একটি মেয়ের মা হওয়ার গল্প

মা (মে ২০১১)

মুহাম্মদ নিয়াজ মোর্শেদ
  • ২৩
  • 0
হঠাৎ করেই একদিন সকাল থেকে শ্বশুর বাড়ির লোকজন সুমিকে ‘মাইয়্যার মা’ বলে গাল দিতে শুরু করল ।তাতে অবশ্য সুমির খুব রাগ হলো । কিন্তু তার অপরাধটা খুবই গুরুতর । তার অপরাধ হল আল্টাসনোগ্রাফি থকে জানা গেছে তার জরায়ুতে আগত প্রথম সন্তানটি মেয়ে ।সেই থেকেই বিপত্তির শুরু । মেয়ে সন্তান যতই গুনবতী কিংবা বুদ্ধিমতী হোক না কেন তাকে দিয়ে আর যাই হোক বংশের বাত্তি যে জ্বালানো যায়না সে কথাটি প্রতি ঘন্টায় একবার করে তার শাশুরি তাকে শুনিয়ে যাচ্ছে । এছাড়া মেয়ে ধবধবে ফর্সাই হোক কিংবা হুরপরীই হোক, এ মেয়েকে পার করতে যে তাদের সর্বস্বান্ত হতে হবে তাও বেশ কয়েকবার টীপ্পনীর সুরে জানান দিয়ে গেছেন তিনি ।সুমির বর মারুফ শেঠ শিক্ষিত মানুষ ।সুলতানাবাদ জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক তিনি । সেদিনের আগ পর্যন্ত সুমী তাকে সংস্কার মুক্ত, মুক্তবুদ্ধি সম্পন্ন আধুনিক মানুষ হিসেবেই জানতেন । তিনি অবশ্য মুখে কিছু বলেননি । তবু তার গোমড়া মুখ দেখে সহজেই অনুমেয় যে তিনিও এ ব্যাপারে সন্তুষ্ট নন ।
সমস্যা এখানেই শেষ নয় বরং শুরু । কেননা বৈশাখের ঝড় জৈষ্ঠ্যে ক্রমশ বৃদ্ধিই পায়, কমে না । সুমির বড় এবং একমাত্র ননদ শামসুন্নাহার বেগম । একটু বেটে, মোটা ও ফর্সা গোছের জাদরেল মহিলা ।একেতো তিনি খুব জেদী তারওপর তার স্বামী সেহজাদুর রহমান খান এখানকার উপজেলা চেয়ারম্যান ।তিনি এর পূর্ব দু-দুবার ইউনয়িন পরিষদের চেয়ারম্যানও ছিলেন ।যদিও ডাকসাইটে খুনী, লুটরো, ধষর্ক হিসেবে তার ব্যাপক বদনাম রয়েছে ।তবু আশ্চর্য কথা এই যে শামসুন্নাহার বেগম এসব কান কথার ধার ধারেন না । উনি তো প্রায়ই বলেন, ‘পুরুষ হইল বাঘের ব্যাটা ।সে যদি একটু আধটু ওইসব না করে তাইলে হে কিয়ের পুরুষ ।তার তো হাতে চুড়ি পইর্যা ঘর ঝাড় দেওন দরকার ।’
তবে তার এই পুরুষ তত্ত্ব সর্বজন গ্রাহ্য না হলেও সবাই কিন্তু তাকে বেশ সমীহ করে চলে । শুধু তার বাপের বাড়ির লোকজন নয় । গ্রামসুদ্ধ সকল লোকই তাকে সমীহ করে ।দেখলে সালাম দেয় । আর দূর থেকে একে অপরকে দেখিয়ে চুপে চুপে বলে, ‘চেয়ারমান সাবের গিন্নী, কী মোটারে বাপ, কী কটা কটা চোখ’ ।কথায় আছেনা ‘যেমন কুকুর তেমন মুগুর’।
সে যাই-ই হোক ।আচমকা সবাইকে চমকে দিয়ে সেদিন বিকেল বেলা তিনি হাজির ।
যদিও মুখে হাসি টেনে বললেন, ‘মা’র কতা খুব মনে পড়ছিল, তাই একনজর দেখতে আইলাম’ । তবু সুমির বুঝতে বাকী রইল না যে জল অনেক দূর পর্যন্ত গড়িয়েছে ।
রাতে খাবারের পর তিনি কথাটা পাড়লেন ।
-‘ওই মারুফ হুনছস নি, এদিকে আয়, তোর লগে কয়ডা জরুরী কথা আছে ।’ মারুফ স্কুলের প্রথম প্রান্তিকের খাতা কাটছিল । ত্রস্ত ব্যস্ত হয়ে উঠ এসে জবাব দিল –‘জ্বী, বুবু বলেন ।’
-‘এইসব কী শুনি ? তুই নাকি মাইয়্যার বাপ হইতে যাইতাছ ?’
-জ্বী ।বেদম রগচটা স্কুল শিক্ষকের উদ্ভট প্রশ্নে হকচকিয়ে যাওয়া স্কুল ছাত্রের মতন জবাব দয়ে মারুফ ।
-‘জ্বী মানে ! তুই কী সারা জীবন বেকুবই থাকবি ? তোর কি কোন দিন বুদ্ধি সুদ্ধি হইব না ?’ খ্যাকখ্যাকিয়ে ওঠেন শামসুন্নাহার বেগম ।
-‘ক্যান মাইয়া দিয়া ঘরের খুটি দিব’ মারুফের বুড়ো মা টিটকারী দেয় ।
-‘আল্লাহ দিছে, এখন কী করমু’ মিনমিনিয়ে জবাব দেয় মারুফ ।
-‘কী আবার করবি ? তোরই বা কিয়ের দোষ । সব দোষ ওই হারামজাদীর, কত কইরা কইছি কাজ কাম এট্টু কর, শুধু শুইয়া বইস্যা খাইও না । শুইয়া-বইস্যা থাকলে প্যাটের মধ্যে চড় পড়ে , মাইয়্যা অয় । কে হুনে কার কতা ? এহন বোঝ ঠেলা, এতকাল পর প্যাটে আনছে এক খান মাইয়া । ঝুটি ধইর্যা ঘর অইতে বাইর কইর্যা দে হারামজাদীরে’ । মারুফের মা মুখ ঝামটা মারেন ।’
-‘থামো তো মা ।এইডা মডার্ন যুগ । এই যুগে এইডা কোন প্রবলেম অইল ।মারুফ, তুই এট্টুও চিন্তা করিস না, তোর কোন কিচ্ছু করন লাগব না ।তুই শুধু কাইল বউরে লইয়্যা আমার থানা সদরের বাসায় যাবি ।সদর হাসপাতালের নার্স আপার লগে আমার ভাল পরচিয় আছে । তারে ডাইক্যা যা করার আমিই করমু ।’ মারুফ মাথা ঝাকায় ।
-‘মনে থাকবো ? হে-ই বেকুব ।’
-‘জ্বী মনে থাকব । কিন্তু সুমি যদি রাজি না হয় ?’
-‘হে রাজি অইব না ক্যান । হে কী তোরডা খায় ? না তুই তারডা খাস ?’
দু-চোখ কটমট করে তাকায় শামসুন্নাহার বেগম ।
সেদিন রাতে বেশ দেরী করে শুতে যায় মারুফ ।সুমি শুয়ে ছিল কিন্তু ঘুমায় নি ।
মারুফকে দেখে উঠে বসল সে ।মারুফ মুখটা প্যাচার মত করে বলল, ‘এখন আর ঢং করতে হবে না ।তাড়াতাড়ি ঘুমাও সকাল সকাল উঠতে হবে ।’
-‘কেন ?’ সুমি শীতল বরফ খন্ডের ন্যায় প্রশ্ন করে ।
-‘দু-দিনের কচি খুকি, কিছুই বোঝেনা ।দুনিয়ায় কত্ত মাইয়া মানুষ গন্ডায় গন্ডায় পোলা ছাওয়াল জন্মায় ।আর নিজের প্যাটেতো আনছেন একটা মাইয়্যা ।সেইটারে বিদায় করা লাগবে না ।’ তারস্বরে চিৎকার দিয়ে বলে মারুফ ।
-‘পোলা হউক মাইয়া হউক, হে আমার সন্তান ।কিছুতেই আমি আমার সন্তান মারতে দিমু না।’ পর্বতের ন্যায় স্থির ও দৃঢ় কন্ঠে উত্তর দেয় সুমি ।
সুমির কন্ঠের দৃঢ়তায় প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নেয় মারুফ।
গর্জন দিয়ে ওঠে, ‘ত্তো ত্তো ত্তো তোর এতবড় সাহস । আমার মুখের উপর কতা কস্ ।তোরে এখ্খুনি তালাক দিমু ।এক তালাক.........দুই তালাক…………….’ মারুফ তোতলাতে থাকে । এ এক অচেনা মারুফ ।
ফাগুনের মধ্যরাত । সারা পৃথিবী বেঘোরে ঘুমাচ্ছে ।আকাশ জ্বলছে এক অদ্ভুত নীরব স্বপ্ন বাতি । উঠোনের কোনের হাস্নাহেনা ফুলের ঘ্রাণে বসন্ত বাতাস মউ মউ করছে । সুমি খালি পায়ে উঠোনে এসে দাড়াল ।সম্মুখে তার অনন্ত অজানা পথ ।যে করেই হোক তাকে যে তার সোনামনিকে বাঁচাতেই হবে……………………………………..

উৎসর্গঃ আমার অগ্রজ বোনকে । যে অনেক বাধা-বিপত্তির কাছে মাথা নত না করে আমার আদরের ভাগ্নী রিণা কে পৃথিবীর মুখ দেখিয়েছেন ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রওশন জাহান Oh my God !!!!! আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম. স্যালুট আপনাকে.
নাজমুল হাসান নিরো বেশি না, সামান্য কিছু সময় পূর্বের প্রেক্ষাপটের বাস্তব চিত্রায়ন খুব সফলভাবে হয়েছে গল্পটিতে। তবে বানানের শুদ্ধতার ব্যাপারে আরেকটু যত্নবান হওয়া দরকার।
বিন আরফান. বানান কিছু ভুল আছে / জরায়ুতে আগত প্রথম সন্তানটি মেয়ে = বাক্যটি ভুল সঠিক বাক্য বার্তা করে পাঠাব. / .............. =? এগুলো দেয়াতে অলংকরণ দেখায় দৃষ্টি কটু / এছাড়া বাস্তব কিছু চিত্র ফুটে উঠেছে. শব্দ চয়নে আরো সতর্ক হলে বেশি ভালো লাগত. চেষ্টা চালিয়ে যান. শুভ কামনা রইল.
রাজিয়া সুলতানা এক কথায় অসাধারণ লেখনি,খুব বাস্তব সম্মত এক লেখা যা হৃদয়্গ্রাহিও বটে,তাই অসাধারণী আপনার প্রাপ্প ভাই.....আরো এমন সৃজনশীল লেখা চাই ভাই......আমার লেখা ৩ টি পরার আমন্ত্রণ রইলো.....
sakil ভালো লেগেছে আপনার গল্পটি
সূর্য কেন যে মানুষ গুলো আমাদেরকে এমন গল্প লেখার সুযোগ দেয়। ধিৎকার তাদেরকে। সুন্দর হয়েছে লেখাটা। এগিয়ে চলার দোয়া থাকলো...
মাহমুদা rahman গল্পটা আসলেই অনেক সুন্দর
Rabbi azmal ভালই তো,চালিয়ে যান ,একদিন ঠিকই উপন্যাসিক হয়ে উঠবেন
মামুন ম. আজিজ এখনো অনেক কয় শুনেছি, সোনার আংটি বাকাও ভালো। ছেলেরা নাকি সোনার আংটি। ভালো লেখা।

০৭ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪