আকাশ ভরা মেঘ

বর্ষা (আগষ্ট ২০১১)

এক খেয়ালী কবি
  • ৩২
  • 0
  • ৪৯

আকাশটার খুব বিচ্ছিরি অবস্থা আজ।একদম যাচ্ছেতাই।কেউ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদলে যেমন হয়।বেলা বাজে ২টা,অথচ কেউ ঘড়ি না দেখলে আন্দাজ করতে পারবে না এখন কয়টা বাজে।অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে সবকিছু।আকাশের মত আজ শাওনেরও মন ভাল নেই।খুব কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে ওর।একটু কাঁদতে পারলে বোধহয় বুকটা হাল্কা লাগত।শাওন একমনে দেখছে রাস্তায় ছুটে চলা মানুষ গুলোকে।কেউ কারও দিকে ফিরে তাকায় না,এত ব্যস্ততা সবার মাঝে।এই ঝড়ের দিনেও অবিরত ছুটে চলছে যে যার গন্তব্যে।৮ বছরের ছোট ছেলে শাওন।ওদের ছোট ফ্লাটের সামনের ব্যালকনিতে বসে আছে।এত ছোট ছেলে কিন্তু ওর চিন্তাভাবনা গুলো অবাক করা,একটু কম বয়েসে পেঁকে গেছে আরকি.ওর অপকর্ম গুলোর উদাহারন দেওয়া যায় এভাবে
,সে দিন দুপুর বেলা ওর আব্বুর ছাত্ররা এসেছে।শাওন আগে থেকেই ৩টা বেঞ্চে সুপার গ্লু লাগিয়ে রেখেছে।রুমটা ছোট বলে বেঞ্চ গুলো একটু অন্ধকার তাকে,তাই কেউ খেয়াল করেনি।৫ মিনিটের মধ্যে খবর হয়ে গেল।ছেলে গুলোকে ওর শাস্তি দেবার কারন,ওর বড় আপুর সাথে চোখাচোখি করেছিল ওদের কেউ একজন।গত এক ঘন্টা ধরে সে বসে আছে ঝুল বারান্দায়।ওদের বাসায় এখন নরকের নিস্তব্ধতা।নইলে এতক্ষনে কেউ না কেউ একজন ডাক দিতই।ছোট আপি,শামসুল ভাই,আব্বু,দাদু কেউ ডাকছেনা ওকে।অবশ্য কারও উপর রাগ করার মত ছেলে নয়ও।শাওন জানে এখন আর ইচ্ছে হলেই তার রাগ করা সাজে না,ইচ্ছে হলেই তার ছোটাছুটি সম্ভব না।সব মেঘেই জল থাকে।কিন্তু শাওন আকাশে আজ কাল কার মেঘ গুলো তুফান নিয়ে এসেছে,বৃষ্টি নয়।আজ দুপুরের বৃষ্টিতে একবার ভিজতে ইচ্ছে হয়ে ছিল শাওনের,ইচ্ছেটা হয়েই আবার নাই হয়ে গেল,না থাক এমন একটা ভাব।শূন্যতা যে কত খারাপ অনুভুতি এই ছোট ছেলেটিও এখন বুঝতে পারছে।সব ঠিক আছে,কিন্তু একটা জায়গায় এরপরও শূন্যতা থেকে যায়।খাবার টেবিলে বসে এখন সেটা আরও বেশি মনে পড়ে।শাওনের বাবা হাইস্কুল টিচার।খুব খারাপ নয় ওদের অবস্থা।দুই বোন,আব্বু,আম্মু হাসতে হাসতে চলে যেত ওদের দিন গুলো।মাত্র সপ্তাহখানেক আগেও কত ভাল ছিল ওরা।সকালে ছোটআপি,ও,আব্বু,বড়আপি একসাথে বের হত বাসা থেকে।তিন ভাই বোন এক স্কুলে পড়ার মজাই আলাদা।সবার আগে বাসায় ফিরত শাওন।এরপর দু বোন আর বিকালে আব্বু।বিকেলের কথা এখন আর মনেই পড়ে না,সোনাঝরা আলোয় আরও সোনালি সে দিন গুলো।যেন একটা একটা করে স্মৃতির ফ্রেমে বাধানো।পিছন ফিরে তাকায় শাওন ছোটআপি ডাকছে।
-কিরে এখানে বসে আছিস কেন?
মুখটা থ করে বসে তাকে শাওন।কোন উত্তর দেয় না।সায়রা এগিয়ে এসে তাকায় ভাইয়ের চোখের দিকে
-চল
-কোথায়
-আরে গাধাঁ কয়টা বাজে,খাবি না কিছু
চুপচাপ শাওনকে দেখতে কখনই অভ্যস্ত নয় সায়রা,তাই হাত ঝাঁকিয়ে বলে
-কই চল
-আমি খাব না তুমি যাও
-ওমা,খাবি না কেন?
-ওই খালি চেয়ারটা দেখতে আমার ভাল লাগে না
কিছুক্ষন চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে সায়রা
-তাই বলে খাবি না
-ইচ্ছে হচ্ছে না।তুমি যাও










শাওনদের ছোট বারান্দায় অনেকগুলো ফুলের গাছ।ওর শৌখিন বাবার লাগানো এগুলো।শাওন খেয়াল করেছে ওর বড়আপি মাঝে মাঝে এই গাছ গুলোর সাথে কথা বলে।শায়লা কে প্রথম দেখে কেউ বলতেই পারবে না ওর কোন খুত আছে।এত মিষ্টি একটা মেয়ে।চুপচাপ,ভদ্র,শালীনতার যথেষ্ট ছাপ রয়েছে ওর প্রত্যেকটা কাজে।অথচ যখন ওর ব্যাথাটা উঠে,কারও সাধ্য নেই ওকে আটকায়।খুব কষ্ট হয় তখন শাওনের।চোখেমুখে ভীতি নিয়ে দেখে ও আব্বু,আম্মু,শামসুল ভাই,ছোট আপি কেউ আটকে রাখতে পারছে না বড় আপিকে।এত আর্তনাদ যেন ওর নাড়ি ছিড়ে যাচ্ছে।জীবনের একটা চিরন্তন প্রশ্ন উঁকি দেয় তখন শাওনের মনে “এত কষ্ট কেন এই পৃথিবীতে”।ছোট শাওন কাঁদে না সহজে।এই যে এত ঝড় বয়ে গেল ওদের উপর দিয়ে ও একবার ও কাঁদেনি।প্রথম ঝড়টা আসে এভাবে মাঝে মাঝে মাথা ব্যাথা করত বড় আপির।সে দিন স্কুল থেকে ফিরে কি ছটফট টাই না করল আপু।যেন নিজে নিজে ছিড়ে ফেলবে নিজের মাথাটা।সন্ধ্যায় ডাক্তারের রিপোর্ট এল,অবাক চোখে শুধু শুনে গেল সবাই।ছোট শাওনের মাথায় ডুকল না হেপাটসেলুরার সারসিনমা কি জিনিস। বাসায় এরপর হাসাহাসি হত না খুব একটা।শাওনের আব্বু প্রতিদিন বিকেলে ওদের সময় দিতেন হঠাৎ করেই আব্বু ও খুব একটা কথা বলেন না।কিছু জিজ্ঞেস ও করে না শাওন।শুধু দেখে দিন দিন কালচে হয়ে যাচ্ছে ওর আপুর চেহারাটা আর ওর বাবা কেমন বুড়িয়ে গেছেন হঠাৎ করে।আম্মুর আঁচলটা তখন একটু ছায়া দিত ওকে।কোলে বসিয়ে গল্প শোনাত আম্মু।২৬শে পৌষে জন্ম শাওনের।২৫ পৌষের রাতে আগামীকালের স্বপ্নে বিভোর শাওনের দু চোখ।ওদের ছোট ফ্লাটেও যেন একটা পুর্নমিলনের ভাব তৈরি হল।সবাই যেন মুক্তির আনন্দ পাচ্ছে।রাত পোহালে শাওনের জন্মদিন।আব্বু,আম্মু আর আপিরা মিলে ওকে কি সারপ্রাইজ দেবে ঠিক করছে।রাত সাড়ে এগারোটা,আকাশটা ডাকাডাকি করছিল খুব।সবাই মিলে লুডু খেলছে শাওনরা,আম্মু শাওনের পাশে বসে।কে যেন ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল ওকে।ঘোরটা সাথে সাথেই কেটে গেল শাওনের।আম্মু অজ্ঞান হয়ে গেছেন।

সে রাতে আর ঘুমায়নি কেউ।আব্বু,শামসুল ভাই আম্মুকে নিয়ে হসপিটালে।বাসায় ওরা তিন ভাইবোন আর দাদি।বড় আপি সারা রাত কাঁদল ওকে জড়িয়ে ধরে।শাওন শুধু বারবার ওর চোখটা মুছে দিচ্ছিল।সারপ্রাইজটা এভাবে আসবে ভাবেইনি শাওন।ওর বড় আপুর বেলায় যা হল আম্মুর বেলায় ও তাই।কিছুই ডুকল না শাওনের মাথায়।আম্মুর নাকি “লিভার সিরসিস” হয়েছে।বড় অপারেশন দরকার অনেক টাকা দরকার।আব্বুর চোখের দিকে তাকাতে পারছিল না শাওন।






বাসাটা এখন একদম নীরব।আগের মত গোছানো নয়।ঝুল বারান্দায় নাকি চৈত্র দিনের ফুল ফুটেছে।দেখা হয়নি শাওনের।অদ্ভুত মানুষগুলো এত তাড়াতাড়ি বদলে যায়।শাওনের বাবা ও বদলে গেছেন।আম্মু যে চেয়ারটাতে বসত ওখানে এখন কাউকে বসতে দেয় না শাওন।বড় চুপচাপ থাকে সে,খুব একটা কথা বলে না কারও সাথে।বড় আপিটা চলে যাওয়ায় আরও যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে সব।শাওন শুধু তাকিয়ে থাকে আকাশে জমাট বাঁধা মেঘ গুলোর দিকে।অনেক মেঘের কান্নাঝরা হাসিটা দেখতে চায় সে।বিয়ে নাকি একটা শুভ কাজ,কথাটা মানতে নারাজ শাওন।বিয়ে দিয়ে যেন মাথার উপর থেকে বোঝা সরিয়ে দিলেন আব্বু।বিয়েকে আরও অপচন্দ করার কারন শাওনের বাবাও নাকি দ্বিতীয় বিয়ে করবেন।ওর আর সায়রার বোর্ডিং স্কুলের রেজিষ্টেশন হয়ে গেছে।

ঝুল বারান্দায় বসে আছে শাওন।রাস্তায় ছোটে চলা অজানা মানুষদের ভিড়ে ও হারিয়ে যেতে চায় একদিন।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এফ, আই , জুয়েল # গল্পের গতি ও ভাব ভাল ।
সৌরভ শুভ (কৌশিক ) আকাশ ভরা মেঘ ,কে দেখবি দেখ !
sakil সুন্দর লেখনি তে আপনার লেখার কস্ট গুল ফুটে উঠেছে বেশ দারুন ভাবে।
কৃষ্ণ কুমার গুপ্ত অনেক সুন্দর একটা গল্প লিখেছেন ...অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো ..
এক খেয়ালী কবি না সব টাই কল্পনা....নামটা ডাক্তার বন্ধুর কাছ থেকে dhar করা...আপনি অনেক সুন্দর মন্তব্য করেন...আমার লেখাটা পরার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ....ভালো thakben
প্রজ্ঞা মৌসুমী 'হেপাটসেলুরার সারসিনমা' কি আমারো জানা ছিলনা। নতুন একটা কিছু জানলাম। তুমি জানলে কি করে? তোমার পরিচিত কেউ কি..খুব মায়া লাগলো শাওনের জন্য। প্রাণবন্ত দুষ্ট ছেলেটাও যে কত বদলে গেছে। (৩) পরিচ্ছেদের পরিসর আরেকটু বড় হলে কি হতো? ওর সাথে আরেকটু সময় কাটাতে ইচ্ছে করচ্ছিল। তোমার লেখনী অনেক ভালো লাগল। সম্ভাবনার কথা বলে...খেয়ালী ভাব ছেড়ে নিয়মিত লেখ কিন্তু। তোমার প্রসার কামনা করছি।

৩০ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪