একজন অসুন্দর এবং আরেকজন খারাপের গল্প

ক্ষোভ (জানুয়ারী ২০১৪)

মোঃ আক্তারুজ্জামান
  • ২৮
  • ১০
  • ৬৯
(১)
টুক্কার সব কথার উপর চন্দ্রবিন্দুর ছড়াছড়ি! শব্দের প্রতিটা অক্ষরের উপর চন্দ্রবিন্দু, তাও একটা করে না একেবারে অসংখ্য, অগনণীয়। চন্দ্রবিন্দুর ভারে শব্দগুলি চটকে গিয়ে তার মুখ থেকে যখন বের হয় তখন তা স্রেফ গোঙানী মাত্র।

জীবনে একবারও কোন প্রকার ভূলে বয়রা, ঠসা জাতীয় বিশেষণে ভূষিত হতে হয় নি এমন শাণিত শ্রবণেন্দ্রিয়ের অধিকারী মানুষকেও টুক্কার কথা শুনতে হয় কান খাঁড়া করে, গভীর মনোযোগ দিয়ে। সামান্য গুরুত্ব না দেয়া বা বেখেয়ালীপনা মানেই টুক্কার কথা কানের কাছ দিয়ে হারিয়ে যাওয়া।

গ্রামের অনেকে বলে তার তালু-জিহ্বা খাঁটো, আবার কেউ বলে যে টুক্কার আসলে ঐ তালু-জিহ্বা নামক জিনিসটাই নাই। একটু আধটুও যদি থাকত তবে তার কথায় চন্দ্রবিন্দুর এত সমাহার, এত আধিক্য থাকত না। ঘটনার এখানেই শেষ না ছেলের বিয়ে দিয়ে যেসব মায়েরা অবসরে গেছেন, যারা সারাদিন বউদের সবক দেয়াটাকেই নিজের একমাত্র কাজ মনে করেন সেসব মায়েরা টুক্কার এই দুর্দশার জন্য তার মাকেই দায়ী করে থাকেন। মানুষ নাকি মরে বেঁচে যায়, বেচারি টুক্কার মা মরেও মানুষের অবজ্ঞার মাঝে বেঁচে রইলেন।

সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত, সূর্যগ্রহণ, চন্দ্রগ্রহণ জাতীয় প্রাকৃতিক বিশেষ সময়গুলিতে নিজের জিহ্বা নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারার জলজ্যান্ত দৃষ্টান্ত নাকি- টুক্কা। আরও নানা আকৃতি প্রকৃতির যে পরিণামের বর্ণনা শ্বাশুড়ি মায়েদের কাছ থেকে গ্রামের হবু মায়েরা পায় তাতে তারা সুস্থ সুন্দর একটা শিশু জন্মদানের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত আর খানাপিনা স্পর্শ না করারই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।

টুক্কার পাঁচজন ভাইবোন আছে তারা সবাই সুস্থসুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারী। কিন্তু টুক্কার মা শুধু এই সন্তানের বেলা কেন এমন অবিচার করলেন তা কেউ কোনদিন জানতে চাইলে পরচর্চায় ব্যস্ত শাশুড়ি-মায়েরা কী জবাব দিবেন তা একমাত্র উপরওয়ালাই জানেন।

কথা বলার সমস্যা ছাড়াও টুক্কার আরও কিছু শারীরিক খুত আছে। তার হাতপাগুলি স্বাভাবিকের চেয়ে যেমন বেশি চিকন পাতলা তেমনি আবার পেটটাও অস্বাভাবিক বড়। ছোট ছোট চোখ দুটিরও কাহিল দশা সব সময় তাতে পানি জমে থাকে।

ছেলের জন্মের পর মায়ের কাছে এই ভয়ানক খুঁতগুলি যখন ধরা দিয়েছিল তার প্রত্যেকটা কত বড় কষ্ট হয়ে তাকে আঘাত করেছিল তা টুক্কার মা আর কাউকে বলেননি। কারণ তিনি জানতেন তাতে কোন লাভ নেই। ফলে পাঁচ সন্তানকে যে পরিমাণ আদর স্নেহ ভালবাসায় বড় করেছিলেন টুক্কাকে তার চেয়ে হাজার গুনেরও বেশি দিলেন। তারপরও আর কী দিবেন, কত দিবেন এই ভেবে ভেবে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে তার গাল কপাল মুখে অনেক অনেক চুমো খেয়ে দীর্ঘশ্বাস চাপার ব্যর্থ চেষ্টা করে বলতেন- সাত রাজার ধন, মানিক আমার!

(২)
বিয়ের অল্পদিনের মাঝেই মল্লিকা বিধবা হল। বাবা-মা মরা গরীবের মেয়ে, বলা চলে জন্মের পর থেকেই তার জীবনে যা যা কিছুর দরকার ছিল তার বেশির ভাগটাই 'নেই' ছিল। আদর যতœ, ভালবাসা থেকে শুরু করে জামা কাপড়, খাবার দাবার- কত যে 'নেই' সে দেখেছে তারও কোন ঠিকঠিকানা নেই। তাই একসময় এই 'নেই'টা তার কাছে গুরুত্বহীন হয়ে গেছে।

ভাইয়েরা মাথার উপর থেকে বোঝা নামানোর মত করেই তার বিয়ে দিয়ে যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে। মল্লিকার বিয়েটা গরীব এক কৃষক পরিবারে হল কিন্তু ভালই হল। স্বামীর সংসার, আদর সোহাগ পেয়ে 'নেই' টা তার জীবন থেকে কখন যে ঝরে গেছে মল্লিকা তা টেরই পায়নি। তার মনে হত সে যেন প্রস্ফুটিত পদ্মফুলে ভরা একটা চোখ জুড়ানো, প্রাণ মাতানো সুন্দর বিলের মাঝখান দিয়ে চলেছে। রঙ, আলো, মুক্তবাতাস, ভ্রমরের গুঞ্জনে মুখরিত সময়ের মধ্য দিয়ে চলা জীবনে কোন কষ্ট থাকে না। এমন বিশ্বাসে তার জীবন সুখে পরিপূর্ণ তাতে নেই বলে আর কিছু নেই! কিন্তু নিয়তির খল ভূমিকায় তার জন্য যে কী পরিণতি অপেক্ষা করছিল তা দেখতে তাকে খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হল না।

নাই গো, নাই- রবে একটা চিৎকার একদিন সকালবেলা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে আঙিনা দাঁপিয়ে যখন গমগমিয়ে চতুর্দিকে থেকে একেবারে ধ্বংসের হাততালি হয়ে কানে বাঁজতে লাগল তখন রান্নাঘরে থাকা মল্লিকার বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠল। সে সংবাদদাতার সামনে উঠানের উপর জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেল। চোখে মুখে পানির ঝাপটায় যখন তার জ্ঞান ফিরল তখন আঙিনায় শত শত মানুষ, এই মানুষের ভিড়ে তার মানুষটা নেই। খুব ভোরে গাল কপালে সোহাগের শেষ উষ্ণ ছোঁয়া দিয়ে বের হয়ে যাওয়া মানুষটাকে মল্লিকা দেখল একটা চাঁদরে মোড়ানো একদলা মাংসপিন্ড হয়ে পড়ে আছে।

ট্রাক্টরের চাকায় চাঁদর জড়িয়ে মল্লিকার স্বামী মারা গেল। 'নেই'টা আবার এমন প্রবল আর সুতীক্ষ্ণভাবে জীবনে ফিরে এল যে পরিপূর্ণতা থেকে শুন্যতার গহবরে আছাড় খেয়ে পড়ে মল্লিকা হয়ে পাগলিনীর মত। দিনকয়েকের মধ্যেই শ্বশুর, শ্বাশুড়ি, আপনজন, পাঁড়া প্রতিবেশী সবার শোক কেটে গেল। কিন্তু মল্লিকার কষ্ট যেন ফুরোবার নয়, তাই শোকও যাবার নয়। এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে একদিন বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে ঝামেলা মুক্ত হল।

ভাইদের ঘাড়ের ভারী বোঝা আর ভাইবৌদের ভীষণ অবজ্ঞার পাত্রী হতে খুব বেশি সময় লাগল না। একটা কষ্টের সাথে আরও নানা আকার প্রকারের কষ্ট যোগ হয়ে অজগরের মত চারিদিক থেকে চেপে মল্লিকার বুকের হাঁড়গোড় একাকার করতে লাগল। শুন্য ঘরে দিনরাত পড়ে পড়ে যত বেশি কাঁদে কাটে স্বামী না থাকা, নিজের ঘর না থাকা, কেউ না থাকা আরও বেশি হয়ে বুকে বাঁজে। বাড়ির আঙিনার পাশে সজনে গাছটায় যখন কোকিলটা ডেকে উঠে, কষ্টরা মনের মধ্যে ঘন্টি হয়ে বাঁজতে থাকে- নেই, নেই- কেউ নেই, কিছু নেই।

ঘরটা নরকের মত লাগলে সে বাইরে আসে। বাড়ির দক্ষিণে বিস্তৃত ধূঁ ধূঁ মাঠ। সেদিকে তাঁকালে তার বুকটা আরও কেমন খাঁ খাঁ করে উঠে। যতদূর চোখ যায় ততদূর কিছু চোখে পড়ে না, কাউকে না। কোকিলের ডাক, মাঠের বয়ে যাওয়া হুঁ হুঁ বাতাস যেন লাথি মেরে মনের চাপা আগুনকে দিনরাত আরও উসকে দেয়।

চন্দ্রভূক অমবস্যা আসে, পূর্ণিমা সোনারঙা জোছনায় পৃথিবী ভাসিয়ে দিয়ে যায়। শীত শেষে বসন্ত, বসন্ত কেটে গ্রীষ্মও পার হয়ে যায়। বর্ষায় মাঠঘাট সবুজ হয়ে উঠে। বৃষ্টির ধারা, সবুজের সজীবতা মিশে পৃথিবী একেবারে অন্যরকম মোহনীয় হয়ে উঠে। এমনি একদিন বিকেলবেলা মল্লিকাদের বাড়ির দক্ষিণের মাঠের একটি তালগাছের ছাঁয়ায় বসে কে জানি বাঁশিতে ফুঁ দেয়। সুর মল্লিকাকে মোহাবিষ্ট মুগ্ধ করে। দিনে দিনে তার মন থেকে 'নেই'-টাও দ্রবীভূত হতে থাকে।


(৩)

গ্রামের শেষ প্রান্তে খাস্ জমির উপর ছোট্ট একটা একচালা ঘর- ওটা মল্লিকার। ঝোপঝাড়ে ভরা জায়গাটা একসময় শশ্মান ছিল। তাতে গরু ছাগল ঘুরে বেড়ায়। প্রায়ই দাঁড়াশ সাপ দেখা যায়, মাঝে মধ্যে দু একটা গোখড়াও। সেসবে মল্লিকার ভয় করে না। লজ্জা, ভয়, অপমান সব কিছুকে সে জীবন থেকে একেবারে ঝেড়ে ফেলেছে।

এখন সে খারাপ মেয়েমানুষ। এক জোৎস্না রাতে সে তালতলায় বাঁশিওয়ালার কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে প্রেমের সুরে ডুবছিল। বাঁশিওয়ালা যে বাড়ির কামলা সেই বাড়ির মালিকের হাতে তারা দুজন ধরা পড়ল। প্রেমে পড়ার অপরাধে সমাজ তার উপর নষ্টা খারাপের সীলমোহর এঁকে দিল। বাঁশিওয়ালা মার খেয়ে হল গ্রাম ছাড়া। উপল পেয়ে ভাইয়েরা সহজে হল দায়মুক্ত। সবাই দূরে ঠেলে দিল, মল্লিকাও দূরে সরে গেল। শুধু নিজ গ্রামের বাইরে গেল না।

যারা তাকে খারাপ হতে বাধ্য করেছে তারা যে খারাপ হতে কত ভালবাসে মল্লিকার চেয়ে ভাল তা আর কেউ জানে না। দেখে দেখে সে হেসে গড়াগড়ি যায়। খারাপ হওয়ার এই খেলায় ভাইয়ে ভাইয়ের, পিতা পুত্রের মুখোমুখি হওয়ার দৃশ্যও সে দেখেছে আর মুখ টিপে হেসেছে!

টুক্কার চার পাঁচটা গরু। এদের নিয়েই ঘর সংসার, আয় উপার্জন। অন্যদের গরু ছাগলের সাথে সে তার গরুগুলিও গ্রামের খাস্ জমিটায় চড়ায়। টুক্কা রোদে পোঁড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে। চোখের সামনে দেখে দেখে মল্লিকার খুব মায়া হয়। ডেকে ঘরে বসতে বলে।

টুক্কার কাছেও ব্যাপারটা খুব ভাল লাগে। এই ভেবে লাগে যে পৃথিবীতে অন্তত একটা মানুষ তাকে নিজের ঘরে বসতে বলে। সারাটা জীবন সে দেখে এসেছে বিশাল পৃথিবীর কোথাও তার একটু দাঁড়াবার, একটু বসার সুযোগ নেই। কত বাচ্চা তাকে দেখে জ্ঞান হারিয়েছে তার হিসেব নেই। কিশোর কিশোরী যুবক যুবতী তাকে দেখে চোখ ঘুরিয়ে নিয়েছে।

মন্দ আর অসুন্দরের মাঝে ক্রমেই একটা সম্পর্ক গড়ে উঠে! টুক্কা গরুগুলি জঙ্গলে, মাঠে ছেড়ে দিয়ে প্রায়ই মল্লিকার ঘরে বসে। একটু আধটু করে কথা বলে ক্রমে তা গল্পে গড়ায়। মল্লিকা কান পেতে শুনতে শুনতে টুক্কার অস্পষ্ট কথায় অভ্যস্থ হয়ে উঠে, তার কাছে সব সহজবোধ্য হয়ে উঠে।

মল্লিকার চালটা, লবনটা তেলটা এনে দেয়া থেকে শুরু করে অসুখ বিসুখে খেয়ালও রাখা শুরু করে টুক্কা। গ্রামের তথাকথিত ভাল মানুষেরা ব্যাপারটায় খুব মজা পায়, ব্যাপারটা তাদের কাছে হাসি ঠাট্টারও খোরাক হয়ে উঠে। এইসব ভাল মানুষগুলির মন আর ভাবনা বড় বিচিত্র হয়!

মল্লিকার বাড়ির পাশেই বড় একটা বিল। বিলের ওপারে নির্জন, মস্ত জঙ্গল। টানা বর্ষায় টুক্কার গরুগুলির খাবার না পেয়ে মরণাপন্ন অবস্থা। তাই টুক্কা মাথায় গামছা বেঁধে লুঙ্গির কোচাটা শক্ত করে কোমরে গুঁজে ভরা বিল পাড়ি দিয়ে গরুগুলি ওপারে নেয়ার আয়োজন করতে থাকে।

দৃশ্যটা দেখে প্রচন্ড ভয়ে মল্লিকার বুক কেঁপে উঠে। সে ব্যাকূলভাবে টুক্কাকে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করে। টুক্কার হৃদয় রোমাঞ্চিত হয়। শরীরের সমস্ত ধমণীতে রক্ত লাফিয়ে লাফিয়ে দৌঁড়াতে থাকে। পৃথিবীতে তাকে নিয়ে একজন মানুষের ভাবনা তাকে ভয়ানক সাহসী করে তোলে।

সে আরও কত বর্ষায় এই বিল পাড়ি দিয়ে ওপারে নিয়ে গরুকে ঘাস খাইয়ে এনেছে মল্লিকাকে এমন একটা ব্যাখা দিয়ে গরুগুলি পানিতে নামিয়ে দেয়। শেষে নিজেও ঝপাৎ করে একটা লাফ মেরে পানিতে পড়ে হাত পা ছুঁড়ে শাপলা আর অন্যান্য জলজ লতাপাতা ঠেলে সামনে এগুতে থাকে।

মল্লিকার বুক ঢিপঢিপ করতে থাকে। সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে গরুগুলি এগিয়ে যাচ্ছে। পিছনে পিছনে একটা মানুষও এগিয়ে যেতে যেতে ক্রমেই ছোট হতে থাকে। গরুগুলি একসময় ওপারে পৌঁছে যায়। বিন্দুর মত দেখা যায় জঙ্গলার ধারে উঠেই ওগুলি ছুটে গিয়ে সবুজ ঘাসে মুখ দেয়। টুক্কাও মাথার গামছা খুলে ভিজা লুঙ্গিটা পাল্টাতে পাল্টাতে যেন তাকিয়ে তাকিয়ে তাকেই দেখছে।

একটা নিঃশ্বাস ফেলে মল্লিকা ঘরে গিয়ে চুপ করে বসে থাকে। সময় গড়িয়ে দিন যতই শেষের দিকে গড়াতে থাকে তার মনে ভয়টা আবার গভীর হয়ে চেপে বসতে থাকে। ঘন ঘন সে বিলের ধারে গিয়ে দেখার চেষ্টা করে।

টুক্কার না ফেরাটা ক্রমেই তার কাছে শ্বাসরুদ্ধকর হতে থাকে। সূর্যটা লাল হয়ে দ্রুত ঢলে যেতে থাকে। এমন সময় মল্লিকার চোখে পড়ে মানুষটা। গরুগুলি নামিয়ে দিয়ে টুক্কা নিজেও পানিতে নেমে পড়েছে। খারাপ মেয়েটা অন্তরের অন্তস্থল থেকে উপরওয়ালাকে ডাকতে থাকে।

গরুর পালসহ টুক্কা এগিয়ে আসতে থাকে। কিন্তু সে যত বেগে এগিয়ে আসে তার চেয়ে বেশি বেগে গাঢ় অন্ধকার সবকিছু যেন ঝাপসা করে দিতে থাকে। ভয়ে মল্লিকার চোখ বন্ধ হয়ে আসে।

টুক্কার ঝাপ্সা চোখ অন্ধকারে সব হারিয়ে ফেলতে থাকে। নিস্তেজ শরীরে তার মনে হয় মল্লিকা তার নাম ধরে ডাকছে। সে গরুর শ্বাস কাটার ফোঁস ফোঁস শব্দ অনুমান করে এগুতে থাকে। কিন্তু একসময় শব্দগুলিও তাকে পিছনে ফেলে চলে যায়। দিকভ্রান্ত টুক্কা অন্ধকারে কাহিল হয়ে পড়ে। শাপলাগাছের লতায় হাত পা পেঁচিয়ে আসতে থাকে। ডুব দিয়ে একটা ছাড়ায় তো পায়ে আরেকটা জড়ায়। শ্রান্তক্লান্ত টুক্কা বেশিক্ষণ কুলিয়ে উঠতে পারে না।

গরুগুলির ফোঁস ফোঁস করে শ্বাস কাটার আর পানির ছলাৎ ছলাৎ টুপ্ টাপ্ শব্দ ক্রমেই কাছে এগিয়ে আসতে থাকে। ধৈর্য্যহারা মল্লিকা টুক্কার নাম ধরে একটু পর পর উদ্বেগের গলায় ডাকতে থাকে। তার গলার আওয়াজ তীব্র থেকে তীব্রতর হওয়ার মাঝখান দিয়েই গরুগুলি একটা একটা করে ডাঙ্গায় উঠতে থাকে। কিন্তু মানুষটা আর উঠে না! মল্লিকার ডাকাডাকি একসময় তীক্ষ্ণ আর্তচিৎকারে পরিণত হয়।

একজন দুজন করে জমতে জমতে অনেক মানুষ জমে যায়। নৌকা আসে, টর্চের আলো ফেলে সারারাত গ্রামের উৎসাহী ছেলেরা টুক্কাকে খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে টুক্কার লাশ সকালে আলো ফুঁটে উঠার সাথে সাথেই মল্লিকার চোখে ধরা দেয়।

ডাঙ্গা থেকে মাত্র হাত পাঁচেক দূরে থাকা টুক্কাকে মল্লিকা নিজ হাতেই বুকে টেনে নিয়ে প্রবল কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। শোকাতুর সাত সকালে একজন অসুন্দর মানুষের জন্য আরেকজন খারাপ মেয়েমানুষের বিলাপে গ্রামের কারো চোখের পাতা ভিজে উঠেছে কিনা তা প্রাসঙ্গিক হলেও হতে পারে কিন্তু কোন গুরুত্বপূর্ণ বহন করে না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
তানি হক এক কথায় অসাধারণ একটা গল্প পড়লাম । অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা ভাইয়া
ভালো লাগেনি ৩০ জানুয়ারী, ২০১৪
ঘাস ফুল আপনার কোন গল্প এই প্রথম পড়লাম। অসাধারণ লিখেছেন আক্তার ভাই। গল্পের ধারা বর্বণা, কাহিনী বিন্যাস, শব্দের গাঁথুনি এবং সর্বোপরি গল্পের বার্তা সবই নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। টুক্কার মতো প্রতিবন্ধীরা আমাদের সমাজে কীভাবে অবহেলিত হয়, কীভাবে মল্লিকার মতো ভালো মেয়েদের গায়ে সমাজপতিরা কলংকের কালিপা লেপন করে দিয়ে সমাজচ্যুত করে সবই দারুণ ভাবে গল্পে উঠে এসেছে। সব মিলিয়ে খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো লাগেনি ২৮ জানুয়ারী, ২০১৪
মিলন বনিক দাদা কি বলব বুজতে পারছি না...তবে গল্পের প্রতিটা চরিত্রে যে গ্রামীন সমাজের সোদা মাটির গন্ধ লেগে আছে...এই চরিত্রগুলো বড় ভালো লাগে...
ভালো লাগেনি ১৯ জানুয়ারী, ২০১৪
এফ, আই , জুয়েল # প্রয়োজনের সময় প্রকৃত মানুষ কেমন হতে পারে----এর সুন্দর একটি বর্ননা আপনি সার্থকতার সাথে উপস্থাপন করেছেন । সুন্দর ও শিক্ষনীয় একটি গল্প । আপনাকে দন্যবাদ ।।
ভালো লাগেনি ১৪ জানুয়ারী, ২০১৪
নিলাঞ্জনা নীল সুন্দর গল্প ভাইয়া।।
ভালো লাগেনি ১৪ জানুয়ারী, ২০১৪
ঐশিকা বসু সুন্দর/অসুন্দরের এটা এক সার্থক দার্শনিক লেখা।
ভালো লাগেনি ১৩ জানুয়ারী, ২০১৪
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন তারাই মানুষ...হ্য়তো সমাজের কাছে নয়, কিন্তু তারাই মানুষ। খুব ভাল লেগেছে। শুভেচ্ছা রইল।
মনোয়ার মোকাররম "মন্দ আর অসুন্দরের" কাছে আসার উপাখ্যান ... ভালো লাগলো ....শেষটা দুখ:ময় .... !

২২ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪