পতাকার ছাউনি

মুক্তির চেতনা (মার্চ ২০১২)

মিলন বনিক
  • ২৪
  • 0
  • ১০
রাইখালী নদী।
ওপাড়ে নৌকার ছইয়ে বসে আছে হারাণ মাঝি। কি যেন ভাবছে। দেশের অবস্থা নিয়ে ভাববার অবকাশ নেই। ঘাটে নৌকা বেঁধে বাড়ী যাওয়ার আগে ভাবতে হয় পাঁচজনের খর পোষের কথা। কোন দিন ভরপেট আবার কোনদিন আধপেটা। বয়সও হয়েছে। একমাত্র সম্বল এই ডিঙ্গি নৌকা। নৌকার উপর সংসার। জলের উপর ভাসমান নৌকার মতো সংসারটাও সারাক্ষন টলমল করছে।
মাথার উপর সুর্যটা দেখে নিল। দুপুর হয়ে এসেছে। খাওয়ার সময় হয়েছে। এসময় দু'একজন যাত্রী পেলে ওপাড়ে গিয়ে খেয়ে আসতে পারত। খালি নৌকা বাইতে ইচ্ছা করে না। এ পাড় থেকে হরি গোয়ালা ডাক হাঁকছে। দুধের ভার নিয়ে আসছে হরি।
- ও হারাণ চাচা, একবার তাড়াতাড়ি আসো। দুধ যে বসে যাবে গো। হাট ধরে আবার ফিরতে হবে যে। একবার পার করে দাও।
হারাণ মাঝি শুনতে পায়। তারপরও অলস ভঙ্গিতে বসে থাকে।
দেশে কি সব ঘটছে। নৌকায় বসলে যাত্রীদের কাছ থেকে দেশের কথা শুনে। লোকজন দেশের কথা বলে। স্বাধীনতার কথা বলে। পাক বাহিনীর কথা বলে। পূর্ব বাংলা, পশ্চিম বাংলার কথা বলে। বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধের কথা বলে। দেশের ছেলেরা অনবরত যুদ্ধ করছে। মারা যাচ্ছে। শহীদ হচ্ছে। হানাদারেরা মা বোনদের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।
হরি গোয়ালার চিৎকারে হারাণ মাঝির চিন্তায় ছেদ পরে। নৌকার লগি খুলে বলে-খাড়াও, আয়তাছি।
হারাণ মাঝি খালি নৌকা বেয়ে হরি গোয়ালাকে আনতে যায়। মাথার উপর চড়া রোদ। হরি কাঁধের গামছাটা দু'ভাজ করে মাথার উপর দেয়। একটু ছায়া পায়। হারাণ মাঝি জিজ্ঞাসা করে-
- ও হরি, বলি দ্যাশের কথা কিছু জান?
- কি আর জানব চাচা, মাইনষে বলে আমি কানে শুনি। তয় এবার বোধ হয় পাক সেনারা আর পার পাইবো না। ভগবান ঠিক বিচারখান করবে তুমি দেখে নিও।
- সায় দেয় হারাণ মাঝি।
- হ আল্লাহ পাক কোনদিন এত গজব সহ্য করবে না। কত পাপ যে করতাছে ঐ শুয়োরের বাইচ্ছাগুলা। কত মা বোনের ইজ্জত নিচ্ছে, কত মায়ের বুক যে খালি হচ্ছে---
হারাণ মাঝি হঠাৎ বিলাপ করতে থাকে। হাতের বৈঠাটা নিজের অজান্তে নৌকায় রেখে দুই হাত উপরে তুলে আল্লার কাছে ফরিয়াদ করে বলে-
- হে আল্লাহ, তুমি ওদের শাস্তি দাও।
- শুনতাছি আমাগো গ্রামেও নাকি হামলা হইবো, লোকজন বলাবলি করতাছে।
- সে কি! কই শুনলা।
- করিম ভাই-ই তো কইলো। কইলো - যেখানে যাও তাড়াতাড়ি ফিরে আইসো। অবস্থা ভালা না।
হারাণ মাঝি আর লগি মারেনি। হরি গোয়ালাকে নামিয়ে দিয়ে ফিরে আসছে। আকাশটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। তাতানো রোদটাও একটু একটু করে ঠান্ডা হয়ে আসছে। মাথার উপরে শকুনগুলোর বিদঘুটে চিৎকার আর দল বেঁধে ঘুরপাক খাচ্ছে। অজানা ভয় আর আশংখায় পেয়ে বসেছে হারাণ মাঝিকে। ক্ষুধায় পেট জ্বলছে। আগাম বিপদ আঁচ করতে পেরে মুখটা ফ্যাকাশে ও বিবর্ন হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি বৈঠা মেরে এপাড়ে এসে লগি ফেলে হারাণ মাঝি ।

নদীর পাড়ে হারাণ মাঝির সংসার। বেড়ার ঘর। ছনের ছাউনি। য়েখানে ছন নেই সেখানে ভেন্না পাতার ছাউনি। ঘরের ঢুকার আগেই বউকে ডেকে বলে-
- ও বউ, তাড়াতড়ি খাইতে দে, ক্ষুধায় পেট জ্বলছে।
হারাণ মাঝির সাথে তের চৌদ্দ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছে রহিমা খাতুনের। বড় মেয়ে আরিফার বয়স বার। পর পর আরও চারজন। প্রথম দু'জন মেয়ে। তারপর তিনজন ছেলে। ফি বছর সন্তান জন্ম দেওয়া, অশিক্ষা, দারিদ্রতা সব মিলিয়ে যেন বার্ধক্যের সাথে আলিঙ্গন করতে চলেছে রহিমা। কষ্ট আর অভাব যেন নিত্য সঙ্গী। প্রাকৃতিক নিয়মে বেড়ে উঠছে সবাই। শত না পাওয়ার মাঝেও এ সংসারটাই হচ্ছে বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।
রহিমা ভাত বেড়ে দেয়। শুকটি দিয়ে শাক পাতা রান্না হয়েছে। পেটে ক্ষুধা আছে অথচ ভাত মুখে যাচ্ছেনা। রহিমা জিজ্ঞাসা করল-
- কি গো। ছালন ভালা হয় নাই।
হারাণ মাঝি চুপ। ভাত গুলো খালি নাড়া চাড়া করছে। রহিমা আবার জিজ্ঞাসা করে-
- ও আরিফার বাপ, তোমার কি হইছে। শরীর খারাপ।
- না।
- তাইলে অমন চুপ মাইরা আছ ক্যান?
- এমনি। হরি গোয়ালার কথা শুইনা কেমন যেন মনের মধ্যে ভয় ঢুকছে। অরা নাকি আমাগো গেরামেও আসবো।
- আইলেই বা কি না আইলেই বা কি। আমাগো কি আছে যে নিয়া যাইবো। আছেতো শুধু বেড়ার ঘরখান। তাতে তোমার এত ভয় পাওনের কি আছে?
হারাণ মাঝি চিন্তায় ছেদ পড়ল। মুখের কোণে একটু হাসি ফুটে উঠল। নতুন ভাবে ভাবতে শুরু করল, সত্যিই তো আমার কি আছে। ঘরখান ছাড়া তো আর কিছুই নাই। একুলে নদীর ভাঙ্গন শুরু হইলে ঘরখান এমনিতেই ভাইসা যাইবো। তখন যামু কই। এই পোলা মায়া লইয়া কোথায় যামু তাও আল্লাহ-ই জানে।
ভাবতে ভাবতে ভাতগুলো খেয়ে নেয়। আরিফাকে বলে- মাদুরটা বিছিয়ে দে'তো মা ।
আরিফা এককুচি করে শাড়ী পরেছে। দেখতে বেশ বড়ই মনে হচ্ছে। আরিফা মাদুর নিয়ে আসে। বারান্দায় মাদুর বিছিয়ে দিয়ে বলে- বা'জান আইজতো মুন্সীর হাট। হাটে যাইবা না।
- হ যামু।
- তাইলে শুইয়া পরলা যে।
- শরীলটা একটু টান দিয়া লই। আর পারি না রে মা। দিনকালও খারাপ। লোকজন নিতান্ত প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বাইর হয় না। ঘাটে আইসা নৌকা পার না হইলে আয় রোজগার হইব কোত্থেকে। আর আয় রোজগার না হইলে খামুই বা কি।
- বা'জান, আপনের মাথায় একটু বিনি কাইটা দিই। আরিফা হারাণ মাঝির মাথার পাশে বসে।
- দে, তয় মা আমার মনে হইতাছে তুই আমারে কিছু কইবার চাস।
- না বা'জান, না মানে। হারাণ মাঝি বুঝতে পারে মেয়ে লজ্জা পাচ্ছে।
- শরম পাছ ক্যান মা। আমি তো তর বাপ। আমি তো বুঝি মা। কি কবি আমারে ক।
- বা'জান কইবার চাইছিলাম বাজারে গেলে আমার জন্য একটা আলতা--।
- আর কইতে হইবো না। তোর জন্য আমি ঠিক নিয়া আসুম।
ঘুমের ঘোরটা কেবল লেগে আসছিল। হনুফা আর সোহেল ভাইবোন মিলে খেলছিল নদীর পাড়ে। গ্রামের রহিম, শিমুল দু'জন নদীর ঘাটের দিকে আসছে। দু'জনের হাতে বাজারের থলে। বাজারে যাবে হয়তো। নৌকায় উঠার আগে চারপাশটা দেখে নেয়। হাতের ইশারায় সোহেলকে ডাকে রহিম। সোহেল কাছে আসে।
- তোর বা'জান কই।
- ঘুমাইতাছে।
- তরে একটা জিনিস দিলে যত্ন কইরা রাখতে পারবি। তরে আট আনা দিমু।
- হ পারুম না ক্যান। সোহেল চটজলদি জবাব।
- তয় খুব সাবধান। কাউকে বলতে পারবি না কিন্তু। কেউ জানলে কিন্তু বিপদ আছে কইয়া দিলাম।
- আইচ্ছা ঠিক আছে।
- তুইও কখনও প্যাকেটটা খুলে দেখবি না।
- আইচ্ছা। নীরব সম্মতি দেয় সোহেল।
সোহেলের এত সব বুঝার কাম কি। আট আনা পয়সা পাবে এই কত কি। তাছাড়া সারাক্ষণ নদীর পাড়ে থাকে। নৌকা আসলে যাত্রীদের মালামাল উঠিয়ে দেয়, নামিয়ে দেয়। তাতে অনেকে দু'আনা চার আনা দেয়। সারাক্ষণ অপেক্ষায় থাকে এই বুঝি কেউ ডাকলো। তাতেই সে খুশী।
নৌকায় বসে রহিম তার থলে থেকে প্লাষ্টিকে মোড়ানো একটা পোটলা মত বের করে সোহেলের হাতে দিয়ে বলল-
- ধর, তোদের ঘরের ঐ কোণায় লুকিয়ে রেখে আয়। একটা গর্ত করে লতা পাতা দিয়ে ডেকে রাখবি। আমার যখন দরকার হবে আমি নেব। আর শোন-তোর বা'জানরে ডাকার দরকার নাই, তুই আমাগোরে পার কইরা দিবি, পারবি না।
- পারুম না মানে। একশবার পারূম।
পোটলাটা বেশী বড় নয়। ছোট্ট সোহেল লুঙ্গির ভেতর লুকিয়ে পোটলাটা ঠিক জায়গায় রেখে আসল। একবারের জন্যও কৌতুহল হলোনা। দৌড়ে এসে নৌকার বৈঠা হাতে নিয়ে বলল-
- চলেন ভাইজান, আপনেগোরে ঘুরাইয়া বাজারে নিয়া যামু, না ঐ পাড়ে নামাইয়া দিমু।
- ঐ পাড়ে নামাইয়া দে।
রহিম দুটা টাকা দিল সোহেলের হাতে। বলল-
- এক টাকা তোর আর এক টাকা ভাড়া। ঠিক আছে তো।
- হ ভাইজান ঠিক আছে। সোহেল খুশী হয়ে বলল।
সন্ধ্যা হয়ে আসছে।
ওপাড় থেকে লোকজন বাজার সদাই করে ফিরছে। দু'একজন করে লোক আসছে। এপাড় থেকে যাওয়ার কেউ নেই। এপাড়ে নামিয়ে দিয়ে আবার ওপাড়ে গিয়ে অপেক্ষা করছে। হাতে টাকা পয়সা নেই। হাটে যেতে মন চাইছে না। হাটে যাওয়ার সময় মধু দফাদারের হাতে দুটো টাকা গুজে দিয়ে বলল-
- ও কাকা, আমার মায়াডার আলতা পরার সখ হইছে। হাট থেকে ফেরার পথে একটা আলতা নিয়া আইসো। কি আর করুম ক, মায়াগুলার কত স্বাদ আহ্লাদ, মুখ খুলে কিছু কয় না। আমি তো বাপ, সবিই বুঝি। কিন্তু কিছুই দিবার পারি না। কোন স্বাদ আহ্লাদ পূরণ করবার পারি না।
মধু দফাদার সান্তনা দেয়। কি আর করবা। সবাই তো সবকিছু ঠিকঠাক করতে পারে না। তুমি দেইখা লইও দেশটা স্বাধীন হইয়া গেলে আমাগো আর কোন দুঃখ কষ্ট থাকবো না। আমরা আবার মানুষের মত মানুষ হয়ে বাঁচবার পারুম। হ তুমি দেইখা লইও।
হারাণ মাঝি কাঁধের গামছা দিয়ে চোখ মুছে। তার সারা মুখে অসহায়ত্বের ছাপ। মধু দফাদারের সান্তনার বাণীটা বার বার মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। দেশটা স্বাধীন হইয়া গেলে আমাগো আর কোন দুঃখ কষ্ট থাকবো না। আমরা আবার মানুষের মত মানুষ হয়ে বাঁচবার পারুম। হ তুমি দেইখা লইও।
হরি গোয়ালা এসে পরেছে। হারাণ মাঝি আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল। শরীরটা বড় ক্লান্ত। এর মধ্যে মধু দফাদার এসে পরলে একসাথে ফিরে যাবে। কিন্তু এখনও আসছে না কেন।
হরি গোয়ালা একটা বিড়ি এগিয়ে দেয় হারাণ মাঝিকে। বিড়িতে লম্বা একটা টান দেয় হারাণ মাঝি। গামছাটায় একবার মুখ বুলিয়ে বলে-
- দেশটার যে কি হইলো। কিছু বুঝবার পারতাছি না।
- কি আর হইবো। যুদ্ধ লাগছে। যুদ্ধ চলবো। আমরাও কম কিসে। আমাদের দ্যাশের জন্য আমরা যুদ্ধ করুম। আমাগো জয় হইবোই।
এর মধ্যে মধু এসে পরে। নৌকায় পা দিয়েই বলল-তাড়াতাড়ি লগি তোল। হাটের পূর্ব দিকে নাকি মিলিটারি আইসা পরছে। আমাগো চেয়ারম্যান সাবরে দেখলাম বড় দৌড়াদৌড়ির মধ্যে আছে। বাজারের থলে থেকে আলতার শিশিটা বের করে হারাণ মাঝির হাতে দেয়।
হারাণ মাঝি আলতার শিশিটা আরিফার হাতে দিয়ে বলে- এই ল মা, তোর আলতা।
- বা'জান তুমি তো হাটে যাও নাই, আনলা কেমনে।
- তোর মধু কাকাকে দিয়া আনাইছিরে মা।
- তুমি আর ঘাটে যাইবা না।
- নারে মা। রান্না বান্না কিছু হইছে।
- হ বা'জান। তুমি হাত মুখ ধুইয়া লও, আমি মারে কইতাছি তোমারে ভাত দিতে।
আরিফা যে কত খুশি হয়েছে তা হারাণ মাঝির বুঝতে একটুও কষ্ট হচ্ছে না। সোহেল এর মধ্যে ঘরের কোণায় গিয়ে দু- তিন বার ঘুরে এসেছে। কাউকে কিছু বলেনি। সন্ধ্যার পর একবার ভাবছিল জিনিসটা কি একবার দেখে আসি। পাড়ায় রহিম ভাইজানকে সবাই মান্যি করে। ভয়ও করে। সবাই চেনে। সেই ভয়ে দেখার সাহস হয়নি।
ভাত খেতে বসে হারাণ মাঝি খেয়াল করল আরিফা আর হনুফা ঘরের এক কোণায় কুপি জ্বালিয়ে বসেছে। হাতে পায়ে আলতা লাগাচ্ছে। কুপির আলোয় লাল রং চিক চিক করছে। রহিমা কিছু বলেনি। হারাণ মাঝি ওদের আনন্দ দেখে মুখ টিপে হাসছে।
গভীর রাত।
হঠাৎ গুলির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে য়ায় হারাণ মাঝির। দূরে কোথাও গুলির শব্দ হচ্ছে। বিছানায় বসে একটা বিড়ি ধরায়। পরক্ষনে খেয়াল করল ঘরের চারপাশে অনেকগুলো পায়ের শব্দ। বাইরে হালকা জোৎস্না। নদীর জলগুলো চিকচিক করছে। বেড়ার ফাঁক দিয়ে নৌকাটা দেখে নেয়। না নৌকা ঘাটে বাঁধা আছে। পাশাপাশি আর একটা বড় নৌকা চোখে পরল। বুকের ভেতরটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠল হারাণ মাঝির।
শব্দগুলো ঘরটার খুব কাছাকাছি মনে হচ্ছে। বেড়ার ফাঁক দিয়ে টর্চের আলো এসে গায়ে পরছে। রহিমার তখনও ঘুম ভাঙ্গেনি। গায়ে হাত দিয়ে একবার ডাকল- ও বউ, উঠ না। কারা যেন ঘাটে আইছে।
গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না। হাতের কাছে ঘটিটা উপুড় করে জল খেয়ে নেয়। বেড়ার দরজা। একটা আচমকা শব্দ শুনল হারাণ মাঝি। তারপর চোখের উপর তীক্ষ টর্চের আলো ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেল না। শুধু কানে রহিমার আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে। রহিমার গোঙ্গাানীর শব্দ। বেড়ার ওপাশ থেকে আরিফা চিৎকার করে বলছে-বা'জান আমারে বাঁচাও। আর কিছু শোনা গেল না।
সকালে ফজরের আযান শুনল হারাণ মাঝি। দেখল বিভৎস দৃশ্য। বিবস্ত্র আরিফা আর রহিমার দেহটা পরে আছে মেঝেতে। সারা শরীরে অজস্র আলতার রং। সোহেল জিজ্ঞাসা করল-বা'জান মার আর বুবুর কি হইছে।
রহিমের দেওয়া পুটলিটার কথা মনে পড়ে সোহেলের । এক দৌড়ে ঘরের কোণায় গিয়ে দ্যাখে আসে। না সবকিছু ঠিকঠাক আছে।
সাত বছর পর।
এর মধ্যে কত কিছু ঘটে গেল । দেশ স্বাধীন হয়েছে। রহিম, শিমূল আর ঘরে ফিরে আসেনি। ওরা যুদ্ধ করতে গিয়েছিল। হানাদারেরা পেছনে হাত বেঁধে নদীর পাড়ে গুলি করে মেরেছে। শহীদের তালিকায় ওদের নাম আছে। সোহেল যেদিন খবরটা পেল ঘাট থেকে দৌড়ে গিয়ে মাটি খুড়ে পোটলাটা বের করে। পরতে পরতে বাঁধা পুটলিটা খুলে দেখল একটা বড় জাতীয় পতাকা। চারপাশে গাঢ় সবুজ আর মাঝখানে লাল সূর্য। ঠিক আরিফার আলতার রঙ্গের মতোই।
হারাণ মাঝি আর নৌকায় বসে না। সারাক্ষণ ঘাটে বসে থাকে। সোহেল সংসারের হাল ধরেছে। সোহেল পতাকাটা বাবার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বলে-বা'জান দুঃখ কিসের। এই দেখ আমাগো পতাকা। চল আমার লগে।
হারাণ মাঝি সোহেলের সাথে নদীর পাড়ে যায়। যেখানে আরিফা আর রহিমা শুয়ে আছে পাশাপাশি। সোহেল চারটা বাশেঁর লাটি কবরের চার কোণায় গুজে দেয়। তারপর পতাকাটা সুতা দিয়ে চার কোণায় বেধে দেয়। মা আর বোনের কবরে ছাউনি হল।

রহিমা, আরিফা বা হারাণ মাঝির নাম কোথাও নেই। এসমস্ত খবরও কেউ রাখেনা। বয়সের ভারে নু্যজ হারাণ মাঝি। মুখে কোন কথা নেই।
শুধু সে দিনের কথাটা মনে পরলে আজো গা শিউরে উঠে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
প্রিয়দর্শন বড়ুয়া "যুদ্ধকালীন খন্ডিত নিষ্ঠুরতা" এত সুন্দর করে আপনার লেখনীতে প্রকাশ পেয়েছে , সত্যি অসাধারণ।
দাদা আপনার সুন্দর মন্তেব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি......।
নীলকণ্ঠ অরণি গল্প পড়ে মুগ্ধ হলাম।
দন্যবাদ ধন্যবাদ....Neelkontho
রওশন জাহান গল্প ভালো হয়েছে তবে চেষ্টা থাকলে আরো অনেক ভালো গল্প এই হাত থেকেই আমরা উপহার পাব। তবে যে অংশে আমার প্রশ্ন এসেছে মনে তা হল সোহেল জিজ্ঞাসা করল-বা'জান মার আর বুবুর কি হইছে। মায়ের আর্তনাদ আর বোনের চিৎকার হারান মাঝির কানে আসলেও সোহেলের কানে কেন আসেনি। আসলে সে তো কান্নাজড়িত কন্ঠে জিজ্ঞেস করত। আবেগের প্রকাশটা এখানে বাস্তব সম্মত হয়নি। আর একটি বিষয়, হারান মাঝি আর সোহেলের উপর কোন অত্যাচার হয়নি ব্যাপারটি কেমন যেন যুদ্ধাবস্থার সাথে মানায়নি। আক্রমণটি কি শুধু তাদের উপরই হয়েছিল নাকি সারা গ্রামে হয়েছিল সেই তথ্য অনুপস্থিত কারন রাতের এই তান্ডবের পর ফজরের আযান মানে যুদ্ধাবস্থা নয় স্বাভাবিক অবস্থার একটি পরিবেশের ইঙ্গিত করে। শুভ কামনা থাকল ভবিষ্যতের জন্য।
রওশন জাহান আপা, দোয়া রাখবেন যেন আরো ভালো লেখা উপহার দিতে পারি। আপনার বিষয়গুলো সুবিবেচানায় রেখে বলছি স্থান কাল পাত্র বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে..তখনকার সময়ে একটা ৫/৬ বাচ্চার অনুভূতি কি হতে পারে??? আর কিইবা আছে হারান মাঝির..সম্বল তো ওরা..আর তাণ্ডবের নমুনা সকল দেশ গ্রামে একই..এটি একটি খন্ড চিত্র মাত্র...আর গল্পের কলেবর বৃদ্ধির ব্যাপারটা মতাহি রেখে অনেক কিছু এড়িয়ে যেতে হয়েছে..আপনার সুপরামর্শ আমার প্রেরণা...
শাহ আকরাম রিয়াদ সুন্দর একটি গল্প পড়লাম.... ধন্যবাদ ত্রিনয়ন ভাই।
ধন্যবাদ রিয়াদ ভাই.....
Sisir kumar gain সুন্দর লিখেছেন । ভাল লাগল।
ধন্যবাদ শিশির ভাই.....
সুমননাহার (সুমি ) হারান মাঝির জন্য সত্তি খুব খারপ লাগছে আর আপনার লিখা সত্তি সুন্দর মনে হয় গল্পের বই পরছিলাম. সুভকামনা রইলো ৫ দিলাম
সুমননাহার (সুমি ), আপনার প্রশংসা আমার প্রেরণা....ধন্যবাদ.....
শেখ একেএম জাকারিয়া চমৎকার একটি গল্প পড়লাম।শুভকামনা।
জাকারিয়া ভাই, আপনার মন্তব্য আমার প্রেরণা....ধন্যবাদ.....
আহমেদ সাবের হারান মাঝিদের কথা কেউই লেখে না, ত্রিনয়ন। চমৎকার সাবলীল লেখা। ঘটনার বিন্যাসে বিশ্বস্ততা। অসাধারণ জীবনমুখী গল্প।
সাবের ভাই, আপনার মন্তব্য আমাকে আরো বেশি সাহায্য করবে এগিয়ে যেতে... দোয়া রাখবেন যেন আরো ভালো লেখা উপহার দিতে পারি ।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি Du Noyone porlam ..R ..Tre Noyone Bujhlam....Tai Upolodhir Folafol.=5
থ্যান্কস লট, আনিসুর ভাই...থ্যান্কস লট......
মারুফ মুস্তাফা আযাদ খুব ভালো লাগল ভাই। সুন্দর উপস্থাপনা, নিম্নবিত্ত মানুষের দেশপ্রেম আর সাথে দারিদ্র্যের নিষ্ঠুর করাঘাত এবং বাস্তবতা... অপূর্ব মিশেল।
ধন্যবাদ মুস্তাফা ভাই.. দোয়া রাখবেন যেন আরো ভালো লেখা উপহার দিতে পারি ।

০৭ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১১৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪