প্রজন্মান্তের ঘূর্ণাবর্ত

মা (মে ২০১১)

উম্মে হাবিবা
  • ২৫
  • 0
  • ৫২
বলতে বলতে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন রেহ্নুমা। তাঁর অতীত জীবন যা প্রতি মুহূর্তে জানান দিয়ে স্তব্ধ করে দিতে চায় জীবনের চাকা। ছোট দুই শিশু কন্যার সামনে একান্ত অসহায় ভাবে কথাগুলো বলছিলেন তিনি।
“বাবা মার জীবনে দীর্ঘ সময় পর আমি জন্মেছি। বড় আদুরে, দুরন্ত আর ডানপিটে ছিলাম। অথচ শ্বশুরবাড়িতে আমার উপর কি অত্যাচারটাই না করেছে তোদের দাদি। তোর চাচাচাচি তারা তো ছিল ইন্ধনদাতা। সকালবেলা পান্তাভাত, সারাদিন কাজ, তোরা ছোট, দুপুরে বসে বসে পাটী বানানো আর সন্ধ্যে হলে তোর দাদিকে খাইয়ে -- চুলে তেল মেখে বেঁধে দেয়া, সুপারি কেটে দেয়া তারপর পান খাইয়ে ঘুম পাড়ান। তবে আমার ছুটি। আমি তোদের বলছি—ভালভাবে পড়াশোনা কর—জীবন খুব কঠিন।“
মায়ের অশ্রুসজল চোখ মুছে দিতে গিয়ে নিজেরাও অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ল অমি আর তিন্নু। অমি বড়ো, ক্লাস থ্রী তে পড়ে। আর তিন্নু ওয়ান এ। তাদের বাবা আজ অফিস এর কাজে গেছেন বাইরে। পড়ন্ত বিকেলে নাশ্তা তৈরির সময় মায়ের পাশে বসেছিল ওরা।
“ তোমাকে দাদি আর চাচাচাচি এতো কষ্ট দিত আর আব্বু কিছু বলতনা মা? “ –অমি জানতে চাইল।
“ তোর বাবা তো শহরে অফিস করত, আমি ছিলাম গ্রামে।সপ্তাহে একবার বাড়ি যেত সে। তখন তোর দাদি আমার নামে তার কাছে নালিশ করত। আমি ত কথা বলতে পারতাম না। একে শহুরে মেয়ে--- গ্রাম্য কাজ জানিনা—এ অপবাদ, আবার বিয়েতে আমার বাবা ঘর ভরতি করে জিনিসপত্র দেয়নি, তাই লোকের কাছে ইজ্জত থাকেনা। আচ্ছা, তোরা পড়তে বস—আমি নাশ্তা নিয়ে আসছি।
তিন্নু—“আপু, আব্বু তো এখন আমাদের আদর করে। অবশ্য অঙ্ক না পারলে এত জোরে থাপ্পর দেয় যে চোখে অন্ধকার দেখি।“
অমি—“ কিন্তু দেখিস না এখনো প্রতি মাসে দাদির নামে টাকা পাঠায়। “

তিন্নু—“ ওই দিন এক টুকরো কাগজে দেখলাম ৫০০ টাকা লেখা আর আমি বানান করে পড়লাম দাদির নাম।“
অমি—“হা, আমরাও বড় হয়ে আম্মুর জন্য টাকা পাঠাব। “
পড়তে বসলো ওরা। দুজনে ক্লাস এ ফার্স্ট। রেহ্নুমা ওদের পড়ান। মাঝে মাঝে রাফিক সাহেব অর্থাৎ ওদের বাবা ওদের অঙ্ক দেখে দেন। শুধু তখনি মার খায় ওরা।
সন্ধ্যে হয়ে এসেছে, হাতমুখ ধুয়ে পড়তে বসল ওরা। একজন হুজুর প্রতিদিন সকালে এসে আরবি পড়ান ওদের। মায়ের দেখাদেখি নামাজও চর্চা করে দু বোন।
“ তুই আজ কি দোয়া করলি তিন্নু?” –অমি জানতে চাইল।
“দোয়া করলাম আল্লাহ যেন আমাকে তাড়াতাড়ি বড় করে দেন আর আম্মুর সব কষ্ট দূর করতে পারি। আর তুমি?”
“ আমি দোয়া করেছি বাহার আপা যেন নতুন আসা মেয়েটাকে আমার চেয়ে বেশি ভাল না বাসেন আর সহজ পড়াটা ধরেন। কালকের পড়াটা খুব কঠিন!!”
“ চল আপু –আম্মু কি নাশতা বানিয়েছে দেখি—“
লুচি ভাজা আর চা খেল ওরা।
--“আগামিকাল তোমাদের কি পড়া আছে অমি?”
__”সমাজ ক্লাস টেস্ট, অঙ্ক ৩ নং অধ্যায়ের ল সা গু আর ইংলিশ মাই কান্ট্রি।“
--“বেশ, সব তো আমি আগেই পড়েয়ে দিয়েছি। অমি আবার দেখে নাও, আর তিন্নু বই নিয়ে মা’র কাছে এসে বস।“

নটা নাগাদ ওদের খাইয়ে ঘুম পাড়ান তিনি। এরপর একটা পুরনো ম্যাগাজিনের পাতা ওলটাতে থাকেন।ঘরে একটা T. V ও নেই যে দেখবেন। রাফিক এসব কিনবেনা। আশ্চর্য নির্লিপ্ততায় সে থাকে। ভাবতে অবাক লাগে রেহ্নুমার---সবার জন্য টাকা পাঠাবে কিন্তু নিজের জন্য কোন বিলাসিতা নয়।
--“কেন তুমি বাড়িতে টাকা পাঠাও?”
--“কি বলতে চাও তুমি?”—রাফিকের প্রশ্ন।
--“ওদের কোন কিছুর অভাব নেই তারপরও সল্প আয় হতে তোমাকে টাকা পাঠাতে হবে?”
চুপ করে থাকেন রাফিক সাহেব।
###

আজ অনেক দিন পর মা’কে খুব মনে পরে অমির। এখন সে আমেরিকার একজন দক্ষ চিকিৎসক। প্রচুর রোজগার তার ।ফেলে আসা কষ্টকর দিন গুলোর কথা ভেবে সে এখন হাসে। এক সময়ের অভাবিত ভবিষ্যৎ আজ তার হাতের মুঠোয় ।মায়ের জন্যই এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় কখনো ভেঙ্গে পড়েনি সে। মা’ ই শিখিয়েছেন কি করে মানুষের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করতে হয়।
দাদির প্রতি মায়ের ক্ষোভ আর বাবার প্রতি বিরূপ মনোভাব ও আজ বদলে গেছে মায়ের। মায়ের দুঃসময় গুলোতে তারাই বুঝিয়েছে মাকে। বাবা কে করেছে মায়ের ও তাদের প্রতি স্নেহশীল । স্নেহশীল বাবা ও মা তাদের পুরোটায় ঢেলে দিয়েছেন তাদের দু বোনের জন্য ।
ছোটবেলার অঙ্ক না পাড়ার পরে বাবার মারের কথা আজ মনে পড়েনা ।বরং মনে পরে বাবার ডাইরির সেই লেখা—অমিকে মেরেছি, পরে কেঁদেছি ।
---“মা কি কর?”—ছোট ছেলে আদরের জিজ্ঞাসা।
---“ এই ত বাবা , সোনা আমার ।“
চিন্তায় ছেদ পড়ল অমির। আদরকে কোলে তুলে নেন তিনি। সপ্তাহের আজ রবিবার। শুধু এই দিনটি ছুটি থাকে অমির। অন্যদিন সকাল ৭ টা থেকে রাত ৯ টা তক কাজ থাকে হসপিটালে ।
দুষ্টু আদর ঘরময় ছুটে বেড়ায় ।
--“ওলে বাবা কারা যেন আসছে—আমার ভয় করছে!!!”
--“মা আমি আছিনা!!”—ছোট আদর আশ্বস্ত করে।
অমি তো হেসে খুন। বলে—“এই তো আমার বীরপুরুষ!!”
---“কি , হচ্ছে কি আমাকে বাদ দিয়ে?”---পিয়াল , আদরের বাবা এসে পরল এই মুহূর্তে।
--“ শোন তোমার ছেলে কি বলে—“
---“হুম, মাকে নিয়ে গেলাম এক্ষুনি—আয় দেখি বেটা লড়বি আমার সাথে?”
বাবা ছেলেতে শুরু হয় দৌড় ঝাঁপ ।
###
আজ মা বাবা আসছেন বাংলাদেশ থেকে। এয়ারপোর্ট এ গেছে পিয়াল আর আদর । প্রচুর খাবার রান্না করেছে অমি। প্রচুর কেনাকাটা করে রেখেছে। খুঁজে খুঁজে ইন্ডিয়ান দোকান থেকে মাছ, শুঁটকি সবজি। প্রিয় মাকে ভালবাসে ছোটবেলায় মা হারানো পিয়ালও ।
মায়ের ত্যাগ , পরিশ্রম আর কষ্ট সার্থক করেছে আজ তারা। কত দিন পর আজ মাকে দেখতে পাবে সে! মা কি খুশি হবে? মা কি তার অতীতকে ভুলেছে? মা কি ফেলে আসা কষ্টকর দিনগুলো কে ক্ষমা করতে পেরেছে?---
----টুং টাং ।
ওই ত বেল্ বাজল।
মা বাবা কি এল তাহলে?
ধীর পদক্ষেপে বন্ধ দরজার দিকে এগুল অমি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Akther Hossain (আকাশ) খুব বেশী সংক্ষেপ এ শেষ করেসেন তবুও ভালো লাগলো
Abdul motin খারাপ না ,ভালা হইছে
শিশির সিক্ত পল্লব সরল সাবলীল ভাষা.....আরেকটু রস সহ গভীর হলে ভাল হত....যাহোক খুব ভালো
মোঃ আক্তারুজ্জামান ভালো লেগেছে! তবে লেখকের পরিতৃপ্তি বলে কিছু নেই কাজেই সবসময় আরও ভালো করার জন্য আমরা সবাই লালাইত থাকব, তাই না?
আহমেদ সাবের সাদামাটা লেখা। তবে পড়তে ভাল লাগলো।
উম্মে হাবিবা @ বিন অরফান...গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ!

০৪ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪