একটি বার্তা ও কতিপয় ভুল

পূর্ণতা (আগষ্ট ২০১৩)

মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস
  • 0
  • ২৮
প্রত্যেক মুসলমানের গৃহ আজ উৎসবমুখর। অনেকের ঘরেঘরে সাধ্যমত তৈরি হচ্ছে হালুয়া, রুটি। অনেকে প্রতিবেশীদের বাড়ি বাড়ি হালুয়া রুটি পৌছিয়ে দিচ্ছেন। আজ মহিমাণ্যিত্ব রজনী সব-ই-বরাত। অনেকের মতে এই রাতে প্রত্যেক মুসলমানের বরাত মানে ভাগ্য নির্ধারিত হয়। ধর্মভীরু মুসলমানগণ এই রাতে নফলনামাজ আদায় ও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে পুরনো পাপ থেকে মুক্তির ফরিয়াদ জানায়।

আমি এই রাতে নামাজ আদায় করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঐ মুহুর্ত্বে আমার মোবাইলে একটি বার্তা আসে। বিছানার পাশ থেকে মোবাইলটি হাতে নিয়ে দেখি বার্তাটি এসেছে এক অপরিচিত নম্বর থেকে। বার্তায় বাংলিশে লেখা রয়েছে “আর কতকাল আমায় ঘৃণা করবে? ভালবাসার পরিবর্তে এখন তুমি আমায় অভিশাপ দাও। এই রাতে সবাই তোমার দোয়া পাবে অথচ আমি তোমার দোয়া পাবোনা। রাহাত ভাই ভালো থেকো..... বাই ডি”

বার্তাটি পড়ে আমি অবাক, বিস্মিত। আমিতো কাউকে ঘৃণা করিনা, কাউকে অভিসম্পাতেও জর্জরিত করিনি কোনদিন তাহলে কে সে যে নিজেকে অজানা কারণে অপরাধী ভাবছে। বার্তাটি ভুল নম্বর থেকে ভুলক্রমেও আসেনি। ভুল ক্রমে এলে নিশ্চয় আমার নামের সাথে নাম মিলে যেত না। আমার নামের পাশে আবার ভাই লেখা রয়েছে। তার মানে নিশ্চয় সে আমার পরিচিত কেউ। ভেবে ভেবে যখন খুঁজে পাচ্ছিলাম না সে কে তখন আমি ঐ নম্বরে কল দিই। ওপাশে দুবার রিং বাজতেই পরিচিত কণ্ঠস্বর জানান দেয় “আপনার ডায়াল-কৃত নম্বরটি এই মুহুর্ত্বে ব্যস্ত আছে, দয়া করে একটু পর আবার ফোন করুন”। তারমানে সে আমার কল কেটে দিয়েছে। কিছুক্ষণ পর আমি আবার ফোন করি তাতেও আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তিঘটে। অতঃপর বাধ্য হয়ে আমিও বার্তার দ্বারস্থ হই। বার্তার মাধ্যমে জানতে চাই “আপনি কে?”।

মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে উঠছে সময় ৩:২৪ এ.এম.। যাকে পাবার জন্য আয়োজন করে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিলাম সেই নিদ্রা-দেবী আমার সান্নিধ্য থেকে পালিয়েছে অন্য-কোন চোখে। আমার বার্তাটি পাঠানো কয়েক মিনিট পরই সেই নম্বর থেকে আবারো বার্তা আসে যাতে বাংলিশে লেখা রয়েছে “তোমার কাছের মানুষদের ভেতর যাকে সবচেয়ে বেশী ঘৃণা করো, রাত জেগোনা শরীর খারাপ হবে”।

আমার কাছের মানুষদের মাঝে আমি কাকে ঘৃণা করি? আমার সকল স্মৃতি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও এমন কাউকে পেলাম না যাকে কোন-দিন ঘৃণা করেছি। সে আবার আমার শরীর খারাপ হবে ভেবে রাত জাগতে নিষেধ করছে। হঠাৎ আমার চন্দ্রিমার কথা মনে পরল। চন্দ্রিমা আমার প্রথম প্রেম, আমার প্রথম ভালো-লাগা। যার ভালবাসা আমাকে মাতাল করে তুলেছে। আমার দিনের ২৪ ঘণ্টার প্রতিটি সেকেন্ড কাটে যাকে পাবার নেশায়। যাকে আমি লাখোবার ভুলতে চেয়েও ভুলতে পারিনি। বছর খানেক ধরে একটি ভুল বোঝাবোঝির ধরুন তার সাথে আমার মনোমালিণ্য চলছে।একটি ভুল আমাদের ভালবাসার পাপড়িতে হুল হয়ে গেঁথে রয়েছে। তাকে আমি এড়িয়ে চলছি হয়ত নিজের কাছ থেকে নিজেই পালিয়ে বেড়াচ্ছি। তার সাথে আমি কথা বলিনা, পথে তার সাথে দেখা হলেও তারদৃষ্টি থেকে যতটুকু পারা যায় নিজেকে আড়াল করে রাখি। এই বার্তাদুটো কি তার? আমিতোতাকে ঘৃণা করিনা, যাকে ভালবাসা যায়, তাকে কখনো ঘৃণা করা যায় না। বিষ ও মধু এক পাত্রে মানায় না।

আমি পুরনো অভিমান ভুলে তার নম্বরে কল দিব কিনা ভাবছিলাম। অভিমান করে থাকা কোন পুরুষের কাজ নয়। সে যদি আমার ফোন রিসিভ করে, যদি প্রশ্ন করে এতদিন কেন যোগাযোগ রাখিনি তবে কি উত্তর দিব এসব প্রশ্ন মাথায় ঘুরছিল। সাহস করে তবুও ওর নম্বরে ফোন দিলাম। মোবাইলটি কানে চাপিয়ে ধরতেই ওপাশ থেকে স্বয়ংক্রিয় কণ্ঠস্বর বলে উঠে “আপনার কাঙ্ক্ষিত নম্বরটিতে এই মুহুর্ত্বে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। দয়াকরে একটু পর আমার ফোন করুন”।

তার নম্বর বন্ধ, কেন বন্ধ, কবে থেকে বন্ধ তা আমার জানা নেই। তার মোবাইল বন্ধ থাকাতে ঐ বার্তাদুটো তার হওয়ারই সম্ভাবনার কথা বলে। তবুও আমাকে ১০০ ভাগ নিশ্চিত হতে হবে বার্তাদুটো আসলে তারই কিনা।

আমি আবার ঐ অপরিচিত নম্বরটিতে কল দিলাম। সে আবারো আমার ফোনটি কেটে দিল। তারপর বার্তায় লিখলাম “আমি সত্যের পূজারী, সত্যকেই ভালবাসি। সত্যিই বলছি কারো প্রতি আমার কোন ঘৃণা নেই। যে ঘাটে নোঙ্গর রাখা সে ঘাটের সাথে শত্রুতা চলে না। দয়া করে আপনার পরিচয় টুকু বলুন”।

কয়েক মিনিট পরই ঐ নম্বর থেকে ফিরতি বার্তা আসে। ফিরতি বার্তায় লেখা “আমার পরিচয় পেলে আপনার সব নীতি কথা উড়ে যাবে, তখন আমার প্রতি ঘৃণা আপনারআরো বাড়বে। আমি পরিচয় দিতে চাইলে আগেই দিতাম। ভালো থাকুন, শুভ রাত্রি”।

আমি তাকে কিভাবে বুঝাই কাউকেই আমি ঘৃণা করিনা। আমার কাছ থেকে ঘৃণা আদায় করার মত যোগ্যতা এখনো কেউ অর্জন করতে পারেনি। ভাবছিলাম তার মোবাইল ট্র্যাকিং করে তার পরিচয় বের করব কিনা। আমার এক বাল্য বন্ধু মোবাইল কাস্টমার কেয়ারেচাকরি করে। তাকে বললে সে হয়ত ঠিকানা বের করে দিতে পারবে। তবে কেঁচো খুড়তে গিয়ে যদিসাপ বেড়িয়ে আসে সে ভয়ে তাকেও জানালাম না। আমার বিষয় আমি নিজেই সমাধান করার সিদ্ধান্ত নিলাম।

ঐ রাতে আর কোন বার্তা আদান প্রদান হয়নি। আমি মোবাইলটি বন্ধ করে নিদ্রা-দেবীর কোলে মাথা রাখি। নিদ্রা-দেবী আমাকে নিয়ে যায় স্বপ্নের দেশে যেখানে আমি আর চন্দ্রিমা একসাথে ঘুরে বেড়াচ্ছি। আমার হাতে চন্দ্রিমার হাত। আমরা হেটে হেটে নীল সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে মত্ত হয়েছি সমুদ্র সংলাপে। চন্দ্রিমার দীঘল কালো চুলেবাতাস খেলা করে যাচ্ছে। তার রেশমি চুলের সাগরে কখনো কখনো আমি ডুবে যাচ্ছি। মনে হচ্ছিল এ স্বপ্ন নয় বরঞ্চ এটিই বাস্তব, আর আমার বাস্তবতাটুকু হলো দুঃস্বপ্নের একটি অধ্যায়।

।।দুই।।

পরদিন আমার ঘুম ভাঙ্গে অনেক বেলা করে । ঘুম থেকেউঠে ফ্রেশ হয়ে মোবাইলটি চালু করি। মোবাইলটি চালু হতেই সেখানে ভেসে উঠে ওয়ান আন-রিডএস এম এস। বার্তাটি খুলে দেখি সেই অপরিচিত নম্বর থেকেই বার্তা এসেছে যাতে লেখা “রাহাত ভাই, তুমি না সত্যের পূজারী তাহলে তুমি আমাকে চিনেও না চেনার ভান করছ কেন?” বার্তাটি পড়েই আমি রেখে দিই। ফিরতি বার্তা দেওয়ার প্রয়োজনবোদ করিনি।আমি তাকে এখনো চিনতে পারিনি এটি সে বিশ্বাস করবে না। এভাবেই আমার কাছ থেকে সারাটিদিন পালিয়ে যায়। আমিও হয়ত পালিয়ে থাকি অপরিচিত নম্বরটির কাছ থেকে। সারাদিন মোবাইলটির প্রতি আমার তীক্ষ্ণ নজর ছিল, আশা ছিল হয়ত সেই নম্বর থেকে দিনে আবারো বার্তা আসবে। মোবাইলটি যখনই ভেজে উঠত তখনই তাকে হাতে নিয়ে চেক করেছি নতুন বার্তা এলো কিনা। নতুন বার্তা অবশ্য এসেছে অনেক যা সবগুলোই মোবাইল কোম্পানীর বিভিন্ন অফার সম্বলিত। কাঙ্ক্ষিত কোন বার্তা আসেনি। রাতে আমি তার বার্তার জবাব দিই, সেই পুরাতন কথাগুলোই যেন আমি নতুনভাবে লিখি “আমি অবশ্যই সত্যের পূজারী আর আমি সত্য পথেই আছি। পৃথিবীর কাউকে আমি ঘৃণা করিনা, যে মনে ভালবাসার ডিঙ্গি ভাসে সে মনে ঘৃণা জন্মাতে পারেনা। আমি ব্যাকুল হয়ে আছি আপনার পরিচয় জানতে। আমাকে আপনার পরিচয় জানিয়ে ধন্য করুন”।

ঘড়ির কাটায় তখন রাত একটা ছুঁয় ছুঁয়। এতো রাতে সেই নম্বর থেকে ফিরতি বার্তা পাব আশা করিনি। আমার আশার বুকে ছুড়ি মেরে ফিরতি বার্তা চলেএলো আমার মোবাইলে। ঐ নম্বর-ধারী কি ঘুমায় না?

সে ফিরতি বার্তায় লিখেছে, “এত রাতেও তুমি ঘুমাওনি, সব ঠিক আছে?” আমার প্রতি দেখছি তার অনেক খেয়াল, সব ঠিক আছে জানতে চেয়ে সে কি বুঝাতে চাচ্ছে তা আমার বোধগম্য হলো না। যতগুলো বার্তা পেয়েছি তাতে বার্তায় আসা কথাগুলোর ধরন দেখে আমি প্রায় নিশ্চিত এটি চন্দ্রিমার কাজ। চন্দ্রিমা আমার প্রতি যতটুকু মনোযোগী ছিল এই বার্তা প্রেরক আমার প্রতি ঠিক ঐরকম মনোযোগী। তাই আমি এবার বার্তা পাঠালাম একটু অন্যভাবে যেন উত্তরে এটি চন্দ্রিমা কিনা তা ধরতে পারি। বার্তায় লিখলাম

“তুমি কি সেইআমার প্রাণের মুকুল,

তুমি কি সেইআমার টবে ফোটা ভুল ফুল?

তুমি কি দেবদাসেরসেই পার্বতী?

তুমি কি আঁধাররাতে একটি তারার দুর্গতি?”

কিছুক্ষণ পরই সে নম্বর থেকে আরেকটি বার্তা আসে যাতে লেখা “হা হা হা, তোমার লেখা পড়ে আপনি কেবলই হাসছি। তুমি যাকে ভেবে এই বার্তাটি পাঠিয়েছো আমি সে নই। আমি দুঃখিত তোমাকে বিব্রত করার জন্য। আমি প্রথম যে বার্তা তোমাকে পাঠাই তাতেই আমার পরিচয় দেওয়া আছে। ভালো করে দেখো মেসেজের শেষে লেখা রয়েছে “ডি” ।

আমার মাথা ভন ভন করছে। যেন আমি শূণ্যতায় ঝাঁপ দিয়েছি। আমি কাকে ভেবে বার্তা দিয়ে আবার কোন জালে জড়িয়ে গেলাম। ভেবে পাচ্ছিলাম না কে, কে সে? সে কেন আমার সাথে এমন আচরণ করছে? আমি আবার ঐ নম্বরে কল দিই, কিন্তু তিনি আমার কল রিসিভ করার প্রয়োজনবোদ করেননি। সে লিখেছে তার নামের প্রথম অক্ষর ডি। আমি আমার সমস্ত পৃথিবীরবুকে ডি দিয়ে নাম শুরু হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান চালাই। খুঁজতে খুঁজতে একসময় আমি থেমে যাই। আমার মনে পরে ডি নাম দিয়ে শুরু হওয়া আমার দুটো বোন রয়েছে। আমার চাচাতো বোন দীপ্তি ও দীপা। যাদের সাথে বহুদিন আমার কোন যোগাযোগ নেই। তাদের সাথে আমার যোগাযোগ রাখা হয়ে উঠেনি। আমার বোন দুটি হঠাৎ করেই আমার পর হয়ে যায়। তারা তাদের প্রিয় মানুষের সান্নিধ্য পেতে, অপূর্ণ জীবন থেকে পূর্ণতার আশায় ভুলে গিয়ে পিতা মাতার ভালবাসা, ভুলেগিয়ে ভাই বোনের ভালবাসা, ভালবাসার মানুষের হাত ধরে নিজেরাই নিজেদের নীড় সাজিয়েছে। এ অপরাধে আমার চাচা চাচীও তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়েছেন। এই বার্তাগুলো কি তাহলে তাদের কোন একজনের? একজনের হলে কার দীপ্তির না দীপার? আমি ভাবি হয়ত এ কাজ দীপ্তিরই হবে। কিন্তু তারা তো আমাকে ভাইয়া বলে সম্ভোধন করত ভাই নয়। আমার ভাবনাটুকু সরিয়ে রেখে ঐ নম্বরে আবার বার্তা পাঠালাম। এবার লিখলাম “তুই দীপ্তি? কিন্তু দ্বীপ্তিতো আমাকে ভাই নয় ভাইয়া ডাকে”।

আমি ফিরতি বার্তার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম, কিন্তু কোন বার্তা এলো না। বার্তার অপেক্ষায় থেকে থেকে আমি ঐ রাতে ঘুমিয়ে যায়। আমার দুচোখের পাতা বন্ধ পেয়ে স্বপ্নেরা আমার মস্তিষ্কে আশ্রয় নেয়। স্বপ্নে দেখি দুর থেকে কারা যেন আমাকে “ভাইয়া ভাইয়া” বলে ডাকছে কিন্তু আমি তাদের দেখতে পারছিনা, চিনতে পারছিনা তাদের মুখ। “ভাইয়া ভাইয়া” ডাকটি যেন প্রতিধ্বনি তুলে পাহাড়ের ওপাশে হারিয়ে যাচ্ছে। কারা যেন আমার হৃদয় খুঁড়ে সেখানে পাথর পুঁতে দিচ্ছে। আমি কোন প্রতিবাদ করতে পারছিনা। আমার মুঠোবন্ধি কারো হাতকে কারা যেন কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। “কে? কে?” চিৎকার করে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়।

।।তিন।।

ভেঙে যাওয়া ঘুমে আমি মোবাইলটি হাতে নিই। নতুন কোনবার্তা এলো কিনা আমি চেক করে দেখি। কিন্তু কোন নতুন বার্তা আসেনি। মোবাইলের ডিজিটালস্ক্রিনে ভেসে রয়েছে নিঃসঙ্গ সময় ৪:৪৭ এ.এম.। এখন আর আমার ঘুম আসবেনা। তাই বিছানা ছেড়ে ওজু করে ফজরের নামাজ আদায় করতে বসি। নামাজের পর আমার বোন দুটোর মঙ্গল কামনায় মোনাজাত করি।

মোবাইলটি হাতে নিয়ে ঐ নম্বরে আবার বার্তা পাঠালাম “জবাব নাই কেন?” কিছুক্ষণ পরই ঐ নম্বর থেকে বার্তা আসে, অশ্রুসিক্ত বার্তা যাতে লেখা “রাহাত ভাই, তুমি আমাকে ভুলে গেছ। তুমি তোমার ছোটবোনটিকে ভুলে গেছ। কেন আমাকে ভুলে গেলে? আমি আমার কান্না থামাতে পারছিনা। যে তোমাকে ভাইয়া ডাকত সে তোমার মনে রয়েছে কিন্তু যে তোমাকে ভাই ডাকত সে আর এখন তোমার মনে নেই। তোমার দু’পাকে তুমি ভুলে গেছ ”।

এখন আমার আর কোন শন্দেহ নেই এটি দীপার কাজ। দীপাকে আমি আদর করে ডাকতাম দু’পা। মানুষ যেমন দু’পা ছাড়া স্বাভাবিক ভাবে চলতে পারেনা আমিও যেন দীপাকে ছাড়া চলতে পারতাম না। আমার সহোদর কোন বোন না থাকায় দীপ্তি ও দীপার প্রতি আমার আদর একটু বেশীই ছিল। দীপা সবার ছোট হওয়ায় তার প্রতি ছিল আমার মাত্রাহীন শ্নেহ ও ভালবাসা।

দীপা কি আমাকে ভাই বলে সম্ভোধন করত? হয়ত, স্মৃতিআজ আমার সাথে প্রতারণা করছে। সত্যিই কি আমি দীপাকে ভুলে গিয়েছিলাম?

দীপা প্রণয়ের নেশায় আসক্ত হয়ে যখন আমাদের কাছ থেকে দুরে সরে যায় আমি তখন জানতাম না এর কিছুই। আমি যে ঢাকা শহরের নিয়মতান্ত্রিক জীবনে বন্ধী। যখন জানতে পারলাম তখন অনেক চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারিনি। তবে আমার মনের ভেতর আশা ছিল সে একদিন আমার সাথে যোগাযোগ করবেই।

ভালবাসা নামক নেশার মাতালতা এমনই যা একবার কাউকে আসক্ত করে তখন কেবল সে তার ভালবাসাটুকুই পেতে চায়। কাঙ্ক্ষিত ভালবাসার কাছে হার মেনে যাই ভাই বোনের অকৃত্রিম ভালবাসা। কিন্তু ভালবাসার মানুষকে কাছে পেলেও ভাইয়ের প্রতি পরিবারের প্রতি তাদের টান থেকে যায়। তারা চায় পরিবার তাদের ভুল সিদ্ধান্তকে মেনে নিক, কিন্তু পরিবার সামাজিকতার শৃংখলতার কারণে তাদের এই আবেগের বিয়ে মেনে নিতে রাজি হয়না।

রক্তের বাঁধন কখনো কি ছিন্ন করা যায়? দীপাও আমাকে ভুলতে পারেনি হয়ত প্রতিদিনই মোবাইল হাতে নিয়ে ভেবেছে আমাকে ফোন করবে, আমার সাথে যোগাযোগ করবে। কিন্তু সে যে ভেবে রেখেছে তাকে আমি ঘৃণা করি। তাই সে ফোন করে ঘৃণার পরিমান আরো বাড়াতে চায়নি। কিন্তু বোনটি জানেনা ভাই কখনো বোনকে ঘৃণা করতে পারেনা।

মোবাইলটি হাতে নিয়ে আমি দীপাকে বার্তা পাঠাই “দীপা, নাগরিক ব্যস্ততায় আমি হয়ত তোকে সত্যিই ভুলে গিয়েছিলাম। আমায় ক্ষমা করিস বোন আমার। তোর প্রতি আমার কোন ঘৃণা নেই, বোন ভুল করলে ভাই কি তাকে ভুল করেও ঘৃণা করতে পারে?"
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এশরার লতিফ ভালো লাগলো গল্পটি, প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বেশ একটা উৎকণ্ঠা তৈরী হয়েছিল।
সূর্য গল্প খুব ভালো হয়েছে ফেরদৌস। নগর জীবনের ব্যস্ততায় সেল ফোন যখন দূরত্ব ঘুচিয়ে দেয়, সেখানে স্বাভাবিক সম্পর্কগুলো নবায়ন না হলে এমন হয়েই থাকে।
মিলন বনিক খুব সুন্দর গল্প...একটা পারিবারিক বন্ধন ব্যাস্ততার কারনে কিভাবে দূরে সরে যায় তা স্পষ্ট...ভালো লাগলো...শুভকামনা....
ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন মনে ক্রিয়ে দিয়েছেন- আমরা আমাদের আসল কাজ ভুলে থেকে নকলটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করে আত্মতৃপ্তি ভোগ করি। ভাল লিখেছেন, ভাল লেগেছে। শুভেচ্ছা রইল।
রফিক আল জায়েদ অসাধারণ একটি পারিবারিক বন্ধনের কথা মনে করে দিলেন। ভাল থাকবেন।

১৮ মে - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪