রিমনের মুখ থেকে এমন অদ্ভুত কথা শুনে অ্যানি হা করে তাকিয়ে থাকে। সে কিছু বলতে গিয়ে ও থমকে যায়। সে তাকিয়ে থাকে রিমনের নিস্পৃহ চোখের দিকে। তারপর আস্তে আস্তে বলে- তুমি এসব কি বলছো? রিমন তার পূর্বের কথাই আবার বলে- হ্যাঁ। যা বলছি ঠিকই বলছি। আমার পক্ষে তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব নয়। আমাকে এমন জায়গায় বিয়ে করতে হবে যেখানে আমার শালা থাকবে। -রিমন, এতদিন পরে তুমি এসব কি বলছো! যখন প্রথম আমাকে ভালোবাসার কথা বলেছিলে তখন তো তুমি আমার সবকিছুই জানতে। কই তখন তো তুমি এসব কিছুই বলোনি। বরং তুমি বলেছিলে আমার মত একবাপের এক কন্যাই তোমার পছন্দ। -হ্যাঁ ঠিক আছে। কিন্তু সেদিন আর আজ এক নয়। -কেন? আজ এমন কি হলো! অ্যানির এই কথায় রিমন হঠাৎ তার চেপে রাখা গোপন ব্যাথার ঝাপি খোলে। -আসলে আজ নয়। যেদিন- যেদিন আমার ভাইয়েরা আমাকে মারার জন্য গুন্ডা ভাড়া করেছিলো সেদিনই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রিমনের এমন সহজ স্বীকোরক্তি শুনে অ্যানির এতদিনের একটা ভুল অভিযোগ ভেঙ্গে গেলো। আসলে বেশ কিছুদিন ধরেই অ্যানি খেয়াল করছিল যে রিমন কেমন যেন অন্যমনস্ক। সে কেমন যেন তাকে এড়িয়ে চলতো। তা নিয়ে অভিযোগ করলেও রিমন পাশ কাটিয়ে যেত। আজ হঠাৎ অসতর্ক মুহূর্তে তার গোপন ব্যাথা বেরিয়ে পড়লো। সে তখন ভেতরের ঘটনা জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠলো। আসলে রিমন তারা চার ভাই। তাদের মধ্যে রিমন সবার চেয়ে ছোট। রিমনের বয়স যখন নয় বছর তখন তার মা মারা যান। তার বাবা আসফর আলী খাঁ ছিলেন পাকা ব্যবসায়ী। তাই স্ত্রীর মৃত্যূর পর তিনি যেন ব্যবসায়ে আরো গভীর মনোযোগী হওয়ার অবকাশ পেলেন। আর সেই থেকে রিমন তার ভাই-ভাবীদের কাছেই মানুষ। এরপর বাইশ বছর বয়সে যখন তার বাবা চলে গেলেন তখন সম্পত্তি ভাগাভাগি হলো। আর তারা সবাই আলাদা আলাদা ভাবে বসবাস করতে শুরু করলো। পরিশ্রম আর ভাগ্যের সহায়তায় রিমন তার পৈতৃক সম্পত্তিকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে তুলল। কিন্তু তার ভাইদের উন্নতি তেমন চোখে পড়ল না। তাই বলে রিমন কিন্তু তার ভাইদেরকে পায়ে ঠেলে দিলো না। তাদের যে কোন প্রয়োজনে তারা রিমনের কাছে হাত পাতলে কখনও খালি হাতে ফিরে যেতো না। কিন্তু হঠাৎ তারা দাবী করলো, যেহেতু তারা রিমনকে লালন পালন করেছে তাই তারা রিমনের সম্পত্তির অর্ধেকের অংশীদার। কিন্তু রিমন যখন তাদের এই দাবী প্রত্যাখ্যান করলো তখন তারা তাকে মারার জন্য গুন্ডা ভাড়া করলো। কিন্তু ভাগ্যগুণে রিমন বেঁচে গেলো। সেদিন থেকেই রিমন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সব শুনে অ্যানি বলল- এসব কথা তুমি এতদিন আমাকে বলোনি কেন? -এগুলো তোমাকে বলার কি আছে? আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাতে তো তোমার করার কিছূ নাই। রিমনের এমন নির্লিপ্ত জবাব শুনে সে বিস্মিত হলো- আচ্ছা বুঝলাম আমার করার কিছূ নেই বলে আমাকে বলোনি। এখন আমাকে বলো যে সেই ঘটনার সাথে তোমার এমন সিদ্ধান্তের সম্পর্ক কি? -যেহেতু সম্পত্তির কারণে আমার আপন পর হয়ে গেছে। তাই সম্পত্তিই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমি শালা খুঁজতেছি যাতে করে সে আমার অবর্তমানে আমার সম্পত্তির দেখাশুনা করতে পারে। -কিন্তু সে ও তো তোমার সম্পত্তি মেরে খেতে পারে। -হুঁ পারে। কিন্তু সে তা করার আগে তার বোনের কথা ভেবে অন্তত কিছু রেখে দেবে। -ওহ্ তাই! তাহলে তোমার সিদ্ধান্ত ফাইনাল। আমাদের সম্পর্কে কাটাকাটি। কিন্তু তুমি কি আসলেই পারবে আমাদের এতদিনের ভালোবাসার কথা ভুলে যেতে? -হয়ত কষ্ট হবে। তবুও আমাকে পারতে হবে। -তুমি কি তাতে সুখী হবে? -জানি না। কিন্তু আমি কি এখনও সুখে আছি। দিনে পথে বের হতে পারি না, রাতে ঘুমোতে পারি না। সারাক্ষন শুধু ভয় কখন কে আমাকে মেরে ফেলে- কখন কে আমার সম্পত্তি কেড়ে নেয়। -তাই বলে তুমি আমাদের এতদিনের ভালোবাসাকে পায়ে ঠেলে দেবে? -প্লিজ ওভাবে বলো না। আমি নিরুপায়। -তাই বলে এত সহজেই তুমি আমাকে ভুলে যাবে? অ্যানির চোখ হঠাৎ ভিজে উঠে। -অ্যানি, যে সম্পত্তির কারণে আমার আপন পর হয়েছে সে সম্পত্তি আমাকে রক্ষা করতেই হবে। যেভাবেই হোক আমাকে সে সম্পত্তি রক্ষা করতেই হবে। -রিমন, প্লিজ, তুমি আরেকবার ভাবো। দেখো আমি তো তোমার সম্পত্তি চাই না। তুমি যদি আমার পাশে থাকো তাতেই আমি সুখী হবো। আর আমার সবকিছূ উজাড় করে দেবো তোমাকে সুখী করার জন্য। -অ্যানি আমি সরি। এভাবে আমাকে অপরাধী করো না। এ কথা শুনে অ্যানি চলে যায়। তবু রিমনের জীবন থেকে সড়ে দাঁড়ায় না। বারবার সে ফিরে আসে। কিন্তু রিমন তার সিদ্ধান্তে অটল। অবশেষে সব আশা ত্যাগ করে অ্যানি অন্যের ঘরে চলে যায়। এখন সে বেশ সুখেই আছে। রিমনও আছে তার মতনই। অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। আর হিসেব করে কাকে কত দিলো, কার কাছে কত পাবে, ইত্যাদি, ইত্যাদি। আর মাঝে মাঝে শূন্যের দিকে তাকিয়ে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করে। অথচ সে ও সুখী হতে চেয়েছিল। সিদ্ধান্ত মতই বিয়ে করেছিল যেখানে শালা আছে এমন জায়গায়। বিয়ের পর শালাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলো তার সম্পত্তি দেখাশোনার ভার। কিন্তু দু’বছর যেতে না যেতেই বউ আর শালা মিলে চক্রান্ত করে তার সব সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়েছে। এরপর তার বউ আরেকজনের হাত ধরে আমেরিকা পাড়ি জমিয়েছে। আর তার শালা সুন্দরী বউকে নিয়ে উঠেছে তারই ফ্লাটে। আর সে রাস্তায় রাস্তায় হাঁটে। মানুষ দয়া করে খেতে দিলে খায় আর নইলে না খেয়ে থাকে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি
এরপর তার বউ আরেকজনের হাত ধরে আমেরিকা পাড়ি জমিয়েছে। আর তার শালা সুন্দরী বউকে নিয়ে উঠেছে তারই ফ্লাটে। আর সে রাস্তায় রাস্তায় হাঁটে। মানুষ দয়া করে খেতে দিলে খায় আর নইলে না খেয়ে থাকে। .............// আমার গল্পের কিছুটা রেশ শেষ অঙ্কে পেলাম ...খুব ভাল লাগলো......সোহেল ভাই আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ............
সুমন
চরিত্রগুলো জটিল থেকে জটিলতর হয়ে গেছে। রিমন তার পরিশ্রমে সম্পদ বাড়িয়েছে ভাইদেরও সে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। অত:পর ভাইদের লোভের কারনে মানসিক স্খলন, উফ ভাবতেও পারছি না, রিমন কিছু সুখ প্রাপ্য ছিল। বাস্তবতা অনেক সময়ই সূত্র মেনে চলে না...
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।