পারি, তখন তোমার সাথে দেখা হবে।
আমি বিস্ময়ে বলি, তাই!
তিন.
মেহতাজের জন্য পিজা হ্যাভেনে বসে আছি। ও জাস্ট সময়ে আসে, এ তো চাঁেদর দেশের অপ্সরী ! এমন নিষ্পাপ মুখে তাকিয়ে যেকোনো প্রতিজ্ঞা করে ফেলা যায় শর্তহীন। আমার তীব্র অনুরোধেই মেহতাজ প্রথম দিকের রহস্য প্রকাশ করতে থাকে, তোমার গল্প শুনতে শুনতে তোমাকে না দেখেও ভালোবেসে ফেলি। তুমি শর্মি আপুকে ভালোবাসো শুনে ভেতরে প্রচন্ড ধাক্কা খাই, কিন্তু সেটা কাউকে বুঝতে দেইনি। সব মেনে নিয়ে ছিলাম। তবে তোমার জীবনের দুঃসময়ের গল্প শুনে দূরে থাকতে পারিনি-, কথাগুলো বলতে বলতে ওর দু'চোখ অশ্রুতে টলমল হয়। ওর ভালোবাসার তীব্র টান আমাকে বাকশূণ্য করে ফেলে। আমার এলামেলো জীবন অদম্য গতি পাওয়ার প্রচন্ড কৃতজ্ঞতায় ওকে বলি, থ্যাঙ্কস্, তাজ।
না, আমাকে থ্যাঙ্কাস্ নয়। থ্যাঙ্কাসতো ঐ স্রষ্টাকে জানাতে হবে, যিনি শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমাদের দু'জনার পথ দুটোকে এক করে দিয়েছেন।'
হঠাৎ শুভকে দেখে বিস্মিত হই। মেহতাজের চোখদ্বয়ে লাজুক হাসি, ভাইয়ার কাছ থেকেই তো আপনার এত এত গল্প শুনেছি-। এবার আমার চোখে অশ্রু জমে, তা লুকাতে চেয়েও ব্যর্থ হই, শুভ, তুই আমাকে আর কত ঋনী বানাবি ? শুভর হাসি মাথা প্রতু্যত্তর, দুর বোকা, বন্ধুত্বে কখখনো ঋণ জন্মায় না।
কবিতায় ঋণ :
ভালোবাসা মানে : ভালোবাসার সংজ্ঞা / রফিক আজাদ
তোমাকে শুধু তোমাকে চাই : অমীমাংসিত সন্ধি / হেলাল হাফিজ
আজ তোমার কাছেই খুঁজি : তুমিই অনন্ত উৎস / মহাদেব সাহা
০৭ জুন - ২০১১
গল্প/কবিতা:
২ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪