সময় পরিভ্রমন

বাবা (জুন ২০১২)

ঈশান আরেফিন
  • ১৮
  • ১৩
১। ৬ বছর ধরে কর্মী রোবটদের সাথে সারাক্ষণ রোবটের মতই কাজ করতে হয়েছে রিশানকে। তবুও রিশান আজ খুবই উৎফুল্ল। আজকে তার ৬ বছরের সাধনা সার্থক হয়েছে। শেষপর্যন্ত সে তৈরি করতে পেরেছে টাইম মেশিন। ৪১৪২ সালের পৃথিবীতে টাইম মেশিন তৈরি করাটা সম্ভব মনে করা হলেও কোন বিজ্ঞানীই তা পারছিলেন না। তবে তরুন বিজ্ঞানী রিশান তার একাগ্রতার দ্বারা এটি সম্ভব করেছে। পৃথিবীর প্রথম মানুষ হিসেবে সময়ে পরিভ্রমন করবার জন্য রিশানের আর তর সইছে না। সে একটি প্রোটিনের ট্যাবলেট খেয়ে নেয়। এই ট্যাবলেট খেলে ৭ দিনের জন্য মানব শরীরের খাবারের চাহিদা মিতে যায়, ক্ষুধাও লাগে না। রিশান সর্বপ্রথম তার মেশিনে চড়ে যাবে আদিমযুগের পৃথিবীতে। রিশানের আদিমযুগ আর অতীতের পৃথিবী সম্পর্কে আছে অবারিত আগ্রহ।

রিশান টাইম মেশিনে উঠে বসেছে। সে আদিমযুগে যাবার জন্য মেশিনের টাইমার ঠিক করল আর প্যাডেলে চাপ দিল। পৃথিবীর প্রথম মানুষ হিসেবে টাইম মেশিনে চড়ে যাত্রা করল যোজন যোজন দুরের অতীতে।

২। রিশানের টাইম মেশিন আদিমযুগের পৃথিবীর ভুমি স্পর্শ করল। রিশান তার টাইম মেশিন থেকে নেমে অনুভব করল আদিম পৃথিবীর বুনো সতেজ বাতাস, মুগ্ধ চখে দেখল নিবিড় সবুজের সমারোহ, রুক্ষ পাহাড় পর্বত। হঠাৎ সে দেখল কিছুদুরে একটি লোক আর একটি ছোট্ট ছেলে এগিয়ে আসছে। সে সাথে সাথে একটি গাছের আড়ালে লুকিয়ে গেল। লোকটির গায়ে কাপড় বলতে রয়েছে লজ্জাস্থান ঢেকে রাখা একটুখানি পশুর চামড়া। শিশুটি সম্পূর্ণ উলঙ্গ, দেখে মনে হচ্ছে লোকটিই তার বাবা। লোকটির হাতে রয়েছে ধারাল একটি বল্লম।

হঠাৎ রিশান একটি ভয়ংকর গর্জন শুনে কেঁপে উঠল। দেখল, প্রাগৈতিহাসিক যুগের কদাকার একটি ড্রাগন জগতের সকল হিংস্রতা নিয়ে এগিয়ে আসছে। এটার উচ্চতা হবে ৯ ফিটের মতন, দুটি বিশাল ধারাল থাবা একে আরও ভয়ানক করে তুলেছে। ড্রাগনটি সরাসরি লোক আর ছোট ছেলেটির দিকে যাচ্ছে। লোকটি সাথে সাথে ছেলেটিকে একটি গাছের আড়ালে রেখে নিজে বল্লমটি শক্ত করে ধরে ড্রাগনটির সামনে দাঁড়ায়। ড্রাগনটি তার ধারাল থাবা চালিয়ে দেয় লোকটির উপর, লোকটিও তার বল্লম দিয়ে ড্রাগনকে আঘাত করতে থাকে। হঠাৎ ড্রাগনটির একটি থাবা লোকটির পাকস্থলী ভেদ করে যায়, লোকটি চিৎকার করে মাটিতে এলিয়ে পড়ে। এবার ড্রাগনটি লোকটিকে ছেড়ে ছেলেটির দিকে পা বাড়ায়। মৃতপ্রায় লোকটি তখন বুঝতে পারে তার সন্তানের ড্রাগনের হাতে মৃত্যু আসন্ন, সে সাথে সাথে তার অবশিষ্ট জীবনীশক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়ায় এবং বল্লমটি ড্রাগনের মাথা বরাবর ছুড়ে মারে। বল্লম ড্রাগনের মাথা ভেদ করে চলে যায়, ড্রাগনটি পাশবিক চিৎকার করে মাটিতে পড়ে যায়, লোকটিও লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। লোকটির রক্ত আর ড্রাগনটির রক্ত মাটিতে পড়ে একাকার হয়ে যায়, তারা দুজন মনে হয় একসাথেই প্রাণ ত্যাগ করে। ছোট ছেলেটি এতক্ষন ধরে কাঁদছিল, হঠাৎ সে নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে, এগিয়ে যায় প্রাণহীন বাবার কাছে।

৩। রিশান তার টাইম মেশিনে আবার উঠে বসেছে। লোকটির এমন পরিনতি দেখে সে আর ঠিক থাকতে পারেনি। তার কিছু সময় লাগে ধাতস্থ হতে। সে আবারো মেশিনের প্যাডেলে চাপ দেয়, আদিমযুগে আর থাকা চলে না। এবার সে যাবে মানবসভ্যতার মধ্যম কোন কালে।

রিশানের টাইম মেশিন ২০১২ সালের একটা জলাধারের পাশে থামে। রিশান মেশিনটি থেকে নেমে সামনে পা বাড়ায়। হঠাৎ সে দেখতে পায় জলাধারের পাশে দুটি লোক বসে কথা বলছে। সে নিজের ল্যাঙ্গুয়েজ কনভার্টারটি চালু করে। এবার সে লোকদুটির কথা স্পষ্ট বুঝতে পারছে।
কালোমতন লোকটি তার পাশে বসা ফর্সা লোকটিকে বলছে, " ভাই, বুড়ো বাবাকে আর কতকাল নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে ওষুধ, খাবার খাওয়াবো? আমাদেরও তো সংসার আছে।"
"ঠিক বলেছিস। তোর ভাবিও একই কথা বলছিল। বাবার তো অনেক বয়স হয়েছে, চলতেও পারে না। শুধু বেঁচে থেকে আমাদের ঝামেলা বাড়াচ্ছে। জানিস, তোর ভাবিকে অনেকদিন ধরে ভাল কাপড়ও কিনে দেয়া হয় না।"
লোকগুলোর কথা শুনতে শুনতে রিশানের হঠাৎ মনে পড়ল অনেক সময় হয়েছে অতীতে, এবার সে নিজের গবেষণাগারে ফিরে যাবে। এরপর প্রয়োজনীয় কিছু কাজ সেরে অভূতপূর্ব ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা করবে।

৪। রিশান ফিরে এসেছে তার পরিচিত সময়ে, নিজের গবেষণাগারে। তাকে দেখে তার কর্মী রোবট এসে বলল, " মহামান্য রিশান, প্রথম মানুষ হিসেবে টাইম মেশিনে করে সফলভাবে সময় পরিভ্রমন সম্পন্ন করায় আপনাকে শুভেচ্ছা।"
রিশানের এদিকে মন নেই। একটি সরকারি ঘোষণা এসেছে তার নিজের যোগাযোগ কিট এ। সে ভাবছে অন্য কথা। আজ তাকে মানবসন্তান উৎপাদন কেন্দ্রে যেতে হবে তার শুক্রাণু দান করতে।

৪১৪২ সালের পৃথিবীতে বাবা, মা, সন্তান এরকম কোন সম্পর্কই নেই। পুরুষ আর মহিলার মধ্যে শারীরিক সম্পর্কের রীতি উঠে গেছে অনেক আগেই। এখন মানুষ অনুভুতি প্রদায়ক যন্ত্র মস্তিস্কে লাগিয়ে সব ধরনের অনুভুতির স্বাদ আস্বাদন করে ঝামেলামুক্ত ভাবে। তাই মানুষকে সন্তান উৎপাদনের ঝামেলা থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। এখন মানবসন্তান জন্ম নেয় ল্যাবরেটরিতে; যার নাম মানবসন্তান উৎপাদন কেন্দ্র। এখানে কর্মী রোবটরা দক্ষ হাতে মানব সন্তান উৎপাদন করে। সরকারি রীতি অনুযায়ী, কাদের শুক্রাণু আর ডিম্বাণু থেকে কোন সন্তানের জন্ম হয়েছে সেটা কেউ জানতে পারে না। জানলে মানুষদের মধ্যে আবেগের বাহুল্যময় সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। ৪১৪২ সালের পৃথিবীতে এসব আবেগের কোন স্থান নেই।

রিশানও জানে না কাদের শুক্রাণু আর ডিম্বাণু থেকে তার জন্ম। তবে সে প্রায়ই স্বপ্ন দেখে সে তার একজন বাবা আছে, সে বাবার হাত ধরে নদীর তীরে হাতছে, বাবার সাথে খেলা করছে। এই স্বপ্নটা দেখলে তার মন খুব খারাপ হয়ে যায়।

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি vison moja pelam golpota pore........eshan...dhonnobad.....apnake...........
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন .............কল্পনা শক্তি ভাল, ভাল লেগেছে। তবে আরো একটু গুছিয়ে লিখলে আরো ভাল লেখা পাওয়া যাবে। শুভেচ্ছা রইল।
স্বাধীন ছোট্ট সুন্দর একটা সাইফাই। বর্ণনায় আরেকটু সতর্কতা দরকার ছিল
রোদের ছায়া ঈশান অনেক সুন্দর একটা গল্প .........তোমার মাঝে ভবিষ্যত জাফর ইকবালের ছায়া দেখতে পাচ্ছি ... তবে একটু বলার ছিল ..রিশান টাইম মেশিনে করে অতীতের যে ঘটনা গুলো প্রত্যক্ষ করলো তাতে রিশানের প্রতিক্রিয়া আরো জোরালো ভাবে আসলে ভালো লাগত .........বিশেষ করে প্রথম ঘটনায় যেখানে আদিম যুগের বাবা ছেলের ঘটনাটি আছে . তারপর ও বলব অনেক সুন্দর লিখেছ /
মিলন বনিক সুন্দর সাই ফাই..এরকম মেধা আর কল্পনা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আরো অনেক ভালো গল্প আমরা পেতে পারি..শুভ কামনা থাকলো....
মামুন ম. আজিজ দারুন চিন্তা ভাবনা। বৈষম্যটা দারুন দেখিয়েছ। ..তবে যেহেতু ৪১৪২ সালে কোন আবেগ কাজ করবেনা সেহেতু নায়কে মাঝে আবেগটা বেশি দেখানো হয়ে গেছে। শুভেচ্চা। এবং সামনে আরও নতুন নতনু সাইফাই লেখার জন্য অগ্রীম অবিনন্দন ।
আহমেদ সাবের সুন্দর একটা সাইফাই পেলাম আর সাথে প্রাগৈতিহাসিক যুগের বাবার, কদাকার ড্রাগনের হাত থেকে সন্তানকে বাঁচানোর জন্য ত্যাগ স্বীকার। বোনাস ২০১২ সালের সন্তানদের পিতা সমস্যা আর ৪১৪২ সালের সমাধান - মাথা না থাকলে মাথা ব্যথাও নেই, তেমনি পিতা না থাকলে পিতা সমস্যাও নেই।
ধন্যবাদ.........আপনার মন্তব্য এর অপেক্ষায় ছিলাম

০৫ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪