দুর্ভেদ্য দেয়াল

আমি (নভেম্বর ২০১৩)

আহমাদ ইউসুফ
  • ৭৯
আমার মতো নিরীহ শান্ত গোবেচারা টাইপের ছেলে যে কারো প্রেমে পড়তে পারে এটা বিশ্বাস করা কঠিন। কিন্তু সেই আমিই কিনা শেষ পর্যন্ত প্রেম নামক মরীচিকার পেছনে ছুটতে ছুটতে গলদঘর্ম। আর এর ফল¯^রুপ প্রেমসুধা আহরন। সময়টা ২০০০ সাল। আমি তখন ক্লাস এইটে নতুন ভর্তি হলাম আমাদের গ্রামের স্কুলে। ক্লাস ফাইভে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়া একমাত্র ছাত্র হিসাবে আমার যথেষ্ট সুনাম। সেই সাথে শান্ত-শিষ্ট, ভদ্রতায় অনন্য। আগন্তুক হিসাবে সবার কাছে পাচ্ছিলাম এক্সট্রা খাতির। আমাদের ক্লাসের মেয়েরাও যথেষ্ট আন্তরিকভাবে নিল আমাকে। কিন্তু আমি ওদেরকে মোটেও পাত্তা দিতাম না। সমবয়সী মেয়েদেরকে আমার কেমন পিচ্চি পিচ্চি মনে হত। আর মিষ্টি চেহারাও খুব একটা ছিল না। যাই হোক দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল বেশ আনন্দের সাথেই। আমাদের ক্লাসে ছিল সাথী নামের একটা হিন্দু মেয়ে। চেহারা সুরত খুব একটা খারাপ নয়। গায়ের রং খুব উজ্জ্বল না হলেও যথেষ্ট গ্লামার ছিল মেয়েটার। কিন্তু আমি নির্বিকার। অতি উৎসাহীর দল পাজির পা ঝাড়া বিচ্ছুগুলো সবুজ-সাথীর প্রেম কাহিনী ছড়িয়ে বেশ মজাই পেল। কিন্তু আমি অন্যমনা। আমার তখন বৈরাগ্য দশা। উদাসী আনমনা ভঙ্গি। সারা¶ন মনমরা ভাব। কল্পলোকে বিচরন, তাও সবার নজরে। আমিও হতবাক! হায় একি হয়ে গেল। এও সম্ভব কি করে। সিনিয়র দিদির সাথে প্রেম!

আমি তখন ক্লাস নাইনে। দিদি তখন ক্লাস টেনে। বারন্দায়, রাস্তায় যখন যেখানেই দেখা মুচকি হাসি, ভেংচি কাটা চলতেই থাকে। বাগে পেলে কান মলা, কিল, চড় তাও চলে। সবকিছু মেনে নেই অম্লান বদনে। দিদি বলে কথা। প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা, সবার আগে ক্লাসে আসা, টিফিন প্রিয়ডে বিজ্ঞানের ক্লাসে চোখে চোখ রাখা নিয়ম হয়ে দাড়ালো। দিদি ছিলেন খুবই সুন্দরী। বডি ফিগার তাও চমৎকার। এককথায় অসাধারন। আমরা বিচ্ছুর দল মেয়ে বিষয়ক গবেষনায় যথেষ্ট পারঙ্গম ছিলাম। কোন মেয়েটা কেমন হাটে, কেমন হাসে, কিভাবে কথা বলে তা ছিল আমাদের নখদর্পনে। দিদির চেহারা, বডি ল্যাগুয়েজ যে সবার থেকে আলাদা এবং চমৎকার এ বিষয়ে কারও কোন সন্দেহ ছিল না। ইন্ডিয়ান নায়িকাদের চেয়ে দিদি যে কোন অংশে কম নয় তাও বেশ বুঝতে পারতাম। আমার আর গর্বের সীমা ছিল না। নিজেকে বেশ ভাগ্যবান মনে হতো। ইতিমধ্যে বেশ কিছু দিন কেটে গেল। শরীরে, মনে বেশ প্রেম প্রেম ভাব। দু চারটা কবিতাও লিখে ফেলেছি ইতোমধ্যে। প্রায়ই তাকে উৎসর্গ করে কবিতা লিখি। ম্যাসেঞ্জার মারফৎ তাকে পাঠাই। সে খুশি হয়। আমাকে আরো ভালো লেখার অনুপ্রেরনা দেয়। আমি যেন হাওয়ায় ভেসে চলি।

একদিন টিফিন প্রিয়ডে বিজ্ঞানের ক্লাসে জরুরি তলব। বেশ ভয়ে ভয়েই গেলাম। দেখলাম দিদি ও তার চাচাতো বোন দাড়িয়ে আছে। বেশ থমথমে মুখাবয়াব। দোয়া দুরুদ পড়ে বুকে ফুক দিয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে রুমের মধ্যে ঢুকলাম। দিদি আমার সামনে এসে দাড়ালেন। চোখে চোখ রেখে নির্বাক তাকিয়ে রইলেন ঝাড়া এক মিনিট। আমার হৃদপিন্ড টিপ টিপ করছিল। না জানি কি শুনতে হয় আমাকে। আমার অবস্থা দেখে একটু হাসলেন তিনি। মুখ খুললেন অবশেষে। আমার চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি আমাকে ভালবাস? আমি হকচকিয়ে গেলাম তার প্রশ্ন শুনে। কি বলব খুজে পাচ্ছিলাম না। অবশেষে বুকে সাহস নিয়ে বললাম হ্যা! আমি আপনাকে ভালবাসি। কেন ভালবাস? তার প্রশ্ন। আপনাকে আমার ভাললাগে। আমার সহজ সরল জবাব। ভাললাগলেই যে ভালবাসতে হবে এটা কেমন কথা। হ্যা এটাই বা¯—ব কথা। আমি অতো কিছু বুঝিনা। আমি আপনাকে ভালবাসি। আমার দৃঢ় জবাব। শোন পাগলামি করনা। তুমি কি জানো তোমার আমার মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার দুর্ভেদ্য দেয়াল, যা টপকানো আমাদের কারো প¶েই সম্ভব নয়। থামলেন তিনি। ভালাবাসা কোন আইন মানে না। ভালাবাসা তার নিজ¯^ গতিতে চলে। ভালবাসাকে কোন সাম্প্রদায়িকতার গন্ডিতে বাধা যায়না। আমি বললাম। বাহ! কথা তো ভালই শিখেছো, তোমার সাহস তো কম নয়। আমি তোমার থেকে এক বছরে সিনিয়র একথা কি ভুলে গেছ। আরে এটা কোন ব্যাপারই না। আপনাকে আমার ভাললাগে। আমি আপনাকে ভালবাসি। ব্যাস আমি আর কিছু শুনতে চাই না। তুমি কি জানো তুমি অন্যায় করছ। তোমার নামে স্যারদের কাছে বিচার দিলে দোমার কি হবে তা একবার ভেবে দেখেছ। না আমি অন্যায় করছি না। ভালবাসা কোন অন্যায় নয়। আর হ্যা! আপনি ইচ্ছা করলে বিচার দিতে পারেন। তবে আমার মনে হয় আপনি তা করবেন না। কারন আ---আ----প---নিও আমি হঠাৎ থেমে গেলাম। প্রায় আতকে উঠলেন দিদি। কি ! কি বললে তুিম। কি কারনটা কি শুনি। কারন আপনিও আমাকে ভালবাসেন, আমার নির্লিপ্ত জবাব। না আমি তোমাকে ভালবসি না। তোমার ধারনা ভুল। একটু থামলেন তিনি। আমি তো--তো--মা----কে পূজা করি। তুমি আমার দেবতা। অশ্র“ ছল ছল চোখে বললেন তিনি। আমি হতবিহবল চোখে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। মুখে কোন কথা সরছিল না। যা ছিল আমার কল্পনারও অতীত। তাই আজ বা¯—ব হয়ে আমার সামনে মূর্তিমান। আমি অপলক দেখছিলাম এই সেই অপূর্ব প্রেমময়ী নারীর চোখের করুন আকুতি। খুব দ্রুত সামলে নিলেন তিনি। অবশেষে বললেন, শোন। মন দিয়ে পড়ালেখা করবে। বাজে ছেলেদের সাথে মিশবে না। তোমাকে আরো ভালো রেজাল্ট করতে হবে। আমার জন্য কোন চিন্তা করবে না। আমি তোমারই আছি তোমারই থাকব। আমার দুষ্টু টিয়াপাখি আমার কথাগুলো স্মরনে রেখো। আমি সুবোধ বালকের মতো তার সব শর্ত মাথা পেতে নিলাম। সেদিনকার মতো সে বিদায় নিল। এভাবেই চলছিল সদ্য ফোটা গোলাপের প্রেম।

সপ্তাহে তিন থেকে চারটা চিঠি বিনিময় হতো আমাদের। মাঝে মাঝে দেখা হতো। এভাবেই চলছিল বেশ। ইতোমধে ও এসএসসি পাশ করে কলেজে ভর্তি হল। আমি এসএসসি পরী¶ার্থী। প্রায়ই ওর কলেজে চলে যেতাম আমি। নদীর পাড়ে, ভ্যানে চড়ে, রেষ্টুরেন্টে বসে চোখে চোখে রেখে ভালবাসা বিনিময় করতাম আমরা। ওর বাসষ্ট্যান্ডে প্রায়ই বসে থাকতাম। কলেজে যাওয়া আসার সময় দুর থেকে দেখতাম। কখনো বা একটু চোখের ইশারা, কখনো বা একটু মুচকি হাসি মন ভরে দিতো আমার। রা¯—ায় তেমন কথা হতো না। পাছে কেউ দেখে ফেলে। ওর বাবার কাছে নালিশ দেয়। এই ভয় আমাদের সর্বদা তাড়া করত। তবুও পূজা-পার্বনে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেখা হতো ওর সাথে। এভাবে কেটে গেল প্রায় দেড় বছর। এরপরের ঘটনাগুলো ঘটল খুব দ্রুত। কখন যে দেড়টা বছর পেরিয়ে গেল তা টেরই পেলাম না। টের পাবই বা কি করে আমি যে তখন সুপারসনিক মিগ-২৯ বিমানের মতই দ্রুত গতিতে ভালবাসার সোপান বেয়ে উপরে উঠছি। আর ভালবাসার মহাশূন্যে কেবলই ভেসে চলছি। আর এদিকে কখন যে ফুয়েল ট্যাংকার শূন্য হয়ে গেছে, ব্যাটারীর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তা ঘূর্ণা¶রেও জানতে পারিনি।

যখন বুঝতে পারলাম তখন আর সময় ছিল না। একেবার মুখ ত্থবরে পড়লাম। সম্পূর্ন রুপে বিধস্ত হলাম আমি। একদিন যে সাম্প্রদায়িকতাকে আমরা দুজনই অগ্রাহ্য করতাম আজ সেটাই সে বড় যতন করে আমাদের মাঝে দেয়ালরুপে দাড় করাল। তার যুক্তির কাছে হার মানলাম। কারন তার কপালে কালীর সিদুর পড়িয়ে দেয়া আমার প¶ে কখনোই সম্ভব ছিল না। সে লিখলো, ” তোমাকে পেতে হলে আমাকে মা-বাবা, ভাই-বোন সব হারাতে হবে। অন্যদিকে তোমার কিছুই হারাতে হবে না। আচ্ছা যদি বলা হয় তুমি হিন্দু ধর্ম গ্রহন কর। তুমি কি তা করবে? জানি করবে না। কারন কেউই চায়না নিজ ধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহন করতে। আমি তোমাকে ভালবাসি একজন ভালো মানুষ হিসাবে। কিন্তু আমি যখন এত ভয়াবহ পরিনতির কথা চিন্তা করি তখন আমি শিউরে উঠি”। তার অকাট্য যুক্তির কাছে হার মানলাম আমি। তাই সে আজ অনেক দুরে। অনেক দুরে আমার সীমানা থেকে। তাকে আজও ভুলতে পারিনি। এখনও নষ্টালজিয়ায় পেয়ে বসে আমাকে। তীব্র স্মৃতি কাতরতা আমাকে শোকাহত করে। তারপর কেটে গেছে প্রায় অর্ধযুগ। কত জল গড়িয়ে গেল। কত বর্ষা এলো, কত ফাগুন এলো আর গেল। আমার আর কবি হয়ে ওঠা হলো না। কেননা আমার চারপাশে আজও ধূ-ধূ বালুচর। কোথাও একফোটা সবুজ নেই!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক গল্পের শুরুটা চমত্কার গাতুনি দিয়ে শুরু করে মনে হচ্ছে খুব তারাতারি শেষ করে দিলেন....গল্পটা খুন ভালো লাগেছে...অনেক অনেক শুভ কামনা...
এফ, আই , জুয়েল # অনেক সুন্দর একটি গল্প ।।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি খুব ভাল লাগলো। অনেক ধন্যবাদ ..............
অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার জন্য শুভ কামনা রইল। ভালো থাকবেন।
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন আলাদা রক্মের একটা গল্প। ভাল লেগেছে। শুভেচ্ছা রইল। (কথোপকথনগুলো আলাদা লাইনে লিখলে মনে হয় ভাল হয়। )
dhonnobad apnake amar lekha porar jonno. Apnar jonno shuvokamona roilo.
আরাফাত ইসলাম ফন্ট এর ব্যাপারে ভাইয়া আপনার সাথে একটা বিষয় শেয়ার করতে চাই, আপনি unicode লিখতে পারেন বা লিখার পরে unicode এ convert করে নিতে পারেন। ভালো থাকবেন ! যদিও এরপরে অনেকক্ষেত্রে সমস্যা থাকে।
আহমাদ ইউসুফ সরি ফন্টটা যে কিভাবে চেঞ্জ হয়ে গেল বুঝলাম না। সম্পাদকরা এটুকু সম্পাদনা করতে পারলেন না। অাজব ব্যাপার তো!
আহমাদ ইউসুফ অাপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ অামার লেখা পড়ার জন্য। হ্যা অাসলেই বিরতিটা অনেকটা দীঘ' হয়ে গেল। পারিবারিক ও পেশাগত ব্যস্ততার কারনে ফেরা হয়নি। যাই হোক অাবারো নিয়মিত হব অাশা করছি।
জাকিয়া জেসমিন যূথী ভালোবাসাটাই বড়, না হয় তাকে কাছে নাই পেলেন। একটা মেয়ের একতা সংসার থেকে পুরোপুরি এতীম হয়ে আসা সম্ভব হয়না কখনো। খুব সুন্দর লিখেছেন। দীর্ঘদিনের বিরতির পরে আপনার লেখা পেলাম। সবকিছু ঠিক আছে তো ভাইয়া? ভালো থাকবেন।

২২ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“মে ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ মে, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী