একজন ইসরাইলী সৈনিকের আত্মকাহিনী

সরলতা (অক্টোবর ২০১২)

ঈশান আরেফিন
  • ২৬
  • ২৮
আমি হাথার আব্রাহাম, একজন ইসরাইলী আর্মিম্যান। আমাদের ইসরাইলী আর্মিদের ভিত খুবই শক্ত, আমরা প্রচণ্ড শক্তিশালী। আমরা কাউকেই পরোয়া করি না। হামাসের পশুদের মতন হিংস্র জঙ্গিদেরকেও না, জোয়ান বা বুড়ো কোন ফিলিস্তিনিকেও না। কিন্তু একটা আশ্চর্য ব্যাপার আপনাদেরকে বলা উচিত। ফিলিস্তিনি শিশুদের চোখের দিকে যখনই তাকাই, তাদের চোখে চোখ মেলাতে পারি না। চোখ ফিরিয়ে নিতে হয়। তাদের চোখের দিকে তাকালেই কেন যেন মনে হয় এক বিশাল শূন্যতা আমায় গ্রাস করে ফেলবে, আমার হৃদয়টা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দিবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় যখন টহল দিতে থাকি, গভীর রাতে হয়ত কোন এক ফিলিস্তিনির ভাঙ্গা বাড়ি থেকে ছোট্ট শিশুর কান্নার আওয়াজ আসে। এই কান্না শুনলে আমার বুকের ভিতর কেমন যেন একটা ভোঁতা অনুভূতি হয়। জেরুজালেমে আমি আমার পাঁচ মাস বয়সী মেয়ে লিসাকে তার মা আহুভার কাছে রেখে এসেছি। আহুভা প্রায়ই আমাকে ফোনে বলে, লিসা নাকি প্রতি রাতে কাঁদে। ভাঙ্গা বাড়ির ফিলিস্তিনি শিশুর কান্না আর লিসার কান্নার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তবুও ফিলিস্তিনি শিশুর কান্না আমার কাছে ভৎর্সনার মতন লাগে। মনে হয়, এই কান্না যেন ইসরাইল বিরোধী কোন শ্লোগান। কিন্তু এই শ্লোগানের তেজ বড্ড বেশী, বড্ড জ্বালাময়ী। তবে এর চাইতেও বেশী কিছু ঘটেছে গতকাল।

গতকাল দুপুরের কথা। সূর্য তখন ঠিক মাথার উপর। ভ্যাঁপসা গরম পড়েছিল তখন, যেন নরকের লু হাওয়া বইছিল। আমরা তখন গাজার ডাউনটাউনে টহল দিচ্ছিলাম। আমি ক্যাপ্টেনের পাশেই হাঁটছিলাম, হাতে একে-৪৭। হঠাৎ দেখি এক ফিলিস্তিনি ছোট বালক আমাদের দিকে দৌড়ে আসছে। তার হাতে ইট এর মতন কিছু একটা। ভাল করে দেখে বুঝলাম, সেটি ইটের টুকরাই। ছেলেটা আচমকা "আল্লাহু আকবার" বলে তার হাতের ইটটি আমাদের দিকে ছুড়ে মারল এবং কিছু বোঝার আগেই সেটি আমাদের ক্যাপ্টেন এর নাকে লাগলো। নাক মনে হয় ফেটে গিয়েছিলো তার, নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত পড়ছিল। ক্যাপ্টেন ব্যথায় কুঁচকে বসে পড়লেন এবং সাথে সাথেই আমাকে আদেশ দিলেন "শুট দ্যা সন অব ইভিল"। আমি আমার নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কিন্তু ক্যাপ্টেন মরিয়া হয়ে আবার বললেন "শুট রাইট নাও"। ক্যাপ্টেনের আদেশ আর্মিম্যানদের জন্য শিরোধার্য, আমার কিছুই করার ছিল না। আমি আমার একে-৪৭ এর ট্রিগারে চাপ দিলাম, ছেলেটা মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পূর্ব পর্যন্ত আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল, খুব সরল সে দৃষ্টি।

এই সরল দৃষ্টিই আমাকে জন্তুর মতন তাড়া করছে প্রতিটিক্ষণ। এই সরলতার মধ্যে কি যেন এক মারণ বিষ রয়েছে, যা আমাকে ক্ষণে ক্ষণে মেরে ফেলছে। আমার মধ্যে কিছু অস্বাভাবিক কিছু একটা ঘটেছে। আমি মনে হয় পাগল হয়ে যাচ্ছি, চিন্তাশক্তি হারিয়ে ফেলছি। তবে আমি এই সরলতার বিষাক্ত বেদনা থেকে মুক্তির উপায় বের করে ফেলেছি। হ্যাঁ, এখন আমি আমার পিস্তলটি ঠেকিয়ে রেখেছি আমার মাথায়। আমি জানি, ফিলিস্তিনি শিশুরা তাদের সরলতা দিয়ে আমাদের সাথে খেলছে, তামাশা করছে, আমাদের কাবু করতে চাচ্ছে। কিন্তু ওরা আমাদের কিছুই করতে পারবে না। আমাদের মহান ইসরাইলী বাহিনির জয় হবেই।

তবে আমি, নগণ্য হাথার আব্রাহাম, এই মুহূর্তে এই সরলতার কাছে পরাজিত। তাই, বিদায় পৃথিবী.........

**এই গল্পের প্রতিটি চরিত্র এবং ঘটনা কাল্পনিক, একান্তই লেখকের কল্পনাপ্রসূত।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ইসমাইল বিন আবেদীন খুব অল্প কথায় অনেক বড় একটা গল্প লেখেছেন ভাই | এক কথায় অসাধারণ বর্ণনা | অনেকটা কবলি ওয়ালার সেই ছোট্ট মেয়েটি মত কিন্তু শেষেরটা সম্পূর্ণ বিপরীত | শুভো কামনা লেখকের জন্য ;
মিলন বনিক শেষের অংশটুকু না পড়লে বুজতামনা গল্পটা কাল্পনিক...অসাধারণ...ছোট গল্প অনেক বড় অনুভুতি....
অনেক ধন্যবাদ
জাফর পাঠাণ কল্পনাপ্রসূত বললেও অহরহ এমন ঘটনা কিন্তু ঘটছে ইহুদী ও পাশ্চাত্যের সেনাবাহিনী ও সমাজে।মোবারকবাদ কবি ।৫ দিলাম।
অনেক ধন্যবাদ
এ এইচ ইকবাল আহমেদ খুব ভােলা লাগল । ইসরাইলী বাহিনি িক তা বুঝেেব িক !
জিনিয়া আমার তো তা মনে হয় না যে আত্মহত্যা দিয়ে পূর্ণতা এসেছে..একজন লেখক হিসেবে আপনার তা মনে হলেও পাঠক হিসেবে আমার তা মনে হচ্ছে না. একজন সৈনিকের কাপুরুষতা ছাড়া এতে কিছুই প্রকাশ পায় নি...যে যুদ্ধে যায়, সরল মানুষ মারা পরবে এটা জেনেই যায়..গল্পের থিম সরলতা হলেও থিম এর সাথে তো গল্প মিলছে না..
জিনিয়া মনে হলো আত্মহত্যাকে অনুপ্রানিত করা হয়েছে, যেটা কখনই কাম্য নয়..
গল্পের আসল থিমটা আত্মহত্যা না.........আত্মহত্যাকে অনুপ্রানিত করার কোনো অভিপ্রায় ছিল না আমার........তারপরও যদি মনে হয় যে আত্মহত্যাকে অনুপ্রানিত করা হয়েছে তবে বলব এই আত্মহত্যা গল্পের পরিনতিকে পূর্ণ করেছে.............অনেক ধন্যবাদ
জিয়াউল হক সরলতায় বিষাক্ত বেদনা থাকতে পারে ...।।আমি কিছুটা কনফিউজ ছিলাম । সরলতার বিষাক্ত বেদনা কে লেখক বিবেক তাড়নার সাথে সং শিষ্ট করে পারঙ্গমতার পরিচয় দিয়েছেন । ভাল লাগলো
Md. Akhteruzzaman N/A অসাধারণ- একটা শব্দ দিয়েই শেষ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু শুভ কামনা না জানিয়ে শেষ করি কীভাবে? অফুরান শুভেচ্ছা......
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ এই সরল দৃষ্টিই আমাকে জন্তুর মতন তাড়া করছে প্রতিটিক্ষণ। এই সরলতার মধ্যে কি যেন এক মারণ বিষ রয়েছে, যা আমাকে ক্ষণে ক্ষণে মেরে ফেলছে। ------------- ----- মুগ্ধ করলে ভাই ---- সত্যিই মুগ্ধ !

০৫ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "আতঙ্ক”
কবিতার বিষয় "আতঙ্ক”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ অক্টোবর,২০২৫