নবগ্রামের রহমত আলী। আটপৌড়ে গ্রাম। বিশ পচিঁশেক পরিবারের বাস। জনা শ'দেড়েক মানুষ। তার মধ্যে শিশু কিশোর, যুবক যুবতী, বৃদ্ধ বৃদ্ধা সবাই আছে। বেশীরভাগ মানুষ নদী ভাঙ্গা অঞ্চলের। তার উপর কমবেশি একে অন্যের পরিচিত। এতে একটা বাড়তি সুবিধাও আছে। সবাই মিলে মিশে থাকা যায়। একে অন্যের সুখ দুঃখের সাথী হতে পারে। কারও সাথে কোন কলহ নেয়। বাদ বিবাদ নেয়। পারস্পারিক একতার বন্ধনটা যেন নদী ভাঙ্গা মানুষগুলোর বেঁচে থাকার বিশাল শক্তি। সামান্য লেখাপড়া কিংবা আধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির উন্নতির ছোঁয়া তেমন লাগেনি। সবকিছুই যেন শহুরে সভ্যতা থেকে বিচ্ছিন্ন। এ মানুষগুলোর মধ্যে বেঁচে থাকার ইচ্ছা আর মনের জোড় আছে। বাঁচতে হলে একতাবদ্ধভাবে বাঁচতে হবে। এ বোধটুকু যেন বীজ মন্ত্রের মত। সবার মনের মধ্যে গেঁথে আছে এ পরম সত্য।
পার্শ্ববর্তী অন্য গ্রামগুলোর মধ্যে সুবোধপুর গ্রামটা কেবল পাঁচ মাইলের মধ্যে। সুবোধপুর বাজার থেকে সওদা এনে এ নবগ্রামের মানুষদের দিন চলে। যাতায়াতের কোন যান বাহন নেই। মোট বয়ে নিজেরাই নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র নিয়ে আসে। রহমত আলীর সামনে যার যার প্রয়োজনীয় জিনিষগুলো ভাগ করে দেওয়া হয়। জীবিকার মধ্যে চাষাবাদ আর নদীতে মাছ ধরা। এতেই কোন ভাবে চলে যায়।
সন্ধ্যা নামলেই একটা ভয় কাজ করে। কার জমি কে জানে। আজ চার পাঁচ বছরের মধ্যে এখনও কোউ কোন দাবী নিয়ে আসেনি। তবুও ভয় হয় যদি কেউ কোনদিন তুলে দেয়। শক্ত পোক্ত ঘর কারও নেই। সব ঘরগুলোতে ভেন্না পাতার ছাউনি আর কাশ বনের শুকনো লতার বেড়া। জায়গাটা সমতল। মাঝে মধ্যে কয়েকটা বড় দেবদারু আর পাইন গাছ। একটা বড় বট গাছ। দেখলে মনে হয় কয়েকশ বছরের পুরানো। বট গাছের ঝুলে পরা লতার বেষ্টনীর ভিতর লুকিয়ে আছে বহু বছরের পুরানো একটা ছোট্ট মন্দির। ইট সুড়কির গাঁথুনি। বেশ প্রশস্ত দেওয়াল। দেখলে মনে হয় একসময় জনবসতি ছিল।
এই জায়গায় প্রথম পা রাখে রহমত আলী। নবগ্রাম নামটিও তার দেওয়া। রহমত আলীকে সবাই সম্মানের চোখে দেখে। রহমত কিভাবে এই জায়গার সন্ধান পেল অনেকেই জিজ্ঞাসা করেছে। এই কথাটা রহমত কাউকে বলেনি। বলবেও না। জিজ্ঞাসা করলে বলে জায়গাটা মন্দ না। তোমাদের ভালো না লাগলে অন্য গাঁয়ে যাইতে পার। আমি কাউরে ধইরে রাখবো না। আরও একটা কারণে রহমতকে সবাই মানে। কারণ রহমতের বড় ছেলে রাশেদ। বিদ্যা বুদ্ধি আছে। লেখাপড়া জানা ছেলে। ঢাকায় থাকে। দেশ বিদেশের কত খবরই না সে রাখে। কত বেশী লেখাপড়া জানলে এতকিছু জানা সম্ভব তা এই নবগ্রামের বাসিন্দাদের অজানা নয়।
গতবার যখন বাবাকে দেখতে আসে হাতে করে ছোট্ট একটা যন্ত্র নিয়ে এসেছিল। ওটা দিয়ে নাকি দেশ বিদেশের মানুষের সাথে কথা বলা যায়। যে দু'দিন ছিল সারাক্ষণ ওটা নিয়ে ঢাকার বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করছে। আবার বন্ধুদেরকে চিটিও লিখছে। রহমত জিজ্ঞাসা করেছিল- - ওটা কি বাজান। - মোবাইল ফোন। - তা ওটা দিয়া এত কথা কস কেমনে। কোন তার নাই কিচ্ছু নাই। - এটাতে তার লাগেনা। তার ছাড়াও কথা বলা যায়। গান শোনা যায়। চিঠি লেখা যায়। ছবি তোলা যায়। - কি কস বাজান। আমিতো তাজ্জব বইনা গেছি। এই ছোট্ট একখান যন্ত্র। এত কিছু কি কইরা হয়। - হয় বাজান হয়। এর মধ্যে ছোট একটা সিম আছে। ওই সিমটা লাগালে সবকিছু হয়। এই দেখ। এইযে এইটা হল সেই সিম। রাশেদ বাবাকে সিমটা খুলে দেখায়। - ও মা, এতো দেখি আরও ছোট। রহমত মাথায় হাত দেয়। মোবাইলে চিটির ব্যাপারটা কিছুতেই মাথায় আসছে না। আগের নদী পাড়ের রহিমপুর গ্রামের পোষ্ট অফিসটার ছবি ভেসে উঠে মনে। একসময় সারা গ্রামের মানুষ সকাল হলে পোষ্ট অফিসে ঢু মারত। মানুষের খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য। ডাক পিয়ন বাড়ী বাড়ী এসে চিঠি বিলি করত। এখন তা নেই। জীর্ণ দশা। তিন পায়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকা ডাক বাক্সটির দরজাটা সারাক্ষণ খোলা। জং ধরে গেছে। পোষ্ট মাষ্টার থাকে না। পিয়নটি চাকরী বাঁচানোর জন্য মাঝে মধ্যে আসে। ভাঙ্গা চেয়ারটার একটা পা গাছের খুঁটির সাথে বাঁধা। ঘণ্টা দু'য়েক চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে নেয়। বারান্দার খুঁটিগুলোর সাথে সাত আটটা গরু ছাগল সব সময় বাঁধা থাকে।
শেষবার সুধীর মাষ্টারকে দিয়ে একখানা চিঠি লিখিয়েছিল। মায়ের অসুখের খবরটা রাশেদকে জানিয়েছিল। লিখেছিল তাড়া তাড়ি বাড়ী আসার জন্য। একমাস পর চিঠিটা যখন হাতে পেয়ে বাড়ী আসল তখন আর মাকে দেখতে পায়নি। বড্ড কষ্ট হচ্ছিল রাশেদের। তার বছর খানেকের মধ্যে শুরু হল নদী ভাঙ্গন। পোষ্ট অফিসটা হারিয়ে গেল। সেই সাথে পুরো গ্রাম খানা। রহমত রাত জেগে সেই ভাঙ্গনের ধ্বনি শুনতো। আর দু'হাতে মাথার চুল টেনে নীরবে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদত।
ভাবতে ভাবতে চোখে জল আসে রহমত আলীর। ছেলেকে জিজ্ঞাসা করে এটা দিয়ে মানুষের জন্য ভালা কিছু করন যায়না। রাশেদ অভয় দিয়ে দিয়ে বলল-বাজান মানুষের ভালোর জন্যই বৈজ্ঞানিকরা অনেক সাধনা করে এই জিনিষগুলো আবিষ্কার করেছে। বিজ্ঞান সাধনার ফলে মানুষ এখন কি না করছে। নিয়মিত চাঁদের দেশে মানুষ যাচ্ছে। ওখানে ঘরবাড়ী করার চিন্তা ভাবনা করছে। একদিন দেখবে ওখানেও মানুষ বাস করা শুরু করে দিয়েছে। - কি কও বাজান। তুমি কি আমার সাথে ঠাট্টা করছ। নাকি মনে করছ আমি লেহাপড়া জানিনা বলে আমারে যা কইবা তাই বিশ্বাস করুম। - না বাজান। ঠিক কথাই বলছি। আমি তোমার ছেলে। আমি তোমার সাথে ঠাট্টা করবো কেন। - তা বাপ, মানুষজন চাঁদে গেলে ওখানে আবার মারামারি, সীমানা ঠেলাঠেলি, হিংসা হানাহানি এসব করবে নাতো। চাঁদ তো আল্লার কত পবিত্র উপহার। চাঁদের উপরে আমাগো ঈদ রোজা, পূজা পার্বণ, অমাবস্যা পূর্ণিমা সব হয়। বাজান ওখানে কি নদী আছে ? নদীর ভাঙ্গন আছে ?
পাশের বাড়ীর কুলছুমা এসে ডাকল-ভাইজান, মা আপনের খাওন দিছে। তাড়াতাড়ি আসেন। এই দুই দিনে এক বেলাও ঘরে খাওয়া হয় নাই। সবাই রাশেদকে খুব আপন করে নেয়। এই বেলা ফুলবিবির ঘরে তো অন্য বেলা পরীবানুর ঘরে। যে ক'জন ছেলে মেয়ে সবাই রাশেদকে ঘিরে ধরে। ঢাকা থেকে আসার সময় এই ছেলে মেয়েদের জন্য কিছু বই খাতা পেন্সিল নিয়ে আসে। সমবয়সী কেউ নেই। যেটুকু সময় থাকে তাতে ছেলে মেয়েগুলোর লেখাপড়া শেখাতে চেষ্টা করে। রাশেদ যেদিন ঢাকায় ফিরে যায় গ্রামের সকলে অনেকদূর এগিয়ে দেয়।
পরদিন রাশেদ চলে যাবে ঢাকায়। রহমত আলীর স্বপ্নটা রহমতকে তাড়া করে ফিরছে। রাতে ভালোমতো ঘুমাতে পারে নাই। কেবল ভাবছে এরকম একটা যন্ত্র যদি কোন ভাবে হাতে পাওয়া যেত। একবার ভাবছে রাশেদকে একটা কিনে দিতে বলব নাকি। নিশ্চয় অনেক দাম হবে। আমিও কোন খরচ দিতে পারি না। উল্টো ছেলে মাঝে মধ্যে আমার জন্য কিছু পাঠায়। এখন চাকরী বাকরী হয়নি। টিউশনি করে। এত টাকা পাবে কোথায়। আর তাছাড়া আমি তো কিছুই চালাতে জানিনা। যদি কোন যন্ত্রপাতি নষ্ট করে ফেলি তবে তো আর এক মুছিবত। এই ভাবতে ভাবতে সারারাত ঘুমাতে পারেনি। খুব সকালে উঠে পরেছে রহমত। রাশেদ চলে যাবে। যাওয়ার সময় রাশেদ বলল-বাবা এখানে নেটওয়ার্কটা ভালো। সামনে বার আসার সময় তোমার জন্য একটা মোবাইল নিয়ে আসব। রহমত শুধু বলল, আমি মূর্খ মানুষ। লেখাপড়া জানিনা। আমি কি ওসব চালাতে পারব। রাশেদ অভয় দিয়ে বলল-পারবে না কেন। অবশ্যই পারবে। আমি শিখিয়ে দেবো। দেখো তুমি প্রতিদিন আমার খোঁজ খবর নিতে পারবে।
রহমতের আনন্দ যেন আকাশ ছুঁয়েছে। সেদিন দু'মাইল হেঁটে ঐ বটগাছটা পর্যন্ত ছেলেকে এগিয়ে দিয়ে এসেছে। ছেলের পথের দিকে তাকিয়ে থেকেছে অনেক্ষন। যতক্ষন পর্যন্ত দৃষ্টির সীমানায় দেখেছে। তারপরও অনেক্ষন দাঁড়িয়েছিল। চোখের আড়াল হলে পর রহমতের মনের মধ্যে একটা শূন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। মা মরা ছেলেটাকে কিছুতেই বিদায় দিতে মন চাইছে না। কেবল ভবিষ্যতের কথা ভেবে ছেলের কখনও কোন কাজে না করেনি। সুধীর মাষ্টারের কথা মনে হয়। সুধীর মাষ্টার না থাকলে আজ আমার মতই এখানে হালচাষ করতে হতো। সুধীর মাষ্টারের একটায় কথা - ছেলের লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজন হলে মানুষের কাছে হাত পাতবে। আমিও চেষ্টা করবো আমার সর্বস্ব দিয়ে যেন লেখাপড়া থেমে না যায়। সেই প্রথমবার যখন ঢাকা যাচ্ছিল সুধীর মাষ্টার সাথে ছিল। সমস্ত খরচ মিটিয়েছে। হাত খরচ দিয়ে এসেছে। তারপর থেকে মাসে মাসে কিছু কিছু হাতখরচ পাঠাতো। আজ সুধীর মাষ্টারও নেই। সব কিছু কেবল শূন্য মনে হচ্ছে। মনের বোবা কান্নার জলে চোখের কোনা ঝাপসা হয়ে এলো। ফেরার পথে অনেক্ষন সময় বটগাছটার নীচে বসে থাকে রহমত।
ইদানীং রাতে ভালো ঘুম হয় না রহমতের। শীতের রাত। বেড়ার ফাঁক দিয়ে ঝির ঝিরে হাওয়া এসে ঘরে ঢুকছে। হাড় কাঁপুনে ঠান্ডা লাগে শরীরে। বাইরে ফুরফুরে জ্যোৎস্না। ঘুম আসছে না। রহমত মোটা কাঁথাটা গায়ে জড়িয়ে কিছু সময় ঘরের বারান্দায় এসে বসে। উঠোনের শিউলী গাছ থেকে শিউলী ফুলের গন্ধ নাকে এসে লাগছে। কুয়াশার চাদরে ঢাকা পরে আছে সারা পৃথিবী। দূরে ঐ বটগাছটার দিকে চোখ পরে। ভাল করে ঠাহর করতে পারছে না। মিটি মিটি করে একটা আলো জ্বলছে। এই রাত্তিরে আলো জ্বাললো কে। কি-ই বা আছে। কত পুরানো কেচ্ছা মনে পরছে। তার অনেকটায় ভৌতিক কিংবা অলৌকিক। গা শিউড়ে উঠে রহমতের। আজ রাশেদের কথাগুলোও ওই রকম অলৌকিক মনে হচ্ছিল। কি বলে আধুনিক বিজ্ঞানের সুবাদে কোন কিছুই অসম্ভব নয়। এই ছোট একটা যন্ত্র। তারও কি ক্ষমতা। কতকিছুই আছে এর মধ্যে। এই ছোট একটা কাগজের মত চিপ না সীম। না কি যেন বলল। ঠিক মনে করতে পারছে না।
হাতে কালো রংয়ের মোবাইলটা হাতে পেয়েছে রহমত। অনেকবার ভালো করে দেখছে যন্ত্রটাকে। কি আজব সৃষ্টি আল্লাহতালার। কি অসীম ক্ষমতা। একই বলে মহান সৃষ্টিকর্তার কুদরত। একবার না দিনের মধ্যে অনেকবার ছেলেকে ফোন করতে ইচ্ছা করছে। এর মধ্যে কিছুক্ষন পর পর কয়েকবার ফোন করেছে। ছেলের নাম্বারটা সেভ করা আছে। একসময় রাশেদ বিরক্ত হয়ে বললো-বাবা ওভাবে ফোন করলে তো তোমার ব্যালেন্স শেষ হয়ে যাবে। আর তাছাড়া আমি টিউশানিতে থাকি, ক্লাস থাকে, আরও অন্য কত কাজে ব্যাস্ত থাকতে হয়। প্রতিদিন একবার রাতে ফোন করলে ভালো হয়। রহমত মেনে নেয়। সত্যিই তো ছেলেটার কত কাজ।
বটগাছের আড়াল থেকে তির্যক আলোর রশ্মিটা রহমতের চোখে এসে লাগে। রহমতের চিন্তাশক্তির আমূল পরিবর্তন হয়। কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে। এই যন্ত্র দিয়ে কোন কিছুই অসম্ভব নয়। সেই আলোর রশ্মিটা আরও আলোকিত হয়। রহমত ভাবে ঐ বটগাছের শিকড়ের ভিতর যে ভাঙ্গা ইটের গুড়ো দেখেছি নিশ্চয় দু'হাজার কিংবা পাঁচ হাজার বছর আগে ওখানে কিছু একটা ছিল। আমি ওটা দেখব। বালিশের নীচ থেকে সযত্নে মোবাইল নামক যন্ত্রটা হাতে নেয়। খুব ধীর পায়ে এগিয়ে যায় বটগাছটির দিকে। গায়ে কিছুই নেই। একটা গামছা কাঁধে ঝুলানো। মোবাইলের একটা বাটন চিপে ধরে বলল-আমার শরীরে যেন শীত না লাগে। তাই বুঝি এই কনকনে শীতেও শরীর কেমন গরম। তারপর দু'হাত তুলে আল্লার দরবারে ফরিয়াদ করে বললো-হে আল্লাহ পৃথিবীর সকল দুঃখী মানুষ যারা এই শীতে কষ্ট পাচ্ছে তাদের শরীরে তুমি এই উষ্ণতা ছড়িয়ে দাও। হঠাৎ করে হাতের যন্ত্রটাতে একটা ভাইব্রেশন হল। এবং তাই হল।
কুয়াশায় কাঁধের গামছা ভিজে গেছে। বটগাছের ভিতর যে আলোটা দেখেছিল কাছাকাছি আসতেই তা ক্রমশ: ৰীন হয়ে আসছে। গাছটার কাছাকাছি যেতেই মোবাইলের আর একটা বাটন চেপে বলল-আলোটা জ্বলে উঠুক। আর এখানে হাজার বছর আগে কি ছিল আমি দেখতে চাই। রহমতের চোখ জোড়া স্থির। সে কিছুই ভাবতে পারছে না। চোখের সামনে মুহূর্তেই আলোটা জ্বলে উঠল। সারা নবগ্রাম, সুবোধপুর গ্রাম সহ পার্শ্ববর্তী অন্যান্য গ্রামগুলো আলোয় আলোকিত হয়ে উঠল। পাশাপাশি বটগাছের নীচে মাটি ফুরে উঠল অপূর্ব সুন্দর কারুকাজের এক বিশাল মন্দির। মন্দিরের চারপাশে অনেক নারী পুরুষ। কেউ উলুধ্বনি করছে, কেউ খোল করতাল নিয়ে নাচছে। পাশাপাশি একের পর এক আরও কিছু কাঁচা পাকা বড় বড় বাড়ী। পশ্চিমে তালগাছটার পেছনে চোখ পরতেই দেখল অপরূপ সুন্দর এক বিশাল মসজিদ। হাজার হাজার লোক সে মসজিদে এবাদত বন্দেগী করছে। সকালে নবগ্রামে বিশাল বাজার বসেছে। হরেক রকম জিনিষ। গঞ্জ থেকে বড় বড় বজরা করে সওদা আসছে। জেলেরা মাছ ধরায়, তাতিরা কাপড় বুনায়, কুমোররা হাড়ি পাতিল তৈরিতে, ধোপারা কাপড় কাঁচায়, কৃষকরা চাষের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে।
রহমত নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এ কি করে সম্ভব। সব কিছু স্বপ্ন বলেই মনে হচ্ছে। অথবা রহমতের কল্পনার অবাধ বিচরণ। নিশ্চয় তার রাশেদ তাকে মোটেও মিথ্যা বলেনি। উপরওয়ালার সৃষ্ট প্রকৃতি ঠিক থাকলে সবিই সম্ভব। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখে একদল লোক লাঠিসোটা নিয়ে দরজায় দাড়িয়ে আছে। তারা বলছে এ জমি আমাদের। দেখছ না আমাদের বাপ দাদার আমলের জমি জমা, বাড়ী ঘর। এখনি বের হয়ে যাও। নইলে লাঠিপেটা করে তাড়াব। নবগ্রামের সবাই এই আগন্তুকদের ঘিরে রেখেছে। রহমত কি যেন ভাবল। তারপর বলল-সবকিছু নতুন ভাবে গড়ে তুলেছি। এখন এসব ছেড়ে কোথায় যাবো। মনে পড়ল রাশেদ বলেছিল-চাঁদেও যাওয়া যায়। সেখানেও যদি এভাবে তাড়িয়ে দেয়।
হঠাৎ এতগুলো লোকের পেছনে খেয়াল হল রাশেদ দাঁড়িয়ে আছে। বাবার চোখে চোখ পরতেই সালাম করল। রাশেদকে দেখে নবগ্রামের সকলের আতংক কেটে গিয়ে হাসি ফুটে উঠল। মোবাইলটা হাতে দিয়ে বলল-কোথাও যেতে হবে না বাবা। আমরা এখানেই থাকব।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আহমেদ সাবের
"বটগাছের আড়াল থেকে তির্যক আলোর রশ্মিটা রহমতের চোখে এসে লাগে।" থেকে স্বপ্ন দৃশ্যের শুরু। "সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখে " - এখানে এসে স্বপ্ন দৃশ্যের (অতীত) শেষ। তার মানে, ধরে নেয়া যায় "লাঠিসোটা নিয়ে দরজায় দাড়িয়ে" থাকে লোকগুলো বাস্তব। এই স্বপ্ন এবং বাস্তবের নিরিখেই মূল বক্তব্যের শক্তিশালী ইঙ্গিত। রহমত অনেক আগেই ছেলের কাছ থেকে মোবাইল পেয়েছে। তা হলে "মোবাইলটা হাতে দিয়ে বলল..." বাক্যটার যৌক্তিকতা কতদূর? নবগ্রামের মানুষরা শান্তিতে থাকুন, আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনাই করি। বেশ ভাল লাগল গল্পটা।
অনেক ধন্যবাদ সাবের ভাই....আপনার মন্তব্য এবং বিশ্লেষণ পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি...আর রহমতের পুরোটাই ছিল স্বপ্ন...রাশেদ মোবাইল দেবে বলে যাওয়ার পর আর আসেনি...মোবাইল দিয়ে সব পারে..ছেলের কথার এই বিশ্বাসে অশিক্কিত গ্রাম্য রহমতের স্বপ্নের পরিধি বাড়তে থাকে...শেষ পর্যন্ত স্বপ্ন...আমার একটা বক্তব্য দেওয়া আছে..প্লিজ পড়ে দেখার অনুরোধ থাকলো...অসীম শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞ আপনার প্রতি...
এস, এম, ইমদাদুল ইসলাম
হ্যা , এরকম অনেক নবগ্রামের অনেক রহমতরা আজো স্বপ্ন দেখে। যেমনটা ছিল আগের মত । তারা ভাবতে চায়, সবই ঠিক আছে । ভাবতেই পারে না সমাজটা রাতারাতি এভাবে বদলে যেতে পারে । তই যখন দেখে একদল লোক লাঠিসোটা নিয়ে দরজায় দাড়িয়ে আছে , তখন স্বপ্ন ভেংগে যায় । রহমতদের স্বপ্ন এখন শুধুই স্বপ্ন ---- এ মানবজীবন আর কোনদিনই কি আর হবে না তেমন ? যেমনটা আজো রহমতদের চোখে ভাসে ---- অনেক ধন্যবাদ ।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।