বাবা এবং ২৫ মে

বাবা (জুন ২০১২)

এ কে এম মাজহারুল আবেদিন
  • ১৪
  • ২১
সন্ধ্যার একলা তারাটা যেন ব্যঙ্গ করছে আদরকে | নির্মল বাতাসটাকে ঠিক যেন বিষাক্ত লু মনে হচ্ছে আদরের কাছে | করিডোর থেকে ভেতরে ঢোকে আদর | ফিনাইল আর ওষুধের গন্ধের প্রতিযোগিতা যেন হাসতাপালের প্রত্যেকটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গে | কাঁচে ঘেরা ঘরটার দিকে শুন্য দৃষ্টিতে তাকায় আদর | মানুষটা কি নির্মল চেহারায় শুয়ে আছে | কত দিন এমন নিশ্চিন্ত ঘুমাতে দেখেনি তাকে | সব সময় গভীর রাতে তার পায়ের শব্দেই ঘুম ভাঙ্গে আদরের | কি যেন ভাবতেন, গভীর রাত অব্দি কি কি যে ভাবতেন, আদর আজও তা বুঝতে পারেনি |

নির্নিমেষ চেয়ে থাকে তার মুখের দিকে | মনের ভিতরে একটা আর্তনাদ ঘুরে ফিরে গলার কাছে এসে আটকে যায় - "বাবা, চোখ খোল না বাবা, কোনদিন তো আমাকে না দেখে একটা মুহূর্ত থাকতে পারতে না তুমি, একটু বেশি বাইরে থাকলে অস্থির হয়ে যেতে, আমার আদর কোথায় বলে | অথচ সেই যে কাল রাত থেকে একবার ও আমার কোনো খোজ নিলে না বাবা, আমি যে তোমার জন্যে না খেয়ে বসে আছি |"

গহীনের আর্তনাদ চোখের জল হয়ে ফোটায় ফোটায় চোখের পাতা ভিজিয়ে নেমে আসে, গাল থেকে গলা, গলা থেকে বুক অব্দি, তবু বাবা চোখ খোলে না | আদরের আর্তনাদ বাবা শুনলে কোনদিন এভাবে চুপ করে থাকতে পারতেন না |

এলো মেলো পায়ে হেটে আবার করিডোরে এসে দাড়ায় | ভেজা চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আদর | গত পরশু বিকেলে বাবার সাথে একসঙ্গে শপিং করলো যখন,বাবা কেমন মুখটা কুচকে ছিলেন | জানতে চাইলে কিছু বললেন না | জাস্ট এড়িয়ে গেলেন |

ঠিক পরেরদিন সকালেই বাবাকে অস্থির দেখে খুব বেশি সন্দেহ হয়েছিল আদরের | মামাকে ফোন করলে মামা বললেন "আমার চেম্বার এ নিয়ে আয়" | সময় হলো না বাবার, শুধু এড়িয়ে যাবার চেষ্টায় কত গুলো সময় কাটালেন | জোর করেই মামার কাছে নিয়ে আশা, ই সি জি করতেই মামা ছটফট করে উঠলেন, "আগে তারা তারই ইমার্জেন্সি তে ভর্তি করা,পরে কথা বলছি "| বুঝে উঠেছিল মামার কথায় অস্থিরতার মাত্রাটা অনেক বেশি |

সেই মুহূর্ত থেকে যেন মাথাটা শুন্য হয়ে গেল আদরের | বাবাকে ছাড়া একটা মুহূর্ত ভাবেনি কোনদিন,আজ এই মুহূর্ত গুলো খুব অসহ্য ঠেকে | দৌড়ে বাসায় যায়, বাবার জন্যে কাপড়,দরকারী টাকা আর কাগজ নিয়ে ছুটে আসে হসপিটালে ফের | বাবক এতক্ষণ ওয়ার্ড এ নিয়ে গেছেন মামা | ছুটে যায় ওয়ার্ড এ,বাবা নেই সেখানে, নার্স বললেন আই সি ইউ তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে | পাগলের মত দৌড়ে গেল আদর, মাথায় আর কিছু কাজ করছিল না | ভেন্টিলেটর মেশিন এ নির্মল মুখ নিয়ে শুয়ে আছেন বাবা | হাত টা ধরে আদর, নিজের মুখে ছোয়ায় | পাগলের মত ডুকরে কেদে ওঠে |

সেই ঠেকে ঠায় দাড়িয়ে এখানে | মা এসেছে,একাই কঠিন মুখ করে নামাজ পড়ছেন,পাথর হয়ে গেছেন যেন | ছোট্ট বোনটা এক মুহুর্তের জন্যও বাবার পাশ থেকে সরেনি, অর মুখের দিকে তাকাতে পারছে না আদর |

পিঠে আলতো হাতের ছোয়ায় ঘুরে দাড়ায়,মামা অর কাধে হাত রাখেন | "শক্ত হ বাবা,মেশিন খুলে ফেলতে হবে,দুলাভাই কোনো রেসপন্সে করছেন না আর,বাবা নেই রে" বলেই জড়িয়ে ধরে নিজেই কেদে ফেললেন |

নিজেকে অন্তঃসারশুন্য মনে হচ্ছে আদরের | আর কোনো বোধ নেই যেন এই পৃথিবীতে | মায়ের কান্নার শব্দ ভেসে আসছে | আদরের চোখে ভেসে আসছে শুধু বাবার হাসি মাখা মুখ,মুখে তুলে মাছ খাইয়ে দিচ্ছেন দু ভাই বোনকে |

একা হয়ে গেছে, পায়ের নিচে কোনো মাটি নেই আর | জ্ঞান হারাতে হারাতে শুধু অস্ফুট একটা আর্তনাদ বের হয় ওর ঠোটের ফাঁক দিয়ে, "আব্বু,আব্বু গো" |

[ আজ থেকে ঠিক সাত বছর আগে ঠিক এভাবেই আমি হারিয়েছিলাম আমার বাবাকে, ২৫ মে ২০০৫ ইং, আমার বাবা আমাকে ছেড়ে চলে যান না ফেরার দেশে | আমার জীবন যুদ্ধ সেইদিন থেকে শুরু হয় |

২৫ মে যখন লেখা জমা দেবার শেষ তারিখ দেখি,সংখ্যার বিষয় টা আমাকে পাগল করে তোলে | অনেক কিছু লেখার ছিল আমার বাবাকে নিয়ে, আমার মুক্তি যোদ্ধা বাবাকে নিয়ে, আমার কঠোর পরিশ্রমী বাবাকে নিয়ে, আমার প্রেরণাদায়ী বাবাকে নিয়ে | আমার বাবার এমন অনেক পরিচয় আমার স্মৃতিতে গাথা রয়েছে | কিন্তু বাবাকে নিয়ে আমি আজ কিছু লিখতে পারি না, কারণ আমার চোখের জলে সব ঝাপসা হয়ে যায়,আমি আর কিছু দেখতে পাই না | আমার বাবা, আমার কাছে এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব |

আপনারা আমার বাবার জন্যে দোয়া করবেন | ]
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
তানি হক খুব অল্পকরে লিখেছেন ..কিন্তু বাবার প্রতি ভালবাসা ..আর আবেগ যেন আকাশের সিমানাকেও হার মানিয়েছে ...ভাইয়ার বাবার জন্য অন্তরের অন্তরস্থল থেকে দোয়া রইল ..রব্বুল আলামিন বাবাকে জান্নাতবাসী করুন ..আমিন ..
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি ghumiye achhe sishur pita sob sishuri ontore.........Majharul osesh dhonnobad apnake.........
আহমাদ ইউসুফ আপনার বাবার মাগফেরাত কামনা করছি/ একটা প্রশ্ন রেখে যাচ্ছি --সন্তান হিসাবে বাবার আত্মার শান্তির জন্য আপনি কতটুকু করছেন?
অনেক ধন্যবাদ ইউসুফ ভাই | নামাজ আর দোয়া, যা সবচে বেশি তার আত্মার মাগফেরাতের জন্যে দরকার, সেটাই করবার চেষ্টা করছি |
মিলন বনিক আত্মজীবনী...ভালো লাগার সাথে কষ্টও হচ্ছিল...এই তো প্রকৃতির নিয়ম..শুভ কামনা
ধন্যবাদ ত্রিনয়ন | দোয়া করবেন |
Sisir kumar gain বাবাকে নিয়ে সুন্দর লেখা।দোয়া করি,তোমার বাবার জন্য।আর তোমার জন্য শুভ কামনা।
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ মাজহার ভাই আপনার গল্পের আবেদন অনেক দিন হৃদয়ে থাকবে । শুভ কামনা ।
ধন্যবাদ জসিম ভাই | দোয়া করবেন |
রোদের ছায়া আবেগের কমতি নেই লেখায় , শুধু বানানে আরো যত্ন নিতে হবে ....আপনার বাবার জন্য অনেক দওয়া রইলো....
অনেক ধন্যবাদ ছায়া | আসলে বানানের ভুলটা আমার ইচ্ছাকৃত নয়,আমি ফোনেটিক ফলো করছি, কিন্তু কোনো একটা কারণে সবগুলো বানান ঠিক মত পাচ্ছি না | সেটা আমার মাথা ব্যথার একটি কারণ |
আরমান হায়দার আপনার বাবার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। বড় লেখক হয়ে বাবার প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর সুযোগ আছে। প্রতিক্ষায় রইলাম।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আরমান ভাই | বড় লেখক হতে পারব কিনা জানিনা,তবে বাবার স্মৃতির উজ্জ্বলতা কোনদিন ম্লান হতে দেব না |
আহমেদ সাবের আপনার গল্পের একজন বিমুগ্ধ পাঠক আমি। কিন্তু গল্প পড়তে এসে তার চেয়েও বড় কিছু পেয়ে গেলাম। আপনার পরলোকগত মুক্তিযোদ্ধা বাবার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি আর আপনার কল্যাণ কামনা করি।
অনেক ধন্যবাদ সাবের ভাই | আমি চেষ্টা করব আমার বাবার জীবনের মুক্তি যুদ্ধের কাহিনী কে তুলে ধরবার | যদি সুযোগ হয় | সবটুকু মন ঢেলে দিয়ে শুধু বাবকে তুলে ধরবার চেষ্টা করব |
ফাতেমা প্রমি কি অদ্ভুত অন্ত্যমিল..এমন কাকতাল ও ঘটে! আসলেই বাস্তব কেন যেন গল্পকে ছাপিয়ে ওঠে... আপনার দুক্ষানুভুতি, আবেগটা বুঝতে পারছি... বাবার জন্য সন্তানের দোয়া সর্বাধিক প্রয়োজন....
আমি জানিনা আমি কত টুকু কি লিখেছি | শুধু লিখবার সময় একটা ঘরের ভেতরে ছিলাম | যখন লিখেছি,শেষ হবার পর পড়ে মনে হলো,আমি শুধু আমার বাবাকে খুব অসহায় একটা মানুষ রূপে দেখিয়েছি যেটা আমি কখনই চাইনি | কিন্তু বাস্তবতা এতই কঠিন যে এমনি ছিল শেষ মুহুর্তে আমার এবং আমার বাবার অবস্থান | আর ছিল আমার কষ্টের জীবনের প্রারম্ভিকা |

০২ জুন - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪