"আরে আমরাও দেশে এলাম আর তুইও ফ্লাই করছিস! এইটা কোন কথা হল?"
"কী করব মামা ভিসাটা পেয়ে গেলাম যখন যেতে তো হবেই। আর তুমি তো খুব তাড়াতাড়ি ফিরবে বলে তো মনে হয় না"
"আরে হ্যাঁ... টানা একমাস খাব আর ঘুমাব! ঘুরে ঘুরে গ্রামও দেখব এবার...!” কথাটা বলে হেসে দেয় মামা তারপর আবার বলে "এই নে বাসার চাবি...এমন দিনে একা একা যাচ্ছিস সাবধানে থাকিস" মামা আমাকে জড়িয়ে ধরে তার বাসার চাবিটা দিলেন। হ্যান্ড ব্যাগে চাবি রাখতে রাখতে বেশ কৌতুহলী হয়ে মামাকে জিজ্ঞাসা করলাম-
"এমন দিনে যাচ্ছি মানে?" আমার প্রশ্ন শুনে মামা আমাকে এক পাশে নিয়ে ফিসফিস করে যা বলল তাতে আমার হাত পা বরফের মত জমে গেল! "মামা তুমি আমাকে ভয় দিচ্ছো! ভুলে যাও কেন আমি এখন আর ছোট নাই। সময়ে বিয়ে করলে দুই বাচ্চার বাবা হতাম" কথাটা সাহস দেখিয়ে বললাম ঠিকই কিন্তু কপাল ঘামতে শুরু করেছে! মামা এবার গলা আরও নীচে নামিয়ে বললেন -
"আমি জানি তুই এসব বিশ্বাস করিস না। তবুও তোকে আগে ভাগে বলে রাখি যাতে পরে আবার না বলিস "মামা আমাকে আগে কেন সাবধান করনি?" তাই বললাম।" মামার কথা শেষ না হতেই মামার তের চৌদ্দ বছরের ছেলে জিসান দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে প্রায় কেঁদেই ফেলল! এবং মামার মত ফিসফিস করেই বলল-
"প্লিজ ভাইয়া অনেক সাবধানে থাকবে। আর খবরদার দরজা ভেঙে ফেললেও দরজা খুলবে না! ঘরে লাইট জ্বালবে না, তাহলে ওরা বুঝে যাবে ঘরে কেউ আছে। আর তা বুঝে গেলেই জানালা দরজা ভেঙে হলেও ওরা ভীতরে ঢুকবে তোমার কিচ্ছু করার থাকবে না!"
ইয়ার পোর্টে এই একটু আগেও বেশ ঠান্ডা লাগছিল। এখন রীতিমত দরদর করে জামা প্যান্টের ভীতর ঘেমে পানির ধারা নামছে নীচের দিকে। আমি অনেক ভীতু এটা মামা জানে। তাই তার কথাগুলো আমাকে ভয় দিতে বলা ভেবে ততটা ভয় না পেলেও,মামার ঐ পুচকে ছেলে যেভাবে বলেছে তাতে ক্ষণিকের জন্য হলেও চোখের সামনে সব কিছু পরিস্কার দেখতে পেলাম! মন বলছে ফ্লাইট ক্যান্সেল করে মামা যখন সপরিবারে যাবে তখন যাব। কিন্তু একটা চাকুরীর ইন্টারভিউ আছে তিনদিন পরে। তাছাড়া ব্যক্তিত্ব বাঁধা দিচ্ছে চরমভাবে!
“ আরে ধ্যাৎ যা হবার তাই হোক, গিয়ে দেখি কী হয়। প্রয়োজনে মামার বাসা ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে থাকব।" কথাটা বললাম ঠিকই কিন্তু দুরুদুরু বুকের কাঁপন থামছে না। লাগেজ নিয়ে যেতে যেতে শেষ বারের মত সি-অফ করতে আসা সবাইকে বাই বাই বলতে পিছনে তাকালাম। মনটা বেশ বেদনা ভারাক্রান্ত হল! প্লেনে উঠে মামা ও জিসানের সাবধান বাণী একেবারেই ভুলে গেলাম।
উড়ন্ত প্লেনে কেমন করে যে সময় কেটে গেছে টেরই পেলাম না। প্লেনেই পরিচয় ঘটলো ইন্ডিয়ান এক ভদ্রলোকের সাথে। কথার এক ফাঁকে ভদ্রলোকও বলল "এমন দিনে ল্যান্ড করছেন দেখবেন যেন ভয় পাবেন না,একটু সাবধানে থাকবেন" এবার হারানো ভয়টা আবার মনের মাঝে ফিরে এলো। ব্যাগ খুলে মামার বাসার চাবিটা দেখে নেড়ে চেড়ে আবার রেখে দিলাম। চাবিটা জায়গা মত রেখে যেইনা হাত বের করেছি দেখি হাতের আঙুলে রক্ত! মনে হল বুকের পাঁজর ভেঙ্গে কলিজাটা বাইরে বের হয়ে আসবে। ভীষণ বাথরুম লাগল! বাথরুম সেরে হাসি হাসি মুখ করে সীটে এসে বসলাম। মনে মনে ভাবলাম "তাহলে কি মামা যা বলেছে তা আমার সাথে শুরু হয়ে গেছে? না না তা কি করে হয়! আর এসব কুসংস্কারে কেন আমি বিশ্বাস করছি? মামা নিশ্চয় আমাকে ভয় দিয়েছে। কিন্তু রক্ত এলো কোথা থেকে ব্যাগে? ব্যাগ খুলে দেখব আবার? না থাক...” মনের মাঝে ভয়টা বুঁদবুঁদ করতে করতে এক সময় থেমে গেল নানা কথার ভীড়ে। চার ঘন্টা লেট করে তারপর দুপুর বারোটায় প্লেন ল্যান্ড করার জায়গায় বিকাল চারটায় এসে ল্যান্ড করল! ইমিগ্রেশনের কাজ,ল্যাগেজ বুঝে নিয়ে ইয়ারপোর্ট থেকে বের হতে হতে ছয়টা সাড়ে ছয়টা বেজে গেল।
একটা ট্যাক্সি নিয়ে ড্রাইভারকে কাগজে লেখা ঠিকানাটা দেখাতেই সাঁ সাঁ বাতাস কাটিয়ে গাড়ি চলতে লাগল। জন্ম সুত্রে আফ্রিকান ড্রাইভার বেশ গম্ভীর টাইপের। দৈত্যের মত দেহে পিটপিট করা চোখ। কিছু জিজ্ঞাসা করলেই কপাল কুঁচকে ফেলে বিরক্ত প্রকাশ করে দেখে, আমি আর কথা বললাম না। জানালা দিয়ে হু হু করে ঠাণ্ডা বাতাস আসছে। শহরে সন্ধ্যার বাতিগুলো জ্বলে উঠেছে। ক্লান্ত লাগছে বেশ,ঘুমে চোখ বুজে আসছে ।
গম্ভীর কণ্ঠস্বর শুনে তাকালাম। দেখি ড্রাইভার আমার লাগেজ বের করে আমাকে ডাকছে। ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে মামার বাড়িতে ঢুকতে যাব আলো আঁধারিতে দেখি গেইটের কাছে কালো একটা ছায়ামুর্তি! আমাকে দেখে সাঁ করে একটা গাছের আড়ালে চলে গেল! ছায়ামুর্তিটির চোখ দুটো জ্বল জ্বল করে জ্বলছে! চাবি বের করে কাঁপা কাঁপা হাতে গেইট খুললাম "কঅ অঅ অ" আওয়াজ তুলে দরজা খুলে গেল! এবার ঘরের বাতি জ্বালাবার চেষ্টা করলাম। অনুভব করলাম আমার হাত আঠালো রক্তে ভরে গেছে! এই প্রথম মামার বাড়িতে এসেছি,কোথায় কি কিছুই জানিনা। মামা বলেছিল দরজার বামদিকের দেয়ালে লাইটের সুইচ। খুঁজতে লাগলাম সুইচ দেয়াল হাতড়ে হাতড়ে। পা বেঁধে গেল নরম কিছুতে ওরে মা গো..বাঁচাও! হুমড়ি খেয়ে পড়তে পড়তে নিজেকে সামলে নিলাম। "ম্যাএ এ এ উ উ" শব্দ করে দৌড়ে পালালো একটা বিড়াল। হাতে একটা সুইচের মত কি যেন লাগলো ! উপরের দিকে আনতেই জ্বলে উঠলো টেবিল লাইট। এখন পরিবেশটাকে আরও ভূতুড়ে লাগছে...। দেয়ালের দিকে তাকিয়ে চোখ ভারী হয়ে আটকে গেল। আমি চাইলেও পলক ফেলতে পারছি না! সমস্ত দেয়ালে রক্তের দাগ...! হৃদপিণ্ডটা এত দ্রুত চলছে মনে হচ্ছে হঠাৎ দপ করে থেমে যাবে। পাশেই জানালার কাছে খুসখুস শব্দ...। বেশ সাহস নিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলাম -কে কে ওখানে? নিজের কাছেই নিজের কণ্ঠস্বর অপরিচিত মনে হল! মনে হল বাঁশিতে ফুঁ ফুঁ আওয়াজ হল। পর মুহুর্তে মনে হল -এদেশের ভূত কি বাংলা কথা বুঝবে? এমন সময় দরজায় সমানে ধাম ধাম করে কে যেন লাথি মারছে আর ইংরেজিতে কীসব বলছে! যে দেশের যে ভাষা সে দেশের ভূত সেই ভাষাতেই কথা বলে!? এ কোন ভূতের মধ্যে পড়লাম? গলা শুঁকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। বাথরুমও চিনিনা! মনে হচ্ছে এখানেই হয়ে যাবে। এটা আমার একটা বদ অভ্যাস,ভয় পেলেই বাথরুম লাগে...! ধীরে ধীরে জানালার কাছে গিয়ে বাইরে উঁকি দিয়ে দেখি
-ওরে বাপরে এ তো ভয়ঙ্কর ভূতের আসর? রক্তচোষা বাদুড়,ড্রাকুলা,দৈত্য,কংকাল,ডাইনি সব আছে! ভূতেরা দল বেঁধে এক একটা বাড়ি থেকে বের হচ্ছে!
মামার বড়িটা বেশ উপরের দিকে হওয়াতে সব বাড়িগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। জানালায় জানিনা কতক্ষণ তাকিয়েছিলাম। এমন সময় "হাউউ উ..."করে একটা খেঁক শিয়াল একেবারে আমার মুখের কাছে চলে এসেছে। চোখ দিয়ে ঠিকরে বের হচ্ছে আগুন! রক্তের লা লা ঝরছে মুখে! যেন এই মাত্র কোন জন্তুকে কাঁচা খেয়ে এসেছে! কাঁচের শার্শিতে লাল টকটকে জিভ বের করে রক্ত মাখিয়ে দিল...! আহহহ কি বীভৎস... কি ভয়ঙ্কর সে দৃশ্য! পায়ে পায়ে বাড়ি খাচ্ছে! জানালা বেঁয়ে বেঁয়ে উপরে উঠছে একটা ড্রাকুলা! ঘরে ঢোকার রাস্তা খুঁজছে! সমস্ত শরীর ঠক ঠক করে কাঁপছে! অনেকক্ষণ ধরে চেপে রাখা পানির ধাঁরায় পুরো কার্পেট নষ্ট করতে করতে বহুকষ্টে চেপে রইলাম! বুঝতে পারছি নার্ভগুলো শিথিল হয়ে আসছে! সোফার উপর চড়ে বসলাম। কী যেন কিলবিল করে নড়ে উঠলো
- ও মাই গড বড় খরগোশের মত ইঁদুর! ধাঁই ধাঁই করে সারা ঘরে দৌড়ে বেড়াল খানিকক্ষণ! বেশ কয়েকটা ছায়ামুর্তি বাড়িটার চারিদিকে চক্কর দিচ্ছে বুঝতে একটুও অসুবিধা হল না! আমার গায়ের লোম সব খাড়া হয়ে গেছে! চিন্তাশক্তি নেই বললেই চলে। দোয়া পড়তে চাইছি কিন্তু গোঙানির শব্দ ছাড়া কিছুই বের হচ্ছে না। কোন ভাবেই ভয় কমছে না। বৃষ্টির মত কীসব যেন কাঁচ ঘেরা দরজা জানালায় ছুড়ে ছুড়ে মারছে! আর ইংরেজিতে কীসব বলছে। বেশ কিছু আগুনের ফুলকি দেখতে পেলাম জানালা দিয়ে ভীতরে ঢোকার চেষ্টা করে শার্শিতে আছড়ে পড়ল! এমন সময় জিসানের বলা কথাটা মনে পড়ল "ভাইয়া লাইট একেবারেই জ্বালাবে না" দৌড়ে গিয়ে লাইট অফ করে আবার জায়গায় এসে বসলাম...! দেখতে পেলাম ঢালু পাহাড়ি রাস্তা বেঁয়ে একদল ভূত সদলবলে এই বাড়ির দিকেই এগিয়ে আসছে! উফ...এবার বাইরের দৃশ্যটা একেবারেই পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি। আর তা দেখেই মনে হচ্ছে কেউ আমার গলা চেপে ধরেছে! একেবারে শ্বাস নিতে পারছিনা। পেটের নাড়ি ভুড়ি বের হয়ে আসতে চায়ছে! টের পেলাম ভীষণ বমি আসছে...।
বিশ,বাইশ ঘণ্টার জার্নির ক্লান্তি আর এখানে এসে ভূতের আক্রমণ আমাকে আধ মরা করে ফেলেছে। গায়ের কোটটা খুলে মুড়ি দিয়ে নিলাম। মনে হচ্ছে অজ্ঞান হয়ে যাব। এমন সময় পুরো ঘর কাঁপিয়ে ক্রিং ক্রিং শব্দে ল্যান্ড ফোনটা বেজে উঠলো। মামার বন্ধুরা সবাই জানে মামা দেশে গেছে তাহলে কে ফোন করছে? ফোন ধরা কি ঠিক হবে? নানা কথা ভাবতে ভাবতে এক সময় ফোন বন্ধ হয়ে গেল। একটু পরে আবার বেজে উঠলো। এবার সাহস করে ধরে রিসিভার কানে লাগাতেই নাকি সূরে ফিসফিসিয়ে কেউ বলে উঠলো "হিঃ হিঃ হিঃ আজ রাতেই তোর ঘাড় মটকে খাব। তুই আমাদের ঘুমানোর আশ্রয় দখলে নিয়েছিস!" নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে,হার্টবিট দ্রুত হচ্ছে..খুব দ্রুত...! এমন সময় কানে এলো "তোর আজ বাঁচার পথ নেই রে হাবলু ই ই ই হিঃ হিঃ হিঃ"। হাবলু!? হাবলু তো সেই ছোট বেলা থেকে একমাত্র মামাই আদর করে ডাকে। আমি লাফ দিয়ে উঠে বসে ফিসফিস গলায় বলে উঠলাম
-মামা তুমি ফাজলামো করছো? এই ভূতের রাজ্যে কেন তুমি আমাকে একা পাঠালে? কথাটা বলে কেঁদে ফেললাম। মামা হেসে বলে উঠলেন-
-আরে পাগল তুই হাবলু হাবলুই থেকে গেলি। এই যুগে কেউ ভূতপ্রেতে বিশ্বাস করে নাকি বোকা ছেলে?
-তুমি জানো না মামা আমার সাথে কী কী হচ্ছে? তুমি আর জিসান যা যা বলেছিলে সব সত্য। তোমার এখানে ভূত আছে আমি নিজে চোখে দেখেছি। একেক সময়ে এক এক রূপ ধারণ করে আমাকে ভয় দেখাচ্ছে।
হু হু করে কেঁদে কেঁদে আস্তে করে এক নিশ্বাসে কথাগুলো বললাম।
-কোন ভুত-টুত নেই... আজ অ্যামেরিকাতে হ্যালোইন ডে... ! -হ্যালোইন ডে... !? সেইটা আগে বলবা না? এইটা আবার কেমন ডে? দলে দলে ভুত-প্রেত মিলে মিটিং,মিছিল? - শোন শোন! এতো পেনিক হইস না...হ্যালোউইন ডে হল শত শত বছরের পুরানো উৎসব। যা শুরু হয়েছিল পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলোতে। ওসব দেশে এই উৎসব ছিল নবান্নের উৎসব। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও কিছু দেশে কাল্টিসরা এখন তার ধারা বদলে দিয়েছে! এদের ধারনা যত মানুষ মারা যাবার পরে প্রেতাত্মা বা শয়তান হয়েছে,তারা সবাই এই রাতে চলে আসে লোকালয়ে। আর তাদের খুশি করতে না পারলে পৃথিবীর মানুষের অনেক বিপদ হতে পারে! তাই অশুভ শক্তিকে খুশী করে নিজেদের রক্ষা করতে ক্যান্ডি সহ নানা সামগ্রী দিয়ে তাদেরকে খুশি করা হয়। বিশ্বের কিছু মানূষের এই বিশ্বাস কিংবা ধর্মীয় কুসংষ্কারকে কেন্দ্র করে এই হ্যালোউইনের সন্ধ্যা প্রবর্তিত হলেও;বর্তমানে এই ধর্মীয় আচারকে অতিক্রম করে,এই হ্যালোউইনের সন্ধ্যা এখন সার্বজনীন আনন্দ আর ক্যান্ডি কুড়ানোর উৎসবে পরিণত হয়েছে! প্রতিবছর ৩১শে অক্টোবর,শীতের শুরুর হিম হাওয়ায়,দিনের আলো শেষ হতে না হতেই কম বয়সী ছেলে-মেয়েরা “ট্রিক অর ট্রিট (চালাকি করে সরে পড়,না হয় সেবা কর)” করার জন্য বের হয়ে পড়ে। আর রেওয়াজ মত অনেকেই মুখে মুখোশ এঁটে,গায়ে অদ্ভুত পোষাক পরে বেরিয়ে পড়ে মানুষকে চমকে বা ভয় দিতে...! তুই যা যা দেখেছিস সব মানুষ মুখোশ পরে সেজেছে।
- শয়তান তাড়াতে মানুষকে ভূত হতে হয়! মামা কী বল এসব?এতো জীবন্ত আর ভৌতুক!
-হ্যাঁ...। আর জিসান ওর বন্ধুদের ফোন করে বলেছে তোকে ভয় দিতে। তাই ওরা তোকে ভয় দিয়েছে- হাঁ হাঁ হাঁ।
এবার বেশ লজ্জা লাগলো । মামা আরও বললেন-
-ধীরে ধীরে সব জানতে পারবি বুদ্ধু...।
-টাকা খরচ করে এইসব ভৌতুক কর্মকান্ড করার কোন যুক্তি আছে?
বেশ রেগেই আমি কথাটা বললাম। তা শুনে মামা হো হো করে হেসে দিলেন। বললেন-
-টাকা থাকলে প্রেতাত্মারও শ্রাদ্ধ করা যায় আর টাকা না থাকলে নিজের বাবার শ্রাদ্ধও করা হয়না!
একটু থেমে বললেন-
- শোন আমার প্রতিবেশী মিসেস স্টিভকে ফোন দিয়ে বলেছি তোর খোঁজ নিতে। দেখ আবার উনাকে দেখেও যেন ভয়ে দৌড় না দিস। তাহলে কিন্তু পুলিশ কল দিয়ে দেবে, হাঁ হাঁ হাঁ …। ভয় করিস না হাবলু ঠিকমত ঘুমা কাল আবার কথা হবে।
লাইন কেটে দিলেন মামা। তার সাথে কথা বলে ভয় অনেক কমে গেছে দেখে;সাহস করে লাইট জ্বালিয়ে কাপড় চেঞ্জ করে নিলাম। ব্যাগে আনা পারফিউম বের করতে গিয়ে রক্ত লেগে গেল হাতে! এবার খেয়াল করলাম পারফিউমের বোতলটা ভেঙ্গে সব ফারফিউম ব্যাগের ভীতরে। মৌ মৌ গন্ধে ঘর ভরে গেল। আবার দেখি মা কফ সিরাপটাও এই ব্যাগেই দিয়েছে! সে বোতলও ভেঙ্গে গেছে। মনে হয় দুইটা বোতলে ঠোকাঠুকি লেগে দুটোই ভেঙ্গে গেছে! লাল আঠালো কফ সিরাপ রক্তের মত লাগছে। ভয় এতোটাই বেশি পেয়েছি যে আগে এটা খেয়াল হয়নি ।
এবার খেয়াল করলাম বেশ সময় ধরে দরজায় কেউ ধাক্কা দিচ্ছে না! দরজার কিহোলে চোখ রেখে একটা ছোট্ট পরীকে দেখতে পেলাম। দেখতে পেলাম একজন অ্যামেরিকান সাদা মহিলা মেয়েটিকে নিয়ে আসছে। আর তাকে অনুসরণ করে একদল মুখোশধারি এই দিকেই আসছে! আবার সরে গিয়ে সোফাতে বসলাম। মনে পড়ল মামা বলেছিল দরোজার কলিংবেল নষ্ট। কিছুক্ষণ দরজায় ধাক্কা দিয়ে ফিরতি চলে যাবার শব্দ হচ্ছে দেখে ধুম করে দরজা খুলে জোরে বললাম – "হ্যালো মিসেস স্টিভ হাউ আর উই? আই এম দীপ্ত, জিসান'স কাজিন ফ্রম বাংলাদেশ...।" চারিদিকে শুধু ক্যান্ডি আর ক্যান্ডি। বুঝলাম মুখোশ ধারীরা এইগুলো ছুড়ে মেরেছিল! মহিলা মিষ্টি হেসে ঘরে ঢুকে সব লাইট জ্বালিয়ে দিলেন। একে একে ঘরে ঠুকল জিসানের মুখোশধারী সব বন্ধুরা "ট্রিক অর ট্রিট " "হ্যাপি হ্যালোইন"বলতে বলতে সবাই সবাইকে চকোলেট, ক্যান্ডি,দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করে আনন্দ করতে লাগলো। মামার ড্রইং রুমের টেবিলে একটা বাটিতে দেখতে পেলাম নানা রকম ক্যান্ডি,চকোলেট। পরীটাকে কাছে টেনে আদর করে ধরিয়ে দিলাম পুরো বাটিটাই। অনেক রাত পর্যন্ত আমিও ভুতের দলে ভীড়ে,মেতে রইলাম গল্প আর আনন্দে। বুঝতে পারলাম মামা মামীর দীর্ঘ প্রবাস জীবনে বেশ কিছু বিদেশী ভাল বন্ধু মিলেছে! যারা আজ তাদেরই অনুপস্থিতে আমাকে সঙ্গ দিয়ে তাদের মত করে আপ্যায়ন করে যাচ্ছে...। সদ্য প্রিয়জন ছেড়ে সুদূর বাংলাদেশ থেকে আসা এই আমি ভীতু দীপ্ত,কয়েক ঘণ্টার পরিচয়ে ভয় কাঁটিয়ে বিদেশীদের অনেক প্রিয় হয়ে গেলাম...।
২৭ মে - ২০১১
গল্প/কবিতা:
১২০ টি
সমন্বিত স্কোর
৪.৩৪
বিচারক স্কোরঃ ২.৬৪ / ৭.০
পাঠক স্কোরঃ ১.৭ / ৩.০
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪