প্রকৃতির প্রতিদান

মা (মে ২০১১)

সমীর দাশ
  • ১৩
  • 0
  • ৬৭
বিয়ের পনেরোত্তর বছর পর যখন অক্ষয় ও করুণা দম্পতির ঘর আলো ক’রে প্রথম ছেলের আবির্ভাব হ’লো তখন তারা বংশরক্ষা ও স্বপ্ন রক্ষার আনন্দে ঈশ্বরাভিমূখে বার বার প্রাণ সমর্পণ ক’রলো। অতঃপর দ্বিতীয় বছরান্তে দ্বিতীয় সন্তানের আবির্ভাবে যেন তাদের এতোদিনকার সন্তানহীনতার অনুভূতি যেন একেবারেই মুছে গেল। দুই সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে আরা তাদের বন্ধ্যত্ব কাটিয়ে পূর্ণোদ্দমে নব দম্পতির মতো সংসারবস্তল হ’য়ে সংসারপাতা ক’রতে লাগলো। এতদিন পরে পর পর দুই সন্তানের আগমনকে তারা ঈশ্বরের আশীর্বাদ হিসাবেই গ্রহণ ক’রলো। প্রতিবেশীদের মধ্য দিয়েও সান্ত্বনাবাক্য এলো যে এতদিনে তাদের সংসারে সুখ ফিরে এলো।
প্রকৃতির রহস্য বড়ই খামখেয়ালিপূর্ণ এবং মানুষ তার হাতে এতই অসহায় যে, মাঝে মাঝে কিছুই করার থাকে না ভাগ্যকে দোষ দেয়া ছাড়া। ঈশ্বরের এমনি কোনো আশীর্বাদে করুণা কে সাদা শাড়ীর বাঁধনে আবদ্ধ হ’তে হ’লো। স্বসন্তানস্ত্রীকে সংসার সুখে ঘুম পাড়িয়ে রেখে স্বামী চ’লে গেলেন অনন্ত জাগরণে। ঈশ্বরভক্তির সন্তুষ্টি সান্ত্বনায় সন্তুষ্ট হ’য়ে সকলই ভাগ্য ব’লে মেনে নিয়ে এবং স্বামীর দায়ভার নিজের উপর টেনে নিয়ে মা সন্তানদের পিতৃ-মাতৃস্নেহে বড় ক’রতে লাগলো।
দিন যায় আর সেই সাথে সোনা-মানিকেরাও বড় হতে থাকে। বড় ছেলে এখন স্কুলে যায়। মা তাকে প্রতিদিন স্নান ক’রিয়ে, নিজের হাতে চুল আঁচড়িয়ে, ভাত খাইয়ে তার কলিজার টুকরা, তার স্বপ্নকে স্কুলে পাঠায়। ভালোবাসা যেখানে যত গভীর আশংকাও সেখানে তত গভীর। তাই সন্তানের সংকটাশংকায় শঙ্কিত হ’য়ে মা পথের পানে চেয়ে থাকে কখন তার খোকা ফিরে আসবে! কখন সে তার খোকার কপালে মাতৃস্নেহের আলপনা এঁকে দেবে! যখন তার সোনা রাস্তার মাথায় এসে মা মা ব’লে ডেকে ওঠে তখনই যেন তার সকল অপেক্ষার অবসান ঘটে। দৌড়ে গিয়ে তার প্রাণকে বুকের ভিতর গেঁথে নিয়ে অন্তরের সাধ মেটায়। সাধ হয় তাকে কখনো কোলছাড়া না করে। কিন্তু সভ্যতার আলো দেখবার জন্য তাকে প্রতিদিন মায়ের কোল ছেড়ে স্কুলে যেতে হয়। মা তার কোল পেতে ব’সে থাকে আর ঈশ্বরের নাম স্মরণ ক’রতে থাকে যেন তার আশীর্বাদ সে দেখেশুনে রাখে। যখন সন্তান ফিরে এসে তার শূন্য বুক ভ’রে দেয় কখনই তার খুশির সীমা ধরে না।
একদিন স্কুলের সময় মাড়িয়ে যায় কিন্তু ছেলে ফেরে না। মায়ের মন আশংকায় পূর্ণ। শুধুই পথের পানে চেয়ে থাকে আর যাকে ও পথ ধরে আসতে দেখে তাকেই জিজ্ঞাসা ক’রে তার সোনাকে দেখেছে কিনা। কেউই বলে না তার সন্তানের খবর। মা ভাবে হয়তে স্কুলে আজ বেশি ক্লাস হ’চ্ছে তাই দেরি হচ্ছে। তাছাড়া সন্তান আমার ঈশ্বরের আশীর্বাদ তার কিছু হবে না। কিন্তু কিছুতেই মন বুঝ মানে না। মনটা খুব ছটফট ক’রতে থাকে।
অবশেষে পথের বাকে তার সন্তানকে দেখা যায় তার জেঠিমা’র কোল আলো করে প্রতিদিনের মতো বাড়ি ফিরছে। কিন্তু আজ সে হাসতে হাসতে মা মা বলতে বলতে তার মায়ের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়লো না। আজ সে যে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। শঙ্কিত মা ভাবলো হয়তো এত দেরীর জন্য সে ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত হ’য়ে জেঠিমা’র কোলেই ঘুমিয়ে প’ড়েছে। মা তখন দিদির কোল থেকে সন্তানকে নিতে গিয়ে হঠাৎ যেন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হ’য়ে স’রে এলো। এ যেন তার সন্তান নয়। যাকে সে প্রতিদিন নিজের হাতে সাজিয়ে গুছিয়ে স্কুলে পাঠাতো; সারাদিন যে মা মা ব’লে যে তার পনেরো বছরের মাতৃত্ব হীনতার খেদ নিমিষেই মিটিয়ে দিতো সে আজ অষাঢ়, নির্জীব, শান্ত! যেন মাকে চেনেই না। আজ সে তার জেঠিমা’র কোলেই শান্ত। তার যে আর মায়ের প্রয়োজনই নাই।
স্কুল থেকে ফেরার পথে এক দানবরূপী হিংস্র ট্রাক তাকে গ্রাস ক’রে চির জাগরণে তার বাবার কাছে পৌঁছে দিয়েছে। হয়তো সে সেখানে বাবা বাবা ব’লে পূর্ণ ক’রছে বাবার অন্তর। মায়ের জন্য তো ছোট ভাই রইলই। বিধাতার হিসাবের কী সুষম বণ্টন!
কিন্তু মা? পুকুর-ঘাট, খোকার বই, খাতা, খেলনা, আয়না-চিরুনি, স্কুলের জামা, পথের বাঁক সব সময় তাকে ‘মা’ ‘মা’ ব’লে ডাকে। সে কি তার ডাকে সাড়া না দিয়ে পারে? মা প্রতিদিন তার মাণিকের বই খাতা গুছিয়ে রাখে। স্কুল ছুটি হ’লে ‘মা’ ‘মা’ ডাক শুনে দৌড়ে রাস্তায় যায়। কিন্তু প্রাণের ধন আর ফেরে না।
ঈশ্বর হয়তো মায়ের চেয়ে অধিক করুণাময়। তাই হয়তো মাণিককে সে তার কাছে নিয়ে গেছে। প্রতিবেশীরাও তাকে সে কথা অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা ক’রেছে যে যার দান সেই নিয়ে গেছে আর দুঃখ ক’রে কী হ’বে? এখন ছোট ছেলের মুখের দিকে চেয়ে বেঁচে থাক।
মাও তো বিধাতার আশীর্বাদ বলেই ধরে নিয়ে তার প্রাণের ধন ঈশ্বরে সমর্পণ ক’রেছিল। তবে আজ কেন সে কিছুতেই নিজেকে বোঝাতে পারছে না? এটুকু বুঝবার শক্তি কেন তিনি মায়েদের দেননি?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নাজমুল হাসান নিরো গল্পের বর্ণনাভঙ্গী এবং মেসেজ দুটোই প্রশংসা করার মত। তবে যতি চিহ্নের ব্যবহার কেন এত ব্যপক আর অযথাযথ তা ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। আর রবীন্দ্রনাথের লেখার ভঙ্গীর সাথে কেমন জানি মিল আছে বলে মনে হল। আমার ভুলও হতে পারে।
বিন আরফান. যতি চিন্হের ব্যবহার যথাযথ নয়. এছাড়া ভালো. চেষ্টা চালিয়ে যান আরো ভালো করতে পারবেন. শুভ কামনা রইল.
অদৃশ্য শুভ কামনা রইল।
মামুন ম. আজিজ ঈশ্বর হয়তো মায়ের চেয়ে অধিক করুণাময়-------------ধমর্গুলোত কিন্তু হয়তো নেই, পুরোপুরি সত্য। সুন্দর এই বাক্যটা।
sakil খুব ভালো গল্প . ভালো লেগেছে
ঈশান আরেফিন অসাধারণ লাগলো , ভোট পেলেন
সূর্য ভালোই হয়েছে, যেটুকু অতৃপ্তি রইল, লিখা চালিয়ে গেলেপরে পাঠক হিসাবে ভবিষ্যতে সেটুকুও আর থাকবেনা। শুভকামনা.......
মোঃ আক্তারুজ্জামান যথার্থ কথা শিল্পীর মতই লিখেছেন...
এস, এম, ফজলুল হাসান অনেক ভালো লাগলো আপনার গল্পটি , ধন্যবাদ আপনাকে

০৭ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪