ভূতুবুদ্দিন

গ্রাম-বাংলা (নভেম্বর ২০১১)

নিরব নিশাচর
  • ৮৭
  • 0
  • ১১৪
কুমিল্লার এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে চন্দনপুর একটি গ্রাম। গত কয়দিন ধরে নাকি সেখানে ভুতের উপদ্রব শুরু হয়েছে। আমি কিছু দিনের জন্য একটি এন.জি.ও এর কাজ নিয়ে এই গ্রামে আসি। এখানে এসে দেখি, গ্রামবাসী ভুত দূর করার জন্য দুই গ্রাম দূর থেকে এক তান্ত্রিক কে ডেকে নিয়ে এসেছে। বেশ বিখ্যাত তান্ত্রিক! তবে গত এক সপ্তাহের মধ্যে পর পর দুইবার ফেল! সবশেষে তান্ত্রিক সাহেব বেশ গম্ভীর ভাবে বললেন- এই ভুতটি যেন তেনো কোনো ভুত নয়, ওকে দূর করতে হলে কোনো এক বিধবা যুবতী নারী কে হাত পা বেধে পানিতে বিসর্জন দিতে হবে... সাথে কড়া শর্ত আরোপ করলেন বিধবা নারী এই গ্রামে জন্মগ্রহণকারী হতে পারবে না! সব শুনে প্রথমে গ্রামবাসী বেশ হতবাক হলেও কয়েকদিনের মধ্যে গ্রামের বৃহত্তর স্বার্থে গ্রাম জুড়ে শুরু হয়ে যায় বিধবা নারীর খোজ... বিভিন্ন ভয় ভীতি দেখিয়ে গ্রামের প্রবীন ব্যক্তিদের সহায়তায় দুদিনের মধ্যে মেম্বর সাহেব দরিদ্র পরিবার বেছে বেছে দশজন বিধবা নারীর একটি প্রাথমিক লিস্ট তৈরী করেন। বিষয়টি শুনে আমি শিয়রে উঠি! বিধবা নারীরা এমনিতেই পরিবারে অবহেলিত অবস্থায় থাকেন। তাদের আগে পিছে সাধারণত কেও থাকেনা! এতদিন ধরে চুপ করে থাকলেও এবার আর চুপ করে থাকা যাচ্ছিলনা! এদিকে গ্রাম জুড়ে ভুতের উপদ্রব দিন দিন বেড়ে যেতে লাগলো! প্রায় দিনই কোনো না কোনো বাড়ির টিনের চাল অথবা দরজার চৌকাঠ খুলে পুকুরে ফেলে দেয়ার মত ঘটনা ঘটতে থাকলো! গতকাল এক মহিলা তার শোবার ঘরে ঢুকে সাথে সাথে চিত্কার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, বাড়ির অন্য লোকজনেরা এসে দেখে শুন্যের মাঝে খাট দুলছে! সব মিলিয়ে আমি বুঝতে পারি যে বিষয়টা নিয়ে আমার হস্তক্ষেপের প্রয়োজন আছে। সন্ধ্যায় আমি গ্রামের চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে দেখা করে নিজ সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরি... এই ধরনের আন-ইউজুয়াল স্পিরিট সম্পর্কে আমার দীর্ঘ দিনের পড়াশুনা রয়েছে! আমি ওনাকে বুঝিয়ে বললাম এই ধরনের অপশক্তির নিজেস্ব একটা ধরন থাকে, ওদেরকে আঘাত করতে হলে আগে ওদের ধরনটা বুঝতে হবে... আমি আরো বলি যে, এই ধরনের কোনো বিষয়ে এখন জড়িয়ে পরার মত সময় আমার নেই, তবু ও আমি আগ্রহ দেখাচ্ছি কারণ এখানে একটা মহিলার জীবন জড়িত! সম্পূর্ণ আলাপচারিতায় চেয়ারম্যান সাহেব কে আমার কাছে মোর-দেন-এভারেজ একজন শিক্ষিত মানুষ মনে হলো... আমার সব কথা শুনে উনি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন। আমার দিকে একটি সিগেরেট এগিয়ে দিয়ে বললেন- আপনি পারবেন তো? আমি সিগেরেটটা হাতে নিয়ে বললাম- ওদের সাথে পেরে উঠা এতটা সহজ নয়! তবে আমি আমার সবটুকু ঢেলে দিব... চেয়ারম্যান সাহেব এক গাল হেসে কটাক্ষের সুরে বললেন- কতটুকু ঢালবেন? আপনিও তাহলে চেষ্টাই চালাবেন, তাহলে তান্ত্রিক বাবাজি'র দোষটা কোথায়? আমি সব কিছু বুঝে দাড়িয়ে পরলাম, বললাম দোষটা যদি আপনি এরপরও বুঝে না থাকেন তাহলে আমি আর আপনার সময় নষ্ট করবনা... মনে মনে ভাবলাম- ভান ধরা মানুষকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করাটা বৃথা! চলে আসার সময় চেয়ারম্যান সাহেব পেছন থেকে বলছিলেন- ভাই সাহেব, আমাদের কে পাবলিক সেন্টিমেন্ট বুঝে চলতে হয়! অনেকেই মনে করেন আমরা কত শক্তিশালী, কিন্তু কিছু জায়গায় আমরাও ভীষণ ভাবে নিরুপায় থাকি সেটা কেও কখনো বুঝতে চান না, যাই হোক বদ্দোয়া টা দিয়েন না ভাই! আমি রুমে ফিরে এসে ব্যাগ গুছিয়ে ফেলি, এই তান্ডব লীলা দেখা আমার দ্বারা সম্ভব নয়! সিদ্ধান্ত নেই কাল সকালেই চলে যাব এবং পুলিশ কে জানাবো ব্যাপারটা। অবশ্য পুলিশকে জানিয়েও লাভ নেই আমি জানি, এসব রিমোট এলাকা সম্পূর্ণ নিজের আইনে চলে! ভোরে উঠে রিক্সা নিয়ে রওয়ানা দেই স্টেশনের দিকে। চার দিকে হালকা কুয়াশার চাদর, কিছু ছেলে মেয়ে কায়দা আর আমপারা বুকের সাথে জড়িয়ে মাদ্রাসার দিকে হেটে যাচ্ছে... পাখির কিচির মিচির শব্দ আর পুকুর ঘাটে শীতের চাদর মুড়িয়ে রমনীদের আনাগোনা দেখে মনটা কেমন যেন করে উঠলো! আমি প্রথম বারের মত অনুভব করি মানুষগুলো আমাদের মত নয়! মাটির তৈরী এই মানুষগুলোই একমাত্র মাটির গন্ধটা এখনো ধরে রেখেছে। রিক্সা এগিয়ে চলছে ধীরে ধীরে। কিন্তু আমি আর এগুতে পারছিলাম না! পেছন থেকে ভীষণ একটি টান অনুভব করলাম!

সন্ধ্যার দিকে তান্ত্রিক বাবাজি আবারও দলবল নিয়ে এলেন। এক হাতে একটি ঝাড়ু ও অন্য হাতে একটি চাবুক নিয়ে মাশাল্লাহ ভালই দর্শক সমাগম পেলেন তিনি। সামনে খর কূটু দিয়ে সারগেদ গণ আগুন জালিয়ে দিলে পরিবেশটা আরো জমকালো হয়ে উঠে! তান্ত্রিক সাহেব সবার সামনে প্রায় দুই ঘন্টা ব্যাপী ভুত নাথের সাথে আলাপ আলোচনা করলেন! যদিও যথেষ্ট গালি গালাজ ছিল সেই আলোচনায় কিন্তু মা বোনরা সবাই মিলে মিশেই বিষয়টা উপভোগ করলেন... পাকা সিদ্ধান্ত হলো দশজন বিধবার মাঝে সবচে সুন্দরী জনকেই বিসর্জন দিতে হবে! না হলে ভুত মশাই কে মানানো মুশকিল হবে... তান্ত্রিক সাহেব বেশ ঘটা করে আগামী মঙ্গলবার দিন তারিখ ধার্য্য করলেন, ঘোষণা শুনে মনে হলো যেন গ্রামে কারো বিয়ের দিন ধার্য্য হলো! তিনি বললেন সূর্য্য যখন একেবারে মাথার উপরে থাকবে বিধবা কে তখন হাত পা বেধে এক ধাক্কায় নদীতে ফেলে দিতে হবে! মনে রাখতে হবে কোনো ভাবেই দুই ধাক্কা দেয়া যাবে না!

সেদিন রাত ভর রোখসানা বাচ্চা দুটিকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাদলেন। বাচ্চা দুটির এখনো সেই বয়স হয়নি যে এই কান্নার অর্থ বুঝতে পারে! তবে তারা তাদের মায়ের এত সুন্দর চেহারায় চোখের পানি দেখতে পছন্দ করে না... শত অভাবের মধ্যেও মা তাদের উপর কখনো এতটুকু আচর পড়তে দেয়নি। এক দুর্ঘটনায় বাবা কে হারিয়েছে বছর খানেক আগে আজকে আবার মা এমন করে কাদছেন, সব মিলিয়ে ভালো লাগছে না বাচ্চা দুটির কাছে।
মঙ্গলবার সকাল হতেই রোখসানার বাড়িতে গ্রামের হর্তা কর্তারা ভীড় জমাতে থাকলো। গ্রামের বাচ্চা কাচ্চা ছেলে বুড়ো সব এলো। গত কয়দিন পালা করে রোখসানার বাড়ির উপর নজর রাখা হচ্ছিল যাতে পালিয়ে না যেতে পারে। এ ব্যাপারে অবশ্য রোখসানার শশুরের নজরটা ছিল সবচেয়ে তীক্ষ্ণ। সবার চোখে মুখে আজ এক স্বস্তির ছাপ। তান্ত্রিক বাবার নির্দেশ, বিসর্জনের সময় রোখসানা কে যথাসম্ভব সাজিয়ে গুছিয়ে দিতে হবে।সম্ভবত তান্ত্রিক বাবার জানা ছিল যে ভুতের জগতে কোনো কসমেটিক ইন্ডাষ্ট্রী হয় না। যাই হোক, দুইজন মহিলা এসে রোখসানা কে পাশের ঘরে নিয়ে গেল সুন্দর করে সাজিয়ে দিতে। রোখসানার দুই ছেলে হা করে তাকিয়ে দেখছে ঘটনাগুলো! বাড়ী ভর্তি মৌ মৌ মানুষ! মেম্বার সাহেব এসে রোখসানার শশুরের সাথে করমর্দন করলেন। এবং পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শশুরের হাতে দশ হাজার টাকা তুলে দিলেন। বললেন, আমনে গেরামডার লেইগ্যা যা কইরলেন ভাই এই গেরামবাসী কোনো দিন তা ভুইলত নো। আমি চেয়ারম্যান সাহেবেরে কইছি আমনের লেইগ্যা একটা ভালা কাম যোগার করন লাগব। রোখসানার শশুরের চোখে মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো! ছেলের বৌ টা এত বড় ভাগ্য খুলে দিবে সে আগে বুঝে নি কখনো! রোখসানা ভিতর থেকে সাজগোজ নিয়ে বেরিয়ে এলো। চোখ জোড়া লাল ছল ছল করছে। সেই চোখেই ছেলে দুজনের দিকে এক নজর তাকালো। বড় ছেলে সাথে সাথে জিজ্ঞেস করে বসলো- তুমি কই যাও মা? রোখসানার সরাসরি উত্তর- ভুতের বাড়ি যাই বাবা, আইজ থেইক্কা ভুত আর তোমাগরে ভয় দেহাইবো না। কাওরে ভয় দেহাইবো না বাবা, আমি হেরে গল্প শুনাইয়া ঘুম পারাইয়া দিয়া আসুম! ভিতরের চাপা কান্নাটা তার বেরিয়ে আসতে চাইছিল, কিন্তু মুহুর্তেই তা হারিয়ে গেল যেন কোনো এক অজানা অভিমানের আড়ালে। কলিজার ধন দুটোকে শেষবার বুকে জড়িয়ে ধরে বলল- তোমাগো দাদা দাদু যেমনে কয় তোমরা হেমনে কইরা চইলো যত দিন পর্যন্ত্য আমি ফিরা না আহি (মিথ্যে আশ্বাস)! বাচ্চা দুজন সুযুগ পেয়ে মায়ের আচল ধরে বসলো । সম্ভবত মাকে না যেতে দেয়ার একটা বুদ্ধি এটেছিল মাথায় কিন্তু দাদী এসে সুকৌশলে তাদের নিয়ে গেল গুর দিয়ে মুড়ি খাওয়াবে বলে... মা আর মুড়ির মধ্যে এখন কোনটা বেশি প্রয়োজনীয় বুঝে উঠতে পারছিলনা ওরা!
বেলা এগারোটা বাজে। আমার ঘরের জানালা দিয়ে দেখতে পাচ্ছি স্কুল মাঠের মাঝখানে তান্ত্রিক বাবা বসে আছেন। তার সামনা সামনি বসে আছেন রোখসানা। চারিদিকে শত শত মানুষ! বহুদিন পর গ্রাম জুড়ে একটা বড় ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। ছোট ছোট অনেক গল্পের রসদ জুটবে আজ এখানে যা দিয়ে একটা বছর অনায়াসেই চায়ের দোকানে হৈ চৈ চালিয়ে দেয়া যাবে। গত বিশ্বকাপের পর গ্রাম বাসী আর তেমন কোনো রসদ যোগার করতে পারছিলনা। যাক, শেষ পর্যন্ত ভুত বাবার কল্যানে বড় ধরনের একটা ঘটনা ঘটে যেতে চলেছে আজ। জয়তু ভূতনাথ! বিশ্বকাপের সাথে অনেক সাদৃশ্য ও রয়েছে আজকের খেলার! ওখানে বহুজন মিলে একটা বল কে লাথি মারতে থাকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে নেয়ার উদ্যেশ্যে, এখানেও অনেকটা তাই! সকাল থেকে লাথি শুরু হয়েছে, সন্তানদের রক্ষণভাগ থেকে বল ছিনিয়ে আনা গেছে সহজেই... বল এখন মধ্য মাঠে, কিছুক্ষণের মাঝেই হয়ত পৌছে যাবে নির্দিষ্ট জায়গায়!

ক্ষানিক দুর্বল লাগছে আমার শরীরটা। গত চারদিন ধরে আমি প্রচুর আন্ডার-গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করি। ভুত এসেছিল এমন অনেক বাড়িতে আমি যাই। বিভিন্ন কীর্তি কলাপের গল্প শুনি। বাড়ির সকলের সাথে কথা বলার ফাকে ফাকে বাড়ির আশপাশ ঘুরে দেখি। যথেষ্ট পরিমান তথ্য উপাত্ত ও যোগার করি। গত রাতে সব তথ্য একত্রে নিয়ে বসেছিলাম, সারা রাত তাই এক ফোটাও ঘুমাই নি। ভুত সাহেব তার কীর্তি কলাপে নিজের সম্পর্কে অনেক তথ্য রেখে গেছেন! সুতরাং উনাকে ধরা মোটেও কঠিন হবেনা আমি বুঝে ফেলি। যেই আত্মবিশ্বাসটা চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়িতে বসে সেদিন পাচ্ছিলাম না, আজ সেটা উপর্যুপরি আছে। তাই ভাবলাম, আজ আর কাওকে ছাড় দেয়া যাবে না। লক্ষ্য করি, সূর্য্যটাও বেশ তরিঘরি করে মাথার উপরে চলে আসছে। সময় ঘনিয়ে এসেছে, এখুনি বের হওয়া দরকার। ঠিক এমন সময় বিশাল দেহী এক লোক এসে দাড়ালো আমার জানালার সামনে। অভদ্রের মত জানালা দিয়ে উকি মেরে বলতে থাকলো- চেয়ারম্যান সাহেব কইছে ঘরে না বইয়া থাইকা আফনেরে মাঠে যাইতেন! উনার লগে দেহা করতেও কইছে আফনেরে! আমি ভীষণ অবাক হলাম। স্কুল ঘরের এক কোণে চেয়ারম্যান সাহেব একা একা বসে আছেন। মাঝে মাঝে দুই একজন গিয়ে কথা বার্তা বলছেন আবার চলে আসছেন। বুঝলাম আজ চেয়ারম্যান সাহেবকেও সঙ্গ দেয়ার কেও নেই। সবাই খেলা দেখতে ব্যস্ত...! ধীর গতিতে চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে গিয়ে দাড়ালাম। আমি কিছু বলে উঠার আগেই চেয়ারম্যান সাহেব বললেন- হেরে গেলেন তো ভাই সাহেব? আমি দৃঢ় কন্ঠে বললাম, মোটেও না! কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন তিনি! তারপর তিরস্কারের সুরে বললেন- আরে ভাই যান যান, মানুষ মরতে ও মারতে কেমন লাগে দেখেন গিয়া। ফাও প্যাচাল কম পাইরেন! আমার শরীরের প্রত্যেকটি রক্তকণা লাফিয়ে উঠলো। অনুভূতিহীন একটা অবশ দেহ নিয়ে আমি উঠে এলাম চেয়ারম্যানের সামনে থেকে।
ভীর ঠেলে একেবারে ইল বাবার (তান্ত্রিক) সামনে এসে দাড়ালাম। মন্ত্র তন্ত্র পড়ে রোখসানার সারা শরীরে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন তিনি। চুলের জন্য তার চোখের অবস্থান ঠিক বুঝা যাচ্ছিলনা। তবে আমি অনুমান করতে পারছিলাম যে তার চোখ রোখসানার দেহের ভাজে ভাজে দৌড়াচ্ছে! কিছুক্ষণের মধ্যেই চেয়ারম্যান সাহেব কে ডেকে আনা হলো আসরের মাঝখানে। শেষ প্রস্তুতি চলছে। চেয়ারম্যান সাহেব ইল বাবার পেছনে একটি চেয়ারে এসে বসলেন। চেয়ারে বসতে বসতে আমার দিকে ক্ষানিক ক্ষণ তাকিয়েও থাকলেন।যাই হোক , চেয়ারম্যান সাহেবের সন্মানে পরিবেশ এখন অনেক শান্ত। শুধু ইল বাবার মন্ত্র শুনা যাচ্ছে, বাকি সবাই মুটামুটি চুপচাপ। আমি বুঝলাম, এটাই সেই সময় যেই সময়ের জন্য এতদিন ধরে আমি অপেক্ষা করছি। আমি এক হাত তুলে ইল বাবার দিকে তাকিয়ে রইলাম। কিছুক্ষণ পর ইল বাবার সামনে হাত টা নাড়াতেও লাগলাম। গ্রামের কিছু লোক অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। হঠাত ইল বাবা মন্ত্র থামিয়ে দিয়ে আমাকে বললেন, কি বলতে চাচ্ছিস তুই? আমি বললাম, ঘটনার আগে আপনার সাথে দুইটা কথা বলার শখ ছিল বাবা। এবার ইল বাবা আমার চোখে চোখে তাকালেন! এমন সময় হালকা কাশি দিয়ে চেয়ারম্যান সাহেব পিছন থেকে বলে উঠলেন- বাবা, এই ব্যাটা নিজেরে অনেক বড় তান্ত্রিক মনে করে! তার ধারণা এই ভুত দূর করতে কোনো বিসর্জন লাগে না! আপনে শুধু একবার বলেন, ওনারে এইখান থেইকা এক্ষুনি বাইর কইরা দেই... বলেই চেয়ারম্যান সাহেব আমার দিকে তাকালেন। বললেন- কই আফনের মন্ত্র তন্ত্র কিছু জানা থাকলে এইবার বলেন দেখি ইল বাবারে। আপনে না বলছেন, এই বিষয়ে আপনার অনেক কিছু জানা আছে! আমি বেশ ধাধা'র মধ্যে পড়ে গেলাম। ভাবতে লাগলাম, চেয়ারম্যান সাহেব কি আমাকে দৌড়ে দিতে চাইছেন নাকি গ্রামবাসীর সামনে আমাকে একটা প্লাটফর্ম তৈরী করে দিচ্ছেন! যাই হোক, বেশী ভাবার সুযুগ ছিলনা হাতে। জীবনে কখনো এমন পরিস্থিতিতে পরিনি আমি! ঝটপট করে তাই ইল বাবাকে বললাম- বাবা আপনি তো জানেন, জগতে অনেক মন্ত্র তন্ত্র আছে যা জনসমক্ষে বলা ঠিক নয়... আপনি যদি অনুমতি দেন বাবা তাহলে আপনার কানে কানে ছোট্ট একটা মন্ত্র পড়ে শুনাতাম। আমার সম্পর্কে আপনি সব বুঝে যেতেন! বেচারা ইল বাবা, কিংকর্তব্যবিমুর হয়ে গম্ভীর সুরে বললেন- জলদি বল। আমি হাটু গেড়ে বসে ইল বাবার কানের কাছে প্রায় আধা মিনিট ধরে মন্ত্র পরি। আমি জানি, পুরু গ্রামবাসী তখন আমাকেই তাকিয়ে দেখছে। আমিও ঠিক এই সুযুগটাই চাচ্ছিলাম। তাই ইল বাবার কানের কাছ থেকে উঠে এসে আর ফিরেও তাকালাম না। গ্রামবাসীদের কে উদ্যেশ্য করে বলতে শুরু করলাম মনের ভিতর জমে থাকা গত কিছু দিনের ক্ষোভ এবং অভিজ্ঞতার কথাগুলো। আমি বললাম, আমরা সবাই মানুষ ... আমরা আল্লাহতায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, আলহামদুলিল্লাহ! আমরা সবাই জানি যে গ্রামে ইদানিং এক অপশক্তি ভর করেছে। আপনাদের মত আমিও এই বিষয় নিয়ে ভীষণ চিন্তিত এবং ভীত। তবে আমাদের এটাও জানা উচিত যে সেই অপশক্তি কখনই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীবের চেয়ে বেশি শক্তিশালী নয়। জীবনের অনেকটা সময় আমি এইসব অদৃশ্য শক্তির পেছনে খরচ করেছি। আমি জানি ওদের গতি ও প্রকৃতি সম্পর্কে। ওরা মোটেও আপনার আমার চেয়ে শক্তিশালী নয়! আপনারা মানুষ বিসর্জন দিয়ে তার সাথে সমঝোতা করতে যাচ্ছেন। কেন? এভাবে করে কি আপনারা হেরে যাচ্ছেন না তার কাছে? নিজেদের মা বোনকে তুলে দিচ্ছেন তার হাতে! এটা কেমন বিজয়? এটা কেমন উল্লাস? আমি সত্যিই অবাক! আপনাদের গ্রামে হয়ত আজ আমার এক টুকরো জমি নেই, আমাকে ভাই বা বন্ধু বলে যারা ডাকে তারা কেওই এই গ্রামের বাসিন্দা নয়। তাই আপনাদের উপর আমার অধিকার নেই বললেই চলে! আমি সত্যিই কোনো দিক থেকে আপনাদের কোনো কিছু নই! তবে যদি হতাম, তাহলে আজ চিত্কার দিয়ে বলতাম- প্রয়োজনে নিজেদের জান দিয়ে দিব তবু নিজ হাতে নিজেদের কাওকে তুলে দিব না। ধীরে ধীরে আমার কন্ঠ আরষ্ট হয়ে আসছিল... আমি আর বলতে পারছিলাম না... হঠাত পিছন থেকে একটি উষ্ণ স্পর্শ অনুভব করি! দেখি, ইল বাবা এক হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরেছেন। তিনি আমার কানের খুব কাছে এসে ফিসফিস করে বলতে লাগলেন- তোর থানা পুলিশ ওয়ালা যেই মন্ত্র তন্ত্র ভয়ভীতি আমাকে কানে কানে শুনালি , ঐগুলি আমি নিকুচি করি, ওরা আমার ঘরের মানুষের মত! তবে তোর মনের শক্তি কে আমি নিরবে করি কুর্নিশ। আর এজন্যই বলছি- তুই পারবি। যদিও তোর আর আমার কাজের ধরন ভিন্ন, তবুও বলে রাখছি- যদি কোনো সাহায্য লাগে, নির্দ্বিধায় স্বরণ করিস। আমি গেলাম।ইল বাবা , ইল বাবা ইল , ইল বাবা বাবা... তান্ত্রিক বাবাজি চলে যাচ্ছেন... গ্রামবাসীর ঘোর এখনো কেটে উঠেনি, তবে অনেকেরই চোখে লজ্যা আর রোখসানার জন্য সহমর্মিতা আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম! আমি পিছনে ফিরে রোখসানার দিকে তাকাই। এক প্রবীন ব্যক্তি এসে অশ্রু চোখে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে- আমি তোমাকে এই গ্রামে এক টুকরো জমি দিব, আমি তোমাকে ভাই বলে ডাকব। তুমি নির্দ্বিধায় বল, এই গ্রামের গ্রামবাসী হলে তুমি অধিকার নিয়ে কি কি বলতে? তুমি আবার বল... তুমি বারবার করে বল...!! সাথে সাথে মনে হলো যেন পুরো মাঠ জুড়ে কয়েকশ কন্ঠ একসাথে কথা বলে উঠলো। গ্রামবাসীকে চেচিয়ে বলতে শুনলাম – ঠিকই তো কইছে, লাগলে ভূত মাথায় লইয়া ঘুরুম তও নিজেগো কাওরে বিসর্জন দিমু না! কিছু মহিলা দৌড়ে ছুটে আসলেন রোখসানার দিকে। রোখসানা কে বুকে জড়িয়ে ধরে গোঙিয়ে কাদতে লাগলেন, যেন একটি চাপা ক্ষোভ বেরিয়ে আসছিল তাদের রুহুর ভিতর থেকে। মাঠের মাঝখানটায় ধীরে ধীরে গ্রামবাসীর ভীড় বাড়তে লাগলো। মহিলাদের বুকে মাথা রেখে রোখসানা ঠায় তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তার চোখে এক বিন্দু ও পানি নেই! তবে আমি জানি ও ঠিকই কাদবে। কিছুক্ষণের জন্য ওই চোখ থেকে চোখ ফিরাতে পারলামনা আমিও! চেয়ারম্যান সাহেব এবার চেয়ার ছেড়ে উঠলেন। দাড়িয়ে আমার দিকে এক নজর তাকাতেই আমি হাত তুলে উনাকে সন্মান জানাই। সেদিনের মত করে আজও তিনি এক গালেই হাসলেন! তবে আজকের হাসিটা ছিল সেদিনের চেয়ে সুন্দর!

সন্ধ্যায় আমি রুমে শুয়ে আছি, আমার বাড়িওয়ালা রইস ভাই তখন আমার পাশে বসে ভূত নিধন কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাপক কথা বার্তা জিজ্ঞাসা করছিলেন। আমি বললাম আপনাদের অগোচরে গত কিছু দিন যাবৎ আমি তার আচরণ গভীর মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করেছি… সে কখনো কারো ক্ষতি করেনা, শুধু ভীতসন্ত্রস্ত করে মাত্র! তার নিজেস্ব কিছু আচরণ ও অভ্যেস আছে যা আমার কাছে এখন অনেকটাই পরিষ্কার! ওকে অনায়াসেই আয়ত্বে আনা সম্ভব। গত কয়দিনে বিভিন্ন বাড়ীতে গিয়ে কিছু আলামত ও আমি যোগার করেছি যেগুলো টেবিলের উপর রাখা ছিল। রইস ভাই আমার কথা শুনতে শুনতে টেবিলের উপর রাখা আলামত গুলো দেখছিলেন। পাশেই একটি বড় সাদা কাগজে কিছু কেইস-স্টাডি সহ কিছু ছবি ও হিজিবিজি কতগুলো কথা লিখা ছিল। রইস ভাই একে একে সব কিছুর উপরেই চোখ বুলাচ্ছিলেন। এমন সময় বলা কওয়া ছাড়াই হঠাত তিন চার জন মানুষ এসে আমার রুমে ঢুকলেন! যাদের আমি আগে কখনোই দেখিনি। আমি কিঞ্চিত অবাক হলাম! তবে রইস ভাই তাদের কে বেশ হাসি মুখে সালাম দিল বিধায় বুঝলাম যে তারা বেশ পরিচিত ও মুটামুটি মর্যাদা সম্পন্ন লোক, তবে সমস্যাটা কেবল ভদ্রতায়! যাই হোক, আমি কিছু বলার আগেই তারা আমাকে সালাম দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলেন এবং কেও কেও যথেষ্ট শক্ত হাতে করমর্দন ও করলেন! আমি হাতের হাড়গুলোর ব্যালান্স ঠিকঠাক আছে কিনা একবার যাচাই করে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম- মাফ করবেন ভাই, আপনাদেরকে আগে কথাও দেখিনি মনে হয়! এদেরই একজন সাথে সাথে বলে উঠলেন – চেয়ারম্যান সাহেব আমাগোরে পাঠাইছে ভুত মারনের ব্যাফারে আফনেরে সম্পুইন্ন সহযুগিতা দিতে... আমরা অইলাম গিয়া চেয়ারম্যান সাহেবের আন্ডারগ্রাউন্ড আদমী... শুধু আফনে ক্যান? অনেকেই আমাগোরে খালি চোখে দেহেনা, হি হা হ্যা হ্যা হ্যা হ্যা হ্যা হ্যা হ্যা!!! কথা শুনে ভদ্রতার খাতিরে আমিও কিঞ্চিত হাসলাম... তবে বুঝতে বাকি থাকলোনা যে ভুতের আগেই জীন আছর করতে যাচ্ছে আমাকে! কিন্তু চেয়ারম্যান সাহেবের পাঠানো সব লোক ফিরিয়ে দেয়াটাও আমার ঠিক হবে না। তাই আমি বললাম আমার শুধু দুইজন মানুষ দরকার, রইস ভাই তো এক জন আছেনই তাই আপনাদের মধ্য থেকে আরেকজন লোক থেকে যেতে পারেন… মুহুর্তেই আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যাটেলের যেন মনটা ভেঙ্গে গেল! তবে বৃহত্তর স্বার্থে এছাড়া আমার আর কিছুই করার ছিল না…

ঘরের এক কোণে বসে রইস ভাই এবং চেয়ারম্যানের এক পালোয়ান 'হাওলাদার সাহেব' মিলে ভালই গল্প গুজব চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে আমি ভুতের আলামতগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করছি… এবং বিভিন্ন বাড়ি ঘুরে সংগ্রহ করা ঘটনা গুলো বারবার পড়ে দেখছি… তার কিছু কিছু প্যাটার্ন আমার কাছে ছিল ভীষণ অসচ্ছ! যেমন, ঠিক কিসের প্রেক্ষিতে সে তার আক্রমনের টার্গেট নির্বাচন করে এবং ঠিক কখন সে আক্রমন করতে যায় এই বিষয় দুটি যেন কিছুতেই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না! তাছাড়া তার বাকি আচরণগুলো ছিল আমার কাছে কাচের মত পরিষ্কার… যেমন সে কখনই কোনো শিশু কে ভয় দেখায় না! সে মানুষকে আতঙ্কগ্রস্থ করে চরম ভাবে তবে কখনই শরীরে আঘাত করেনা! আক্রমনের সময় কোনো অসুস্থ মানুষ সামনে থাকলে সেই অসুস্থ মানুষ তান্ডব লীলার কোনো কিছুই অনুভব করেনা, অসুস্থ মানুষটির দৃষ্টিকে নাকাবন্দী করে দিয়ে এটা করা সম্ভব ! সুন্দর মানুষদের প্রতি তার আক্রোশ অনেক বেশি… মুটামুটি অবস্থাসম্পন্ন বাড়িতেই সে আক্রমন করে থাকে… এবং ঘরের টিনের চাল খুলে ফেলা তার অত্যন্ত প্রিয় একটি কাজ! এইসব তথ্যগুলোতেই সে নিহিত আছে আমি নিশ্চিত ছিলাম। দীর্ঘদিন ওদের সম্পর্কে ঘাটাঘাটি করে একটা জিনিস আমি খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করেছি যে ওরা খুব সহজ সমীকরণে চলে, এবং খুব সরাসরিভাবে তাদের ক্ষোভ তারা প্রকাশ করে দিয়ে যায়! দুনিয়াবী মানুষদের মত কোনো ছল চাতুরী তারা করতে জানেনা… তাই তাদের প্রতিটি কার্যকলাপই হচ্ছে তাদের সম্পর্কিত এক একটি বার্তা। আমি এই বিষয়টাকেই এখানে কাজে লাগাতে চাইলাম। তাই তার সবগুলো কার্য্যকলাপ থেকে যেই বার্তাগুলো পাওয়া যায় তা দিয়ে একটা ভুত সমীকরণ দার করলাম “ভুত = ড্যাশ + ড্যাশ + ড্যাশ ……”। এদিকে রইস ভাই এবং হাওলাদার সাহেব বেশ হাসি ঠাট্টায় মশগুল। আমি দুইজনকেই ডেকে বললাম , গভীর মনোযোগ দিয়ে আমার কথা গুলো শুনতে … আমি জিজ্ঞাসা করলাম- এই গ্রামে খোলা ছাদের নিচে বা রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো দরিদ্র কোনো কদাকার অসুস্থ শিশু বা কিশোরের অপমৃত্যর ঘটনা ঘটেছে কিনা কখনো? আমার কথাগুলো শুনে সাথে সাথে তারা হকচকিয়ে উঠলেন।
দুজনই আমাকে আবার বলতে বললেন কথা গুলো। দ্বিতীয়বার বলতেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে একটিই নামই উচ্চারণ করলেন – আমাদের “কুতুবুদ্দিন”!!

আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম! যাক বাবা তাহলে কেরেক্টার কে খুঁজে পাওয়া গেছে... বাকি কাজ এখন অনায়াসেই হয়ে যাবে। এবং হলো ও তাই! আমি দুজনেরই কাছে কুতুবুদ্দিন সম্পর্কে জানতে চাইলাম... তার বয়স কত ছিল? সে কিভাবে মারা গেল? ইত্যাদি... রইস ভাই বেশ উত্সাহ নিয়ে শুরু করলেন। কুতুবুদ্দিনের বয়স ছিল ১০ বছর। সে মানুষিক ভারসাম্যহীন ছিল। শরীরের তুলনায় মাথাটা ছিল যথেষ্ট বড়। গ্রোথ ছিল অস্বাভাবিক। গ্রামের লোকজনেরা সারাদিন মজা করত কুতুবুদ্দিন কে নিয়ে!! আমি জিজ্ঞাসা করলাম- কেন? রইস ভাই হি হি হি করে হাসতে হাসতে বললেন- ও দেখতেই এমন ছিল যে দেখা হলেই হাসি ঠাট্টা করতে মন চাইতো... বললাম- আপনি করেছেন? রইস ভাই এবার বুঝে গেল আমার প্রশ্নের কারণ। মাথা নিচু করে থাকলো। আমি বললাম যাক, তারপর বলেন। খুব ছোট বেলায় তার মা মারা যায়, বাবা হঠাত নতুন বিয়ে করে বাড়ি ফেলে নিরুদ্দেশ। চাচা চাচি অবহেলা করত বিধায় বাড়ী যেত না সে। থাকত রাস্তায় রাস্তায় এবং কখনো কখনো মসজিদের সিড়িতে... কেও কিছু দিল খেত নইলে নাখেয়েই থাকত... আমি উনাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম- এবার তার মৃত্যুর ঘটনা বলেন, আমাদের কাছে সময় একেবারেই কম। কারণ, আজকে রাতেই সে বড় কিছু করতে পারে... রইস ভাই একটু নড়েচড়ে বসলো। মনে হলো যেন ভয় পেল। রইস ভাই তার মৃত্যুর কাহিনী শুরু করলেন। বেশ কিছুদিন ধরে কুতুবুদ্দিন ভীষণ অসুস্থ ছিল! জল বসন্ত উঠে পুরু শরীর ঢেকে গিয়েছিল... আমাদের এক গ্রাম্য চিকিত্সক শরীরে মাখার জন্য তাকে একটি ঔষুধ দিয়েছিলেন। পাগল হলেও সে ওষুধটা ঠিকই ব্যবহার করত। একদিন সকালে হঠাত গ্রামবাসী দেখতে পায় অত্যাধিক শরীর ফুলে কুতুবুদ্দিন মরে আছে মসজিদের বারান্দায়... পরে জানতে পারি কেও দুষ্টামী করে তার মলমের ভিতরে চুলকানোর কোনো জিনিস মিশিয়ে দিয়েছিল!

সব শুনে আমি অবাক হয়ে যাই! একটা দশ বছরের বাচ্চার সাথে এত বড় মশকরা করলো জীবন এবং সমাজ! একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো গভীর থেকে। আমি বললাম, ঠাট্টা কারো কারো জন্য আনন্দদায়ক আবার কারো জন্য বড়ই পীড়াদায়ক! একটি মানুষের সাথে সবাই মিলে ঠাট্টা করতে নেই... তার জন্মটা আপনার বা আমার কপালেও থাকতে পারত। আমি বললাম, সেদিনের কুতুবুদ্দিনই আজকের ভুতুবুদ্দিন... কার্যকলাপ এখন তাই বলে... সে খোলা ছাদের নিচে থাকত বলেই মানুষের বাড়ির চালের উপর তার এত ক্ষোভ, নিজের চেহারার জন্য সারা জীবন উপহাস শুনেছে বলেই দেখতে সুন্দর মানুষের প্রতি তার এত ঘৃনা, সে কারো শরীরে আঘাত করে না কারণ সে মানুষিক আঘাত করে করে তার প্রতিশোধ নিতে চায়... তার জীবনটা উপহাস আর তিরস্কারে ভরা! তাকে ডেকে আনার একটাই উপায়- তাকে উপহাস করা... তাকে গালি দেয়া... সব কিছু ভেবে চিন্তে আমি এখুনি তাকে ডেকে আনার প্ল্যান করলাম... রইস ভাই ও হাওলাদার সাহেব কে বললাম- কয়েকটি কাগজে ভুত নিয়ে তিরস্কার মূলক কিছু লিখতে যা মনে আসে... কাগজগুলো নিয়ে আশে পাশের কয়েকটি বাড়িতে গেলাম... অনুরোধ করে সবাইকে বললাম ঠিক ত্রিশ মিনিট পর একই সময়ে ভুত নিয়ে এই তিরস্কার মূলক কথা গুলো শব্দ করে পড়তে। এবং যতক্ষণ কোনো ঘটনা না ঘটে ততক্ষণ ধরে পড়তে। সবার মাথায় একটা করে ফু দিয়ে আমি বললাম- ভুত আসবেই, তবে ভয় পাবেন না। ফু পেয়ে যেন সবার চেহারায় সাহসের সঞ্চার হলো। অথচ সেই 'ফু' তে কিছু বাতাস ছাড়া আর কিছুই ছিল না। বিষয়গুলো টনিকের মত কাজ করে। রুমে এসে আমরাও একটি কগজ নিয়ে বসে পরলাম। হাওলাদার সাহেব বলতে শুরু করলেন- কোনো মন্ত্র তন্ত্র ছাড়া কি সে আসবে? আমি বললাম যদি সে কুতুবুদ্দিন হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আসবে। ভুত শুধু মন্ত্র বুঝে না সে সব ভাষাই বুঝে। আসল বিষয় হচ্ছে যে আপনি তার সঠিক জায়গায় আঘাত করতে পারছেন কিনা? আপনাদের গ্রামের ভুত অবহেলা থেকে জন্ম নেয়া। এখন সে তার গুরুত্ব তৈরী করে চলছে ... এক্ষেত্রে তাকে গুরুত্ব না দেয়া মানেই হচ্ছে তাকে খ্যাপিয়ে তুলা, তাকে আসতে বাধ্য করা। মন্ত্র তন্ত্র পরেও ঠিক একই কাজটাই করা হয়... মনের অজান্তে কোনো মানুষ যখন ভুতকে খ্যাপিয়ে তুলে তখনই সেই বাড়িতে ভুত এসে আক্রমন করে, তখন সেটাকে আমরা এক্সিডেন্ট বলি। আমরা জেনে শুনে তাকে খ্যাপিয়ে তুলছি অর্থাত তাকে আমন্ত্রণ করছি, পার্থক্য এতটুকুই। সময় চলে এসেছে। ঘড়ির কাটা দেখে রইস ভাই ও হাওলাদার সাহেব চোখ বন্ধ করে ভুত নিয়ে মুখস্ত কিছু আবোল তাবোল বলতে শুরু করলেন। আমি একগাল হেসে রুম থেকে বেরিয়ে পরি... রইস ভাই এক চোখ খুলে বলল- ভাই কই যান? আমি হেসে বললাম- আমি থাকলে সে এখানে আসবে না, আমার সথে রক্ষা কবজ আছে। রইস ভাইয়ের ভয় দূর করতে একটা টনিক 'ফু' মেরে গেলাম। আমি জানতাম সে কখনই শরীরে আঘাত করবে না। ওর ধরন ভিন্ন!

বেশ কিছুক্ষণ পর ফিরে এলাম। দুজনই বেশ অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি দ্রুত আলামতগুলো সংগ্রহ করলাম... বিছানার চাদর উল্টে দিয়া সহ পর্দা ছিড়ে ফেলা ও কিছু কাচের জিনিস উপুর করে ফেলে দেয়ার আলামত পেলাম। আশপাশের বাড়ি গুলোতেও অনেকটা একই আলামত! হাওলাদার সাহেব জিজ্ঞেস করলেন- কিছু পেলাম কিনা? আমি বললাম অনেক বড় তথ্য পাওয়া গেছে... সে তাত্ক্ষনিক আক্রমনে বিশ্বাসী! সাধারণত ক্ষোভের মাত্রা বেশি থাকলে এমনটা ঘটে। বিষয়টা আমার আগেই সন্দেহে ছিল তাই একই সময়ে তাকে বিভিন্ন জায়গায় ডেকেছি... এখন আমাদের হাতে দুটি অপশন আছে। "dirty soul decentralizing" অথবা "dirty soul diminishing"... রইস ভাই ও হাওলাদার সাহেব বললেন- কিছুই বুঝতে পারলাম না! আমি বললাম- লক্ষ্য করুন তার আক্রমন আজ বেশ দুর্বল ছিল! বড় ধরনের কোনো ঘটনা সে ঘটাতে পারেনি আজ! বিষয়টা সংগত কারণেই হয়েছে... অনেক গুলো বাড়িতে একত্রে আক্রমন করতে গিয়ে তার সামর্থ কমে এসেছে! যে পথে কাওকে দুর্বল করা যায় সে পথে তাকে শেষ করে দেয়াও সম্ভব! তার আলামত গুলো দেখে অনুমান করা যায় যে তাকে যদি একত্রে ১০ টি বাড়িতে ডেকে আনা হয় তাহলে সে আর কখনই পুন: সংঘঠিত হওয়ার শক্তি একত্র করতে পারবে না! সেই বাড়ি গুলোতেই চিরতরে সমাহিত হয়ে যাবে সে... এটা হচ্ছে "dirty soul decentralizing" এবং তার জন্য হবে যন্ত্রনাহীন মৃত্যু বা Euthanasia... অন্য পদ্ধতিটি হচ্ছে "dirty soul diminishing"- এক্ষেত্রে গ্রামবাসীর সামনে তাকে ডেকে এনে তার জীবদ্দশায় ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো বারবার তুলে ধরতে হবে। তাকে আরো ধিক্কার দিয়ে দিয়ে যন্ত্রনায় কাতর করে দিতে হবে, ধীরে ধীরে সে নি:শেষ হয়ে যাবে এবং সমাপ্ত হয়ে যাবে তার কাহিনী। গ্রামবাসীও দেখতে পাবে একটি ভুত হত্যার ঘটনা... হাওলাদার সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে বললেন- ছেলেটা তার জীবদ্দশায় অনেক কষ্ট পেয়ে গেছে... তাকে যেন আর নতুন করে কোনো কষ্ট না দেই! কথাটা আমার মনে গাথলো। আমি হাওলাদার কে কথা দিলাম- তাকে কষ্ট না দিয়েই মারা হবে। শুরু হলো দশটি বাড়ি খুঁজে বের করার কাজ... রাত বাড়ছে। রাত প্রায় এগারটার মধ্যে সকল বাড়ি গিয়ে সব বুঝিয়ে শুনিয়ে দিয়ে আসা হলো। সবার হাতে একটি করে চিরকুট এবং সাথে একটি করে টনিক 'ফু' দিয়ে এলাম। নিজেদের হাতেও একটি চিরকুট নিয়ে বসে অপেক্ষা করছি রাত বারোটা বাজার জন্য। হাওলাদার এবং রইস ভাইয়ের মাঝে চরম উত্তেজনা কাজ করছে... সময় পেয়ে আমি বললাম- তিরস্কার কারো কারো জন্য আনন্দকর হলেও কারো জন্য তা অনেক ভয়ঙ্কর হতে পারে। পৃথিবীর বুকে কুতুবুদ্দিনের বেচে থাকার অধিকার ছিল। তার জীবন নিয়ে ঠাট্টা করার অধিকার কারো ছিল না। এমনটা যেন আর কারো সাথে না হয়। আর কোনো কুতুবুদ্দিন যেন ভুতুবুদ্দিন না হয় গ্রামবাসীর প্রতি আমার অনুরোধ থাকলো... হাওলাদার বেশ কঠিন পেশায় নিয়োজিত থাকলেও তার মনটা বেশ সাধারণ! আমার কথা গুলো শুনতে শুনতে তার চোখের এক কোণে পানি চলে এসেছে... বিষয়টা আমাকে আড়াল করার চেষ্টা কলেও সে পারেনি... রাত বারোটা বাজতেই দুইজনকে দুইটা টনিক ফু দিয়ে আমি বেরিয়ে পরলাম... ঘর থেকে বেড়িয়েই ছোট্ট মাঠের উপর দাড়িয়ে দেখলাম গ্রাম বাংলার জোছনা রাত কতটা যে উপভোগ্য... সব কিছু ফেলে দিয়ে এসে যেন এখানেই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছিল! ইচ্ছে হচ্ছিল এই মানুষগুলোর জন্য বাকি জীবনটা জুড়ে কিছু করতে। তাদের জন্য আমাদের অনেক কিছু করণীয় আছে। দুইদিন পর বাকি সবার মত আমিও পাশ কেটে চলে যাব জানি! ওদের জন্য সমাধানের হাত বাড়িয়ে কেও আসবেনা। এভাবেই আরো কুতুবুদ্দিনরা আসবে একে একে ভুতুবুদ্দিন হয়ে চলে যাবে centralized বা decentralized হয়ে... অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে রইস ভাই এবং হাওলাদার সাহেব ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। তিনজন মিলে মাঠে বসলাম, সারাটা রাত এভাবেই কেটে গেল গল্পে আর গল্পে... মনের এক কোণে জমে থাকলো ভুতুবুদ্দিনের জন্য কিছু মায়া আর কিছু অনুভুতি...

সকালে ঘুম থেকে উঠতে বেশ দেরী হলো। হাওলাদার সাহেব এখনো এক ফোটা ঘুমায়নি... বিছানায় বসেই দেখছিলাম হাতে পায়ে কাদা মাটি লেগে রয়েছে তার! আমি জিজ্ঞেস করলাম- কি করছেন হাওলাদার সাহেব? তিনি বললেন- কিছু ফুলের চাড়া লাগিয়ে আসলাম ভাইজান! আমি হাসিতে ফেটে পরলাম। জিজ্ঞেস করলাম হঠাত বুড়ো বয়সে এই ভীমরতির কারণ কি? রইস ভাই উত্তর দিলেন- যেই বাড়ীগুলোতে ভুতুবুদ্দিনকে কাল রাতে সমাহিত করা হয়েছে, প্রত্যেক বাড়িতে সকাল থেকে ফুলের চাড়া লাগিয়ে এসেছেন হাওলাদার সাহেব। শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই! জীবনে একবারের জন্য হলেও কুতুবুদ্দিনকে সন্মান দেখালো কেও! লোকটার প্রতি প্রথমবারের মত আমার মনে কিছু ভালবাসা জন্মালো, আমি জিজ্ঞাসা করলাম- এই গ্রামের মানুষগুলো কি সব আপনার মতই? হাওলাদার সাহেব নিচু কন্ঠে উত্তর দিলেন- 'না'। বললেন- আমি তাদের মাঝের নিকৃষ্ট একজন, চেয়ারম্যান সাহেবের জন্য মারামারি আর কাটাকাটি করি… আমি সাথে সাথে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। ভীষণ একটা উত্তাপ অনুভব করলাম যেন তার বুকের ভিটায়!!
দুই দিন ধরে গ্রাম জুড়ে আর ভুতের কোনো চিহ্ন মিলল না। সবাই ভীষণ খুশি। খুশিতে চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে দাওয়াত করলেন। তারপরদিনই আমি চলে যাব সিদ্ধান্ত নিলাম। খেতে বসে চেয়ারম্যান সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন- আপনি কি কাজে এসেছিলেন আমাদের গ্রামে সে বিষয় তো জানলাম না কখনো? আমাদের পাল্লায় পরে তো মনে হয় আপনার কাজ শেষ করতে পারেন নাই… আমি বললাম, না না চেয়ারম্যান সাহেব, কাজ খুব ভালো ভাবেই হয়েছে। বরং এই কয়দিন যা করছিলাম তা স্বার্থপরের মত নিজের জন্যই করেছিলাম। কথা শুনে চেয়ারম্যান সাহেব না না বলে ডানে বামে মাথা নাড়াতে থাকলেন! আমি তার দিকে তাকিয়ে বলি- আমার কাজ ছিল গ্রাম বাংলার মানুষদের আচার আচরণ ও কার্য্যকলাপ নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরী করা। আমার কাজ শেষ। চেয়ারম্যান সাহেব বেশ সুন্দর মানুষ। ওনার চেহারাটা হঠাত লাল হয়ে গেল! তিনি অবাক হয়ে আমাকে বলতে থাকলেন- কি বলেন ভাই? আমাকে তো আপনি ভীষণ লজ্জায় ফেলে দিলেন! আপনার প্রতিবেদনে আমাদের নিয়া ভালো দুই কলম লেখার কোনো শুযুগই তো আমরা রাখি নাই! আমরা গ্রামবাসীরা মিলে যা দেখিয়েছি, ছি ছি ছি! আমি বললাম, আপনার নিরব সমর্থন না পেলে আমি কিছুই করতে পারতাম না! তাছাড়া গ্রামবাসীর লজ্জার কিছু নেই চেয়ারম্যান সাহেব… লজ্জাটা বরং আমাদের। এখানের মানুষগুলোর গায়ে ও মনে এখনো কাচা মাটি! চাইলেই তাদেরকে যে কোনো সেইপ দেয়া যায়… আসলে গ্রামের মানুষদেরকে সঠিক পথ দেখাতে হবে। এবং এই দায়িত্বটার একটা বড় অংশ আমদের সরের মানুষদের উপরে বর্তায়… এখানের মানুষগুলো হাসতে হাসতে মানুষ বিসর্জন দিতে নেমে পরে আবার ভুতের সমাধিতেও কাদতে কাদতে ফুলের চাড়া লাগিয়ে আসে… আসলে ওরা ঘুমিয়ে আছে বা ঘুমিয়ে পরেছে… একটুখানি ডাকলেই ওরা হাত বাড়িয়ে জেগে উঠে। আমাদের মানুষগুলোর মত ঘুমিয়ে থাকার ভান ধরে না ওরা!!

পরদিন আমার চলে যাওয়ার প্রস্তুতি প্রায় শেষ। কিছুক্ষণের মধ্যেই বের হয়ে যাব। আর হয়ত কখনো আসা হবে না এই গ্রামে। হঠাত দরজায় শব্দ শুনলাম, দরজা খুলে দেখি রোখসানা তার দুই বাচ্চা নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমার পায়ে জড়িয়ে ধরে সে কাদতে শুরু করলো! আমি কি করব ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। রোখসানা কে দরজায় দাড় করিয়ে রেখেই ভিতর থেকে ব্যাগ নিয়ে বের হলাম। রোখসানার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম- বাচতে হলে প্রতিবাদ করতে শিখো, নয়তো দুই চোখে বেচে থাকার স্বপ্ন মেখে রেখো না... দূর থেকে সেই চোখ দেখতে ভীষণ কষ্ট হয়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ইসমাইল বিন আবেদীন এত বড় ???? কাল পড়ব ইনশাল্লাহ ..................
মেহদী ভাইয়া, অনেক অদ্ভুত একটা গল্প লিখেছ . চমত্কার !
মাহবুব খান অসাধারণ দিলাম .খুব ভালো
মগজ ধোলাই.কম যেকানে বুতের উপধ্রব সেকানে আমি আচি। বেবাক ভুতেরে মগজধোলাই কইরা এক্কেবারে চান্দের লাহান ফকফকা বানাইয়া দিমু না। তয় সামােনর গল্পডায় আমারে রাইকেন। মগজধোলাই তাকতে কুনু ভয়পাওনের কামনাইক্কা।
তানি হক নিরব ভাইয়া ...প্রথমেই গল্পকবিতায় এটি আপনার প্রথম গল্প সেইজন্য অভিনন্দন জানাই..সেই সাথে আগামীর গল্প গুলোর অপেক্ষা ..কারণ প্রথম গল্প পরেই আপনার ভীষণ ভক্ত হয়ে গেলাম.. গল্পটি কেমন লাগলো সেটি বলার উপযুক্ত ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা ..তবে নামটি ..আমার সারাজীবন মনে থাকবে ...লাল গোলাপের সুভেচ্ছা রেখে যাচ্ছি ...ধন্যবাদ
নিরব নিশাচর আমি সত্যিই সকলের কাছে কৃতজ্ঞ ! কিছু লেখকদের মন্তব্যে আমার যোগ্যতার তুলনায় বেশি আবেগ দেখতে পেলাম, হয়তো ভালবাসার ফসল !!
নাজমুল হাসান নিরো ইসস, মানবিক আবেদনের ব্যাপারে তো কোন কথাই বললাম না। গল্পের মাধ্যমে মানুষের কাছে যে মেসেজটি পৌঁছে দেবার চেষ্টা চলেছে তা নিশ্চিতভাবেই introduces us with a hearted person.
নাজমুল হাসান নিরো হাইস্কুলে থাকতে বেশ কিছুদিন জড়িয়ে ছিলাম আন্ডারগ্রাউন্ড কাল্টের সাথে। সেটা থেকে অভিজ্ঞতা বলে এই সব ক্ষেত্রে সবাই গৎবাধা নিয়মেই কাজ করতে অভ্যস্ত। তুমি সেখানে অবতীর্ণ হয়েছ বিশ্লেষকের ভূমিকায়, কাজ করেছ Nature of Entity নিয়ে, পুরোটাই সায়েন্স অব অকাল্ট এটা অবশ্যই নতুন এবং প্রশংসার দাবী রাখে। গল্পের আদলটা Supernatural গল্পের মত পারফেক্টলি হলেও প্রথম দিকে অর্থাৎ ভূত সাধক হিসেবে অবতীর্ণ হওয়অর পূর্বের কাহিনীর বিস্তারটা আরো বেশ কম হবার দরকার ছিল। এটা মূল ব্যাপারে ফোকাসটা একটু কমিয়েছে। আর বানানগুলোর ব্যাপারে আরেকটু সচেতন হওয়ার প্রত্যাশা করি।
মনির মুকুল শুরু থেকেই শেষ পর্যন্ত টান টান উত্তেজনা ছিল লেখাটিতে। সত্যি বলতে- ভূত-প্রেতের গল্প আগে মোটামুটি পড়লেও এমন যুক্তিসঙ্গত সমাধান সম্বলিত কোনো লেখটা এর আগে পড়া হয়নি। এমনিতেই আমার কাছে আপনার আসন বেশ উচুতে ছিল, এবার সেটা বেড়ে গেল আরো কয়েকগুণ। গল্পের নায়ক তান্ত্রিকের কানে কানে কি বলেছিল সেটা জানার বেশ কৌতুহল জেগেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর পুরোপুরি নিবৃত্ত হয়নি। সব মিলিয়ে আকর্ষণটা খুব ভালো করেই জমিয়েছেন। সরাসরি প্রিয়তে।
জাকিয়া জেসমিন যূথী প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে আসতে আসতে ভালই লাগছিলো। শেষ দুই প্যারায় এসে চোখ ভিজে গেলো। এতটাই হৃদয় ছুঁয়ে দিয়েছে লেখাটি। অসাধারণ। অসাম!

২১ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "আতঙ্ক”
কবিতার বিষয় "আতঙ্ক”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ অক্টোবর,২০২৫