একটি দাঁড় কাক এবং অন্যান্য

ভৌতিক (সেপ্টেম্বর ২০১৭)

নুরুল্লাহ মাসুম
  • ২৮
শরতের স্নিগ্ধ সকাল। সামাদ সাহেব গরম এক কাপ চা নিয়ে ব্যালকুনীতে বসে আছেন নিত্যদিনের অভ্যেসমত। আরাম কেদারায় গা এলিয়ে আলস্যভরা দেহ-মন চাঙ্গা করার একমাত্র ঔষধ হচ্ছে এক মগ কড়া গরম চা। পঞ্চাশোর্ধ বয়সে আজো চলছে তার এই অভ্যেস।
মৃদু শীতল হাওয়ায় তার মনটা জুড়িয়ে যায়। এমন সুন্দর স্নিগ্ধ সকালে প্রকৃতির ছোঁয়া পাবার কালে বিরক্ত করার জন্য একটা কাকই যথেষ্ট। কা-কা শব্দে হালকা সকালটা ক্রমে ভারী হতে থাকে প্রতিদিনের মত। সামাদ সাহেব কখনোই ওদের প্রাতঃকালীন গলা সাঁধার কাজে বাঁধ সাধেন না। বরং কখনো সখনো কিছু একটা অফার করার চেষ্টা করেন ওদের- ঝামেলাটা হয় তখনই। একটা কাক কাহ্-কাহ্ স্বরে সিগন্যাল দিয়ে খুব দ্রুততার সাথে জড়ো করে ফেলে আরো ডজনখানেক। এরপর শুরু হয়ে যায় সমস্বরে ওদের গলা সাঁধার কাজটা। এ যেন কোন এক সঙ্গীত একাডেমী! সামাদ সাহেব অন্তত আধা-ঘন্টা ধরে উপভোগ করেন সেই সঙ্গীত একাডেমীর শিক্ষার্থীদের সঙ্গীত সাধনা।
আজো তেমনি বসে আছেন তিনি। হঠাৎ করেই ইজি চেয়ার ছেড়ে এক প্যাকেট নিমকি নিয়ে আসেন। না, নিজে খাবার জন্য নয়; তার প্রিয় সঙ্গীত একাডেমীর শিক্ষার্থীদের জন্য তিনি প্যাকেটটা সামান্য খুলে ব্যালকুনীর গ্রীলের সাথে রেখে ফিরে আসেন নিজ আসনে।
খানিক বাদে সুন্দর একটা পাতি কাক গ্রীলের কাছে এসে বসে এবং মাতাবেলীদের মত করে সিগন্যাল দেয়- কাহ্ কাহ্। মুহূর্তেই আরো তিনটি সুশ্রী সুদর্শন জড়ো হয় সেখানে। দলনেতা বার কয়েক সামাদ সাহেবের চোখে চোখ রেখে খাবার গ্রহণের অনুমোদন নিয়ে নেয় এবং বিলম্ব না করে প্যাকেটের ছেড়া অংশে নাকসহ পুরো মুখটা ঢুকিয়ে দেয়- টেস্ট করে নেয় সামাদ সাহেবের দেয়া খাবারটা তাদের খাওয়ার যোগ্য কি না! বেশ আয়েশ করেই কিছুটা খাবার হজম করে দলনেতা- বেজায় খুশী সে!
অতঃপর, সামাদ সাহেব অবাক বিষ্ময়ে লক্ষ্য করলেন, দলনেতা তার সামনে বসা সঙ্গী, হতে পারে জীবন সঙ্গী অথবা কাছের বন্ধু- যেটি খুব কাছেই বসেছিল; তার কাছে অনুমতি চাইলো। সামাদ সাহেব স্থির নেত্রে তাকিয়ে রইলেন দলনেতার অনুমতি নেয়ার ভঙ্গিমার দিকে। বার তিনেক ঠোঁটসহ মাথাটা উপর নিচে ঝাঁকালো সেটি।
দলনেতার চোখ এবার দ্বিতীয় কাকটির দিকে, সেটিও সামাদ সাহেবের চোখে চোখ রেখে সম্মতি নিল বলে মনে হলো। এরপর, কালবিলম্ব না করে দলনেতার প্রশ্নে সায় দিল সঙ্গীটি- ডানদিকে মাথা কাত করে।
এবার সামাদ সাহেবের আরো অবাক হওয়ার পালা। সঙ্গীর অনুমতি পেয়ে মুহূর্ত বিলম্ব করে না দলনেতা। বড় বড় কালো ঠোঁটে প্লাস্টিকের প্যাকেটটি শক্ত করে ধরে নিয়ে উড়াল দেয়। গন্তব্য পাশের নির্মানাধীন একতলা বাড়ির ছাদ। দলনেতাকে অনুসরণ করে বাকী তিনটি সুদর্শন। একই সাথে ভেসে আসে প্রাপ্তিযোগের আনন্দ ধ্বণী- কা-কা-কা।
পাশের নির্মানাধীন একতলা বাড়ির ছাদে ওদরে আনন্দঘন অবতরণ। আয়েস করে খাবার গ্রহণের আয়োজন যখন চলছিল, ঠিক সেই মুহ‚র্তে ধাঁই ধাঁই করে সেখানে হাজির হয় একটা দাঁড় কাক- ক্বা-ক্বা ধ্বণী দিয়ে; যেন দশ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করা হচ্ছে। চারটি পাতি কাকের আটটি ডানা ঝাপটানোর শব্দ বিকট হয়ে সামাদ সাহেবের কানে ফিরে এলা। ওরা প্রাণ রক্ষায় পালিয়ে যেতে যেতে ফিরে এলা। এবার ওদের অবস্থান কিছুটা দূরে। অসহায়ের মত ওরা তাকিয়ে থাকে দাড় কাকের দিকে। ভিটে-মাটি হারা অসহায় মানুষের মত চারটি পাতি কাক তাকিয়ে থাকে ভূমিদস্যুর দিকে।
দাঁড় কাক, গায়ে-গতরে পাতি কাকের চেয়ে প্রায় দেড়গুন বড়। মিচমিচে কালো ঠোঁটের আকারটাও বেশ বড়; যেন তীক্ষ্ণ ব্যায়োনেট কোষান্মুক্ত করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভাগ্য ভাল দাঁড় কাকের, ওদের সমাজে র‌্যাপিড অ্যাকশন নেয়ার মত কোন সৈন্য-সামন্ত নেই। দুর্ভাগ্য পাতি কাকদের, এমন অত্যাচার প্রতিনিয়ত ওদের সইতে হয়।
অবাধে চলছে ওদের সমাজে দাঁড় কাকের রাম-রাজত্ব। পাতি কাকেরা একেবারেই অসহায় সেই সমাজে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ মোখলেছুর রহমান উপস্থাপন ও আঙ্গিক অসাধারন।
ভালো লাগেনি ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
ধন্যবাদ মোখলেছুর রহমান।
ভালো লাগেনি ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
Md. Akhteruzzaman N/A আপনার নিবিড় পর্যবেক্ষণ খুব সুন্দর বর্ণনায় উপস্থাপন করছেন। খুব ভালো লাগলো।
ভালো লাগেনি ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
ধন্যবাদ আক্তারুজ্জামান
ভালো লাগেনি ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
ফাহমিদা বারী আমিও অন্যদের সাথে একমত। লেখাটি অত্যন্ত ভালো, তবে বিষয়বস্তুর সাথে ঠিক যায় না। শুভেচ্ছা রইলো।
ভালো লাগেনি ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী অনেকদিন পর আপনার গল্প পড়েছি, খুব ভালো লেগেছে; কিন্তু ভৌতিক বিষয়টা তেমন বুঝতে পারলাম না.... যা হোক, অনেক শুভকামনা রইল, ভোট দিতে পারলাম না....
ভালো লাগেনি ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
ভোট বন্ধ তাই....
ভালো লাগেনি ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
সাইফুল বাতেন টিটো লেখাটি সুন্দর। বর্ননাটাও আকর্ষনিয়। কিন্তু লেখাটি ভৌতিক সংখ্যায় কেন স্থান পেলো বোধগম্য নয়। ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
বিশ্বরঞ্জন দত্তগুপ্ত এখানে নিবন্ধন করার আগের থেকেই আপনার লেখা গল্প / কবিতা নিয়মিত পড়ি । এবারের গল্পটা ভাল লেগেছে । ভোট করলাম । আমন্ত্রণ রাখলাম আমার গল্প , কবিতার পাতায় আসবার । অপেক্ষায় রইলাম আপনার মূল্যবান মতামতের ।
মোহাম্মদ বাপ্পি http://golpokobita.com/golpokobita/article/17349/12850
মোহাম্মদ বাপ্পি অনেক ভালো লাগলো Sir আমার কবিতা টি পড়ার আমন্ত্রন রইল .

১৭ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“ ” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ , থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী