পথকলি

কষ্ট (জুন ২০১১)

মুসলিম উদ্দিন অর্জু
  • ১৪
  • 0
  • ৫৭
মানুষ স্বপ্নচারী সে স্বপ্ন দেখে একটি অসীম আকাশে ডানা মেলে উড়ার। স্বপ্ন দেখে সিন্ধু সেঁচে মুক্তা আনার। স্বপ্ন দেখে এই সুন্দর ধরণীর আনাচে কানাচে ঘুরার তার সেই স্বপ্ন হাজার ফুলের মাঝে সৌরভ ছড়ায়। হাজার তারার মাঝে চাঁদ হয়ে আলো দেয়। তার সেই স্বপ্ন অনন্ত অসীম। তার সেই স্বপ্ন কোন বাধা মানে না। সে স্বাধীন ভাবে ঘুরে বেড়ায়, পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। কিন্তু সাবাই এই স্বপ্ন দেখেনা! দেখতে পারে না। যার ভাগ্যে দু'বেলা দু'মুঠো ভাত জোটেনা, তার কাছে এসব রঙ্গিন স্বপ্ন দুঃস্বপ্নের দানব হয়ে আঘাত হানে। বেদনার অশ্রু হয়ে গড়িয়ে পড়ে।
সকাল থেকে পড়ার টেবিলে কাগজ কলম নিয়ে ব্যস্ত মারূফ। কিছু যেন লিখতে চেয়ে "ওফ হচ্ছেনা" বলে আরেকটা কাগজ নিচ্ছে। মারূফের শিক্ষক নিজ সম্পাদিত নতুন একটি মাসিক পত্রিকা (বায়ান্ন) প্রকাশ করতে যাচ্ছে। মারূফ তার শিক্ষককে তার রচিত একটি গল্প/কবিতা প্রকাশের জন্য অনুরোধ করেছিল। শিক্ষক প্রথমে রাজি হয়নি আরও বলেছিল, এখানে বাংলাদেশের সব বড় বড় লেখকের লেখা চাপানো হবে। পরে যখন মারূফ জানাল যে তার রচিত গল্প/কবিতা গুলো, লেখক ও পাঠক মঞ্চের বিশিষ্ট ওয়েব সাইট গল্পকবিতা ডট কমে প্রকাশ করা হয় তখন তার শিক্ষক কি যেন ভেবে তিন থেকে চার দিন সময় দেন একটি চমৎকার গল্প বা কবিতা জমা দিবার জন্য। আর আজই শেষ দিন।
কিন্তু সকাল থেকে শত চেষ্টা করেও কোন কাজ হলোনা। সে প্রথমে কবিতা লেখার মনস্থির করে ছিল কিন্তু অনেক সময় ধরে চেষ্টা করেও কোন কবিতা লেখা হলো না। তাই কবিতা লেখার চিন্তা আপাতত: মাথা থেকে দূর করে গল্প লিখার কথা ভাবল মারূফ। কিন্তু গল্প লিখার জন্য তো প্রয়োজন সুন্দর এবং আকর্ষণীয় একটি প্লট । এই মুহূর্তে মারূফের কোনপ্লটই মাথায় আসছেনা। অথচ কবিতা হোক বা গল্প হোক তার একটি লিখা তার শিক্ষক কে আজকের মধ্যেই দিতে হবে।
অবশেষে বিরক্ত হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ল মারূফ উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাটছে ফুটপাত ধরে। হাঁটেতে হাঁটতে চোখে পড়লো ইট মাথায় দিয়ে ঘুমন্ত এক শিশুর প্রতি।কবি বা লেখকদের ভাষায় যাদের কে বলা হয় পথকলি। থমকে দাড়ায় মারূফ , ছেলেটির চেহারায় ক্ষুধার ছাপ স্পষ্ট। শুকনো মুখের চামড়া ঠেলে যেনো বেরিয়ে আসতে চাইছে দুই চোয়ালের হাড়। এমন কংকালসার একটি শিশুর দেখে যে কারোই চোখে পানি আসতে বাধ্য। এ দৃশ্য দেখে তার বুকের মধ্যে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলো। অপরাধ বোধ জেগে উঠল তার হৃদয়ে। আর মনে মনে সরকার বিত্তবান ও সমাজপতিদের প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণা জম্মালো তার । আর সবচেয়ে বেশি ঘৃণা হলো নিজের প্রতি। কেননা সে নিজেও এদের দিকে কোন দিন ফিরে তাকানোর গরজন বোধ করেনি। ওদের ক্ষুদাক্লীষ্ট মলিন মুখে হাসি ফোটানোর সামান্য তম চেষ্টাও করেনি সে। কবি-সাহিত্যিকগণও এই অসহায় পথ শিশুদের "পথকলি" ইত্যাদি নাম দিয়ে কত কবিতা,কলাম লিখে চলেছেন তার ইয়ত্তা নেই। ব্যস এতেই দায়িত্ব খালাস মনে করেছেন তারা । তাদের দুঃখ কষ্টের চিত্র পত্রিকায় ছাপালেই তাদের দুঃখ অসহায়তা তো উপশম হয়ে যায় না।
এরা আগের মতোই রাস্তার পাশে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। আর ভাবতে পারে না মারূফ । ধীরে ধীরে শিশুটির দিকে এগিয়ে যায় মারূফ। শিয়রে বসে ছেলেটির মাথায় হাত রাখে সে। হাতের কোমল সর্্পশ পেয়ে চোঁখ মেলে তাকায় শিশুটি। অচেনা একজন তার প্রতি করুণ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে দেখে উঠে বসার চেষ্টা করল সে।
জ্বর-জ্বালায় কেঁেপ ওঠে ও। মারূফ তাকে অপেক্ষা করতে বলে। মারূফ একটি কাছের দোখান থেকে কিছু শুকনো খাবার ও কলা নিয়ে আসে তার জন্য। কৃতজ্ঞতায় শিশুটির চোঁখে ছলছল করে উঠলো। মারূফ তাকে খেতে বলার পর মহা আনন্দে খেয়ে নিল খাবার গুলো। শিশুটি যে কয়েক বেলা উপবাস বুঝতে কষ্ট হলো না মারূফের। খাওয়ার পর ছেলেটির কাছে তার পরিচয় জানতে চায় মারূফ। তখন দু'চোঁেখ পানিতে ভরে ওঠে ছেলেটির অনেক কষ্টে এতটুকু বলতে পারলো যে,কর্ণফুলি নদীর তীরে ছিলো তাদের বাড়ি । একরাতে রাক্ষসী কর্ণফুলি তাদের সবাই কে ভাসিয়ে নিয়ে গেলো। সে কিভাবে বেঁেচে গেলো তা আল্লহই মালুম। পরে জীবন বাচাঁনোর তাগিদে কাজের সন্ধানে ছুটে আসে শহরে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন কাজ পায়নি সে। ফলে কাগজ কুড়াঁনো এবং একমুঠো খাবার পেলে খাওয়া আর না হয় উপবাস কাটানো। এভাবেই কেটে যাচ্ছে তার কষ্টের দিনগুলো ছেলেটির পড়ালেখার ইচ্ছা থাকলে তাকে পড়াশুনা করাবে মারূফ। একথা শিশুটি কে জানায় সে। একথা শুনে হাজারো স্বপ্ন শিশুটির চোখের তারায় খেলা করছিল। পর মুহুূর্তেই কয়েক ফোঁটা আনন্দাশ্রু গড়িয়ে পড়ে তার দু'গাল বেয়ে। বড় হওয়ার স্বপ্ন ধীরে ধীরে ভেসে ওঠে তার দু'চোখের সামনে তার এহেন আনন্দ দেখে মারূফের চোখের পাতাও ভিজে যায় পানিতে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিজানুর রহমান রানা কবি-লেখকরা সমাজ পরিবর্তনে বিশ্বাসী। তারা সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখেন। আপনাকে ধন্যবাদ। ভোট দিলাম।
ঝরা অনেক ভালো
sakil পথ্কলেদের নিয়ে তেমন কেউ লিখে না . আপনি লিখেছেন বলে আমার কাছে ভালো লেগেছে . আপনার জন্য শুভকামনা রইলো
মোঃ আক্তারুজ্জামান লেখার বিষয়টা হৃদয়গ্রাহী কিন্তু ভালো ভাবে ফুটিয়ে তুলতে ব্যার্থ হয়েছেন| নিয়মিত চর্চায় এই জড়তা কেটে যাবে- ভালো লিখতে পারবেন|
আপন সত্তি আমরা পথকলি নিএ এখন আর কিউ ভাবিনা . ধন্যবাদ আপনাকে এমন কিছু লিকার জন্য .
মোঃ ইকরামুজ্জামান (বাতেন) ভাই মুসলিম উদ্দিন অর্জু পথকলিদের কথা আর ক'জনা ভাবে।আপনি ভেবেছেন ভালো ,চালিয়ে যান।
মুসলিম উদ্দিন অর্জু আপনাদের ভালো লাগা আর ভালবাসা আমকে সামনে এগিয়া নিয়াজাবে . ধন্যবাদ সবাইকে .
আশা পড়তে পড়তে শেষ প্রান্তে এসে মারূফের জন্যে আমার ভালোবাসার উদগিরণ ঘটল। এমন মারূফ যদি বাংলার আনাচে কানাচে বাড়তে থাকে তবে একদিন পথশিশুদের স্বপ্ন পূরণ হবেই। তারাও পারবে কাঁধে করে বই নিয়ে স্কুলে যেতে। লেখা চালিয়ে যান ভাই- এমন চিন্তার লেখাই বেশি ভাল লাগে।
সূর্য তোমার ভাবনাটা হৃদয় ছুয়েছে। বাকি যেটুকু অতৃপ্তি তা লিখতে লিখতে পরে পুষিয়ে দিতে পারবে..............
মামুন ম. আজিজ পথকলিদের কথা আর ক'জনা ভাবে। আপনি ভেবেছেন। আপনাকে সাধু বাদ। .....ভবিষ্যতে গল্প পোষ্ট করলে কবিতার বাটনে ক্লিক না করে গল্প বাটনে টিক দিতে সচেষ্ট হবেন আশা করছি।

০৫ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪