বিশ্ববিদ্যালয় হতে ফিরেই ফ্রেশ হয়ে, কখনো বা একটু বিছানায় কাত হয়ে তারপর রোজকার রুটিন অনুযায়ী সন্ধ্যার আভাটুকু ফুরিয়ে যেতে না যেতেই তুহিন তার নতুন রুটিন ঠিক ঠিক যেন পালন করে। যদি বিশ্ববিদ্যালয় হতে ফিরতে দেরিও হয় কিংবা বিশ্রামটুকু মাটি হয় তবুও নতুন রুটিনটির একচুঁলও হেরফের ঘটেনা। তুহিন এর নতুন কিছু ভিমরতি ধরেনি তবে নতুন একটি বিড়াল জুটেছে, সে প্রতিদিনই ঐ সময়টিতে ফেসবুকে অনলাইনে ঘোরাঘুরি করে। বিড়ালটি তার প্রোফাইল পিকচারেএকটি কুটুকুটু বিলি্ল'র ছবি সেঁটে দিয়েছে, তুহিন এর সাথে বিড়ালটির পরিচয় ইউনিভার্সিটি-তে এ্যাসাইনমেন্টের চক্করে পরে, তবে এ্যাসাইনমেন্ট শেষ হলেও বিড়ালটি তার পিছু ছাড়তে চাইলেও সে ছাড়তে দেয় নি।
হঠাৎ ইনবঙ্ সচল হয়ে উঠল-
Meaooooooo…..
Kire, edur-tidur kichu peli?
Neaoo……Manusher gondho paoo…..
Tahole to vagte hobe, vagbo?
Ai, tui ekhon nete ki koris, pora-lekha nei? Ja vag..
Tui vag….!
এভাবে দু-জনের পুটুর-পুটুর ঘন্টাখানেক চল্ল, কত্তোসব কথা হলো তার হিসেব নেই। অথচ এই দুটি প্রাণীই যখন ক্যাম্পাসে যায় তখন এমন অবস্থা যে, কেউই কউকে চেনে না, এমনকি কথা পর্যন্ত বলে না। এভাবে কিছুক্ষণ চলতে থাকলে পাঠিকাগণ বিড়ালটির পরিচয় গোপনের দন্ডে দন্ডিত আমার গাল ছিঁড়িতে উদ্যত হইবেন এইভয়ে বিড়ালটির পরিচয় দিতেছি, সে আর কেউ নয় তুহিনের ক্লাসেরই ছিঁচকাদুনে মেয়ে 'সাবা'। ছিঁচকাদুনে বলার পেছনেও একটা ইতিহাস আছে, এইতো সেদিন একটা সাবজেক্টে দু-এক নম্বর কম পেয়ে কোর্স টিচারের কাছে গিয়ে সে কি কান্না! (যেন চালের বস্তা দিয়ে চোখ মুঁছলেও তা ভিঁজে চুপ চুপ করবে, হা-হা-হা!) অথচ তখনও সে প্রথমদিকেই ছিল।
এই ধারবাহিকতা কয়েক পক্ষ ধরে অতিবহিত হল, তবে তাদের সম্পর্কের সিঁড়ি সভাবতই এক ধাপ উপরে উঠেছিল তা কথাবাতর্ার ধরণ শুনে কিছুটা আন্দাজ করা যেত। একদিন তো তুহিন বলেছিল-
শোন্ আমার এখানে ইঁদুরের উৎপাত বড্ড বেড়েছে, আসবি নাকি?
উত্তরে সে গম্ভীরভাবেই বলেছিল, ভাবছি..!
এতটুকু কথাতেই সিঁড়ি একধাপ এগিয়েছে, তা কিন্তু বিশ্বাস করতে রাজি নই, তবে ঘটনা হলো কি, ইদানিং তুহিন এর উপর তার ঠাকুমাগিরি বেড়েই চলেছে, এছাড়া যখন যেখানে যা শীট পায় তুহিনকে সাপ্লাই করে। আর কাউকে দিতেও বারণ করে দেয়। তবে শত নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তুহিন আর একজনকে দেয়, সে হল তার এক পাগলাটে বন্ধু, যার সঙ্গে তুহিন সারক্ষণ ফুঁসুর-ফাঁসুর করে, তবে বন্ধুটির যথেষ্ট বিশেষত্ব আছে, তা হল, সে মূলত বিভিন্ন গল্পের বই পড়ে পড়েই ক্লাসের পড়ার সময় পায় না তাই 'বাবা মুশকিল আছান' (তুহিন) আছে বলে এই যা রক্ষে! একটি ব্যাপার তুহিন কিন্তু তার বন্ধুটির কাছ থেকে লুঁকিয়ে গেছে তা হল সাদা বিড়ালটির বিষয়, সাদা বলার কারণ আছে, মেয়েটি আসলেই সাদা। তুহিন তার বন্ধুটির সাথে দেশ, আনর্্তজাতিক, রাষ্ট্র, সমাজ হাজারো বিষয় নিয়ে কথা বললেও ঘরোয়া বিড়ালটির বিষয় কখনো তুলে নি, কারণ বলা তো যায় না, পাগল মানুষ, হয়তো তাকে নিয়েও লেখা শুরু করে দিতে, এমনিতেও তুহিনকে এই বিষয়টি নিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকতে হয় কারণ ওর বন্ধুটি যে হারে ফেলুদা, তিন গোয়েন্দা, শার্লক হোমস্ গিলেছে সে প্রেক্ষিতে এ কেসটিতো তার কাছে নস্যি, তবে রক্ষা এই যে ওর বাসায় এখন নেট কানেকশান নেই।
যাহোক পাগল-ছাগল নিয়ে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই, বরং তুহিন এর প্রসঙ্গে আসা যাক, বিড়ালটি ক্রমশই পোষ মানতে শুরু করেছে তবে এরই মাঝে একজন প্রতিযোগী উপস্থিত হয়েছে। নাম-শোভা, পড়ে ইংলিশ মিডিয়াম একটি স্কুলে, তা অবশ্য তুহিন প্রোফাইল দেখে শিউর হয়েছে। মেয়েটির মধ্যে যে বিশেষ কিছু আছে তা তুহিন বুঝতে পারে, যেমন শোভা যখন চ্যাট করে শুদ্ধ ইংরেজীতে চ্যাট করে আর এই ইংরেজীতে চ্যাট করে ইংরেজী ডেভেলপ করার জন্য তুহিন যে কত্তো চেষ্টা আর বিদেশিনীদের এ্যাড দিয়েছিল তা আর কেউ না জানলেও তার সেই পাগলাটে বন্ধুটি জানে, আর এই চ্যাট বিশেষত্বের ব্যাপারটি সাবার পক্ষে আশাও করা যায় না। অন্যদিকে শোভা মেয়েটির জ্ঞানের পরিধিও ব্যাপক, মনে হয় কয়েকদিনের কথাবার্তায় তুহিন অনেক কিছু শিখে ফেলেছে, তাই তুহিন দুজনের তুলনা শুরু করলে শোভার পাল্লা ঝুঁেক পরছে ফলে ক্রমেই তুহিনের জীবন শোভাময় হয়ে উঠল, এমনকি রোজ যে সময়টি সাবার জন্য বরাদ্দ ছিল সেই সময়টি এখন শোভার হয়ে গেল। তাহলে 'সাবা'? হ্যা, প্রথম প্রথম শোভার কথাবলার সময় সাবাকে ওয়েটিং-এ রাখত বা কিছু একটা বলে পাশ কাটিয়ে যেত তবে এখন সাবাও যেন অনেকটাই সরে গেছে যাতে তুহিনের অবশ্য কিছুটা সমস্যা হয়েছে তা হল সাবা এখন ওকে এড়িয়ে যাওয়াতে বিভিন্ন সীট কালেকশানে একটু অসুবিধায় পড়তে হয়, এই যা সমস্যা!
এরপর শোভার সাথে যোগাযোগ এর মাপকাঠি যেন গভীরতম হতে চলেছে। এক কথায়-দু কথায় অনেক কথা হয়ে যায়, কে সিঙ্গেল-কে ডবল বা কার কি রেজাল্ট ইত্যাদিও একটিও বাদ যায়নি, এমনকি প্রোফাইল পিকচার এর গুডুগুডু বিলি্লটাও বাদ যায় নি,সেটা অবশ্য শোভাই তুলেছিল যদিও তুহিন প্রসঙ্গটি ঘুরিয়ে ফেলেছে কিন্তু একদিন বেশি পীঁড়াপীঁড়ি করাতে একপর্যায়ে বিলি্লটাকে ফ্রেন্ড লিস্ট থেকে বাদ দিয়ে দেয়। ব্যাপারটি কেন করেছে তা নিয়েও সাবা কোনদিন প্রশ্ন পর্যন্ত করেনি হয়তো পরিবর্তনটা তার চোখেও ধরা পড়েছে, সাবার পরিবর্তনটি কিন্তু তুহিন এর চোখে পড়েনি কেবল ভালো ছাত্রী বলে বা বেশি মুড দেখায় এই যুক্তি দিয়ে তার প্রসঙ্গটি পাশ কাটিয়ে দিয়েছে।
একদিন শোভার সাথে কথা বলতে বলতে তুহিন তার লুকিয়ে রাখা অভিব্যক্তিগুলো তুলে ধরল, হয়তো বা তুহিন এর ইচ্ছে ছিল না তবু তুহিন এর ভিতরকার মানুষটির প্রলোভনে অবচেতন মনের কথাগুলো প্রকাশ পায়-Hey………what’s up?
Nothing.
I m missing u every time, everywhere, don’t believe? I swear.
Really? Then write a novel titled, Ô History of a liar’
I m serious,
Oh! How many pupil u have said such a word?
(মাঝে একটু বলে রাখি, তুহিন সেই সাদা বিড়ালটিকেও শেষদিকে কথোপকথনে এ জাতীয় কথা বলেছিল, তারপর..........................
You know the definition of liar, cheat, selfish?
What do mean?
Oh, mean? First I will tell u a story, then u will decide, Either our relation will break up or carry on? Do u wana listen?
Yep!
I know a girl who make friendship with a (clever) boy (looked like foolish) by assignment & gradually the pupil become facebook friend. The girl was very fool and so he loved him from of her heart! But the boy used her for making his benefit such collecting sheets, notes & so on……
Wait! Wait!! Wait!!! Who are u?
(তারপর অনেকক্ষণ দু-জনেই স্থির, অথচ তুহিন ঠিকই দ্বিধাদ্বন্দ্বে পরে গিয়েছিলো, কে হতে পারে মেয়েটি? চিন্তা করতে করতে বেশিদূর অগ্রসর না হতে পারলেও হাতের নোখগুলোর অনেকাংশই দাঁতের সংযোগে পেটে প্রবেশ করেছিল)
এভাবে অনেকক্ষণ,
তারপর...........................
যে মেসেজটি ইনবঙ্ েদেখলো তাতে সে হঠাৎ ভূঁত দেখার মতো আঁৎকে উঠেছিল-
I m saba!
(এরপর,Offline হয়ে গেল............)