-হ্যালো, দোস্ত তুই কই? -এইতো দোস্ত একটু বাইরে আছি। কেন? -আজকে না আমাদের বাইরে যাবার কথা ছিল? -কই যাবার কথা? -ওই যে বলেছিলাম যে, একটু বাংলাবাজার যাব। -ও। দোস্ত really sorry. সত্যি ভুলে গিয়েছিলাম। আজকে না গেলে হয় না? সোমবার যাই? -ঠিক আছে। তোকে পরে ফোন দিব। এখন রাখি। bye. -bye. অমি ফোন রেখে দিল। তার একটু রাগ রাগ লাগছে। তারেক তার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। অথচ তার কিছু মনে থাকে না। মনে থাকে না, না ইচ্ছে করে মনে রাখে না কে জানে!এই যেমন আজকে বাংলাবাজার যাবার কথা, এক সপ্তাহ ধরে সে বলে আসছে। অথচ যাবার আগে এখন তারেককে ফোন করে দেখে সে বাইরে অন্য কোথাও গিয়ে বসে আছে। অমির ইচ্ছে করছে একাই চলে যেতে। কিন্তু কাজটা তার জন্য জরুরি। আর জরুরি কোনো কাজে একলা যেতে অমির ভয় করে। তার সবসময় মনে হয় এই বুঝি সে টেনসনে মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। তখন সাথে কেউ না থাকলে কে তাকে মেসে পৌছে দিয়ে যাবে? অমি চা বানিয়ে চায়ের কাপ নিয়ে বারান্দায় দাঁড়াল। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। চা খেতে খেতে অমি ভাবল আজকে বাইরে না বেরিয়ে বরং ভালই হয়েছে। এই আবহাওয়া নিয়ে একটা কবিতা অমির মাথায় ঘোরাঘুরি করতে লাগল। অমি ভিতরে গিয়ে কাগজ কলম নিয়ে এসে কবিতা লিখতে বসলঃ বৃষ্টি ভেজা কোনো এক রাতে ভেজা মাটি আর তোমার চুলের গন্ধ- আলাদা করতে পারি না। তোমাকে হারিয়ে আবার স্মৃতির মাঝে খুঁজে ফিরি এটা আমার সফলতা না ব্যর্থতা কে জানে! শুধু জানি নিষ্ফল আবেদনের মহাকাব্য আমার, মিশে যাবে আদ্র বাতাসে, জাগাবে কিছু ঠান্ডা দীর্ঘশ্বাস। অমি কাগজ নিয়ে প্রায় ঘন্টাখানেক বসে রইল। তার আর কোনো লাইন মাথায় আসছে না। তবে সে যতটুকূ লিখেছে তাই নিয়েই সন্তুষ্ট। তারেক এসেছে রাইফেলস স্কয়ার এ। এত সুন্দর একটা প্লাজা। তবে তার গায়ে বুলেটের দাগ। ফেব্রুয়ারিতে বিডিয়ার বিদ্রোহের সময় এগুলো লেগেছিল। দেখে মনে হচ্ছে চাঁদের কলঙ্ক। তার একটু খারাপ লাগছে। অমির সাথে বাইরে যাবার কথা সে আসলে ভুলে যায় নি।কিন্তু সে কী করবে? তার মামা প্রায় ৬ বছর পর আমেরিকা থেকে দেশে ফিরেছেন। তিনি হঠাৎ তারেককে বললেন বাইরে বের হবেন। ঢাকা শহর ঘুরে দেখতে চান। তাই নিরুপায় হয়ে তাঁকে নিয়ে বের হয়েছে। অমিকে একথা বললে হয়ত সে মাইন্ড করতে পারত। শত হোক সে গত এক সপ্তাহ ধরে বলে আসছিল। তাই বাধ্য হয়েই তারেক মিথ্যে কথা বলেছিল। ------- সোমবার। অমি আর তারেক একটা সিএনজি নিয়েছে। তারা যাচ্ছে বাংলাবাজার। বাংলাবাজার যাবার কারন অমি তারেকের কাছে ব্যাখ্যা করল। অমি কবিতা লিখে। তার অনেকদিনের শখ সে একটা কবিতার বই ছাপাবে। এজন্য সে বাংলাবাজারের কোনো একটা ভাল প্রকাশকের সাথে কথা বলতে যাচ্ছে। যেতে যেতে তারেক জিজ্ঞেস করল, তোর কবিতার পান্ডুলিপি সাথে নিয়েছিস তো? অমি হাতের ব্যাগটা দেখিয়ে বলল, এই যে। তারেক সেখান থেকে কয়েকটা কবিতা হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে জিজ্ঞেস করল, এখানে মোট কয়টা কবিতা? -জানি না। মনে হয় ৫০-৬০ টা হবে। -এতগুলো কেন? - প্রকাশকের যে কয়টা পছন্দ হয়, উনি সে কয়টাই ছাপাবেন। -কবিতা তো ভালোই লিখেছিস। তো হঠাৎ বই ছাপানোর ইচ্ছে হল কেন? -হঠাৎ নারে। এটা আমার অনেকদিনের শখ। -হুম। তুই তো ভালোই লিখিস। তোর বই যদি হিট করে, তাহলে কিন্তু কে এফ সি তে খাওয়াতে হবে। অমি মুচকি হেসে বলল, ওকে দোস্ত। খাওয়াব। এটা নিয়ে টেনসন করিস না।
------ অমি প্রকাশকের সাথে কথা বলেছে। প্রকাশকের কথার সারমর্ম হলঃ তিনি বই ছাপাতে রাজী আছেন। কিন্তু এ জন্য অমিকে কিছু টাকা সিকিউরিটি মানি হিসেবে জমা দিতে হবে। কারন অমি একজন নতুন লেখক, তাই প্রকাশক যত টাকা দিয়ে বই ছাপাবেন, তত টাকা বই বিক্রি করে উঠে আসবে কিনা তার ঠিক নেই। পরে অমির বই যদি ভালো বিক্রি হয়, তাহলে অমিকে তার রয়্যালটির সাথে সাথে সেই টাকাও ফেরত দিয়ে দেয়া হবে। এবং এই টাকা জমা দেয়ার শেষ সময় হল আগামী সপ্তাহ। বাসায় ফিরতে ফিরতে তারেক অমিকে জিজ্ঞেস করল, এত টাকা তোর কাছে আছে? -এত নেই। তবে কিছু টাকা জমিয়েছি। দেখি এর মধ্যে জমিয়ে ফেলতে পারব। -কবের মধ্যে টাকা জমা দিতে বলেছে? -বলল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। আগামী সপ্তাহ হচ্ছে লাষ্ট টাইম। তিনি চাইছেন সামনের বই মেলাতেই বইটা ছাপাতে। -এক সপ্তাহের মধ্যে এত টাকা ম্যানেজ করতে পারবি? অমি কোনো জবাব দিল না। সে জানে এটা সম্ভব না। অন্য কোনো ব্যবস্থা করা যায় কিনা দেখতে হবে।
------
মামা তারেককে একটা ৩২ ইঞ্ছি এলসিডি টিভি গিফট করেছেন। তারেকের গেমস খেলার নেশা অনেক। তার একটা প্লে স্টেশন আছে। এত বড় টিভিতে প্লে স্টেশন লাগিয়ে সে গেমস খেলতে পারবে এটা ভাবতেই আনন্দে তার চোখ দিয়ে পানি চলে আসছে। সে ঠিক করেছে এ টিভি তে সে শুধু গেমসই খেলবে। বাসায় পৌছে সে অমিকে ফোন দিল, দোস্ত তুই কই? -এইতো দোস্ত, মেসে। - আমার বাসায় বিকেলে আসতে পারবি? -কেন? -একটা এলসিডি টিভি কিনলাম। মামা কিনে দিয়েছে। দেখে যা। -তাই নাকি? ঠিক আছে। আমি ৪-৫ টার দিকে আসব। -ওকে দোস্ত। দেখা হবে। ফোন রেখেই তারেক গেমস নিয়ে বসল। তার দুপুরের খাবার খেতে ইচ্ছে করছে না। উত্তেজনায় তার ক্ষিদে মরে গেছে। অমির আজকে মন অসম্ভব খারাপ ছিল। তার বইয়ের জন্য বাকী টাকা যোগার হয় নি। সে একবার বাংলাবাজারে ফোন করে শেষ চেষ্টা করে দেখেছিল। কিন্তু প্রকাশক এত কম টাকায় বই প্রকাশ করা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এ বছর অমির মনে হয় আর বই প্রকাশ করার আশা নেই। কিন্তু তারেকের বাসায় এসে অমির মন ভালো হয়ে গিয়েছে। গেমস খেলতে তার খুবই ভালো লাগছে। তার মনে হচ্ছে যেন সে নিজেই বন্দুক হাতে যুদ্ধ করতে নেমে গিয়েছে। তারেক অমিকে আজকের রাত্টা তাদের বাসায় থেকে যেতে বলল। কিন্তু অমি রাজী হল না। রাতে তার আবার একটা টিউশনি আছে। তাছাড়া কালকে ভার্সিটিতে একটা ছোট পরীক্ষাও আছে। তারেক অমিকে এগিয়ে দিতে এল। তারেক বলল, দোস্ত তুই কল্পনাও করতে পারবি না আমার কী রকম ভালো লাগছে। কতদিন চিন্তা করেছিলাম যে এরকম সারারাত জেগে গেমস খেলব। আজ রাতে তুই থাকলে ভালই হত। এমনিতেও আজ রাতে ঘুম হবে না। কালকে সকালে মামার ফ্লাইট। একেবারে মামাকে ফ্লাইটে উঠিয়ে দিয়ে তারপর ঘুমাবো। অমি তারেকের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রাস্তায় নামল। বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। এই আবহাওয়া তার ভালো লাগছে। তার ইচ্ছে করছে বৃষ্টির সাথে মিশে যেতে। তারেকের আনন্দ দেখে অমির ভালো লাগছে। অনেকদিনের স্বপ্নপূরনের আনন্দই অন্যরকম। ক্ষনিকের জন্য অমির মনে হল তারেকের কাছে সে কিছু টাকা ধার চেয়ে দেখতে পারে। তারেক হয়ত না করবে না। কিন্তু তা উচিত হবে না। সে নিজের স্বপ্ন পূরন করার জন্য অন্যের কাছে হাত পাতার পক্ষপাতী না। অমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সে দীর্ঘশ্বাস বৃষ্টির ফোঁটার চেয়েও ঠান্ডা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সূর্য
তারেকের এলসিডির কথা আসায় একটু খারপ লাগছিল, যদি গল্পকার তারেকের এলসিডিটা বিক্রি করিয়ে দেয়। শেষটায় এটা হতে না দেখে ভাল লাগলো। "একটা স্বপ্ন পূরণে আর একটা স্বপ্নের মৃত্যু" আমার কেন যেন ভাল লাগেনা। লেখক আমার কাছে স্বার্থক। খুব সাবলীল ঝরঝরে একটা গল্প। অনায়াসে ভাল লাগা জানানো যায়।
অভিজিৎ রায়
আসলে আপনারা amr লেখা কষ্ট করে পড়েছেন তার জন্য অনেক ধন্যবাদ.... ar apnader onuprerona mulok comment ar upodesh gulo amar colar patheo. kauke alada করে bolar kichu nei, apnader সবাইকেই অসংখ ধন্যবাদ.....
মিজানুর রহমান রানা
অমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সে দীর্ঘশ্বাস বৃষ্টির ফোঁটার চেয়েও ঠান্ডা।----------গল্পটি পড়ে আমারও গভীর দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে মনে চাইলো। কারণ গল্পকারের গল্প বলার ঢং চমৎকার। গল্পে ব্যবহৃত কবিতাটিও চমৎকার। ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। ভোট দিলাম।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।