অন্যরকম ভালবাসা

ভালবাসি তোমায় (ফেব্রুয়ারী ২০১৪)

বশির আহমেদ
  • ১৫
আজ অফিসের ঠিকানায় আমার নামে কুরিয়ার সার্ভিস যোগে একটা চিঠি এসেছে । চিঠির উপরে প্রেরক হিসেবে কারো নাম ঠিকানা নেই । পেছনে দেখলাম লেখা রয়েছে পাবনা । মনে করলাম গত কয়দিন আগে অফিসের কাজে পাবনা গিয়েছিলাম বোধ হয় পাবনা অফিস থেকে কেউ পাঠিয়েছে । অফিসের কাজের ব্যস্ততায় চিঠিটা যে খুলে পড়বো সে ফুরসত পাচ্ছি না । সারাদিন চিঠিটা ড্রয়ারেই পড়ে ছিল । অফিস শেষে বাড়ী ফেরার পথে চিঠিটা চোখে পড়লো । চিঠির খামটা খুলে প্রেরকের নামটা দেখে আমি আনন্দিত হলেও পরে পড়লেও চলবে এই ভেবে চিঠিটা বাসায় নিয়ে এলাম । বাসায় ফিরে কাপড় ছেড়ে হাত মুখ ধুয়ে চা এর কাপে চুমুক দিতে দিতে চিঠিটা খুললাম ।

আজ থেকে ছাব্বিশ সাতাশ আটাশ বছর আগের কথা আমি তখন একটি মফস্বল কলেজে অধ্যপনা করি । আমারই এক সহকর্মী জনাব তারেক প্রানীবিদ্যার প্রভাষক । তারেক সাহেব ছোটখাট গড়নের বেশ চটপটে মানুষ । সদ্যপ্রতিষ্টিত নতুন কলেজ তাই শিক্ষকদের থাকার জন্য কোন হোষ্টেল বা ডরমেটরী নেই । এলাকার গণ্যমান্য কয়েকজনের বাড়ীতে এক এক জন শিক্ষককে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে । ব্যক্তিগত ভাবে আমার আপত্তি থাকা সত্বেও কলেজের স্বার্থে বিষয়টা মেনে নিয়েছি । কারণ কলেজটি আমার গ্রামের বাড়ী হতে মাত্র ৫/৭ কিলোমিটার দুরে সদ্য প্রতিষ্টিত একটি থানা সদরে অবস্থিত । এলাকার স্বার্থে আমার আপত্তিটা তেমন জোড়ালোও ছিল না । প্রতি বৃহস্পতিবার বিকেলে বাড়ী চলে আসি ও শনিবার সকালে বাড়ী থেকে গিয়ে উপস্থিত হই ।

বেশ কয়েক মাস এভাবেই চললো । একদিন তারেক সাহেব আমায় ডেকে বললো- জহির ভাই লজিং থেকে আমার পক্ষে কলেজে শিক্ষকতা করা সম্ভব নয় ? তারেক সাহেবের স্থান হয়েছিল কলেজ কমিটির সেক্রেটারী ও এলাকার মেম্বার জনাব আফতাব খন্দকারের বাড়ীতে । অনেক দিন ধরে কথাটা আমার মনে ও ঘোরপাক খাচ্ছিল । কারন এ বয়সে এসে ছোট ছোট স্কুল পড়ুয়া বাচ্ছাদের পাঠদান করা আর অন্যের ইচ্ছের উপর খাওয়া দাওয়া করা আমার ধাতে সই ছিল না । আমি ভাবলাম তারেক সাহেবের বিষয়টাও বোধ হয় আমারই মত হবে । কিন্তু তার ঘটনাটি শুনেতো আমার আক্কেল গুড়ু–ম । সেই তারেক সাহেবের সাথে গত কিছুদিন আগে পাবনার কাশিনাথপুর বাস ষ্ট্যান্ডে দেখা । তখন সন্ধ্যা হয় হয় । পাশের মসজিদ হতে আজান ধ্বনি কানে আসছে । আমি কাজিহাটার মাসুমদিয়ায় কাজ শেষে ৩৫ কিলোমিটার পথ সিএনজিতে এসে পাবনার বাসের জন্য কাশিনাথপুর স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছি । রাস্তার দুই পাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে কাশিনাথপুর এসে পড়েছি । দুদিকে যতদুর চোখ যায় সবুজ আর সবুজ বনবনানী । সবুজ ফসলের মাঠে গরু ছাগল চড়ে বেড়াচ্ছে । গরুর ছোট ছোট বাছুর গুলো লেজ তুলে এদিক ওদিক ছুটোছুটি করছে । দুরন্ত এক ঝাক ছেলে ছোট্ট নদীর জলে লাফঝাফ দিচ্ছে । সেদিন সকাল থেকেই রাস্তায় কোন বাস ছিল না সে কথাটা ভুলেই গিয়েছিলাম । প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার একটা সুখানুভুতি নিয়ে কখন যে কাশিনাথপুর এসে পেৌছেছি বুঝতেই পারিনি ।

কাশিনাথপুর বাস স্ট্যান্ডে এসে দেখি সকালের মত এখনো কোন যানবাহন রাস্তায় নেই । যানবাহন না পাওয়ায় সকাল বেলা বাধ্য হয়ে পাবনা থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার পথ নছিমন নামক এক ধরনের যান্ত্রিক বাহনে করে কাশিনাথপুর এসে সেখান থেকে সিএনজি চড়ে মাসুমদিয়া গিয়েছি । সে দিন ছিল বৃহত্তর এক রাজনৈতিক দলের রাজশাহীতে বিভাগীয় জনসভা । দলীয় নেতাকর্মীরা সকাল থেকে সকল যানবাহন রাজশাহী নিয়ে গিয়েছে বলে জানা যায় । আমি বাস বা কোন নছিমনের আশায় চাতক পাখীর মত পথ চেয়ে অপেক্ষা করছি । কারন যে করেই হউক আমাকে যে পাবনা পেৌছাতেই হবে । একেতো অচেনা অজানা নতুন জায়গা তা ছাড়া কাল সকাল সকাল আবার আমাকে ইশ্বরদী যেতে হবে । হঠাৎ কানে বাজলো এই জহির ভাই- জহির ভাই ,আমি ভাবলাম আমাকে এখানে অচেনা জায়গায় কে আবার ডাকবে তাই ডাক শুনেও আমি চুপচাপ দাড়িয়ে থাকলাম ।কিছুক্ষন পর পেছন থেকে কে একজন আমার সার্ট টেনে ধরে বললো জহির ভাই আপনি এখানে ?

আমি ভুত দেখার মত চমকে গিয়ে দেখলাম মুখভতি কালো কুচকুচে শশ্রুমন্ডিত একভদ্র লোক আমার মুখ পানে চেয়ে হাসছে । আমি তাৎক্ষনিক চিনতে পারলাম না তবে মনে হচ্ছে লোকটা চেনাজানা কেউ। লোকটি বললো জহির ভাই আমি তারেক । সেই যে কলেজে এক সাথে ছিলাম । আমি নিজকে মনে মনে ধিক্কার দিয়ে বললাম আরে তারেক সাহেব আপনি ? এভাবে এখানে আপনাকে দেখবো কল্পনাও করিনি । আপনার বাড়ী কি এখানে ?

হ্যা জহির ভাই । আমি এ এলাকারই ছেলে । বেড়া উপজেলায় আমার বাড়ী এখান থেকে দশ কিলোমিটার পুব দিকে । আপনি এখানে কোত্থেকে এলেন আর এখন যাবেনই বা কোথায় ?

আমি অফিসের কাজে পাবনা এসেছি । এখন কাজিরহাটে কাজ শেষে পাবনা ফিরে যাবার জন্য বাসের অপক্ষো করছি ।
আজতো কোন গাড়ী পাবেন না । স্থানীয় সব ধরনের গাড়ী নিয়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা রাজশাহী চলে গেছে । যাক ভালই হলো আপনাকে অনেক দিন পর পাওয়া গেল তাও আবার আমার বাসার কাছে । আপনার সাথে আবার কোন দিন দেখা হবে এমন আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম । আপনি হয়তো শুনে থাকবেন আমি কলেজ থেকে এসে গ্রামীন ব্যাংকে জয়েন করেছি । প্রথমে আপনাদের উপজেলাতেই পোষ্টিং হয়েছিল । আমি কিন্তু আপনাদের বাড়ীও গিয়েছিলাম । সেএক মজার ঘটনা । আপনাদের গ্রামে ঢোকেই এক ভদ্র লোকের সাথে দেখা । উনার কাছে আপনার কথা জানতে চাইলাম ।

তিনি বললেন কোন জহিরের কথা বলছনে ?

আমি বললাম কাল করে যিনি বৈয়াম কলেজে প্রভাষক ছিলেন । তিনি কোন জবাব না দিয়ে আমাকে নিয়ে বাড়ীর সামনে এসে হাজির হলেন । তিনি তার মেয়ে কে ডেকে বললেন যা মা ঘরের দরজাটা খুল । তিনি আমায় টানতে টানতে ঘরে নিয়ে গেলেন । ঘর থেকে বাইরে গিয়ে মেয়েকে কি যেন বলে ফিরে এসে আমার মুখোমুখি বসলেন ।

বসইে তিনি জানতে চাইলনে- আপনি জহির কে চিনেন কিভাবে ? আপনি কি তার সহপাঠি ?

আমি বললাম আমি উনার সথে একই কলেজে অধ্যাপনা করতাম । এখন উনি কোথায় আছেন তা জানি না । উনার কাছ থেকে গ্রামের নামটা শুনেছিলাম । থানাসদরে এসে যোগদান করে গ্রামের নামটি শুনেই উনার খুজে এখানে আসা ।

তিনি বললেন আপনার দেশের বাড়ী কোথায়?

আমি বললাম- পাবনা ।

তিনি বললনে আপনি ঠিক জায়গায়ই এসেছেন । আমি তার বড় ভাই । তবে এই নামে গ্রামের অনেকেই তাকে চিনবেনা । তার ডাক নামেই আশপাশের দশ গ্রামের সবাই চেনে ।

আপনার ভাইয়ের অন্তরিকতা আর আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে তবেই থানাসদরে ফিরে এসে ছিলাম ।

আরে রাস্তায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে বকবক করছি । চলুন ।

আমি বললাম কোথায় ?

আমার বাসায় । আমার বাসা এখান থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ । ঐযে পশ্চিম পাড়ে বাজারের কাছে বড় দালানটি ওখানে আমার অফিস । আমি অফিস শেষে বাসায় ফিরছি । আপনাকে দেখতে পেয়ে থমকে দাড়িয়েছি । প্রথম মনে হয়েছিল আমি ভুল দেখছি নাতো ? কাছে এসে বুঝলাম না আমার ভুল হয়নি । চলুন চলুন ।

আমাকে যে পাবনা ফিরতেই হবে । কাল আবার পাকশী এবং ঈশ্বরদী যেতে হবে ।

এখন প্রায় সাড়ে সাতটা বেজে গেছে । আজ আর কোন গাড়ী পাবেন না । খুব ভোরে আপনাকে আমি গাড়ীতে তুলে দেবো । সকাল সাতটার মধ্যেই আপনি পাবনা পৌছে যাবেন । কথা বলে লাভ নেই আজ আর আপনাকে যেতে দিচ্ছি না । চলুন আমার বাসায় সেখানে আপনার জন্য আরও চমক অপেক্ষা করছে ।

এত দিন পর দেখা তার উপর গাড়ীর পাবার কোন সম্ভাবনা নেই, অচেনা নতুন জায়গা, তারেক সাহেবের জোড়াজুরি তাই মানা করা গেল না ।

বাসস্ট্যান্ড থেকে একটু পুবপাশে নতুন মার্কেটের পেছনেই তারেক সাহেবের বাসা । বাড়ীর ভেতর ঢোকার মুখে একটি বাঁশের গেইট । ভেতরে সুন্দর ফুলবাগান মাঝদিয়ে চলাচলের রাস্তা । একতলা দু ইউনিটের বাড়ী মাঝ বরাবর সিড়ি । এলাকাটি শহর না হলেও চারটি রাস্তার সংযোগ স্থল ও একটি বিশালহাট এর কারনে দিনেদিনে জায়গাটি শহরের রূপ পাচ্ছে । নক করতেই ঘরের দরজা খুলে দিল একটি মেয়ে । তারেক সাহেব বললেন তোমার মাকে ডাকদাও । বলেই নিজেই তার স্ত্রীর নাম ধরে ডাকতে শুরু করলনে- নাসরীন ও নাসরীন দেখে যাও কাকে নিয়ে এসেছি ? কই গেলে এদিকে এ সো । বলতে বলতে তার স্ত্রী এসে হাজির । আমাকে দেখেই সে দৌড়ে এসে আমার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে শুরু করে দিল । আমি বিব্রত হয়ে পরলাম ।

সে উঠেই বললো স্যার ক্যামন আছেন ? বুঝতে পারছি আপনি আমায় চিনতে পারেন নি ? অনেক মোটা হয়ে গিয়েছি তো । আমি বৈয়াম গ্রামের আলতাফ মেম্বারের মেয়ে নাসরীন স্যার । এবার নিশ্চয় চিনতে পারছেন ।

আমিতো বিষ্ময়ে হতবাক । নাসরীন কলেজে শিক্ষকতা জীবনে তারেক সাহেবের লজিং বাড়ীর মেয়ে । যার অত্যাচারে তারেক সাহেবকে লজিং বাড়ী ছেড়ে কলেজের একটি কক্ষে হোস্টেল বানিয়ে আমাকে নিয়ে উঠে এসেছিল । তারপরও প্রতিদিন নাসরীন কলেজ হোষ্টেলে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা তারেক সাহেবের কাছে বসে থাকতেন ।কোন কোন দিন তারেক সাহেবকে নিয়ে সরিষা, ভুট্টা, আলু,আখ ক্ষেতের আলধরে হেটে বেড়াতেন । কখনো বা আখ ক্ষেতের আড়ালে হারিয়ে যেতেন ঘুরে বেড়াতেন আপন মনে । তাদের এসব কীর্তিকরাপ দেখে গায়ে কানাঘুসা শুরু হলো ।একদিন আমি ঠাট্টার ছলে বললাম-তারেক সাহেব সবার সামনে এমন কৃষ্ণলীলা না করে মেয়েটাকে বিয়ে করে ফেললেই তো লেঠা চুকে যায় ।তারেক সাহেব শুধু মুচকি হাসছিলেন । সকাল ছয়টায় নাসরীনের ডাকে আমার ঘুম ভাঙ্গলো । আমি কাপড় পড়ে রেডি হতেহতে নাসরীন আমার সামনে নাস্তা নিয়ে হাজির । এত সকালে নাস্তা করার ইচ্ছে না থাকা সত্বেও নাসরীনের মনরক্ষার্থে কিছু মুখে দিয়েই বেড়িয়ে পড়লাম ।

বাসস্ট্যান্ড পৌছাতেই একটা খালি বাস পাওয়া গেল । সকালের স্নিগ্ধ নরম হাওয়া জানালা দিয়ে মুখে এসে লাগছে । বাস ছুটছে মনে ঘুরপাক খাচ্ছে কত গান,কত কবিতা্ । আকাশে থোকা থোকা সাদা মেঘ উড়ে উড়ে যাচ্ছ–‘নীল আকাশে কে ভাসালো সাদা মেঘের ভেলা’---পথের দুপাশে গাঢ় সবুজ ছোটবড় নানা বৃক্ষ রাজি । সেই সাথে অতীত দিনের অনেক স্মৃতি মনের পর্দায় ভীর করতে লাগলো । নাসরীন তখন সবেমাত্র নবম শ্রেণির ছাত্রী । ইচরেপাঁকা মেয়ে এ বয়সেই তারেক সাহেব কে প্রেম নিবেদন করতো । এমন কি ঘুম পাওয়ার ছল করে তারেক সাহেবের বিছানায় শুয়ে পড়ে ঘুমের ভান করে পরে থাকতো । এতে তার অভিবাবকদেরও কোন মাথাব্যথা কিংবা মেয়ের জন্য দুশ্চিন্তা হতো না । কখন কোন দুর্ঘটনা ঘটে যায় এ ভয়ে তারেক সাহেবের অনুরোধে আমি অনেকটা জোর জবরদস্তি করেই তারেক সাহেবকে তাদের বাড়ী থেকে হোস্টেলে এনে উঠিয়েছিলাম । এর পর মেম্বার সাহেব তারেক সাহেবের কাছে তার মেয়েকে বিয়ে দেবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল ।তারেক সাহেব বিয়ে করতে না চেয়ে কলেজ ছাড়তে চাইলেন । মেম্বার সাহেব এলাকার প্রভাব শালী ও কলেজ কমিটির সেক্রেটারী হওয়ায় তারেক সাহেব কলেজ ছাড়তে পারছিলেন না । তাই বাধ্য হয়ে একদিন তাকে নিয়ে আমার গ্রামের বাড়ী বেড়াতে যাবার ছল করে ঢাকায় নিয়ে এসে দেশে ফিরে যাবার ব্যবস্থা করেছিলাম । কিছুদিন পর আমিও কলেজ ছেড়ে চলে এসেছিলাম ।বর্তমান চাকরিতে যোগদানের পর একদিন তারেক সাহেব পল্টনে এসে আমার সাথে দেখা করে ছিলেন । সেটাও আজ থেকে পচিশ বছর আগের কথা ।

চিঠিতে তারেক সাহেব নাসরীনকে কি ভাবে বিয়ে করলেন তার বিস্তারিত বর্ননা দিয়েছেন । নাসরীন কে আমার স্ত্রী হিসেবে দেখে হয়তো আপনি অবাক হয়েছেন সেই সাথে আমার সম্পর্কে মনে মনে ভুল ধারনা পোষন করছেন । তাই আপনার ভুল ধারনা ভাঙ্গার জন্য আমার এ পত্র লেখা । নাসরীনদের বাড়ীতে ফেলে আসা বইয়ের ট্রান্কটি খোলে চিঠিপত্র ঘেটে তারা আমার গ্রামের বাড়ীর ঠিকানা যোগার করেছিল । ছয়মাস পর আফতাব মেম্বার তার এক সহযোগী নিয়ে আমাদের গ্রামের বাড়ী এসে হাজির হন । তখন আমি গ্রামীন ব্যাংকে চাকরি নিয়ে সাভারে ট্রেনিং করছিলাম । বাড়ী এসে জানলাম আফতাব মেম্বার নামে এক লোক আমার খোঁজে এসেছিলেন । ট্রেনিং শেষে আমার পোষ্টিং হয় আপনাদের থানায় । বাবা পত্রে জানান দ্বিতীয় বার উনি আবার আমাদের বাড়ী এসেছিলেন । তিনি নাকি তার মেয়ের বিয়ের জন্য আমার সাথে কথা বলতে চান । আমি তাকে তোমার ঠিকানা জানি না বলে জানিয়েছি । মনে হয় উনি আবারো আসবেন । কতদিন তোমার ঠিকানা না জানিয়ে থাকতে পারবো জানি না । তুমি যা ভাল বুঝ তা তারাতারি কর । ভদ্র লোককে বারবার মিথ্যে বলতে পারবো না বাবা ।

আপনাদের থানায় কর্মরত থাকলে সহজেই আমি তাদের স্বীকারে পরিনত হতে পারি মনে করে আমি তাই মানিকগঞ্জে বদলী হয়ে আসি । কিন্তু আফতাব মেম্বার নাছোর বান্দা ।আপনাদের জেলা সদর অফিস থেকে আমার ঠিকানা যোগার করে একদিন মেয়েকে নিয়ে মানিকগঞ্জে আমার অফিসে এসে হাজির । আমার কাছ থেকে কোন ইতিবাচক সম্মতি না পেয়ে মেয়েকে নিয়ে আমাদের গ্রামের বাড়ীতে মা বাবার মন জোগাতে চলে যায় । বাবা মায়ের মন গলাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত গ্রামের মানুষের কাছে আমার নামে অপবাদসহ গ্রামের এক শ্রেনির টাউট বাটপারের সরনাপন্ন হয়ে বাবা মায়ের উপর তার মেয়েকে বিয়ে করানোর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে ।

খবর পেয়ে বাড়ী গিয়ে তাদের অনেক বুঝানোর চেষ্টার পরও মিথ্যা অপবাদের পথ থেকে তাদের সরাতে না পেরে লোক লজ্জা আর পারিবারিক সম্মানের কথা চিন্তা করে নাসরীনকে বিয়ে করতে বাধ্য হই । বিয়ের পর আজ অবধি এক বারের জন্যও আমি শশুড় বাড়ী মুখো হইনি । নাসরীন আমার ছেলে মেয়েকে নিয়ে বেশ কবার বাবার বাড়ী গেলেও আমার যাওয়া হয়নি । তাদের বাড়ীতে থাকা কালে তার বাবা মায়ের আচরন আমি মেনে নিতে পারিনি বিধায় আপনাকে বলে তাদের বাড়ী ছেড়ে চলে এসে ছিলাম । নাসরীনের কাছ থেকে জেনেছি সে আমাকে না পেলে অত্নহত্যা করতে বাধ্য হতো । জীবনে প্রথম প্রেমের তীব্রতা যে এতটা শক্ত হয় তা আমি বুঝতে পারিনি । সত্যি বলতে কি মেয়েটাকে আমিও পছন্দ করতাম । ছাত্র জীবন শেষ করে কলেজে শিক্ষকতা করতে এসে একটি বাচ্ছা মেয়ের সাথে প্রেম করা বিষয়টাকে মেলাতে পারছিলাম না ।শেষ পর্যন্ত প্রেম মানে না রীতিনীতি কথাটা আমার বেলায় এমন ভাবে প্রযোজ্য হবে ভাবিনি কখনো । একটা কথা আপনাকে না বলে পারছিনা বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত বাইশ বছরের দাম্পত্য জীবনে আমাদের কিন্তু কোন বিষয়ে বড় ধরনের মনোমালিন্য ঘটেনি । নাসরীনের গায়ের রংটা একটু চাঁপা হলেও গৃহিনী হিসেবে, স্ত্রী হিসেবে ও মা হিসেবে সে আদর্শ নারী ।
হায়রে প্রেম--------।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রোদের ছায়া যূথী ফেসবুকে শেয়ার না করলে তো বশীর ভাই এর গল্পটি মিস করতাম । যাক শেষ পর্যন্ত পড়লাম আর ভোটও করতে পারলাম । ভালো লাগলো ।
ভালো লাগেনি ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
জাকিয়া জেসমিন যূথী খুউব ভালো লাগলো প্রেম কাহিনীটা। ভালোবাসি তোমায় সিরিজের এক অনন্য অন্যরকম গল্পটা। বড় দেরীতে পড়ার জন্য দুঃখিত বড় ভাই। সত্যি কথা বলতে এই মাসে গল্পকবিতাডটকম এর ৩-৪টা লেখা বাদে বাকী একটা লেখাও আমার পড়ার সময় হয়ে উঠেনি।
ভালো লাগেনি ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
মাফুজুর Rahman সুন্দর কাহিনী বিন্যাস আর ধারাবাহিকতা.প্রেমের গল্প মুগ্ধমনে পড়লাম, নিয়ে গেলাম দারুন তৃপ্তি আর রেখে গেলাম ভাললাগা ও শ্রদ্ধা।
মামুন ম. আজিজ প্রেমের পরিণত কাহিনী....
ভালো লাগেনি ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
তানি হক চমৎকার ভালোবাসার গল্প ... বশির ভাই । সেই দিন গুলোর ভালোবাসা ভাবনা ই আলাদা ছিল । আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও সালাম
ভালো লাগেনি ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
মিলন বনিক দাদা...কুব সুন্দর কাহিনী বিন্যাস আর ধারাবাহিকতা...মধুময় স্মৃতিচারণ বলবো আপনার চেষ্টা সার্থক হয়েছে...খুব ভালো লাগলো...অনেক অনেক শুবকামনা....
ভালো লাগেনি ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
মোঃ মহিউদ্দীন সান্‌তু স্মৃতিচারণমূলক প্রেমের গল্প মুগ্ধমনে পড়লাম, নিয়ে গেলাম দারুন তৃপ্তি আর রেখে গেলাম ভাললাগা ও শ্রদ্ধা। শুভকামনা শ্রদ্ধেয় লেখক ও গল্পের জন্য, ভালো থাকুন সব সময়।
ভালো লাগেনি ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
মোঃ আক্তারুজ্জামান স্মৃতিচারণমূলক সুন্দর গল্প। প্রাণবন্ত বর্ণনায় মুগ্ধ হয়েছি। প্রতিদিনের কর্ম ব্যস্ততায় আপনার মত মানুষদের লেখালেখির প্রয়াস আমাদের বাংলাসাহিত্যের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসারই বহিরপ্রকাশ। ধন্যবাদ, ভাল থাকুন।
ভালো লাগেনি ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
ওয়াহিদ মামুন লাভলু শুরু থেকে একটানা পড়ে গেলাম। অসাধারণ চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রেম সত্যিই রীতিনীতি মানে না। খুব ভাল লাগা জানিয়ে গেলাম। সেইসাথে প্রাপ্য ভোটটিও দিলাম। আমার বাড়ি পাবনার বেড়া থানায়। ভাল থাকবেন। শ্রদ্ধা জানবেন।
ভালো লাগেনি ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
Rumana Sobhan Porag durdanto likhechen.
ভালো লাগেনি ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

০৭ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪