উঠলো বাই কটক যাই । আমার খুব বেড়ানোর নেশা। মাস ছয়েক আগে রওনা দিলাম বুদ্ধগয়ার উদ্দেশে । আমরা তিন বন্ধু, আমি,উৎপল আর ভজন । ফুলিয়া থেকে ট্রেনে চেপে শিয়ালদহ ( কলকাতা ) । দু’ঘন্টার রাস্তা । সেখান থেকে বাসে চেপে হাওড়া স্টেশন । কলকাতা- হাওড়া যমজ শহর । বাসে তিরিশ মিনিট লাগলো । আসলে দুই শহরকে তফাৎ করেছে গঙ্গা নদী । দূরপাল্লার বেশীর ভাগ ট্রেন হাওড়া থেকেই ছাড়ে । রাত আটটার দুন এক্সপ্রেস করে গিয়েছিলাম । ট্রেনটি দেরাদুন অবধি যায় । আমি দুবছর আগে এই ট্রেন-এ চেপে দেরাদুন গিয়েছি । দু’রাত ট্রেনে কাটাতে হয় । এবার আমাদের গন্তব্য গয়া অবধি । ভোর পাঁচটায় বিহার রাজ্যের গয়া স্টেশনে নামলাম । স্টেশনেই যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে ফ্রেশ হ’লাম।
বাইরে বেড়িয়ে টিফিন করে নিলাম । তারপর দরদস্তুর করে একটি টাঙ্গায় চাপলাম । টাঙ্গা হ’ল ঘোড়ার গাড়ী । টগবগ করে টাঙ্গা ছুটলো । নিজেদের বেশ জমিদার মনে হচ্ছিল । ঘোড়া ছুটছে, চারদিকে মনোরম পরিবেশ , পাশে ফল্গু নদী,( ফল্গু নদী অন্তঃসলিলা , অর্থাৎ উপড়ে শুধু বালি আর বালি কিন্তু একটু খুঁড়লেই জল ), স্নানরত রমনীরা, বাচ্চারা হাততালি দিচ্ছে, মনে পুলক জেগে উঠলো । “ এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো বলতো ?” কিন্তু পথ শেষ হয়ে গেল । মাত্র একঘন্টাতেই পৌছে গেলাম বুদ্ধগয়া ।
বুদ্ধগয়া বৌদ্ধদের তীর্থস্থল। গৌতমবুদ্ধ এখানে তপস্যা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন । তাই জায়গার নাম হয়েছে বুদ্ধগয়া । নেপাল খুব কাছেই । নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড, চীন, মায়ানমার, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, জাপান, লাওস, কম্বোডিয়া প্রভৃতি বিশ্বের নানদেশের বৌদ্ধরা এখানে প্যাগোডা গড়েছে । কি সুন্দর রঙ বেরঙের প্যাগোডা ! দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায় । গৌতম বুদ্ধের ধ্যানরত অবস্থায় একটি মুর্ত্তি আছে আশিফুট উঁচু । পিঁপুল (অশ্বথ বা পাকুড় ) গাছের নীচে পাথরের উপড়ে বুদ্ধের পায়ের ছাপ আছে ।
বুদ্ধের পায়ের ছাপ থেকে কিছুটা দূরে এক সৌম্যদর্শন ব্যক্তি দাড়িয়েছিল । বয়স নব্বইয়ের কাছাকাছি হবে । কিন্তু বয়সের ভারে ন্যুব্জ নয় । এখনো সুন্দর সুঠাম চেহারা । এক বৌদ্ধ ভিক্ষুর সাথে হিন্দিতে কথা বলছিল । উৎপল কেবল-ই বলেছে, সত্যি আমাদের দেশ কি সুন্দর ! প্রাণ দিয়েও আমরা দেশের মান রাখবো । অমনি লোকটি বাংলায় বলে উঠলো, ‘দেশকে তোমরা খুব ভালবাসো ?’ আপনি বাংলা জানেন ? ভজনের বিস্মিত প্রশ্ন । লোকটি বললো,’আমি উর্দু,ইংরেজীও জানি’ । আপনি দেশকে ভালবাসেন না ? ভজনের পাল্টা প্রশ্ন । ‘আমার তো কোন দেশ নেই’, তবে দেশ প্রেম ছিল । বলে হাসলো লোকটি । ‘ একথা বলছেন কেন ?’ আমার জিজ্ঞাসা । শোন তবে, লোকটি তার কাহিনী শুরু করলো ।
আমার বাবা বৃটিশ সেনাবাহিনীতে ছিলেন , বিয়ে করেছিলেন এক বিদেশিনীকে । আমার সাত বছর বয়সে মা মারা গিয়েছিলেন । আমার আর কোন ভাইবোন হয়নি । পনের বছর বয়সে আমি বৃটিশ রয়্যাল আর্মিতে ভর্তি হই । ঐ বছরই এক যুদ্ধে বাবা মারা যান । বাবা ধর্ম ত্যাগ করে খ্রীষ্টান হয়েছিলেন । তখন আমি ব্রিটিশ নাগরিক । ইম্ফলের যুদ্ধে আজাদ হিন্দ ফৌজকে আমরা পরাজিত করেছিলাম । অনেক বিপ্লবীকে কচুকাটা করেছি । তারপর দেশ স্বাধীন হ’ল । আমি তখন করাচীতে । পাকিস্তানে অপশন দিলাম । হয়ে গেলাম পাকিস্তানী । পোস্টিং হ’ল ঢাকায় । মীরপুরে থাকতাম । একাত্তরের যুদ্ধের সময় পাকবাহিনীর হয়ে অনেক কোতল করেছি । বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে পাকিস্তান সরকার আমাদের মত অনেককেই ফিরিয়ে নিল না । বাংলাদেশ সরকারও আমাদের অস্বীকার করলো । আমাদের বিহারী বলা হ’ত । হঠাৎ মনে পড়লো বাবা বলেছিল আমাদের আসল দেশ বিহারে । পিতৃভূমির উপড় টান জাগলো । দালালের মাধ্যমে চলে এলাম বিহারে । ভাগ্যিস বিয়ে করিনি ! নইলে কি যে হ’ত ! এখানে এসে দেখি এ বড় কঠিন ঠাঁই ! কেউ চেনেনা ! পদে পদে ধরা পড়ার ভয় ! তাই বুদ্ধগয়ায় ট্যুরিষ্ট গাইড হয়ে জীবনধারণ শুরু করি ।
তখনি একদল ট্যুরিষ্ট দেখে লোকটি ওদের কাছে চলে গিয়ে বলতে লাগলো, I’m a guide sir, may I help you ? আমরাও ওখান থেকে চলে এলাম । আর বুদ্ধগয়ায় যাওয়া হয়নি ।
০৬ মার্চ - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৫৪ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪