গত রাতে ভীষণ ঝড় হয়েছিল। ঝড়ের প্রচণ্ড প্রকোপে আমার সুন্দর বাগানটা তছনছ হয়ে গেছে। গোলাপের একটা ডাল ভেঙ্গে গেছে। ওতে একটা কলি ছিল। এখন তা ফুল হয়ে ফুটে আছে। ঝড়ের প্রচণ্ডতা গোলাপের স্বকীয় বিকাশে এতটুকু বাধা হয়ে দাঁড়াতে পাড়েনি।
তুমি কেমন আছ ? প্রাত্যহিক জীবনের টানা-পোড়েনে ব্যতিব্যস্ত এই তুমি’ও কি পারছো এমন করে নিজেকে উন্মুখ রাখতে ? না পারলে ক্ষতি নেই। অসহায় তুমি। দুর্বল তুমি। অবলা তুমি। তোমাকে ধিক্কার জানায় পুরুষ। অথচ রাতের নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে সেই কাছে টেনে নেয় তোমায়। কি আশ্চর্য সৃষ্টি এই আশ্রাফুল মখলুকাত। বিজ্ঞানের ভাষায় যার গালভরা নাম homo sapiens। কতকগুলো সুন্দর-অসুন্দর অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সমষ্টিগত উপমা ‘মানুষ’। তাইতো প্রশ্ন জাগে, কে মানুষ ? আমি না তুমি ? কিন্তু, আমি তো মানুষ নই। আমি তো বড়জোর একজন পুরুষ মাত্র। তোমাকে সুন্দরের রূপে অসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবার জন্য আমার আছে এক জোড়া লোভী চোখ। তোমার কোমল শরীরটাকে দলিত-মথিত করার জন্য আমার আছে এক জোড়া সর্বগ্রাসী হাত। তোমার চিরন্তন নারীত্বের অহংকারকে ভুলন্ঠিত করবার জন্য আমার আছে উদ্ধত পৌরুষ। তাইতো প্রশ্ন জাগে, বুকের ভেতর যার অহর্নিশ কামনা তড়পায়, সে কেমন করে মানুষ হতে পারে ! কেননা মানুষ তো সেই, যার বুকে আছে মন। আর মন মানেই মানবিক ভালবাসার আশ্রয়।
আচ্ছা সত্যি করে বল তো, তুমি কে ? তুমি নারী, সে জানি। কিন্তু, আমার চির আরাধ্য মানুষ তো ! যদি তাই হবে, তবে কেন আমার মুখোমুখি হতে তোমার এত ভয় ? কেন আমি চাইলেই তোমায় কাছে টানতে পারবো না। অবলীলায় মুখ রাখতে পারবো না তোমার বুকে। আমার উন্মাতাল স্পর্শে কেন অমন করে শিহরিত হবে তুমি ? বুকের ভেতর শিরশির করে উঠবে তোমার। উত্তর একটাই। তুমি নারী এবং আমি পুরুষ বলে। কিন্তু, আমি তো পুরুষ হতে চাইনি। এও চাইনি আজীবন নারী হয়ে থাকো তুমি। বরঞ্চ আমি বরাবরই চেয়েছি একজন মানুষ হিসেবে আরেকজন মানুষের কাছাকাছি হতে। মানবিক ভালবাসায় পরস্পরকে জড়িয়ে নিতে। কিন্তু পারিনি। বলতে পারো, এ ব্যর্থতা কার ? তোমার ? আমার ? না স্রষ্টার ? আমি সত্যিই জানিনা। সে কারণেই বোধকরি আমি কোনদিনই তোমার বন্ধু হতে পারবো না। বলাবাহুল্য, আমি তোমাকে চিনি না। কিন্তু, তোমাদের চিনি। তোমাদের চোখে আমি শুধুই একজন পুরুষ। আর তুমি, একজন নারী ছাড়া আর কিছুই হতে পারোনি।
আচ্ছা তুমি কি পারো না, চিরন্তন নারী’র খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে শুধুই একজন মানুষ হয়ে উঠতে ? যদি পারো, তবে জেনো , দু’হাত বাড়িয়ে আছি। কে জানে তোমার উদার স্পর্শে হয়তো আমিও একদিন সত্যিকারের মানুষ হয়ে উঠবো। আর সেদিন নিশ্চয়ই পরস্পরের বন্ধু হতে আমাদের আর কোন বাধা থাকবে না। কেননা এও তো সত্যি, একজন মানুষ মাত্রই আরেকজন মানুষের বন্ধু হতে পারে।
ধন্যবাদান্তে, বন্ধু তোমার
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রনীল
খুব সিরিয়াস একটি বিষয়ে লিখেছেন। কিছু জায়গা পরস্পর বিরোধী মনে হয়েছে। নারীত্ব/ পুরুষত্ব অস্বীকার করে শুধু একজন মানুষ হওয়া কি সম্ভব! ওই ব্যাপারগুলো আছে বলেই তো একটা ডেফিনিশন খাড়া করানো যাচ্ছে। পুরুষত্ব অস্বীকার করে শুধু মানুষ হবার প্রসঙ্গে কিছুটা চমকে গিয়েছি। পরে অবশ্য থিমটা ধরতে পেরেছি। কি করবো বলেন- সময়টা এমনই যে ... :P সুমন ভাইয়ের লেখার জন্য একটা প্রতীক্ষার ব্যাপার সবসময় থাকে, তা তিনি যতোই পাঠককে অগ্রাহ্য করেননা কেন ...
অদ্ভুত হলেও সত্যি, সেই ছোটবেলা থেকে আজোবধি আমি কখনই কোনো মেয়ের বন্ধু হতে পারিনি । কেননা কোনো মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হলেই কি করে জানি মেয়েটা আমার ছোট বোন হয়ে যায়। আবার যারা আমায় বড় ভাই ভাবতে নারাজ তাদের চিন্তাধারা দেখে মনে হয় পৃথিবীতে আমি ছাড়া আর কোনো পুরুষ নেই, যার সাথে প্রেম করা যায় । তাই ধরে নিয়েছি, আমি কোনো মেয়ের বন্ধু হবার যোগ্য নই ? সেই কারণেই একটা গোপন দুঃখবোধ থেকে এই লেখার অবতারণা । আর আমিও একজন লেখক বটে, সেই আমার লিখা যে তোমরা এত মমতা দিয়ে পড়, এরপরেও তোমাদের অগ্রাহ্য করা মানে তো নিজেকেই অস্বীকার করা । আসলে দীর্ঘকালীন মায়ের অসুস্থতা হেতু মনের অবস্থা খারাপ থাকায় এখন আর লিখতে পারিনা ভাই । আমার এই অপারগতার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী ।
সূর্য
ঝড়ের রাত নাকি দীর্ঘ হয়, হ্যা হয় হয়ইতো নইলে ডাল ভা্ঙ্গা কলি কেমন করে ফুটে ফুল হয়? ঝড় মানেই দূরত্ব আর দূরত্ব মানেই তো সময়। এই সময় বয়ে চলে একদিন ঠিকই হোমো সেপিয়েনগুলো নারী পুরুষ থেকে মানুষ হয়ে উঠবে। শুধু এই ঝড়ের সময়টুকু পার হতে যতটুকু দেরি। সুন্দর সাবলীল। যদিও তোমাকে পুরো পাইনি তবু না পাওয়ার থেকে অল্পই তো অনেক বেশি।
মিলন বনিক
কেননা মানুষ তো সেই, যার বুকে আছে মন। আর মন মানেই মানবিক ভালবাসার আশ্রয়।...সুমন ভাই..সত্যিকারের মানুষের চমৎকার ভাবনা...এমন ভাবনাগুলো নিয়ত ভাবাই...খব ভালো লাগলো....
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।