ফ্লাট নাম্বার ডি-ইলেভেন

বৃষ্টি (আগষ্ট ২০১২)

সেলিনা ইসলাম
  • ১৮
  • ১৭
আজ বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। পুরো আকাশটা যেন কি এক গভীর বেদনায় কেঁদেই যাচ্ছে বিরামহীনভাবে । একবার ভেবেছিল সে আসবে না । কিন্তু সে যে কথা দিয়েছে প্রিয় মানুষটাকে। যতই ঝড়ঝাপ্টা আসুক না কেন সে আজ আসবেই । সিএঞ্জি পেতে অনেক কষ্ট হল । তার উপর তিনডাবল ভাড়া দিতে হবে । “ইস নতুন কেনা ড্রেসটা ভিজে একেবারে শরীরের সাথে লেপ্টে গেছে । দুইঘন্টা সময় নিয়ে মনের মত করে সেজে আসা সব প্রসাধনী নতুন কাপড়ের কাঁচা রঙের মত করে পানিতে মিশে যাচ্ছে বড় অভিমান ভরে। তবুও আজ বহুদিন পরে যেন ঈদের আনন্দ বয়ে চলে সারা মন জুড়ে । ঈদের কথা ভাবতেই মনটা উড়ে যায় অন্য আকাশে ‘ইস আর দুদিন পরে রোজা শুরু হবে, তারপর ঈদ । এবারের ঈদ হবে ইভানকে ঘিরে । হুমম... একটা আড়ং-এর সুন্দর ক্রিম কালারের পাঞ্জাবি সে নিজে পছন্দ করে উপহার দেবে’ কথাটা ভাবতেই শিহরিত হয় মনভুবন ।

অনি আজ মিলিত হবে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় মানুষ ইভানের সাথে । ওদের দুজনের সম্পর্কের বয়স আজ ৩বছর ৩মাস ১৯ দিন। দুজনের পরিচয় হয় ফেসবুকের মাধ্যমে । অনিকে আগে এডরিকয়েস্ট পাঠায় ইভান । যদিও অনি বেশ কিছুটা সময় নিয়ে তারপর এড করেছে তাকে । আর সেই থেকেই দুজনের মাঝে বেশ সুন্দর একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক । এবং সেই সম্পর্ক কিছুটা দ্রুতই ভাললাগা থেকে ভালবাসায় রুপ নেয় । অনি নিজেও ভাবতে পারেনি এতো তাড়াতাড়ি কত সহজে সে একটা ধাক্কা সইতে না সইতেই আবার আরেকজনের সাথে ভালবাসায় জড়াবে । সে ভাবে ভালবাসা বুঝি এমনই হয় ? দূরে থেকেও কেউ কেউ জয় করে নেয় হৃদয়ের সবটুকু সিংহাসন আবার কেউ কেউ কাছে থেকেও জয়ী সিংহাসন ভেঙ্গে চুরমার করে দেয় বিশ্বাসঘাতক হয়ে ।কথাগুলো ভাবতেই মেঘ করে আসে রোদ্রসিক্ত দু'চোখ জুড়ে ।

অনি তার অতীতের সব কষ্টের কথা ইভানকে বলেছে । সবকিছু শুনে সে নিবিড়ভাবে তার কষ্ট অনুভব করেছে । আলো জ্বেলেছে অনির অন্ধকার জীবনে । এই কয়দিনেই ধীরে ধীরে হৃদয়ের ক্ষততে টাটকা ভালবাসার প্রলেপ দিয়ে নিয়ে গেছে সীমাহীন নির্ভরতার মোহানায় । সবই হয়েছে মেসেঞ্জার আর ফোনের মাধ্যমে । অনি যখন বুকের পাথরটা সরাতে চেয়ে ইভানকে বলেছে তার প্রেমিক রুদ্র কতটা বেঈমান ছিল । তার সাথে প্রেম করতে করতে একসময় অনিরই ছোটবোনের সাথেও প্রেম করে যায় । আর তখন নিজেকে সামাল দিতেই কেমন করে জড়িয়ে নেয় নেশার নীল চাদরে নিজেকে সে । এসব কাহিনী বলে পাথরটাকে সরিয়ে দিতে চেয়েছে ।
রুদ্র যে এত বড় একটা ধোঁকা দিতে পারে কখনই ভাবতে পারেনি অনি । একসময় সে অনুভব করে রুদ্রকেও পাগলের মত ভালবাসে ছোট বোন রিনি । কিন্তু রিনি জানেনা অনির সাথে রুদ্রর সম্পর্কের কথা । রিনিই অনিকে দেখায় রুদ্রের হাতে লেখা চিঠি । যে চিঠির হুবহু একটা কপি অনিকেও দেয়া হয়েছে রুদ্রের পক্ষ থেকে চার -পাঁচ দিন আগে । রিনি যখন আনন্দের আতিশয্যে আপুকে তার প্রথম ভালবাসার কথা জানান দেয় অনি হাসি মুখেই জড়িয়ে ধরে বোনকে । কিন্তু ঠোঁট দুটোতে খুশি ঝুলিয়ে রাখলেও দুচোখ বাঁধা মানেনা । ঝরঝর করে একপশলা বর্ষা এসে ভিজিয়ে দেয় অনিকে ।
-কিরে আপু তুই কাঁদছিস ? খুশি হসনি ?আমি জানতাম তুই খুশি হবি না ।
-কি যে বলিস না তুই অনেক খুশি হয়েছি । এযে আনন্দের কান্না এ তুই বুঝবিনা !

সেই ছোট বেলায় রিনির পোলিও হবার কারনে বাম পা’টা একটু টেনে টেনে হাঁটে । যদিও বাবা মা সময়মত ধনুষ্টংকার, ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, পোলিও, হাম, যক্ষ্মা, হেপাটাইটিস -বি, হেমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা সবগুলো টিকাই ডাক্তারের কাছে নিয়ে দিয়েছিল । তবুও পোলিওর কারনে রিনির আজ এই অবস্থা । কেউ কেউ বলে,রিনিকে পোলিওর জন্য যে ওষুধটা খাওয়ানো হয়েছিল তাতে ভেজাল ছিল । কিন্তু যা হবার তাতো হয়েই গেছে । অনেক চিকিৎসার পরেও এখন এই অবস্থা ।
রিনির ধারনা ছিল কেউ তাকে ভালবাসবেনা ,বিয়ে করবে না । কিন্তু সেই রিনিকে প্রেমপত্র দিয়ে ভালবাসা জানিয়েছে রুদ্র। পাড়ার সবচেয়ে হ্যান্ডসাম ও ধনীর ছেলে । যার জন্য মেয়েরা পাগল ।
অনির সাথে রুদ্রর সম্পর্ক আজ প্রায় পাঁচ বছর ধরে । একই সাথে পড়াশুনা করে তারা । চিঠি দেখে রিনিকে সে কিছুই বলতে পারেনি সেদিন । তবে রুদ্রকে কিছু না বললে রিনির ভবিষ্যৎ যে অনেক খারাপ হবে । এই কথাটা ভেবেই মুখোমুখি হয় রুদ্রর । কিন্তু সবকিছুই অস্বীকার করে সে।বলে সে এসবের কিছুই জানে না । যদিও কথা বলার সময় সরাসরি অনির চোখের দিকে তাকাতে পারেনি সে ।
-আমি যেন তোমাকে কোনদিন রিনির সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ করতে না দেখি । আর আমার সাথে তোর কোন সম্পর্ক নেই ।
-কিন্তু আমি কি করেছি তাই বল ?
-তুমি কি করেছো জান না ,না ?
-না জানিনা । তোমার বোন যদি আমাকে ভালবাসে এতে আমার কি দোষ? এমনতো কত মেয়েই আমাকে ভালবাসে।কিন্তু আমি তো কেবল তোমাকেই ভালবাসি আর কাউকেই তো পাত্তা দেই না ।
-লজ্জা করেনা তোমার এভাবে কথা বলতে ? মেয়েদেরকে এমন করে সস্তা ভাবতে ? তোমার হাতে লেখা চিঠি অন্যমেয়ে পায় কি করে ?
একটু থেমে বিড়বিড় করে বলে
-এখন দেখছি আমারই ভুল হয়েছে তোমাকে বিশ্বাস করে । মন উজাড় করে ভালবেসে ।
কান্না আর ধরে রাখতে পারেনা অনি । হু হু করে কেঁদে দেয় । কতটা বিশ্বাস করলে আর ভালবাসলে একটা মেয়ে তার ভালবাসার মানুষের সব চাওয়া পূরণ করে ?সবচেয়ে অমুল্য সম্পদও এই মানুষটার আনন্দ আর জ্বালা মেটাতে উৎসর্গ করতে মনস্থির করে ? দুজনে একদিন অনেক ঘনিষ্টও হয় কিন্তু চরম মুহূর্তে অনি অপরাগতা প্রকাশ করে। রুদ্র বেশ রাগ করে এবং ঐদিনই হাত থেকে আংটি খুলে পরিয়ে দেয় অনিকে ।কিন্তু তারপরও সেদিন অনি রুদ্রর কথায় সাড়া না দিয়ে বের হয়ে আসে ।
রুদ্রর মা আর অনির মা খুব ভাল বন্ধু আর তাই তারাও স্বপ্ন দেখেছে অনি আর রুদ্রর বিয়ে হবে । এরপরও কি কেউ কল্পনায়ও আনতে পারে যে ভালবাসার মানুষটা এতো বড় জঘন্য একটা কাজ করবে ? প্রেমিকার ছোটবোনের সাথেও প্রেম করবে !
-তোমরা দুজন মিলে আমার সাথে এই ষড়যন্ত্র করছো । অন্য কোন ছেলের সাথে ঘুমাইয়া মজা পাইছো তাই কও...আমি জানি তুমি...? কথা শেষ না হবার আগেই ‘ঠাশ’ করে একটা শব্দ । রুদ্রর মাথা ঘুরে যায় ঝড় বেগে । বিস্ময়ের সীমানা ছাড়িয়ে চোখ দুটো ঠিকরে বের হয়ে আসতে চায় !
-খবরদার রুদ্র কোন ধরনের কোন বাজে কথা শুনতে চাইনা । তোকে ছিঃ ছিঃ দিতেও আমার রুচীতে বাঁধে ।
আর দাঁড়াতে পারেনি সে, সমস্ত সম্পর্ক ছেদ করে সেদিনই চলে আসে অনি । সে শতভাগ শিওর ছিল তাদের এই বন্ধন কেউ ছিড়তে পারবে না ।

বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও রিনিকে রুদ্রর কথাটা জানানো হয়নি । আর জানালেও মনে হয়না কাজ হত কারন অনি জানে রিনি তার বোন হলে কি হবে ? মনের দিক থেকে তাকে সে ভীষনভাবে হিংসা করে । রিনির ধারনা অনি এবং সে একই বাবা মায়ের সন্তান হয়েও আদরযত্ন একইরকম পায়নি । আর তাই আজ সে পঙ্গু। সব রাগ আর অভিমান গিয়ে পড়ে অনির উপর । যদিও অনি দেখেছে সেই ছোট বেলা থেকে বাবা মা যেন একটু বেশীই ভালবাসে তাকে । হয়ত প্রথম সন্তান বলে ...তাই বলে রিনিকেও কম আদর করে না তাঁরা ।
অনি রিনিকে অনেক ভালবাসে কিন্তু রিনি ভাবে বোন হয়ে সে দয়া করছে । যত বড় হচ্ছে তত রিনি কথায় কথায় অনিকে খোঁচা দিয়ে কথা বলে কষ্ট দেয় । তার কোন কথা সে শুনতে চায়না । কিন্তু অনি রিনির সবকথা মন দিয়ে শোনে ।

রুদ্রকে ছেড়ে অনিও বদলে যায় । তার কেন জানি মাঝেমাঝে মনে হয় হয়ত রিনি ইচ্ছা করে সবকিছু করেছে । কিন্তু রুদ্রর মুখ থেকে শোনা নোংরা কথাগুলো মন থেকে মুছতে পারেনা । তাই বলে রুদ্রর আসার অপেক্ষাও যে করেনি ,সে কথাও ঠিকনা । সে চেয়েছিল একবার অন্তত রুদ্রও এসে ক্ষমা চাক এসে বলুক ‘আমি ভুল করেছি অনি আমাকে ক্ষমা করে দেও’। ক্ষমা অবশ্য অনি করত কিনা সে জানে না । একরকম বন্দী জীবনযাপন শুরু করে সে । ঘর থেকে বের হয়না । বাবা মাকে বলেছে প্রাইভেটে পরিক্ষা দেবে তাই কলেজে যায়না । অনির সবসময় আল্লাহের প্রতি অগাধ বিশ্বাস । সে ভাবে আল্লাহ যা কিছু করেন নিশ্চয় তার পিছনে একটা ভাল কিছু থাকে। ঠিক তাই..।
বাবা চাকুরীর সুবাদে বদলি হয়ে আসে আরেক শহরে । শুরু হয় নতুন জীবন । কিন্তু অনি তার ভালবাসার কাছে এই পরাজয় মেনে নিতে পারেনা । ভুলতে পারেনা রুদ্রকে । মনে হয় রুদ্রর মত ছেলেদেরকে আরো বড় কোন সাজা যদি সে দিতে পারত! সব স্বপ্ন কাঁচের মত ভেঙ্গে যায় । যতটা মনের জোর থাকা দরকার এই মুহূর্তে অনির তা নেই । ভীষণভাবে সে ভেঙ্গে পড়ে। পড়াশুনা ছেড়ে মেতে উঠে বন্ধুদের সাথে । যা কোনদিন সে করবে না বলে প্রতিজ্ঞ ছিল তাই সে বেশী করে করে । নেশার নীল চাদরে মুড়ে অনি বিচরণ করে তার নিজস্ব জগতে । যেখানে সে নিজের মত করে উড়ে বেড়ায় প্রিয় মানুষের সাথে । অনুভব করে যাকিছু তার প্রাপ্য । কিন্তু সে জানে না কি এক অজানা সঙ্কোচবোধ রিনির কাছ থেকে তৈরী করে বিশাল এক দূরত্ব ।
**********************************************************************************************************************************

এসব কথাগুলো শুনে ইভান সান্ত্বনা দেয় অনিকে । আর সেই সান্ত্বনা পেয়ে অনি ভাবে এখনো ভাল কিছু রেখেছে আল্লাহ তার জন্য । ইভানের কথায়ই সে ধীরে ধীরে সব ছেড়ে দিতে থাকে । বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গ থেকে শুরু করে ভাললাগা সবকিছু।যা ইভানের ভাল লাগেনা তার সবটুকু...। এতো কথা হয় দুজনের মাঝে কিন্তু কেউ কাউকেই দেখেনি । শোনেনি কে কোথায় থাকে । অনি ভাবে ছেলে হয়ে যখন ইভান চায়না তাকে দেখতে এতোকিছু জানার পরও ,তাহলে সে কেন দেখতে চেয়ে নিজের ক্ষুদ্র মনের পরিচয় দেবে ?
কিন্তু আজ ইভানের জন্মদিন আর তাই সে নিমন্ত্রণ করেছে অনিকে । এ ডাকে সাড়া না দিয়ে অনি পারেনি । ইভান যে ঠিকানা দিয়েছে সেই ঠিকানাতেই সে আজ ছুটে এসেছে । একই শহরে থাকে তারা...। প্রথমে ভেবেছে আসাটা ঠিক হবে না । কিন্তু যতবার ভেবেছে ততবারই একটা কথা মনে উঁকি দিয়েছে ‘ইভান পড়াশুনায় ভাল ,যব করে ভাল ,যেখানে যব করে সেখানকার ঠিকানাও সে জানে ।একদিন ঐ অফিসের ফোনে কথাও বলেছে সে। খারাপ হলে সে নিশ্চয় অফিসের ঠিকানা এবং ফোন নাম্বার দিত না !

সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে উঠতে হাতের ফুলগুলো ঝেড়ে পানি সরিয়ে নেয় সে। চুলগুলো পরিপাটি করে হ্যান্ডব্যাগ থেকে কম্প্যাক্ট পাউডার বের করে মুখে বুলিয়ে নেয় তুলিটা । অনি ধারনা করেছিল ইভান হাসিমুখে তাকে অভ্যার্থনা জানাবে ।যখন কলিংবেল বাজিয়ে দেখে কেউ দরজা খুলছেনা মনটা খারাপ হয়ে যায় তার । তখন ভাবে নাহ সে চলে যাবে । কিন্তু শেষ চেষ্টা করতে কলিংবেল বেশ খানিকক্ষণ চেপে ধরে কিন্তু তাও কেউ দরজা খোলে না । একটু ধাক্কা দিতে দেখে দরজা ভেড়ানো । ভীতর থেকে ইভানের গলা
-সুইটহার্ট এসো, ভীতরে এসো । বেলটা নষ্ট ...এসো
এতোক্ষন যে একটু একটু ভয় করছিল তা আর থাকে না প্রিয়তমের কণ্ঠস্বর শুনে । ভীতরে ঢুকে দেখে তিনটা ছেলে । সবাই নিশ্চয় জন্মদিনের উইশ করতে এসেছে ? কিন্তু কে ইভান ঠিক বুঝতে পারেনা । একটা ছেলে যেন অনির মনকে পড়তে পারে । সে এগিয়ে এসে হাত থেকে ফুলগুলো নিয়ে বলে -
-আমিই ইভান । এসো বস
বসতে বসতে চারদিকটাতে একবার চোখ বুলিয়ে নেয় অনি । সব কেমন অগোছালো । কেমন যেন একটা অস্বস্তি লাগছে তার। ওর ষষ্ট ইন্দ্রিয় বলছে অনেক বড় ভুল করেছে সে । 'নাহ্ এভাবে আসা ঠিক হয়নি ।' আবার নিজেকেই নিজে বোঝায় ‘ শুধু দেখা করতেই তো আসা । আজ তিন বছর ধরে তাদের সম্পর্ক । বন্ধুত্ব তারপর ভালবাসা । অনি ভাবে ইভান তাকে তার চেয়েও বেশী ভালবাসে । সে নিজেই প্রপোজ করেছে অনিকে । উত্তরে সে অবশ্য কিছুই বলেনি ভেবেছে আজকের এই শুভদিনে বলবে - সেও ভালবেসে ফেলেছে । তাছাড়া ইভান কোনদিন এমন কোন কথা বলেনি যা থেকে তাকে খারাপ ভাবা যায় । আচ্ছা কাউকে না কাউকে তো বিশ্বাস করতেই হবে । কাউকে বিশ্বাস করাটা কি অন্যায় বা ভুল ?’
যত যাই বোঝাকনা কেন নিজেকে সমস্ত শরীর কাঁপছে তার । মনে হচ্ছে জ্বর এসে গেছে । খুব কষ্টে একটা সোফাতে বসে সে । কতক্ষন সে বসে আছে জানে না । ভাবনায় ছেদ পড়ে ইভানের ডাকে ।
- অনি কি ভাবছো? সে পাশে এসে একেবারে গা ঘেঁষে বসেছে । অনি একটু সরে গিয়ে বলে
-একটু পানি খাব ।
গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে । ইভান পানি এনে দেয় । পানিটা এক ঢোক খাবার সাথে সাথে অনির মনে হয় তার স্বাদটা একটু স্যালাইনের মত । হাল্কা মিষ্টি ,হাল্কা লবন কিন্তু লেবুর গন্ধ আছে । সে ভাবে হয়ত লেবুর সরবত ঢকঢক করে খেয়ে ফেলে । শেষে মাথাটা ঝিমঝিম করে । চোখেও কেমন যেন একটা আবছা ছায়া । সেভাবে হয়ত বৃষ্টিতে ভিজেছে তাই মাথা এমন করছে আর চোখে ঝাপ্সা দেখছে । সে মনে মনে দোয়া ইউনুস পড়তে থাকে -'লা-ইলাহা ইল্লা আন্তা ছুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ যোয়ালেমিন'। হে আল্লাহ আমাকে এই বাসা থেকে বের করে নাও আমি নফল নামাজ পড়ে দেব খোঁদা।নাহ বিপদ থেকে মুক্তি পাবার দোয়াটাও সে মন দিয়ে পড়তে পারছে না ।পাশে তাকিয়ে দেখে ইভান একা বসে আছে,ছেলেগুলো নেই । অনি বুঝে যায় এই দোয়ার বানী আল্লাহের কান পর্যন্ত পৌছাতে সে কোনভাবেই পারবে না আর তাই ভয়টা যেন একটু বেশীই লাগে এখন ।
-তোমার মা কোথায়? তুমি না বলেছিলে তোমার মা বোন সবাই আছে এ বাসাতে ?
কথাগুলো বলতে স্বাভাবিকের চেয়েও অনেক বেশী সময় নিল সে । বুঝতে পারছে গলা শুকিয়ে গেছে আবার কথা জড়িয়ে আসছে... ইভান তার লোলুভ দৃষ্টি অনির সারা শরিরে একবার বুলিয়ে নেয় ।তারপর অনির মুখের দিকে তাকায় -শুকনো ঠোঁট জিভ দিয়ে মুছে নেয় । যা দেখে বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া শরীরটা বারবার ভেজা ওড়না দিয়ে ঢাকতে থাকে অনি।
-ওরা আছে ঐ রুমে । এসো পরিচয় করিয়ে দেই । কথাটা বলে সামনে উঠে দাঁড়ায় ইভান তাকে অনুসরন করে অনি । ঠিক দরজার কাছে এসে অনি থমকে দাঁড়ায় ।
-ইভান আমি বরং আজ যাই , অন্য কোনদিন এসে পরিচিত হব ।
-সে কি কথা ? আমি কেক কাটবো কাকে নিয়ে শুনি ? কথাটা বলেই একটা টোকা দেয় গালে । অনির শরীরে বিদ্যুৎ চমকে যায় । ভয়ে একটা শীতল অনুভব সারা শরীরে শিরশির করে উঠে ।আনন্দ আর স্বপ্ন সাজানোর সবটুকু ভালোলাগার রেশ কেটে যায় সুতোকাটা ঘুড়ীর মত করে । যা উড়ে চলে সুদূর ঘনকালো মেঘলা আকাশ জুড়ে । এবার কেঁদে ফেলে অনি
-প্লিজ আজ যাই ...আমি বাসায় বলে আসিনি ।
ইভান হাত ধরে টেনে নেয় ঘরের মাঝে ...ঘরটা বেশ অন্ধকার । জানালা জুড়ে ভারী পর্দা । বৃষ্টি মুখোরিত মেঘলা বিকেলের ধূসর আলো ঘরের ভীতরে একটুও আসেনি। ঘরে কাউকেই দেখতে পাচ্ছে না সে কিন্তু অনুভুতি বলছে কেউ আছে । দরজা দেবার শব্দ আর ভয়ার্ত বিদ্যুৎ চমকানো...মনে হল পাশেই কোথাও বিকট শব্দে বাজ পড়েছে । এতো জোরে শব্দ হল যে চিৎকার দিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একজনকে জড়িয়ে ধরে অনি । বেশ চেনা অনুভব ...অনির মনে হয় এই বিশাল বুকে সে বেশ কয়েকবার পরম নির্ভরতায় মাথা রেখেছে ।কতবার গায়ের এই গন্ধটা অনিকে মাতাল করেছে, পাগল করেছে । অনি থরথর করে কাঁপছে । নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার কোনরকম চেষ্টা নেই তার । সে যেন হাইপনোসিস হয়ে গেছে । তার মনে হল কতদিন ধরে এই বাহুবন্ধনে সে হাজার বছরের সুখতৃপ্তি খুঁজে বেড়িয়েছে । নিজের অজান্তেই ফিস্ফিস করে বলে উঠে-
-কেন কাঁদালে আমায় ? কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে তুমি ?
ঘন নিঃশ্বাসের শব্দকে ছাপিয়ে ঝুমঝুম বৃষ্টির শব্দ যেন যৌবনের মাদকতার সৃষ্টি করে । কানের কাছে নাক ঘষে কে যেন গুণগুণ করে গেয়ে যায় গান । আবেশ জড়ানো সে সুর ভাসিয়ে নিয়ে যায় পরম আত্মসমর্পণে । সেই পরিচিত শরীরটা অনিকে নিয়ে যায় আরো একবার নতুন করে এক সাগর ভালবাসার গভীরে। অনিও পরমসুখে সাতার কেটে যায় অনাবিল এক অনন্য সুখে । সন্ধ্যা গড়িয়ে হয় মধ্যরাত... লাল টকটকে বিছানার উপর অনি হাঁটুর উপর মুখ রেখে বসে আছে নিঃসাড় দেহে । উলঙ্গ দেহ বুকের বামপাশে একটা ক্ষত- মিথ্যে ভালবাসার বিষাক্ত ছোবল …! যে ক্ষত থেকে দরদর করে বের হয় এতদিনকার জমে থাকা নীল রক্তস্রোত।

পরেরদিন খুব ভোরে একটা সাদা গাড়ী পাওয়া যায় নদীর ধারে । সদ্য কেনা বিএমডাবলু গাড়ীটির কোথাও কিছু হয়নি । যার সামনের সীটে দুজন আরোহীই মৃত ।অনেক চেষ্টা করেও মৃত্যুর কারন পুলিশ কোনভাবেই বের করতে পারেনি । মৃতদের মাঝে একজন ইভান কিন্তু পাশের জনকে ঠিক চেনা যাচ্ছে না । মুখটা একেবারে থেতলে গেছে । মনে হচ্ছে সমস্ত মুখে বেশ সুন্দর করে দাঁতের ছোবলে এঁকেছে কয়েকটি শব্দ “ভালবাসা এ তুমি কি করলে আমায়” কিন্তু কি আশ্চর্য -ক্ষত থেকে একফোঁটা রক্ত গড়িয়ে আসেনি ক্ষত ছেড়ে বাইরে !গাড়ীর পিছনের ট্রাঙ্কটা খোলা । ভীতরে পাওয়া যায় কাঁদামাটি মাখা শাবল ও কোদাল । এবং একটা বড় কাল ব্যাগ যার ভীতরে টাটকা রক্ত ... ।
সেদিনের পর থেকে অনিকে আর কোথাও দেখা যায়নি …। তবে শুধুমাত্র বৃষ্টির দিনেই ইভানের বাসার জানালায় অনেকেই দেখেছে একটি সুন্দরী ২০/২২ বছরের মেয়েকে । যে কিনা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির পানিতে হাত ভিজিয়ে হেসে লুটোপুটি খায়। আপন মনে গান গায় আর বৃষ্টির পানি নিয়ে পরম আনন্দে খেলা করে যায়...।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
প্রিয়ম অনেক দারুন .................
Lutful Bari Panna অসম্ভব কষ্টের কাহিনী। আর এটা বোধ হয় বর্তমান সমাজের একটা বাস্তবতা। আমি যেখানে থাকি সেখানে হোটেলে একটা মার্ডার হয়েছিল। অপরিচিত একটা মেয়ে। পরে তদন্তে উদঘাটিত হল মেয়েটা তার মোবাইলে পরিচিত প্রেমিকের সাথে দেখা করতে এসেছিল। ছেলেটা পরে ধরা পড়ে। কিন্তু আমাদের বিচারব্যবস্থাও তো.... । যাক অনেক ভাল লাগল।
মিজানুর রহমান রানা সেলিনা আপু, আপনার গল্পটি আমি পড়েছি পরিপূর্ণ। বেশ সুন্দর, তবে শেষে আরো একটু পরিষ্কার হলো ভালো হতো। যাই হোক, গল্পটি চমৎকার। শুভ কামনা থাকলো।
মোঃ আক্তারুজ্জামান ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা খুব সুন্দর ভাবে ধরা দেয় আপনার গল্পে, বৈচিত্রও থাকে চমৎকার। খুব ভাল লাগল।
নিলাঞ্জনা নীল ইশ!! কি মর্মান্তিক!!
মিজানুর রহমান রানা সুন্দর গল্প। ঈদ মোবারক।
Sisir kumar gain বেশ সুন্দর লেখা। এ গল্প থেকে সবার'ই শিক্ষা নেয়া উচিত।ভাল করে বুঝে পা বাড়াতে হবে, তা না হলে পা পিছলে যাওয়ার ভয় আছে।
সেলিনা ইসলাম সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ সময় করে গল্পটা পড়ার জন্য । সবার জন্য রইল অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা
বশির আহমেদ মনকাড়া এক গল্প শুণালেন । চমৎকার ।
মামুন ম. আজিজ ভালই আগাচ্ছিল, শেষে আবার ভৌতিক বিষয় এনে অন্যরকম চমক দিলে....সুন্দর গল্প

২৭ মে - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১২০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪