(প্রথম পর্ব)
অনন্ত বলী।
পেশা-জাল বোনা, জাল তুনা (মেরামত)
যোগাযোগের ঠিকানা - শুভপুর বাজার।
বাজার জুড়ে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বট গাছটা। গাছের ছায়ায় বেশ কিছু স্থায়ী দোকান। বাকী গুলো ছনের ছালা। সপ্তাহে দু'দিন বাজার। শনিবার আর মঙ্গলবার। বাজারের দিন লোকজনের জমজমাট আনাগোনা। দূর গ্রাম থেকে মানুষজন সওদা করতে আসে। বিকিকিনি শেষ করে আবার চলেও যায়। অনেক রাত অব্দি বাজার সরগরম থাকে। বাকী পাঁচদিন খালি পরে থাকে বাছাইগুলো। তার একটা দখল করে থাকে অনন্ত বলি। বাকী বাছাই দখলে রাখে শুভপুর গ্রামের ক'জন বৃদ্ধ। তার মধ্যে হরিসাধন, শ্রীমন্ত ঠাকুর, রমিজ মুন্সী, অক্ষয় সাধু, রমজান আলী, সুধারাম জলদাশ প্রমুখ।
কিভাবে যে অনন্ত বলি নাম হয়েছে তা সবাই জানে। কিন্তু কেউ ভাবতে পারে না এই লোক আবার বলি হয় হয় কি করে। কালো হ্যাংলা পাতলা ছিপছিপে গড়ন। হাড্ডিসার শরীর। চোখে কালো মোটা ফ্রেমের পুরু চশমা। স্ক্রু খুলে গেছে অনেক আগে। গুনার তার দিয়ে চশমার বাটগুলো ফ্রেমের সাথে আটকানো। পেছনে শক্ত নাইলনের সুতো দিয়ে বাঁধা। চশমা খুললে মনে হয় ঘোলাটে দু'টো চোখ গর্তের ভিতর থেকে কাকে যেন খুঁজছে। লম্বা ছয় ফিট তিন ইঞ্চি। পরনে তেল ছিটছিটে সাদা ধুতি। কাঁধে গামছা। পোড় খাওয়া হাভাতে মানুষগুলো এমনই। কোন চাওয়া পাওয়া নেই। শুধু সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় সময়টা পার করতে পারলে যেন বেঁচে যায়।
বিয়ে থা করেনি। সংসার বলতে একটা কাপড়ের থলে। দু'টো হাড়ি পাতিল। একটা মাটির কলসি ও টিনের থালা। পানি খাওয়ার জন্য একটা কাঁসের গ্লাস। সুন্দর নক্সা করা। অনেক বছরের পুরানো। গ্রাসটার যথেষ্ট যত্ন নেয়। কখনও হাত ছাড়া করে না। থলেটা ঝুলিয়ে রাখে বাছাইয়ের খুঁটির সাথে। বট গাছটার সাথে জড়িয়ে রাখে ছেড়া ময়লা কাপড় চোপড়। বাজারের পাশেই ছোট নদী। প্রতিদিন সকালে নদীতে স্নান করে। ভেজা ধুতিটা গোল করে জড়িয়ে দেয় বট গাছের গুড়ির সাথে। খসখসে ছালগুলোর সাথে লেপ্টে থাকে ধুতিটা। দেখে মনে হয় কেউ কাপড় পরিয়ে রেখেছে।
আদি বাড়ী কোথায়, কিভাবে এখানে এলো তা কেউ জানে না। কখনও বলেনি। প্রথম যখন শুভপুরে অতিথি হয়ে এলো বয়স তখন চল্লিশের বেশী। আশ্রয় জুটল কেরানি বাড়ীতে। কামলা সেজে বছর দু'য়েক ছিল। তারপর আর ভালো লাগেনি। কেরানী বাড়ীর বড় বউ শুভদ্রা দেবী অনন্তকে সংসারী হতে বলেছিল। একটা মেয়েও দেখেছিল। নাম কমলা। তিরিশের কাছাকাছি বয়স। অল্পবয়সে বিধবা হয়েছে। উভয় পৰের সম্মতিও ছিল। বাঁধ সাধল স্বয়ং অনন্ত। সেই রাতে কাউকে কিছু না বলে সোজা বাজারে এসে আশ্রয় নিয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও কেরানী বাড়ীতে আর ফিরিয়ে নিতে পারেনি। তবে যেদিন ভালো মন্দ রান্না হয় শুভদ্রা দেবী অনন্তর জন্য বাজারে ভাত পাঠিয়ে দেয়। কেরানী বাড়ীর বড় কর্তা বিপিন চৌধুরী। লোক মারফত অনন্তর খোঁজ খবর নেন। মাঝে মধ্যে নিজে গিয়ে দেখে আসেন। অসুখে বিসুখে কতবার বলেছে বাড়ী এসে থাকতে। না । কিছুতেই আসবে না। ঔষধ পত্র কিনে দিয়ে বলে-
- ঠিকমত খাবি। নয়তো দেখবি কোন সময় মরে পরে থাকবি। কেউ জানবেও না।
- আমি মরবো না দাদা ভাই। মরলে আপনের কোলেই মাথা রাইখা মরবো।
- সময়টা ভালো না। দ্যাশের অবস্থাও দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। সাবধানে থাকিস।
- দ্যাশের কি হইছে দাদা ভাই।
- সে তুই বুঝবি না। চারিদিকে কেমন সব অলক্ষুণে ছায়া দেখতে পাচ্ছি। সব সময় মনে একটা কু-ডাক ডাকছে।
বিপিন বাবু সম্মানী মানুষ। গ্রামের সবাই মান্যি করে। হাটে বাজারে খুব একটা যান না। কারও কোন বুদ্ধি পরামর্শ প্রয়োজন পরলে লোকজন নিজে থেকেই উনার বাড়ীতে আসে। কাচারি বাড়ীর সদর দরজা সবসময় খোলা থাকে। বাজারে দাঁড়িয়ে খুব বেশী কথাবার্তা বলেন না। সম্মানী মানুষরা যখন তখন যেখানে সেখানে যেমন তেমন কথা বলেন না। এতে নিজের ব্যক্তিত্ব থাকে না। যখন যা বলার, বুঝে শুনে ভেবে বলে। সময় অসময় না ভেবে যখন তখন যেখানে সেখানে পা ফেলেন না। কোথায় যাবেন, কেন যাবেন, কখন যাবেন ইত্যাদি সাত পাঁচ ভেবে তবেই পা ফেলবেন। যাতে সম্মানের উপর এতটুকু আঁচড় না লাগে। সম্মানী মানুষরা এমনই।
শুধু এই অভাগা অনন্তটার জন্য মাঝে মধ্যে মন কেমন করে। ইচ্ছে হয় একবার পাগলটাকে দেখে আসি। এটাই অনন্তর বড় সৌভাগ্য। বাজারে অনন্তর একটা ছেড়া কাপড়ও কখনও চুরি যায়নি। কেউ কখনও বিরক্তও করেনি। হরিসাধনদের দল যখন পাশের বাছাইয়ে তাস খেলতে বসে তখন টুকটাক ফাইফরমাশ খাটে। প্লাস্টিকের মগে করে দু'কাপ চা এনে দেয়। আসরের দর্শনার্থীসহ ছয় সাতজন মিলে ভাগ করে খায়। তাতে কখনও এক চুমুক জোটে। কখনও বা একগাল মুড়ি। তাতেই খুশী। চায়ের পয়সাটা বেঁচে যায়। একটাই ব্যতিক্রম। অনন্তকে কখনও কারও বাড়ীতে নেমন্তন্ন করে খাওয়াতে পারেনি। কেউ বাড়ী থেকে ভাত এনে দিলে খুশী মনে খেয়ে নেয়। চা খেতে ইচ্ছা করলে বাটি সওদাগরের দোকান থেকে ২৫ পয়সার এক কাপ গুড়ের চা আর দশ পয়সার একটা টোষ্ট কিনে নেয়। সওদাগর মন থেকে কাপের উপর একটু খাঁটি গরুর দুধের সর বসিয়ে দেয়। তাতে একবেলা ভাতের অভাবটা পূরণ হয়।
একমনে জাল বুনতে থাকে। দিন মাস বছর গড়িয়ে যায় এভাবে। অনন্তর কোন পরিবর্তন নেই। আকাশে কালবৈশাখীর আভাস। দৈত্যের মত কাল মেঘগুলো গুড়ুম গুড়ুম শব্দে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বাছাইয়ের ছাউনিটা মেরামত করা দরকার। বাজারের মাঝি ফরিদ মিয়াকে কথাটা বলবে। তাও মেরামত করতে করতে দিন দশেক লেগে যাবে।
বাজারের সাথে লাগানো কালী মন্দির। অতিরিক্ত ঝড় বৃষ্টি হলে তল্পি তল্পা নিয়ে মন্দিরের বারান্দায় উঠে যায়। আজও আগে ভাগে উঠে গেল। মুষলধারে শুরু হয় বৃষ্টি। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আজ আর রান্না হবে না। মন্দিরে আমিষ রান্না হয় না। শ্রীমন্ত ঠাকুর সন্ধ্যা পূজা দিয়ে নাটমন্দিরের বৈঠকখানায় এসে বসেছে। দু'হাটু বুকের সাথে লাগিয়ে জবু থবু হয়ে বসে বিড়িটা জ্বালিয়েছে। একটু ঠাণ্ডাও লাগছে। অনন্ত পাশে এসে বসে বলল - ও ঠাকুর দাওনা একটা। শীত লাগছে।
শ্রীমন্ত ঠাকুর লম্বা একটা টান দেয়। দু'পাশের গালে টোল পরে। দাঁত নেয়। ধোঁয়াটা কিছু সময় মুখের মধ্যে আঁটকে রেখে অনন্তর হাতে দিয়ে বলে - নে ধর। দু'টান মেরে আমাকে দিবি।
- এ কি গো ঠাকুর। মাত্র তো দিলে। তাও আবার হিসেব করে বইলে দিচ্ছ দু'টান। অনন্ত দু'টান মেরে আবার ঠাকুরকে দিয়ে বলে আর তো কিছুই নাই। তুমি আর কি টানবে ঠাকুর।
- আরে দে। ও তুই বুঝবি না। শুকটানের মজায় আলাদা। যা এবার এই বৃষ্টিতে ভিজে স্নান করে আয়। রাতে তো মনে হচ্ছে মন্দিরেই কাটাবি। নাপাক থাকলে মন্দিরের পাক পবিত্রতা থাকবে না।
শ্রীমন্ত ঠাকুর বিড়ির শেষ অংশটা তিন আঙ্গুলের মধ্যে পুরে মনের আনন্দে টানতে থাকে। হাতের মধ্যে বিড়ির আগুন নিভে না যাওয়া পর্যন্ত টানবে। তারপর কালচে হয়ে যাওয়া আঙ্গুলের মাথায় জিহ্বা থেকে থুথু লাগিয়ে কচলাতে কচলাতে আফসোস করে বলবে - যা শালার, বিড়িটা শেষ হয়ে গেলো।
- সে কি ঠাকুর। আমার খাওয়া বিড়ি তুমি খেলে তাতে তোমার জাত গেলোনা। আর আমি মন্দিরে রাত কাটাবো তাতে নাপাক হবো ক্যামনে।
- নাপাকের কথা কে বলল। রাতে পবিত্র মন্দিরে থাকবি। নিজেরও একটা পবিত্রতা আছে না। কোথায় কি হাগা মুতা করিস তার ঠিক আছে। যা যা স্নান করে আয়। ভালোই বৃষ্টি নামছে। তোরও ভালো লাগবে। আমারও ইচ্ছা করছে। কিন্তু বুড়া বয়সে আর পারছি না।
- তা তুমি ঠিক কথা বলছ ঠাকুর। ঠাকুর দেবতা বলে কথা। দাড়াও আমি একটা বিড়ি ধরায়। আমি দুই টান দিয়া শরীরটা একটু গরম কইরা লই, তারপর তুমি টানবা, আমি বৃষ্টির পানিতে স্নান করে আসব। তা তুমি যাবা ক্যামনে।
- বৃষ্টি থামুক। তাস খেলায় টুনু পারিয়াল আছে। ওরে একটু খবর দিস। যাবার সময় যেন আমাকে ডেকে নেয়।
- আইচ্ছা বলে অনন্ত গামছা পরে তার লিকলিকে শুকনো পা দু'খানা নাচাতে নাচাতে বৃষ্টির পানিতে চড়ুই পাখির মত নাচতে নাচতে বাছাইয়ের দিকে এগিয়ে গেল।
বাছাইয়ের নীচে তখনও জনা দশেক মানুষ। তাসখেলা বন্ধ। বৃষ্টির জন্য কেউ বের হতে পারছে না। হরি গোপাল, যদু নাথ, টুনু পারিয়াল, রমিজ মুন্সী, অক্ষয় সাধু, রমজান আলী, সুধারাম জলদাশ সবাই আছে। সবাইকে খুব গম্ভীর দেখাচ্ছে। ফিস ফিস করে কি যেন বলাবলি করছে। আকাশে চাঁদ উঠেছে। কুপি বাতিটা নেভানো। দেশের অবস্থা ভালো না। রেডিওতে যা শুনেছে তা নিয়ে বলছে হরি গোপাল। চারিদিকে মিলিটারি টহল দিচ্ছে। ৭ই মার্চে শেখ মুজিবের ভাষণের পর দেশের অবস্থা থমথমে। পাক সেনারা নাকি বাংলার বুদ্ধিজীবীদের একটা তালিকাও তৈরি করছে। অনন্ত আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছে না। কেবল এটুকু বুঝছে যে, এদেশে আমাদের জন্ম। আমরা আমাদের মত করে থাকতে পারব না কেন।
রমজান আলী চেঁচিয়ে উঠে। কথার মোড় ঘুরিয়ে বলে - এই অনন্ত পাগলা ঠিক বলেছে। যদি যুদ্ধ লেগে যায় কে হারে আর কে জেতে আজ বোঝা যাবে। বাইরে প্রচণ্ড বৃষ্টি। অনন্ত তখনও বাছাইর বাইরে দাঁড়িয়ে ভিজছে। টুনু পারিয়াল বলে উঠল-কিন্তু কিভাবে।
- বলি খেলা হবে। বলল রমজান আলী।
- বলী খেলা। কখন। সবাই বলে উঠল।
- এখন।
- তোমার মাথায় ছিট আছে রমজান মিয়া। এই বৃষ্টির মধ্যে বলী ধরবে কে। তাছাড়া এই বয়সে বলী ধরা। ঘরে ছেলে মেয়ে বৌ ঝি-রা শুনলে আর ইজ্জত রাখবে না। তোমার যখন খায়েস হয়েছে তুমি ধর। বলল রমিজ মুন্সী।
- এইটা কি কইলা রমিজ মিয়া। দেশের চাইতে বড় ইজ্জত আর কি হইতে পারে। অনন্ত কথাটা বলে বৃষ্টি ভেজা মাথাটা একবার ঝাঁকিয়ে নিয়ে দু'হাতে মুখটা মুছে নিলো।
সবার মধ্যে একটা হাসির রোল উঠল। রমজান আলী এক এক করে সবাইকে বলল, কে বাংলাদেশের হয়ে, আর কে পাকিস্তানের হয়ে বলী ধরবে। রমজান আলী বলে দিয়েছে পাকিস্তানের হয়ে খেলবে রমিজ মুন্সি। আমতা আমতা করছে রমিজ মুন্সী। আবার রমজান আলীর কথা ফেলতেও পারে না। বাল্যকালের বন্ধু। বাংলাদেশের পৰে কেউ রাজী হচ্ছেনা। কারও সর্দি, কারও হাঁফানি আবার কারও ঠাণ্ডা লাগার ভয়। রমিজ মুন্সী ভাবছে মনে হয় বাঁচা গেল। এই ফাঁকে অনন্ত চালার ভিতর মাথা ঢুকিয়ে বলল - বাংলাদেশের পৰে আমি বলী ধরব।
- হুঁ ব্যাটা পাগল, জোয়ান মরদ হয়েছে। মুন্সীর এক ঠেলায় ঠ্যাং-এর নলা ভেঙ্গে দুই টুকরা হয়ে যাবে। পেটে ভাত নাই। আবার বলী ধরবে। অবজ্ঞা করে করে বলল টুনু পারিয়াল।
সবাই মৌন সম্মতি দিল। সত্যিই তো। মুন্সীর সাথে অনন্ত পাগলার পেরে উঠার কথা নয়।
এতে অনন্তর আঁতে ঘা লাগল। রাগে ৰোভে অনন্ত ফুলে ফেঁপে উঠছে। পাগল কিসিমের লোকগুলো এই স্বভাবের হয়। হঠাৎ রেগে যায়। সহজে থামানো যায় না। ভিতরে ভিতরে রাগ পুষে রাখতে পারে অনেক্ষন। হঠাৎ করে কিছু একটা করে বসে। পা দু'টো খুব ঘন ঘন নাড়াচ্ছে। তারপর একটানে ছনের ছালার উপরে কালো পলিথিনটা সরিয়ে নিয়ে বলল - আসুক না দেখি। বুড়া বেডার কি খায়েস নাই নাকি। বুড়া হইছি তো কি হইছে। দেখি কার এমন বুকের পাটা। আমি তো কইছি, হেরে গেলে এই শুভপুর বাজার ছাইড়া চইলে যাব।
এবার রমিজ মুন্সী রাগে গজ গজ করছে। বেটে খাটো লোক। অনন্তর সমান বয়স। স্বাস্থ্য ভালো। খাওয়া পরার অভাব নেই। দুই ছেলে বিদেশে থাকে। হেসে খেলে সময় কাটানোর বয়স। বৃষ্টিটা একটু কমে আসছে। চালের ফুটো দিয়ে সবার গায়ে টপ টপ করে পানি পরছে। মুন্সী আর কথা বাড়ায়নি। পাঞ্জাবীটা রমজানের হাতে দিয়ে বলে - রাখতো জামাটা। হালার বিষ উথলে উঠছে। একটু ঠাণ্ডা কইরা দিই।
কাদা মাটিতে গড়াগড়ি চললো অনেক্ষন। কেউ কাউকে কাবু করতে পারছে না। কাদা জলে দু'জনের পিছলা শরীর। বাজারের অন্যান্য দোকানদাররা কেউ ছাতা নিয়ে কেউবা বৃষ্টিতে ভিজে গোল করে দাঁড়িয়েছে। উৎসাহ দিচ্ছে হাততালি দিয়ে। রমজান মিয়া শ্লোগান দিল - জয় বাংলা। সবাই সমস্বরে বলে উঠল - জয় বঙ্গবন্ধু। আবার জয়বাংলা শ্লোগান। ধরাশায়ী হল রমিজ মুন্সী। এবার শ্লোগান দিল সবাই - বাংলাদেশ বাংলাদেশ, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ। রমজান আলী একটা দশ টাকার নোট অনন্তর কোমরে সুতা দিয়ে বেঁধে দিয়ে বলল - অনন্ত বলী জিন্দাবাদ। সবাই বলল - অনন্ত বলী জিন্দাবাদ। আশু দত্ত ঘোষণা দিল আজ এই দলের সবাইকে খাঁটি দুধের সর দিয়ে বন টোষ্ট করে খাওয়াবো। সাথে গরম চা। সেদিন থেকে অনন্ত পাগলা অনন্ত বলী হিসাবে খেতাব পেল।
রাতে অনন্ত আর ঘুমাতে পারেনি। মন্দিরের বারান্দায়ও যায়নি। নাট মন্দিরে শুয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়েছিল। আকাশটা মেঘ করে আছে। এই বুঝি আবার মুষলধারে বৃষ্টি নামবে। শরীরে ক্লান্তি নেয়। উত্তেজনায় সারা শরীর কাঁপছে। আর থেমে থেমে কিছুক্ষন পর পর গান ধরছে-
কোথায় রে কাঙ্গালের হরি
একবার দেখা দাও আমারে,
আমি সারাজীবন খুঁজে মরি
আমি দিবানিশি খুঁজে মরি,
তবু দেখা না পায় তারে
একবার দেখা দাও আমারে।
বৃষ্টি থামলে আবার বাছাইয়ে ফিরে আসে। বাছাইয়ের খুঁটির সাথে দু'টো জাল বাঁধা আছে। একটা নতুন বুনছে। অন্যটা মেরামতের। কাজ শেষে একটা কাঁচের শিশিতে জাল বোনার কাঠিগুলোতে একটু শর্ষের তেল মাখিয়ে রেখে দেয়।
সকালে খবরটা পেয়েই বিপিন চৌধুরী ছুটে এসেছেন।
- এসব কি শুরু করেছিস। তোর কি এখন বলী ধরার বয়স। তাছাড়া মুসলমানের সাথে কেন বলী ধরতে গেলি। একেতো যা দিনকাল পরেছে নিজের জীবন নিয়ে বেঁচে থাকা মুশকিল। তুই এখনি চল। বাজারে থাকার দরকার নাই। এই দুর্দিনে কি বসে বসে বাজার পাহাড়া দিবি। হাতের ছাতাটা নেড়ে বললেন - হয় আমার বাড়ীতে গিয়ে থাকবি নয়তো এই গ্রাম ছেড়ে চলে যাবি।
খুব বকলেন বিপিন বাবু। অনন্ত বুঝতে পারছে দাদা ভাই রেগে আছে। অনন্ত দাদা ভাইয়ের চোখের দিকে তাকাচ্ছে না। নতুন জালটায় একর পর এক ফোঁড় তুলে যাচ্ছে। দশ হাতি জাল হবে। ঝাঁকি জাল। পঞ্চাশ টাকা আগাম দিয়ে গেছে মুন্সী পাড়ার কদম আলী। মাল ছামানা বাদে শুধু মজুরী দেবে দেড়শ টাকা। অনন্ত মেপে দেখল আরও তিন হাত বুনতে হবে। বাঁশের সুই কাটিটা ডান কানে গুজে রেখে মাথা নিচু করে বলল-
- দাদা ভাই, হঠাৎ ঝোঁকের মাথায় যুদ্ধে বাংলাদেশ জিতবে না পাকিস্তান জিতবে তাই নিয়ে-।
- তা যুদ্ধে কে জিতবে।
- বাংলাদেশ।
- তোর মাথা ঠিক আছে।
- হ, পুরাপুরি ঠিক। এই দ্যাখেন জালের একটা পায়াও বেশকম হচ্ছে না।
- ইয়ার্কি মারছিস। তুই জানস পাকিস্তানের শক্তি কেমন। ওদের কত অস্ত্র শস্ত্র, গোলা বারম্নদ, সৈন্য সামন্ত, আমাদের কি আছে।
- আমি মুন্সীরে ক্যামনে হারাইলাম দাদা ভাই। আমার কি আছে। আমার মত সাহস কইরা সবাই যুদ্ধে নাইমা পরলে বাঙ্গালীরে ঠেকাইতে পারবো কোন হালায়।
বিপিন বাবু আর কথা বাড়ায়নি। সোজা পশ্চিমের রাস্তার ধরে বাড়ীর দিকে এগিয়ে গেল। যাওয়ার সময় বলে গেল - শোন এখন হিন্দুরা যে যেদিকে পারছে ওপারে পালিয়ে যাচ্ছে। তোর বৌদিরাও হয়তো দু'একদিনের মধ্যে চলে যাবে। আমি থাকব শুধু বাপ দাদার ভিটে মাটি পাহাড়া দেওয়ার জন্য। পারলে তুইও বাজার ছেড়ে কোথাও চলে যা।
অনন্ত কোথাও যায়নি। বাছাইয়ের চালাটা মেরামত করা হয়েছে। ছোট বাছাইটার চার পাশে কাপড় টেনে দিয়ে রাত কাঠিয়ে দেয়। সন্ধ্যারতির পর মন্দিরের গেটেও বড় একটা তালা লাগিয়ে দেয় পুরুত ঠাকুর। দেশের অবস্থা দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। হাটে মানুষ জনের আনা গোনা তেমন নেই। সন্ধ্যার পরে নিতান্ত প্রয়োজন না হলে কেউ বাজারে আসেনা। দশ পনের দিন পর বড় নৌকা করে শহর থেকে মাল আসে। মাল খালাসের সময় অনন্ত একটু খেয়াল রাখে। তিন চারটা মুদীর দোকান। যে যার মালগুলো বুঝে নেয়। অনন্তকে পাঁচ দশ টাকা দেয়। নতুন জালটাও প্রায় বুনা শেষ। দুই একদিনের মধ্যে নিয়ে যাবে বলেছে। দু'একটা মেরামতি জাল ছিল। সেগুলোও ঠিক করে রেখেছে। কেউ নিতে আসছে না। সন্ধ্যার পর কুপি বাতি জালানোর প্রয়োজন হয় না। বেলা থাকতে রান্নাটা শেষ করে নেয়।
ইদানীং অনন্ত খেয়াল করেছে হাটে নতুন নতুন অপরিচিত লোকের আনাগোনা বেড়েছে। চিনতে পারে না। চায়ের দোকানগুলোর বেশ রমরমা অবস্থা। আশুর দোকানে দুই ব্যান্ডের একটা রেডিও আছে। ওখানেই ভিড়টা বেশী। মানুষের উদ্বেগ উৎকণ্ঠার যেন শেষ নেই। মিলিটারিরা চারিদিকে নির্বিচারে মানুষ মারছে। হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ঘর বাড়ী জ্বালিয়ে দেওয়া থেকে হেন কোন অপরাধ নেই, যা তারা করছে না। ২৫ মার্চে বাংলাদেশের অসংখ্য বুদ্ধিজীবীদের এক সাথে হত্যা করা হয়েছে। কথাটা শুনে অনন্তর গা শিউড়ে উঠে। ভাবছিল দ্যাশের জ্ঞানী মানুষগুলারেই যদি মাইরা ফেলে তাইলে দ্যাশের আর কি থাকলো। আমরা সাধারণ মানুষই বা আর কি করব। আমাদের ল' বললে আমরা লইতে পারি। তয় কি লইতে হবে সেটাও জানি না। বইলে দিতে হবে।
ঘোরতর যুদ্ধ চলছে। গভীর রাতে কারা যেন দল বেঁধে বাজারের উপর দিয়ে চলাফেরা করে। অনন্ত পায়ের আওয়াজ শুনতে পায়। কাপড় সরিয়ে দেখে কারও পায়ে স্যান্ডেল, কারও খালি পা, কারও পরনে লুঙ্গি গেঞ্জি, কারও শার্ট প্যান্ট, কারও হাতে গাদা বন্ধুক আবার কারও হাতে লাঠি শোটা।
মানুষ শূন্য হয়ে পরছে গ্রাম গুলো। সেদিন ছিল হাট বার। চারদিক থেকে আসছে আসছে একটা হৈ চৈ উঠল। কেউ কিছু জানেনা। কারা আসছে, কেন আসছে। কেউ দেখেনি। দোকানের সওদা পত্র গুছিয়ে দোকানীরা ছুটছে বাড়ীর দিকে। যে যেদিকে পারছে দৌড়াচ্ছে। সোজা রাস্তা দিয়ে ভয়ে কেউ ফিরছে না। সতীশের চার বছরের ছেলেটা দৌড়াতে গিয়ে বিলের কাদা মাটিতে পা আটকে গেল। বাবা নতুন কেডস কিনে দিয়েছে পরশু। তাই পরে বাবার সাথে বাজারে এসেছে। এক পা তুলতে গিয়ে অন্য পা টাও আটকে গেল। কিছুতেই জুতা জোড়া তুলতে পারছে না। শেষে বাবা একটানে খালি পায়ে ছেলেটাকে তুলে নিলো। জুতা জোড়া থাকল বিলের মধ্যে। ছেলেটার সে কি কান্না। জুতা ছাড়া কিছুতেই বাড়ী যাবে না। সতীশ রাগে ছেলেটার গালে একটা চড় মেরে টেনে হিচঁড়ে বাড়ী নিয়ে গেল।
সেদিন আর কেউ আসেনি। বৃষ্টিও নেই। পরিষ্কার আকাশে ভরা পূর্ণিমার আলো। পাশে খালের ওপাড়ে ধূ ধূ ধানি জমি। অনেক দুর দেখা যায়। চাঁদের অলোয় বটগাছের পাতাগুলো চিকচিক করছে। অনন্তর ভয় ডর তেমন নেয়। রান্নাও করতে হবে না। দুপুরে কমলা এসে জিজ্ঞাসা করেছিল রান্না হয়েছে কিনা। না বলাতে সন্ধ্যার আগে গামলা ভরে ভাত তরকারি দিয়ে গেছে। আর বলে গিয়েছে - তুমি কোথাও চলে যাওনা কেন। একেতো হিন্দু মানুষ। কখন কি হয় ঠিক আছে। বউ ঝি'রা অনেকে পার্শ্ববর্তী নন্দনপুর গ্রামে আশ্রয় নিচ্ছে। ওখানে সবাই বড়ুয়া। সহজে হামলা করতে পারবে না।
কমলা বাজারে আসলে অনন্তর খোঁজ খবর নেয়। বিধবা হলেও সাদা শাড়ী সে পরে না। অনন্ত ভাতের গামলাটা হাতে নিয়ে বলে - এই অসময়ে এসে ভালো করনি কমলা। তুমি তাড়াতাড়ি চলে যাও। পারলে আজই সবাই মিলে নন্দনপুর চলে যাও। কেবল শুনছি কারা যেন আসছে।
- তুমি যাইবা না।
- আমি পাগল ছাগল মানুষ। আমারে কে কি করবে। আর আমার কি-ই বা আছে। দেখি, যদি ওইরকম কিছু মনে হয় তাহলে চইলে যাবো।
বাজারে আর কেউ নেয়। কারও সাথে যে একটু কথা বলবে তারও উপায় নেয়। তরকারিটা ভালোই হয়েছে। কিন্তু ভাত খেতে পারেনি। কেমন যেন ভয় ভয় লাগছে। যা ভাত আছে তাতে আরও তিন বেলা চলবে। ভাতের থালাটা দিয়ে ঢাকনা দিয়ে রেখেছে। কালকেও খাওয়া যাবে। একটা ভাতও ফেলবে না। বাসি ভাত, গন্ধ তরকারি খেলে ওদের অসুখ হয় না। হজম শক্তিও ভালো। ডাক্তারের কাছেও যেতে হয় না। বাসি ভাতগুলো লবণ কলা দিয়ে মেখে খেয়ে নেয়।
বট গাছের গুড়িটার উপরে এসে বসেছে অনন্ত। আয়েশ করে একটা বিড়ি জ্বালায়। বাইরের আকাশটা আজ খুব সুন্দর লাগছে। মনটাও বড় ভালো লাগছে। বটগাছের কোঠরি থেকে একটা তক্ষক ডেকে উঠছে। মনের আনন্দে একটা গান ধরে অনন্ত।
ও সখী তোর কৃষ্ণ বরণ, দীঘল কালো চুল
চাঁদনী রাইতে সখী আমার, করলি কি যে ভুল।
যৌবন জ্বালা সইতে না-রি,
কানুর সনে দিছিস পাড়ি।
নদীর কুলে নাইতে এসে, হারালি যে কুল,
ও সখী তোর কৃষ্ণ বরণ, দীঘল কালো চুল
চাঁদনী রাইতে সখী আমার, করলি কি যে ভুল।
ওরে করলি কি যে ভুল------------।
গভীর রাত। বাজারে অনেকগুলো মানুষের কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। লোকগুলো বাছাইর চার পাশে জটলা করে আছে। খুক খুক করে কাশি উঠে অনন্তর। বাইরে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মানুষগুলো। গলা খাকারী দিতেই একজন বলে উঠল-
- খুড়া আছনি। ঘুমাও নাই।
- তোমরা কারা গো। বলে কাপড়টা তুলে দেখে। জনা বিশেক হবে। একজন কে যেন নির্দেশনা দিচ্ছে।
- আমরা মুক্তি বাহিনী। তোমার ভয় নাই।
বেরিয়ে আসে অনন্ত। মনে সাহস পায়। বাইরে ফুটফুটে জ্যোৎস্না। দলের কয়েকজনকে চিনতে পারে। রমজান আলীর ছেলে মাসুদ, উত্তর পাড়ার হিমাংশু দত্তের ছেলে অমিত, দক্ষিন পাড়ার রমণীর ছেলে অবিনাশ সহ আশে পাশের এলাকার আরও কয়েকজন। ওদের কেউ কলেজে পড়ে, কেউ চাষবাস করে, কেউবা জেলে। দাড়িওয়ালা লোকটা নির্দেশ দিচ্ছে। অনন্ত চিনতে পারছে না। সম্ভবত বাইরের কেউ হবে। সবাই বেশ মান্য করছে ওর কথা। অমিত অনন্তর পাশে এসে বলল-
- ও খুড়া, ক্ষুধায় পেট জ্বলছে। দোকানতো সব বন্ধ। খাবার কিছু আছে।
- কার কাছে কি চাও বাপ। বড় লজ্জায় ফেলে দিলে। আগে জানলে না হয় কিছু চুড়া মুড়ি কিনে রাখতাম। ক'টা কড়কড়া ভাত আর একটু তরকারি আছে। তাও ওই কমলা দিয়া গেছিল। আমি আর রান্না করিনি গো বাপ। ওতে তা তোমাদের কুলাবে না। এখন কি যে করি।
- থাক তোমার আর ভাবতে হবে না। ওগুলো দাও। আরও অনেক পথ হাটতে হবে।
অনন্ত গামলা শুদ্ধ ভাতগুলো এগিয়ে দিয়ে বলে-
- এখন কি হবে বাপ। তোমারা কত সময় না খাইয়া আছ। আহারে কি চেহারা হয়েছে এক একটার। তয় কি জান বাপ, জয় তোমাদের হইবোই। খালি সাহস কইরা লইরে যাও।
অমিত ভাতগুলো মেখে এক লোকমা করে ক'জনকে খাইয়ে দিল। অনন্ত দৌড়ে গিয়ে মাটির কলসি ভরে কল থেকে পানি নিয়ে এলো। পানি খেল সবাই। যাওয়ার সময় বলে গেল-
- আমাদের কথা কাউকে বলবা না। বললে বিপদ আছে। আমরা গেলাম।
- অহন কই যাইবা।
- দেখি কোন ধানৰেত অথবা জঙ্গলে আজকের রাতটা পার করতে হবে।
- একটা কথা বলব। অনন্তর চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক।
- কি। মাসুদ বলল।
- আমি তো তোমাদের সাথে যুদ্ধ করবার পারব না। তয় তোমরা বললে আমি তোমাদের জন্য কিছু ভাত তরকারি রান্না করে রাখতে পারব। তোমরা এসে খেয়ে যাবে। আমিতো সারারাত এখানেই আছি। যখনই আসবা আমারে পাইবা।
- ঠিক আছে। যেদিন খাবো অমিত এসে বলে যাবে। তবে কোন পাকিস্তানী রাজাকার কিংবা সন্দেহজনক কাউকে দেখলে আমাদের খবর দিও।
খুশী হয় অনন্তর। চোখ দিয়ে পানি পরছে। পশ্চিমের রাস্তা দিয়ে দলটা আস্তে আসত মিলিয়ে গেল। অনেক্ষন সেদিকে তাকিয়ে থাকল অননত্দ। অনেক দূরে কোথায় যেন প্রচন্ড গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। খেয়াল করল অননত্দ। ওরা যেদিকে গেছে সেদিকে নয়। পূর্ব দিক থেকে গুলির শব্দ আসছে। নয়াপাড়া কিংবা চৌমুহনীর ওদিকে। তবে কি মিলিটারী ঢুকে পরেছে। ভয় হচ্ছে অননত্দর। কৃষ্ণ নাম জপতে জপতে আবার শুয়ে পরে। সকাল হতে আর বেশী দেরী নেয়। এক প্রবল আত্মবিশ্বাস দানা বেঁধেছে অননত্দর মনে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবে। নতুন সুর্যটা উঠবেই উঠবে।
তারিখ: নভেম্বর ২২, ২০১২।
সবিনয় নিবেদন-
গল্পটা শুরু করেছি। গকডক-এর সীমাবদ্ধতা আর পাঠকের ধৈর্য্য চিন্তা করেও কিছুতেই সীমিত রাখতে পারছিলাম না। পরে মনে হলো কলমের স্বাধীনতাকে কোন সীমাবদ্ধ ছকে বেঁধে রাখা সত্যিই দুরহ। তাই পর্ব আকারে রেখে দিলাম। মাথার মধ্যে যে পোকা খিল বিল করছে তাতে মনে হচ্ছে আরও অনেকদুর যেতে হবে। আশা রাখছি শেষ করতে পারব। পরবর্তী কোন সংখ্যায় নিয়মিত করার ইচ্ছা আছে। আপনাদের মতামত আর পরামর্শ এই লেখাটার পরিধি বিস্তারে অনেক বেশী সহায়ক ভূমিকা রাখবে।