আজ পহেলা বৈশাখ। সকাল হতেই চারদিকে উৎসবের ছড়াছড়ি। চারদিক থেকে ভেসে আসে "এসো হে বৈশাখ এসো এসো..." গান। সকালেই বৈশাখী ঝড়ের আলামত নিয়ে আসে ঘন কালো মেঘ। যেন মেঘেদেরও আজ উৎসবের দিন। আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে এতো ঘটা করে বৈশাখকে বরণ করার এই যে আনন্দ! তার পুরোটাই মাটি করে দিল মহল্লার বস্তিতে থাকা মনা মিয়া। সে আজ এক ভয়ঙ্কর কলুষিত কাজ করেছে! এতদিন সবাই তাকে ছেলে মেয়ে জন্ম দেবার মেশিন বলেই মনে মনে গালি দিত। অথচ আজ সে ভয়াবহ এক ঘটনার জন্ম দিয়ে,মহল্লার সবাইকেই অবাক করে দিয়েছে! কেউ ভাবতেও পারেনি সারাদিন বিড়ি টানা,রুক্ষ স্বভাবের অলস,রুগ্ন শুকনো চল্লিশোর্ধ মনা মিয়া,এমন জঘন্য ঘটনার জন্ম দিতে পারে।
অবশ্য এই ঘটনার শুরুটা হয়েছে গতকাল সন্ধ্যায়। মনা মিয়া যখন রিকসা নিয়ে প্যাসেঞ্জারের অপেক্ষায় গলির মোড়ে বসে ছিল? তখন আরেক রিকশাচালক দবির পাশেই রিকশায় বসে ওর মতোই অপেক্ষা করছিল। এক সময় মনা মিয়ার থেকে বয়সে ছোট দবির, বিড়িতে দীর্ঘ একটা টান মেরে আকাশে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলে-"দোস্ত কপাল তো তোমার। সুন্দরী বউরে কামে দিয়া টেহা পয়সা কামাইতেছ। একদিন কাম করলে পাঁচদিন ঘরে শুইয়া কাটাইতে পারো।" ওর কথায় মনা মিয়ার ভীষণ রাগ হয়। সে বিড়িতে শেষ টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ে দবিরের দিকে। চোখ কপাল কুঁচকে বলে-"মিয়া কথা হিদা কইরা কইও। আমার বউরে নিয়া কোন আজে বাজে কথা হুনুম না কইলাম!" -"ক্যা...! বউরে নিয়া কিছু কইলে জায়গা মত হিট লাগে? বছর বছর বাচ্চা ফুটাইয়াও বউ তো তোমার অহনও এক্কেরে টসটসা রসগোল্লা শাবনুর...। বড় লোকের বাড়িতে বাড়িতে কী কাম করে? মানসে বুঝি জানে না,না?" -"তুই কই কই যাস তা সবাই জানে। কোন রেন্ডির ঘরে কোন রাইতে যাস তা কি কেউ জানে না? দবির...আমারে খুচাইস না কইলাম!" রাগে মনা মিয়ার শুকনো চোয়াল থিরথির করে কেঁপে যায়। তা দেখে দবির কুটিল হাসি হেসে বলে- -"বড় লোকের বাড়ির সেগুণ কাঠের ভারী দরজা বন্ধ হইলে কেউ টের পায়না ভীতরে কত রঙের লীলাখেলা হইতেছে! তর সুন্দরী বউরে নিয়া...!" কথা শেষ হতে দেয় না মনা। হুঙ্কার ছাড়ে... -"হালার পুত আর একটাও কতা কইবি না আমার বউরে নিয়া। ঘুসি দিয়া তোর থোতনা চ্যাপ্টা কইরা দিমু কইলাম!" দবির হাঃ হাঃ করে হাসতে হাসতে গান ধরে-"মনেতে কত দাগা দিলি রে সখিনা..."রিকসার প্যাডেলে জোর দিয়ে সে ছুটে দূরে চলে যায়। দবির চলে যেতেই মনার মন খুব খারাপ হয়ে যায়। কাজে আর মন বসে না। মনে মনে ভাবে সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করে সে যেন ঝামেলায় পড়ে গেছে। সারাক্ষণ হারানোর একটা ভয় মনের মাঝে খচখচ করে বিঁধে যায়।
মনে পড়ে সেদিন আরেক কলিগ রুস্তম,সেও বলছিল "দোস্ত দবির তো খুব বাড়ছে। তোর বউরে নিয়া আজে বাজে কানাঘুষা করতাছে।" মনা কিছু বলতে পারেনি। সব রাগ গিয়ে পড়ে শিউলির উপর। ইদানীং ওকে কাজে যেতে নিষেধ করে কিন্তু বউটা কথা কানে তোলে না। মাঝে মাঝে ওর মনে হয় বউয়ের শরীরের মধ্যে ক্যামেরা ফিট করে দেয়। দেখতে চায় দবিরের কথা সত্যি কিনা। বউরে সে খুব ভালোবাসে। অথচ সারাক্ষণ একটা সন্দেহ ওর শান্তি নষ্ট করে ওকে দুর্বল করে দিচ্ছে। বউ কথা না শুনলে ওর খুব জেদ চেপে যায়। কেমন একটা বাউলা বাতাস যেন ওর সমস্ত শরীরে কারেন্টের মত দপাদপ জ্বলে শক্তি এনে দেয়। মাথার ভীতরে ঢংঢং করে বাড়ি মারে কেউ। তখন বউরে ধরে না মারধোর করা পর্যন্ত,ওর ভালো লাগে না। কিন্তু যতবার সে বউয়ের গায়ে হাত দিয়েছে ততবারই নিজেই কেঁদেছে। যে হাত দিয়ে বউকে কতবার আদর করে বুকে জড়িয়ে ধরেছে। সেই হাত বউকে মেরেছে বলে,সেই হাত পাঁচিলে মেরে মেরে হাত থেকে সে রক্ত ঝরিয়েছে। সন্ধ্যায় বেলি ফুলের মালা এনে বউয়ের খোঁপায় পরিয়ে দিয়েছে। সীমাহীন আদর করে তারপর শান্তি পেয়েছে।
এদিকে শিউলি সারাদিন মানুষের বাড়িতে বাড়িতে ছুটা কাজ করে ক্লান্ত শরীরে ঘরে ফেরে। একটা বাসা থেকে আরেকটা বাসায় হেঁটে যেতেও অনেক কষ্ট হয়। কিন্তু সে কী করবে? অলস স্বামী তার। কষ্টও তেমন করতে পারে না। একদিন রিকসা চালিয়ে পাঁচদিন ঘরে বসে আয়েস করে। ইদানীং স্বামীর বড় আবদার সে যতক্ষণ ঘরে থাকবে তাকেও ঘরে থাকতে হবে। স্বামী ছেলেমেয়ের সাথে থাকতে শিউলিরও অনেক ভালো লাগে। স্বামীর বুকে মাথা রেখে সে না খেয়েও থাকতে রাজী। কিন্তু বাচ্চাদের কথা ভেবে সে স্বামীর এই আদর ভালোবাসা বিসর্জন দিয়েছে।
গতরাতে শিউলির শরীরটা একদম ভালো ছিল না। সব বাড়িতেই বৈশাখী উৎসবের ধুম। বড়লোকের বাড়িতে উৎসব মানেই খাওয়া দাওয়ার বাহার। এক এক বাড়িতে চল্লিশ,পঞ্চাশ, পদের খালি ভর্তাই করতে হয়েছে। বাটা ঘোটা সবই করেছে সে। অথচ খাওয়ানোর বেলায় নাম কিনবে বেগম সাহেব। হাত দুইটা মরিচের মত জ্বালা করতেছে। রাতে স্বামীও তাড়াতাড়ি কাজ সেরে চলে এসেছিল। তাকে দেখেই শিউলি বুঝেছিল কারো সাথে সে ঝগড়া করেছে! কিন্তু কিছুই সে জিজ্ঞাসা করেনি ভয়ে। দেখা গেলো কিছু জিজ্ঞাসা করতে গিয়ে নিজেকেই সাত কথা শুনতে হচ্ছে। তাই চুপচাপই থাকাটা ঠিক মনে করলো। ওর শরীর খারাপ হলেও স্বামীর ভালোবাসায় সাড়া না দিয়ে সে পারেনি। তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে রাতে দুইবার বমি করেছে। তারপর আর চৌকিতে না শুয়ে ছোট্ট বাচ্চাটাকে বুকের মধ্যে নিয়ে শুয়ে ছিল।
শিউলি ভাবে দুনিয়ার সব শান্তি যেন এইখানে। বাচ্চাদের সবার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে। তিন নম্বর বাচ্চাটা ছেলে। ভাঙা জানালা দিয়ে আসা এক টুকরো চাঁদের আলো এসে পড়েছে ছেলেটার মুখে। সে মুখের দিকে চোখ পড়তেই ওর বুকের মাঝে হুহু করে কেঁদে উঠে! আজ বেশ কয়েক মাস ধরে ছেলেটা ইলিশ মাছ খেতে চেয়েছে। কিন্তু কাজের জায়গা থেকে মাছ মাংস যা-ই সে আনুক না কেন? সব ওদের বাবা খেয়ে ফেলে! শিউলি তো দূরে থাক একটা বাচ্চার মুখেও কোনদিন এক লোকমা ভাত তুলে খাওয়ায় না। দুইটা বাসা থেকে ওকে খাবার দেয়। বাকি বাসাগুলো থেকে কাপড় আর টাকা নেয়। বছরে চারটা শাড়ি পায়। মাঝে মাঝে চেয়ে নেয় মেয়েদের জন্য কাপড়। মেয়েদের নিয়ে কতজনে কত কাজের কথা বলে! কিন্তু শিউলির জানো যাবে তবু নিজের সন্তানকে মানুষের বাসায় কাজে দেবে না। মাঝে মাঝে স্বামীও কাজের প্রস্তাব নিয়ে আসে। কিন্তু শিউলির জন্য দিতে পারে না। ওর এক কথা -"কষ্ট যদি করণ লাগে ওগো বাপ মায়ে করব-ওরা করব না।" -"ক্যা ওরা কামে গেলে তর আর কামে যাওন লাগতো না এই জন্য? মজা করতে পারবি না আর?" স্বামীর কথায় ভীষণ রাগ হয়। চিৎকার দিয়ে বলে উঠে- -"আপনের যা মনে লয় হেয়ডা ভাবেন। আমারে নিয়া হেলা খেলা করছেন,করছেন। কিন্তু পোলা মাইয়ার জীবন লইয়া কোন হেলাফেলা করতে দিমু না কইলাম।" সেদিন মনা শিউলির অগ্নিমূর্তি দেখে আর কিছুই বলেনি। একজন মা সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ এবং মঙ্গল চিন্তায়,কতটা যে ভয়ঙ্কর হতে পারে? তা যেন মনা সেদিন বুঝে গিয়েছিল। কথাগুলো মনে করে শিউলি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। মনে মনে ভাবে 'আজ যেহেতু পহেলা বৈশাখ? নিশ্চয় আজ সব বাসায় ইলিশ মাছ রান্না হবে। এক এক বাসা থেকে যদি দুই টুকরো করেও মাছ দেয়! তাহলে সে মাছ পাবে...এক দুই তিন...' এভাবেই হাতের কর গুণে গুণে হিসেব করে। অচেনা একটা আনন্দ খেলে যেতে যেতে হঠাৎ ভাবে "ইলিশ মাছের যে দাম? ম্যাম সাহেব দিতে নাও পারে। না দিলে চেয়ে আনবে। তাতেও যদি না দেয় আজ সে যেভাবেই হোক,আঁচলের নিচে করে হলেও একটুকরো মাছ এনে ছেলেকে খাওয়াবে"! মনটা খুশিতে ভরে যায়। সে যেন কয়েক মাস ধরে এই আজকের দিনের অপেক্ষায় ছিল। ছেলেটাকে একেবারে টান দিয়ে বুকের কাছে আনে। কিছুটা ব্যথা পেয়ে ছেলেটা ঘুমের মাঝেই কেঁদে উঠে। মায়ের আদর পেয়ে আবার থেমেও যায়। মাটির মেঝেতে খেজুর পাতার মাদুর বিছিয়ে শুয়ে আছে সবাই।
শিউলি সারাদিন মানুষের বাড়ীতে বাড়ীতে কাজ করে ঠিকই; কিন্তু তার মন পড়ে থাকে ঘরে সন্তানদের কাছে। বড় আর মেঝো মেয়ে দুটো সংসার সামলে নেয় বলে সে কাজ করতে পারে। দুই মেয়ে একজন সকালে আর একজন বিকালে স্কুলে যায়। বড় মেয়েটা লেখাপড়ায় খুবই ভালো। মেয়েটাকে নিয়ে শিউলির অনেক স্বপ্ন! সে কাজ ছাড়বে না কোনভাবেই। অভাব আছে ঠিকই কিন্তু এই কাজ করে বলেই সে এখনো সন্তানদের নিয়ে স্বপ্ন দেখতে পারছে। তা না হলে তার সংসার জোয়ারের জলে কবেই ভেসে যেত।"একদিন কাজে না গেলে কাজ থাকব না!" এই কথা ভেবে শিউলি স্বামীর সবকথা মেনে নিলেও,সে ঘরে থাকলে তাকেও ঘরে থাকতে হবে। এই একটা কথা সে কোনভাবেই মেনে নিতে পারে না। আর এই ব্যাপারটা নিয়েই ওদের মাঝে প্রায়ই ঝগড়া বাঁধে।
আজ সকালে যখন শিউলি ফরজ গোসল সেরে রেডি হয়ে কাজে বের হতে যাবে? ঘুমে থাকা মনা ধড়াম করে জেগে উঠে! ঘরের মেঝেতে শুয়ে থাকা পাঁচটা বাচ্চাকে পা মাড়িয়ে এসে খপ করে শিউলির হাত ধরে বলে-"মাগি তোরে না কইছি কামে যাবি না" শিউলিও খেঁকিয়ে উঠে- -"আপনার কি সংসারের কারো দিকে কোন নজর আছে? নিজে কামকাজ ঠিক মত করেন না। আর আমিও যদি ঘরে বইসা থাকি-এতোডি পেট চলব ক্যামনে, হ্যাঁ?" -"পেট না চললে না চলব। আমি ঘরে থাকুম আর তুই মাগি বছরের পয়লা দিন নাগরের লগে সময় কাটাইবি? যেন সারা বছর মজাই থাকতে পারস না? এইডা আর চলব না।" -" আপনে কীসব কন! আপনের মাইয়া বড় হয়ছে সে স্কুলে ক্লাস এইটে পড়ে। একটু তো শরম করেন।" - "ঐ মাতারি শরম আমি করুম? না তুই...। গায় গতরে এত তেল তুই পাইস কই-আমি বুঝি না-তাই ভাবছস?"
এবার শিউলি ঢোক গেলে। খেয়ালে আসে ঘরের বারান্দায় বুড়ো শ্বশুর শুয়ে আছে। প্রতিমাসে সে গ্রাম থেকে আসে ছেলের কাছ থেকে কিছু টাকা নিতে। ছেলে তাঁরে আজ না কাল। কাল না পরশু এমন করে করে ঘুরাতে থাকে। শেষে শিউলি নিজেই শ্বশুরের হাতে টাকা দিলে তারপর সে গ্রামে যায়। আজ পণের দিন হয় শ্বশুর এসে বসে আছে। এতগুলো মানুষের মাঝে শ্বশুরের জন্য আবার বাড়তি খরচ চালাতে হয়। তাই গতকাল এক বেগম সাহেবকে মিথ্যা বলেছে "ম্যাডাম কালগো বাংলা বছরের পহেলা মাস শুরু। যদি কিছু টাকা মোরে দিতেন। পোলা মাইয়া নিয়া একটু মেলায় যাইতে পারতাম! মাস শেষ হইলে আবার বেতন থাইকা কাইটা রাখতেন।" বেগম সাহেব রাজি হয়েছে। তবে সে আজকে সকালে পরিবারের সবাইকে নিয়ে গ্রামে বৈশাখী মেলা দেখতে যাবে। সে যাবার আগেই তার কাছে যেতে হবে। না হলে পাঁচ দিনেও আর টাকাটা পাওয়া যাবে না। এসব কথা ভেবে শিউলি মনাকে আর কিছু না বলে চৌকিতে গিয়ে বসে পড়ে। ভাবে স্বামীর রাগ কিছুটা কমলে সে বের হবে। এদিকে মনার পায়ের ডলা খেয়ে ছেলে মেয়ে কান্না জুড়ে দিয়েছে। সবচেয়ে ছোট সাত মাসের মেয়েটা কেঁদেই যাচ্ছে। বড় মেয়েটা ছোট মেয়েটাকে কোলে নিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে। বাবা মায়ের এই ঝগড়া ছেলেমেয়ের কাছে নতুন কিছু নয়। বরং যেদিন ঝগড়া না হয় সেদিনটাই ওদের কাছে আশ্চর্য লাগে।
শিউলি অপেক্ষা করছে মনা কখন বাথরুমের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। আর এই ফাঁকে সে ঘর থেকে বের হবে। একবার বের হতে পারলে সব বাসার কাজ শেষ করে আসতে পারবে। যদিও আজকে সব বাসায়ই একটু বেশিই রান্নার ঝামেলা। শিউলি বুঝে পায়না এই ধনী লোকেরা সারা বছর পোলাউ কুরমা খেয়ে এই একদিনে কেন পান্তা খায়? তাও আবার গরম ভাতে পানি ঢেলে দেয়! ও আরও ভেবে পায়না এই পান্তা খেতেও তাদের কত আয়োজন! মনে পড়ে ও কাজ শেষে যখন ছেঁড়া শাড়ির আঁচলে ঢেকে ভাত তরকারি আনে? ও দেখেছে ও তখন গলির মাথায় থাকলেও,মনা সেই খাবারের ঘ্রাণ পেয়ে যায়। "বড় লোকের ডাইলেও অনেক স্বাদ!" এমন কথা বলে প্রায়ই মনা ঢোক গিলে। তখন সে ভুলে যায় বউ কাজ করে বলেই না এত মজার মজার খাবার সে খেতে পারে।
খাবারের কথা ভাবতেই শিউলির গায়ের ভীতর গুলিয়ে উঠে। তলপেটের ব্যথাটাও কমেনি। কেমন অস্থির লাগে তার। ভিজে চুলগুলো উঁচু করে বেঁধে নেয়। বেলা অনেকখানি গড়িয়ে গেছে। বাইরে যেভাবে মেঘ করেছে,যেকোনো সময়ে ঝড় আসবে। শিউলি দেখে মনা কপালে হাত রেখে চোখ বুজে শুয়ে আছে। সে আজকে যেন একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছে। জেদ চেপে বসেছে। যেভাবেই হোক সে শিউলিকে কাজে যেতে দেবে না। এদিকে বারান্দায় শ্বশুর বিড়ি খাচ্ছে আর খকখক করে কেশে যাচ্ছে। এইফাঁকে শিউলি পা টিপে টিপে আস্তে করে ঘর থেকে বের হয়। যেই না সে বারান্দায় আসে-অনুভব করে ওর চুলের মুঠি ধরে কেউ টান মেরেছে। পেটের ভীতর হঠাৎ ঝাঁকিতে ভারী কিছু একটা গড়াগড়ি দিয়ে যায়। পিঠে দমাদম চড় কিল ঘুষি পড়তে থাকে। "ওরে আল্লারে ওরে মা রে আমারে মাইরা হালাইলো রে!" ছেলে বউয়ের চিৎকার শুনে বুড়ো শ্বশুর এসে ছেলেকে ঠেকাতে যায়। আজ রুগ্ন মনার গায়ে যেন অসুরের শক্তি ভর করেছে। কষে শিউলির তলপেটে জোরে লাথি মারে। শিউলি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে! অনুভব করে গরম একটা ধারা তার দুই পা বেয়ে নেমে মাটির বারান্দা ভাসিয়ে দিচ্ছে।
এদিকে মনার বাবা মনার হাত ধরে মারামারি ঠেকাতে যায়। রাগে মনা তার বাবার দাড়ি ধরে খুব জোরে টান দিয়েই থমকে যায়। তাকিয়ে দেখে পাতলা চামড়াসহ অর্ধেক দাড়ি তার হাতের মুঠোয়। দরদর করে বুড়ো বাবার থুতনি বেয়ে রক্ত ঝরে পড়ে। নীচে তাকিয়ে দেখে শিউলি কাঁটা মুরগির মত মেঝেতে পড়ে ছটফট করছে! আর সারা মেঝেতে রক্ত আর রক্ত। মনে পড়ে শিউলি তিন মাসের গর্ভবতী। গত সপ্তাহেই কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে ডাক্তার দেখিয়েছে। -"পহেলা দিনেই আমি এইডা কী করলাম!" বলেই ধপাস করে মেঝেতে বসে পড়ে মনা মিয়া। ঝমঝম বৃষ্টিতে বাইরে তখন কালবৈশাখী উল্লাস করে যায়। ধারে কোথাও দড়াম দড়াম শব্দে বাজ পড়ে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আহা রুবন
মোবাইল ফোনে কয়েক দিন আগেই গল্পটি পড়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে গল্পটি যেন হিরহির করে কোথা থেকে বেরিয়ে আসছে। একদম নিটোল, স্বতস্ফুর্ত! আপার গল্পের যে কয়টি পড়েছি তার ভেতরে সবচেয়ে সেরা মনে হয়েছে। এতটাই মুগ্ধ যে প্রেমে পড়া যুবটির মত - মুখে কথা আসছে না! গল্পটি প্রথম হোক!
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী
চমৎকার গল্প। নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনের নির্যাতিত এক নারীর জিবন কাহিনী তুলে ধরলেন। এক কথায় বলবো- দারুব হয়েছে। ভোট রেখে গেলাম। অনেক শুভকামনা, আর আমার পাতায় আমন্ত্রণ।
নাসরিন চৌধুরী
অবহেলিত ও নির্যাতিত এক নারীর গল্প। এভাবে প্রতি ঘরে ঘরে কত শিউলি নির্যাতিত হয় কেইবা খবর রাখে! গল্পটিতে চমৎকার ম্যাসেজ ও আছে। বেশ লিখেছো আপু।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।