কেন ভালবাসি মা কে

মা (মে ২০১১)

Kazi Heera
  • ১৯
  • 0
ছোট বেলায় মাকে আমি একটুও ভালবাসতাম না । কেনই বা বাসব মা কেবলই শাসন করতেন ।
উচ্চ স্বরে মেয়েদের হাসতে নেই। খেতে বসে পা দোলানো যাবেনা । ভরদুপুরে বাইরে যাবে না ।
লেখা পড়া শেষ করে ঘরের কাজ করতে হবে । এতকিছু সত্ত্বেও ছোটবেলা থেকেই খুব সুন্দর সাংস্কৃতিক আনন্দময় পরিবেশে বড় হয়েছি আমরা ।
দেকতে দেকতে অনেক গুলু বছর পার হল । স্কুল , শেষ করে কলেজের গণ্ডি পার করতেই আমার
বিয়ে হয়ে যায় । এখন আম নিজেও এক জন মা ।

আমি যে দিন প্রথম মা হলাম সেই দিন থেকে মাকে আমি অনুভব করি । প্রথমে আমার মনে হয়
আমার মা কি এমন আধুনিক ব্যবস্থা পেয়েছে আমাদের জন্মের সময় ।আমি আমার এক মাত্র অসুস্থ
সন্তান কে নিয়ে যখন রাত জাগি । তখন মনে হয় মা এই ভাবে কত রাত জেগে ছিল ।মার জন্য আমার প্রচণ্ড কষ্ট হয় । মায়ের আসল চেহারা টা ভেসে ওঠে আমার চোখের সামনে ।
আমার মা সুন্দর মাঝারি, ছিপ ছিপে গড়নের আত্মবিশ্বাষী একজন মানুষ । সবসময় মা তাঁতের শাড়ী পড়তেন । গ্রামে বড় হলেও মায়ের সাহিত্য বোধ ছিলো ভালো ।
মা আমাদের সাথে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যা সাগর , ব্রিটিশ শাসন সতী দাহ প্রথা , ক্ষুদিরাম এর ফাঁসি , নানা বিষয় নিয়ে গল্প করতেন ।

আর বাবা বাংলা দেশ রেলওয়ের সরকারী চাকরী করতেন চট্টগ্রাম এ । আমরা নয় জন ভাইবোন । অন্য আর দশ জন মায়ের মতো আমার মা ও ভালো রান্না করতেন । সংসারের কাজ ছাড়াও আমার আর ও অনেক কাজ করতেন । মার সাহস আর মনবল ছিল অনেক ।
মা মহিলা পরিষদের এক জন সদস্য ছিলেন। ছোটবেলায় আমি মায়ের সাথে অনেক মিটিং এ গেয়েছি। সেখানে বেগম মোশতারি শফী এবং আর অনেকে থাকতেন ।আমি অনেক ছোট ছিলাম বলে সন তারিখ আমার ঠিক মনে নেই। তবে মায়ের কাছে শুনেছি আমাদের এলাকা থেকে প্রথম মেয়েদের নিয়ে বিশাল এক মিছিল নিয়ে বের হয়েছিলেন মা বাল্য বিবহ বন্ধ করার প্রতিবাদে ।
মক্তিযুদ্ধে মা কে দেখেছি অন্য এক অসাধারন সাহসি দেশপ্রেমিক মানুষ হিসেবে। আমার নানা বাড়ী ফাজিল পুরের ফরহাদ নগরগ্রামে । ১৯৭১ এর ২৪শে মার্চ আমরা নানা বাড়ী যাই ।কারন নানি অসুস্থ ছিলেন । ২৫ শে মার্চ এর কাল রাত ।ঢাকা শহরে আগুন জ্বলছে । আমার বাবা তখন মাত্র ঢাকা পোঁছালেন । এরপর সারা দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল আর আমরা আটকে পড়লাম গ্রামে, মেজভাই চিটাগাং বাবা ঢাকায় কেউ জানেনা কার ও খোঁজ । মার একমাত্র ভাই আমার মামা পাকিস্থান আর্মিতে ছিলেন । ওখানে কি ভাবে আছেন সপরিবারে কে জানে । আমার বর ভাই ও ওখানে । অথচ এত বিপন্ন অবস্থায় ও মা একটু ও ভেঙ্গে পড়েন নি । আমারএখনও মনে আছে আমার নানার বাড়ীর
সামনে এর রাস্তা দিয়ে দলে দলে শরণার্থী রা আসছিল দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে পায়ে হেটে ক্লান্ত ।
কেউ ঢাকা থেকে কেউ চিটাগং থেকে ।আমার মা কে দেখেছি নিজের সাধ্য অনুযায়ী পরিচিত
অপরিচিত যাকে যেই ভাবে পেরেছে মুড়ি দিয়ে চিড়া দিয়ে পানি খাইয়েছে । কখনও বা রুটি করে পাঠিয়েছে। মা কে দেখেছি নিজের কষ্ট বুকে চেপে মানুষের সেবা করতে ।
চিটাগং এর লোকজন এর কাছ থেকে মেজভাই এর খোঁজ জানতে চাইলে সবাই বলছিল সব শেষ কিছু নেই চারি দিকে আগুন জ্বলছে। কেও কারো খবর জানেনা । কিন্তু কিছু দিন পর মেজ ভাই এলো আমাদের সাথে দেখা করে ভারতে চলে গেলেন মুক্তি যোদ্ধার প্রশিক্ষণ নিতে । মা কে দেখে মনে হল মার কাছে এই টা ই স্বাভাবিক ।
বাবা ফিরে এলেন তিন মাস পর । নানা আর মা মিলে আমাদের অনেক ভাল ভাবে রেখেছিল ।
শহর ছেড়ে পাক হানাদার বাহিনী গ্রামে গ্রামে ঢুকে পড়েছে । রাজাকারদের সহযোগিতায় গ্রামে
অত্যাচার বেড়ে চলছে ।
বাবা মা আমাদের চিটাগং এর বাসায় ফিরে যাওয়া নিরাপদ মনে করল। রেল চলাচল শুরু হয়েছে ।
আমর বড় দু বোন এর মধ্যে বড় আপার বিয়ে হয়েছিল , মেজপা পড়ত ক্লাস নাইনে । দেকতে দুজনই
ছিল সুন্দর । আমরা অনেক ছোট ছিলাম । কি ভাবে শহরে পোঁছান যায় । সবাই খুব দুশ্চিন্তায় ছিল । একদিন আমরা সবাই রেলগাড়ি তে চড়ে বসলাম চিটাগং এর উদ্দেশ্যে । আমাদের সাথে ছিল সদ্য ভারত থেকে ফেরেত মেজ ভাই মুক্তি বাহিনীর ট্রেনিং নিয়ে । কিছু গুরুত্ব পূর্ণ ম্যাপ ছিল যা বহন করছিল আমর মেজআপা । মার এক চাচাতো ভাই , বাবা, মা, আর আমরা আট ভাই বোন মেজ ভাই সহ ।
এইখানেও মায়ের একটা সাহসী ভূমিকা ছিল । তাই ঘটনাটা লিখতে হোল । আমাদের সাথে আর একটা মহিলা যাত্রী ছিলেন বোরখা পরা থাকলেও দেখে মনে হচ্ছিল উনি অনেক সুন্দরী ।
পাঁক হানাদার বাহিনীর সৈন্য রা টহল দেবার সময় বার বার ঐ ভদ্র মহিলাকে কালেমা জিজ্ঞাসা করছিল । শেষ পর্যন্ত ওনাকে বগী থেকে নিচে নামিয়ে নিয়ে গেলেন । সাথে ওনার দেবর ছিল । আমার মা
বিপদ যেনও বাবাকে পাঠালেন মেয়ে টা কে নিয়ে আসতে। ভাগ্য হয়তো ভাল ছিল ওদের এক বড় অফিসার কে বলার পর কেন জানি মহিলা আর তার দেবর কে ছেড়ে দিয়েছিল ।
কিন্তু সিপাহিরা বার বার এসে মহিলার অবস্থান দেখে যাচ্ছিল । চিটাগাং ষ্টেশন আসার সাথে সাথে
আমার ভাই বোন দের সহযোগিতায় ওদের দুই জন কে আমাদের বাসায় এনে পিছনের গেইট দিয়ে একটা বেবিতে করে ওদের গন্তব্যে পাঠীয়ে দেয় । ওনারা বেঁচে আছেন কি না জানি না ওনাদের সাথে
কখন আমাদের আর দেখা হয়নি । কিন্তু এখন বুজতে পারি আমার মা কতবড় ঝুঁকি নিয়েছিলেন সেই দিন । মায়ের এই অন্যে র জন্য ভালোবাসা আমাদের কে শেখায় বিপদে মানুষের পাশে থাকতে । মুক্তি
যুদ্ধু চলাকালিন সময়ে সন্ধায় আমাদের বাসায় অনেক মুক্তিযোদ্ধা রাই আসতেন মেজভাইয়ার কাছে ।
চাদর দিয়ে মাথা ডেকে চুপি চুপি এসে বসতেন । মাকে দেখেসি উৎসাহী চোখে ওনাদের সাথে কথা বলতে । আপা দের দিয়ে চা নাস্তা বানিয়ে খাওয়াতেন । অন্য দের নাম আমার মনে না থাকলেও কচি ভাই ( রবিউল হসেন কচি ) কে আমার বেশ মনে আছে লম্বা , পাতলা দেখতে । মা বলতেন কিরে তোদের আর কতদিন ? কচি ভাই বলতেন এই যে খালাম্মা কয়দিন এর মধ্যে ই আমাদের কে আকাশে দেখবেন । তখন ছিল ১৯৭১ এর সেপ্টেম্বর মাস ।
কিছু দিনের মধ্যে আকাশ হতে বোমা বর্ষণ শুরু হল নিরাপক্তার কথা ভেবে আমাদের রেখে আসা হল
বাকলিয়ার কোন এক গ্রামে বাবা মা বাসায় থাকলেন । ১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বর মহানবিজয় দিবস ।
আমরা ফিরে এলাম বাবা মার কাছে সেই দিন আমাদের বাসায় নয় বার ভাত রান্না করতে হয়েছিল বীর মুক্তি সেনা দের জন্য । বাবা আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেছেন প্রায় বিশ বছর ।মায়ের এই একা
জীবন আমর খারাপ লাগে ।বাবা আর মার সম্পর্ক টা ছিল সুন্দর । আমার মায়ের বয়েস এখন প্রায় ৮৫ বৎসর । এখনও নিজ হাতে রান্না করে খেতে পারেন ।নিজের কাজ নিজেই করতে পারেন । আমরা যে যার অবস্থান থেকে মার সব প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করি । মায়ের ভাল থাকা আমাদের
ভাল লাগা । আমরা সবাই মাকে ভীষণ ভাল বাসি । মা স্বাধীন ভাবে থাকতে পছন্দ করেন । আমরা যে যার মতো মার সব দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করি ।মাকে কখন বাধ্য করিনা কারও অধিনে থাকতে । কারন মা যে আমার স্বাধীন চেতা , সাহসী একজন মানুষ। তেমনি মা পরোপকারী , অতিথিপরায়ন ভালবাসেন আমাদেরকে,ভালবাসেন মানুষ কে । মায়ের ভাল থাকা আমাদের ভাল লাগা । মা’ তোমাকে ভালবাসি তোমার সব কিছুর জন্য ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ আক্তারুজ্জামান সময় মত পড়া হয়নি তাই আপনাকে ভোট করতে না পেরে খুব খারাপ লাগছে!
শিশির সিক্ত পল্লব কারন মা যে আমার স্বাধীন চেতা , সাহসী একজন মানুষ....কেনইবা হবেনা..........ভাল লগল....পুরানো দিনের কথা শুনালেন
অদৃশ্য আপনার মার সাথে জড়িত স্মৃতিগুলো পড়ে ভাল লাগল।
Kazi Heera মনোযোগ দিয়ে লিখাটা পরার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ
Kazi Heera ম্রন্ময়মিজান আপনি ঠিক বলেছেন আমি আসলে লিখিকা হিসেবে লিখি নি এই লিখাটার মধ্যে দিয়ে লিখার ইচ্ছে প্রকাশ করেছি । তা ছাড়া প্রথম বার শৈল্পিক উপস্থাপনার অভাব থাকতে পারে ।
এস, এম, ফজলুল হাসান এটা আপনার জীবন কাহিনী , স্বাধীনতা যদ্ধ চলা কালীন সময়ের গল্প , অনেক ভালো লাগল
আহমেদ সাবের আপনার স্মৃতিচারন অনেক অনেক ভাল বাগলো। পুরোনো দিনের কথা মনে পড়িয়ে দিল।
মোঃ ইকরামুজ্জামান (বাতেন) আলহামদুলিল্লাহ। ভাল একটা গল্প পড়লাম।ভালো হয়েছে। শুভ কামনা রইল।
মামুন ম. আজিজ তবে এটা গল্প নয় ঠিক , স্মৃতি চারন--তাই না আন্টি?
মামুন ম. আজিজ আপনি একজন মহিয়সী নারীর সন্তান। আশা আপনিও নিম্চয় মহিয়সী মা। আপনার এই বয়সেও আমাদের সাথে তাল মেলাতে আশায় আমি খুবই আনন্দিত। স্বাগতম।

০২ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী