বসন্তের হাওয়া সারাবছর থাকে না

কষ্ট (জুন ২০১১)

পার্থ
  • ২০
  • 0
  • ২০
“দেশ বিভাজনের পর থেকেই পশ্চিমা পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানিদের মাতৃভাষা উপর থাবা দেয়” – এই সহজ লাইনটি মুখস্ত করতে যার এক ঘন্টা লাগে, সে কেমন ছাত্র তা আর বলার বাকি থাকে না। নিশ্চয়ই খুবই বাজে এবং অমনোযোগী ছাত্র! হ্যা, অমনোযোগী বটে, তবে বাজে ছাত্র নয়। সারাদিন না পড়ালেখা করে, টিভি দেখে, ফেসবুকে চ্যাটিং করে, লাফালাফি করে, শুধু পরীক্ষার আগের দিন পড়ালেখা করে পরীক্ষার পর রেজাল্ট- দ্বিতীয় স্থান!! আজব ছাত্র!!!
এই আজব ছাত্রটির নাম প্রত্যয়, পড়তো মাইলস্টোন কলেজে,ঢাকায়। সব শিক্ষক-শিক্ষিকার অন্যতম প্রিয় ছাত্র ছিল সে, একজন ছাড়া; সেই একজন হলেন প্রধান শিক্ষক আব্দুল মবিন। এই স্যারের অপ্রিয় ছাত্র হওয়ার কারণটা অবশ্য যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত। বিদ্যালয়ের বার্ষিক পুরষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে প্রতিবারের মত সেবারও বক্তৃতার মঞ্চে মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে গেল প্রত্যয়। তার বক্তৃতার অংশবিশেষ- “...... আমাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মবিন স্যার অত্যন্ত ভালো মানুষ। আর তিনি কতটা ভালো মানুষ তার আদর্শ পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর নামে। তাঁর নাম ‘মবিন’ যার সাথে মিল আছে খনিজ তেল মবিলের। মবিল যেমন অনেক পুরানো গাড়ির জন্য অত্যন্ত জরুরী এবং উপকারী, তেমনি ‘মবিল’ স্যার, স্যরি! স্যরি!! ‘মবিন’ স্যারও আমাদের বিদ্যালয়ের জন্য অত্যন্ত দরকারী.........”- এ কথা শুনে মবিন স্যারের টাক মাথা উনুনে তপ্ত তাওয়ার মত গরম হয়ে গেল, তবে তিনি গলায় দড়ি বাঁধা অসহায় কুকুরের মত বসে রইলেন। কী আর করার!! টাইম মেশিন থাকলে হয়তো তিনি মিনিট পাঁচেক অতীতে গিয়ে প্রত্যয়কে মঞ্চ হতে নামিয়ে দিতেন। তবে এর পরের কথাটি শুনে তার মাথা তাওয়া নয়, সূর্যের মত ৫০০০০ᴼ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উন্নীত হল। কথাগুলো এরকম- “......আমাদের বিদ্যালয় বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়। তবে এর নামে কেন শুধু ‘কলেজ’ শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়, বরং এর নাম মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজ হলে ভালো হত। ......” এ ব্যপারেও কিছু করার নাই মাননীয় প্রধান শিক্ষকের !! উপরন্তু ঐ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কথাগুলো খুব উপভোগ করছিলেন এবং হাত তালিও দিচ্ছিলেন!!
এ ধরণের মজা করা ছিল তার নেশা, মাঝে মাঝে পেশা। পেশা এজন্য যে, সে তার পাড়ার নানা তথাকথিত আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করতো আর মাঝে মাঝে কিছু কামিয়েও নিত। তবে এ নেশা তার ছিল, এখন একরূপ নাই বললেও চলে, আবার বলা যায়, সাপের মত সে চামড়া বদলেছে। তার বর্তমান নেশা অন্য কোথাও, অন্য কোন জগতে, হয়তো কিউপিডের জগতে!!
তবে এ জগতে সে থ্রিজির গতিতে যায় নি,গিয়েছে ওয়ান জির গতিতে! (থ্রিজি হচ্ছে দ্রুতগতির আর ওয়ান জি হচ্ছে অতি মন্থর গতির ইন্টারনেট) এ কাহিনীটা একটু ই-ন-টা-রে-স্টিং!!
সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত প্রত্যয় কোনো কম্বাইন্ড কোচিং (যে কোচিং এ ছেলে মেয়ে একসাথে পড়ে) এ পড়ে নি। অষ্টম শ্রেণীতে উঠেই ভর্তি হলো খুব ভাল কোচিং(তথাকথিত) ‘সৃজন’ এ। ভালো কোচিং এজন্য যে এখানে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হতে হয়। সেবার আবারো পড়ালেখা না করে যথারীতি প্রথম স্থান নিয়ে ভর্তি হলো কোচিং এ। ‘সৃজন’ নামটিতে একটু সৃজনশীল সৃজনশীল ভাব আছে, তবে তার কিছুই প্রত্যয় পেল না কোচিং এর শ্রেণীকক্ষে। রুমটা ছোট, বেঞ্চ ছোট; যে রুমে সর্বোচ্চ ২০ জন বসতে পারে, সেখানে বসানো হয়েছে ৫৩ জন ; যেন পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি বস্তি। তার উপর গরম যেন সবাইকে সিদ্ধ করছিল। আর রুমটায় এতটাই গরম ছিল যে হাড়কাপানো শীতের সময় প্রত্যয় ও তার বন্ধুরা সময়ের আগেই রুমে এসে বসে থাকত; শীত হতে বাঁচার জন্য!! শ্রেণীকক্ষে দু’টি সারি ছিল; একটি মেয়েদের, অপরটি ছেলেদের। তাতে ছিল একটি সাদা বোর্ড ও একটি ফ্যান(যা মাঝে মাঝে ঘুরত!)।
বিভিন্ন হিন্দি ছবিতে সুন্দর ও আকর্ষনীয় মেয়েদের “HOT” বলে আখ্যায়িত করা হয়। প্রত্যয়দের ক্লাসেও তেমনি দু’তিনজন “HOT” ছিল, যাদের উত্তাপে রুম আরো গরম হয়ে যেত যেন! আর হয়তো তাই প্রত্যয় মেয়েদের পছন্দই করতো না, বিশেষ করে “HOT” –দের, যারা অতি গরমের বাহানা দিয়ে ডিজিটাল জামাকাপড় (মানে সংক্ষিপ্ত ড্রেস) পড়ে আসত!!! প্রথম দিন তো প্রত্যয়ের মাথা পূর্বোল্লিখিত মবিন স্যারের মত গরম হয়ে গিয়েছিল। কাহিনীটা ছিল এ রকম- ইংরেজির স্যার, গোপাল স্যার (উনাকে সবাই পালস্যার (Pulsar) বলে ডাকত) এক মেয়ে কে একটি অনুচ্ছেদ পড়তে বললেন। মেয়েটি যথারীতি তা পড়ল, তবে বোধ হয় যারা by birth ইংরেজ তারাও এত শুদ্ধ ন্যাকামী করে ইংরেজী বলে বা পড়ে না। মেয়েটির ন্যাকামী দেখে প্রত্যয় তো একদম তপ্ত তাওয়া হয়ে গিয়েছিল। যাক, অনুছেদটি ছোট ছিল বলে মেয়েটি বসে পড়ল, রেহাই পেল প্রত্যয় সহ আরো অনেকে!
এ ধরনের বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটতেই থাকল, তবে দিনকেদিন প্রত্যয় অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছিল। যেমন জীবনে প্রথমবারের মত মেয়েদের সামনে কানে ধরতে গিয়ে সে প্রায় কেঁদেই দিয়েছিল, কিন্তু এরপর থেকে তাকে কানে ধরতে বললে সে তৎক্ষণাৎ দাঁড়িয়ে যেত!
ঘটনাবহুল প্রথম ২-৩ মাস কেতে গেল অনায়াসে। একদিন সে লক্ষ্য করল একটি মেয়ে তার দিকে নিজের চোখ কামানের মতো তাক করে রাখে। প্রথম প্রথম সে মনে করত মেয়েটি তার পাশে বসা সাদেকের দিকে তাকিয়ে থাকে, কেননা সাদেক খুবই STAAD (Smart,Tall,Attractive,Amazing,Dashing)। সেই তুলনায় প্রত্যয় কিছুই না। তবে তার এই ধারণা ভুল প্রমানিত হল! একদিন সাদেক অনুপস্থিত, অথচ মেয়েটি চোখের কামান তাক করেই রেখেছে! আজব মেয়ে! প্রত্যয় টানা এক মাস খুবই অস্বস্তিতে রইল। সে বোর্ডের দিকে তাকায়, ঘাড় ঘুরায়- দেখে কামান তাক করা, রুমে ঢুকে- তখনও কামান তাক করা!! সে আরো অস্বস্তিতে পড়ল, কারণ মেয়েটি ছিল ক্লাসে সবচেয়ে সুন্দর, মানে সুন্দরী!! এত চালাক ছেলে প্রত্যয় যেন দোকানে সাজানো পুতুল হয়ে গেল।, আর একটি মেয়ে এসে সবসময় তাকিয়ে থাকে!! সে লজ্জায় লাল টমেটো হয়ে যাচ্ছিল। কতরকম ভাবনা আসল তার মনে... সে ভাবল তার বানরের মত চেহারা দেখে মেয়েটি মনে মনে হাসে আর আনন্দ পায়। আবার সে ভাবে- “ডাল মে কুচ কালা হ্যা!!!” ভাবতে ভাবতে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা শেষ। পড়ালেখা না করে আবারো দ্বিতীয়!
প্রত্যয়ের কেমন কেমন এক দুঃসম্পর্কের বোন তার সাথে ঐ কোচিং এ পড়তো। এক কাজ করল, সে তার বোনকে বলল, যেন সে ঐ মেয়েকে তার দিকে তাকাতে মানা করে দেয়। ফরমুলা কাজ করল, তবে এক-দেড় সপ্তাহ পরে। মেয়েটি তাকানো বন্ধ করে দিল। প্রত্যয় তার বোনের কাছ থেকে জানতে পারল মেয়েটির নাম পৃথা। নামটি প্রত্যয়ের খুব পছন্দ হল, তবে মেয়েটিকে মোটেও পছন্দ হল না। কারন সে চিন্তা করল, এতুটুকু মেয়ে ছেলেদের দিকে তাকিয়ে থাকে, নিশ্চয় বাজে মেয়ে। এরপরই সে আবার চিন্তা করল যে, মেয়েটি যদি বাজে হয় তাহলে সে নিজেও তো বাজে ছেলে। কেননা সেও তো বারবার মেয়েটির দিকে তাকিয়েছে, নয়তো মেয়েটি যে তাকাচ্ছে তা সে বুঝল কীভাবে!!! প্রত্যয় খারাপ ছেলে নয়, তাই x=y , অর্থাৎ পৃথাও খারাপ মেয়ে নয়। এই প্রথম সেইবার প্রত্যয়ের মনের পালে বসন্তের হাওয়ার ছোঁয়া লাগলো, কিউপিডের জগতের প্রথম সিঁড়িতে পা দিলো। তবে এসবের কিছুই প্রত্যয় বুঝল না, বুঝল না যে তার দিকে দূর থেকেই কিউপিড তীর ছুঁড়ে দিয়েছে, যা লাগতে আর বেশি দেরি নাই!
যথারীতি প্রতিদিন ক্লাস চলছিল কোচিং এ। সব-ই ছিল ক্লাসে, তবে কী যেন একটা নেই নেই- মনে হচ্ছিল প্রত্যয়ের। সে বুঝল, পৃথা যে তার দিকে তাকানো বন্ধ করে দিয়েছে তার ই ফল এটা; কোচিং এ পড়তে মন বসে না, সবকিছুই কেমন যেন এলোমেলো। সবকিছুই ঐ ন্যাকা মেয়েটার কার্ল চুলের মতো এলোমেলো হয়ে গেল। দেখতে দেখতে এসে গেল দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা। তবে এবার ঘটল রীতির ব্যতিক্রম। সে পড়ালেখা অন্যবারের মতো না করে নি, কিন্তু পাশাপাশি সে কোন মেধা স্থান-ই অধিকার করে নি!! সেও বোধ হয় “বসন্তের হাওয়ার” সাইড ইফেক্ট ছিল...কে জানত!!
এরপর ঘটল আরেক ঘটনা; ২য় সাময়িক পরীক্ষার পর পৃথা আবার তাকানো শুরু করল, তবে সেবারের তাকানোটা ছিল অন্যরকম, চোখ পুলকদীপ্ত, ঠোঁটের কোণে একটু বাঁকা হাসি! হয়তোবা এর আগেও এভাবেই তাকাতো পৃথা, কিন্তু বসন্তের হাওয়ায় প্রত্যয়ের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে। এখনা প্রত্যয়ও পৃথার দিকে তাকিয়ে থাকা শুরু করল। ওরা দুজনেই ছিল খুব চালাক, ওরা তাকিয়ে থাকত, অথচ ক্লাসের অন্য কেউ কিছুই বুঝতো না। ওরা সবসময়ই তাকিয়ে থাকে... কিউপিডের তীর আঘাত করবে করবে প্রায়, বসন্তের হাওয়ার জোর যেন বাড়ছে......! এ সবের হাতেনাতে ফল, বার্ষিক পরীক্ষায় আবার পড়ালেখা কম করে মেধাস্থানে প্রথম! আর এরপরই সে জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা দিল, তা-ও কম পড়ালেখা করে।
সেদিন জন্ম হওয়া ছোকড়া নাইনে উঠে গেছে, এতে তার আশেপাশের সবাই বিস্ময় প্রকাশ করল, যদিও অবাক হওয়ার কিছুই ছিল না। এক স্যার তো তাকে বললেনই, “প্রতু বাবা, নাইনে উঠেছো, এখন লাইনেও উঠবে!” প্রত্যয় মুচকি হাসে, সে তো এইটে থাকতেই লাইনে উঠে গেছে।
প্রায় তিন মাস পরে বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল দিল। ফলাফল দেখে সকলের চোখ ছানাবড়া-
প্রত্যয় চৌধুরী-প্রথম স্থান-৩৬০ (মোট নম্বর)
তা দেখে রীতিমতো হতবাক প্রত্যয়, এতো ভালো পরীক্ষা দিয়েছিল সে!!! তাতেও কী বসন্তের হাওয়ার কোনো প্রভাব ছিল!! কে জানতো...
আর রেজাল্টের পর প্রত্যয় এক মিশনে নামল, মিশনের নাম- “মিশন পৃথা’স মোবাইল নাম্বার”। বহুদিন পর সে নাম্বার পেল বটে, তবে তা পৃথার না, তার আম্মুর!
সবকিছুর পাশাপাশি চোখে চোখে কথা চলছিল, কিন্তু প্রভু তো কথা বলার জন্য মুখ দিয়েছেন, তাহলে চোখের উপর বাড়তি চাপ দেওয়ার কি দরকার!! কিন্তু ওদের কেউই সামনা-সামনি কথা বলার সাহস পেত না। ঢাকা শহরে তো অলিগলির অভাব নেই, কোথাও তো কথা বলা যায়, কিন্তু প্রত্যয়ের বুকের পাটা তো শিমুল তুলার, তো আর কী করার ছিল!!!
একদিন প্রত্যয় সাহস করল, তার sms ডায়েরি থেকে একটা sms পাঠিয়ে দিল ঐ নাম্বারটিতে। sms টা ছিলঃ “Black Rose is for enemy, white rose is for a friend, pink rose is for a special friend, red rose is for a lover, which rose will you give me?” কিন্তু কোন উত্তর আসলো না। কিছুদিন পরে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে sms আসলো। শুধু একটা শব্দ ছিল “pink”। প্রত্যয় ধরে নিল sms টা পৃথার, তবে কী গোলাপী গোলাপ দিতে চেয়েছিল!! প্রত্যয়ের মন আনন্দে ভরে গেল!
এবার reply আসায় তার বুকের পাটা কিছুটা শক্ত হল। সে আরেকটি sms দিলো- “A true friend isn’t like the rain that pours and gets away, a true friend is like the AIR that may be silent , but always around you like me….” । কিন্তু এর কোন উত্তরই আসল না।
সে সময় দিন রাত শুধুই পৃথার চিন্তা প্রত্যয়ের মনে। প্রত্যয় এর আগে হিন্দি বা বাংলা কোন প্রেম-ভালোবাসার ছবি দেখতো না। কিন্তু পৃথার সাথে তার এই মনের সম্পর্কের পর থেকে সে প্রতিটি ছবি বার বার দেখতো আর নায়ক-নায়িকার স্থানে নিজেকে আর পৃথাকে চিন্তা করত। তার সবচেয়ে প্রিয় ছবি ছিল- Kuch Kuch Hota Hain.
একদিন প্রত্যয় মোবাইলে গেমস্‌ খেলছিল। হঠাৎ কল আসল, অপরিচিত নাম্বার। তবে কল ধরার পর প্রত্যয় বুঝতে পারল, কন্ঠটি অপরিচিত নয়; তা ছিল পৃথার। প্রত্যয় যেন এক লাফে মঙ্গল গ্রহে চলে গেল। পুরো ১৯ মিনিট ৩৩ সেকেন্ড কথা বলেছিল ওরা, ওরাই জানে কী কথা বলেছিল...
এরপর......! এরপর আর কী! ওরা কথা বলতে লাগল, তবে প্রেমিক-প্রেমিকাদের মত কথা নয়, বন্ধুত্বের কথা। অরা একজনকে আরেকজনের সামনে মেলে ধরল। এরই সাথে সাথে কিউপিডের তীর বিদ্ধ হল প্রত্যয়ের বুকের বাঁ দিকে, জীবন নদীতে প্রত্যয়ের মনের নৌকা বসন্তের অবিরাম হাওয়ায় ছুটতে লাগল বাঁধাহীনভাবে। হয়তো কিউপিডের আরেকটা তীর পৃথার মনেও লেগেছিল!! পুরো ক্লাস টেন ওরা ওদের বন্ধুত্বের ভেলা ভাসিয়ে নিল ভালোবাসার দিকে। আর তা সেখানে সফলভাবে পৌঁছে গেল। দু’জনের মনেই কিউপিডের তীরের কার্যকারিতা দেখা গেল...
এসে গেল এস,এস,সি। দু’জনেই ভালোভাবে স্ট্যান্ড করল। রসিক প্রত্যয় প্রেমিক প্রত্যয় হয়ে গেল, পৃথা হয়ে গেল প্রেমিকা! অপরিণত বয়সে তাদের এক প্রেম গাঁথা রচিত হল।চলতে লাগল তাদের খুব মধুর সময়......

* * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * *

হঠাৎ একদিন পৃথার ফোন আসল ভোর পাঁচটায় প্রত্যয়ের মোবাইলে। এ সময়ে তার ফোন আসার কথা নয়, কারণ পৃথা জানত ঐ সময় টা প্রত্যয়ের ঘুমের। মাঝ ঘুমেই প্রত্যয় পৃথার কলটা ধরল আর কিছু বলার আগেই পৃথা কাঁদতে কাঁদতে বলল, “প্রত্যয়, তোমার সাথে আমি আর কথা বলতে পারবো না, আই এম স্যরি, আমি যাচ্ছি”; সাথে সাথে কলটা কেটে দিয়ে মোবাইল বন্ধ করে দিল। প্রত্যয় অনেকক্ষন পৃথাকে ফোন করল, কিন্তু মোবাইল বন্ধ। সবকিছুই প্রত্যয়ের কাছে এক দুঃস্বপ্নের মত মনে হচ্ছিল। কিন্তু তা কোন দুঃস্বপ্ন ছিল না, ছিল তিক্ত বাস্তবতা...
কী কারনে পৃথা চলে গেল প্রত্যয়কে ছেড়ে চিরতরে; এ রহস্যও পৃথার সাথেই চলে গেল। নিশ্চয়ই পৃথা যেতে চায় নি; নয়তো সে কাঁদতো না! প্রত্যয় ভাবতে থাকে, কেবল ভাবতে থাকে..., কত জটিল গণিতের সমাধান করেছে সে, কিন্তু এর সমীকরণ টা মেলাতে পারছে না...
সে মনকে বোঝাতে চাইল, Kuch Kuch Hota Hai ছবিতে যেমন রাহুলকে অঞ্জলী ছেড়ে গিয়েছিল কাঁদতে কাঁদতে, তেমনি পৃথাও তাকে ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু তার জীবনে তো পৃথা ছাড়া আর কেউ নেই, তার জীবনে তো কোন “টিনা” নেই। তাহলে কেন এসব হল? সব সমীকরণ মিলে যেন নতুন এক জটিল সমীকরণ দাড়া করাচ্ছিল!
প্রত্যয়ের এক বন্ধু বলেছিল, “ বসন্তের হাওয়া যেমন সারা বছর থাকে না, তেমনি প্রেমও জীবনে ক্ষণিক সময়ের জন্য আসে, আর চলে যায়...”
তবে আজও প্রত্যয়ের আশা, ছবির শেষে যেমন অঞ্জলীকে ফিরে পেয়ছিল রাহুল, তেমনি পৃথাও আবার ফিরে আসবে প্রত্যয়ের জীবনে। পৃথার ফেরার পথের দিকে তাকিয়েই প্রত্যয়ের বছর যাচ্ছে, হয়তো বছর শেষে আসবে আবার বসন্তের হাওয়া...একদিন আসবে নিশ্চয়ই...



***এই গল্পটির সকল চরিত্র, রূপকল্প এবং ঘটনা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। যদি এই ঘটনার সাথে কোন ব্যক্তিবিশেষের কোনরূপ মিল বা সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় তবে তা সম্পূর্ণ কাকতালীয়। কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আঘাত দেবার জন্য এটা লেখা হয় নি। ধন্যবাদ।
*** আমি খুবই দুঃখিত যে, এই গল্পে আমি বাংলার সাথে কিছু ভিনদেশি কথা ব্যবহার করেছি, তবে গল্পের স্বার্থে এর প্রয়োজন ছিল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
AMINA তোমার লেখনীর সাবলীলতার জন্য সুখপাঠ্য হয়েছে গল্পটি।
ম্যারিনা নাসরিন সীমা একদিনেই কেও লেখক হয়না । খারাপ হয়নি । লিখতে থাকলে অবশ্যই ভাল করবে । শুভকামনা
মোঃ আক্তারুজ্জামান সাবলীল লেখায় লেখকের পরিপক্কতার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে......ধন্যবাদ|
উপকুল দেহলভি এযুগের গল্পটি খুব ভালো লাগলো; আপনাকে আমার ঘরে আমন্ত্রণ;
শাহ্‌নাজ আক্তার বাংলা - ইংলিশ মিলিয়ে আপনি যে মজার হাসির গল্প লিখেছেন , তা বোধ করি অনকের পক্ষেই অসম্ভব , তা প্রত্যয় বাবু ভালইত বক্তৃতা দাও ,,, chalie jao , খুব ভালো লাগলো , ভোট পাবেন আপনি .....
আহমেদ সাবের লেখকের লেখার হাত বেশ ভাল। গল্পটি যুগোপযোগী। একটা রম্য গল্পকে শেষ প্যারায় মনে হয় “কষ্ট” সংখ্যার যূপকাষ্ঠে বলি দেয়া হয়েছে।
সৌরভ শুভ (কৌশিক ) বসন্তের হাওয়া সারাবছর থাকে না,আমার প্রিয়া তাইতো আমায় ডাকে না /
sakil আপনি যেহেতু বলেই দিয়েছেন গল্পের প্রয়োজনে ইংলিশ শব্দ বেবহার করেছেন সেহুতু amar কিছু বলার নাই . ভালো লিখেছেন চেষ্টা করলে আরো ভালো লিখতে পারবেন . শুভকামনা রইলো .
পার্থ প্রমি আপু, ধন্যবাদ। আপনার ধারণা টা কিছুটা ঠিক, বাকীটা বলতে চাচ্ছি না......। :p
আবু ফয়সাল আহমেদ অনেক সাবলীল লেখা; তবে আরও পরিশ্রমের দরকার আছে বলে মনে হচ্ছে. গল্পটা পরে একটু অতিপ্তি রয়ে গেল. ভালো লেগেছে

০৮ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪